banner

শুক্রবার, ০৬ Jun ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: June 5, 2025

 

মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, অধিকার হোক সুরক্ষিত

 

‘মা’ এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে বিশাল এক পৃথিবী। মা শুধু একটি সম্পর্ক নয়, ভালোবাসা, মমতা, ত্যাগ ও আত্মনিবেদনের অপর নাম। একজন নারীর জীবনে মাতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা। আর এই মাতৃত্বকাল যেন নিরাপদ হয়, সে দায়িত্ব সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র-সবার।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ২১ কোটি নারী গর্ভধারণ করেন। তাদের মধ্যে দুই কোটির বেশি নানা ধরনের জটিলতায় ভোগেন, এবং প্রায় ৮০ লাখ নারীর জীবন প্রসবজনিত কারণে হুমকির মুখে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৮০০ নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এর বাইরেও ৭০ লাখ নারী প্রসব পরবর্তী গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হন এবং আরও প্রায় ৫ কোটির বেশি নারী ভোগেন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যায়।

বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক। প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী গর্ভধারণ ও সংশ্লিষ্ট কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি লাখ জীবিত সন্তানের জন্মে ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়। আর প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন মা প্রাণ হারান প্রসবজনিত জটিলতায়।

দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোর চিত্র আরও করুণ—প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী এখনও বাড়িতেই সন্তান প্রসব করেন, যেখানে নিরাপদ ও মান-সম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি দুর্লভ। এছাড়া নবজাতকের মৃত্যুহারও উদ্বেগজনক—প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে ২১ জন মারা যাচ্ছে।

নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে নাইরোবিতে প্রথম বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশে ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ মে ‘জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো—
মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস,

নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা,

গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ,

নারীর মাতৃত্বকালীন অধিকার প্রতিষ্ঠা।

২০২৫ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: “মাতৃস্বাস্থ্যে সমতা; বাদ যাবেনা কোনো মা”। এটি একটি সময়োপযোগী বার্তা, যা সকল শ্রেণি-পেশার নারীদের জন্য নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।

মাতৃত্বকালীন সংকটের কারণসমূহ
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে দেশে কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে:

দক্ষ মিডওয়াইফ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মীর অভাব

জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতি

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের অভাব ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশনের বেড়ে চলা

গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদানের প্রতি উদাসীনতা

দরিদ্রতা ও পুষ্টিহীনতা

কর্মজীবী নারীদের উপর গর্ভকালেও কঠিন শ্রমের চাপ

পরিবার ও সমাজের অসচেতনতা

বর্তমানে দেশে প্রায় ২২ হাজার প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ প্রয়োজন, অথচ রয়েছেন মাত্র এক হাজারের মতো। ফলে নারীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে করণীয়
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

✅ গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
✅ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
✅ প্রয়োজনীয় টিকা ও ওষুধ গ্রহণ
✅ ভারী কাজ ও মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকা
✅ গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ
✅ দক্ষ মিডওয়াইফ ও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব
✅ প্রসব-পরবর্তী পর্যাপ্ত সেবা ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা

সঙ্গে থাকতে হবে পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি, সচেতনতা এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।

মাতৃত্বকালীন সময়ে নিরাপত্তা নারীর অধিকার—এটি যেন বিলাসিতা নয়, বরং মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। নিরাপদ মাতৃত্ব কেবল একজন মায়ের জীবন নয়, একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করে। তাই ‘মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, অধিকার হোক সুরক্ষিত’—এই শ্লোগান হোক আমাদের সকলের অঙ্গীকার।

রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার একত্রিত হয়ে যদি সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এ নামিয়ে আনা সম্ভব।

আমরা চাই, প্রতিটি মা যেন তার মাতৃত্বকালীন সময়টি কাটাতে পারেন সম্মান, সেবা ও নিরাপত্তার সঙ্গে।

 

ঢাকা মেডিকেলে নিকাবধারীদের জন্য আলাদা নারী শিক্ষক

 

দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজেও পরীক্ষার সময় নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের চেহারা শনাক্তের জন্য আলাদা নারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট)-এও একই রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা এই সময়োপযোগী ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, “নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তের ক্ষেত্রে আলাদা নারী শিক্ষক নিয়োগ একটি যৌক্তিক, শালীন ও ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল ব্যবস্থা। এটি নারীদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

প্রসঙ্গত, নিকাব পরিহিত অনেক ছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রে চেহারা শনাক্তের সময় নানা ধরনের বিড়ম্বনা বা হেনস্তার মুখে পড়েন। অথচ আলাদা নারী শিক্ষক থাকলে সেই প্রক্রিয়া সম্মানজনক ও স্বাচ্ছন্দ্যে সম্পন্ন হয়, যা পরীক্ষার্থীর জন্য মানসিক প্রশান্তি এবং শিক্ষা জীবনের স্বাভাবিকতাকে বজায় রাখতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা আশা প্রকাশ করে যে, দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এই উদ্যোগকে অনুসরণ করে পর্দানশীন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সম্মানজনক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

 

আরাফাহ দিবসের গুরুত্ব-ফজিলত, জানুন কেন দিনটি এত মর্যাদাপূর্ণ!

 

ইসলামের মহিমান্বিত দিনগুলোর মধ্যে যিলহজ্জের ৯ তারিখ, অর্থাৎ আরাফাহ দিবস অন্যতম। এটি শুধুমাত্র হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনই নয়, বরং এই দিনকে ঘিরে রয়েছে অগণিত বরকত, ফজিলত ও রহমত। এই দিনে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, দো‘আ কবুল করেন এবং অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আসুন জেনে নিই, কেন আরাফাহ দিবস এত গুরুত্ববহ এবং আমাদের কী করণীয়।

🕋 আরাফাহ দিবস : মর্যাদা ও ফজিলত
🔹 ১. ইসলামের পূর্ণতা লাভের দিন

এই দিনে কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত নাজিল হয়:

> “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করলাম।”
📖 [সূরা মায়েদা: ৩]

এ আয়াতটি আরাফাহ দিবসে, শুক্রবার, হজ্জের সময় নাজিল হয়েছিল। এক ইহুদি বলেছিল, “এমন আয়াত আমাদের উপর নাজিল হলে আমরা তা ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম।” খলীফা উমর (রাঃ) জবাবে বলেন, “আমরা জানি এটি কবে, কোথায় এবং কী অবস্থায় নাজিল হয়েছে।”
📚 বুখারী: ৪৫, ৪৬০৬

🔹 ২. এটি ঈদের দিনের অন্তর্ভুক্ত

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

> “আরাফাহ দিবস, কুরবানির দিন এবং তাশরীক-এর দিনগুলো মুসলিমদের ঈদের দিন। এগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।”
📚 আবু দাঊদ: ২৪১৯

আরাফাহ দিবসের ফজিলত
🟢 ১. দু’বছরের গুনাহ মাফ হয়

আরাফাহ দিবসে রোযা রাখা অ-হাজীদের জন্য সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

> “আমি আশা করি এই দিনের রোযা আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
📚 মুসলিম: ১১৬৩

তবে হাজীরা এদিন রোযা রাখেন না, বরং আরাফাতে অবস্থান করে দো‘আ, যিকর ও ইবাদতে সময় অতিবাহিত করেন।

🟢 ২. জাহান্নাম থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় দিন

> “আল্লাহ তাআলা আরাফার দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, ‘দেখো, আমার বান্দারা ধুলায় ধূসরিত হয়ে এসেছে, তারা কী চায়?’”
📚 মুসলিম: ১৩৪৮, ইবনু মাজাহ: ৮১

🟢 ৩. দো‘আ কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

> “সবচেয়ে উত্তম দো‘আ হল আরাফাহ দিবসের দো‘আ। আর আমি ও আগের নবীরা যেটা বলেছি তা হলো—
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ”
📚 তিরমিযী: ২৮৩৭

এই যিকর বারবার বলা, আল্লাহর প্রশংসা করা ও নিজের জন্য এবং উম্মাহর জন্য দো‘আ করা এই দিনে অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ।

আমাদের করণীয়
🔸 যারা হজ্জ করছেন না, তারা এদিন রোযা পালন করবেন।
🔸 যিকর-আযকার বেশি বেশি করবেন।
🔸 তওবা ও ইস্তিগফার করবেন।
🔸 দো‘আ ও কান্নাকাটি করে আল্লাহর রহমত চাইবেন।

আরাফাহ দিবস শুধু হজ্জ পালনকারীদের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের সব মুসলমানের জন্য এটি এক অপার ফযীলতের দিন। আসুন আমরা এই দিনের গুরুত্ব অনুধাবন করে, যথাযথ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।