আফরোজা হাসান
আম্মুকে মন খারাপ করে বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলতে দেখে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলো মাশফিয়া। কিছুক্ষণ যেতেই মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলো। এখনো আসছে না কেন ভাইয়া? কি এত কথা বলছে আম্মুর সাথে? সেকি গিয়ে দেখবে? কিন্তু আম্মু বলে দিয়েছে যখন একজনের সাথে কথা বলা হয় তখন যাতে অন্যজন সেখানে না যায়। মামীমা কি মুসআব ভাইয়াকে মারবে আপ্পি? প্রশ্নটা শুনে পাশে বসে থাকা দুই বছরের ছোট ফুপাতো ভাইয়ের দিকে তাকালো মাশফিয়া। চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে জবাবের অপেক্ষা করছে তাশফিন।
মাশফিয়া বিরক্ত কন্ঠে বলল, আম্মু কখনোই আমাদেরকে মারে না বুঝেছো?
ডানে বামে মাথা নাড়াতে নাড়াতে তাশফিন বলল, আমার আম্মুতাও আমাকে কক্ষনো মারে না। কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলল, আপ্পি মুসআব ভাইয়া পঁচা কাজ করেছে তাই না? আম্মুতাকে সব বলতে হয়। আমি আম্মুতাকে সব বলি।নয়তো আল্লাহ বিরক্ত হন।আর আল্লাহ বিরক্ত হলে মারা যাবার পর আমাদেরকে জান্নাত দেবেন না। জান্নাতে যেতে না পারলে তো সব শেষ। আমি কত কিছু লিখে রেখেছি জান্নাতে গিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবার জন্য।
মাশফিয়া বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তুমি কথা বেশি বলো, বুঝেছো? মুসআব ভাইয়া আর আমিও আম্মুকে সব বলি। মুসআব ভাইয়া আম্মুকে কষ্ট দিতে চাইনি তাই ক্লাসে মারামারি করার কথা বলেনি।
তাশফিন মনখারাপ করে বলল, আম্মুতা বলেছে কোন কাজ করার আগে ভেবে দেখতে সেটা করলে আল্লাহ খুশি হবেন নাকি কষ্ট পাবেন! কারণ আম্মুতা-বাবা আমাকে সবসময় দেখতে পায় না। কিন্তু আল্লাহ সবসময় আমাকে দেখতে পায়। তাই আমাকেও আল্লাহর খুশি আর কষ্ট দেখতে হবে।তুমি জানো আমাদের দুই কাঁধে দুইটা অ্যাঞ্জেল আছে? তারা সবকিছু লিখে রাখেন। তুমি যদি চুপিচুপি কিছু করো সেটাও লিখে ফেলেন। আর অ্যাঞ্জেলরা কক্ষনো ঘুমায়ও না। বলে লম্বা একটা দীর্ঘাশ্বাস ছাড়ল তাশফিন।
মাশফিয়ার বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাতিজী আর ছেলের কথোপকথন চুপচাপ শুনছিল অন্তরা। ছেলের দীর্ঘশ্বাস শুনে হেসে ফেললো। উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলল, অ্যাঞ্জলরা ঘুমায় না বলে কি তোমার মনখারাপ লাগে তাশফিন?
তাশফিন বলল, মাঝে মাঝে একটু একটু লাগে আম্মুতা?
অন্তরা হেসে বলল, তারমানে তো তোমারো অনেক দুষ্টু কাজ করতে ইচ্ছে করে?
মনের ইচ্ছারা আম্মুতার কাছে ধরা পরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে নিজেকে তাড়াতাড়ি সামলে নিলো তাশফিন। কথার মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্য বলল, আজ আমি যে গল্পটা পড়েছি সেটা থেকে কি শিখেছি জানো আম্মুতা?
অন্তরা হাসি চেপে বলল, কি শিখেছো?
কখনোই আমাদের স্বার্থপর হওয়া উচিত না। স্বার্থপর হয়ে অন্যের ক্ষতি করতে গেলে নিজেরই ক্ষতি হয়।
অন্তরা বলল, মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর কথা শিখেছো তো। আচ্ছা এখন তুমি লিখো যে পুরো গল্পটা থেকে তুমি কি বুঝেছো। রাতে আমরা বাসায় ফেরার পর আম্মুতা দেখবো, ইনশাআল্লাহ।
বিছানা থেকে নেমে মাশফিয়া আর তাশফিনকে আদর করে দিয়ে রুম থেকে বের হলো অন্তরা। করিডোরে মুসআবের সাথে দেখা হলে ফুপ্পিকে জড়িয়ে ধরলো মুসআব।
অন্তরা আদর করে বলল, কি আম্মু বেশি বকা দিয়েছে?
মুসআব বলল, না আম্মু কিছুই বলেনি। তুমি কিন্তু আজ যেতে পারবে না ফুপ্পি। আরো দু’দিন থাকতে হবে তোমাকে।
হাত দিয়ে মুসআবের চুল এলোমেলো করে দিয়ে অন্তরা হেসে বলল, আচ্ছা এই ব্যাপারে আমরা পরে কথা বলবো। তুমি যাও হোমওয়ার্ক সেরে ফেলো। এরপর আমরা সবাই মিলে পার্কে ঘুরতে যাবো।
রান্নাঘরে ঢুকে পিজা বানানোর জন্য সবকিছু তৈরি করছিল নায়লা। দরজায় নক শুনে তাকিয়ে ননদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, সেকি তুমি উঠে এলে কেন? তোমার না মাথা ব্যথা করছে বলে ঘুমোতে গেলে কিছুক্ষণ!
অন্তরা রান্নাঘরে ঢুকে হেসে বলল, ঘুমিয়েছি কিছুটা। মাথা ব্যথাও কমে গিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। পিজা বানানো হবে বুঝি?
নায়লা বলল, হুম…মুসআবের খুব পছন্দ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আচ্ছা অন্তরা আমার চেহারাটা কেমন বলো তো?
অন্তরা হেসে বলল, মাশাআল্লাহ একদম পরে না চোখের পলক ধরনের। সাধে তো আর আমার ভাইয়া এমন পাগল না তোমার জন্য।
নায়লা হেসে বলল, ধাৎ, তোমার সবকিছুতেই শুধু দুষ্টুমি। আমি বুঝি না আমার চেহারাতে এমন কি আছে যার কারণে বাচ্চারা আমাকে এত ভয় পায়। তুমি জানো মুসআব ওর কথা গোপন করার পেছনে কি কারণ বলেছে?
আমি জানি ভাবী। মুসআবের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমার তো মনেহয় এখানে তোমার মন খারাপ না করে বরং আনন্দিত হওয়া উচিত তোমার বাচ্চারা তোমাকে এতটা ভালোবাসে যে তোমাকে কষ্ট দিয়ে চায় না। ভাবী বাচ্চাদের মনের এই ভালোবাসাটাই যদি তুমি আল্লাহর দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারতে তাহলেই অনেক সমস্যা কমে যেত।