হাবিবা মৃধা
প্রিয় মা মণি,
অসুস্থতার আজ সপ্তাহ পার হতে চলল! খুব করে ইচ্ছে করছিল আম্মুর হাতের আদর আর কোলে মাথা রেখে দোয়া নিতে , আল্লাহ্ আমার জাদু কে ভালো করে দাও! আম্মুকে এই ইচ্ছের কথা বললে তিনি যেকোন ভাবে চলে আসার বয়না করতেন অথবা আব্বু নিজেই নিয়ে আসতেন! কিন্তু আবেগের এই চাওয়াটুকু একেবারেই মুল্যহীন কংক্রিটে গড়ে ওঠা স্বপ্ন ও বাস্তবতার কাছে ! চাইলেই সবটুকু আবেগ গুরুত্ব দেয়া যায় না! আম্মু দুর থেকে দোয়া করছেন আমি জানি সে দোয়া আল্লাহর আরশে পৌছে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী! মেরুদণ্ডে খুব ব্যাথা, একটু নড়াচড়া করতে পারিনা সবচেয়ে বড় কষ্ট সিজদা দিতে না পারার!
আজ তোমার ভিডিও কলের এই দোয়াটুকু আমায় যেন একেবারে ই সুস্থ করে তোলার দ্বার প্রান্তে! মাত্র আড়াই বছরের মেয়ে খেলায় দুষ্টুমিতে যার মন ছুটে বেড়ায়, সে আবার একদম মায়ের মত হাত তুলে পুরো রাব্বানা জলামনা সহ কত দোয়া করে আবার আমীন বলে শোনায়! এই দেখ ফুফি মোনাজাত করেছি এখনি তোমার ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে!
অসুস্থতার সময় সুস্থতাকে পৃথিবীর সেরা নিয়ামত মনে হয়, কেউ একটু দোয়া করলে ভিতরটা প্রশান্তিতে ভরে যায় অথচ যিনি দোয়া করেন তিনি নিজেও উপকৃত হন কারণ দোয়া ইবাদতের মুল! তাছাড়া হাদীসের বাণী অনুযায়ী নিজের ও অন্যের জন্য দোয়া করলে এর সওয়াব নিজের আমলনামায় জমা হয়!
তুমি এখন ছোট হলেও বাবার বড় মেয়ে তাই কখনো ছোট ফুফি হতে পারবেনা তবে ফুফি হবে যদি আল্লাহ্ চান! হয়তো বুঝবে হয়তো বুঝবে না ভাতিজির জন্য কলিজাটা কিভাবে পুড়তে থাকে সারাক্ষণ!. একদিন তুমি বড় হবে, মানুষ হবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনে পা বাড়াবে ! শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখতেই তোমাকে ভুলতে হবে আজকের একলা কাটানো অবসর সময় গুলো!প্রতিযোগিতাময় পৃথিবীর মঞ্চে নিজেকে উপস্থাপন করতে তোমার ও প্রতিটি দিন হবে কোলাহল ময় বেড়ে যাবে ব্যস্ততা! হয়ত সেদিন তোমার আর আজকের মত মন কাঁদার সময়টুকু হবেনা! কোন এক বিকেলে বিস্মৃত স্মৃতিতে মনে হতে পারে ফুফির কথা!
আমি যখন হলে এসে একমিনিট ভিডিও কলে তোমাকে দেখি আর সারাক্ষণ কানে বাজে ফুফি তোমাকে খুব মিস করি!এতগুলো মিস করি সত্যি বলছি তুমি চলে এসো!
আমি কত পাষাণ তাইনা! এরপরেও থেকে যাই আমার স্বপ্নকে বাস্তবতায় রুপ দেয়ার প্রিয় আঙিনায় ! আমার দোয়া ও ভালোবাসা থাকবে সবসময়! ভালো থেকো কলিজা!!
তোমার ছোট ফুফি!
26/7/18
লেখিকা: কবি সুফিয়া কামাল হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!!