নুসাইবা ইয়াসমীন
ক্যান্সার মূলত একটি অনাকাঙ্ক্ষিত জীবনের গল্প। খুব সাধারন সাজানো জীবনটা মুহুর্ত্বের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বদলে যেতে পারে ক্যান্সার নামক ব্যাধির কারনে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারকে মৃত্যুর দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং চলতি বছর ক্যান্সারজনিত কারনে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৯৬ লাখ।
নারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি দেখা যায়।
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশের শীর্ষে বেলজিয়াম, নেদারল্যানড, ফ্রান্স ইত্যাদি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও এর প্রকোপ লক্ষণীয়।
অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সঠিক ধারনার অভাব প্রতি মূহুর্তেই হাজারও নারীকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে। একটু সচেতনতা এবং সঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হলে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব ৯০ শতাংশ।
স্তন ক্যান্সারের মৌলিক ধারনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়গুলো জানা দরকার তা হলো কে বা কারা এই ঝুঁকিতে রয়েছে এবং স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি হতে পারে!
যাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে যাদের:
* যেসব নারীর বয়স ৪০ বছরের বেশি তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
* অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* যেসব মায়েরা সন্তানকে কখনও স্তন্যপান (breast feeding) করাননি।
* ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন।
* যাদের তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় ও দেরিতে মাসিক বন্ধ (menopause) হয় তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* একাধারে অনেকদিন (১০ বছর বা বেশি) জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
* অতিরিক্ত মদ্যপান ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনপদ্ধতি।
যদিও উল্লেখিত বিষয়গুলো ক্যানসারের ঝুঁকির কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তবে বাস্তব চিত্র অনুযায়ী প্রতিটি নারীই এই ঝুঁকির আওতায় রয়েছে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
• স্তনের কোন অংশে চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া।
• স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া।
• স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া।
• বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া।
• স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
প্রাথমিক সচেতনতা অনুযায়ী প্রত্যেকেই উচিত নিয়মিত স্তনের স্বাভাবিক আকারকে লক্ষ্য রাখা এবং অন্তত প্রতি দুই সপ্তাহে নিজে নিজে বাসায় পরীক্ষা করা। যাদের বয়স ৪০ উর্ধ্ব তাদের বছরে একবার ম্যামগ্রাম করা প্রয়োজন। একমাত্র সচেতনতাই পারে ক্যান্সারকে জয় করে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে।
ক্যান্সার মরন ব্যাধি হিসেবে পরিচিত হলেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাতিরে ক্যান্সার রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করে পরিচালনা করতে পারেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন।