banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 865 বার পঠিত

 

বর্ষবরণ ও প্রাসঙ্গিক কথা

মাহফুজুর রহমান আখন্দ


বর্ষবরণ নিয়ে মিডিয়াতে ঝড় চলছে। ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। কেউ এটাকে বাঙালীয়ানার অপরিহার্য অংশ ধরে নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। যেভাবেই হোক পান্তা-ইলিশে শেকড় রক্ষা করতেই হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ এটাকে হারাম ঘোষণা দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাই বিষয়টির ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার বৈকি। বাংলা বর্ষ কবে থেকে? মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বিশিষ্ট জোতির্বিজ্ঞানী ও ইতিহাসচিন্তক ফতেহ উল্লাহ সিরাজী ফসলি সাল হিসেবে বাংলা বছরের সূচনা করেন। শতাব্দ থেকে প্রচলিত মাসগুলো ধার নিয়ে হিজরি সালের সাথে মিল রেখে বছর গণণা শুরু করেন। তখন হিজরি সাল ছিল ৯৬৩। সে মতে যাত্রা শুরু হলেও সৌরমাসের চেয়ে চান্দ্র মাস ১১ দিন কম হওয়ায় বর্তমানে হিজরি সাল ১৪৪০ এবং বাংলা সাল ১৪২৫। যে বিষয়টি খেয়াল করার মতো—

১.বাংলা বছরের সূচনাকারী একজন মুসলিম শাসক। ২. সালের উদ্ভাবনকারী একজন মুসলিম বিজ্ঞানী।
৩. বাংলা সালের সূচনা বছর হিসেবে হিজরি সালকে গ্রহণ।
৪. বাংলা সালকে শুরু করা হয়েছে ফসলি সন হিসেবে মানবতার কল্যাণের জন্য।
৫. বাংলা সনের সর্বশেষ সংস্কার কমিটি করা হয় ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডমি কতৃক এবং সে কমিটির আহবায়ক ছিলেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সে কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালিত হয়। তাহলে বর্ষবরণ উৎসবের শেকড় কোন বিশ্বাসের সাথে পোতা আছে?

এখন প্রশ্ন হলো— আমরা যারা বর্ষবরণের নাম পরিবর্তন করে মোঙ্গল শোভাযাত্রা করি সেখানে পেঁচাসহ নানা ধরনের মুখোশ কেন? এ কথা সবার জানা যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিষ্ণু দেবতার পত্নী হচ্ছে লক্ষ্মীদেবী। যার পাঁচ কন্যা; পদ্মা, পদ্মালয়া, ইন্দিরা, শোভা, কমলা। লক্ষ্মী দেবীর বাহন হলো পেচা। পেঁচা কেন বর্ষবরণে? সে কি বাংলায় কথা বলে? না পান্তা ইলিশ খায়? পেচার সাথে বাঙালীর কী সম্পর্ক? আসলে সুকৌশলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে শিরকের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে।

এছাড়াও বর্ষবরণের নামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা;.চন্দন টিপ এবং উল্কি আঁকাসহ নানাবিধ অনৈসলামিক কাজ যুক্ত করা হচ্ছে। পান্তা-ইলিশ খাওয়ার নামে গরিব জনগোষ্ঠীর সাথে উপহাস করা হয়। বাংলার কোন মানুষ অতীতে পান্তা-ভাতের সাথে ইলিশ খেয়েছে তার কোন নজীর নেই। এ বিষয়গুলোর মাধ্যমে মজার অনুষ্ঠানটি ভিন্নধারায় প্রবাহিত করতে একগ্রুপ মরিয়া হয়ে উঠেছে। একদিকে বিশ্বাসের সংরক্ষণের নামে বর্ষবরণকে হারাম বলা হচ্ছে, অন্যদিকে একশ্রেণি এটাকে শির্কবাদী অনুষ্ঠানে পরিণত করছে। আমরা দুপক্ষকেই সংযত হতে বলবো।

আসুন আরোপিত কোন ধর্মীয় বিষয় নয়; ইরানসহ পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো সংযত, শালীন এবং ঐতিহ্যের ধারায় জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে শির্কমুক্তভাবে বর্ষবরণ করি।

Facebook Comments