আফরোজা হাসান
বুঝতে শেখার পর থেকে যখনই অকারণ জেদ করেছি ভাইয়া বলতেন, “মনের যে ইচ্ছা শক্তির দ্বারা মানুষ আত্নসমালোচনা করে আত্নসংশোধনের পথে চলে আত্মোন্নয়ন করার কথা, মনের সেই ইচ্ছা শক্তিরই ভুল প্রয়োগে মানুষ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়।” তখন ভাইয়ার কথা বুঝতে না পারলেও এখন জানি কারো জন্য তার নিজের মনটাই হতে পারে পরম বন্ধু কিংবা চরম শত্রু।
মনের অনেক সংজ্ঞা পড়েছি। কিন্তু মনের যেই সংজ্ঞাটি মনকে ছুঁয়ে দিয়েছিল সেটি হচ্ছে, ” মন মানুষের ভেতরে এক টুকরো প্রকৃতি।” সত্যিই মনের মাঝে দেখা মেলে প্রকৃতির সব রুপ-রঙ-বৈচিত্র্যর। মনের আছে ঋতু চক্র, বদলায় মৌসুম। মন বাগিচায় ফুল ফোটে, পাখি গায়, ভ্রমর তোলে গুঞ্জন, ঝরে পরে পাতা, শুকিয়ে যায় ফুল। মনের আঙিনা কখনো বরষায় হয় স্নাত, কখনো হয় বন্যায় প্লাবিত।
মনের আছে অতলান্ত সাগর, বহতা নদী, বদ্ধ পুকুর, টলটলে দীঘি। আছে বিশাল নীলাকাশ, মেঘমালা, নক্ষত্র, পূর্ণিমা, বিজলীর চমক। গহীন বন, চোরাবালি, নগর-বন্দর, মরুভূমি, আছে মরিচীকাও। আছে হিংস্র বাঘ, চতুর শেয়াল, মায়াবী হরিণ, দুষ্টু বানর, বিষাক্ত সাপ। ফসলের ক্ষেত, মেঠো পথ, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় সব সবকিছু। তাই মনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্যও দরকার যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতির……।
প্রায় এক যুগ আগে প্রচন্ড রকম কালবৈশাখীর ঝড় দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়া পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দেয়ার সুরে বলেছিলেন, মানুষের মনে মাঝে মাঝে এমন ঝড় বয় তা যদি প্রকৃতি দেখতো স্তম্ভিত হয়ে যেত তার সর্বগ্রাসী ক্ষমতা দেখে। এমন সর্বগ্রাসী সর্বনাশী ঝড়ের কবলে পতিত কিছু মনকে খুব কাছ থেকে দেখার, জানার, বোঝার ও চেনার সুযোগ হয়েছে পরবর্তীতে।
ঠিক তেমনি দেখেছি ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া মনকে আবারো নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে। বিরান হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেত আবারো সবুজে সবুজে ছেঁয়ে যেতে। তাই হয়তো প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ভূমির বুকে আবারো প্রাণের পরশ বুলিয়ে যায় আকাশ থেকে নেমে আসা অঝোর পানিরাশি।
নদীর এক কূল ভাংগলে যেমন অপর কূল গড়ে। মনের অবস্থাও অনেকটা তাই। তাই আধাঁর দেখে থমকে গিয়ে পা পিছনে টেনে নেবার অবকাশ নেই। আড়াঁলে যে সূর্য প্রতীক্ষমান…….।