banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 436 বার পঠিত

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড


আফরোজা হাসান


মারওয়া হেসে বলল, যেসব বিষয়ে আবির তোমাকে বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। সেসব বিষয়ে তুমি আবিরকে বোঝার চেষ্টা করবে। এটাই তো রিলেশনশীপের চার্ম।
এটা রিলেশনশীপের চার্ম? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফরা।
হুম! একে অন্যের দোষ, অপরগতা, ব্যর্থতা মেনে নেয়া, মানিয়ে চলা এসবের মাঝেই লুকায়িত থাকে সম্পর্কের চার্ম। এসবের দ্বারাই তো আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। একে অন্যেকে মুগ্ধ করার যাদুমন্ত্র হচ্ছে ছোট ছোট ত্যাগ করা।
আপনার কথা অনেক কঠিন লাগছে আপি।
আচ্ছা ঠিকআছে চলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে এমন দু’একটা বিষয়ে বলো যেসব ক্ষেত্রে আবির তোমাকে বুঝতেই চায় না।
পর্দার বিষয়টা নিয়ে আবির একদমই বুঝতে চায় না আমাকে। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে আমার সাথে। বলে, আমার পর্দা নাকি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি যেভাবে হিযাব করি এতে নাকি পর্দার হক আদায় হয় না। আপি আপনি বলেন আমার পর্দা করা কি হচ্ছে না?
মারওয়া হেসে বলল, আবির যেদিন আমাকে প্রথম জানিয়েছিল ক্লাসের একটি মেয়েকে ওর খুব ভালো লেগে গিয়েছে। এবং যেহেতু শরীয়তে অনুমোদিত নয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চায় তাই চায় আমরা যাতে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আমি মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ভেবে না জানি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ হিযাব পরিহিতা অবস্থায় যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিল আমার।
আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো আফরার মুখে মাওয়ারার কথা শুনে। বলল, আমি প্রাইমারীর পর থেকেই হিযাব করি আপি।
হিযাব মুসলিম মেয়েদের স্পেশালিটি। আলহামদুলিল্লাহ এই স্পেশালিটি তুমি বুঝে নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছো। আর আবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, তোমাকে পছন্দ করার পেছনে অনেক কারণ হয়তো আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি তোমার পর্দা করাটা সেইসবের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল। যেহেতু আবির আমাদের পরিবারের সবাইকে সবসময় পর্দা করতে দেখেছে। এছাড়া নিজেও সর্বাবস্থায় চেষ্টা করে শরীয়তের বিধান মেনে চলতে।
আমিও তো চেষ্টা করি শরীয়তের বিধান মেনে চলতে আপি।
এটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাবস্থায় শরীয়তের বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করাটা। তাই কোন বিষয়ে মানুষ কি বললো সেটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীয়ত কি বললো। ধরো কেউ যদি তোমাকে বলে, ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকআত না চার রাকআত পড়তে হবে তোমাকে। কিংবা যোহরে চারের বদলে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়লেই যথেষ্ট। তুমি কি এটা মেনে নেবে?
কক্ষনো না।
কেন?
কারণ কোরআন ও হাদীস থেকে আমরা নামাজের ব্যাপারে যে নির্দেশ পেয়েছি সেটাই মানতে হবে আমাদেরকে।
একদম ঠিক বলেছো। এবং এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট। কে কি বললো, না বললো তাতে কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দেখতে হবে শরীয়ত কি বলেছে। ঠিক তেমনি তোমার পর্দার বিষয়ে আবির বা আমি কি বলছি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীয়ত কিভাবে পর্দা করতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে করছো। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের মানদন্ড কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ। যেখানে ভুল-শুদ্ধ প্রমাণের জন্য শরীয়ত বর্তমান। সেখানে মানুষ কি বলছে তাতে কিছু এসে যায় না।
জ্বি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, আফরা তুমি নিজেকে আয়নায় দেখো। এরপর আবির তোমাকে কিভাবে দেখতে চাইছে আর শরীয়ত তোমাকে কিভাবে থাকতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে আছো সেটা বিবেচনা করে দেখো। তোমার যদি মনেহয় যে, শরীয়ত যেভাবে বলেছে তোমার পর্দা তেমনিই আছে তাহলে আবির কি বললো, না বললো শোনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি দেখো তোমার পর্দাতে ঘাতটি রয়েছে এবং আবির সেটাই দূর করার পরামর্শ দিচ্ছে তোমাকে। এর অর্থ আবির তোমাকে সেই রুপে দেখতে চাইছে যেই রুপে শরীয়ত তোমাকে থাকতে বলেছে। অর্থাৎ, স্বামী হবার সাথে সাথে আবির তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সঠিক পথের প্রদর্শকও। এমন স্বামী পাওয়া তো যে কোন মেয়ের জন্যই সৌভাগ্যের। তাই না?
চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠলেও মুখে কিছু বললো না আফরা। নিজের সাথে ওকে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেবার সময় দিয়ে মারওয়াও আর কিছু না বলে রান্নার আয়োজনে মন দিলো।

চলবে…

Facebook Comments