banner

মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: April 8, 2025

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যই এবারের মূল বার্তা

 

৭ এপ্রিল, রোববার—বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য— ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’—এই স্লোগানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যের উপর।

বাংলাদেশে এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য খাতে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, গণ-আন্দোলন পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব এবং শিশুদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তিনি উল্লেখ করেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হারের বর্তমান চিত্র এখনো উদ্বেগজনক, যা আমাদের উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। এজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৫ সালে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)-র আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

এদিকে, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে দেশে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের এই দিনে(৭এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকেই দিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য ইস্যুকে সামনে রেখে দিবসটির আয়োজন করা হয়, যার উদ্দেশ্য বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

 

বিশ্ব থেমে গেল গাজার জন্য

 

৭ এপ্রিল ২০২৫, বিশ্ব সাক্ষী হলো এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচির — ‘The World Stops for Gaza’। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে সারাবিশ্বে বিভিন্ন স্তরে পালিত হচ্ছে এই কর্মসূচি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত—সব জায়গাতেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একটাই বার্তা: “গাজা বাঁচাও, মানবতা বাঁচাও।”
শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট, প্রতিবাদ, সমাবেশ এবং কার্যক্রম বন্ধ রেখে তারা জানিয়ে দিয়েছে—“গাজা নিঃসঙ্গ নয়”।

বাংলাদেশেও এই আন্দোলনের স্পষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ঢাকার রাজপথ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সামাজিক মাধ্যমে আজকের দিনজুড়ে গাজার প্রতি সংহতির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ধর্মঘট পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের এ মানবিক অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোট (PUSAB) উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আয়োজন করে। এছাড়াও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, চুয়েটসহ একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও নীরব প্রতিবাদে অংশ নেয়।

এছাড়া;বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ ঢাকায় ‘গাজা বিষয়ক সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ’ কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনটি গাজায় চলমান গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায়।
ইসলামী ছাত্রশিবির ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানায়। শিবিরের বিভিন্ন ইউনিট আজ র‍্যালি, লিফলেট বিতরণ ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আগামীকাল ৮ এপ্রিল দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
ফিলিস্তিনে আজ পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বহু দেশে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণগ্রেফতার এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। গাজার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।

‘The World Stops for Gaza’ কর্মসূচি যেন এক নতুন প্রতিবাদের ভাষা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসী গাজার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে, শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জবাবদিহির দাবি তুলেছে।

মানবতার জন্য, শান্তির জন্য, এবং নিষ্পেষিত মানুষদের জন্য—আজ থেমে গেছে বিশ্ব। এবং এই থেমে যাওয়া যেন হয়ে উঠেছে আরও শক্তভাবে এগিয়ে চলার প্রেরণা।