অভিমানী মনের আত্মদহন… ২য় খন্ড
আফরোজা হাসান
রান্নাঘরে ঢুকে মারওয়া চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দেখে মনেহচ্ছে পুরো রান্নাঘরের উপর দিয়ে ছোট ছাট ঝড় বয়ে গিয়েছে। আফরা লাজুক স্বরে বলল, আমি নাস্তা বানানোর পর রান্নাঘর গোছানোর সময় পাইনি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, কোন সমস্যা নেই। আমি রান্না করার সময় এরচেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হয় রান্নাঘরের।
আফরা হেসে বলল, আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য এমন বলছেন আপি সেটা জানি। গতকাল যখন আপনি রান্না করেছেন আমি দেখেছি সবকিছু কত সুন্দর করে গোছানো ছিল।
মারওয়া হেসে বলল, যখন রান্না করছিলাম তখন তুমি দেখেছো। যখন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন তো দেখোনি। আমি আগে রান্নার সমস্ত উপকরণ রেডি করে নেই। এরপর রান্নাঘর গুছিয়ে তারপর রান্না করি। আমার মনেহয় রান্নাঘর গোছানো থাকলে রান্না করার আনন্দ অনেক বেড়ে যায়। সেই আনন্দের কিছুটা রান্নার উপকরণের সাথে মিশে স্বাদও বাড়িয়ে দেয় খাবারের।
আপনি অনেক মজা করে কথা বলেন আপি। আবির এখানে আসার সময় আমাকে বলেছে আপির কাছ থেকে আর কিচ্ছু শিখতে হবে না তোমাকে। শুধু সর্বাবস্থায় মজা করে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা শিখবে।
মারওয়া হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ! তবে আমি কিন্তু মজা করার উদ্দেশ্যে কিছু বলি না। যেটা মনে আসে সেটাই বলি। তবে এটা কিন্তু সত্যি যে সাজানো গোছানো পরিবেশ আমাদের মনে সুন্দর ও শান্তি শান্তি ভাবের উদ্রেক করে। বাইরে থেকে ফিরে আমি যদি ঘর এলোমেলো দেখি আমার শরীরের ক্লান্তি তো বেড়ে যায়ই, সাথে মেজাজও খিটপিটে হয়ে যায়। এজন্য আমি কি করি জানো?
কি করেন আপি?
বাইরে বের হবার আগে পুরো বাসা সুন্দর করি সাজিয়ে গুছিয়ে নেই। দরজা বন্ধ করবার আগে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করি। যাতে দরজা খোলার পর মিষ্টি ফুলেল ঘ্রাণ আমাকে স্বাগতম জানায়। আবার রান্না করার সময় একদিকে মসলা, সবজি রেডি করবো, অন্যদিকে চুলায় রান্না চাপিয়ে দেবো এমনটাও কখনোই করি না। আমি আগে সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে নিয়ে রান্না শুরু করি। এতে সবটুকুন মনোযোগ রান্নাতেই থাকে। পরিবেশটা সাজানো গোছানো টিপটপ ফিটফাট থাকার কারণে মনটাও ভালো থাকে।
সবসময় এমন নিয়ম মাফিক চলতে পারেন আপি?
না তা অবশ্য পারি না। ব্যস্ততার কারণে অনেকসময় ব্যতিক্রম হয়। অর্থাৎ, একদিক দিয়ে কাটতে থাকি, আরেকদিক দিয়ে চুলায় দিতে থাকি, অন্যদিক দিয়ে গোছাতে থাকি। সেদিন খাবারের স্বাদে তারতাম্য হয়ে যায়। আবার বাসা এলোমেলো রেখে যেদিন বেড়িয়ে যেতে হয় কোন কারণে। ফিরে আসার পর ভালো কথা শুনলেও মেজাজ গরম হয়ে যায়। অকারণেই সবার সাথে চিৎকার-চেঁচামেচি করি। এইসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি একটা পন্থা বের করেছি। ব্যস্ততা থাকলে আমি রেডিমেড কোন খাবারের আয়োজন করি কিংবা একদম শর্টকার্ট কিছুর। যেমন ধরো ডিমভাজি, আলুভর্তা, ডাল। গোছানোর সময় না থাকলে এলোমেলো সব কিছু নিয়ে আলমারিতে ঢুকিয়ে রেখে বিছানাগুলো ঠিকঠাক করে পারফিউম স্প্রে করে বেড়িয়ে যাই। বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে এরপর সব বের করে গুছিয়ে নেই। এমনটা আমি করি কারণ মনের শান্তি বজায় রাখাটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারটা আমি তোমাদের ভাইয়াকে দেখে শিখেছি। উনি এমন সবকিছু এড়িয়ে চলেন যা উনার মনের শান্তিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
আমাকেও শিখিয়ে দেন আপি কিভাবে সর্বক্ষণ মনে শান্তি ভাব বজায় রাখতে হয়।
চলবে