banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 977 বার পঠিত

 

রমজানে নারীর সাথে যেমন আচরণ করা দরকার

অন্যান্য


চিত্র ১:

তামিমার বিয়ে হয়েছে আজ বেশ কয়েক বছর। বউ বউ ভাবটা চলে গেছে। এখন সে নিছক একজন রাঁধুনি। স্বামী কাস্টমসে জব করে। কাজ করে ফিরতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়। এটা তাদের ৩য় রমজান মাস।তামিমা মনোযোগ দিয়ে স্বামীর জন্য বাহারী ইফতারি রেডি করলেন। স্বামী কোন রকম ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছলেন, তামিমা সাথে সাথে ঠান্ডা পানির গ্লাসটা নিয়ে দৌঁড়ে আসলেন। মুখে দিতে রুচির মানসম্মত না হওয়ায় সাথে সাথে গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে মারলেন। তামিমার পরিবার ধরে ১৪ গোষ্ঠীকে কিছুক্ষণ গালিগালাজ করে ধুয়ে দিলেন।একবারও জিজ্ঞেস করলেন না, মেয়েটি সারাদিন রোজা রেখে কষ্ট করে স্বামীর জন্য ইফতার তৈরি করলেন, নিজের মুখে পানি তুলে দেয়ার আগে স্বামীকে তুলে দিলেন।

চিত্র ২:

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মাহমুদা। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে জীবনের ২য় পর্বটির বাস্তবচিত্র দেখতে পেলেন। স্বামী থেকে শুরু করে পরিবারের সকলের সন্তুষ্ট অর্জন করা যেন তার নিয়ম মাফিক দায়িত্ব। রমজানে ভোরে সেহেরি প্রস্তুত করে সবাইকে খাবার পরিবেশন করেন।সবার শেষে নিজের খাবারটা খান। কিন্তু আজ দুর্ভাগ্যক্রমে গরুর মাংসে মরিচের পরিমাণটা বেশি পরে গিয়েছিল। এ নিয়ে ভোরবেলায় তার পরিবারে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল। অবশেষে স্বামী রাগ সামলাতে না পেরে মাহমুদার চুলের মুঠি ধরে কিল ঘুসি আচ্ছামত দিলেন। আর অসহায় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বাকি দিনটা উপবাসে রোজার নিয়তে কাটিয়ে দিলেন।

আজকের কলামের অবতারণায় সমাজের ২ টি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।এগুলো নিছক কোন কল্পনা নয়। সমাজে হরহামেশা ঘটমান দৃশ্যাবলি। এগুলোর শিকার কেবল নারীরা।

কিন্তু ইসলাম কী বলে? ইসলামে এসব ব্যাপারে কী বলা আছে?

আমরা যদি মহানবী সাঃ এর জীবনী পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো তিনি তার পরিবারের নারীকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন।

এমনকি ভোরে তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন এমনভাবে যাতে তাঁর উঠার শব্দ শুনে স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে না যায়। তিনি কখনো খাবারের দোষ ধরেননি। অনেক সময় রান্না ভালো না হলেও এমন ভাব নিতেন যাতে রাঁধুনী বুঝতে না পারে খাবারের মান খারাপ হয়েছে।

আমরা স্বীকার করি বা না করি মানুষ ধর্ম মানা থেকে যত দূরে যাচ্ছে তার ভেতর থেকে মানবিকতা তত হারিয়ে যাচ্ছে।সবাই সবখানে কর্পোরেট চিন্তাভাবনা শুরু করছে। কিন্তু পবিত্র রমজান আমাদের সেখান থেকে বের হওয়ার শিক্ষাদান করেন।

প্রথমে নারীদেরকে আমাদের খুব আপন ভাবতে হবে। নিজের বোন ভুল করলে যেমন ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে শুধরিয়ে দিতেন ঠিক তেমনি স্ত্রী বা অন্য সম্পর্কের নারীর ভুলগুলো ভালোবাসা দিয়ে শুধরাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যখন ভোরে নাক ডেকে ঘুমাতে থাকি সে সময়ে এই নারীরাই আমাদের জন্য মুখরোচক সেহরী তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ কাজ একজনের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তারকাজে সাহায্য করা।সবাই একসাথে খাবার খেতে বসা।
আমরা যখন সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ি ঠিক সে সময়ে নারীরা আমাদের জন্য ইফতার তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন।একবারও কী ভেবেছেন পেটে ক্ষুধা রেখে খাবার তৈরী করা কত কষ্টের?
তবুও তারা আমাদের জন্য খাবার তৈরী করেন।
তাই আমাদের উচিৎ তাদের কাজে সহযোগিতা করা।
ইফতারে সবাই একসাথে বসা।
ইফতার যিনি তৈরি করেছেন তার প্রশংসা করা। আর মেয়েরা এই ভালোবাসাটার বিনিময়ে জগতের সব কষ্ট মেনে নিতে পারেন।

পুরুষদের মনে রাখা উচিৎ , বাজার করার উদ্দেশ্যে এদিক সেদিক অযথা সময় নষ্ট না করে খুব তাড়াতাড়ি বাজার করে নিয়ে আসবেন।

যাতে মেয়েদের শক্তি এবং সময় থাকা অবস্থায় কাজটা করতে পারেন। সবসময় মনে রাখবেন,আপনার জন্য যা কষ্টকর তা অন্যের জন্যও কষ্টকর।

লজ্জার কিছু নাই, মেয়েরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কিছু দিন অসুস্থ থাকেন। আল্লাহ তাইতো সে সময়টাতে তাদের শরীয়তের বিধানগুলো পালন করা থেকে অবকাশ দিয়েছেন। তাহলে আমরা কেন তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব না?

তাই সবার মাথায় রাখা উচিৎ, কোন মেয়ে রোজা না রাখলে তাকে প্রশ্ন না করা এ বিষয়ে। বরং তার জন্য দিনের বেলায় খাবারের ব্যবস্থা রাখবেন। যাতে তাকে রোজাদারের ন্যায় উপবাসে দিন যাপন করতে না হয়।

অনেক পরিবার এমন আছে, যেখানে বউদের দিয়ে পরিবারের সবার কাপড় ধুয়ানো হয় যা জঘন্যতম এবং নিন্দনীয়।হ্যা, মানুষ অসুস্থ হলে সেবা করা যায়, কিন্তু সুস্থ থেকেও কাজের বুয়ার মত আচরণ করা চরম অন্যায়।
বিশেষ করে এ স্বভাবটা আমাদের মডার্ণ ভাইদের মাঝে বেশি।

আমরা পুরুষরা যেমন রমজানে ইবাদত করি, কোরআন তেলোয়াত করি, সেভাবে তাদেরও সুযোগ করে দিন।

সারাদিন তাদেরকে কাজের উপর রাখবেন না। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করুন। কাজের চাপ যত পারেন কমাবেন। নারীদের সহায়তা করাও ইবাদত।

নারীরা আমাদের মা,তারা আমাদের বোন,তারা আমাদের নিসঙ্গতার পরম বন্ধু। তাদের কে সেভাবে সম্মান করা উচিৎ যেভাবে ইসলাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। মুখে মুসলিম দাবী করলাম আর কাজকর্ম সব জালেমি মার্কা, তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা ইসলামের গন্ডি থেকে অনেক দূরে চলে গেছি।

কুরআন হাদিসে বর্ণিত রুলস অনুযায়ী পারস্পারিক মর্যাদা, সম্মান এবং সহযোগিতা পারিবারিক বন্ধনকে করে তুলবে সুদৃঢ় এবং সুখকর।

গৃহিণী শুধু নারী নয় একজন মানুষ। আর মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য মর্যাদা পেলেই দূর হয়ে যাবে নারীর প্রতি সকল প্রকার অসম্মান, নির্যাতন ও সহিংসতা।

আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানের তাৎপর্য উপলদ্ধি করে, নারীদের সাথে সদাচারণ করার তাওফিক দান করুন।

সুত্র: (ফেসবুক পাতা থেকে সংগৃহীত। যেখান থেকে নেওয়া হয়েছে তিনিও সংগৃহীত লিখেছেন। তথ্য খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে লেখকের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।)

Facebook Comments