কানিজ ফাতিমা
পূর্বের কয়েকটি পর্বে দ্বন্দ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্বন্দ ব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি উপায় হল Avoiding বা নিশ্চুপ থাকা। স্বামী বা স্ত্রী যদি কোন কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ বা চাপের মুখে থাকে (Streesed) কিংবা অসুস্থ থাকে তবে তার মধ্যে দ্বন্দ ও বিরোধ সৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে অন্যপক্ষের দায়িত্ব হল Avoid বা নিশ্চুপ ও নিষ্ক্রিয় থাকা। কারণ সময়ের ব্যবধানে আপনা আপনিই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা বিবাহোপযোগী প্রতিটি নারী-পুরুষের জানা প্রয়োজন তা হল মাসিক কালীন ও মাসিক পূর্ব নারীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ও এর কারণে সৃষ্ট দ্বন্দ। গবেষণায় দেখা গেছে মাসিকের সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Stress) এর সম্পর্ক রয়েছে। মাসিকপূর্ব ও মাসিক কালীন নারীদেহে যে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে তার প্রভাব কেবল নারীর শরীরে পড়ে না, নারীর মনের ওপরও এর সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। ইংরেজিতে এ অবস্থাকে বলা হয় Premenstrual Syndrome বা PMS. দুইশ’রও বেশি লক্ষণ রয়েছে PMS এর। তবে সব থেকে বেশি দেখা যায় তিনটি-
১. Irritability বা খিটখিটে ভাব
২. Tension বা দুশ্চিন্তা
৩. Dysphoria (Unhappiness) ভাল না লাগা।
মাসিকের সময় যে শারীরিক কষ্ট হয় তার মধ্যে রয়েছে-
১. বমি ভাব
২. অরুচি
৩. মাথা ব্যথা
৪. দুর্বলতা (Fatigue)
৫. ঘুমের সমস্যা ও
৬. তলপেটে ব্যথা/কোমর ব্যথা ইত্যাদি।
মাসিক বা মাসিকপূর্ব (PMS) সময়ে যে মানসিক পরিবর্তনগুলো গবেষণায় বের হয়ে এসেছে সেগুলো হল-
১. Depression – অনেক সময় মাসিকপূর্ব Depression যখন মারাত্মক আকার নেয় তখন একে বলা হয় Premenstrual Dysphoric Disorders (PMDD) যে নারীদের PMS রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৫% এর (PMDD) হবার সম্ভাবনা প্রবল।
২. Anxiety and panic Attack বা Insomnia
৩. Stress and tension
মাসিক ও মাসিকপূর্ব এই Depresson, Anxiety এর কারণে এই সময় নারীদের stress বা মনের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে এই সময় নারীরা অল্পতেই রেগে যায় (Out bursts of anger), সব সময় বিরক্তিভাব প্রকাশ করে (Irritability) এবং অন্যের প্রতি বিরূপ বা শত্রুভাবাপন্ন (Hostility)হয়। এর মাত্রা বেশি হলে সে নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি আক্রমনাত্মক (Violence and agressive) হয়ে ওঠে। কোন কোন নারী এ সময় অন্যদের সঙ্গে মিশতে চায় না এবং একাকী থাকতে চায় (Withdrawl from others)।
এ সময় দুর্ঘটনা প্রবণ মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়। এই সময় নারীদের মনে যে অসহায় দুঃখী ভাবের (Sadness and hopelessness) জন্ম হয় তা থেকে অনেকে আত্মহত্যা প্রবণও হয়ে পড়ে। গবেষণায় আরও এসেছে যে এ সকল কারণে এই সময়গুলোকে নারীদের এই মানসিক অবস্থা তার দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। কাজেই স্বামীর যখন জানা থাকে যে তার স্ত্রীর মাসিক ও মাসিকপূর্ব সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই শরীরিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন ঘটে এবং এ সময় তার স্ত্রী শারীরিক কষ্ট ও মানসিক চাপ ভোগ করছে তখন এই সময়ে স্ত্রীর বিরোধপূর্ণ আচরণে স্বামীর ধৈর্যধারণ
করা কর্তব্য। স্ত্রীর খিটখিটে ভাব বা আক্রমণাত্মক আচরণকে আমলে না এনে বরং তার প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রকাশ করা উচিত। সূরা রুমের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ পাক স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি ভালবাসা ও সহানুভূতির কথা বলেছেন। স্ত্রী যখন শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকে স্বামীর সহানুভূতি পাবার হক স্ত্রীর তখন বেশি হয়।
চলবে…