ডা. তাজুল ইসলাম
‘ধর্ষণ’ সুনামি বন্ধ করবে কে?
বিউটি, তনুদের আত্মা। আমাদের ক্ষমা করবে? ক্ষমার অযোগ্য এ কোন সমাজ, জাতি আমরা তৈরি করেছি?
কালের, ইতিহাসের প্রতিশোধ বড় নির্মম
হে রাষ্ট্র, হে সমাজ, তোমাকে এর দায় অবশ্যই নিতে হবে।
ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন ধর্ষণ সাংস্কৃতিকে উচকে দেয়, প্রশ্রয় দেয় তেমন সমাজকে ধর্ষণ বিরোধী, ধর্ষণ প্রতিরোধী সমাজে রূপান্তর করা।
এর জন্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা,বিজ্ঞাপনে নারীকে “যৌন পণ্য” হিসেবে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। নারীকে “সেক্সুয়ালাইজড” করার কালচার বদলে ফেলে,তাকে “মানুষ” হিসেবে ভাবার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। অন্য দিকে সমাজে যে সব মিথ্যা, বিশ্বাস ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয়, তেমন মিথ্যাগুলোকে ভেঙ্গে দিতে হবে।
তেমন কিছু প্রচলিত মিথ্যা হচ্ছে:
১। নারীর উগ্র পোশাক, চাল-চলন ধর্ষণকে উৎসাহিত করে
২। নারী ধর্ষিতা হতে চায়
৩। নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না,তাই তাকে বার বার “আহ্বান” জানাতে হবে
৪।পুরুষরা অধিক যৌন-কাতর, তাই তারা নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না
৫। ভূমি দস্যুদের মতন এই যৌন দস্যুদের মানসিকতা এই যে নারীর দেহের উপর সে “অধিকার প্রাপ্ত”( এনটাইটেলমেন্ট)
৬। একবার শারীরিক সম্পর্ক হওয়া মানে পরবর্তীতে ও সে অধিকার থাকবে
৭। রাত- বিরাতে নারীর একাকী চলাফেরা ধর্ষণের অন্যতম কারণ
৮। ধর্ষিতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই, তাই তার নীরব সমর্থন ছিল- ইত্যাদি ভ্রান্ত বিশ্বাস সমাজ থেকে দূর করতে হবে।
এছাড়া ও ধর্ষণ সংস্কৃতি পরিবর্তনে আরো যা যা করতে হবে:
৯। ধর্ষণ প্রতিরোধে শুধু নারীকে সতর্ক থাকতে বললে হবে না,পুরুষকেও “ধর্ষণ করবে না” এই বার্তা বার বার দিতে হবে
১০। পরিবার, সমাজে অন্যের “অনুমতি/ সম্মতি” নেওয়ার (কনসেন্ট)কালচার তৈরী করতে হবে
১১। প্রচার মাধ্যম, ভিডিওতে যৌন সুরসুরি দেওয়া প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হবে
১২।পৌরুষত্বের সনাতনী ধারণায় পরিবর্তন আনতে হবে
১৩। ধর্ষণ “প্রাকৃতিক” ব্যাপার এ ভুল ধারনা ভেঙ্গে একে “অপরাধ” ও নারীর প্রতি “সহিংসতা” হিসেবে দেখতে হবে
১৪। ধর্ষণ মানে ধর্ষণ, প্রেম-বন্ধুত্বের নামে একে “বৈধতা” দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না
১৫। চোখের সামনে ধর্ষণ হচ্ছে অথচ নির্বিকার, নিষ্ক্রিয় থাকার কাপুরুষতা পরিহার করতে হবে
১৬। সামাজিক/আইনগত হয়রানি, অসম্মানের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা লুকিয়ে রাখা যাবে না।
ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।