banner

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1162 বার পঠিত

 

নাড়া দিলো যে মৃত্যু (শোক আর ভালোবাসায় রাফির বিদায়)


নারী সংবাদ


নুসরাত জাহান রাফি চলে গেছেন। শোক আর ভালোবাসায় তাকে চিরবিদায় জানিয়েছেন তার স্বজনেরা। মৃত্যু এসে তার অগ্নিদগ্ধ শরীরের সব যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু এই মৃত্যু নাড়া দিয়ে গেছে গোটা দেশকে। ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে সমাজের সর্বস্তরে।

নুসরাতের জীবনটাই ছিল প্রতিবাদের। যখন বখাটেরা তাকে উত্ত্যক্ত করত, তখনো সে প্রতিবাদ করেছে। আবার যখন তারই শিক্ষক তাকে লাঞ্ছিত করেছে তখনো সে প্রতিবাদ করেছে। যখন দুর্বৃত্তরা তার প্রায় পুরো শরীর আগুনে ঝলসে দিয়েছে, তখন মৃত্যু শয্যায় সে প্রতিবাদ করে বলেছে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো…। নুসরাত তা-ই করেছে। তার মৃত্যুই এখন শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ। গতকাল তাকে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

রাফি গতকাল ভালোবাসায় চিরবিদায় নিয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে বহনকারী ফ্রিজারভ্যান গতকাল বিকেল ৫টায় পৌর শহরের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মৌলভী বাড়িতে পৌঁছে। ওই বাড়ির মাওলানা এ কে এম মূসার একমাত্র মেয়ে রাফি। তাকে বহনকারী গাড়ি যখন কাশ্মিরবাজার সড়ক হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দুপুর থেকে সেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়। ভিড় ছিল গণমাধ্যমকর্মীদেরও। সবার চোখেমুখে শোকের পাশাপাশি ছিল ক্ষোভও। উৎসুক মানুষের ভিড় সামলাতে পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। একপর্যায়ে লাশ গাড়িতে রেখেই শেষবারের মতো বাবা এ কে এম মূসা, মা শিরীন আকতার, ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানসহ নিকটাত্মীয়দের দেখানো হয়। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। নামাজে জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি কম, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিফটন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, রাফির বাবা এ কে এম মুসা, ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। বক্তারা রাফি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

রাফির বাবা এ কে এম মূসার ইমামতিতে হাজার হাজার মুসল্লি নামাজে জানাজায় অংশ নেন। পরে ভূঁইয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর কবরের পাশেই দাফন করা হয়।

পপি ও জোবায়েরের ৫ দিনের রিমান্ড : রাফি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও এজাহারভুক্ত আসামি জোবায়ের আহম্মেদকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফউদ্দিন আহমেদ এ আদেশ দেন।

ফেনী কোর্ট পুলিশের ওসি মো: গোলাম জিলানি এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, এ মামলায় গ্রেফতার সাতজনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সাত দিন এবং বাকি ছয়জনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে পপিকে মঙ্গলবার সকালে আটক করেছে পুলিশ। রাফির দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী শম্পা হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে এ পপিকে। তার সহপাঠীদের মধ্যে শম্পা নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তদন্তকারী সূত্রের সন্দেহ হয়তো ঘটনার সময় অন্য কেউ ‘শম্পা’ ছদ্দনাম ব্যবহার করেছে।
আসামিদের আইনি সহায়তা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে অব্যাহতি : মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় (পরবর্তীতে নিহত) গ্রেফতারকৃতদের আইনি সহায়তা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা সভাপতি করিম উল্লাহ বি কম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগকে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের দায় ও সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির খুনিদের আইনি সহযোগিতা দেয়ায় স্বীয় দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদস্থলে আবদুর রৌফকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সোহাগ ওই ইউনিয়ন পরিষদেরও চেয়ারম্যান।

ফেনী কলেজছাত্র সংসদের মানববন্ধন :

সোনাগাজী (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, নুসরাত জাহান রাফির নামাজে জানাজায় অংশ নিতে আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীসহ সোনাগাজীর সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। কান্না আর চাপা ক্ষোভ নিয়ে তারা বলছিল সবই আছে নেই শুধু আমাদের রাফি। বাঁচতে দিলো না পাষণ্ডরা আমাদের রাফিকে। সন্ধ্যা ৬টায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মডেল ছাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে রাফির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। নামাজে জানাজা শেষে রাফিকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়। (নয়াদিগন্ত)

Facebook Comments