banner

শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 29, 2025

 

গরমে সর্দি-কাশি-জ্বর? প্রতিরোধে ঘরোয়া টোটকা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

 

প্রচণ্ড তাপদাহে জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। সূর্যের প্রখর তাপে শুধু গরমই নয়, শরীরও পড়ছে চাপে। ফলে বাড়ছে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানান শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষেরা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশের তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন ও অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, টনসিল, ফ্যারিঞ্জাইটিস, সাইনোসাইটিস এমনকি অ্যাজমা বা নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

কেন এই সময়ে ঝুঁকি বেশি?
গরমে ঘাম ও ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর থেকে দ্রুত পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভাইরাল ইনফেকশন সহজেই আক্রমণ করে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গরমে সচেতন না হলে সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর থেকেও বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে। এজন্য দরকার জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন।

সুস্থ থাকতে যেগুলো মেনে চলবেন:
প্রচুর পানি ও তরল পান করুন: শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে স্যুপ, ডাবের পানি, লেবু শরবত ও ওআরএস পান করুন।

সহজপাচ্য ও হালকা খাবার খান: তৈলাক্ত ও ঝাল খাবার এড়িয়ে হালকা খাবার গ্রহণ করুন, প্রয়োজনে দিনে বারবার খান।

প্রয়োজনমতো বিশ্রাম নিন: জ্বর বা দুর্বলতা অনুভব করলে বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিদিন গোসল করুন: অতিরিক্ত ঘাম হলে শীতল রাখতে গোসল উপকারী।

হালকা রঙের সুতির পোশাক পরুন: এতে ত্বক ও শরীর উভয়ই সজীব থাকবে।

দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়ান।

উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: তিন দিনের বেশি জ্বর, অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, মাথা ঘোরা, চোখ বসে যাওয়া ইত্যাদি ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ—এসব দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ:
১. নারকেল তেল:
নারকেল তেলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় এটি ঠান্ডা-কাশি থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটি শরীরের ফ্যাট কমাতেও সহায়ক। তবে অবশ্যই খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করুন।

২. আদা ও আমলকি:
আদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণে গলা ও বুকে জমা ঠান্ডা দূর করতে কার্যকর। আমলকি ভিটামিন ‘সি’-এর উৎস। প্রতিদিন সকালে ৩০ মি.লি. আমলকির রসের সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস মিশিয়ে পান করলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৩.দুই কাপ পানিতে কিছু আদা কুচি সেদ্ধ করে এর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে গলার খুসখুসে ভাব কমে এবং গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া উপশম হয়।

গরমের এই সময়টাতে সাবধানতা এবং প্রাকৃতিক উপায়ে যত্নই পারে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে। প্রতিদিনের ছোটখাটো যত্ন আর সঠিক খাদ্যাভ্যাসে আপনি হয়ে উঠতে পারেন রোগমুক্ত,সতেজ ও প্রাণবন্ত।

 

জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল ও ফজিলত

পবিত্র জিলহজ মাস ইসলামের অন্যতম বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইবাদত হজ্ব পালিত হয় এবং মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কুরবানি করে থাকে। এ মাস তাকওয়া, আত্মত্যাগ,আত্মসমর্পণ এবং ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম, যার মধ্যে প্রথম দশ দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন:

وَالفَجرِ .وَلَيَالٍ عَشرٍ
শপথ ফজরের এবং দশ রাতের।
(সূরা ফজর: ১-২)

মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেছেন, এখানে “দশ রাত” দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনু কাসীর)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আল্লাহর কাছে নেক আমল করার জন্য বছরের কোনো দিন এই দশ দিনের চেয়ে প্রিয় নয়।”
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও না?”
তিনি বললেন: “না, তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়ে আর কিছুই ফিরে আনেনি (অর্থাৎ শহীদ হয়েছে)।”
(সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

জিলহজের প্রথম দশ দিনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল
১. অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তোমরা এই দশ দিনে বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়ো।”
(মুসনাদে আহমদ: ৫৪৪৬)

তাশরিকের তাকবির:

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد
এই তাকবির ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার বলা ওয়াজিব।

২. রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ – আরাফার দিন)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“আরাফার দিনের রোযা বিগত এক বছরের এবং আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

৩. কুরবানি করা (১০-১২ জিলহজ)।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো।”
(সূরা কাউসার: ২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“মানুষের কোনো আমল আল্লাহর কাছে কুরবানির দিনে রক্ত ঝরানোর চেয়ে অধিক প্রিয় নয়।”
(তিরমিজি: ১৪৯৩)

৪. কুরবানির নিয়তে চুল ও নখ না কাটা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি কুরবানি দেওয়ার ইচ্ছা করে, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটে।”
(সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭)

৫. অন্যান্য নফল ইবাদত ও নেক আমল।

এই দশ দিনে সকল নেক আমলের ফজিলত বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই যতটা সম্ভব নিচের আমলগুলো করা উচিত:
-নফল নামাজ

-কুরআন তিলাওয়াত

-অধিক পরিমাণে জিকির-আজকার

-ইস্তিগফার (তওবা)

-সালাতুত তাসবিহ

-দান-সদকা

জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। এ সময়টিতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অপূর্ব সুযোগ লাভ করি। তাই এই দশ দিন যেন আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ও জান্নাতের পথে এক নতুন যাত্রার সূচনা হোক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত দিনগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।।