banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1178 বার পঠিত

 

আত্মহত্যা


জিয়াউল হক


একাকিত্ব বা নিসঙ্গতা আজ সারা বিশ্বের বয়স্কদের মধ্যে এক মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশ, আমাদের ধর্মনিষ্ঠ সমাজও এ থেকে বেঁচে থাকতে পারেনি। বিশ্বের আনাচে কানাচে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বয়স্কদের দিকে নজর দিলেই তাদের চেহারায় একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতাজনিত মানসিক রোগের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

মানসিক রোগের কারণে চিন্তা-চেতনা, বোধ ও বিশ্বাসে যে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা নেমে আসে, তা মানুষের সকল কর্মকা- ও আচার-আচরণকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে থাকে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনরকম পথ না পেয়ে অনেক রোগী শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নেয়; আত্মহত্যা করে। এটা বিশ্বের উন্নত বা অনুন্নত সবদেশেই ঘটে থাকে।
একাকিত্ব হলো এর অন্যতম একটা কারণ, এ কারণেই সম্ভবত (অবশ্য অন্যান্য কারণও আছে) ইংল্যন্ডে প্রতিবছর ৪৫০০ জন আত্মহত্যা করে। এদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪৫ বছরের নীচে।

বিষয়টা এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার জনগণের মাঝে আত্মহত্যা রোধ করতে তার কেবিনেটে তথা মন্ত্রীপরিষদে আলাদা একটা মন্ত্রণালয় করে Minister for Suicide Prevention নামে আলাদা একজন মন্ত্রীই নিয়োগ দিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকার তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছাড়াও পাশাপাশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য দেখাশোনার জন্য একজন প্রতিমন্ত্রী তথা Under Secretary of State (Mental Health and Inequalities) পদ সৃষ্টি করেছে। স্কটল্যান্ডেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী রয়েছেন। এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেসব দেশে কতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে তার একটা ধারণাও পাওয়া যায় বটে।

আত্মহত্যা এ জটিল সমাজ ও জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে একটা অসুস্থ ও চরমতম পন্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর আট লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে থাকে। অর্থাৎ প্রতি চল্লিশ সেকেন্ড সময়ে একজন আত্মহত্যা করছে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই হলো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।৩৬ (এনডিটিভি নিউজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮) ভারতের আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৫ বছর থেকে ২৯ বছরের মানুষই বেশি। ৩৭(ঐ) আগেই বলেছি, আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে একাকিত্ব, হতাশা ও মানসিক অসুস্থতা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, বিগত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ অর্থাৎ পাঁচ কোটি মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। আর এ বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য দেশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছে মাত্র আড়াই শত বা একটু বেশি।

এ বিশাল সংখ্যক মানসিক রোগীর জন্য এত কম সংখ্যক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকার কারণে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মনোরোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে তাদের সে রোগ জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। সময়োচিত ও যথাযথ চিকিৎসা পেলে এসব হতভাগা মানুষদের অধিকাংশই সুন্দর সুস্থ জীবনযাপন করতে পারতো। কিন্তু তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন।

এর ফলে তাদের পরিবারের লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ ও শিশুরা তাদের বাবা-মা, ভাই ও বোনের ভালোবাসা, আদর ও সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত থেকে গেল সারাটা জীবনের জন্য।

আমাদের দেশেও এটা অহরহ ঘটে চলেছে। বাংলাদেশে বিগত ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বমোট ১১০৯৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন! আত্মহত্যার কারণ হিসেবে যে তথ্যটা উঠে এসেছে, তাও খুবই ভয়ানক ও দুঃখজনক!

জরীপ বলছে, অত্যন্ত ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ অবস্থা ও মানসিক চাপের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে ব্যর্থ হয়ে এবং কোনরকম সহায়তা না পেয়ে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।৩৮ (The Dhaka Tribune, 27 March, 2018 ২০১৮ সংখ্যা দ্রষ্টব্য)

এটি খুব দুঃখের বিষয় যে, একটি মুসলিম প্রধান দেশেও এত বিশাল সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করবে, অথচ মহান আল্লাহ্ বলছেন- ‘তোমরা আত্মহত্যা করো না।’ (আল কুরআন, সুরা নিসা: ২৯)

Facebook Comments