banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 806 বার পঠিত

 

নারীর নির্যাতনের আরেক রূপ

নারী সংবাদ


ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠানগরের উত্তর হরিপুর গ্রাম থেকে অর্ধবস্ত্রহীন হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা নির্যাতনের শিকার এক গৃহবধুকে রোববার সন্ধায় উদ্ধার করেছে পুলিশ । ওই গৃহবধুর কেটে ফেলা হয়েছে মাথার চুল । চার দিন ধরে বাঁধা তাহেরা আক্তার রিনা নামের ওই গৃহবধুকে বোতলে ভরে জোরপূর্বক স্বামীর প্রসাব পান করান সহ সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূ।

জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার কাতালিয়া গ্রামের মৃত আমিনুল আহছান বাবুলের দশম শ্রেণি পড়ুয়া এতিম মেয়ে তাহেরা আক্তার রিনাকে (২০) ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের উত্তর হরিপুর গ্রামের হাজারী বাড়ির দুই সন্তানের জনক মনজুরুল আলম বাদল হাজারীর (৫৪) সঙ্গে গত বছরের মার্চ মাসে বিয়ে হয়। মেয়ের মা বিবি ফাতেমা পারুল ও তার মামারা মিলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রিনাকে বাদল হাজারীর কাছে বিয়ে দিলেও বিয়েতে রিনার মত ছিল না।

বিয়ের পর রিনা জানতে পারে এর আগে বাদল হাজারীর আরো দুইটি স্ত্রী ছিল। তাদেরকে সে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা। বিয়ের পর থেকে বাদল চৌধুরী ও মেয়ের মাসহ স্বজনদের চেষ্টার পরও রিনা বাদল হাজারীকে স্বামী হিসেবে মেনে না নিয়ে পালিয়ে যায়।

গত কয়েকদিন আগে রিনা ঢাকা থেকে কুমিল্লার ছিওয়াড়ায় তার নানীর বাড়িতে যায়। সেখান থেকে তাকে মামা, মা ও ছোট ভাই ধরে স্বামীর হাতে তুলে দেয়। গত চার দিন ধরে বাদল চৌধুরী তার বাড়িতে রিনাকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে নির্জন কক্ষে আটকে রাখে।

পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তার মাথার চুল কেটে ফেলা হয়েছে। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে তার কাপড়-ছোপড়। স্বামীর কথা মানতে অস্বীকার করায় শরীর থেকে জোরপূর্বক বেশিরভাগ কাপড় খুলে অর্ধবিবস্ত্র করে রাখা হয় তাকে। রিনার সামনে প্রস্রাব করে বোতলে ভরে জোরপূর্বক প্রসাব পান করানোসহ কয়েক দিন ধরে তার ওপর চালানো হয় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। এ কথাগুল থানায় বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রিনা ।

নির্যাতনের ফলে তোড় শোর চিৎকার করে সাহায্য চাইলেও তার স্বামীর ভয়ে বাড়ির কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ এতিম রিনার।

এলাকা থেকে গোপনে সংবাদ পেয়ে রোববার বিকেলে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের এসআই নাঈম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য বাড়ি ঘেরাও করে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরের তালা ভেঙ্গে শিকলসহ রিনাকে উদ্ধার করে । পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামী বাদল চৌধুরী পালিয়ে যায়। নির্যাতিতা গৃহবধু তাহেরা আক্তার রিনা তাকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।

ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মুর্শেদ পিপিএম উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে নয়া দিগন্তকে জানান, গৃহবধূকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে ।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন বাড়ছে : বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশের একটি বেসরকারী সংস্থার পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে দেশটিতে নারী নির্যাতন বাড়ছে এবং গত তিন বছরে পনের বছরের কম বয়সী কিশোরীরা বেশী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারী সংস্থা, ব্র্যাক, বুধবার ঢাকায় গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করে বলেছে যে বিভিন্ন জেলা থেকে তারা নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেসব তথ্য পেয়েছেন তাতে দেখা গেছে এসময়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষনের শিকার হয়েছেন এবং ৫৯ শতাংশের ওপর ধর্ষনের চেষ্টা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের একশ’ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঐ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ব্র্যাকের গবেষকরা বলছেন যে ২০০৬ সালের জুন থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নারী নির্যাতনের প্রায় তিন হাজার তথ্য সংস্থাটির ঢাকা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিলো। ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের নিজস্ব কর্মীরাই এসব তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

এসব তথ্য বিশ্লেষন করেই নারী নির্যাতন সম্পর্কিত ব্র্যাকের গবেষণা রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের উর্ধতন গবেষক ড. ফজলুল করিম।

তিনি বলেন যে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষিতা হলেও ২৫-৩০ বছরের মহিলাদের মধ্যে ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৩৮ শতাংশ।

অ্যাসিড সন্ত্রাসের যারা শিকার তাদের যেমন পূনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে, ধর্ষনের শিকার যারা তাদের বেলায তেমনটি নেই
ড. করিম
এটা দেখা গেছে যে বয়স যত বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা তত কমেছে, আর ধর্ষনের শিকার বেশী হচ্ছেন স্কুলগামী মেয়েরা।

ড. করিম বলেন যে অ্যাসিড সন্ত্রাসের যারা শিকার তাদের যেমন পূনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে, ধর্ষনের শিকার যারা তাদের বেলায তেমনটি নেই।

আর তাই গবেষণায় দেখা গেছে যে আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে ধর্ষনের শিকার অনেক কিশোরীই হয় নিরবে তা সহ্য করেছেন কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

তিনি বলেন বাংলাদেশের আইন-কানুন এমন যে অনেক সময় ধর্ষনের ঘটনা আদালতে প্রমান করার ক্ষেত্রে ধর্ষনের শিকার মেয়েদেরকে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। সূত্র: নয়াদিগন্ত

Facebook Comments