banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 669 বার পঠিত

 

মিতু চলে গেলো


জুয়াইরিয়া জাহরা হক


চাচা দুই দিন পরপর বাসায় আসেন ।
বক্স ভরে খাবার আনেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সব শেষে বাসাটা বদলানোর কথা বলে যান। আমি শুনি। চলে গেলে এক কড়াইয়ে ভাত তরকারি গরম বসাই। জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় প্রতিবারই খাবার পুড়িয়ে ফেলি।
বিল্ডিংটার পাশে একটা নর্দমা। প্রচুর মশা আসে রাত্রে। আমি মশারি টাঙাই না। মিতু থাকলে একদিন পর একদিন টাঙাতেই হত। দিন ভাগ করা ছিলো। যেদিন আমি মশারি টাঙাবো, সেদিন কোলবালিশ আমার। পরেরদিন আবার ওর। হাটু ব্যাথা-কোমর ব্যাথার জন্য মাসে দুই দিন বোনাস। সেদিন মশারিও টাঙানো লাগবে না আবার কোলবালিশও পাবো!
রাতে আমার ঘুম হয় না। বাতি নিভিয়ে দিলে সিলিং এ তারা জ্বলে। সাথে অনেকগুলো গ্রহ। নীলক্ষেত থেকে আলো জ্বলা এই স্টিকারগুলো আমিই এনে দিয়েছিলাম মিতুকে। পকেটে চিরকুট দিয়ে দিতো। টিফিন ক্যারিয়ারে চিঠি লিখে দিতো। শেষমেশ যেদিন মনে করে নিয়ে গেলাম, সেদিন তো কেঁদেই দিলো!
‘দরকার নাই। কেন আনলেন? ফেলে দেন সব ‘, এসব বলার পর চোঁখ মুছতে মুছতে চেয়ার – মোড়া দিয়ে উঠে সিলিংটা আমার সৌরমণ্ডল বানিয়ে ফেললো!
শেষরাতে একটু ঘুম হলে খুব ভাল্লাগে! যদি মিতুকে
স্বপ্নে দেখি! গত সপ্তাহে একবার দেখেছিলাম। কালো শাড়ি গায়ে। ছাদে কাপড় নাড়ছে। কি যে সুন্দর লাগছে!

মিতুর সাথে আমার বিয়েটা দেন চাচা। বাপ-মা মরা ছেলে, নীলক্ষেতের ফটোকপির দোকানের কর্মচারীর জন্য এর চাইতে ভালো রিশতা আর হয় না। মেয়েরও বাপ মা নাই। নানির কাছে থাকে। দেখতে ভয়াবহ সুন্দর। সমস্যা সামান্য, কোন এক বখার সাথে দুই একবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো!
প্রথমে একটু খুতখুত লাগলেও মিতুকে দেখার পর বেমালুম সব ভুলে গেলাম। কোন সুস্থ মস্তিষ্ক এতো সুন্দর মানুষ দেখার পর ঠিক থাকতে পারে না। আমিও পারি নি! হকার্স মার্কেট থেকে সুন্দর দেখে শাড়ি কিনলাম। পায়ের মাপ আন্দাজ করে পুতি বসানো একজোড়া জুতা সাথে মায়ের একটা নাকফুল। ট্রাংক ঘেটে একটা ছোট টিকলিও পাওয়া গেলো!
এই বাসায় মিতুকে নিয়ে উঠি। এক রুমের বাসা এখন আlর পাওয়া যায় না। সাবলেট ভালো লাগে না। কার্ডবোর্ড দিয়ে আলাদা করা। একপাশ থেকে আরেকপাশের কথা দিব্যি শোনা যায়! অনেক কষ্টে শনির আখড়ার এই বাসাটা পেয়েছিলাম।
বাসায় উঠার পর মিতু সুন্দর করে ঘর গুছিয়ে ফেললো। একটা আলনা, একটা ছোট কাঠের টেবিল আর ঘুমাবার জন্য একটা তোষক। এই ছিলো সব মিলিয়ে। কিন্তু কি কারনে যেন ঘরটা অসাধারণ সুন্দর লাগতো!
এখন কেমন এলোমেলো করে রাখি। মিতু থাকলে খুব রাগ করতো। মিতু খুব গোছানো মেয়ে। চলে যাওয়ার দিনও ঘরটা গুছিয়ে রেখেছিলো।
পরিষ্কার মনে পড়ে, আমি রাত করে বাড়ি ফিরেছি। দেখি দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দেখি ফ্যান ঘুরছে। একটু যেন কেমন লাগলো। মিতু বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছে। ডাক দিতে যেয়ে দেখলাম মুঠ করা একটা কাগজ। হাতে ছোঁয়া লাগতেই বুকটা ধক করে উঠলো! এতো ঠান্ডা কেন!
চিরকুটে কিসব আজেবাজে কথা লিখে রেখেছে! মাফ চেয়েছে। বিয়ের আগের সেই ছেলেটাকে ভুলতে পারেনি! বিষ খেয়েছে!
হাসপাতাল নিবো। হাতে একদম টাকা ছিলো না। আলনার পেছনে একটা মাটির ব্যাংকে মিতুর জমানো টাকা ছিলো। প্রতিদিন আমার থেকে নিয়ম করে ও পাঁচ টাকা নিতো। পাঁচ হাজার টাকা হলে একটা পুরান খাট কেনার প্ল্যান ছিলো।
মিতু জানতে পারলো না ও চার হাজার পঁচাত্তর টাকা জমিয়েছিলো!

Facebook Comments