banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1493 বার পঠিত

 

মাতৃকথন (মূল সমস্যা বাচ্চা খায় না) ৯

ফারিনা মাহমুদ


মূল সমস্যা – বাচ্চা খায় না ।­

১) প্রথমত, জয় গুরু শেক্সপিয়ার! আই মাস্ট বি ক্রূয়েল, অনলি টু বি কাইন্ড। পরিবারের সবার সাথে বসে আগে আলোচনা করে একমত হন, খাওয়া নিয়ে এই নাটকের অবসান সবাই চান কি না। এরপর মাথায় রাখবেন এপ্রোচ কখনো কখনো আপাত দৃষ্টি তে রুড হতে পারে। দুর্গম গিরি কান্তার মরু পার হতে গিয়ে গেইম প্ল্যানে কচ্ছপ কামড় দিয়ে পড়ে থাকুন। নিজেদের মধ্যে মাঝপথে মারামারি করে রণে ভঙ্গ দিলে মিশন ইম্পসিবল। শত্রু পক্ষ অর্থাৎ আপনার অর্থাৎ আপনার ঘাউড়া বাচ্চা এই সুযোগ ষোলো আনা নিবে।

২) একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাচ্চার খাবার শেষ করবেন। ঘন্টার পর ঘন্টা খাবার নিয়ে সামনে মা মুখে খাবার নিয়ে বাচ্চার বসে থাকা চলবে না। স্কুলের টিফিনের ঘন্টার মতো একটা সময় বেঁধে নেবেন। এর মধ্যে খাইলে খা, না খাইলে যা কেইস। এই ট্রিক্স বিফলে মূল্য ফেরত ট্রিক্স। ৭ দিন কষ্ট করে এই ট্রিক্স পালন করে দেখেন। আলো আসবেই। এইখানেই মূলত বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়, বাচ্চাটা খাচ্ছে না, এই নাটকের কোনো মানে হয়… কোথাকার কোন ফারিনা মাহমুদ ফেসবুকে কি লিখলো, তা নিয়ে আমার সংসারে আগুন… ব্যাস, একজন ব্যাকফায়ার করে বসে! পরিকল্পনার পরী ডানা মেলে উড়ে যায়, কল্পনা পড়ে থাকে!

৩) বাচ্চা খায় না খায় না করে ঘন ঘন খাবার সাধবেন না। সকালের নাস্তা ঠিক মতো খাক না খাক, ঠিক স্ন্যাক টাইমেই তাকে আবার খাবার দেবেন। দিনে ৫ বার রুটিন ধরে খাবার দিলে বাচ্চা আপনা থেকেই বুঝে যাবে খাবার যখন সামনে আসে, তখন তা খেতে হবে, নাইলে বিপদ, কপালে খাবার নাই আগামী ৩ ঘন্টা !

৪) বাচ্চাকে চেয়ে খাওয়ার সুযোগ দিন। অর্থাৎ তার ক্ষুধা লাগার সুযোগ তৈরী করুন। তাকে পর্যাপ্ত খেলতে দিন। একসময় সে নিজেই খেতে চাইবে। এইটা জীবের ধর্ম। বাকি জীবন খাবারের পেছনেই সে ছুটবে, খাবার তার পিছে ছুটবে না!

৫) যত বড় বাচ্চা তত বড় ঘাউড়া। সাধারণত বলা হয় যত বছর বয়স, তত মাস লাগে অভ্যাস চেঞ্জ হতে। তাই ছোট থাকতেই লাইনে আনেন। আর অলরেডি যদি বেলাইনে নিয়েই থাকেন তো এখনই ধৈর্য ধরে শুরু করে দিন।

৬) শুরু করাটা খুব মুশকিল। একদিনে সব সম্ভব না। শুরু করবেন এক বেলার খাবার দিয়ে। আস্তে আস্তে অন্যবেলা গুলিতেও জোরাজুরি বন্ধ করে স্বাভাবিক ভাবে খাবার অভ্যাস করবেন।

৭) সুস্থ্যতার মাপকাঠি কখনোই গাপলু গুপলু মোটাসোটা হওয়া না। বরং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওবেসিটি একটা ভয়ঙ্কর জিনিস। আমি ওভারওয়েট বাচ্চার মা কে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি এই বলে যে ওকে ওর কোনো ফ্রেন্ডের বার্থডে তে যেতে দেই না, কেক মিষ্টি বার্গার খেয়ে ফেলবে, তাই!

আর উপরের কোনো তরিকাই যদি কাজ না করে, তো আয়নার সামনে চলে যান । নিজের দিকে ভালো করে দেখুন, এরপর মনে মনে বলুন – তু চীজ বাড়ি হ্যায় মাস্ত মাস্ত …. ! আমার ঘরে আমার মতোই আরেকটা চীজ হয়েছে! নো ওন্ডার! নিশ্চই আমিও বাপ মা কে কম প্যারা দেই নাই! হিস্টোরি রিপিটস ইটসেলফ ! আমার ধারণা ইংরেজী প্যারেন্টহুড শব্দটার উৎপত্তি বাংলা প্যারা শব্দটা থেকে ।
প্যারেন্ট হবেন প্যারা খাবেন না, তা হবেনা তা হবেনা !

হ্যাপি প্যারেন্টহুড অল !

চলবে 
পর্ব ৮

Facebook Comments