ডা. এম এস কবীর জুয়েল
বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা এক রকম Status Symbol হয়ে গেছে, অনেকেই আবার ইহাকে এক ধরনের বাতিকে পরিণত করেছেন, সাধারণ মানুষের এই প্রবণতাকে আমরা থামাতে পারছি না, ফলে লাখ লাখ ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে, সম্প্রতি নাগরিক পরিষদ নামক একটি সংগঠন মানব বন্ধন করেছে যার বিষয় ছিল- ‘চিকিৎসা নিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ না যাওয়ার দাবি’।
আসুন আলোচনায় আসা যাক, ব্যাপার-টি কতোখানি গুরুত্ববহ, মাহাথীর মোহাম্মদ এ পর্যন্ত কোনদিন বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাননি। তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেই সময় মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক ছিলো, উনি অসুস্থতাজনিত কারণে শয্যাশায়ী হলেন, তাকে সবাই অন্তত পাশের দেশ সিংগাপুর যেতে অনুরোধ করলেন, কিন্তু তিনি নির্বিঘ্নে না করলেন এবং যুক্তি দেখালেন, উনি যদি এ রোগের জন্য বাহিরে যেয়ে চিকিৎসা নেন, মালয়েশিয়ায় ইহার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। তাহলে গরীব মানুষগুলো আর কক্ষনো-ই এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পাবেন না কারন তারা কথায় কথায় সিংগাপুর যেতে পারবেন না।
সুতরাং মালয়েশিয়ায় তিনি সেই সময় থেকেই ‘চিকিৎসা সেবা উন্নতকরণ প্রকল্প’ নিলেন, সফল ও হলেন। আমাদের অনেকেই এখন মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা করতে যান, অন্যান্য দেশের মানুষ ও যান, আমাদের দেশে একবার ভূটানের এক মন্ত্রী চিকিৎসা নিতে এলেন, আমাদের দেশে কি চিকিৎসা ব্যবস্থা খারাপ। মোটেও না। আমাদের চিকিৎসক-রা কি নিম্ন মানের! আমি কক্ষনো-ই তা মনে করি না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি-টাই যতো প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রধান-দের নজীর দেখাতে হবে। দেশাত্মবোধের নজীর, যা মাহাথীর দেখিয়েছেন, ইহাই প্রকৃত দেশপ্রেম। তখনি অন্য দেশের মানুষও আসবে। কথায় কথায় দু-দিন পর পর ভিন দেশে যেয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ ও পাশের দেশের রাম-সাম-যদু-মদু ডাক্তারদের এদেশে অবাধে রোগী দেখতে দেয়া কক্ষনো কি দেশপ্রেমিক দেশাচার-এর লক্ষণ।
তাহলে, আমরা কেন তা করছি?
আমদের দেশে তো চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় আরো অনেক বেশী অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কই প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে তো একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনতে দেখলাম না, সুষ্ঠু নির্বাচন সৃষ্টিতে সাহায্য নিতে আমরা ভারতের প্রখ্যাত নির্বাচন কমিশনার ‘টি.এন সেশান’ সাহেবকে তো ডাকতে পারি।
আইনের শাসন আরো সুদৃঢ় করতে মিসেস ‘কিরণ বেদী’-কে ডাকতে পারি।
খেলাপি ঋন কমাতে একজন প্রখ্যাত বিদেশী ব্যাংকার কেন আনছি না। ড.ইউনুস সাহেবকে যদি দায়িত্ব না দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে অমত্য সেনদের এনেও তো চেষ্টা করা যায়।
এ দেশে যা করা আবশ্যক তা না করে অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে অধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাতে কারো কারো ব্যক্তিগত সুবিধে হয়, বেশ কিছু পয়সা পকেটে আসে কিন্তু গরীব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ অধরা-ই থেকে যায়।
ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল