banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 701 বার পঠিত

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪


সাদিয়া মুকিম 


আমরা যা করতে পারি – অন্য সময়ের মতই রমজানে বারে বারে অল্প করে পরিমিত পরিমানে খাওয়ার অভ্যাস করা । যেমন: ইফতার অল্প করা,

একটু পরে অল্প রাতের খাবার খাওয়া , সেহেরীতেও পরিমিত খাওয়া । ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী এই তিন বেলাই খাবার আমরা খাবো কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ না দিয়ে বরং অল্প অল্প করে বার বার পরিমিত এবং ক্যালরি মান অনুযায়ী খেতে হবে। না হলে কিন্তু শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে ।

সেহেরী না খাওয়া: – সেহেরি একেবারেই না খাওয়া ঠিক নয় , প্রথমত, সেহেরী খাওয়া সুন্নত এবং এতে বরকত রাখা হয়েছে। রহমতের ফেরেশতারা এ সময় সেহেরী কারীদের জন্য দোয়া করেন। তাই এই সুবর্ণ সুযোগ হারানো ঠিক নয় । আর সেহরী না খেলে সারা দিনের ঘাটতিতে শরীর ও দুর্বল হয়ে যাবে ।

অনেকে মনে করেন, সেহরি না খেয়ে এক বেলা শুধু ইফতারে খেলে ওজন কমবে।কিন্তু এতে হিতে তাছাড়া সেহেরী না খেলে বিপকক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে দেহে ক্লান্তিআসে ও রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হয় । আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ওজন কমানো না বরং সিয়াম পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।

আমাদের করণীয় হলো কষ্ট হলেও সেহেরি খেতে হবে । একান্ত অরুচী হলে একটু পানি, ফল বা দুধ হলেও খাওয়া চাই । অনেকেই আম -দুধ -চিড়া খেয়ে থাকেন ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরির মাঝে বরকত রয়েছে। (বুখারী)

এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ

“আমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ।” (মুসলিম)

ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় : সারাদিনের রোযা শেষে অনেকেই প্রতীক্ষায় থাকি গরম এক কাপ চা এর জন্য । এমনকি অনেকে সেহরী এবং ইফতার উভয় সময়েই চা পান করেন। খেয়াল রাখতে হবে রোজায় চা, কফির মাত্রা যেনো কম হয় । তা না হলে পানিশুণ্যতা , কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

কারণ, ক্যাফেইন হলো diuretic, যা শরীর থেকেপানি বের করে দেয়।

একান্ত না পারলে বা চা বা ক্যাফেইন যদি খেতেই

হয় , তবে হালকা ক্যাফেইনযুক্ত খাওয়া যেমন:গ্রিন টি। সেহেরিতে ক্যাফেইন না খাওয়াই ভালো, সারাদিন তাহলে পানি পিপাসা লাগবে এবং শরীরে পানি শুন্যতা তৈরী হবে।

রোজা রাখাকে ওজন কমানোর উপায় মনে করা :অনেকে মনে করেন রোজা রেখে ডায়েট করবেন ও ওজন কমাবেন। এটি ভুল, কারণ রোজা রেখে আমরা আল্লাহর ইবাদত করছি , আল্লাহ রোজার মাস দিয়েছেন বেশি বেশি ইবাদাত বন্দেগী করতে, আত্মশুদ্ধি করতে । তাই রোজার মাসকে ডায়েটিং এর মাস না মনে করে আল্লাহতায়ালা আখিরাতকে লাভ করার, গুনাহ মোচন করার যে অপূর্ব সুযোগ দিয়েছেন, তা আমাদের গ্রহণ করা উচিত।

অন্যান্যদের ও ইফতারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া — আমরা নিজেরাতো সামর্থ্যের মধ্যে সবচাইতে ভালো খাবারগুলো সেহরি ও ইফতারে খাচ্ছি, আসুন না তাঁদের পাশেও দাঁড়াই যারা এক মুঠো খাবার ও খেতে পারছেন না অভাবের তাড়ণায়!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ একজন রোযাদারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার জন্যও রোযাদার ব্যক্তির অনুরূপ সওয়াব

রয়েছে যদিও রোযাদারের সওয়াব থেকে কোনো কমতি হবে না।(তিরমিযী)
অনেক পুষ্টিমান যুক্ত, ক্যালরি যুক্ত, স্বাস্থ্যমান বজায় রেখে সেহরি ও ইফতার করছি কিন্তু এই আমি আর আপনি যেনো আল্লাহ তায়ালার দেয়া রিজিক স্বরুপ আমানতকে অপচয় যেনো না করি!

আমরা যেখানে খাদ্যের পুষ্টি মান নিয়ে এতো আলোচনায় মুখর আমাদের এই পৃথিবীর আরেক প্রান্তে ই কোনো মা এই মুহূর্তে তার সন্তানের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে এই কষ্টে যে তাদের কাছে এমন কোনো খাবার নেই যা দিয়ে ক্ষিদে নিবারণ সম্ভব ! সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের শুকর আদায় করার তৌফিক দান করুন।

খাওয়ার সময় যে খাবারটুকু প্লেটের কোনায় রয়ে যায়, পাতিল ধোয়ার সময় নিচে যে ভাত টুকু লেগে থাকে, ময়লা ফেলার সময় যে উচ্ছিষ্ট ফেলতে যাচ্ছি তখন যেনো আমরা প্রত্যেকেই মনে রাখি إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ আল্লাহ অপচয় কারীকে ভালোবাসেন না!

“.وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ﴾….তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের ভালো বাসেন না ।” (সূরা আ’রাফঃ৩১)

রমাদ্বানের বরকতময় সময় চলে যাচ্ছে, আল্লাহ আমাদের ঠিকভাবে ইবাদাত করে উনার সন্তুষ্টি এবং আমাদের পাপ মোচন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার- ওয়েবসাইট সমূহ)

Facebook Comments