banner

সোমবার, ০২ Jun ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: June 2025

 

নাঙ্গেলির আত্মত্যাগ বনাম আধুনিক প্রদর্শনবাদ: কোনটা প্রকৃত সাহস?

 

ইতিহাসের পাতাজুড়ে নারীর মর্যাদা ও অধিকার বারবার পদদলিত হয়েছে সামাজিক শোষণ, ধর্মীয় কুসংস্কার ও শ্রেণিবৈষম্যের কারণে।
তেমনি এক নির্মম ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় দক্ষিণ ভারতের বর্তমান কেরালা রাজ্যের চের্থালা অঞ্চলের এক লজ্জাজনক কর প্রথার, যার নাম ছিল ”মুলাক্কারম” বাংলায় যাকে বলা যায় “স্তন কর”।

ঔপনিবেশিক আমলের পূর্বে তৎকালীন সমাজে নিম্নবর্ণের নারীদের যদি নিজেদের স্তন ঢেকে রাখতে হতো, তবে তাদের দিতে হতো কর। স্তনের আকার অনুযায়ী করের পরিমাণ নির্ধারিত হতো—যত বড় স্তন, তত বেশি কর! যারা কর দিতে পারত না, তাদের জনসমক্ষে স্তন অনাবৃত রাখা ছিল বাধ্যতামূলক।
এই অমানবিক ও অবমাননাকর প্রথা নারীর শরীরকে পণ্য ও করযোগ্য সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল।

এই অপমানজনক করব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এক সাহসিনী নাঙ্গেলি। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ নিম্নবর্ণের নারী, কিন্তু সাহস ছিল হাজারো মানুষের চেয়েও বেশি।
যেদিন জমিদারের লোক কর আদায়ে তার বাড়িতে আসে, নাঙ্গেলি ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসেন হাতে নিজের কাটা দুই স্তন নিয়ে।
রক্তাক্ত সেই দৃশ্য দেখে জমিদারের লোকজন আতঙ্কে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেদিনই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নাঙ্গেলির এই আত্মত্যাগ শুধু একটি অন্যায় প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, বরং নারীর মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতার সংজ্ঞা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে সমাজকে।
তার মৃত্যুর পরপরই মুলাক্কারম প্রথা বাতিল হয়।
কিন্তু ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে যায় একটি প্রশ্ন—
নারীর শরীর কি সমাজের সম্পদ? নাকি তার ব্যক্তিগত সম্মান?

এখন দেখি ইসলাম কী বলে?
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর শরীর করযোগ্য বা অন্যের সম্পত্তি কিংবা প্রদর্শনযোগ্য কোনো বস্তু নয়, বরং তার সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সব মানুষের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
ইসলাম নারীর মর্যাদাকে ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানের সঙ্গে যুক্ত করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে—

> “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের উপর চাদরের (জিলবাব) একটি অংশ নামিয়ে দেয়। এটি তাদের চেনার জন্য সহজ এবং উত্ত্যক্ত না হওয়ার জন্য উত্তম।”
(সূরা আহযাব, আয়াত ৫৯)

ইসলামে পর্দার বিধানের কারণে নারীদের অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই, বরং এটি নারীর সুরক্ষায় এবং তাকে সম্মানিত করার এক চমৎকার মাধ্যম।
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, নারীর শরীর কর আরোপের বা প্রদর্শনের বস্তু নয়, বরং তা গোপন রাখার ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সমাজের এবং নারীর নিজস্ব অধিকার।

কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য—
নাঙ্গেলির আত্মত্যাগের শতাব্দী পেরিয়ে এসেও বর্তমান সমাজে নারীদের একটি শ্রেণি শরীরকে আবারও উপস্থাপন করছে প্রদর্শনের বস্তু হিসেবে।
‘আমার শরীর আমার অধিকার’, ‘পোশাকের স্বাধীনতা’র নামে চলছে শরীর প্রদর্শনের এক প্রকার মহড়া।

কিছু নারী মনে করেন, শরীর দেখানোই স্বাধীনতা কিংবা সাহস।
অথচ প্রকৃত সাহস দেখিয়েছিলেন সেই নারী নাঙ্গেলি, যিনি নিজের স্তন কেটেছিলেন তা দেখানোর জন্য নয়, বরং ঢাকার অধিকার রক্ষায়।

আজ প্রশ্ন উঠতেই পারে—
নারীর স্বাধীনতা কি নিজেকে উন্মুক্ত করা?
নাকি নিজেকে সম্মানের সঙ্গে গুটিয়ে রাখা?

পছন্দমতো পোশাক পরা নারীর অধিকার বটে, তবে সেটি যেন আত্মমর্যাদা ও সামাজিক সংবেদনশীলতার সীমা অতিক্রম না করে।
সত্যিকারের শক্তি হলো নিজেকে সংযত রাখা, আত্মমর্যাদায় দৃঢ় থাকা-
যেমন ছিলেন নাঙ্গেলি, যেমন শিক্ষা দেয় ইসলাম।

লেখকঃ আরওয়া আনাম

 

পেশা ও নেশায় ফটোগ্রাফি: মৌসুমি সিরাজ স্মৃতির গল্প

বর্তমান সময়ে নারীরা শুধু সাংবাদিকতাই নয়, ফটোগ্রাফির মতো চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রেও নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছেন। তেমনি একজন উল্লেখযোগ্য নাম মৌসুমি সিরাজ স্মৃতি। তাঁর ক্যামেরায় বন্দি হওয়া পাখি ও বন্যপ্রাণীর ছবি দেশের জাতীয় পত্রিকা ছাড়াও ভারতের বহু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ যাত্রায় তিনি অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।

ছোট ভাইয়ের হাতে পুরোনো একটি ক্যামেরা দেখেই ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় স্মৃতির। শৈশবে আঁকাআঁকির প্রতি ভালোবাসাই ধীরে ধীরে গড়িয়েছে ছবির ভাষায় কথা বলার দিকে। পারিবারিক একটি সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার যাত্রা শুরু করলেও, সময়ের সাথে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে। এখন তিনি স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে গড়া ছোট্ট পরিবারে থাকেন, পেশায় পূর্ণকালীন ফটোগ্রাফার।

স্মৃতি মূলত ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে পারদর্শী। শুরুতে নিজেই ছবি তুলতে তুলতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তারপর অনলাইন ও সরাসরি বিভিন্ন কোর্স করে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলেন। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ধৈর্য, মনোযোগ আর সত্যিকারের ভালোবাসা।

দেশের প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলোতে তাঁর ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। একক প্রদর্শনী না করলেও তিনি অংশ নিয়েছেন অনেক যৌথ প্রদর্শনীতে—দেশে যেমন, তেমনি বিদেশেও; ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, এমনকি ইতালিতেও।

নিজেকে কখনো “সফল” দাবি না করলেও, সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাঁকে অনুসরণ করেন। স্মৃতির মতে, তাঁর এ পর্যায়ে আসার পেছনে তিনটি মূল গুণ: ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, এবং সমালোচনায় মন না দেওয়া।

স্মৃতি মনে করেন, ভালো ছবি তুলতে হলে শুধু ভালো ক্যামেরা থাকলেই হবে না; জানতে হবে কারিগরি দিকগুলোও। যাঁরা শুরু করছেন, তাঁদের একজন অভিজ্ঞ মেন্টরের কাছে পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রথমে একা একা বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতেন। পরে তাঁর সঙ্গে পুষ্পিতা, রেহনুমা, লাবণ্য ও সোফিয়া জামান নামে আরও কিছু তরুণী যুক্ত হন। এভাবে একটি নারীকেন্দ্রিক দল গড়ে ওঠে, যারা দলবেঁধে বিভিন্ন এলাকায় পাখি দেখতে ও ছবি তুলতে যান—এ ধরনের উদ্যোগ এখনো দেশে বিরল।

স্মৃতির স্বপ্ন একদিন তাঁর তোলা ছবিগুলো নিয়ে একটি একক প্রদর্শনী করার। পাশাপাশি তিনি একটি ফটোগ্রাফি স্কুল গড়ে তুলতে চান, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু ফটোগ্রাফিই নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনও হবে।

 

গরমে সর্দি-কাশি-জ্বর? প্রতিরোধে ঘরোয়া টোটকা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

 

প্রচণ্ড তাপদাহে জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। সূর্যের প্রখর তাপে শুধু গরমই নয়, শরীরও পড়ছে চাপে। ফলে বাড়ছে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানান শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষেরা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশের তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন ও অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, টনসিল, ফ্যারিঞ্জাইটিস, সাইনোসাইটিস এমনকি অ্যাজমা বা নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

কেন এই সময়ে ঝুঁকি বেশি?
গরমে ঘাম ও ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর থেকে দ্রুত পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভাইরাল ইনফেকশন সহজেই আক্রমণ করে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গরমে সচেতন না হলে সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর থেকেও বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে। এজন্য দরকার জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন।

সুস্থ থাকতে যেগুলো মেনে চলবেন:
প্রচুর পানি ও তরল পান করুন: শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে স্যুপ, ডাবের পানি, লেবু শরবত ও ওআরএস পান করুন।

সহজপাচ্য ও হালকা খাবার খান: তৈলাক্ত ও ঝাল খাবার এড়িয়ে হালকা খাবার গ্রহণ করুন, প্রয়োজনে দিনে বারবার খান।

প্রয়োজনমতো বিশ্রাম নিন: জ্বর বা দুর্বলতা অনুভব করলে বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিদিন গোসল করুন: অতিরিক্ত ঘাম হলে শীতল রাখতে গোসল উপকারী।

হালকা রঙের সুতির পোশাক পরুন: এতে ত্বক ও শরীর উভয়ই সজীব থাকবে।

দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়ান।

উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: তিন দিনের বেশি জ্বর, অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, মাথা ঘোরা, চোখ বসে যাওয়া ইত্যাদি ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ—এসব দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ:
১. নারকেল তেল:
নারকেল তেলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় এটি ঠান্ডা-কাশি থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটি শরীরের ফ্যাট কমাতেও সহায়ক। তবে অবশ্যই খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করুন।

২. আদা ও আমলকি:
আদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণে গলা ও বুকে জমা ঠান্ডা দূর করতে কার্যকর। আমলকি ভিটামিন ‘সি’-এর উৎস। প্রতিদিন সকালে ৩০ মি.লি. আমলকির রসের সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস মিশিয়ে পান করলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৩.দুই কাপ পানিতে কিছু আদা কুচি সেদ্ধ করে এর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে গলার খুসখুসে ভাব কমে এবং গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া উপশম হয়।

গরমের এই সময়টাতে সাবধানতা এবং প্রাকৃতিক উপায়ে যত্নই পারে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে। প্রতিদিনের ছোটখাটো যত্ন আর সঠিক খাদ্যাভ্যাসে আপনি হয়ে উঠতে পারেন রোগমুক্ত,সতেজ ও প্রাণবন্ত।

 

জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল ও ফজিলত

পবিত্র জিলহজ মাস ইসলামের অন্যতম বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইবাদত হজ্ব পালিত হয় এবং মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কুরবানি করে থাকে। এ মাস তাকওয়া, আত্মত্যাগ,আত্মসমর্পণ এবং ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম, যার মধ্যে প্রথম দশ দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন:

وَالفَجرِ .وَلَيَالٍ عَشرٍ
শপথ ফজরের এবং দশ রাতের।
(সূরা ফজর: ১-২)

মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেছেন, এখানে “দশ রাত” দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনু কাসীর)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আল্লাহর কাছে নেক আমল করার জন্য বছরের কোনো দিন এই দশ দিনের চেয়ে প্রিয় নয়।”
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও না?”
তিনি বললেন: “না, তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়ে আর কিছুই ফিরে আনেনি (অর্থাৎ শহীদ হয়েছে)।”
(সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

জিলহজের প্রথম দশ দিনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল
১. অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তোমরা এই দশ দিনে বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়ো।”
(মুসনাদে আহমদ: ৫৪৪৬)

তাশরিকের তাকবির:

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد
এই তাকবির ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার বলা ওয়াজিব।

২. রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ – আরাফার দিন)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“আরাফার দিনের রোযা বিগত এক বছরের এবং আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

৩. কুরবানি করা (১০-১২ জিলহজ)।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো।”
(সূরা কাউসার: ২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“মানুষের কোনো আমল আল্লাহর কাছে কুরবানির দিনে রক্ত ঝরানোর চেয়ে অধিক প্রিয় নয়।”
(তিরমিজি: ১৪৯৩)

৪. কুরবানির নিয়তে চুল ও নখ না কাটা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি কুরবানি দেওয়ার ইচ্ছা করে, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটে।”
(সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭)

৫. অন্যান্য নফল ইবাদত ও নেক আমল।

এই দশ দিনে সকল নেক আমলের ফজিলত বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই যতটা সম্ভব নিচের আমলগুলো করা উচিত:
-নফল নামাজ

-কুরআন তিলাওয়াত

-অধিক পরিমাণে জিকির-আজকার

-ইস্তিগফার (তওবা)

-সালাতুত তাসবিহ

-দান-সদকা

জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। এ সময়টিতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অপূর্ব সুযোগ লাভ করি। তাই এই দশ দিন যেন আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ও জান্নাতের পথে এক নতুন যাত্রার সূচনা হোক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত দিনগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।।

 

হবিগঞ্জে নারীদের জন্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ মসজিদ

 

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় নারীদের জন্য নির্মিত হয়েছে জেলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা মসজিদ। ‘হযরত ফাতিমা (রা.) মহিলা মসজিদ ও হিফজ ভবন’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি দারুল হিকমাহ জামেয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার বালিকা শাখায় স্থাপন করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ পৌরসভার পূর্বতিমিরপুর এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ জন ছাত্রী একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজের পাশাপাশি এখানে হিফজ বিভাগে কোরআন মুখস্থ করা ও ইসলামি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

দাখিল শ্রেণির ছাত্রীদের মতে, একত্রে সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায় তাদের মধ্যে আত্মিক প্রশান্তি ও একতার অনুভূতি তৈরি করছে। হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, এই মসজিদ কেবল নামাজের জায়গা নয়, বরং ইসলামী আদর্শে বড় হওয়ার জন্য একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও।

২০২২ সালের ১৫ মার্চ হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটির উদ্বোধন করেন। মসজিদটি নির্মাণ করেন প্রবাসী সমাজসেবক ও মাদ্রাসার শুভানুধ্যায়ী মামুন চৌধুরী। তার এই উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, মসজিদটি নারীদের পর্দা ও অজুর সুবিধা নিশ্চিত করে একটি মনোরম ও নিরাপদ ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি আরও জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে কুরআন-হাদীস চর্চার আয়োজন হয়, যাতে স্থানীয় ছাত্রীদের পাশাপাশি বয়স্ক নারীরাও অংশ নেন।
এছাড়াও হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় দূরপাল্লার যাত্রী নারীরা পথিমধ্যে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন। দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য এমন সুযোগ খুবই সীমিত হওয়ায়, এই মসজিদটি অনেক ধর্মপ্রাণ নারীর জন্য একটি বিশেষ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

 

মতের অমিল, মনের মিল: সম্পর্ক টিকে রাখার অদ্ভুত সমীকরণ

পৃথিবীর সমস্ত সম্পর্ক কি কেবল ভালোবাসার সুতোয় বাঁধা?
একত্রে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেওয়া সেই সমস্ত দাম্পত্য জীবনের ভিত কি প্রতিদিনের পরম মুগ্ধতায় গড়া?
না, প্রেমের সেই একরঙা কল্পনায় সত্যি মেলে না।

জীবন আসলে এক সমান্তরাল দুই ধারার যাত্রা, যেখানে একদিকে রোদ, অন্যদিকে ছায়া। একজন চায় ফ্যানের শীতল ঝাপটা, অন্যজনের দরকার এসির স্থির প্রশান্তি। কেউ রাত্রে আলো জ্বালিয়ে ঘুমায়, কেউ চায় নিঃশব্দ অন্ধকার। কেউ রেস্টুরেন্টে খেতে ভালোবাসে, আরেকজনের চোখে বাড়ির ভাতেই থাকে শান্তি। কেউ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে, কেউ আবার সূর্য ওঠার আগেই দিন শুরু করে।

মতের এই অমিল, চাওয়া-পাওয়ার এই টানাপড়েনের মধ্যেই জন্ম নেয় এক গভীর সখ্যতা, যা প্রেমের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী।

অনেকেই ভাবেন—একসাথে থাকার মানে, একে অপরের ছাঁচে নিজেকে ঢেলে ফেলা। কিন্তু না, আসল সম্পর্ক তৈরি হয় যখন একজন আরেকজনের ভিন্নতাকে জড়িয়ে ধরে। প্রতিদিনের ছোট ছোট খুনসুটি, কারণহীন ঝগড়া, কিছুটা অভিমান—এসবই আসলে এক অন্য ভাষায় বলা ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা চোখে পড়ে না, তবুও অনুভবে ছুঁয়ে যায়।

ভাবতে পারেন, একদিকে এত অমিল—তারপরও দেখা যায় সেই দুই মানুষ একদিন পাহাড়ে ঘুরতে যাচ্ছে, কাঁধে মাথা রেখে ছবি তুলছে, একসাথে সিনেমা দেখছে, নতুন গাড়ির স্বপ্ন দেখছে, মনের মতো করে সাজিয়ে নিচ্ছে তাদের ছোট্ট ঘরটা।
এটাই তো সম্পর্কের সৌন্দর্য। এই অমিলের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে অদ্ভুত এক সমীকরণ, যাকে ছকে ফেলেও মেলানো যায় না।

আমরা সম্পর্কের শুরুতে যা করি, সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল—আমরা মিল খুঁজি। কে কী পছন্দ করে, কার সঙ্গে কতটা মিলে যায়—সেই হিসেব কষি। অথচ, যেটা মিলছে না, সেটাই তো আসল দেখার জায়গা।

ভালোবাসা গড়ে ওঠে মতের মিল দিয়ে নয়—মতের অমিল আর মনের মিল দিয়ে।

জীবনটা আসলে একটা দীর্ঘ উপন্যাস। প্রতিটি অধ্যায়ে মতের দ্বন্দ্ব, কিছু ঝগড়া, কিছু অভিমান থাকবেই। কিন্তু সেই বইয়ের পাতাগুলো ভরে ওঠে যদি প্রতিটি বাক্যে থাকে সহানুভূতি, সম্মান আর একটুখানি হাসি।

তাই, সারাটা জীবন ভালোবাসবে এমন কাউকে খোঁজার দরকার নেই। বরং এমন কাউকে খুঁজুন, যার সঙ্গে আপনি প্রতিদিন একটু একটু ঝগড়া করেও ভালো থাকতে পারেন।
কারণ দিনের শেষে, ভালোবাসা মানে সারাক্ষণ একসাথে হাসা নয়—বরং ঝগড়ার মাঝেও আলতো করে হাতটা ধরে রাখা।
মতের অমিল থাকুক, থাকুক হাজারটি।
শুধু যেন মনের মিলটা থেকে যায়…
ঠিক বাতাসের মতো—দেখা যায় না, কিন্তু গায়ে লাগলেই বোঝা যায়, শান্তি দেয়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মাননায় ভূষিত ছয় সাহসী নারী উদ্যোক্তা

 

এই বছর মে মাসের প্রথম দশকের শেষের দিকে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী ‘এসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে এক গৌরবময় পরিণতির মাধ্যমে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মাননা দিয়েছে ছয় জন অনন্য নারী উদ্যোক্তাকে, যাঁরা তাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রমে নিজ নিজ এলাকায় গড়েছেন কর্মসংস্থানের পথ।
সম্মাননা পাওয়া ছয় উদ্যোক্তার মধ্যে রয়েছেন রাঙামাটির ছেনছেন রাখাইন, যিনি ২৫ বছর আগে মাত্র ৫ হাজার টাকা মূলধনে গড়ে তোলেন ‘মে রাখাইন বার্মিজ স্টোর’। আজ তাঁর প্রতিষ্ঠানটি পাহাড়ি তাঁতের পোশাক যেমন পিনন, খাদি, ব্লাউজ ও খামি উৎপাদন ও বিপণনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়াচ্ছে।
বাগেরহাটের রোজি আহমেদের ‘মেসার্স অর্গানিক প্রোডাক্ট’ কোকো ফাইবার দিয়ে তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব খেলনা ও পোষাপ্রাণির জন্য সামগ্রী, যা এখন ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি হচ্ছে। ফরিদপুরের সাবেকুন নাহারের ‘লাম ক্রিয়েশন’ পাট ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছে দৃষ্টিনন্দন ঝুড়ি, মাদুর ও ব্যাগ।
সিলেটের রোজিনা আলিম ‘মিনার কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস’ নামের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গড়ে তুলেছেন স্থানীয় রাসায়নিক পণ্যের এক নির্ভরযোগ্য উৎস। ঢাকার সাভারের আয়েশা বেগমের ‘মুসলিম জুয়েলারি ওয়ার্কশপ’ রুপা, পিতল ও তামার অলংকার রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
পাবনার হোসনে আরা স্বামীর মৃত্যুর পর ‘আকলিমা সেবা ক্লিনিক ও নার্সিং হোম’ চালিয়ে নারীর স্বাস্থ্যসেবায় রেখেছেন অসামান্য অবদান। তাঁর প্রতিষ্ঠান পেয়েছে কবি সুফিয়া কামাল স্বর্ণপদকও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, “দেশের উন্নয়নে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা অপরিহার্য। এ ধরনের উদ্যোগ নারীদের সাহস ও স্বপ্ন দেখার পথ প্রশস্ত করবে।”

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ৭৩ জন নারী উদ্যোক্তাকে সনদ প্রদান করা হয় এবং আয়োজকরা জানান, চার দিনে প্রায় ৬০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।

 

নারীর নামে সংস্কৃতির অপব্যাখ্যার প্রতিবাদ

উত্তরবঙ্গে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ সমাজের বিদ্যমান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূলধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গ নারী জাগরণ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় নারী অধিকারকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে জয়পুরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘উত্তরবঙ্গ নারী জাগরণ মঞ্চ, জয়পুরহাট জেলা’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব উদ্বেগের কথা উঠে আসে। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের সভাপতি নাজনীন নাহার, সিনিয়র সহসভাপতি শাহনাজ পারভীন, সহসভাপতি তাহরীমা কামরুন, সেক্রেটারি সাবেকুন নাহার, সদস্য আকরিমা, রিম্মি খাতুনসহ অন্যান্যরা।

বক্তারা বলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা যেন সমাজের মূল ভিত্তি—ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক কাঠামো ও ঐতিহ্যকে উপেক্ষা না করে। তাদের মতে, কমিশনের অন্তত ২০টি সুপারিশ দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক বাস্তবতার পরিপন্থি, যা বাস্তবায়ন হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, বিভ্রান্তি এবং দীর্ঘমেয়াদে নারীর প্রকৃত উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবে।

তারা আরও দাবি করেন, এই সুপারিশমালায় বিদেশি প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে এবং অনেক সুপারিশ পরিবারব্যবস্থা, নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সভায় বক্তারা সরকারের প্রতি নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের নিজস্ব সমাজব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আবহকে বিবেচনায় রেখে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।

আলোচনা শেষে আয়োজক সংগঠন এক লিখিত বিবৃতিতে জানায়, তারা শিগগিরই এসব সুপারিশ বাতিলের দাবিতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী সচেতন নাগরিক ও অন্যান্য নারী সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

 

নারীবিষয়ক কমিশন বাতিলের দাবিতে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ বাতিলের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন একদল নারী শিক্ষার্থী। ২২মে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে স্বরূপ ইসলামিক কালচারাল অর্গানাইজেশনের ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবাদকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ছিল:
“নারী-পুরুষ বাইনারি, এই শর্তেই দেশ গড়ি”,
“যৌনকর্মী স্বীকৃতিদান, মায়ের জাতির অপমান”,
“সমতার নামে নারীর বিকৃতি চলবে না”,
“সে নো টু এলজিবিটি অ্যাজেন্ডা” প্রভৃতি।

শিক্ষার্থী জান্নাতুল সুমাইয়া সাফি বলেন, কমিশনের প্রস্তাবনার অধিকাংশ ইসলাম ধর্ম ও জাতিসত্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব দাম্পত্য অস্থিরতা বাড়াবে। পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়ে যৌনকর্মীদের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের পথ প্রশস্ত করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আদিবা সালেহা ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’কে সমালোচনা করে বলেন, এতে দেশের নারীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও অশালীন পোশাকের মাধ্যমে নারীত্বকে অপমান করা হয়েছে এবং ধর্মীয় শিষ্টাচারকে ‘উগ্রবাদ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রান্সজেন্ডার ধারণা মানব কল্যাণ নয়, বরং চিকিৎসার প্রয়োজন এমন বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন:
১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রত্যাহার,
২. ধর্ম, সংস্কৃতি ও জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন কমিশন গঠন,
৩. পতিতাবৃত্তি নির্মূল ও নারীদের হালাল উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা,
৪. সংবিধানসম্মতভাবে ধর্মীয় বিধানসমূহ রক্ষা করে নারী উন্নয়নের ভারসাম্যপূর্ণ রূপরেখা প্রণয়ন।

 

বুকার পুরস্কারে সম্মানিত বানু মুশতাকের ‘হার্ট ল্যাম্প’

 

বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন স্বীকৃতি ‘বুকার পুরস্কার’ এবার পেয়েছেন ভারতীয় লেখিকা বানু মুশতাক। ৭৭ বছর বয়সী এই গুণী সাহিত্যিককে ১৯ মে (মঙ্গলবার) এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কান্নাড়া ভাষায় রচিত তাঁর গল্পসংকলন Heart Lamp/ ‘হার্ট ল্যাম্প’-এর জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন দিপা ভাস্তি।

১২টি ছোটগল্পের এই সংকলনে দক্ষিণ ভারতে বসবাসরত মুসলিম নারীদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা দিক, পারিবারিক টানাপোড়েন, সংগ্রাম ও সামাজিক বাস্তবতা সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি গল্প যেন জীবনের অন্তর্নিহিত গল্পগুলোকে নতুন ভাষা ও আবেগে প্রকাশ করেছে।

পুরস্কার গ্রহণের সময় বানু মুশতাক বলেন,
“একটি বিভাজনময় সময়ে, সাহিত্য আমাদের সেই শেষ আশ্রয় যেখানে আমরা একে অপরের মনোজগতে কিছু সময়ের জন্য হলেও বাস করতে পারি। এই বইয়ের জন্ম সেই বিশ্বাস থেকে যে— কোনও গল্পই ছোট নয়। মানুষের জীবনের বিশাল অভিজ্ঞতার জালে প্রতিটি সুতোই পুরো চিত্র বহন করে।”

পেশাগত জীবনে তিনি একাধারে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী। বিশেষভাবে নারীর অধিকার নিয়ে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা তাঁকে সাহিত্যের বাইরেও একজন গুরুত্বপূর্ণ সমাজচিন্তাকে তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, বুকার পুরস্কার চালু হয় ১৯৬৯ সালে। প্রথমদিকে এটি শুধু ব্রিটিশ ও কমনওয়েলথ দেশগুলোর লেখকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৯৯৯ সালে তা সকল ইংরেজি ভাষার সাহিত্যিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০০২ সালে এর নাম সংক্ষিপ্ত করে ‘ম্যান বুকার’ রাখা হলেও বর্তমানে এটি পরিচিত ‘বুকার পুরস্কার’ নামে।
বানু মুশতাকের এই অর্জন শুধু ভারতীয় সাহিত্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

 

শখ থেকে শখের বাজার

 

নারী উদ্যোক্তাদের পথচলা কখনোই সহজ ছিল না। সমাজের বাঁধা, পরিবার ও পরিচিতজনদের নেতিবাচক মন্তব্য—সবকিছু পেরিয়ে যারা এগিয়ে যান, তারাই সফল হন। আজ আমরা কথা বলছি এক এমনই অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোক্তার গল্প নিয়ে, যিনি শুধুমাত্র শখের বসে শুরু করেছিলেন ব্যবসা, আর এখন সেটাই তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

লালমনিরহাট জেলার বারেকটারী গ্রামের ফাতেমা পারভিন মাত্র ২৮ বছর বয়সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। করোনার সময়ে সবাই যখন গৃহবন্দী, তখন ফাতেমার মাথায় আসে এক নতুন আইডিয়া। কুষ্টিয়ার ছোট বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি শুরু করেন ‘শখের বাজার’ নামের অনলাইন ব্যবসা।

শুরুটা ছিল মাত্র ৫,০০০ টাকা বিনিয়োগে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফলে এখন তার মাসিক আয় ৪০-৫০ হাজার টাকা! অনলাইন ব্যবসার সাফল্য দেখে তিনি লালমনিরহাট শহরে ‘শখের বাজার’ নামে একটি শোরুমও চালু করেছেন।

তার ব্যবসার মূল পণ্যগুলো হলো—বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন সিঁদল, কুমড়ার বড়ি, সরিষার তৈল, গাওয়া ঘি, নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি। এছাড়াও, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রও তিনি বিক্রি করেন।

ফাতেমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল নিজের পরিবারের কিছু মানুষ। তারা মনে করতেন, নারীদের ব্যবসা করার প্রয়োজন নেই, বরং সংসার সামলানোই তাদের দায়িত্ব। কিন্তু ফাতেমার মা তাকে সবসময় মানসিক শক্তি যুগিয়েছেন, যা তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ফাতেমা বলেন, “পরিবারের বাঁধাই হয়তো আমার জেদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি, মেয়েরাও পারে।”

ফাতেমার স্বপ্ন তার ‘শখের বাজার’ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। বিশেষ করে, তিনি চান তার প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র নারী কর্মীদের কাজের সুযোগ করে দিতে। যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান।

এই অনন্য সাফল্যের জন্য বিশ্ব নারী দিবস ২০২৫-এ লালমনিরহাট সরকারি কলেজ ফাতেমা পারভিনকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেছে।
ফাতেমার এই যাত্রা প্রমাণ করে—সঠিক ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও লেগে থাকার মানসিকতা থাকলে শুধু শখ নয়, তা হয়ে উঠতে পারে পেশা এবং সাফল্যের পথ।

নারীদের এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো ছড়িয়ে দিতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন!

 

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

“নারী কমিশনের সুপারিশমালা ও নারী সমাজের প্রত্যাশা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা ১৫মে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সদস্য নাসিমা বেগম ঝুনু।

সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী ও ফোরামের সহকারী সেক্রেটারি উম্মে খালেদা জাহান। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মিলনে একটি নিরাপদ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের দিকেই ইসলাম আহ্বান জানায়। অথচ নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা ইসলামী মূল্যবোধ ও পারিবারিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে ইসলাম নারীর জন্য দেনমোহর নির্ধারণ করে সম্মানিত করেছে, সেখানে সমান অধিকারের নামে কি নারীর সেই সম্মান হরণ করা হচ্ছে না?”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কবি ও সাহিত্যিক শামীমা রহমান শান্তা, যিনি বলেন, নারী সংস্কার কমিশন সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত না করে পক্ষপাতমূলকভাবে গঠিত হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য সৃষ্টি হতে পারে।

এশিয়ান টিভির সহ-বার্তা সম্পাদক জাবালুন নূর বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও কমিশনের সুপারিশে তা উপেক্ষিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে নারীদের ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।

ফোরামের সদস্য তাসলিমা মুনীরা বলেন, “নারী সংস্কার কমিশন নারীর পারিবারিক দায়িত্বকে বাধা হিসেবে উপস্থাপন করে নারীদের পরিবার বিমুখ করছে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।”

লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. সাজেদা হুমায়রা বলেন, “এই সুপারিশমালা আমাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে আঘাত করেছে।” তিনি বলেন, ইসলামিক পারিবারিক আইন কুরআন-ভিত্তিক, তা এড়িয়ে নতুন বিধান প্রবর্তনের প্রয়াস কুরআনকে অস্বীকার করার শামিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার তামান্না বলেন, “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার” জাতীয় স্লোগান নারীর সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ভাঙার অপচেষ্টা। ইসলাম নারীর শরীরকে আমানত হিসেবে দেখেছে এবং তাকে মর্যাদাসম্পন্ন দায়িত্ব প্রদান করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে নাসিমা বেগম ঝুনু বলেন, “নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেশীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থী। এই সুপারিশ জাতিকে নৈতিকতা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত করবে।” তিনি নারী সমাজের পক্ষ থেকে কমিশনের সুপারিশ বাতিল এবং নতুনভাবে সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের দাবি জানান।

সভাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের সদস্য সাইয়্যেদা রাহাত তাসনিয়া ও ডা. জোবায়দা।

 

গরমে নারীর শরীরের বিশেষ সময়ে বিশেষ যত্ন কেন জরুরি

 

বাংলাদেশের মতো দেশে গরমকালের তাপদাহ শুধু অস্বস্তিই নয়, বরং কখনো কখনো তা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে। নারীর জীবনচক্রে এমন কিছু পর্যায় আছে—যেমন মাসিক, মেনোপজ, গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান—যেগুলোতে শরীরের ভেতর হরমোনের নানা রকম পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের সময় শরীর এমনিতেই কিছুটা দুর্বল ও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে গরমের বাড়তি চাপ যুক্ত হলে শারীরিক অস্বস্তি, পানিশূন্যতা এবং রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

পিরিয়ড চলাকালে করণীয়
পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে রক্তের সঙ্গে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। আবার গরমে অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে আরও পানি বেরিয়ে যায়। এই সময়ে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার না খাওয়া হলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এতে মাথাঘোরা, দুর্বলতা এমনকি মূর্ছা যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। এই সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া দরকার। স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়মিত বদলানো, শরীর শুকনো রাখা এবং ঘামে ভেজা কাপড় দ্রুত পাল্টে ফেলা জরুরি।

মেনোপজের পর
মেনোপজের পরে অনেক নারীর হঠাৎ করে গরম অনুভব হওয়া বা ঘাম দিয়ে জেগে ওঠার অভ্যাস তৈরি হয়। একে বলে “হট ফ্ল্যাশ”। এই সমস্যাগুলো গ্রীষ্মকালে আরও বেশি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তাই ঘরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখার চেষ্টা করতে হবে। হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা, মাথার পাশে অতিরিক্ত ফ্যান রাখা কিংবা ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ ও শরীর মুছে নেওয়া কিছুটা আরাম দিতে পারে। রাতের বেলায় ঘাম হলে বালিশ উল্টে দেওয়া, কারণ বালিশের অপর পাশ তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে।

গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান: বাড়তি সতর্কতা দরকার
গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানের সময় শরীরের পানির প্রয়োজন আরও বেশি হয়। গরমের মধ্যে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক তরল ও লবণ বের হয়ে যায়, যা গর্ভবতী মায়ের শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। দিনে কয়েকবার লবণ মেশানো শরবত খাওয়া যেতে পারে, যদি চিকিৎসক এ বাপারে নিষেধ না করেন। নিরাপদ পানি ও টাটকা খাবার গ্রহণ করতে হবে, কারণ এই সময়ে হেপাটাইটিস ই-এর মতো সংক্রমণ মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আরামদায়ক ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরতে হবে। প্রয়োজনে দিনের সবচেয়ে গরম সময়টা ঘরের ভেতরে কাটানো উত্তম।

নারীর জীবনের এই প্রাকৃতিক সময়গুলোতে গরম আবহাওয়া সরাসরি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় বাঁধা না দিলেও, বাড়তি অস্বস্তি ও জটিলতা তৈরি করে। তাই গরমে নারীর নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।বিশেষ করে পানি গ্রহণ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা এবং পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও উচিত নারীদের এই সময়গুলোতে সহমর্মী ও সচেতন থাকা।

পাঠকের জন্য প্রশ্ন:
আপনার পরিবারের নারী সদস্যরা গরমে কোন ধরণের অস্বস্তিতে পড়েন? তাঁদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে আপনি কীভাবে সাহায্য করেন?

 

‘ফ্যামিলি এইড’-এর আত্মপ্রকাশ: পারিবারিক বন্ধন সুসংহত করতে ইসলামী উদ্যোগ

 

বাংলাদেশ ইসলামিক ল রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার (BILRC) চালু করেছে একটি নতুন সামাজিক প্রকল্প—‘ফ্যামিলি এইড’, যা পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় ও অধিকার রক্ষায় কাজ করবে ইসলামী শরিয়াহর আলোকে।

শনিবার ঢাকার পল্টনের নোয়াখালী টাওয়ারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ও ‘ফ্যামিলি এইড’ প্রকল্প পরিচালক শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পশ্চিমা প্রভাব ও সামাজিক অস্থিরতায় আমাদের পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে। ইসলামভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলায় আমরা কাজ শুরু করেছি ২০২৩ সাল থেকে।”
এই প্রকল্পের আওতায় পারিবারিক, মানসিক ও আইনগত সমস্যায় ভুক্তভোগীরা পাবেন বিশেষজ্ঞ সহায়তা। বর্তমানে ৩৪ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত একটি টিম এই সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। সেবাগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সেবাও প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘একাডেমি টোয়েন্টি ওয়ান’-এর চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, “দাম্পত্য কলহ ও সামাজিক অস্থিরতা ভয়াবহ হারে বাড়ছে। এর প্রতিকারে আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইসলামী মূল্যবোধের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা মানজুর বলেন, “পারিবারিক সমস্যা সমাধানে শুধু নারী বা শিশুকে কেন্দ্র করে কাজ করলে চলবে না। পুরুষরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। শরিয়াহ সকল পক্ষকে সমান সম্মান দিয়ে দেখে, এটিই ‘ফ্যামিলি এইড’-এর ভিত্তি।”

বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রকল্পটির মাধ্যমে এক ছাদের নিচে আইনজীবী, মনোবিদ ও পারিবারিক পরামর্শদাতারা একযোগে কাজ করবেন। এতে করে সেবা গ্রহণকারীরা পাবেন এককেন্দ্রিক ও সুসমন্বিত সহায়তা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রুহুল আমীন রাব্বানী, মনোবিদ সুমাইয়া তাসনিম, সহকারী প্রকল্প পরিচালক মারদিয়া মমতাজ ও লিগ্যাল কনসালট্যান্ট ফাইজা তাবাসসুম।

 

বাংলাদেশি নার্সদের বিশ্বমঞ্চে উত্থান: বিএমইউ ভিসির আশাবাদ

 

বাংলাদেশি নার্সরা বিশ্বজুড়ে নিজেদের গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পাবে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।

বিশ্ব নার্স দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সোমবার (১২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “গুণগত নার্সিং শিক্ষার মাধ্যমে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি নার্সদের চাহিদা তৈরি করা সম্ভব।”

তিনি জানান, বিএমইউ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নার্সিং শিক্ষা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারিকুলাম চালু করেছে। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে।

ডা. শাহিনুল আলম বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখতে চাই। ফিলিপাইন বা ভারতের কেরালার মতো বাংলাদেশও নার্স রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে, যা থেকে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার আয় সম্ভব।”

তিনি নার্সদের উদ্দেশে বলেন, “নার্সিং কেবল চাকরি নয়, এটি মানবতার সেবার মহৎ এক পেশা। এই দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। রোগীর কষ্ট লাঘবে নার্সরাই ভরসাস্থল।”

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমইউ’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার এবং হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন।

গ্র্যাজুয়েট নার্সিং বিভাগের শিক্ষক মো. হারুন অর রশীদ গাজী জানান, বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নার্স কর্মরত আছেন। তাদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে বিদেশে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটবে।

দিনব্যাপী আয়োজনে নার্সিং পেশার গৌরব, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা তুলে ধরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়, যাতে অংশ নেন নার্সিং শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ১৫টি দেশে নার্স প্রেরণ করছে। ২০২৪ সালে নার্স রপ্তানি থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক আয় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরে এই আয়ের পরিমাণ তিন গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

মেয়েদের আত্মরক্ষা ও প্যারামিলিটারি প্রশিক্ষণ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার

নারীদের আত্মরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা এবং প্যারামিলিটারি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এমনটি জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

সোমবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘কথা বলো নারী’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘নারীর চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শারমীন মুরশিদ বলেন, “আমরা যেসব মেয়েদের ট্রেইন-আপ করব, সেখানে তাদের জেন্ডার রিলেটেড অ্যাওয়ারনেস থেকে শুরু করে, ফিজিক্যাল ট্রেনিং, সেলফ ডিফেন্স ট্রেনিং, প্যারামিলিটারি ট্রেনিং—সবটুকুই ভাবা হয়েছে। যেটা আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। এটা নারীদের জন্য একটা ক্ষেত্র হবে, যেটাতে তারা মাথা উঁচু করে তাদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি নিরাপত্তাটা দিতে না পারি, তাহলে নারীর বিকাশ ঘটবে না। মেয়েরা যদি স্কুলে, রাস্তায় বা বাসে নিরাপদ না থাকে, তাহলে কীভাবে একটি সুন্দর পরিবেশে নিজেকে গড়ে তুলবে? এই বিষয়গুলোতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।”

উপদেষ্টা আরো বলেন,‘চব্বিশে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের আমরা কাজে লাগাতে চাই। সোশ্যাল ফোর্স হিসেবে দেখতে চাই। সাইবার সেফটি তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদেরকে দেখতে চাই।’

তরুণদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, “তোমরা কী ভাবছো, কী চাইছো—তোমাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আমাদের কৌশল সাজাতে চাই।”

সাইবার বুলিংয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য আমাদের আলাদা একটি ইউনিট গঠন করতে হবে।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, ড. রেজওয়ানা কবীর স্নিগ্ধা, উমামা ফাতেমা প্রমুখ।

 

ইসলামে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার

ইসলাম ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান যা মানবজাতির প্রতিটি দিককে নির্দেশনা দিয়েছে। নারীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে এমন এক সময়ে ইসলাম যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছে , যখন নারীদেরকে সমাজে অবজ্ঞা করা হতো, সম্পত্তির অধিকার তো দূরের কথা, তাদের মানুষ হিসেবে বিবেচনাও করা হতো না। অথচ আজ, মুসলিম সমাজে নারীদের সেই ইসলাম-স্বীকৃত অধিকার, বিশেষত সম্পত্তিতে অধিকার, ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে।

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: স্পষ্ট কোরআনিক ঘোষণা
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
“পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে। আর নারীদের জন্যও রয়েছে অংশ তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে—অল্প হোক বা বেশি—এটি একটি নির্ধারিত অংশ।”
(সূরা নিসা: আয়াত ৭)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, নারীরাও সম্পত্তিতে সমানভাবে অধিকার রাখে। ইসলাম আগমনের পূর্বে আরব সমাজে নারীরা সম্পত্তির কোনো দাবিদার ছিল না। ইসলাম এসে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নারীর মর্যাদাকে নিশ্চিত করেছে।

উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর অধিকার: কন্যা, স্ত্রী, মা, ও বোনের মর্যাদা
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে (ফরায়েজ) নারীর অংশকে নির্ধারণ করা হয়েছে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক ও অবস্থানের ভিত্তিতে। কন্যা সন্তান বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশের মালিক হয়। যদি সন্তান থাকে, স্ত্রী পায় অষ্টমাংশ; সন্তান না থাকলে পায় চতুর্থাংশ। মা তাঁর সন্তানের সম্পত্তিতে ষষ্ঠাংশ পান, আর বোন নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ভাইয়ের সম্পত্তিতে অংশীদার হন।
কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমাদের স্ত্রীদের যদি সন্তান না থাকে, তবে যা কিছু তারা রেখে যায়, তার অর্ধেক তোমরা পাবে। আর যদি সন্তান থাকে, তবে যা কিছু তারা রেখে যায়, তার চতুর্থাংশ তোমরা পাবে।”
(সূরা নিসা: আয়াত ১২)

“পুরুষ দ্বিগুণ পায়” – এই বিধান কেন?
সাধারণভাবে বলা হয়, পুত্র সন্তান দ্বিগুণ পায়, কন্যা পায় অর্ধেক। কোরআনে বলা হয়েছে:
“আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে নির্দেশ দেন—পুরুষ সন্তানকে দুই নারীর সমান অংশ দিতে হবে।”
(সূরা নিসা: আয়াত ১১)
অনেকেই এই আয়াতকে বৈষম্য মনে করেন, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে যৌক্তিকতা। ইসলাম পুরুষের উপর পরিবারের ভরণপোষণ, স্ত্রীর খরচ, সন্তানদের শিক্ষা, বোনের বিয়ে, এমনকি বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনার দায়িত্বও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। অর্থাৎ, অধিক সম্পত্তির বিপরীতে পুরুষের উপর আর্থিক দায়িত্বও অধিক। পক্ষান্তরে, নারীকে সম্পত্তি প্রদান করা হলেও তাঁর উপর কোনো বাধ্যতামূলক আর্থিক দায়িত্ব নেই। সে চাইলে ব্যয় করতে পারে, না চাইলে তা সঞ্চয় করতেও পারে।

দেনমোহর ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি:
ইসলামে নারীর জন্য বিবাহের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা বাধ্যতামূলক। এটি স্বামীর দ্বারা স্ত্রীর প্রতি একটি সম্মানসূচক উপহার ও তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এটি পরিশোধ না করে স্ত্রীকে তালাক দিলে বা স্বামী মৃত্যুবরণ করলে, স্ত্রী আইনি ও শরয়ি অধিকার অনুযায়ী দেনমোহর দাবি করতে পারে।
কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর আনন্দ সহকারে প্রদান করো। যদি তারা স্বেচ্ছায় মোহরের কোনো অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা খেয়ে ফেলতে পারো আনন্দের সঙ্গে।”
(সূরা নিসা: আয়াত ৪)

নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা:
ইসলাম নারীর উপার্জন ও সম্পত্তির উপর তার একচ্ছত্র মালিকানা স্বীকার করেছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
“পুরুষ যা অর্জন করে, তা তার জন্য; আর নারী যা অর্জন করে, তা তার জন্য।”
(সূরা নিসা: আয়াত ৩২)
এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নারীর উপার্জন তারই সম্পদ, কেউ জোরপূর্বক তা নিতে পারে না। এমনকি স্বামীও নয়। এটি আধুনিক নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একটি যুগান্তকারী ভিত্তি।

সামাজিক বাস্তবতা: কেন নারীরা বঞ্চিত?
বিস্ময়ের বিষয় হলো, ইসলাম নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করলেও আমাদের সমাজেই নারীরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, এমনকি শহরের শিক্ষিত পরিবারেও অনেক নারী তাদের পিতৃসম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। “বিয়েতে অনেক পেয়েছে”, “ছেলেরা তো সংসার চালায়”—এই অজুহাতে ইসলামি অধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
এটি একপ্রকার জুলুম। আল্লাহ বলেন:
“তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।”
(সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৮)
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো হক আত্মসাৎ করবে, সে কিয়ামতের দিন সাতবার জাহান্নামে যাবে।”
(সহীহ বুখারী)

এছাড়াও; বর্তমান বিশ্বে ‘নারীর স্বাধীনতা’ ও ‘সমান অধিকার’ স্লোগানে পশ্চিমা নারীবাদীদের একটি অংশ ইসলামকে আক্রমণের অস্ত্র বানিয়েছে। তারা সমতার নামে এমন এক সমাজ গড়ে তুলছে যেখানে একজন নারীকে তার স্বাভাবিক শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক চরিত্র থেকে সরিয়ে অর্থ উপার্জনের যন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।

তাদের দাবি, নারী-পুরুষকে সব দিক থেকে এক রকম করতে হবে—এমনকি দায়িত্ব ও শারীরিক কাঠামোর পার্থক্য উপেক্ষা করে হলেও। এর বিপরীতে ইসলাম নারীর সম্মান ও মর্যাদাকে রক্ষা করে ভারসাম্যপূর্ণ দায়িত্ব বন্টন করেছে। ইসলাম সমতা নয়, ন্যায় (Justice) প্রতিষ্ঠা করে—যা প্রকৃত মানবিকতার ভিত্তি।

রাসূল (সা.) বলেন:
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

পরিশিষ্ট
ইসলামেই নারীর প্রকৃত অধিকার
ইসলাম নারীকে কেবল সম্পত্তির অধিকার দেয়নি; দিয়েছে সম্মান, মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা। যে সমাজ ইসলামি শরীয়ত মেনে চলে, সেখানে নারী কখনো বঞ্চিত হয় না। বরং যারা ইসলামি জ্ঞান ও ন্যায়বিচার থেকে সরে গেছে, তারাই নারীদের প্রকৃত শত্রু। তাই আমাদের উচিত ইসলাম প্রদত্ত নারীর সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআন-হাদীস অনুযায়ী নারীর অধিকার বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

আছিয়া হত্যা মামলা: হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, বাকিদের খালাসে মায়ের ক্ষোভ

 

মাগুরায় ৮ বছরের শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আদালত প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তবে মামলার বাকি তিন আসামি সজীব শেখ, রাতুল শেখ ও রোকেয়া বেগমকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আছিয়ার মা আয়েশা বেগম।

শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার বাদী আয়েশা বেগম বলেন, “আমরা এই রায় মেনে নিতে পারছি না। একজনের ফাঁসি হলেও বাকি তিনজনের খালাসে আমাদের মন ভাঙা।”

২০২৫ সালের ৬ মার্চ, আছিয়া তার বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৩ মার্চ ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে মারা যায় সে। এ ঘটনায় আছিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্ত শেষে ১৩ এপ্রিল অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় এবং ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ২৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। মাত্র ১২ কার্যদিবসে মামলার বিচারকাজ শেষ হয়।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানিয়েছেন, বাদী রায়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় উচ্চ আদালতে আপিল করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে

তথ্যসুত্র ঃবিডি নিউজ,,যুগান্তর,,ইত্তেফাক

 

নারী উদ্যোক্তা গড়ার অগ্রদূত জান্নাতুল হক

 

নারীর ক্ষমতায়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে যাঁরা নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন জান্নাতুল হক। ২০১৩ সালে মাত্র একটি ফেসবুক পেজ ‘আমান্দ ফ্যাশন’ দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়। তখন দেশে এফ-কমার্সের সূচনালগ্ন, আর সেই সময়েই তিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পথ খুঁজে নেন।
ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যার নাম ‘শৈলীর ছোঁয়া’। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন জনপ্রিয় ফুড ব্র্যান্ড এজিউর কুইজিন–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে।

জান্নাতুল হকের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে রয়েছে পারিবারিক প্রেরণা, বিশেষ করে তাঁর স্বামী আশরাফ উদ্দিন–এর ভূমিকা, যিনি একজন প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী। স্বামীর উৎসাহেই তাঁর ব্যবসার প্রতি আগ্রহ জন্মে এবং তাঁর সহযোগিতায় তিনি ব্যবসার জগতে প্রবেশ করেন। পরে এটিকেই তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

জান্নাতুল হকের শৈশব কেটেছে সিরাজগঞ্জে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। এই পারিবারিক বন্ধন ও আদর্শ তাঁকে আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

শিক্ষাজীবনে তিনি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২০০৮ সালে চাইল্ড অ্যান্ড সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর (Masters) সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে।

ছোটবেলা থেকেই জান্নাতুল হকের স্বপ্ন ছিল দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) নিয়ে কাজ করার। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করাটা তাঁর কাছে আবেগের জায়গা।
তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, অনেক নারী সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করলেও সামাজিক বাধা ও কাঠামোগত সমস্যার কারণে মাঝপথে থেমে যেতে হয়। এই সমস্যাগুলো তাঁকে নাড়া দিয়েছে।
এই তাড়না থেকেই ২০২২ সাল থেকে তিনি ১০০ এর বেশি নারী উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা করেছেন। শুধু অর্থ নয়, তিনি দিয়েছেন মানসিক সহায়তা,ব্যক্তিগত পরামর্শ,বিপণন সহযোগিতা,নেটওয়ার্কিং সুবিধা।
এই সব সহায়তার ফলে অনেক নারী উদ্যোক্তা এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নিচ্ছেন এবং রপ্তানি বাজারে পণ্য সরবরাহ করছেন।

তিনি বলেন,“আমি ১০০ নারী উদ্যোক্তাকে ছোট পরিসরে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যাতে তাঁরা নিজেরাই ই–কমার্স ও এফ–কমার্সে দক্ষ হয়ে ওঠে।”

নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য জান্নাতুল হক তৈরি করতে চান একটি সমন্বিত কো–ওয়ার্কিং স্পেস। সেখানে থাকবে-একাধিক উদ্যোক্তার কাজের জায়গা,ছোট ছোট ওয়্যারহাউস,পণ্য সরবরাহ ও ডেলিভারির ব্যবস্থা,সাপ্লাই চেইন পরিচালনার পূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

তিনি বিশ্বাস করেন, এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা বড় করতে পারবেন, তৈরি করতে পারবেন নিজস্ব অফিস ও বড় আকারের স্টোরেজ সুবিধা।

জান্নাতুল হক ই–কমার্স খাতের উন্নয়নে নিরাপদ ব্যবসা পরিবেশ, গ্রাহকের আস্থা, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, আধুনিক লজিস্টিক ও পেমেন্ট সিস্টেম, স্টার্টআপ ফান্ড এবং সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে নীতিমালা গঠনের ওপর জোর দেন।
তিনি মনে করেন “ই-কমার্স খাত কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের নয়, এটি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি বড় হাতিয়ারও হতে পারে।”

জান্নাতুল হকের যাত্রা প্রমাণ করে, একজন নারীর আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম আর প্রেরণায় গড়ে উঠতে পারে এক সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তি। তাঁর কাজ শুধু নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও রাখছে গভীর প্রভাব।

তথ্যসুত্রঃ সারাবাংলা, যুগান্তর, সিমেক নিউজ.কম

 

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের, পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের ২০% নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। পাশাপাশি, সিএমএসএমই খাতে ২৫% ঋণ বিতরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এর মধ্যে ১৫% নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করবে এবং ব্যবসায় তাদের অংশগ্রহণ বাড়াবে।

তবে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক নারী উদ্যোক্তাই প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা পান না বা ঋণ পেতে নানা জটিলতার মুখোমুখি হন। তাছাড়া, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই নীতিকে কতটা আন্তরিকভাবে অনুসরণ করবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।
সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোর মনিটরিং বাড়ানো, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

পাশাপাশি, নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নেটওয়ার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এই নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

আপনার বিছানা কি গোপনে অসুস্থতার কারণ হয়ে উঠছে?

 

ঘুম!!শরীরে বিশ্রামের প্রয়োজন। অথচ আপনি জানেন কি, বছরে গড়ে একজন মানুষ তার বিছানায় ২৬ গ্যালনের মতো ঘাম ঝরায়? এই ঘাম, ধুলা, ত্বকের মৃত কোষ, ছত্রাক—সব মিলিয়ে আপনার আরামদায়ক বিছানাটিই হয়ে উঠতে পারে জীবাণুর অভয়ারণ্য!

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট ফিলিপ টিয়েরনো এ নিয়ে দিয়েছেন চমকে দেওয়ার মতো এক সতর্কতা। তিনি বলেন, অপরিষ্কার চাদরে ঘুমানো ঠিক যেন কুকুরের বিষ্ঠা স্পর্শ করার পর হাত না ধোয়ার মতোই ক্ষতিকর! কারণ, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই চাদরে জমে যেতে পারে ঘাম, পরাগকণা, ধুলোমাইটের বর্জ্য, এমনকি ছত্রাকের স্পোর—যা অ্যালার্জি ও নানা রকম সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

এ সমস্যা থেকে বাঁচতে টিয়েরনোর পরামর্শ খুবই স্পষ্ট:
আপনার বিছানার চাদর প্রতি সপ্তাহে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার করুন গরম পানি এবং উচ্চ তাপে শুকানোর পদ্ধতি, যাতে সব রকম ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক নিশ্চিহ্ন হয়। শুধু চাদর নয়—বালিশের কভার ও তোষকের কভার পরিষ্কার রাখাও জরুরি। কারণ, বালিশে থাকতে পারে অন্তত ১৬ প্রকারের ছত্রাক!

শুধু সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনার ঘুমানোর জায়গাটা হয়ে উঠতে পারে এক শান্ত, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর আশ্রয়—যেখানে জীবাণুর কোনো ঠাঁই নেই।

 

আল-আকসা: ইতিহাসের হৃদয়ে পোড়া প্রার্থনার মিনার

জেরুসালেম—একটি শহরের নাম নয় কেবল, এটি ইতিহাসের ধুলিকণায় লেখা বিশ্বাস, বেদনা ও বিজয়ের এক অনন্ত কাব্য। এই পবিত্র শহরের বুকে হৃদয়ের মতোই স্পন্দিত মসজিদুল আকসা, যে স্থান একাধারে ঈমানের প্রথম অভিমুখ, নবী করিম (সা.)-এর মেরাজের সফরের গন্তব্য এবং মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সেই আল আকসা আজ শুধু ইট-পাথরের একটি স্থাপনা নয়; এটি মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস ও ঐক্যের প্রতীক। যুগের পর যুগ ধরে এই মসজিদ সাক্ষী থেকেছে যুদ্ধ, বিজয়, বিশ্বাসঘাতকতা এবং পুনর্জাগরণের।

এই লেখায় আমরা খুঁজে দেখবো আল আকসার অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এক দীর্ঘ, রক্তাক্ত কিন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়—যা একইসঙ্গে বেদনার, তেমনি অহংকারের।

পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের হৃদয়ে অবস্থিত জেরুসালেম। আর এখানেই ইসলামের এক অনন্য ধন—মসজিদুল আকসা। মুসলমানদের প্রথম কিবলা, মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থান হিসেবে মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান।

আল আকসা: এক দৃষ্টিতে অতীত ও বর্তমান
আল কোরআনের পবিত্র আয়াতে ‘বরকতময় ও পবিত্র ভূমি’ হিসেবে বর্ণিত এই ভূমি অসংখ্য নবী ও রাসূলের পদধূলিতে ধন্য। প্রাচীন যুগে এটি ছিল ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। ইতিহাসের পাতায় আল আকসা ঘিরে ফুটে ওঠে সুলতান সালাহউদ্দীনের বীরত্বগাথা, খলীফা ওমরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মুসলিম শাসকদের নির্মিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বর্ণালী অধ্যায়।
জেরুসালেমের এই ভূমিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহরসহ বহু মনীষী।

আল আকসা কমপ্লেক্স: শুধু একটি মসজিদ নয়, জ্ঞান-ঐতিহ্যের শহর
প্রায় ১৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই কমপ্লেক্স কোনো একটি স্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি স্থাপত্য-ঐতিহ্যের মহাসমারোহ। চার দেয়ালের ভিতর বিস্তৃত প্রায় দুই শতাধিক স্থাপনা—মসজিদ, মিনার, মেহরাব, মিম্বারসহ একেকটি ইট যেন বহন করে শতাব্দীর ইতিহাস।

নির্মাণ ইতিহাস: হাজার বছরের শেকড়

১.ইসলাম পূর্ব যুগ: আদি নিদর্শনের শুরু
মসজিদুল আকসা পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ। মক্কার মসজিদুল হারামের ৪০ বছর পর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, কেউ বলেন আদম (আ.) এই মসজিদের প্রথম নির্মাতা, কেউ বলেন নূহ (আ.)-এর পুত্র সাম, আবার অনেকের মতে ইব্রাহিম (আ.) এই পবিত্র স্থানের ভিত্তি স্থাপন করেন।

২.নবীদের যুগ: পবিত্রতার উত্তরাধিকার
নূহ (আ.)-এর প্লাবনে ধ্বংস হওয়ার পর ইব্রাহিম (আ.) মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর দাউদ (আ.) এবং তাঁর পুত্র সুলাইমান (আ.) সময়কালে মসজিদ পরিণত হয় এক বিস্তৃত কমপ্লেক্সে। সুলাইমান (আ.) নির্মাণ করেন হায়কাল-ই-সুলাইমানি, যা পরবর্তীতে ইহুদিদের বিশ্বাসে রূপ নেয় সলেমন ট্যাম্পলে।

ইহুদি ও খ্রিস্টান আধিপত্য: ইতিহাসের উল্টো পৃষ্ঠা
খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে বুখতে নাসর হায়কাল ধ্বংস করে স্মৃতিচিহ্ন লুটে নেয়। ৭০ বছর পর ইরানি সম্রাটের সহায়তায় ইহুদিরা নির্মাণ করে ‘সেকেন্ড ট্যাম্পল’। এরপর গ্রিক সম্রাট অ্যারোটেনিস একে গ্রীক মন্দিরে রূপান্তর করেন। খ্রিস্টান শাসকরা আবারও এর রূপান্তর ঘটায় গির্জায়। এ সময় ইহুদিরা ভূমিহীন, আশ্রয়হীন জাতিতে পরিণত হয়—যেমনটা কোরআনে উল্লেখিত ‘লাঞ্চনার জাতি’।

ইসলামোত্তর যুগ: পুনর্জাগরণের আলোকবর্তিকা
মেরাজের রাতে রাসূল (সা.)-এর আল আকসা সফর শুধু অলৌকিক ঘটনা নয়, এক নতুন যুগের সূচনা। এর ধারাবাহিকতায় ১৪ হিজরিতে খলীফা ওমর (রা.) মসজিদে ওমর নির্মাণের মাধ্যমে এখানে মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক নির্মাণ করেন কুব্বাতুস সাখরা।
স্বর্ণচূড়া বিশিষ্ট অষ্টকোণাকৃতির এই স্থাপনা ইসলামী স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। কেন্দ্রের পাথরটি ইহুদিদের মতে পৃথিবীর ‘ফাউন্ডেশন স্টোন’।

উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে আল আকসা হয়ে ওঠে ইসলামি জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠিত হয় অসংখ্য মাদরাসা ও প্রতিষ্ঠান। যদিও শিয়া ইসমাঈলিয়া সম্প্রদায়ের হাতে কিছু সময় এটি বিভ্রান্ত মতবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়, কিন্তু সেলজুক সুলতানরা পুনরুদ্ধার করে ইসলামের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন। ইমাম গাজালির আল আকসায় অবস্থান, জ্ঞানের দীপ্তি ছড়ায় এই কমপ্লেক্সে।

ক্রুসেড থেকে আধুনিক যুগ:রাজনৈতিক বৈরি বাতাস

মসজিদ আল আকসা—ইতিহাস, ধর্ম এবং রাজনীতির এক অম্ল-মধুর মিশেল। জেরুসালেমের হৃদয়ে অবস্থিত এই পবিত্র স্থানকে ঘিরে ইতিহাসের অনেক রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয়েছে। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে এর মর্যাদা বহু পুরনো হলেও, এর ইতিহাসে এক গভীর মোড় আসে ১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দে, যখন প্রথম ক্রুসেডের সময় খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা জেরুসালেম দখল করে। তারা আল-আকসা মসজিদকে “সলোমনের মন্দির” বলে ঘোষণা করে এবং কুব্বাত আস সাখরাকে “টেমপ্লাম ডোমিনি((Templum Domini)” বা ঈশ্বরের গম্বুজ হিসেবে রূপান্তর করে ফেলে। মসজিদটি তখন খ্রিষ্টানদের গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে, আর আল-আকসা মসজিদকে ব্যবহার করা হয় কখনও ঘোড়ার আস্তাবল, কখনও রাজপ্রাসাদ হিসেবে।

১১১৯ খ্রিষ্টাব্দে নাইটস টেম্পলাররা মসজিদটিকে তাদের সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এই সময়ে স্থাপত্যগত অনেক পরিবর্তন আসে—উত্তরের বারান্দা সম্প্রসারিত হয়, নতুন এপস তৈরি হয়, এবং অভ্যন্তরে একটি বিভক্তকারী দেয়াল নির্মিত হয়। পশ্চিমে ও পূর্বে খিলানযুক্ত নতুন অংশ সংযোজিত হয়, যা পরে একটিতে মহিলাদের নামাজের স্থান এবং অন্যটিতে ইসলামী জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরিত হয়।

এই ধর্মীয়-রাজনৈতিক দখলের অবসান ঘটে ১১৮৭ সালে। সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জেরুসালেম পুনরুদ্ধার করে। বিজয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই মসজিদের অভ্যন্তরে থাকা খ্রিষ্টানদের স্থাপনাগুলো(টয়লেট, শস্যগুদাম) সব সরিয়ে ফেলা হয়। মেঝে আচ্ছাদিত হয় দামি কার্পেটে, গোলাপজল ও সুগন্ধি ছিটিয়ে তা আবার নামাজের উপযোগী করে তোলা হয়। সালাহউদ্দিন তখন মসজিদে স্থাপন করেন এক ঐতিহাসিক মিম্বর, যা আগে 1168 সালে সুলতান নুরউদ্দিন জেনগির আদেশে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং তার মৃত্যুর পরে সমাপ্ত হয়।
পরবর্তী শতকগুলোতে মামলুক ও উসমানীয় শাসকদের অধীনে আল-আকসা ধীরে ধীরে নতুন মাত্রা পায়।
১৩৪৫ সালে মামলুক সুলতান আল-কামিল শামান মসজিদের পূর্ব দিকে আরও দুটি সারি ও ফটক সংযুক্ত করেন। উসমানীয়রা ১৫১৭ সালে জেরুসালেমের শাসন নিলে মসজিদে বড় কোনো স্থাপত্য পরিবর্তন না আনলেও আশেপাশে নানান উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেন। কাসিম পাশার ফোয়ারা, নতুন সেতু এবং মুক্ত গম্বুজ নির্মাণ হয় এই সময়েই। ১৮১৬ সালে গভর্নর সুলাইমান পাশা আল-আদিল মসজিদের জীর্ণ অবস্থা দেখে পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ নেন।
বিশ শতকে এসে আল-আকসা নতুন করে সংস্কারের সুযোগ পায়, যখন জেরুসালেমের গ্র্যান্ড মুফতি আমিন আল-হুসাইনি তুর্কি স্থপতি মিমার কামালউদ্দিন বেককে দায়িত্ব দেন মসজিদ ও আশেপাশের স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। পুরনো উমাইয়া ভিত্তি শক্তিশালী করা হয়, কাঠের বিমের পরিবর্তে কংক্রিট ও পিতল ব্যবহৃত হয়, ভেতরের আর্চ ও গম্বুজের সৌন্দর্য পুনর্নির্মাণ করা হয়। খোদিত আরবি লিপি ও ফাতেমীয় আমলের মোজাইকও প্লাস্টারের আড়াল থেকে উদ্ধার করে দৃশ্যমান করা হয়।

তবে সব ইতিহাস আনন্দদায়ক নয়। ১৯২৭ ও ১৯৩৭ সালের ভূমিকম্প মসজিদে ব্যাপক ক্ষতি করে, যাকে ১৯৩৮ ও ১৯৪২ সালে আবার মেরামত করা হয়।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ছিল এক মোড়বদলের ঘটনা, যেখানে মুসলিমরা হারায় মসজিদুল আকসার কার্যত নিয়ন্ত্রণ। যদিও নামমাত্রভাবে এটি পরিচালিত হয় জর্ডান-ফিলিস্তিনের ওয়াকফের তত্ত্বাবধানে, বাস্তবে প্রতিটি প্রবেশপথে রয়েছে দখলদার সেনাদের কঠোর নজরদারি। মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের আগে পোহাতে হয় অসহনীয় চেকিং, কখনো কখনো বন্ধ থাকে প্রবেশদ্বার।

কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট, যখন এক অস্ট্রেলীয় পর্যটক ডেনিস মাইকেল রোহান মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুনে নুরউদ্দিনের তৈরি সেই ঐতিহাসিক মিম্বর পুড়ে যায়। রোহান বিশ্বাস করতেন এই আগুনের মাধ্যমে তিনি যীশুর দ্বিতীয় আগমন ত্বরান্বিত করতে পারবেন। এই ঘটনার ফলে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভ জন্মায় এবং তার ফলস্বরূপ গঠিত হয় ওআইসি—ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা।

১৯৮০-এর দশকে ফের উগ্রবাদী ইহুদি সংগঠন গুশ এমুনিম আন্ডারগ্রাউন্ড আল-আকসা ও কুব্বাত আস সাখরা উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাদের লক্ষ্য ছিল, এই দুই পবিত্র স্থাপনা ধ্বংস করে সেই স্থানে ”তৃতীয় ইহুদি মন্দির(থার্ড টেম্পল)” নির্মাণ করা।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, যখন ইসরায়েলের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এরিয়েল শ্যারন এক হাজার সশস্ত্র রক্ষী নিয়ে আল-আকসা চত্বরে প্রবেশ করেন। ফিলিস্তিনিরা প্রতিবাদ করে, এবং সংঘর্ষের সূচনা হয়—যা পরবর্তীতে “আল-আকসা ইন্তিফাদা” নামে ইতিহাসে স্থান পায়। এই ইন্তিফাদা চলে পাঁচ বছর, ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ফিলিস্তিনে।
২০১৪ সালে ইসরায়েলি পুলিশ ১৯৬৭ সালের পর প্রথমবারের মতো আল-আকসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। যদিও তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তারা শুধু প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন।

২০১৪ সালের পর থেকে আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনা ও দখলদারিত্বের যে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, তা মুসলিম বিশ্বের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মসজিদে প্রবেশে মুসলমানদের জন্য কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে—বিশেষ করে রমজানের মতো পবিত্র মাসে, যেখানে পুরুষদের জন্য ৫৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৫০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ বহু ফিলিস্তিনির জন্য মসজিদে নামাজ আদায়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাহী নিয়ম ভেঙে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো প্রায় ১৮০ জন ইহুদি উপাসককে আল-আকসা চত্বরে প্রার্থনার অনুমতি দেয়। এ পদক্ষেপ মুসলিমদের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়, কারণ এটি মসজিদের দীর্ঘকালীন ধর্মীয় মর্যাদা ও স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
মুসলমানদের দাবি, এই পরিবর্তন ইসরায়েলের পরিকল্পিত নীতির অংশ, যার মাধ্যমে মসজিদের নিয়ন্ত্রণে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এই সংকট শুধু ফিলিস্তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেক মুসলিম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন আল-আকসার ধর্মীয় অবস্থান ও মুসলমানদের অধিকারে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজও আল-আকসা মসজিদ তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বিশ্ব বিবেকের সামনে প্রশ্ন তুলে দাঁড়িয়ে আছে—একটি মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ উপাসনাস্থলের আশায়।

সমাপ্তি
আল-আকসা মসজিদ শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি একটি প্রতীক—বিশ্বাস, সংগ্রাম ও অটল অবস্থানের প্রতীক। শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যে মিনার একবারও মাথা নোয়ায়নি, বরং প্রতিটি দখল, প্রতিটি আগুন, প্রতিটি গুলির শব্দে আরও বেশি দৃঢ় হয়ে উঠেছে তার আত্মিক অবয়ব। ক্রুসেডারদের বিজয়, সালাহউদ্দিনের পুনরুদ্ধার, উসমানীয়দের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা আধুনিক যুগের দখলদারিত্ব—সব কিছুর মধ্য দিয়েই আল-আকসা থেকেছে অমলিন, অভ্রান্ত।

আজও, যখন জেরুসালেমের আকাশে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে, তখনও মসজিদুল আকসার আঙিনায় ভোরের আলো পড়ে নিঃশব্দে। সেই আলোয় ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষণ যেন চিত্রিত হতে থাকে—মিম্বর, মিনার ও মোজাইকে। সময়ের শত আঘাত, রাজনীতির শত হিসাব-নিকাশ আর বেদনার অতল থেকে উঠে আসা এই মসজিদ তাই কেবল ইবাদতের স্থান নয়, হয়ে উঠেছে এক জাতির আত্মপরিচয়ের অন্তর্নিহিত প্রতিচ্ছবি।

এখনও আল-আকসা থেকে ধ্বনিত হয় আজানের ধ্বনি—ভেঙে দেয় দেয়ালের সীমা, জাগিয়ে তোলে আত্মা। যতদিন ঈমান টিকে থাকবে, ততদিন আল-আকসাও টিকে থাকবে—বিশ্বাসের প্রতিরূপ হয়ে, দুনিয়ার সমস্ত নির্যাতনের বিপরীতে মাথা উঁচু করে।
আল আকসা আজও আমাদের ডাকে, ইতিহাসের প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যেন সে ফিসফিস করে বলে—
“আমাকে ভুলো না, কারণ আমার মাঝে লুকিয়ে আছে তোমার আত্মপরিচয়, তোমার সংগ্রাম, তোমার ঈমান।”

লেখকঃ আরওয়া আনাম

 

‘মাতৃত্বই শ্রেষ্ঠ পরিচয়’—মা দিবসে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের বিশেষ উদ্যোগ

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স পিএলসি আয়োজন করেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণা ‘মাতৃত্বই পৃথিবীর সবচেয়ে মহৎ পেশা’।
এই প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ১১ জন মায়ের জীবনগাথা ভিডিওচিত্রে ধারণ করেছে, যেখানে তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব ও মাতৃত্বের ভারসাম্য রচনার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই ভিডিওগুলোতে উঠে এসেছে—কীভাবে এক একজন মা সংসার, সন্তান এবং কর্মক্ষেত্রে সমান নিষ্ঠায় দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ, মমতা এবং ধৈর্যের অনন্য দৃষ্টান্তগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো—সমাজে মায়েদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের জীবনের অজানা অধ্যায়গুলো সবার সামনে তুলে ধরা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সন্তান লালন-পালন কোনো সাধারণ দায়িত্ব নয়; বরং এটি এক মহান ত্যাগের কর্মযজ্ঞ, যা অন্য যেকোনো পেশার তুলনায় অনেক বেশি ভালোবাসা ও ধৈর্য দাবি করে।

মাতৃত্বকে একজন নারীর জীবনের শ্রেষ্ঠ পরিচয় হিসেবে তুলে ধরাই এই প্রচারণার প্রধান বার্তা।

 

নারীর স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রযুক্তির বিপ্লব: বুয়েটের ‘নিওস্ক্রিনিক্স’ টিমের বিশ্বজয়

 

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্তন ক্যান্সার। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত না হওয়ায় এই রোগে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী মৃত্যুবরণ করেন;বিশেষত আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে যেখানে সচেতনতা ও নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের অভাব প্রবল। ঠিক এই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের গর্ব ‘বুয়েট’-এর একটি তরুণ দল এনে দিল এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি, যা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

জন হপকিন্স হেলথকেয়ার ডিজাইন কম্পিটিশন ২০২৫-এর ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক বিভাগে বিজয়ী হয়েছে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগের উদ্ভাবনী দল ‘নিওস্ক্রিনিক্স’।
তাদের তৈরি প্রযুক্তি—একটি AI-ভিত্তিক ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশন, যা নারীদের নিজে থেকেই ঘরে বসে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ করে দেয়। শুধুমাত্র লক্ষণ বিশ্লেষণ করেই প্রাথমিক পর্যায়ে সম্ভাব্যতা শনাক্ত করা সম্ভব হয়, যা পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।

এই প্রকল্পের মূল নেতৃত্বে ছিলেন ফাহমিদা সুলতানা,’নিওস্ক্রিনিক্স’ টিমের লিড ইনোভেটর।
একজন নারী হিসেবে, নারীর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তার নেতৃত্ব এই প্রকল্পকে দিয়েছে এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি। বাস্তব অভিজ্ঞতা, নারীর সমস্যা সম্পর্কে অনুভব, এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা—এই তিনের সমন্বয়ে তিনি টিমকে এগিয়ে নিয়ে যান সঠিক সমাধানের পথে।

দলটির অন্যান্য সদস্যরা-এইচ এম শাদমান,
সাদাতুল ইসলাম,মো. হাসনাইন আদিল,পৃথু আনান।
তত্ত্বাবধান করেছেন-অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান, বুয়েট।
তথ্য ও মেডিকেল সহায়তায় ছিলেন-জারিন তাসনিম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ,রিবাতুল ইসলাম, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে স্বাস্থ্যপরিসেবা এখনো শহরকেন্দ্রিক এবং নারীরা বহু সময় দ্বিধা বা লজ্জায় স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন, সেখানে এই প্রযুক্তি হতে পারে এক প্রযুক্তিনির্ভর আর্শীবাদ। এটা কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং নারীর স্বাস্থ্য অধিকার ও সচেতনতার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

অভিনন্দন নিওস্ক্রিনিক্স টিম এবং বুয়েট!
তোমাদের উদ্ভাবন একদিন লাখো নারীর জীবন বাঁচাবে।

#NeoScreennix
#WomenInTech
#HealthcareInnovation
#DigitalHealth
#BangladeshPride
#BreastCancerAwareness

 

মুন্সিগঞ্জে দুই তরুণীকে মারধর: দোষীদের শাস্তির দাবি মহিলা পরিষদের

 

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধর এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সোমবার (১৩ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১১ মে ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী একটি লঞ্চ মুন্সিগঞ্জে সাময়িক যাত্রাবিরতি করলে দুই তরুণী ঘাটে নেমে কিছু কেনাকাটার জন্য বের হন। তখন স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে লঞ্চে হামলা চালানো হয় এবং দুই তরুণীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। প্রকাশ্যে একজন যুবক বেল্ট দিয়ে তাঁদের আঘাত করে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

মহিলা পরিষদ বলছে, এটি নিছক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং নারীর প্রতি সহিংসতা, অবমাননা ও বৈষম্যের একটি গভীর সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মৌলিক অধিকারের ওপর এ ধরনের হামলা একটি ভয়ংকর বার্তা দেয়।”
সংগঠনটি নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও সামাজিক মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

 

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের প্রেক্ষিতে ঢাকায় আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বিভাজন ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে।

‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: বিতর্ক ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বুধবার (৭ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে। গবেষণা ও সামাজিক উন্নয়নমুখী সংগঠন ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ কারণে অবিলম্বে কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন বাতিল করতে হবে। তারা সব ধর্ম ও মত-পথের নারীদের সমন্বয়ে নতুন করে একটি কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। বিশেষভাবে ইসলামিক চিন্তাবিদদের কমিশনে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তারা তুলে ধরেন।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,
“সরকার কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানি না। পদে পদে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আবার সরকারও সেসব ষড়যন্ত্রে পা দিচ্ছে। নারী সংস্কার কমিশনও আরেকটি ষড়যন্ত্র। এ জন্য এই কমিশন প্রত্যাখ্যান করছি।”
তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন,
“কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন যাচাই না করেই আপনি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে করে সরকার কার্যত জনগণের মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। আপনারা কি জনগণের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চান?”

ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুর রব বলেন,“কমিশনের প্রস্তাবগুলো জাতিকে চূড়ান্ত বিভাজনের দিকে ঠেলে দেওয়ার একটি উদ্যোগ। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতকে উপেক্ষা করে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাই প্রায় সব মহল থেকেই এগুলোকে পরিত্যাজ্য বলে মনে করা হচ্ছে।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (চাকরিচ্যুত) মো. হাসিনুর রহমান বলেন,“এই কমিশন পরিবারের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে। এটি বৃদ্ধাশ্রমকে প্রমোট করার কমিশন। এর মাধ্যমে মানুষকে ইসলামী মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা চলছে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম আবদুল মান্নান বলেন,“কমিশনের বেশির ভাগ প্রস্তাব ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিন্ন পারিবারিক আইনসহ অনেক প্রস্তাব অন্যান্য ধর্মেরও পরিপন্থী। তাই এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে হবে।”

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী অধ্যাপক শামীমা তাসনীম বলেন,“কমিশনের প্রস্তাবগুলো দাম্পত্য কলহের নতুন ইস্যু তৈরি করবে। বাস্তবায়িত হলে পরিবারের মহিলা সদস্যদের কাছে পুরুষ সদস্যদের শত্রু করে তুলবে।”

বক্তারা আরও বলেন, যৌনকর্মীদের শ্রমিক নয়, বরং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জুলফিকার হাসান। সঞ্চালনা করেন ওয়ান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক মুহাম্মাদ আবদুল মান্নান।

আরও বক্তব্য রাখেন:বুয়েটের অধ্যাপক মো.ফখরুল ইসলাম,
অ্যাডভোকেট ইকতেদার আহমেদ,মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহীন আরা আনোয়ারী,সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা খানম,আইপাস বাংলাদেশের সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজর ডা. শামিলা নাহার,আইনজীবী সাবিকুন নাহার মুন্নি,ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর খলিলুর রহমান মাদানী,মাসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব আবদুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ,ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম।

 

মুসলিম হবার ‘অপরাধে’ চিকিৎসা বঞ্চিত অন্তঃসত্ত্বা নারী!

 

কলকাতার কস্তুরী দাস মেমোরিয়াল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বা মুসলিম নারী। অভিযোগ, হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সি কে সরকার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ওই রোগীকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

ভুক্তভোগী নারী গত সাত মাস ধরে নিয়মিত ওই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তবে সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনার পরপরই চিকিৎসক ডা. সি কে সরকার বলেন, “পহেলগাঁও ঘটনার পর আমি মুসলমান রোগী দেখা বন্ধ করেছি। হিন্দুদের উচিত তোমার স্বামীকে হত্যা করা, তাহলে বুঝবে যন্ত্রণা কাকে বলে।”

চিকিৎসকের এমন বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে হতবাক হয়ে পড়েন রোগী ও তাঁর পরিবার। বাধ্য হয়ে তাঁরা অন্যত্র চিকিৎসা নিতে যান। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনেই নিরাপদে রয়েছেন।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নেটিজেনদের প্রশ্ন, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা কীভাবে একজন চিকিৎসকের নৈতিকতা এবং শপথের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

এদিকে আরও জানা যায়, কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতাল জে এন রে হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় পতাকার প্রতি ‘অসম্মান’ দেখানোর অভিযোগ তুলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

এ ধরনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও চিকিৎসাসেবার মৌলিক নীতিমালা আদৌ কি এসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিদ্বেষের মধ্যেও অক্ষুণ্ণ থাকছে?

 

আলো ছড়ান যিনি:শিল্পী খাতুনের পাঠাগার

শিক্ষকতা, ব্যবসা আর সমাজসেবার মাঝেও যে কেউ নিজের গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারে, তার উজ্জ্বল উদাহরণ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার আছিম কুটিরা গ্রামের শিল্পী খাতুন।

স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে একসময় ঢাকায় বসবাস করতেন শিল্পী। তবে কোভিড-১৯ মহামারির পর তারা ফিরে আসেন নিজ গ্রাম আছিম কুটিরায়। এখানে কুটিরা ডিএস ক্যাডেট একাডেমিতে পড়ানোর পাশাপাশি নিজের পাঠাভ্যাস চালিয়ে যান। আশপাশের অনেকে তাঁর কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তেন, আবার ফেরতও দিতেন। এই আগ্রহ দেখে তিনি নিজেই বই জমিয়ে তৈরি করে ফেলেন একট ছোট্ট পাঠাগার—’কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগার।’

গ্রামে একজন নারী হিসেবে পাঠাগার চালানো সহজ ছিল না। শুরুতে অনেকে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। স্কুলে পড়ানোর সময়ও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন শিল্পী খাতুন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। ধৈর্য আর নিষ্ঠায় গ্রামের নারীদের আস্থা অর্জন করেছেন এবং এখন পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সব সদস্যই নারী।

বর্তমানে পাঠাগারটিতে একসঙ্গে ১৪ জন পাঠক বসে বই পড়তে পারেন। সদস্যসংখ্যা ১৩৭ জন। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, গৃহিণীসহ নানা শ্রেণির মানুষ এখানে বই পড়তে আসেন। শিল্পী খাতুন নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে বই কিনেছেন এবং অনেকেই বই উপহারও দিয়েছেন।

শুধু পাঠাগার প্রতিষ্ঠা নয়, সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোও তাঁর নিয়মিত কাজ। রোজার সময় এতিম, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ইফতার ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করেন। গ্রামের মানুষদের জন্য চালের কার্ডের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তিনি।

শিক্ষকতার পাশাপাশি স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পী খাতুন একটি মুদি ও মনিহারি দোকান চালু করেছেন। এই ব্যবসা তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি আরও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

শিল্পী খাতুন চান, তাঁর স্কুল ও পাঠাগারের মডেল আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ুক। যাতে গ্রামের আরও মানুষ পড়ালেখা ও সচেতনতার আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারে। এজন্য তিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

পারিবারিক কলহের বলি হয়ে ঝরে গেলো একটি প্রাণ

 

চট্টগ্রামের র‍্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের এক নির্জন অফিস কক্ষে সকালটা ছিল অন্যরকম নীরব। অফিসে ঢোকার সময় সহকর্মীরা হয়তো ভেবেছিলেন, প্রতিদিনের মতোই দায়িত্বে নিযুক্ত হবেন তাদের প্রাণচঞ্চল ও দায়িত্বশীল সহকর্মী এএসপি পলাশ সাহা। কিন্তু দরজা খুলতেই এক বিভীষিকাময় দৃশ্য তাদের চোখে পড়ে,রক্তে ভেজা ইউনিফর্মে পড়ে আছেন পলাশ সাহা, হাতে নিজের সার্ভিস রিভলভার।

একজন তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল পুলিশ অফিসার—যিনি রাষ্ট্রের সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে শপথ নিয়েছিলেন, তিনিই কেন নিজেই নিজের জীবন কেড়ে নিলেন? মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া ছোট্ট একটি চিরকুট যেন সেই প্রশ্নের উত্তর দেয় “আমার মৃত্যুর জন্য মা ও বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না।” কিন্তু এই একটি বাক্যে ঢাকা পড়েনি সেই গভীর পারিবারিক সংকট, যেটি ধীরে ধীরে পলাশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

পলাশ সাহা ৩৭তম বিসিএসের মেধাবী র‍্যাব কর্মকর্তা। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার সন্তান হিসেবে এলাকার গর্ব। সহকর্মীদের ভাষায়, তিনি ছিলেন দায়িত্ববান, দৃঢ়চেতা এবং বিনয়ী। তার এমন করুণ পরিণতি কারো কল্পনায়ও আসেনি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে সুস্মিতা সাহার সঙ্গে পলাশের বিয়ে হয়। সেই সম্পর্কের শুরু থেকেই পলাশের মা আরতি সাহার সঙ্গে সুস্মিতার সম্পর্ক খারাপ ছিল। সময়ের সাথে সেই বিরোধ আরও তীব্র হয়ে উঠে। পলাশ চেষ্টা করেও মা এবং স্ত্রীর মধ্যে শান্তি আনতে পারেননি।

ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানা যায় এক বেদনাময় চিত্র। শ্বশুর ভরত সাহা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার মেয়ে সুস্মিতাকে অনেক ভালোবাসত পলাশ। কিন্তু সেই ভালোবাসা তার মা সহ্য করতে পারেনি। মেয়েটা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল কয়েকবার।” পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই সুস্মিতা তার শাশুড়ি আরতি সাহার নির্যাতনের শিকার হন। রান্না নিয়ে অপমান, কথা বলা নিয়ে টিপ্পনি, এমনকি ফেসবুকে আত্মহত্যার ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দিয়েও পরে বাধ্য হয়ে তুলে নিতে হয় তাকে।

পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা সংবাদমাধ্যমে জানান, শাশুড়ির চাপে তিনি স্বামীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়েই তুলতে পারেননি। পলাশ খুবই ভালো মানুষ কিন্তু ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত মাতৃভক্ত। এমনকি ৩৫ বছর বয়সেও মা তাকে নিজ হাতে খাওয়াতেন, কোন পোশাক পরবে সেটাও মা ঠিক করতেন। বাড়ির সব সিদ্ধান্তে শাশুড়ির আধিপত্য ছিল। ফলে স্বামীকে ভালোবাসলেও, সুস্মিতা নিজেকে যেন ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ বলে মনে করতেন সংসারে।
বিয়ের শুরুর দিকে সুস্মিতা চেষ্টা করেছিলেন সংসারটাকে গুছিয়ে রাখতে। শাশুড়ির চুলে তেল দেয়া থেকে শুরু করে গোসল করানো পর্যন্ত সব করেছেন। কিন্তু এত যত্ন-আদর সত্ত্বেও সম্পর্কের বরফ গলেনি। বরং দিনের পর দিন বাড়তে থাকে উপেক্ষা ও মানসিক অবহেলা।

সুস্মিতার চাচাতো ভাই পার্থ সাহাও অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য চাপ ও নির্যাতন চলেছে। তবে পলাশকে সবসময় ভালো মনে হয়েছে।

এদিকে পলাশের আত্মহত্যার পর তার আত্মীয়রা সামাজিক মাধ্যমে স্ত্রীকে দায়ী করে নানা স্ট্যাটাস দিলেও সুস্মিতার দেওয়া তথ্যগুলো স্পষ্ট করে, এটি ছিল এক জটিল মানসিক দ্বন্দ্ব ও পারিবারিক একচ্ছত্র আধিপত্যের করুণ পরিণতি।

যদিও ঘটনাটিকে আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে: এটি কি নিছক আত্মহত্যা, নাকি মানসিক ও পারিবারিক নির্যাতনের প্ররোচনায় সংঘটিত আত্মহনন? বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় “আত্মহত্যায় প্ররোচনা” একটি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। তবে সামাজিক রীতি অনুযায়ী পারিবারিক কলহকে প্রায়শই গোপন করা হয় কিংবা ‘গৃহস্থালির ব্যাপার’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার ভেতরে লুকিয়ে আছে বৃহত্তর একটি প্রশ্ন—আমাদের সমাজে পারিবারিক সম্পর্ক কীভাবে একজন ব্যক্তিকে মানসিকভাবে ভেঙে দিতে পারে? বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা আমাদের আদালতগুলোতে জমে থাকলেও সমস্যা প্রতিরোধে নেই কোনো কার্যকর সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নীতি।

সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবার তিনটি স্তরেই প্রয়োজন সচেতনতা, সহনশীলতা এবং সহানুভূতি। নইলে এমন পলাশদের আর শেষ নেই, শুধু সময়ের সাথে নামগুলোই পাল্টাবে।

তথ্যসূত্রঃপ্রথম আলো
যুগান্তর
চ্যানেল ২৪

 

রাবিতে নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে এক শিক্ষক ক্লাস চলাকালীন সময় বোরকা পরা ছাত্রীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম ছাত্রীদের ‘কালো কাক’ বলে কটাক্ষ করেন এবং অতীতে বহুবার শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেছেন।

ঘটনার পরপরই মাস্টার্স শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম শুধু পোশাক নয়, শিক্ষার্থীদের পারিবারিক পটভূমি, অর্থনৈতিক অবস্থা, এমনকি শারীরিক গঠন নিয়েও বিদ্রূপ করতেন। নাম ধরে অপমান, বাবার পেশা নিয়ে কটূক্তি, অঞ্চলভেদে শিক্ষার্থীদের হেয় করা—এসব ছিল তার বক্তব্যের নিয়মিত অংশ।
এক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রায়ই তাদের ‘টোকাই’, ‘বি-ক্লাস’ ইত্যাদি শব্দে অপমান করতেন এবং পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করতেন।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নয়, বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেটিকেই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি ড. মুনসি মঞ্জুরুল হক জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক সভা ডাকা হয়। সভায় রফিকুল ইসলাম তার আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

বিভাগীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভবিষ্যতে যদি তিনি পুনরায় এ ধরনের আচরণ করেন, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান।

 

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের মানববন্ধন: মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারী নীতিমালা প্রণয়নের দাবি

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের মানববন্ধন: ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারী নীতিমালা প্রণয়নের দাবি

নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশ বাতিল এবং নতুনভাবে কমিশন গঠনের দাবিতে গত ৮মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’। বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধকে ভিত্তি করে ইসলামিক স্কলারদের নেতৃত্বে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন নারী সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, নারী সংগঠন, সুশীল সমাজ, শিক্ষক-ছাত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
সংগঠনের সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা খানম অভিযোগ করেন, “নারী সংস্কার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান কোনো মুসলিম নারী স্কলারকে অন্তর্ভুক্ত না করে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। এ সুপারিশ নারী সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে।” তিনি বলেন, “কমিশনের সদস্যদের উচিত নিজেদের মা, বোন ও কন্যাদের যৌন শ্রমিক হিসেবে কল্পনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, তাহলে তারা বুঝতে পারবেন আসল মর্যাদা কোথায়।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহীন আরা আনোয়ারী বলেন, যৌনকর্মীদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দিলে গোটা সমাজ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। গনোরিয়া, সিফিলিস, এইডসসহ নানা রোগ বাড়বে এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি হবে।
“যৌনকর্ম নয় তো পেশা, সে তো সমাজ নষ্টের নেশা”— এই স্লোগান ধারণ করে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি সাহেল মোস্তারী, তাহমিনা আক্তার সুরমা, নুসরাত জাহান লিজা, হেলেনা আক্তার লাকি ও নাদিয়া বিনতে মাহতাব।

সভাপতির বক্তব্যে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, “এই কমিশনের সুপারিশ নারীর বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা। অথচ ইসলাম নারী-পুরুষকে পরিপূরক হিসেবে চিহ্নিত করে সম্মান, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারী নীতিমালা না হলে তা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা বাড়াবে।”

 

অস্বাভাবিক স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম

 

বর্তমানে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো, যেমন ‘সেনোরা’, যেখানে এক প্যাকেটের দাম ১২০ টাকা।
এত চড়াদামে ন্যাপকিন কিনে ব্যবহার করা শুধুমাত্র একজন মেয়ের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য।

স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব স্বীকৃত, তবে কেন আমাদের জন্য এটি বিলাসিতা হয়ে দাঁড়াতে হবে? কেন একটি সাধারণ, স্বাস্থ্যকর পণ্য কেনার জন্য আমাদের এত টাকা খরচ করতে হবে?

যে সমস্যাটি আমরা মুখোমুখি হচ্ছি: এই দাম সাধারণ মানুষের জন্য নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের পরিবারের আয় সীমিত, তারা কীভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনবে? কিছু পরিবারের সদস্যরা হয়তো কাপড় বা তুলা ব্যবহার করছে, যেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। কিন্তু, এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে এটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে।

প্রতিকার:
১. দামের নিয়ন্ত্রণ এবং সাশ্রয়ী পণ্য: সরকারকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর ভ্যাট কমিয়ে, দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সাশ্রয়ী এবং মানসম্পন্ন পণ্য সহজলভ্য করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই এটি কিনতে পারে।

স্বাস্থ্যকর বিকল্পের প্রচলন: কোম্পানিগুলির উচিত স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী বিকল্প বাজারে নিয়ে আসা। কাপড় বা তুলা ব্যবহার করার পরিবর্তে, সাশ্রয়ী দামে স্যানিটারি প্যাড পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত।

উৎপাদন খরচ কমানো: কোম্পানিগুলি তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে, বিক্রির দামে সমন্বয় আনতে পারে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খরচ কমানো সম্ভব।

সরকারি নীতি এবং সহায়তা: সরকারের উচিত, নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি কার্যকর নীতি গ্রহণ করা, যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের সহজলভ্যতা এবং দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যায়।

স্যানিটারি ন্যাপকিন শুধুমাত্র একটি পণ্য বা খরচের বিষয় নয়, আমাদের সবার স্বাস্থ্য এবং জীবন সুরক্ষার প্রশ্নও বটে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমানো, তার মান নিশ্চিত করা, এবং সহজলভ্যতা নারীর মৌলিক অধিকার।
আমরা সকলেই দাবি জানাই, যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন আমাদের সবার জন্য সাশ্রয়ী, সহজলভ্য, এবং নিরাপদ হয়। স্বাস্থ্য বা জীবনের নিরাপত্তা কখনোই একটি শ্রেণীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।

#স্যানিটারি_ন্যাপকিন #স্বাস্থ্য_অধিকার #সাশ্রয়ী_মূল্য #জনসচেতনতা #স্বাস্থ্য_নিরাপত্তা #আর্থিক_সাম্য
[8:25 pm, 26/04/2025] +880 1994-004543: ভিক্টোরিয়ান যুগের ফ্যাশন

ভিক্টোরিয়ান যুগ (১৮৩৭-১৯০১) ছিল একটি বিশেষ সময়, যেখানে ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলিতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। তবে এর পাশাপাশি এক অনন্য এবং কঠিন ফ্যাশন যুগও তৈরি হয়েছিল, যেখানে নারীদের জন্য সৌন্দর্য অর্জন করতে গেলে শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এই যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফ্যাশন ছিল কর্সেট, যা নারীদের শারীরিক গঠনকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে আনার জন্য ব্যবহৃত হত।

ভিক্টোরিয়ান সমাজে নারীদের সৌন্দর্যের মাপকাঠি ছিল একটি সুনির্দিষ্ট শরীরের গঠন, যা আওয়ারগ্লাস ফিগার নামে পরিচিত ছিল। এই শারীরিক আকৃতি অর্জন করতে কর্সেট ছিল এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে কর্সেটের ব্যবহারের ফলে নারীদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।

অতিরিক্ত টাইট কর্সেট পরার কারণে নারীদের পাঁজরের হাড় বিকৃত হয়ে যেত, যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিত। কর্সেটের চাপে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থানচ্যুতি ঘটত, যা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা এবং অসুস্থতা তৈরি করত। চিকিৎসা প্রতিবেদনগুলিতে দেখা গেছে, কর্সেট পরা নারীদের মধ্যে বেহুঁশ হয়ে পড়া এবং শ্বাসকষ্ট ছিল অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা। এমনকি এক্স-রে এবং সংরক্ষিত কঙ্কালগুলি থেকেও প্রমাণ মিলেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে কর্সেট পরলে পাঁজরের হাড় স্থায়ীভাবে বিকৃত হয়ে যেত।

এছাড়া, ভিক্টোরিয়ান যুগের ফ্যাশনে হুপ স্কার্ট ও ক্রিনোলিনের ব্যবহারও ছিল খুব জনপ্রিয়। এই পোশাকগুলি সাধারণত বৃহৎ স্কার্ট তৈরি করত, যা নারীদের দেহকে বিশাল আকারে প্রদর্শন করত। কিন্তু এসব পোশাকও ছিল মারাত্মক বিপজ্জনক। এগুলি যেমন চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি করত, তেমনি এগুলির আগুন ধরারও সম্ভাবনা ছিল, যা অনেক নারীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।

সামাজিক চাপের কারণে নারীরা তাদের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে এই ধরনের ফ্যাশন এ বাধ্য হতেন। তবে, ১৯শ শতকের শেষ দিকে কিছু ডাক্তার, নারীবান্ধব লেখক ও ফ্যাশন ডিজাইনাররা নারীদের জন্য আরামদায়ক পোশাকের প্রচলন শুরু করেন। এভাবেই ২০শ শতকের শুরুতে কর্সেটের জনপ্রিয়তা কমে আসে এবং আধুনিক ফ্যাশনের বিকাশ ঘটে।

ভিক্টোরিয়ান যুগের ফ্যাশন নারীদের জন্য এক চরম শারীরিক কষ্টের যুগ ছিল। কর্সেট ও ক্রিনোলিনের মতো পোশাক নারীদের শরীরের স্বাভাবিক গঠন ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক ছিল, কিন্তু সমাজের চাপে তারা এসব পোশাক পরতে বাধ্য হতেন। আজকের দিনে, সৌন্দর্য এবং ফ্যাশনের মধ্যে আরাম এবং স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা আধুনিক সমাজের অগ্রগতির লক্ষণ।

 

অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন সুনিতা উইলিয়ামস ও তার টীম

দীর্ঘ ১০ মাস মহাকাশে আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে পরিকল্পিত সময়ের আগেই তাঁদের মহাকাশ স্টেশনেই থাকতে হয়েছে। অবশেষে নাসা ও স্পেসএক্সের যৌথ উদ্যোগে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

২০২৩ সালের জুনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান সুনিতা ও বুচ। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল কিছু গবেষণা ও পরীক্ষা চালিয়ে দ্রুত ফিরে আসা। কিন্তু স্টারলাইনার মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয়, আর দুই নভোচারী সেখানেই আটকে পড়েন। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা শুরু থেকেই চেষ্টা করলেও বিষয়টি রাজনৈতিক রূপ নেয়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের পর।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও এই বিষয়ে সরব হন এবং দাবি করেন, আগের বাইডেন প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এরপর নাসা স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানের মাধ্যমে তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। গত শুক্রবার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ক্রু ড্রাগন সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং ২৯ ঘণ্টা পর এটি মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে। নতুন করে চার নভোচারী সেখানে যোগ দেন, যাঁরা আগামী ছয় মাস মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নাসার অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের তাকুয়া অনিশি ও রাশিয়ার কিরিল পেসকভ।

এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু সুনিতা ও বুচই নয়, তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন নভোচারী পৃথিবীতে ফিরছেন—নাসার নিক হেগ এবং রাশিয়ার আলেকসান্দর গরবুনোভ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই দুজন মহাকাশ স্টেশনে এসেছিলেন এবং তাঁদের ফেরার জন্য আগে থেকেই স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্রু ক্যাপসুলে দুটি ফাঁকা আসন রাখা হয়েছিল।

সোমবার থেকে সুনিতাদের ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়। মহাকাশযানের দরজা বন্ধ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদা হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত সময়েই তাঁরা পৃথিবীতে ফিরবেন। তবে আবহাওয়া, মহাকাশযানের অবস্থা এবং সমুদ্রের পরিস্থিতি তাঁদের ফেরার পথে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীদের বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘদিন মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে, যা পুনরায় পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সুনিতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহকর্মীরা ঘরে ফিরছেন। সারা বিশ্ব তাঁদের এই সফল প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

এপ্রিল মাসে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬২টি ঘটনা

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬২টি ঘটনা ঘটেছে, যা মার্চ মাসের তুলনায় ৬৬টি কম। তবে সহিংসতা পুরোপুরি থামেনি—ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, হত্যা ও আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনাগুলো এখনও সমাজে উদ্বেগের বিষয় হয়ে রয়ে গেছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের মাসিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানায়, এপ্রিল মাসে ৯৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২ জন শিশু, ৪৩ জন কিশোরী এবং ৮ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ২৫, যার শিকার হয়েছেন ৪ শিশু, ৮ কিশোরী ও ৯ নারী। এছাড়াও ৪ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ৩৩টি, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৬ জন, আর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪৭টি। এসিড হামলায় আহত হয়েছেন একজন নারী।

আত্মহত্যার দিক থেকেও মাসটি ছিল হতাশাজনক—১২ কিশোরী ও ২৩ নারীসহ ৩৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের ঘটনা ১১টি (৪ শিশু ও ৭ কিশোরী), আর নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন (২ শিশু, ২ কিশোরী ও ১ নারী)। অস্বাভাবিক মৃত্যু ও হত্যা মিলিয়ে নিহত হয়েছেন ৬৯ জন নারী, কিশোরী ও শিশু; যাদের মধ্যে ১৮ জন শিশু ও কিশোরী।

এমএসএফের প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, অনেক ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা স্থানীয় সালিশে আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে, যা আইনের দৃষ্টিতে বেআইনি। এই ধরনের সালিশি বিচার বিচারব্যবস্থার প্রতি চরম অবহেলার ইঙ্গিত দেয়।

আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

 

শিশুদের শৈশব হোক নিরাপদ, গৃহশ্রমিকের শ্রম হোক মর্যাদাপূর্ণ

(শ্রম সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ)বাংলাদেশের শ্রমজগতে এক নতুন আলো ফেলেছে শ্রম সংস্কার কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন। শিশুদের নিরাপদ শৈশব নিশ্চিত করা এবং গৃহ ও সৌন্দর্য সেবাখাতে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি দিতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।

কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে গৃহকর্মে নিয়োজিত ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫ অনুযায়ী এমন নিয়োগ ইতোমধ্যেই অবৈধ হলেও, আইন প্রয়োগের দুর্বলতায় তা নিরবিচারে চলমান।
কমিশন মনে করে, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫’-এর যথাযথ প্রয়োগ না হলে শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত হবে না।

গৃহশ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, নিয়োগের ধরন যাই হোক—আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন কিংবা স্থায়ী—সবার জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, ন্যায্য বেতন, ছুটি, নিরাপদ বাসস্থান ও খাবারের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এ জন্য বাধ্যতামূলক কর্মচুক্তি চালুর পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।

এছাড়া অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করাও এই প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ দিক। কমিশন বলেছে, গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।

শ্রম সংস্কার কমিশনের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যসেবাখাতও শ্রমের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বিউটি পারলারে কর্মরত নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, ডে কেয়ার সুবিধা এবং ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতে পৃথক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক মর্যাদা রক্ষার বিষয়েও জোর দিয়েছে কমিশন।

পারলার কর্মীদের নিরাপত্তা বিশেষ করে রাতের সময় বাড়ি ফেরা, কর্মস্থলে হয়রানি রোধ, ও কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিও উঠে এসেছে সুপারিশে। বলা হয়েছে, এই শ্রমিকরা শুধুই সেবিকা নন তাঁরা অর্থনীতির নীরব যোদ্ধা, যাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধ জরুরি।

শ্রম সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদন শুধু আইনি সংশোধনের আহ্বান নয়—এ এক নৈতিক প্রত্যয়: যে শিশুদের খেলাধুলার সময়, তারা যেন নিপীড়নের শিকার না হয়; যে নারীরা অন্যের ঘর সাজায়, তাঁরাও যেন নিজের জীবনে সম্মান ও নিরাপত্তা পান।

তথ্যসুত্র -প্রথম আলো

 

ডা. সায়েবা আক্তার: মাতৃস্বাস্থ্যের নীরব পথিকৃৎ

 

ডা. সায়েবা আক্তার একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তার উদ্ভাবন ‘সায়েবা’স মেথড’ বিশ্বের মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, তিনি ব্যক্তি হিসেবে নিজে থেকে গেলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।

১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা ডা. সায়েবা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন বেশ মেধাবী। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি গবেষণা ও চিকিৎসা সেবায় অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন।

উদ্ভাবন: ‘সায়েবা’স মেথড’
২০০০ সালে, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ (Postpartum Hemorrhage – PPH) প্রতিরোধে তিনি ‘ইউটেরিন বেলুন ট্যাম্পোনেড’ (UBT) নামক একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা ‘সায়েবা’স মেথড’ নামে পরিচিত। উন্নত দেশে এই সমস্যার চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও, ডা. সায়েবা স্বল্পমূল্যের এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা প্লাস্টিকের ক্যাথেটারের মাধ্যমে জরায়ুর ভেতরে বেলুন তৈরি করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। তার উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রচুর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং হাজারো মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।

ডা.সায়েবা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গাইনিকোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সুবিধাবঞ্চিত নারীদের চিকিৎসা দিতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছেন।
এছাড়াও, তিনি সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষায় সহায়তা করতে ঢাকা ও গাইবান্ধায় দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তার উদ্যোগে অনেক দরিদ্র মেয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়া, তিনি ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ অর্জন করেন।
তবে, তার কাজ আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল স্বীকৃতি পেলেও, ব্যক্তি হিসেবে তিনি সেই মর্যাদার আসনে আসতে পারেননি,থেকে গেলেন জনমনের আড়ালে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউনিসেফসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা তার উদ্ভাবিত পদ্ধতির প্রশংসা করলেও,ব্যক্তি হিসেবে কাজের জন্য পাননি বিশেষ কোন বিশ্বস্বীকৃতি।
প্রায়শই দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কাজ বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেলেও, তারা ব্যক্তিগতভাবে উপেক্ষিত থাকেন। তার উদ্ভাবন নোবেল পুরস্কার কিংবা র‍্যামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারের যোগ্য হলেও, তিনি এখনো সে পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাননি।

ডা. সায়েবা আক্তার কেবল একজন চিকিৎসক নন, তিনি একজন পথিকৃৎ, মানবতার সেবক। তার উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসুক বা না আসুক, তার কাজের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে বিশ্ব তাকে আরও বড় পরিসরে সম্মানিত করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

 

রাবিতে ছাত্রীসংস্থার সহায়তা বুথ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘সি’ ইউনিটের প্রথম ধাপের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। এ ব্যস্ত সময়ে ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা একটি সহায়তা বুথ স্থাপন করেন। এখানে স্যালাইন, পানীয় জল সরবরাহের পাশাপাশি যেসব ছাত্রী আবাসন সমস্যায় পড়েছেন, তাদের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সংস্থার এক সদস্য জানান, তাদের কার্যক্রম তিনটি পর্যায়ে পরিচালিত হয়—দাওয়াত, সংগঠন ও প্রশিক্ষণ এবং কল্যাণ ও সমস্যা সমাধান। ভর্তি পরীক্ষার সময় অসচ্ছল ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বছরের অন্যান্য সময়েও শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা মানবিক উদ্যোগে অংশ নেয় সংস্থাটি।

আরেক সদস্য জানান, ইসলামী জীবনবোধে আলোকিত আদর্শ নারী গড়ে তোলাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মূল লক্ষ্য। ১৯৭৮ সালের ১৫ জুলাই ঢাকায় ১৮ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮০ সালে এবং আজও তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থী আফরোজ মনি বলেন, “এ ধরনের সহায়তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অনেক সময় ছাত্রীদের পক্ষে সরাসরি সহায়তা চাইতে দ্বিধা হয়। কিন্তু এখানে আপুরা পাশে থাকায় আমরা সাহস পাচ্ছি। রাতে থাকার ব্যবস্থাও করেছেন তাঁরা, আমাদের প্রতি তাঁদের যত্নশীল আচরণ অনেক স্বস্তি দিয়েছে।”

 

নারী ও পুরুষের মাঝে মর্যাদায় সমতা, কিন্তু দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্রে ন্যায্যতা — এটাই ইসলামের নীতি

আঁখি ফেরদৌসী: একটি দেশের জনগণের জন্য যে কোন ধরনের নীতিমালা প্রণয়নে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে ? যে বিষয়টি প্রাধান্য পাবে তাহলো জনগণের মৌলিক অধিকার ও কল্যাণ।সে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট,ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সম্মান,সংবিধান ও আইনি কাঠামো যাতে করে সেই মূলনীতির মাধ্যমে যাদের জন‍্য মূলনীতি প্রনয়ন করা হয়েছে তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।

এবার আসা যাক আলোচিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত নারী নীতিমালার বিষয়ে-
একদম শুরুতেই এই নীতিমালার লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে-
‘‍সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম বিলুপ্তি এবং নারী পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’
অর্থাৎ তাদের মূল ফোকাস নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমতা ।
সংক্ষেপে বললে:
‘সমতা’ মানে সবাইকে সব দিক থেকে একরকম করে দেওয়া।
‘ন্যায্যতা’ মানে যার যা প্রাপ্য, উপযোগী এবং যথার্থ — সেই অনুযায়ী অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়া।
মানুষ হিসেবে মানবিক অধিকার আর সামাজিক বা নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামও সমতার কথা বলে। যেমন-
শুরা আহযাবের ৩৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে-
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।’‍

সূরা নাহলের ৯৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।’

সূরা তওবা ৭১ নং এ বলা হয়েছে-

আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু [১], তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্‌ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

সূরা নিসার ১২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

আর যে ব্যক্তি সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, যদি সে মুমিন হয়ে থাকে, তবে এরূপ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না।

আরো বলা হয়েছে-

“পুরুষদের জন্য যা তারা উপার্জন করে তার প্রতিফল, আর নারীদের জন্যও যা তারা উপার্জন করে তার প্রতিফল।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:৩২)

এই আয়াত গুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে,মানুষ হিসেবে পুরুষ ও নারীর আল্লাহর কাছে সমান। তারা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হবেন তাদের কাজের ভিত্তিতে, লিঙ্গের ভিত্তিতে নয়।
তাই ইসলামে যেমন সমতা (equality) গুরুত্ব রয়েছে আবার ন্যায্যতা (equity/justice)-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মানে, ইসলামে নারী-পুরুষকে একই রকম সব দায়িত্ব বা অধিকার দেয়নি, বরং তাদের স্বভাব, যোগ্যতা এবং ভূমিকার উপর ভিত্তি করে ন্যায্য অধিকার ও দায়িত্ব বণ্টন করেছে।
যেমন-পুরুষদের উপর পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব ও নারীদের রক্ষা ও সম্মান দেওয়া দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা সমতার বদলে ন্যায্যতার উদাহরণ। কারণ নারী ও পুরুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য এক নয়, তাই তাদের দায়িত্বও স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“নারী শ্রমিকের শ্রম কখনো বিনষ্ট করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।”
(সূরা আলে ইমরান, ৩:১৯৫)

আরো বলেছেন-
“পুরুষরা নারীদের উপর দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরের বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন এবং তারা তাদের অর্থ দিয়ে তাদের রক্ষা করে।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:৩৪)
এখানে বোঝানো হয়েছে, পুরুষের উপর পরিবারের নেতৃত্ব ও দায়িত্ব আর্থিক ও শারীরিকভাবে বেশি। নারীর দায়িত্ব প্রধানত পরিবারকে ভালোভাবে রক্ষা করা ও সহযোগিতা করা। এখানে সমতা নয়, বরং ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

ইসলামে ন্যায্যতার নীতি বাস্তব জীবনে কিভাবে প্রয়োগ হয়েছে তা দেখা যাক-

১. খাদিজা (রা.) মহানবী (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী, নিজে একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন।
তিনি ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিকভাবে নিজেকে এবং নবীজি (সা.)-কেও সহযোগিতা করেছেন।
কিন্তু তাঁর উপর পরিবার চালানোর পুরুষের দায়িত্ব চাপানো হয়নি। বরং স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছেন।
তার মানে নারী চাইলে ব্যবসা করতে পারে, কিন্তু পরিবারের ভরণপোষণের মূল দায়িত্ব পুরুষের — এটি ইসলামের ন্যায্যতার নীতি।

২.ফাতিমা (রা.) ঘরের কাজ করতেন, সন্তানদের দেখাশোনা করতেন, এবং ধর্মীয় অনুশাসনে জীবন পরিচালনা করতেন।
স্বামী হযরত আলী (রা.) ঘরের বাইরের কাজ করতেন এবং আর্থিক দায়িত্ব বহন করতেন।
যখন ফাতিমা (রা.) গৃহকর্মে কষ্ট পেতেন, তখন নবীজি (সা.) তাঁকে ধৈর্য ধারণের এবং তাসবীহ তাহলীলের শিক্ষা দিয়েছেন।
অর্থাৎ নারীর আসল দায়িত্ব পরিবার পরিচালনা করা — কিন্তু এটি দাসত্ব নয়, বরং মর্যাদার কাজ তা তুলে ধরা হয়েছে।

৩. উম্মে সালামা (রা.) হুদাইবিয়ার সন্ধি চলাকালে নবীজি (সা.) মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, তখন উম্মে সালামা (রা.) গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেটা নবীজি (সা.) মেনে নেন।
তাঁর বুদ্ধিমত্তা পুরো মুসলিম উম্মাহকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়েছিল। এ ঘটনা থেকে এটাই বুঝা যায় ইসলাম নারীর বুদ্ধিমত্তাকে সম্মান করে এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক পরামর্শে নারীর অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দেয়।
৪. হযরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.) — উহুদের যুদ্ধে তিনি নবীজি (সা.)-কে রক্ষা করতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন।
যদিও নারীদের উপর যুদ্ধ ফরজ ছিল না, তবুও প্রয়োজনে ইসলাম নারীদের সম্মানজনক ভূমিকা রাখতে অনুমতি দিয়েছে।

ইসলাম ন্যায্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব ভাগ করেছে, তবে চরম প্রয়োজনে নারীও সম্মানজনক অবস্থানে থাকতে পারে বলেও স্বীকৃতি দিয়েছে।ন‍্যায‍্যতার ভিত্তিতে দায়িত্বের বন্টন মানে এই নয় যে ইসলামে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বরং তার যোগ্যতা, প্রয়োজন ও স্বভাবের ভিত্তিতে ন্যায্য ও মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে বাস্তবে নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক (complementary), প্রতিদ্বন্দ্বী (competitive) নয়।