banner

বুধবার, ০৪ Jun ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: June 2, 2025

 

ঢাবিতে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ: নারীদের অধিকার আদায়ে নতুন পদক্ষেপ

 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রীসংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা করেছে। ২০২৫ সালের ২৮ মে, সংগঠনটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে এক স্মারকলিপি পেশ করেন, যেখানে নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়।

স্মারকলিপিতে যেসব দাবিগুলো তুলে ধরা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সহজলভ্যতা

পর্যাপ্ত কমনরুম, নামাজরুম ও ওজুখানার ব্যবস্থা

মাতৃত্বকালীন সময়ে সহযোগিতা প্রদান

আবাসন সংকট নিরসন ও জরুরি প্রয়োজনে হলে প্রবেশাধিকার

যৌন হয়রানিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ

মেডিকেল সহায়তা এবং হলভিত্তিক ওষুধের প্রাপ্যতা

ঢাবি শাখার সভানেত্রী সাবিকুন্নাহার তামান্না জানান, “দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নতুন করে কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমরা শাখা পর্যায়ে কাঠামো গঠন করতে সক্ষম হয়েছি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।”

সেক্রেটারি আফসানা আক্তার বলেন, “নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও সম্মানজনক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছি। ইসলামী ছাত্রীসংস্থা অতীতেও নারীদের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।”

ইসলামী মূল্যবোধ, নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থা ও নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সংগঠনের এই নতুন যাত্রা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না—
আপনি কি মনে করেন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামভিত্তিক সংগঠনগুলোর কার্যকর উপস্থিতি শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে?

বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নারী শিক্ষার্থীরা কোন কোন সমস্যায় বেশি ভুগছেন বলে আপনি মনে করেন? সমাধানে কী কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত?

একটি ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্বে নারী শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরা কি সময়ের দাবি নয়? আপনি কি এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন?

আপনি কি মনে করেন, নামাজরুম, কমনরুম, মাতৃত্বকালীন সহায়তা ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা উচিত?

একজন সচেতন মুসলিম নাগরিক হিসেবে আপনি নারী নেতৃত্বে ইসলামী সংগঠনের এমন উদ্যোগকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

 

দাসত্বের শিকল ছিঁড়ে যারা স্বপ্ন দেখে:ছোট্ট ইকবাল মাসীর গল্প

 

পৃথিবীতে কিছু গল্প থাকে, যেগুলো উপন্যাস নয়, সিনেমাও নয়—তবু সেগুলো বাস্তবতার এমন নির্মম অধ্যায় হয়ে ওঠে, যা পাঠক বা শ্রোতার মনজগত কাঁপিয়ে দেয়। তেমনই এক ছোট্ট বালকের নাম ইকবাল মাসী— বয়স ছিল মাত্র বারো, অথচ লক্ষ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখার মত সাহস বুকে নিয়ে যার বেড়ে উঠা।

ইকবালের জন্ম ১৯৮৩ সালে পাকিস্তানের লাহোরে। মা মারা যাওয়ার পর পরিবারের আর্থিক টানাপড়েন চরমে ওঠে। তার বাবা মাত্র ৮০০ রুপি বা ৮ ডলারের বিনিময়ে মাত্র চার বা পাঁচ বছর বয়সেই ইকবালকে এক কার্পেট কারখানায় বিক্রি করে দেন। শুরু হয় দাসত্বের জীবন—দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা কাজ, হাতের ছোট আঙুল দিয়ে গাঁথতে হতো সূক্ষ্ম সুতো, পায়ে পড়তো শিকল যাতে পালাতে না পারে। খাবার অপ্রতুল, নিদ্রা সীমিত, স্বাস্থ্যহীনতা নিত্যসঙ্গী।

কিন্তু মানুষ শুধু মাংস আর হাড়ের কাঠামো নয়, মনের ভিতর একটি আশ্চর্য আলো থাকে। ১০ বছর বয়সে ইকবাল সেই আলোকে সঙ্গী করে পালিয়ে যায় বন্দিদশা থেকে। দুর্ভাগ্যবশত ধরা পড়ে আবারও বিক্রি হয়। এবার মূল্য ১০ ডলার, আর কাজ বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি সপ্তাহে ১৪০ ঘণ্টা।

তবুও ইকবালের মনের আগুন নিভে যায় না। একদিন আবারও পালিয়ে যায়, সিনেমার মতই এক মানব-ময়লার নালার ভিতর দিয়ে। আশ্রয় নেয় একটি এতিমখানায়, সেখান থেকে একজন সদয় মানুষ, হাফেজ ইব্রাহিম, তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। অসাধারণ মেধাবী ইকবাল মাত্র দুই বছরে প্রাইমারি শিক্ষার পাঁচ বছরের পাঠ শেষ করে।

স্কুল জীবনেই সে যুক্ত হয় Bonded Labour Liberation Front (BLLF) নামের এক সংগঠনের সঙ্গে। এই সংগঠনের হয়ে ইকবাল নিজের কণ্ঠকে করে তোলে হাজার হাজার শিশুর কণ্ঠস্বর। বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শিশুদের মুক্ত করার জন্য কাজ করে। তার নেতৃত্বে প্রায় ৩,০০০ শিশু শ্রমিক মুক্তি পায় দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে।

ইকবালের কণ্ঠ বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের Reebok Human Rights Award তাকে সম্মানিত করে। সেখানে ইকবাল বলে “আমার স্বপ্ন হলো, বিশ্বের কোনো শিশু যেন আর দাসত্বে বন্দি না থাকে। কোনো শিশু যেন স্কুলের জায়গায় কারখানায় কাজ করতে বাধ্য না হয়।”

ইকবালের এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতো যেখানে শিশুরা বইয়ের পাতায় হারিয়ে যাবে, কাঁটা-সুতোয় নয়। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে যখন তার আন্দোলন তুঙ্গে, যখন সে বোস্টন থেকে লাহোরে ফিরে আসে—১৯৯৫ সালের ১৬ এপ্রিল, দুর্বৃত্তদের গুলিতে চিরতরে থেমে যায় ইকবাল। মাত্র ১২ বছর বয়স,হ্যাঁ মাত্র ১২।

এই ছোট্ট কিশোরটি যদি বেঁচে থাকত, আজ তার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে যেতো। হয়তো আরও ৪০ হাজার শিশু মুক্তি পেতো তার হাত ধরে। তার অকালমৃত্যু শুধু একটি প্রাণহানিই নয়, একটি সম্ভাবনার মৃত্যু।

তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর প্রবর্তন করে “The Iqbal Masih Award for the Elimination of Child Labor”—যা প্রতিবছর শিশু শ্রম প্রতিরোধে অবদান রাখা সাহসী কর্মীদের দেওয়া হয়।

আজ যেখানে আমরা এক মিনিটের কাল্পনিক বিনোদন চিত্রে মেতে উঠি অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিনেমা,অথচ সবচেয়ে সাহসী স্ক্রিপ্ট জন্ম নেয় বাস্তবের বুক চিরে।
এই ছোট্ট নীরব হিরোর আত্মবলিদান যেন ভুলে না যাই।ইকবালের এই ত্যাগ বয়ে যাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।