বর্তমান সময়ে নারীরা শুধু সাংবাদিকতাই নয়, ফটোগ্রাফির মতো চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রেও নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছেন। তেমনি একজন উল্লেখযোগ্য নাম মৌসুমি সিরাজ স্মৃতি। তাঁর ক্যামেরায় বন্দি হওয়া পাখি ও বন্যপ্রাণীর ছবি দেশের জাতীয় পত্রিকা ছাড়াও ভারতের বহু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ যাত্রায় তিনি অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।
ছোট ভাইয়ের হাতে পুরোনো একটি ক্যামেরা দেখেই ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় স্মৃতির। শৈশবে আঁকাআঁকির প্রতি ভালোবাসাই ধীরে ধীরে গড়িয়েছে ছবির ভাষায় কথা বলার দিকে। পারিবারিক একটি সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার যাত্রা শুরু করলেও, সময়ের সাথে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে। এখন তিনি স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে গড়া ছোট্ট পরিবারে থাকেন, পেশায় পূর্ণকালীন ফটোগ্রাফার।
স্মৃতি মূলত ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে পারদর্শী। শুরুতে নিজেই ছবি তুলতে তুলতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তারপর অনলাইন ও সরাসরি বিভিন্ন কোর্স করে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলেন। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ধৈর্য, মনোযোগ আর সত্যিকারের ভালোবাসা।
দেশের প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলোতে তাঁর ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। একক প্রদর্শনী না করলেও তিনি অংশ নিয়েছেন অনেক যৌথ প্রদর্শনীতে—দেশে যেমন, তেমনি বিদেশেও; ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, এমনকি ইতালিতেও।
নিজেকে কখনো “সফল” দাবি না করলেও, সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাঁকে অনুসরণ করেন। স্মৃতির মতে, তাঁর এ পর্যায়ে আসার পেছনে তিনটি মূল গুণ: ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, এবং সমালোচনায় মন না দেওয়া।
স্মৃতি মনে করেন, ভালো ছবি তুলতে হলে শুধু ভালো ক্যামেরা থাকলেই হবে না; জানতে হবে কারিগরি দিকগুলোও। যাঁরা শুরু করছেন, তাঁদের একজন অভিজ্ঞ মেন্টরের কাছে পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রথমে একা একা বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতেন। পরে তাঁর সঙ্গে পুষ্পিতা, রেহনুমা, লাবণ্য ও সোফিয়া জামান নামে আরও কিছু তরুণী যুক্ত হন। এভাবে একটি নারীকেন্দ্রিক দল গড়ে ওঠে, যারা দলবেঁধে বিভিন্ন এলাকায় পাখি দেখতে ও ছবি তুলতে যান—এ ধরনের উদ্যোগ এখনো দেশে বিরল।
স্মৃতির স্বপ্ন একদিন তাঁর তোলা ছবিগুলো নিয়ে একটি একক প্রদর্শনী করার। পাশাপাশি তিনি একটি ফটোগ্রাফি স্কুল গড়ে তুলতে চান, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু ফটোগ্রাফিই নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনও হবে।