অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন যে তাদের বাচ্চা মোবাইল বা টিভি ছাড়া খেতে চায় না। তবে বাস্তবতা হলো, বাচ্চা নিজে থেকে মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না – এই ধারণা আমরা প্যারেন্টরাই তৈরি করেছি। শিশুরা যা শেখে, সেটি তাদের আশপাশের পরিবেশ ও বড়দের আচরণ দেখে শেখে। আমরা যদি প্রথম থেকেই মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার না করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে দিই, তাহলে শিশুরাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে খেতে শিখবে।
মোবাইলের ওপর নির্ভরতা কোথা থেকে এলো?
১. কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা ও সহজ সমাধানের সন্ধান-
বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারেই মা-বাবা কর্মজীবী। ফলে শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব নানী, দাদী বা গৃহকর্মীদের ওপর পড়ে। তাদের ধৈর্য্য, শারীরিক সামর্থ্য বা সময় সীমিত থাকে। বাচ্চার খাবার খাওয়ানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে চেষ্টার পরিবর্তে স্ক্রিনটাইম সহজ সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। এতে বাচ্চা চুপচাপ ভিডিও দেখতে দেখতে খেয়ে ফেলে, আর কেয়ারগিভারের জন্যও কাজ সহজ হয়ে যায়।
২. পরিচ্ছন্নতার প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব
বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খায়, যা তাদের শেখারই একটি অংশ। কিন্তু অনেক প্যারেন্ট চান না যে ঘর নোংরা হোক বা বাচ্চা হাতে-মুখে মাখিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুক। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার সুযোগ না দিয়ে মুখে খাবার গুঁজে দেওয়ার প্রবণতা গড়ে তোলেন। এতে শিশুর নিজে খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়, এবং মোবাইল সামনে দিলে সে যান্ত্রিকভাবে খেয়ে নেয়।
শিশু কীভাবে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া শিখবে?
১. ধৈর্য ধরুন, শিশু নিজে খেতে শিখবে
শিশুকে খেতে শেখানোর জন্য সময় দিতে হবে। নিচে পাটি বিছিয়ে বা চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে তার সামনে খাবার দিন। সে খাবার ধরবে, মুখে তুলবে, ফেলবে, নোংরা করবে—এটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন এভাবে চেষ্টা করলে, দেখবেন ২ বছরের মধ্যেই সে নিজে খেতে শিখে গেছে।
২. ক্ষুধা লাগার সুযোগ দিন
যখন শিশুর সত্যিকারের ক্ষুধা লাগবে, তখন সে স্বাভাবিকভাবেই খেতে চাইবে। মোবাইলের কারণে মনোযোগ নষ্ট হলে শিশুর ক্ষুধাবোধও কমে যায়। তাই খাবারের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, এবং তার আগে বা পরে অযথা স্ন্যাকস খেতে দেবেন না।
৩. শিশুর ওজন ঠিক থাকলে খাওয়ার পরিমাণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না
অনেক অভিভাবক মনে করেন বাচ্চা কম খাচ্ছে, তাই তারা জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যদি শিশুর ওজন স্বাভাবিক থাকে এবং সে সুস্থ থাকে, তবে কম-বেশি খাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
৪. মোবাইল ছাড়াই মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর উপায় খুঁজুন
যদি কখনো শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানো দরকার হয়, তাহলে ভিডিও ছাড়া অন্যান্য উপায় ব্যবহার করুন। যেমন—
তার সামনে ছোট গল্প বলুন,খাওয়ার সময় রঙিন প্লেট-বাটি ব্যবহার করুন, তাকে খেলনা বা বই দিন, যাতে সে নিজে ব্যস্ত থাকে।
মুড়ি বা অন্য শুকনো খাবার দিয়ে গুণতে বা সাজাতে দিন।
সচেতন হোন, শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন
শিশুর স্ক্রিন অ্যাডিকশন মূলত অভিভাবকদের তৈরি করা সমস্যা। শুরু থেকেই যদি নিয়ম মেনে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়, তবে পরে এটি নিয়ে সমস্যা হবে না।
তাই আজ থেকে “বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খায় না” বলা বন্ধ করুন, এবং ধৈর্য ধরে শিশুকে স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।