banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 587 বার পঠিত

 

সুস্থ শিশুর জন্য নিশ্চিত করুন নিরাপদ মাতৃত্ব


নারী সংবাদ


নিরাপদ মাতৃত্ব একজন নারীর অধিকার। সুস্থ সন্তানই আগামী দিনের সুস্থ নাগরিক। একটি সুস্থ শিশুর জন্মের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ মাতৃত্ব।
একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। মা সুস্থ থাকলে সন্তান সুস্থ থাকবে। মা হওয়া একজন নারীর জন্য, পরিবারের জন্য, এক সুখকর অনুভূতি। তবে মা হওয়া নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ, একজন নারী যতবার গর্ভধারণ করে, ততবারই তার জীবনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই, একজন মাকে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে হলে পরিবারের সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া খুবই জরুরি।
অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মতে নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ সন্তান নিশ্চিত করার জন্য সুষম খাবার ও চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্বও অপরিসীম। এই সচেতনতা পরিবারের সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
গর্ভবতী মায়ের প্রতি যথাযথ যতœ নিতে হবে। স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে বুঝতে হবে যে, সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দেয়া এবং ভবিষ্যৎ সন্তানের দায়ভার শুধু প্রসূতির ওপর এককভাবে চাপিয়ে দিলে চলবে না। একটি নতুন মুখের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হয় গর্ভাবস্থায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ এবং সুষম খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য কর্মী আবুল বাশার বলেন, গর্ভাবস্থায় নিজের সম্বন্ধে সচেতন না থাকা বা নিজের যথাযথ যতœ না নেয়ায় অনেক মায়েরই শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় যদি মা অতিরিক্ত মোটা হতে থাকে এবং হাত-পায়ে পানি এসে যায়, ঘন ঘন মাথা ব্যথা হতে থাকে, রক্তচাপ বেড়ে যেতে থাকে। এ সময় দেরী না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাতৃত্ব নিরাপদ করার জন্য প্রথমে নারীকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সে লক্ষেই সরকার জাতিকে ১শ’ ভাগ শিক্ষিত মা উপহার দেয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষা উপ-বৃত্তি দেয়ার পাশাপাশি ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলমুখী করতে সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারের যোগান দেয়ার পাশাপাশি আগামী দিনের মা ও বর্তমান কিশোর-কিশোরীদেরও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হবে।
গ্রাম পর্যায়ে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা থেকে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী মায়েদের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে।
বিশিষ্ট ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. ইসমাত আরা বলেন, গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, প্রয়োজন হয় বাড়তি যতেœর। গর্ভাবস্থায় একজন মাকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হয় এসময় প্রসূতিকে পর্যাপ্ত সুষম খাবার দিতে হবে।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। প্রথমত গর্ভাবস্থায় ৫ মাসের মধ্যে রক্তক্ষরণ হওয়ার অর্থ হলো গর্ভের ভ্রুণটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বা গর্ভপাত হবার আশংকা। রক্তক্ষরণ হবার পরপরই যদি ব্যথা শুরু হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, ভ্রুণটি আর গর্ভে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকছে না, জরায়ু থেকে বেরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রকম অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ সময় ভারি কোন কাজ করা একেবারে নিষিদ্ধ। নিজের এবং গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মাঝে মাঝেই চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীর কাছে নিয়ে যেতে হবে।
পরিবার থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে মাকে তার স্বাস্থ্যসেবা সম্বন্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। নিয়মিত ও পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রঙীন এবং সবুজ শাক-সবজি তরি-তরকারি খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ সময়ে সেবা, পরিচর্যা ও ভালবাসা পাবার অধিকার আছে প্রতিটি নারীর। এ অধিকার তাকে অবশ্যই দিতে হবে। তাদের এই অধিকার পূরণ হলে, আর অসচেতনতা দূর করে জটিলতার দ্রুত মোকাবেলা করতে পারলে, ঝুঁকিমুক্ত মাতৃত্ব সম্ভব।
সুত্রঃ বাসস।

Facebook Comments