banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 885 বার পঠিত

 

‘ভুল চিকিৎসায় এবার চিকিৎসকের মৃত্যু’ চলুন বিদেশ যাই

ডা. সাকলাইন রাসেল


প্রিয় ডাঃ মুজিবুর রহমান ভুইয়া স্যারও কি তবে চিকিৎসকের অসতর্কতায়(পড়লেন ভুল চিকিৎসায়) অকালেই চলে গেলেন!

কিডনিতে ক্যানসার ধরা পড়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়। অপারেশন করাবেন, সুস্থ হবেন। চলে আসবেন। ২৪ মার্চ এ্যাপোলো হাসপাতালে নিজের সব রোগী দেখেছেন, জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন!

একবার ভেবে দেখুন শারিরীকভাবে কতটা ফিট ছিলেন তিনি! ২৫ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ড এ্যালিজাবেথে গেলেন। ২৬ মার্চ অপারেশন টেবিলে ঢুকলেন। ল্যাপারোস্কপিক কিডনি অপসারণ। অপারেশন চলাকালীন সময় শিরায় (Inferior Vena Cava) ইঞ্জুরি হল। ব্লিডিং কেউই আর সে ব্লিডিং থামাতে পারলেন না। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মুহুর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে।

শোকে কাতর আমরা। কিছুতেই মানতে পারছিনা এ চলে যাওয়া! মৃত্যু আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব মৃত্যুরই একটা ব্যাখ্যা থাকে। সে ব্যাখ্যায় যদি গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায় তবে আমরা কিছু বলতে চাই। ঠিক কিছু না, অনেক কিছু।

কারণ, এসব অপারেশন এদেশের ইউরোলজিস্টরা অত্যন্ত সফলভাবে করছেন। আগে থেকে ব্লিডিং এর জটিলতার কথা মাথায় রেখে তারা অনেকসময় আমাদের মত ভাসকুলার সার্জনদের টীমে রাখেন। কারণ, ভাসকুলার সার্জন পাশে থাকলে শিরা ইঞ্জুরিজনিত জটিলতা সহজে ম্যানেজ করা যায়। পুরো এশিয়ার ভাসকুলার সার্জারীর প্রেসিডেন্ট পিটারের চেম্বারও এই মাউন্ড এলিজাবেথই। তবুও কেন এ জটিলতা ম্যানেজ করা গেল না। বলছি না, আমরা করলে জটিলতা হত না কিংবা একেবারেই হয় না। শুধু এতোটুকু বলতে চাই, প্রেশার মাপতেও যেদেশের মানুষ সিঙ্গাপুরে দৌড়ায় সেখানে কেন এমন দূর্ঘটনা ঘটবে? ছেঁড়া কাঁথার নিচে শুয়ে ঠাণ্ডা বাতাসকে আলিঙ্গন করতে আমার সংকোচ নেই। কিন্তু অট্টালিকায় বসে কেন ঠান্ডায় কাঁপব?

শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু নিয়েও আমরা কিছু বলিনি। কোন সাংবাদিককে সেটা নিয়ে হৈচৈ করতেও দেখেনি। কিন্তু আমরা এখনো মনে করি। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল অপারেশন পরবর্তী জটিলতায়।এ জটিলতার জন্য সেখানকার সার্জনদের অতি কনফিডেন্স দায়ী ছিল। কারণ, Large Gut Anastomosis (অন্ত্র কেটে জোড়া লাগা) হয়েছিল সরাসরি। কোন Coverage Colostomy করা হয়নি। ফলাফল, Anasotomosis বা জোড়া লাগানোর জায়গা দিয়ে লিক হয়ে যায় এবং তিনি আমাদের কাঁদিয়ে চির বিদায় নেন।

সেসময়ের পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এদেশের চিকিৎসকরা তাই হুমায়ন আহমেদ এর জন্য অনেক বেশি কেঁদেছেন। আফসোস করেছেন!
কারণ, সেই অপারেশন বাংলাদেশে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এমন অপারেশন প্রতিদিনই এদেশে হয়।!
ভাবুন তো একবার। হুমায়ুন স্যারের মৃত্যু যদি বাংলাদেশে হত। বাংলাদেশী কোন সার্জনের অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় যদি তিনি মারা যেতেন? সেই চিকিৎসক বা হাসপাতালের অবস্থা কি হত একবার, ভাবেন তো?
কিন্তু কিছুই হয়নি। কেন হয়নি?

কারণ, দেশটি আমেরিকা। সার্জনরাও আমেরিকান। এককথায় বিদেশ ও বিদেশী সার্জন, আমরা তাই নিশ্চুপ ছিলাম! তাঁর পরিবারও হয়ত এটাকে নিয়তির লেখা মনে করেই মেনে নিয়েছিলেন! অথচ এখনো আমরা তাঁকে খুঁজি। তাঁর লেখাকে খুঁজি! এ খোঁজা শেষ হবে না কোনদিন!

আজ যেমন খুঁজছি অত্যন্ত বিনয়ী, মেধাবী, মানুষ তৈরীর কারিগর অধ্যাপক ডাঃ মুজিবর রহমান ভুঁইয়া স্যারকে! দেশের একজন সফল খাদ্য ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। ঢাকা মেডিকেলের ক-৩৭ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র। শুধু তাই নয়, ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রদের নিয়ে যেতেন বঙ্গভবনে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরী দরবার হলেই স্টুডেন্টদের ক্লাশ নিতেন। অভিনব এ উদ্যোগের ছাত্র হিসেবে বঙ্গভবনে ক্লাশ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমিসহ অনেকের।

কথা হল, বারডেম হাসপাতালের ইউরোলজির অধ্যাপক ডাঃ এটিএম মাওলাদাদ চৌধুরীর সাথে, তিনি অনেকটা বিলাপের সুরে বললেন,‘সাকলায়েন, একটাবার যদি জানাতেন উনি সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন অপারেশন করাতে তবে আমি ওনাকে বেঁধে রাখতাম…। আহারে, কনফাইন্ড একটা টিউমার। অপারেশন করে ফেলে দিবে। ঝামেলা শেষ। প্রতিদিন কত করছি। ১০ বছর পরও অনেকে আসছেন ফলোআপে। কত ভাল আছেন। আর উনি চলে গেলেন একেবারে বাজে ম্যানেজমেন্টের শিকার হয়ে’।

ফোন দিয়েছিলাম (২৮ মার্চ, দুপুর ১২ টায়) বিদেশে অবস্থানরত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের কান্ট্রি ম্যানেজারকে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, এখনো সিঙ্গাপুর সরকার মৃত্যুর কারণ ঘোষনা করেননি। ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রিপোর্ট যাই থাক…আমরা উপযুক্ত ব্যখ্যা চাই…পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।
না থাক, কিচ্ছু করার দরকার নাই।
বিদেশতো!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

Facebook Comments