banner

রবিবার, ১৫ Jun ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: June 14, 2025

 

গাজার পথে গ্রেটা থুনবার্গের সাহসী অভিযান

বিশ্বজুড়ে যখন যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে, তখন কেউ কেউ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও দাঁড়াচ্ছেন মানবতার পক্ষে। তাদেরই একজন হলেন সুইডিশ মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। জলবায়ু আন্দোলনের কিশোরী কণ্ঠ থেকে যুদ্ধবিরোধী সাহসী প্রতিবাদী হিসেবে তার বিবর্তন বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।

২০২৫ সালের ৯ জুন, ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি ত্রাণবাহী জাহাজ গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য, ওষুধ, স্যানিটারি সামগ্রীসহ মানবিক সহায়তা বহন করছিল জাহাজটি। কিন্তু আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রমের সময় ইসরায়েলি বাহিনী এটি জবরদখল করে। জাহাজে থাকা ১৩ জন মানবাধিকার কর্মীর মধ্যে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গও। অপহরণের ঠিক আগে গ্রেটা একটি ভিডিও বার্তায় বিশ্ববাসীকে জানান, “আমাদের আটক করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের অপহরণ করেছে।”

জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছিল গাজার প্রথম নারী মৎস্যজীবী ম্যাডলিন কুল্লাবের নামে। আশা ছিল, এ জাহাজ একদিন মানবিক বার্তা নিয়ে গাজার উপকূলে পৌঁছাবে। কিন্তু যুদ্ধ সেই আশা স্তব্ধ করে দেয়।

গ্রেটা থুনবার্গ মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০১৮ সালে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেন এবং সুইডিশ সংসদ ভবনের সামনে ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’ শুরু করেন। তার আন্দোলনে পরে দশ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ জানিয়ে আসেন তিনি।

২০১৯ সালে কার্বনমুক্ত নৌযান করে ইংল্যান্ড থেকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যান। সেখানে বিশ্বনেতাদের প্রশ্ন করেন: “মানুষ মারা যাচ্ছে, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে, আমরা গণবিলুপ্তির মুখে—তোমাদের সাহস কীভাবে হয়?”

তার স্পষ্টভাষী প্রতিবাদ বিশ্বনেতাদের অনেকেরই বিরাগভাজন করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে “রাগী কিশোরী” বলেও কটাক্ষ করেন। জলবায়ু, মানবাধিকার এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে গ্রেটাকে বারবার হুমকি ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, এমনকি জেলও খাটতে হয়েছে।

বর্তমানে গ্রেটা রাশিয়া, ইসরায়েল, আজারবাইজান ও মরক্কোর যুদ্ধনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সক্রিয়। ইউক্রেন, ফিলিস্তিন ও আর্মেনিয়ার মতো যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলে তার ভূমিকা শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং সরাসরি মানবিক সহায়তায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমেও স্পষ্ট।

গ্রেটার পরিবেশসচেতন জীবনধারাও প্রশংসনীয়। তিনি উড়োজাহাজে যাত্রা এড়িয়ে চলেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ তার বিমানযাত্রার ছবি প্রকাশ করে বিতর্ক তোলে।

২০০৩ সালে জন্ম নেওয়া গ্রেটার মা অপেরা শিল্পী মালেনা এরম্যান এবং বাবা অভিনেতা সভান্তে থুনবার্গ। TEDx-এ গ্রেটা বলেন, “আমি আট বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জানতে পারি, কিন্তু বুঝতে পারিনি কেন কেউ কিছু করছে না।”

তার লেখা দুটি বই—Scenes from the Heart (২০১৮) এবং No One is Too Small to Make a Difference (২০১৯)—বিশ্বজুড়ে আলোচিত। দ্বিতীয় বইয়ের বিক্রিত অর্থ তিনি মানবতার কাজে ব্যয় করবেন বলেও জানান।

গ্রেটার কণ্ঠ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-বিশ্বে ন্যায়, মানবতা ও পরিবেশের পক্ষে দাঁড়ানোর এখনই সময়। যুদ্ধ, নিপীড়ন ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তার মতো মানুষ যতদিন থাকবেন, ততদিন পৃথিবীর সৌন্দর্য বেঁচে থাকবে।

Photo Credit: BBC Bangla

27 total views, no views today