banner

মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 26, 2025

 

হবিগঞ্জে নারীদের জন্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ মসজিদ

 

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় নারীদের জন্য নির্মিত হয়েছে জেলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা মসজিদ। ‘হযরত ফাতিমা (রা.) মহিলা মসজিদ ও হিফজ ভবন’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি দারুল হিকমাহ জামেয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার বালিকা শাখায় স্থাপন করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ পৌরসভার পূর্বতিমিরপুর এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ জন ছাত্রী একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজের পাশাপাশি এখানে হিফজ বিভাগে কোরআন মুখস্থ করা ও ইসলামি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

দাখিল শ্রেণির ছাত্রীদের মতে, একত্রে সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায় তাদের মধ্যে আত্মিক প্রশান্তি ও একতার অনুভূতি তৈরি করছে। হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, এই মসজিদ কেবল নামাজের জায়গা নয়, বরং ইসলামী আদর্শে বড় হওয়ার জন্য একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও।

২০২২ সালের ১৫ মার্চ হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটির উদ্বোধন করেন। মসজিদটি নির্মাণ করেন প্রবাসী সমাজসেবক ও মাদ্রাসার শুভানুধ্যায়ী মামুন চৌধুরী। তার এই উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, মসজিদটি নারীদের পর্দা ও অজুর সুবিধা নিশ্চিত করে একটি মনোরম ও নিরাপদ ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি আরও জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে কুরআন-হাদীস চর্চার আয়োজন হয়, যাতে স্থানীয় ছাত্রীদের পাশাপাশি বয়স্ক নারীরাও অংশ নেন।
এছাড়াও হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় দূরপাল্লার যাত্রী নারীরা পথিমধ্যে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন। দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য এমন সুযোগ খুবই সীমিত হওয়ায়, এই মসজিদটি অনেক ধর্মপ্রাণ নারীর জন্য একটি বিশেষ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

 

মতের অমিল, মনের মিল: সম্পর্ক টিকে রাখার অদ্ভুত সমীকরণ

পৃথিবীর সমস্ত সম্পর্ক কি কেবল ভালোবাসার সুতোয় বাঁধা?
একত্রে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেওয়া সেই সমস্ত দাম্পত্য জীবনের ভিত কি প্রতিদিনের পরম মুগ্ধতায় গড়া?
না, প্রেমের সেই একরঙা কল্পনায় সত্যি মেলে না।

জীবন আসলে এক সমান্তরাল দুই ধারার যাত্রা, যেখানে একদিকে রোদ, অন্যদিকে ছায়া। একজন চায় ফ্যানের শীতল ঝাপটা, অন্যজনের দরকার এসির স্থির প্রশান্তি। কেউ রাত্রে আলো জ্বালিয়ে ঘুমায়, কেউ চায় নিঃশব্দ অন্ধকার। কেউ রেস্টুরেন্টে খেতে ভালোবাসে, আরেকজনের চোখে বাড়ির ভাতেই থাকে শান্তি। কেউ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে, কেউ আবার সূর্য ওঠার আগেই দিন শুরু করে।

মতের এই অমিল, চাওয়া-পাওয়ার এই টানাপড়েনের মধ্যেই জন্ম নেয় এক গভীর সখ্যতা, যা প্রেমের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী।

অনেকেই ভাবেন—একসাথে থাকার মানে, একে অপরের ছাঁচে নিজেকে ঢেলে ফেলা। কিন্তু না, আসল সম্পর্ক তৈরি হয় যখন একজন আরেকজনের ভিন্নতাকে জড়িয়ে ধরে। প্রতিদিনের ছোট ছোট খুনসুটি, কারণহীন ঝগড়া, কিছুটা অভিমান—এসবই আসলে এক অন্য ভাষায় বলা ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা চোখে পড়ে না, তবুও অনুভবে ছুঁয়ে যায়।

ভাবতে পারেন, একদিকে এত অমিল—তারপরও দেখা যায় সেই দুই মানুষ একদিন পাহাড়ে ঘুরতে যাচ্ছে, কাঁধে মাথা রেখে ছবি তুলছে, একসাথে সিনেমা দেখছে, নতুন গাড়ির স্বপ্ন দেখছে, মনের মতো করে সাজিয়ে নিচ্ছে তাদের ছোট্ট ঘরটা।
এটাই তো সম্পর্কের সৌন্দর্য। এই অমিলের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে অদ্ভুত এক সমীকরণ, যাকে ছকে ফেলেও মেলানো যায় না।

আমরা সম্পর্কের শুরুতে যা করি, সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল—আমরা মিল খুঁজি। কে কী পছন্দ করে, কার সঙ্গে কতটা মিলে যায়—সেই হিসেব কষি। অথচ, যেটা মিলছে না, সেটাই তো আসল দেখার জায়গা।

ভালোবাসা গড়ে ওঠে মতের মিল দিয়ে নয়—মতের অমিল আর মনের মিল দিয়ে।

জীবনটা আসলে একটা দীর্ঘ উপন্যাস। প্রতিটি অধ্যায়ে মতের দ্বন্দ্ব, কিছু ঝগড়া, কিছু অভিমান থাকবেই। কিন্তু সেই বইয়ের পাতাগুলো ভরে ওঠে যদি প্রতিটি বাক্যে থাকে সহানুভূতি, সম্মান আর একটুখানি হাসি।

তাই, সারাটা জীবন ভালোবাসবে এমন কাউকে খোঁজার দরকার নেই। বরং এমন কাউকে খুঁজুন, যার সঙ্গে আপনি প্রতিদিন একটু একটু ঝগড়া করেও ভালো থাকতে পারেন।
কারণ দিনের শেষে, ভালোবাসা মানে সারাক্ষণ একসাথে হাসা নয়—বরং ঝগড়ার মাঝেও আলতো করে হাতটা ধরে রাখা।
মতের অমিল থাকুক, থাকুক হাজারটি।
শুধু যেন মনের মিলটা থেকে যায়…
ঠিক বাতাসের মতো—দেখা যায় না, কিন্তু গায়ে লাগলেই বোঝা যায়, শান্তি দেয়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মাননায় ভূষিত ছয় সাহসী নারী উদ্যোক্তা

 

এই বছর মে মাসের প্রথম দশকের শেষের দিকে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী ‘এসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে এক গৌরবময় পরিণতির মাধ্যমে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মাননা দিয়েছে ছয় জন অনন্য নারী উদ্যোক্তাকে, যাঁরা তাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রমে নিজ নিজ এলাকায় গড়েছেন কর্মসংস্থানের পথ।
সম্মাননা পাওয়া ছয় উদ্যোক্তার মধ্যে রয়েছেন রাঙামাটির ছেনছেন রাখাইন, যিনি ২৫ বছর আগে মাত্র ৫ হাজার টাকা মূলধনে গড়ে তোলেন ‘মে রাখাইন বার্মিজ স্টোর’। আজ তাঁর প্রতিষ্ঠানটি পাহাড়ি তাঁতের পোশাক যেমন পিনন, খাদি, ব্লাউজ ও খামি উৎপাদন ও বিপণনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়াচ্ছে।
বাগেরহাটের রোজি আহমেদের ‘মেসার্স অর্গানিক প্রোডাক্ট’ কোকো ফাইবার দিয়ে তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব খেলনা ও পোষাপ্রাণির জন্য সামগ্রী, যা এখন ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি হচ্ছে। ফরিদপুরের সাবেকুন নাহারের ‘লাম ক্রিয়েশন’ পাট ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছে দৃষ্টিনন্দন ঝুড়ি, মাদুর ও ব্যাগ।
সিলেটের রোজিনা আলিম ‘মিনার কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস’ নামের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গড়ে তুলেছেন স্থানীয় রাসায়নিক পণ্যের এক নির্ভরযোগ্য উৎস। ঢাকার সাভারের আয়েশা বেগমের ‘মুসলিম জুয়েলারি ওয়ার্কশপ’ রুপা, পিতল ও তামার অলংকার রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
পাবনার হোসনে আরা স্বামীর মৃত্যুর পর ‘আকলিমা সেবা ক্লিনিক ও নার্সিং হোম’ চালিয়ে নারীর স্বাস্থ্যসেবায় রেখেছেন অসামান্য অবদান। তাঁর প্রতিষ্ঠান পেয়েছে কবি সুফিয়া কামাল স্বর্ণপদকও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, “দেশের উন্নয়নে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা অপরিহার্য। এ ধরনের উদ্যোগ নারীদের সাহস ও স্বপ্ন দেখার পথ প্রশস্ত করবে।”

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ৭৩ জন নারী উদ্যোক্তাকে সনদ প্রদান করা হয় এবং আয়োজকরা জানান, চার দিনে প্রায় ৬০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।