banner

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: April 2025

 

শুধু পানিতে চাষযোগ্য ৬টি উপকারী ভেষজ গাছ

 

নিত্যদিনের রান্নাঘর কিংবা বারান্দার ছোট্ট এক কোণেও সবুজের ছোঁয়া আনা সম্ভব, শুধুমাত্র কিছু পানিভিত্তিক চাষযোগ্য গাছের মাধ্যমে। এগুলো যেমন সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি স্বাস্থ্য ও স্বাদের জন্য দারুণ উপকারী। নিচে এমন ৬টি গাছের পরিচয় দেওয়া হলো—

১. পুদিনা (Mint)
তাজা সুবাসে ভরপুর পুদিনা গ্রীষ্মের হালকা রোদে সহজেই টিকে থাকে। কাণ্ড কেটে পানিতে রাখলেই দ্রুত শিকড় গজায়। পানীয়, সালাদ কিংবা রান্নায় ব্যবহার হয় বহুবিধ।

২. পার্সলে (Parsley)
রান্নার উপকরণে সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর পার্সলে পানিতে রাখার ২–৩ সপ্তাহের মধ্যেই শিকড় বের করে। এটি সালাদ, স্যুপ ও গার্নিশিংয়ে অনন্য।

৩. রোজমেরি (Rosemary)
মৃদু ঘ্রাণে মন ভোলানো রোজমেরি শুধু রান্না নয়, ঘরের বাতাসেও আনে প্রশান্তি। ডাল পানিতে রেখে আলোয় রাখলেই ধীরে ধীরে শিকড় জন্মায়।

৪. ওরেগানো (Oregano)
ইতালিয়ান রান্নার অঙ্গ হিসেবে পরিচিত এই হার্বটি সহজেই পানিতে শিকড় ছাড়ে। এর সুগন্ধ ও স্বাদ খাবারে নিয়ে আসে এক আলাদা মাত্রা।

৫. গ্রিন অনিয়ন / পেঁয়াজ পাতা (Green Onion)
পেঁয়াজের গোড়া কেটে পানি ভর্তি পাত্রে রাখলে খুব দ্রুতই গজিয়ে ওঠে নতুন পাতা। প্রতিদিন রান্নায় কিংবা সালাদে ব্যবহার উপযোগী।

৬. থাইম (Thyme)
সুগন্ধি এই গাছটি পানিতে রাখলেই অল্পদিনে নতুন শিকড় গজায়। রোস্টেড খাবার কিংবা হালকা চায়ের সঙ্গে এর স্বাদ হয়ে ওঠে অনন্য।

এইসব ছোট ছোট সবুজ গাছ কেবল শোভাই বাড়ায় না, বরং অল্প যত্নে আমাদের জীবনে আনে স্বাদ, সুগন্ধ ও প্রশান্তির ছোঁয়া।

 

স্বাস্থ্য টিপস:ননস্টিক প্যানে চিরস্থায়ী বিষ!

 

আমরা অনেকেই রান্নার জন্য ননস্টিক প্যান ব্যবহার করি, কারণ এতে তেল কম লাগে এবং পরিষ্কার করাও সহজ। কিন্তু জানেন কি, এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকি?
ননস্টিক প্যানে যে টেফলনের প্রলেপ থাকে, তা প্লাস্টিক জাতীয় এক ধরনের পলিমার, যাকে বলা হয় ‘ফরেভার কেমিক্যাল’। এই রাসায়নিক সহজে ভাঙে না, পরিবেশেও বিলীন হয় না, এমনকি শরীরেও থেকে যায় দীর্ঘদিন। একে ‘চিরস্থায়ী বিষ’ বলা হয় এ কারণেই।

গবেষণায় দেখা গেছে, ননস্টিক প্যানে সামান্য একটি স্ক্র্যাচ থেকেও প্রতি রান্নায় প্রায় ৯ হাজার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাইক্রো-প্লাস্টিক কণা খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। আর যদি প্যানটির প্রলেপ উঠে যায়, তাহলে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২০ লাখ পর্যন্ত!
এই ক্ষুদ্র কণাগুলো আমাদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে এটি নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে।
ভয়াবহ ব্যাপার হলো—এক জরিপ অনুযায়ী, ৯৯% আমেরিকানের রক্তেই এই রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তাই যতই সুবিধাজনক হোক, পুরনো বা স্ক্র্যাচ পড়া ননস্টিক প্যান এবং প্লাস্টিক খুন্তি ব্যবহার থেকে এখনই বিরত থাকুন।
সুস্থ থাকতে সাবধান হোন, সচেতন হোন।

উৎস: Science of the Total Environment

 

স্বপ্ন বুনে চলেছেন ইফ্ফাত আলম জেসিকা

একজন নারীর স্বপ্ন কখনো শুধু তাঁর নিজের থাকে না—তা হয়ে ওঠে অনেকের আশ্রয়, আশাবাদ এবং এগিয়ে চলার শক্তি। ইফ্ফাত আলম জেসিকা তেমনই এক স্বপ্নবাজ নারীর নাম, যিনি নিজেকে ছাপিয়ে অন্যদেরও সামনে নিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছেন।

শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনের পাঠ তিনি পেয়েছেন ছোটবেলা থেকেই। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাবার বদৌলতে বেড়ে ওঠা ক্যান্টনমেন্টের নিপাট পরিবেশে। পরিবারে অভ্যাস ছিল সাদামাটা পোশাকে ঈদের আনন্দ খোঁজার, আর সেখানেই গজ কাপড় দিয়ে তৈরি সাধারণ জামা নিজের হাতে সাজিয়ে ভিন্নমাত্রায় তুলে ধরতেন ছোট্ট জেসিকা। তখনই যেন বোনা হতে থাকে সৃষ্টিশীল এক ভবিষ্যতের বীজ।

সাধারণ মধ্যবিত্ত চিন্তার রেলগাড়িতে চড়ে তিনিও একসময় ছোটখাটো একটি চাকরিতে ঢুকে পড়েন। কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকত সুই-সুতার জগতে। নিজ হাতে বানানো কুশন কভার, ব্লাউজ কিংবা কাপড়ের কারুকাজ—এসবই ছিল তাঁর প্রাণ। একদিন সহকর্মীদের উৎসাহে নিজের কাজের কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলেন, আর সেখান থেকেই খুলে গেল এক নতুন দরজা।

প্রথম অর্ডার, প্রথম আয়, প্রথম বিনিয়োগ—সবকিছুর শুরু যেন এক রঙিন গল্পের মতো। নিজের হাতে তৈরি করা ডিজাইন থেকে জন্ম নেয় ‘সর্বজয়া’ নামের একটি উদ্যোগ। এটি শুধুই একটি ফেসবুক পেজ নয়, বরং নারীদের জন্য আত্মনির্ভরতার এক চলমান কর্মক্ষেত্র। এখন এই উদ্যোগে কাজ করছেন প্রায় ৩০ জনের মতো নারী। কেউ ওয়ার্কশপে, কেউ ঘরে বসেই।

তবে এ পথটা সহজ ছিল না। পেছনে টানতে চেয়েছে সমাজের পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি, অনুশাসনের চোখরাঙানি আর “নারীর কাজ নয়” ধরনের তির্যক মন্তব্য। কিন্তু জেসিকা হার মানেননি। মা-বাবা, ভাই এবং স্বামীর সমর্থন ছিল তাঁর পাশে। আর ছিল নিজের প্রতি বিশ্বাস—যা তাঁকে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে তুলেছে।

আজ ‘সর্বজয়া’ শুধু পণ্য বিক্রির মাধ্যন নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার এক পাঠশালা। সৃজনশীল নকশায় তৈরি ব্লাউজ, থ্রি-পিস, শাড়ি, কুশন কভার—সবকিছুতেই রয়েছে জেসিকার ছাপ। এই উদ্যোগ এখন প্রতি মাসে লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করছে।

জেসিকার চোখে ভবিষ্যৎ স্পষ্ট—তিনি চান সর্বজয়া একদিন হয়ে উঠুক একটি স্বীকৃত ব্র্যান্ড, যা স্থানীয় গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে। আর সেই ব্র্যান্ডের প্রতিটি সেলাইবাঁধা থাকবে একেকটি নারীর গল্প, সংগ্রাম আর বিজয়ের চিহ্ন।

 

নারী” মানে শুধুই জন্মগত নারী—যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—সমতা আইনের আওতায় “নারী” বলতে শুধুমাত্র জৈবিক অর্থে জন্মগত নারীকেই বোঝানো হবে। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত নারীরা এই সংজ্ঞার আওতায় আসবেন না। সুপ্রিম কোর্টের এই সর্বসম্মত রায় যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে লিঙ্গভিত্তিক অধিকার প্রয়োগে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

স্কটল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের ব্যাখ্যার প্রশ্নে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’ নামক নারী অধিকার সংস্থা। তাদের যুক্তি ছিল, কেবল জন্মগত নারীদেরই লিঙ্গভিত্তিক সুরক্ষাগুলো প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে আদালতের কাছে প্রশ্ন ছিল—২০১০ সালের সমতা আইনে “নারী” ও “লিঙ্গ” শব্দগুলো দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? এটি কি জন্মগত লিঙ্গ, নাকি ২০০৪ সালের জেন্ডার রিকগনিশন আইনে (Gender Recognition Act) উল্লিখিত GRC (Gender Recognition Certificate) সনদধারীদের নতুন লিঙ্গ পরিচয়?

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লর্ড হজ রায় ঘোষণার সময় বলেন, “আইনে ‘নারী’ ও ‘লিঙ্গ’ শব্দগুলো কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, সেটিই ছিল আমাদের মূল কাজ।” তিনি জানান, আদালতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালের সমতা আইনে ‘নারী’ বলতে বোঝানো হয়েছে জৈবিক নারী, এবং ‘লিঙ্গ’ বলতে বোঝানো হয়েছে জন্মগত জৈবিক লিঙ্গ।

তবে তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেন, এই রায় যেন সমাজের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর বিজয় হিসেবে দেখা না হয়। বরং এটি কেবল একটি আইনি সংজ্ঞার বিষয়। লর্ড হজ বলেন, “এই রায় ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারকে হ্রাস করছে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানি থেকেও আইন সুরক্ষা দিয়ে থাকে।”

Gender Recognition Certificate (GRC) যুক্তরাজ্যে একটি আইনি দলিল, যা কাউকে তার বর্তমান লিঙ্গ পরিচয় অনুযায়ী স্বীকৃতি দেয়। স্কটল্যান্ড সরকার দাবি করে, GRC থাকা মানেই ব্যক্তি তার নতুন লিঙ্গ অনুযায়ী সব ধরনের সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু ফর উইমেন স্কটল্যান্ড পাল্টা যুক্তি দেয়—লিঙ্গ একটি ‘অপরিবর্তনীয় জৈবিক অবস্থা’, যা কোনো আইনি দলিল দিয়ে বদলানো সম্ভব নয়।

রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে ফর উইমেন স্কটল্যান্ড-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ বলেন, “আজ বিচারকেরা যা বলেছেন, তা আমরা সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—যে নারীরা তাঁদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে সুরক্ষিত থাকবেন।”
তারা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে জন্মগত নারীরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন—নারীদের জন্য নির্ধারিত পরিষেবা ও স্থান শুধুমাত্র নারীদের জন্যই সংরক্ষিত থাকবে।

রায় প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি জানান, স্কটিশ সরকার রায়টি মেনে নিয়েছে। তারা এখন আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো—যুক্তরাজ্যে সমতা আইনের প্রয়োগে “নারী” শব্দের সংজ্ঞা এখন কেবল জৈবিক নারীকে বোঝাবে, যদিও ট্রান্সজেন্ডারদের আইনগত সুরক্ষা বজায় থাকবে। এটি একদিকে যেমন জন্মগত নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষার বার্তা দেয়, অন্যদিকে সমাজে লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে আলোচনার দরজা আরও প্রসারিত করে।

 

বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না

অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন যে তাদের বাচ্চা মোবাইল বা টিভি ছাড়া খেতে চায় না। তবে বাস্তবতা হলো, বাচ্চা নিজে থেকে মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না – এই ধারণা আমরা প্যারেন্টরাই তৈরি করেছি। শিশুরা যা শেখে, সেটি তাদের আশপাশের পরিবেশ ও বড়দের আচরণ দেখে শেখে। আমরা যদি প্রথম থেকেই মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার না করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে দিই, তাহলে শিশুরাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে খেতে শিখবে।

মোবাইলের ওপর নির্ভরতা কোথা থেকে এলো?
১. কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা ও সহজ সমাধানের সন্ধান-
বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারেই মা-বাবা কর্মজীবী। ফলে শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব নানী, দাদী বা গৃহকর্মীদের ওপর পড়ে। তাদের ধৈর্য্য, শারীরিক সামর্থ্য বা সময় সীমিত থাকে। বাচ্চার খাবার খাওয়ানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে চেষ্টার পরিবর্তে স্ক্রিনটাইম সহজ সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। এতে বাচ্চা চুপচাপ ভিডিও দেখতে দেখতে খেয়ে ফেলে, আর কেয়ারগিভারের জন্যও কাজ সহজ হয়ে যায়।

২. পরিচ্ছন্নতার প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব
বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খায়, যা তাদের শেখারই একটি অংশ। কিন্তু অনেক প্যারেন্ট চান না যে ঘর নোংরা হোক বা বাচ্চা হাতে-মুখে মাখিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুক। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার সুযোগ না দিয়ে মুখে খাবার গুঁজে দেওয়ার প্রবণতা গড়ে তোলেন। এতে শিশুর নিজে খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়, এবং মোবাইল সামনে দিলে সে যান্ত্রিকভাবে খেয়ে নেয়।

শিশু কীভাবে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া শিখবে?

১. ধৈর্য ধরুন, শিশু নিজে খেতে শিখবে
শিশুকে খেতে শেখানোর জন্য সময় দিতে হবে। নিচে পাটি বিছিয়ে বা চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে তার সামনে খাবার দিন। সে খাবার ধরবে, মুখে তুলবে, ফেলবে, নোংরা করবে—এটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন এভাবে চেষ্টা করলে, দেখবেন ২ বছরের মধ্যেই সে নিজে খেতে শিখে গেছে।

২. ক্ষুধা লাগার সুযোগ দিন
যখন শিশুর সত্যিকারের ক্ষুধা লাগবে, তখন সে স্বাভাবিকভাবেই খেতে চাইবে। মোবাইলের কারণে মনোযোগ নষ্ট হলে শিশুর ক্ষুধাবোধও কমে যায়। তাই খাবারের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, এবং তার আগে বা পরে অযথা স্ন্যাকস খেতে দেবেন না।

৩. শিশুর ওজন ঠিক থাকলে খাওয়ার পরিমাণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না

অনেক অভিভাবক মনে করেন বাচ্চা কম খাচ্ছে, তাই তারা জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যদি শিশুর ওজন স্বাভাবিক থাকে এবং সে সুস্থ থাকে, তবে কম-বেশি খাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

৪. মোবাইল ছাড়াই মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর উপায় খুঁজুন

যদি কখনো শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানো দরকার হয়, তাহলে ভিডিও ছাড়া অন্যান্য উপায় ব্যবহার করুন। যেমন—
তার সামনে ছোট গল্প বলুন,খাওয়ার সময় রঙিন প্লেট-বাটি ব্যবহার করুন, তাকে খেলনা বা বই দিন, যাতে সে নিজে ব্যস্ত থাকে।
মুড়ি বা অন্য শুকনো খাবার দিয়ে গুণতে বা সাজাতে দিন।

সচেতন হোন, শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন
শিশুর স্ক্রিন অ্যাডিকশন মূলত অভিভাবকদের তৈরি করা সমস্যা। শুরু থেকেই যদি নিয়ম মেনে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়, তবে পরে এটি নিয়ে সমস্যা হবে না।

তাই আজ থেকে “বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খায় না” বলা বন্ধ করুন, এবং ধৈর্য ধরে শিশুকে স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।

 

সাহসী নারী অ্যাগনোডিস

প্রাচীন গ্রিসে নারীদের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে শুধুমাত্র গৃহস্থালির কাজ ও সন্তান লালন-পালনের জন্যই উপযুক্ত মনে করা হতো। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এক নারী জন্ম নিয়েছিলেন, যিনি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তার নাম ছিল অ্যাগনোডিস।

অ্যাগনোডিস ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমাজের নিয়ম তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের চুল কেটে, পুরুষের বেশ ধরে তিনি ভর্তি হন আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত মেডিকেল স্কুলে। কঠোর পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে তিনি সেখানে সফলতার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্র শেখেন এবং একদিন দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ফিরে আসেন এথেন্সে।

একদিন রাস্তায় হাঁটার সময় তিনি শুনতে পান এক প্রসূতি নারীর আর্তনাদ। ব্যথায় কাতর সেই নারী কোনো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে রাজি ছিলেন না, কারণ তখনকার সমাজে নারীদের পুরুষের স্পর্শ নেওয়া ছিল লজ্জার বিষয়। অ্যাগনোডিস তখন নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন, নিজেকে একজন নারী হিসেবে প্রমাণ করেন এবং সফলভাবে প্রসব করাতে সাহায্য করেন।

এই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং নারীরা অ্যাগনোডিসের কাছে ছুটে আসতে শুরু করেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, একজন নারী চিকিৎসক হিসেবে অ্যাগনোডিস তাদের কষ্ট বুঝতে পারবেন এবং নিরাপদে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এটি পুরুষ চিকিৎসকদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা অভিযোগ করেন, অ্যাগনোডিস একজন পুরুষ, যিনি নারীদের প্রলুব্ধ করছেন।

অ্যাগনোডিসকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। প্রথমে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে তিনি আসলে একজন নারী। কিন্তু সত্য প্রকাশের পরও শাস্তি এড়ানো গেল না। সমাজের নিয়ম ভঙ্গ করে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিদ্রোহ। সেই সব নারীরা, যাদের অ্যাগনোডিস সুস্থ করেছিলেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। বিচারকদের স্ত্রীরাও সমর্থনে এগিয়ে আসেন এবং ঘোষণা করেন, “যদি অ্যাগনোডিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে আমাদেরও দিতে হবে।”

নারীদের এই ঐক্য ও প্রতিবাদের মুখে বিচারকদের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। আইন পরিবর্তন করা হয় এবং তখন থেকে নারীরা নারীদের চিকিৎসা করার অনুমতি পান।

অ্যাগনোডিস ছিলেন গ্রীসের প্রথম নারী চিকিৎসক ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তার সংগ্রাম শুধু নিজের জন্য ছিল না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের জন্যও।
নারীদের ইতিহাস গড়া কখনোই সহজ ছিল না। প্রতিটি বিজয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকে নিরব সংগ্রাম ও বাধার পাহাড়। কিন্তু যখন এক নারী অন্য নারীর পাশে দাঁড়ায়, তখনই সত্যিকার পরিবর্তন আসে।

এই গল্প শুধু অ্যাগনোডিসের নয়, এটি সমস্ত সাহসী নারীর গল্প—যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সমাজের গোঁড়ামি ভেঙে সামনে এগিয়ে যায় এবং নতুন ইতিহাস তৈরি করে।
তুমি কি সেই ইতিহাসের অংশ হতে প্রস্তুত?

 

পুদিনা: আপনার দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্যকর লাইফ হ্যাক

 

পুদিনা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা শুধু তাজা সুগন্ধই দেয় না, বরং এটি আমাদের শরীরের জন্য একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
এখানে কিছু সহজ ও কার্যকর হেলথ টিপস শেয়ার করা হলো, যা আপনাকে পুদিনা ব্যবহার করে জীবনকে আরও সুস্থ ও প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করবে।

ত্বকের যত্ন: গরমে ত্বকে ফুসকুড়ি বা জ্বালাপোড়া থাকলে, কিছু পুদিনা পাতা চটকে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করুন। এটি ত্বককে শান্ত করবে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করবে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর: পুদিনা পাতা পানি দিয়ে কুলি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং দাঁত-মাড়ি থাকবে সুস্থ।

হজমশক্তি বৃদ্ধি: পুদিনা পাতার চা হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে। খাবারের পর এক কাপ পুদিনা চা পান করুন।

মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন: পুদিনার পাতার গন্ধ মাথাব্যথা কমাতে এবং মাইগ্রেনের সমস্যায় সাহায্য করতে পারে। নাকের উপরর কিছু পুদিনা পাতা রেখে গভীর শ্বাস নিন।

ক্লান্তি দূরীকরণ: পুদিনা পাতার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ক্লান্তি দ্রুত দূর হবে এবং আপনি চাঙ্গা অনুভব করবেন।

কফ দূর: পুদিনা পাতা, তুলসী, আদা ও মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে কফ ও শ্বাসকষ্ট কমে যায়।

উকুন মুক্ত চুল: পুদিনার শেকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন, পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি উকুন দূর করবে।

শরীর ঠান্ডা রাখা: গরমে পুদিনা পাতা খাওয়া শরীরকে শীতল রাখে এবং জ্বরের উপসর্গ কমায়।

হার্ট সুস্থ রাখে: পুদিনা রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে: পুদিনা পাতা অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

পুদিনার সহজ কিছু ব্যবহার আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে। তাই, দৈনন্দিন জীবনে এটি অন্তর্ভুক্ত করলে আপনি পাবেন প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যকর সমাধান।

 

ক্যামেরা হাতে শেষ নিঃশ্বাস: শহীদ ফটোগ্রাফার ফাতিমা হাসুনা

 

আজকের প্রভাতে যখন সূর্য উঠেছে, তখন গাজার আকাশে কেবল ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপ। সেই ধ্বংসের নিচে চাপা পড়ে গেছেন এক সাহসিনী—ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা, যিনি শহীদ হয়েছেন ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বর্বর বোমা হামলায়। গাজা শহরের নাফাক অঞ্চলে নিজ বাড়িতে চালানো হামলায় শহীদ হয়েছেন তিনি ও তাঁর পরিবারের আরও ১০ জন সদস্য।

ফাতিমা হাসুনা শুধু একজন আলোকচিত্রী নন, তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস, গাজার চোখে দেখা সত্যের নির্ভীক ভাষ্যকার। তাঁর হাতে ছিল ক্যামেরা, আর হৃদয়ে প্রতিরোধের আগুন। তাঁর প্রতিটি ছবি একেকটি ভাষ্য, যা দখলদারদের গোলার চেয়ে কম শক্তিশালী ছিল না।

গাজা যখন আগুনে জ্বলছে, চারপাশে ধ্বংস আর মৃত্যু, তখন ফাতিমা ছুটে যেতেন ঘটনাস্থলে—হাতে ক্যামেরা, চোখে আগ্রহ, হৃদয়ে সাহস। তিনি তুলতেন সেইসব ছবি, যা পৃথিবীর অনেক মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছে। ধুলায় ঢাকা পথ, কাঁদতে থাকা শিশু, খালি থালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধা—এসবের মধ্যেই তিনি দেখাতেন আগ্রাসনের চেহারা।

এক সাক্ষাৎকারে ফাতিমা বলেছিলেন—
“আমি অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছি। আমি কাজ করি হৃদয় দিয়ে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্যে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে!”
“আমার ক্যামেরা আমার অস্ত্র। তারা আমার দেশ ও জনগণকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু আমার চিত্র/ছবিকে পারবেনা।”

এগুলো আজ আর কেবল বাক্য নয়, এখন ইতিহাসের এক একটি স্তম্ভ। ফাতিমার ক্যামেরা আজ নীরব, কিন্তু তাঁর ছবিগুলো আজও কথা বলে। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে যে রক্ত ঝরে, তার সাক্ষী হয়ে আছে তাঁর প্রতিটি ক্যাপচার করা মুহূর্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুতে শোক আর শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেকেই লিখেছেন—”ফাতিমার লেন্স থেমে গেলেও, তাঁর তোলা ছবি ইতিহাসের বুক থেকে কেউ মুছতে পারবে না।”
আরো বলা হচ্ছে—
“তিনি ছিলেন গাজার প্রতিরোধের এক নারীচিত্রী, যিনি প্রমাণ করে গেছেন—প্রতিরোধ মানে শুধু অস্ত্র নয়, প্রতিরোধ মানে সত্যের চিত্র তুলে ধরা।”

তিনি বলেছিলেন: “আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না। আমি ছবি তুলি, কারণ কেউ তো আছে, যাকে দেখাতে হবে আমাদের উপর কী ঘটছে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে।”
তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত ছিলেন তার সংগ্রামের ক্যামেরা হাতেই।

আজ তাঁর এই অস্ত্র থেমে গেছে। কিন্তু তাঁর প্রতিরোধ এখন ছবি হয়ে বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়, উম্মাহর চেতনায়।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ তাঁকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিন, জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দিন।

 

রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার সহজ টিপস

 

রান্নাঘর শুধু খাবার তৈরির জায়গা নয়, এটি আমাদের পরিবারের সবার সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই রান্নাঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা খুবই জরুরি। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে চিটচিটে তেল, খাবারের গন্ধ এবং ধুলো-ময়লা জমে রান্নাঘর অস্বাস্থ্যকর হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই রান্নাঘরকে ঝকঝকে রাখা সম্ভব। আসুন জেনে নিই রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার কিছু কার্যকর টিপস।

১. রান্নাঘরের বেসিন ও সিঙ্ক পরিষ্কার রাখার উপায়
ওয়াশবেসিন বা সিঙ্ক পরিষ্কার করতে খানিকটা কোক বা পেপসি ঢেলে ৫ মিনিট রেখে মুছে ফেলুন, এতে দাগ ও ময়লা সহজে উঠে যাবে।

চুলার আশেপাশে তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে মসলিন কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।

২. রান্নাঘরের তাক, কেবিনেট ও কাউন্টার পরিষ্কার রাখা
মার্বেল পাথরের কেবিনেট বা কাউন্টার পরিষ্কার করতে খাবার সোডা পানিতে গুলে রাতে লাগিয়ে রাখুন, সকালে সাদা সিরকা মিশ্রিত পানি দিয়ে মুছে ফেলুন।

তেল চিটচিটে তাক বা কাঠের র‍্যাক পরিষ্কার করতে ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে পরিষ্কার করুন।

রান্নাঘরের জানালা বা বারান্দার গ্রিল পরিষ্কার করতে কেরোসিন ও সরিষার তেল মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে লাগিয়ে দিন, এতে জং ধরা রোধ হবে।

৩. হাঁড়ি-পাতিল ও বাসনকোসন পরিষ্কার করার কৌশল
পোড়া দাগযুক্ত হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করতে সিরিষ কাগজে গুঁড়া সাবান লাগিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।

পুরোনো হাঁড়ি থেকে তেল কালির দাগ তোলার জন্য চা পাতা বা কফি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করুন।

চিনেমাটির পাত্রের দাগ লবণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে সহজেই দূর হবে।

বাসনকোসনে কষ লাগলে টক দই বা দুধের সর দিয়ে ঘষে ধুলে দাগ চলে যাবে।

৪. রান্নাঘরের দুর্গন্ধ ও পোকামাকড় দূর করার উপায়
রান্নাঘরে পোড়া গন্ধ বা অন্যান্য দুর্গন্ধ দূর করতে কিছুটা সিরকা চুলায় দিয়ে শুকানো অবধি জ্বাল দিন।

মশা, মাছি ও পিঁপড়ার উপদ্রব কমাতে ঘর মোছার পানিতে সামান্য ডিজেল মিশিয়ে নিন।

এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করলে রান্নাঘর শুধু ঝকঝকে ও পরিপাটি থাকবে না, বরং জীবাণুমুক্ত ও স্বাস্থ্যকরও থাকবে!

 

শিশুরা কি জন্মগতভাবে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী? গবেষণার দুই মেরু দৃষ্টিভঙ্গি

 

মানুষ জন্মগতভাবে বিশ্বাসী—এটা তো আমরা অনেকেই জানি বা মানি। তবে প্রশ্ন হলো, “মানব শিশু কি জন্মগতভাবেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসী?” এই দাবি একজন বিশিষ্ট গবেষকের—অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অধ্যাপক জাস্টিন এল. ব্যারেট। উন্নয়নমূলক মনোবিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক পার্থক্য ও নানা রকম মানসিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তিনি দাবি করেন, শিশুদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই কোনো এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে। এই দীর্ঘ গবেষণার ভিত্তিতেই তিনি লিখেছেন Born Believers নামের বইটি (২০১২), যেখানে তাঁর ও সহ-গবেষক নিকোলা নাইটের কাজের সারাংশ তুলে ধরা হয়েছে।

অক্সফোর্ডের একটি ডকুমেন্টারিতে ব্যারেট বলেন, শিশুরা যখন বেড়ে ওঠে, তখন তারা চারপাশের জগতের জটিলতাকে দেখে মনে করে—এসব কিছু নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তৈরি করেছেন। এটা যেন তাদের মস্তিষ্কের একটা স্বাভাবিক প্রস্তুতি, যেটা পরিবেশের ওপর নির্ভর করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় তিন বছর বয়স থেকেই শিশুরা অতিপ্রাকৃত কোনো সত্ত্বার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে শুরু করে। সূর্য দেবতা, প্রকৃতির আত্মা, এমনকি ঈশ্বরের ধারণা—এসব বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নানা সংস্কৃতিতে একরকম রয়ে যায়। তবে তারা বড়দের মতো একমাত্রিক বা ধর্মবিশেষভিত্তিক ভাবনায় আটকে থাকে না। বরং তারা এসব সত্ত্বাকে “সবজান্তা” বা অত্যন্ত জ্ঞানী হিসেবে দেখে।

জাস্টিন ব্যারেট মনে করেন, শিশুরা জন্ম থেকেই ‘ক্রিয়েটর’ বা ‘সৃষ্টিকর্তা’র ধারণা ধারণ করতে প্রস্তুত থাকে। তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি আগে থেকেই থাকে, কেবল বড় হয়ে সেই বিশ্বাসে ধর্মীয় কাঠামো বা সংস্কৃতির ছোঁয়া পড়ে।

তবে, এই দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে রয়েছে আরেকটি গবেষণা। ”Genius Science” নামের একটি বৈজ্ঞানিক সাময়িকীর জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়—শিশুদের অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাস মূলত শেখানো জিনিস। ক্যাথলিন করিভিউ নামের এক গবেষক এবং তার দল ৬৬ জন শিশুর উপর তিন ধরনের গল্পের ভিত্তিতে পরীক্ষা চালান—ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং রহস্যভিত্তিক।

গবেষণায় দেখা যায়, ঐতিহাসিক গল্পগুলোকে প্রায় সব শিশুই সত্য হিসেবে নিয়েছে। তবে ধর্মীয় গল্পে পার্থক্য দেখা গেছে—যারা ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা সেগুলোকে সত্য ধরে নিয়েছে; অন্যদিকে যারা ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা সেগুলোকে রূপকথা বলেই মনে করেছে। রহস্যমূলক গল্পেও এমনই পার্থক্য দেখা গেছে।
ক্যাথলিন করিভিউর মতে, ধর্মীয় গল্প ও বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা শিশুরা বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা আলাদা করতে তুলনামূলকভাবে কম সক্ষম হয়। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন—এটা যে ক্ষতিকর, এমনটা নয়। বরং বাস্তববাদী জ্ঞান এবং ধর্মীয় বিশ্বাস—দুটোই একসাথে শেখানো দরকার।
এই প্রসঙ্গে ব্যারেটের প্রতিক্রিয়া ছিলো, “ধর্মনিরপেক্ষ শিশুদের আচরণই বরং অস্বাভাবিক।” তিনি মনে করেন, করিভিউর গবেষণাটি ম্যাসাচুসেটসের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ এলাকায় পরিচালিত হওয়ায় সেখানকার শিশুদের ফলাফলকে সাধারণ শিশুদের মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে ধরা ঠিক নয়।

তবে এক জায়গায় দুজন গবেষকই একমত—শিশুদের চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠার পেছনে পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাব রয়েছে।

এই দুই গবেষকের বক্তব্য এবং গবেষণালব্ধ প্রমাণ পড়ার পর আমার কাছে যেটা স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো—শিশুরা একদিকে যেমন শোষণক্ষম, অন্যদিকে কিছু কিছু ধারণা তারা যেন জন্মগতভাবেই ধারণ করে। ব্যারেটের মতে, শিশুদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে একজন সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে। আর করিভিউর গবেষণা বলছে—এই বিশ্বাস আসলে শেখানো হয়।

আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি হলো, শিশুদের মন একদম খোলা মাঠের মতো। সেখানে তারা যা দেখে, যা শোনে, তাই থেকে বিশ্বাস গড়ে তোলে। তারা কল্পনা করে, প্রশ্ন করে, শেখে—আর এই শেখার উৎস যদি হয় যুক্তি বা বাস্তবতা, কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাস—তবে তার প্রভাব পড়বেই।
তাই হয়তো বলা যায়, শিশুরা জন্ম থেকে নির্দিষ্ট কোনো বিশ্বাস নিয়ে আসে না, তবে তারা বিশ্বাস গড়তে সক্ষম একেকটি সম্ভাবনাময় চিন্তাশক্তির ধারক। তাদের সামনে বাস্তবতা, কল্পনা, ধর্ম এবং যুক্তি—সব কিছুরই পরিসর খুলে দিতে হবে, যেন তারা নিজের মতো করে বুঝে নিতে পারে কোনটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে।

আরওয়া আনাম

 

জান্নাতুল ফেরদৌসের সাহসী উদ্যোগ: পরিবেশবান্ধব ক্যাফে ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন

 

রাজধানী ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় গেলে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য চোখে পড়বে। প্রধান সড়কের পাশে একটি দালানের দ্বিতীয় তলার ছাদ যেন এক সবুজ উদ্যানে পরিণত হয়েছে। গাছপালায় ঘেরা এই ছাদে রয়েছে একটি ক্যাফে, যার নাম “ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস”। এটি শুধু একটি খাবারের জায়গা নয়; বরং এটি পরিবেশবান্ধব ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন এক তরুণ উদ্যোক্তা—জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট যেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎনির্ভর, সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস একটি ব্যতিক্রমী পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর ক্যাফের রান্নাঘর, আলোকসজ্জা এবং এমনকি কফি মেশিন পর্যন্ত চলে সৌরবিদ্যুতে। ছাদে বসানো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ক্যাফেটি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও কমিয়ে আনে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায়ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করেছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, খাবার পরিবেশনের জন্য নেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং সচেতন নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি জায়গাও তৈরি করেছে।

শুধু একটি ব্যবসা গড়ে তোলাই জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য নয়। তিনি তাঁর ক্যাফের লভ্যাংশের একটি অংশ সমাজসেবামূলক কাজে ব্যয় করেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা সহায়তা, নারীদের ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।
জান্নাতুলের এই উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর লন্ডনপ্রবাসী বড় ভাই মঞ্জুর মিয়া। বিদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দেখে তিনি জান্নাতুলকে এই বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর জান্নাতুল গবেষণা ও পরিকল্পনা করে তাঁর এই ক্যাফে বাস্তবায়ন করেন।

বর্তমানে জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক করছেন। তবে তার অভিজ্ঞতা আরও বিস্তৃত—গত ৯ বছর ধরে তিনি দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য কেবল নিজে সফল হওয়া নয়; তিনি চান, বাংলাদেশের নারীরা আরও বেশি উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক, নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। তিনি মনে করেন, নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হলে তাদেরকে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সমাজকে তাদের এই পথচলায় সহযোগিতা করতে হবে।
ভবিষ্যতে তিনি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে নারীরা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্পর্কে শিখতে পারবেন। তার বিশ্বাস, সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টাও প্রয়োজন। শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না; বরং টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জন এবং সচেতন জীবনধারার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

শিশুদের জন্য বিপজ্জনক একজিমা হারপেটিকাম

 

শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও আদর দেখানো আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তবে এই অভ্যস্ত আচরণ কখনো কখনো শিশুদের জন্য বিপদও ডেকে আনতে পারে। একজিমা হারপেটিকাম (Eczema Herpeticum) নামক একটি ভয়ানক ভাইরাস বিশেষভাবে শিশুদের জন্য মারাত্মক হতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে থাকা হারপেস ভাইরাসের মাধ্যমে শিশুর শরীরে সংক্রমিত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ শিশুদের জীবনের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে, এবং এর উপসর্গগুলো যদি দ্রুত সনাক্ত না করা হয়, তবে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।

একজিমা হারপেটিকাম: কি এবং কেন বিপজ্জনক?
একজিমা হারপেটিকাম একটি অত্যন্ত গুরুতর ভাইরাস যা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে অদৃশ্যভাবে উপস্থিত থাকতে পারে। অধিকাংশ মানুষ জানেন না যে তাদের শরীরে হারপেস ভাইরাস থাকতে পারে। এই ভাইরাসের উপস্থিতি কোনো লক্ষণ ছাড়াই থাকতে পারে, এবং একসময় চুমু বা শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটি শিশুদের মধ্যে প্রবেশ করে। শিশুর শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে, তা তাদের ত্বকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা ফুলে ওঠা লাল দাগ, ফোসকা, এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
একজিমা হারপেটিকামের মতো ভাইরাসের সংক্রমণ যদি অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হয় তবে শিশুদের শরীরে ক্ষতি সাধন করতে পারে, বিশেষত মস্তিষ্ক বা চোখের মধ্যে, যা পরবর্তীতে স্থায়ী অঙ্গগত ক্ষতি হতে পারে।

একজিমা হারপেটিকাম সাধারণত চুমু দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে। অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্করা জানতেও পারেন না যে তাদের শরীরে হারপেস ভাইরাস আছে, এবং তারা সন্তানের প্রতি স্নেহ বা আদর দেখাতে গিয়ে unknowingly ভাইরাসটি শিশুর শরীরে প্রবেশ করাতে পারেন।

মেডিকেল বিজ্ঞানের মতে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চুমু এবং নিকট শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঘটে।

ভাইরাস সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করার উপায়
মেডিকেল বিজ্ঞান এবং শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি আমরা শিশুদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, তবে আমাদের কয়েকটি সোজাসুজি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, অন্যের শিশুকে চুমু দেওয়া বা অযথা শারীরিক যোগাযোগ থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষত যদি আপনি জানেন যে আপনার শরীরে কোনো ভাইরাস বা সংক্রমণ থাকতে পারে।

দ্বিতীয়ত, শিশুদের যদি কোনো অস্বাভাবিক দাগ, লালতা বা ফোসকা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এছাড়া, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

একজিমা হারপেটিকাম বা অন্যান্য ভাইরাস শিশুদের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে, এবং এর প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর প্রতি ভালোবাসা এবং আদরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতার বিষয়টিকে আমাদের কখনো অবহেলা করা উচিত নয়।

সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন এবং আপনার শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

 

মার্কিন পুরস্কার প্রত্যাখ্যানে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা পেলেন উমামা

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা উমামা ফাতিমাকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর অটল অবস্থানের জন্য তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষিত ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (IWOC) অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানানোর পর, সেই সাহসী অবস্থানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

গত শনিবার (২৯ মার্চ) রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই পুরস্কারটি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারী শিক্ষার্থীদের সম্মিলিতভাবে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

উমামা ফাতেমা বলেন, “ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলাকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন জানানো এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করে এই পুরস্কারটি বিতরণ করা হচ্ছে। যা এই পুরস্কারের নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই আমি এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছি।”

এই সাহসী সিদ্ধান্ত ও নৈতিক অবস্থানের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছেন উমামা ফাতেমা। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণ ও বিভিন্ন প্রবাসী ফিলিস্তিনি সংগঠন তার এই অবস্থানকে সাহসিকতার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে “ভয়হীন সংহতির কণ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সেই সঙ্গে তাকে একটি সম্মাননা স্মারকও প্রদান করা হয়, যা রামাল্লায় অবস্থিত ফিলিস্তিন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “যখন অনেকেই নীরব , তখন উমামা ফাতেমার মতো একজন তরুণীর পক্ষে থেকে এমন অবস্থান আমাদের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা দেয়। তিনি শুধু বাংলাদেশের গর্ব নন, তিনি আমাদের কণ্ঠও।”

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ’ পুরস্কার দিয়ে আসছে এবং ২০২৩ সাল থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’। ২০২৫ সালে এই গ্রুপ অ্যাওয়ার্ডটি বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাহসী নারী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।

তবে উমামা ফাতেমার নৈতিক অবস্থান এই সম্মাননাকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।

 

গুঁড়া তেলাপোকা দূর করার ৫টি কার্যকরী উপায়

 

গুঁড়া তেলাপোকার উপদ্রব অনেকের জন্যই বিরক্তিকর। তবে কিছু ঘরোয়া ও কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিচে ৫টি সহজ ও কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো—

১. বোরিক অ্যাসিড ও চিনি মিশ্রণ
এক চা-চামচ বোরিক অ্যাসিড, চিনি ও আটা মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করুন।

তেলাপোকার লুকিয়ে থাকার জায়গায় রাখুন।

এটি খেলে তেলাপোকা ধ্বংস হয়ে যাবে।

২. বেকিং সোডা ও চিনি ব্যবহার করুন
সমান পরিমাণ বেকিং সোডা ও চিনি মিশিয়ে তেলাপোকার চলাচলের স্থানে ছিটিয়ে দিন।

চিনি তেলাপোকাকে আকৃষ্ট করবে, আর বেকিং সোডা খেলে তারা মারা যাবে।

৩. লবণ ও ভিনেগার স্প্রে করুন
এক কাপ পানিতে এক চা-চামচ লবণ ও দুই চা-চামচ ভিনেগার মিশিয়ে স্প্রে তৈরি করুন।

তেলাপোকা দেখলেই সরাসরি এটি স্প্রে করুন, দ্রুত প্রভাব পড়বে।

৪. ঘর পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন
রান্নাঘর ও বাথরুম সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন।

খাবারের উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনা দ্রুত পরিষ্কার করুন।

তেলাপোকার লুকানোর সম্ভাব্য স্থান, যেমন ক্যাবিনেট ও সিঙ্কের নিচের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

৫. ল্যাভেন্ডার ও পুদিনার ব্যবহার
তেলাপোকা ল্যাভেন্ডার ও পুদিনার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

তেলাপোকার চলাচলের স্থানে পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার পাতা রাখুন।

পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার তেলের কয়েক ফোঁটা পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলেও ভালো ফল পাবেন।

উপরের উপায়গুলো নিয়মিত কাজে লাগালে সহজেই গুঁড়া তেলাপোকার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী: নারীর কণ্ঠে গাজার মুক্তির ডাক

 

ঢাকার রাজপথ যেন সেদিন রূপ নিয়েছিল গাজা উপত্যকার প্রতিচ্ছবিতে। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান—চারপাশে ছিল ক্ষোভ, বেদনা আর প্রতিরোধের আগুন। শত সহস্র মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল অবিচারের বিরুদ্ধে দীপ্ত প্রতিবাদ। সেই স্বরলিপিতে নারীর কণ্ঠ ছিল অনস্বীকার্য ও দৃঢ়—মমতার মাটি থেকে উঠে আসা প্রতিবাদের উচ্চারণ, যেখানে প্রতিটি পা যেন গাজায় নিহত এক শিশুর জন্য ন্যায়ের দাবি হয়ে গর্জে উঠেছে।
২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষ অংশ নেন। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সমাবেশে নারী-পুরুষের কণ্ঠ এক হয়ে উচ্চারিত হয়েছে: “ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে আছি”।

ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ এমনকি নারায়ণগঞ্জের মদনপুর বা কেরানীগঞ্জ থেকেও নারীরা যোগ দিয়েছেন। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, শিক্ষক ও পেশাজীবীরা—সবাই একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে।
মনিকা নামের এক নার্সিং শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা যত দূরেই থাকি, গাজার জন্য এই মুহূর্তে পাশে থাকা মানেই প্রতিবাদ।” নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ৬১ বছরের শান্তা বেগম বললেন, “ফোনে ইউটিউবে দেখে জানলাম গাজার কথা, তাই এসেছি।”
প্রকৌশলী সোনিয়া খান প্রশ্ন তুলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধে চুপ থাকা মানেই তা সমর্থন করা।” কেরানীগঞ্জের শিক্ষক মাবিয়া আক্তার জানান, “আমরা বাংলাদেশি নারীরাও মুসলিম উম্মাহর পাশে আছি।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের নারীদের কান্না ও শিশুদের নিথর দেহ দেখে অনেকেই আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি।

ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড আর প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত এ সমাবেশে নারীদের দৃপ্ত অংশগ্রহণ জানিয়ে দিল—তারা শুধু ঘরের নয়,মানবতার প্রশ্নে তারা সদা সবখানে জাগ্রত।
সোহরাওয়ার্দীর প্রান্তর সাক্ষী হয়ে রইল সেই অঙ্গীকারের—মানবতার বিরুদ্ধে কোনো জুলুম মেনে নেবে না এ প্রজন্ম।
আর গাজার ধ্বংসস্তূপের গায়ে হয়তো একদিন এই কণ্ঠগুলোর প্রতিধ্বনি পৌঁছে যাবে, জানিয়ে দেবে—তারা একা ছিল না। অস্ত্র নয়, ভালোবাসা ও প্রতিবাদের ভাষা নিয়েই
বাংলাদেশের নারীরাও তাদের পাশে ছিল।

 

ধর্ষণ আইন সংশোধন: বলাৎকারও ধর্ষণের আওতায়, অর্থদণ্ড বাড়ানো হলো

 

সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যেখানে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলাৎকারকেও ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার বিধান করা হয়েছে।

নতুন আইনে বলাৎকারকেও ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যার ফলে নারী, শিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুর ক্ষেত্রেও এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। তবে, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলার তদন্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, যা পূর্বে ছিল ৬০ কার্যদিবস। প্রয়োজনে আরও ১৫ কার্যদিবস সময় নেওয়া যেতে পারে। বিচার কার্যক্রম অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে।

ধর্ষণের শাস্তি পূর্বের মতোই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড থাকবে। তবে অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে আগে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হতো, যা বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দহনকারী, ক্ষয়কারী বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে নারী বা শিশুকে হত্যা বা বিকৃত করার অপরাধে অর্থদণ্ড ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নারী বা শিশুকে মারাত্মক জখম করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, কারো ক্ষতির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিতে পারবে এবং শাস্তি দিতে পারবে। এই অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে।
শিশু ধর্ষণের মামলার জন্য প্রতি জেলায় ও মহানগরে পৃথক শিশু ধর্ষণ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

যৌতুকের মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আওতার বাইরে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, নতুন আইনে বলাৎকারকে ধর্ষণের আওতায় আনা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “অর্থদণ্ড বাড়ানোর ফলে সাজা কার্যকর হওয়ার হার কমে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া জামিনের সুযোগ নিয়ে আসামিরা বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে, যা বিচারের কার্যকারিতা ব্যাহত করছে।”
এই সংশোধনী আইন বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও কঠোর ও দ্রুত করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। তবে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নই এর সফলতা নিশ্চিত করবে।

 

তালবিনা: শরীর ও মনের প্রশান্তির এক পরিপূর্ণ খাবার

 

আধুনিক জীবনের ক্লান্তি, মানসিক চাপ আর শরীরের দুর্বলতার মাঝে আমরা অনেকেই খুঁজে ফিরি এমন কিছু—যা প্রাকৃতিক, পুষ্টিকর এবং একইসাথে আত্মার প্রশান্তিও দেয়। ঠিক এমন একটি উপকারী খাবার হচ্ছে তালবিনা। এটি এমন এক খাবার, যা শুধু শরীরকে নয়, মনের অস্থিরতাকেও প্রশমিত করে।
তালবিনা হল যবের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি একধরনের তরল খাবার, যা ইসলামী ঐতিহ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে এসেছে,
“তালবিনা রোগীর মনকে প্রশান্ত করে এবং তাকে শক্তি জোগায়।” — (সহীহ বুখারী)

এই একটি হাদীস থেকেই বোঝা যায় তালবিনার গুরুত্ব কতটা গভীর। তালবিনা এমন এক খাবার, যা শরীরকে দেয় প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি, আর মনকে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। এটি হজমে সহায়ক, পেটের সমস্যা দূর করে এবং মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।

তালবিনা তৈরির সহজ রেসিপি
তালবিনা বানানোর ঘরোয়া ও সহজ রেসিপি:

উপকরণ
যবের গুঁড়া – ২ টেবিল চামচ
দুধ – ১ কাপ (চাইলে পানি বা দুধ-পানির মিশ্রণ ব্যবহার করা যাবে)
মধু – ১ টেবিল চামচ (স্বাদমতো)
খেজুর কুচি – ২-৩টি (ঐচ্ছিক)
ছোট এলাচ – ১টি (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালি:
একটি হাঁড়িতে যবের গুঁড়া ও দুধ একসাথে মিশিয়ে নিয়ে
অল্প আঁচে রান্না করতে থাকুন। চামচ দিয়ে ঘনঘন নাড়তে থাকুন যেন নিচে লেগে না যায়।
মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে খেজুর কুচি ও এলাচ দিন।প্রাকৃতিক সুগন্ধ ও মিষ্টতা পেতে রান্না শেষে মধু মিশিয়ে দিন।

গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন। চাইলে উপরে কিছু বাদাম কুচি বা কিশমিশ ছিটিয়ে নিতে পারেন।

কেন তালবিনা খাবেন?
তালবিনা শুধু অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নয়, বরং প্রতিদিনকার সুস্থ জীবনের জন্যও এক অসাধারণ খাবার। এটি শিশু, বয়স্ক, নারী বা পুরুষ—সবার জন্য উপযোগী। নিয়মিত খেলে হজমশক্তি বাড়ে, মন ভালো থাকে এবং শরীরের দুর্বলতা কেটে যায়।
আপনি কি আজ থেকেই তালবিনাকে আপনার খাবার তালিকায় যুক্ত করতে প্রস্তুত?

 

নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ: রাষ্ট্রীয় দায় ও করণীয়

বাংলাদেশ উন্নয়নের এক ক্রমবর্ধমান পথে হাঁটছে—এই কথা আমরা প্রতিদিন শুনি, দেখি, পড়ি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৪ সালের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ সমতায় শীর্ষে এবং বৈশ্বিকভাবে ৯৯তম অবস্থানে রয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। তবে এই অগ্রগতি ও অর্জনের গর্বের মাঝেই রয়ে গেছে কিছু গোপন, কষ্টকর ও ভয়াবহ প্রশ্ন—এই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীরা কোথায়? তাদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা কি রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পেরেছে?

বছরের শুরু থেকে বছরের শেষে, ধর্ষণের পরিসংখ্যান প্রতিদিনের সংবাদের এক করুণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪০১ জন নারী ও শিশু। শুধু জানুয়ারি মাসেই সংখ্যা ছিল ৩৯, আর ফেব্রুয়ারিতে ৪৮। এটি নিছক সংখ্যা নয়—প্রতিদিন ঘটে যাওয়া যন্ত্রণার দলিল। প্রতিটি ঘটনায় কেঁপে উঠে একটি জীবন, একটি পরিবার। সমাজে ধর্ষণ এখন এতটাই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অনেকেই আর বিস্মিতও হন না—এটা যেন এক ভয়ানক সহনশীলতা তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা গেছে কিছুটা পরিবর্তন। দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র ক্ষমতার অবসান ঘটেছে। বিভিন্ন সংগঠন সংস্কারের কথা বলছে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে যারা সম্ভাবনার কথা বলছে, বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে নারী কি সেই স্বপ্নের অংশ হতে পেরেছে? যৌন সহিংসতা, নারী নিপীড়নের হার কি কমেছে? নারীর নিরাপত্তাবোধ কি বেড়েছে? বরং প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা ও খবরে তার বিপরীতটাই প্রমাণ হয়। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এখন শুধু ঘর-বাড়ি বা রাস্তায় নয়, ভার্চুয়াল জগতেও নারীর অস্তিত্বকে ক্রমাগত আক্রমণের শিকার করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভিউ বাড়ানো’ বা ‘ট্রেন্ডিং’ হওয়ার নামে যেসব ভিডিও তৈরি হয়, তার অনেকগুলোতেই নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্বেষপূর্ণ উপস্থাপন রয়েছে। সেইসঙ্গে ততাকথিত ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলেও নারীকে বস্তু হিসেবে বর্ণনা করে যেসব বক্তব্য দেওয়া হয়, তা শোনে কিশোর-তরুণরা বেড়ে উঠছে একটি ভিন্ন মনস্তত্ত্ব নিয়ে। প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব নিয়ন্ত্রণে কতটুকু সক্রিয়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এই সমাজে নারী বিদ্বেষ এখন আর গোপন নয়—তা আজ প্রতিষ্ঠিত, স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ধর্ষণ, নিপীড়ন এখন আর লজ্জাজনক বিষয় নয়—বরং ক্ষমতার প্রকাশের এক নোংরা উপায়।

এমন পরিস্থিতিতে যখন একজন ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন যেন ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘নারী নিপীড়ন’ বলা হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে—একটি ভয়াবহ অপরাধকে শব্দচয়নের মাধ্যমে কীভাবে হালকা করে দেখানো যায়? ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ, এবং একে তার প্রকৃত নামে ডাকা উচিত। শব্দের রাজনীতি দিয়ে অপরাধের ভয়াবহতা ঢেকে রাখা যায় না।

এই ক্রমাগত সহিংসতা রোধে শুধু আইনি ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন পরিবারে এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে শিশুরা নির্ভয়ে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারে। শিশুদের জানাতে হবে কীভাবে তারা যৌন সহিংসতার শিকার হতে পারে, কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, শিশুদের এসব শেখানো কি ঠিক? কিন্তু বাস্তবতা হলো ধর্ষক কিন্তু কখনো শিশুর বয়স দেখে থামে না। তাই এই লড়াইয়ে শিশুদের অন্ধকারে রাখা মানে তাদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া।

নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। শুধুমাত্র আইন ও পুলিশ দিয়ে এই ব্যাধিকে দমন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমাজে নারীর অবস্থান, মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে নতুন চিন্তা, শিক্ষা ও সচেতনতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার, গণমাধ্যম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—সবকিছুর সমন্বয়ে নারীর মর্যাদার পক্ষে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব জরুরি।

এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে তাদের নিজ নিজ আদর্শিক অবস্থান থেকে নারীর অধিকার ও মর্যাদা বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা উপস্থাপন করা। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে আন্তর্জাতিক লিঙ্গসমতার মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে, আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা আজ এমন এক সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে উন্নয়নকে সত্যিকার অর্থে টেকসই করতে হলে নারীকে নিরাপদ করতে হবে। প্রবৃদ্ধির হার দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র হয় না, যদি সেই রাষ্ট্রের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
বিশ্বাস রাখতে চাই, রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেবে। ধর্ম, গোষ্ঠী, পেশা বা অর্থনৈতিক অবস্থা নয়, রাষ্ট্র তার সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী প্রতিটি নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

 

নারী অধিকার আন্দোলনের ঈদ পূনর্মিলনী ও গাজাবাসীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান

ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিমদের জন্য অন‍্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব।কিন্তু পবিত্র রমজানে গাজাবাসীদের প্রতি ইজরায়েলের হামলা আর শিশু হত‍্যা ঈদের আনন্দকে বেদনায় পরিনত করেছে।আমরা গভীর সমবেদনার সাথে মুসলিম ভাই বোনদের স্মরণ করছি-
৯ এপ্রিল, বুধবার নারী অধিকার আন্দোলন কতৃক আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও গাজাবাসীদ্র জন‍ দোয়া অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মাননান।গুলশানে আয়োজিত উক্ত ঈদ পুনর্মিলনী ও গাজাবাসীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে
অন‍্যান‍্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন-
নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী নাঈমা মোয়াজ্জেম, নারী অধিকার আন্দোলনের সেক্রেটারি নাজমুন নাহার, নারী অধিকার আন্দোলনের জয়েন্ট সেক্রেটারি ডা.তাহেরা বেগম,সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী প্রফেসর শামীমা তাসনিম,সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা বকুল।
দেশীকের প্রিন্সিপাল নুরুন্নিসা সিদ্দিকা প্রমুখ।
নুরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেন-
মসজিদুল আকসা আমাদের জন‍্য ঐতিহাসিক মসজিদ। তিনটি মসজিদকে কেন্দ্র করে ভ্রমন করা যায়। তা হলো- মসজিদুল হারাম, মসজিদুননবীও আকসা।
মসজিদুল আকসার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন। আর এ পরীক্ষায় ঈমানদাররাই বিজয়ী হবে।
তাই আমাদের সার্বক্ষণিক দোয়া ও গণহত্যার প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে ঈমানের হক আদায় করতে হবে।

নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী নাঈমা মোয়াজ্জেম হাদীসের সর্কতবনী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন-যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল অথচ আল্লাহর ক্ষমা হাসিল করতে পারল না তার উপর আল্লাহর লানত। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে আমরা যেন আল্লাহর লানতের মধ্যে না পড়ে যায় কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর লানতের মধ্যে পড়ে যাবে তার দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়েই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।সুতরাং আমাদেরকে রমজান পরবর্তী জীবন আচরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে রমজানের শিক্ষা আমরা বাকি এগারো মাস মেনে চলতে পারি।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসে সভানেত্রী শামীমা তাসনিম বলেন আমাদেরকে চিন্তা করে দেখতে হবে কেন ফিলিস্তিনে আজ এই অবস্থা। আমরা মুসলমানরা আমাদের দায়িত্ব ভুলে গিয়েছি তাই আল্লাহ আমাদেরকে লাঞ্ছিত করছেন। আমরা মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়েছি এবং দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে এবং দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসে সেক্রেটারি ফেরদৌস আর বকুল ফিলিস্তিনের শিশুদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন ।

এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মানারাত স্কুলের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মুশফেকা রহমান, নারী উদ্যোক্তা হাবিব হাসনাত চৌধুরী, অন্বেষণ স্কুলের সাবেক প্রিন্সিপাল শিউলি খান,বেগম শারমিন সিদ্দিকী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী আফিফা মুশতারী।

ফিলিস্তিনের নির্যাতিত অধিবাসী এবং যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য আবেগঘন পরিবেশে দোয়া পরিচালনা করেন ডাক্তার আমেনা বেগম।

সবশেষে নারী অধিকার আন্দোলনের সেক্রেটারি নাজমুন নাহার সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও দোয়া অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

 

গণপরিবহনে নারীর সুরক্ষায় চালু হলো ‘HELP’ অ্যাপ

 

নারীর সুরক্ষায় প্রযুক্তির আরেকটি অগ্রগতি—‘HELP’ (Harassment Elimination Literacy Program) নামে একটি অ্যাপ চালু হয়েছে যা গণপরিবহনে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে।

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (BJC) এবং সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই অ্যাপের মাধ্যমে নারী যাত্রীরা চলন্ত বাস বা গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারবেন এবং অভিযোগ জানাতে পারবেন।

গত ১৫ মার্চ রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, “অনেক সময় ভুক্তভোগীরা নিপীড়নের ঘটনা জানাতে দ্বিধা বোধ করেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে আসা অভিযোগগুলো এখন থেকে সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “একজন নারী নিপীড়নের শিকার হলে, শুধু সেই নারী নয়—পুরো সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

এই অ্যাপটি প্রাথমিকভাবে ঢাকার বছিলা থেকে সায়েদাবাদ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলেও, দেশের যেকোনো জায়গা থেকে নারী যাত্রীরা এর সেবা নিতে পারবেন।
নারীর নিরাপত্তায় এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী। আশা করা যায়, এই অ্যাপ নারীদের চলাফেরায় নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

 

গাজার সাহসি কণ্ঠস্বর মাহা হুসাইনি

যুদ্ধের ধুলোবালিতে ঢাকা এক জনপদ, যেখানে প্রতিদিন সূর্য ওঠে ধ্বংসস্তূপের ওপরে, যেখানে শিশুর কান্না মিশে যায় বোমার বিস্ফোরণে, যেখানে জীবন মানে এক অনিশ্চিত অপেক্ষা। গাজার সেই অগ্নিগর্ভ মাটিতে, ভয় আর মৃত্যুর মাঝেও কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন সত্যের জন্য। তাদের হাতেই রচিত হয় ইতিহাসের সেই অধ্যায়, যা দুনিয়ার শক্তিমানরা মুছে ফেলতে চায় বারবার।
এমনই এক সাহসি কণ্ঠস্বর মাহা নাজিহ আল হুসাইনি—একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, একজন
মানবাধিকার কর্মী, এক অকুতোভয় কণ্ঠস্বর, যিনি ভয়কে জয় করে বারবার বলেছেন, “আমার কণ্ঠ যদি স্তব্ধ হয়ে যায়, তোমরা চুপ থেকো না!”

মাহা নাজিহ আল হুসাইনি একজন সাহসী ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংবাদ প্রচার করে আসছেন। জন্ম কায়রোতে হলেও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি হামলার সময় থেকে তিনি গাজার ঘটনাবলী কভার করতে শুরু করেন। তার বিশ্বাস, সংবাদ দেখা বা না দেখার ওপর যুদ্ধ থামা-না থামার কোনো সম্পর্ক নেই, বরং সাংবাদিকদের দমন করেই ইসরায়েল গাজার সত্য ঘটনাগুলো আড়াল করতে চায়।

সংবাদ মাধ্যমের শক্তি সম্পর্কে মাহা সচেতন। তিনি জানেন, যে কোনো শাসকগোষ্ঠী খবর ধামাচাপা দিতে প্রচুর শক্তি ব্যয় করে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরাসরি সংবাদ পরিবেশনার ঝুঁকি নেওয়া একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ‘মিডল ইস্ট আই’ ও ‘দ্য নিউ হিউম্যানিটেরিয়ান’-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন এবং ‘ইউরো মেড মনিটর’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

নারী সাংবাদিকদের ভূমিকা বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বজুড়ে আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হলেও, আন্দোলনের পর তাদের ভূমিকা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে। মাহাও ব্যতিক্রম নন। তিনি মার্টিন এডলার পুরস্কার পেয়েছিলেন, আবার ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন সাহসী সাংবাদিকতার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেও তা বাতিল করে, কারণ তার মতামত প্রতিষ্ঠানটির নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল।
এ নিয়ে মাহা বিদ্রূপ করে বলেছিলেন, “সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দিল, কিন্তু চাপের মুখে নিজেরাই সাহস হারিয়ে ফেলল!”

তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। বিশেষ করে হামলার কারণে বেড়ে যাওয়া আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে তার গবেষণা ছিল আলোচিত। তিনি দেখিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্দিত্ব, পরিবার হারানো ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসবাসের ফলে বহু ফিলিস্তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এ প্রসঙ্গে প্রমথ চৌধুরীর উক্তি মনে পড়ে, ‘দেহের মৃত্যুর রেজিস্টার রাখা হয়, আত্মার হয় না।’

মাহা মনে করেন, সাংবাদিকতা তার কাছে শুধু পেশা নয়, বরং ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার একমাত্র উপায়। তিনি বারবার বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দেন, যদি তার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়, তবে বাকিরা যেন নীরব না থাকে, বরং প্যালেস্টাইনের মুক্তির জন্য আওয়াজ তুলতে থাকে।
যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে মাহা বলেছেন, ‘আমি আমার জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে রাজি, শুধু এই একটি মুহূর্তের জন্য—শুভ সকাল গাজা।’

ইতিহাস হয়তো তার মতো সাংবাদিকদের ভুলে যাবে, কিন্তু মাহা লড়ে যাচ্ছেন, সত্য প্রকাশের জন্য, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যই এবারের মূল বার্তা

 

৭ এপ্রিল, রোববার—বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য— ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’—এই স্লোগানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যের উপর।

বাংলাদেশে এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য খাতে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, গণ-আন্দোলন পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব এবং শিশুদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তিনি উল্লেখ করেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হারের বর্তমান চিত্র এখনো উদ্বেগজনক, যা আমাদের উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। এজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৫ সালে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)-র আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

এদিকে, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে দেশে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের এই দিনে(৭এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকেই দিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য ইস্যুকে সামনে রেখে দিবসটির আয়োজন করা হয়, যার উদ্দেশ্য বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

 

বিশ্ব থেমে গেল গাজার জন্য

 

৭ এপ্রিল ২০২৫, বিশ্ব সাক্ষী হলো এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচির — ‘The World Stops for Gaza’। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে সারাবিশ্বে বিভিন্ন স্তরে পালিত হচ্ছে এই কর্মসূচি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত—সব জায়গাতেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একটাই বার্তা: “গাজা বাঁচাও, মানবতা বাঁচাও।”
শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট, প্রতিবাদ, সমাবেশ এবং কার্যক্রম বন্ধ রেখে তারা জানিয়ে দিয়েছে—“গাজা নিঃসঙ্গ নয়”।

বাংলাদেশেও এই আন্দোলনের স্পষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ঢাকার রাজপথ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সামাজিক মাধ্যমে আজকের দিনজুড়ে গাজার প্রতি সংহতির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ধর্মঘট পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের এ মানবিক অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোট (PUSAB) উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আয়োজন করে। এছাড়াও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, চুয়েটসহ একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও নীরব প্রতিবাদে অংশ নেয়।

এছাড়া;বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ ঢাকায় ‘গাজা বিষয়ক সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ’ কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনটি গাজায় চলমান গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায়।
ইসলামী ছাত্রশিবির ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানায়। শিবিরের বিভিন্ন ইউনিট আজ র‍্যালি, লিফলেট বিতরণ ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আগামীকাল ৮ এপ্রিল দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
ফিলিস্তিনে আজ পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বহু দেশে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণগ্রেফতার এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। গাজার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।

‘The World Stops for Gaza’ কর্মসূচি যেন এক নতুন প্রতিবাদের ভাষা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসী গাজার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে, শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জবাবদিহির দাবি তুলেছে।

মানবতার জন্য, শান্তির জন্য, এবং নিষ্পেষিত মানুষদের জন্য—আজ থেমে গেছে বিশ্ব। এবং এই থেমে যাওয়া যেন হয়ে উঠেছে আরও শক্তভাবে এগিয়ে চলার প্রেরণা।

 

ফ্রাঙ্কা ভিওলা: নীরবতার দেয়াল ভেঙে যিনি আইন বদলালেন

 

১৯৬৫ সাল, ইতালির সিসিলির ছোট শহর আলকামো। মাত্র ১৭ বছরের কিশোরী ফ্রাঙ্কা ভিওলাকে অপহরণ করে তার সাবেক প্রেমিক ফিলিপ্পো মেলোদিয়া। দিনের পর দিন আটকে রেখে চলে বর্বর যৌন নির্যাতন। উদ্দেশ্য একটাই—ফ্রাঙ্কাকে বিয়ে করে ধর্ষণের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

কারণ তখন ইতালির আইনে ধর্ষণকে ‘ব্যক্তিগত অপরাধ’ হিসেবে নয়, ‘নৈতিকতার লঙ্ঘন’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ফলে ধর্ষক যদি ধর্ষিতাকে বিয়ে করত, তবে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকত না, শাস্তিও হতো না।

কিন্তু ফ্রাঙ্কা ভিওলা সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করেননি। সামাজিক রীতি, ভয় ও লজ্জার দেয়াল ভেঙে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে মামলা করেন মেলোদিয়ার বিরুদ্ধে। তার পাশে ছিলেন তার পরিবার। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর ফিলিপ্পো মেলোদিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং তার সহযোগীদের ৪ বছর করে শাস্তি দেওয়া হয়। মেলোদিয়া ১৯৭৬ সালে কারামুক্ত হলেও, ১৯৭৮ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

ফ্রাঙ্কার এই সাহসী অবস্থান কেবল ইতালিকেই নাড়িয়ে দেয়নি, বদলে দিয়েছে আইনের ধারা। তবে পুরোপুরি বদল আসতে সময় লেগেছে। ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে করলে দায় মাফের আইন বাতিল হয় ১৯৮১ সালে। আর ১৯৯৬ সালে ধর্ষণকে ‘নৈতিকতা বিরোধী’ নয়, ‘ব্যক্তির প্রতি অপরাধ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইতালির আইন।

বর্তমানে ফ্রাঙ্কা ভিওলা ৭৭ বছর বয়সী। ১৯৬৮ সালে তিনি জিউসেপ্পে রুইজি নামের একজনকে বিয়ে করেন। এখনো আলকামোতেই বসবাস করছেন, তিন সন্তান নিয়ে গড়ে তুলেছেন এক শান্ত, সম্মানিত জীবন।

সূত্র: BBC, The Guardian, Wikipedia

 

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নারী গ্রেফতার, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র: ইফতার করতে বের হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) এজেন্টদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তুরস্কের ডক্টরাল শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ক। তার গ্রেফতারের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দেখা গেছে।

২৫ মার্চ ২০২৫, ম্যাসাচুসেটসের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ককে সাদা পোশাকধারী ICE এজেন্টরা কোনো ওয়ারেন্ট বা আনুষ্ঠানিক কারণ না দেখিয়েই গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টা ধরে তার অবস্থান অজানা ছিল। পরে জানা যায়, তাকে ১,৫০০ মাইল দূরের লুইজিয়ানার বাসিলের এক আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এই স্থানান্তর আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী, যেখানে বলা হয়েছিল তাকে ম্যাসাচুসেটসেই রাখা হবে।

ICE কর্তৃপক্ষ বলছে, ওজতুর্ক হামাসকে সমর্থন করেছেন, যদিও তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। ওজতুর্কের সহপাঠী ও সহকর্মীরা জানান, তিনি শুধুমাত্র প্রো-প্যালেস্টাইন মতবাদ সমর্থন করতেন এবং কিছু মতামত প্রকাশ করেছিলেন, যা কোনোভাবেই বেআইনি ছিল না।

রুমেইসা ওজতুর্কের গ্রেফতারের প্রতিবাদে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে।

ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া ক্যাম্পবেল এই গ্রেফতারকে “বিরক্তিকর” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, “এটি স্পষ্টতই রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণে একজনকে লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও প্রো-প্যালেস্টাইন সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অংশ। তারা অবিলম্বে ওজতুর্কের মুক্তি দাবি করেছে।

 

দেশে দেশে ঈদ উদযাপন

 

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটো ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করে নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অভ্যস্ততা অনুযায়ী। যদিও ঈদে কিছু মৌলিক আচার এবং প্রথা পৃথিবীজুড়ে এক থাকে, তবে প্রতিটি দেশের ঈদ উদযাপনের ধরন ও আয়োজন আলাদা। ঈদ সাধারণত আনন্দ, কৃতজ্ঞতা এবং পরিবারের সাথে একত্রিত হওয়ার দিন।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ঈদ কেমনভাবে উদযাপিত হয়।

বাংলাদেশে ঈদ
বাংলাদেশে ঈদ বিশাল উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। ঈদের সকালে সবাই নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে যান। পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে কোলাকুলি করে এবং ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ দিনে বাঙালি পরিবারের বাড়িতে নানা ধরণের মজাদার খাবার প্রস্তুত হয়, যার মধ্যে সেমাই, কোরমা, বিরিয়ানি, খিচুড়ি ইত্যাদি জনপ্রিয়। ছোটরা ঈদ সালামি পেয়ে থাকে এবং ঈদের দিনটি পারিবারিক মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সৌদি আরবে ঈদ
সৌদি আরবেও ঈদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। সেখানে ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি উপহার পাঠানো এবং গরীবদের সহায়তা করা একটি প্রচলিত রীতি। মুসলিমরা সকালে ঈদের নামাজ পড়েন এবং তার পর নানা ধরণের মিষ্টান্ন ও খাবারের আয়োজন হয়। বিশেষ করে, মুগলগাল, ঘুরাইবাহ ও জেরিশ খেতে পছন্দ করেন তারা। সৌদিরা মিষ্টি খাবারের জন্য ‘মিষ্টি ঈদ’ হিসেবেও পরিচিত।

ভারত ও পাকিস্তানে ঈদ
ভারত এবং পাকিস্তানে ঈদ উদযাপনের আচার বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে অনেকটা মেলে। এখানে সাধারণত ঈদের নামাজের পর পরিবারের সঙ্গে উপহার বিনিময়, মিষ্টি খাবার খাওয়া এবং ঈদ সালামি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। খাবারের মধ্যে মাংস, পোলাও, রুটি এবং পরোটা থাকে। এই দুই দেশেই ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকে, এবং অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।

তুরস্কে ঈদ
তুরস্কে ঈদ ‘সেকের বায়রাম’ নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘চিনির উৎসব’। এখানে ঈদ সাধারণত পরিবারের মধ্যে সমবেত হয়ে উদযাপিত হয়। তুর্কিরা একে অপরকে ‘বায়রামিনিজ মুবারেক ওলসুন’ বা ‘বায়রামিনিজ কুতলু ওলসুন’ বলে শুভেচ্ছা জানায়। খাবারের মধ্যে মাংস, পোলাও এবং পিঠা প্রধান, এবং সারা দেশজুড়ে অনেক ঐতিহ্যগত আনন্দের আয়োজন থাকে।

নাইজেরিয়ায় ঈদ
নাইজেরিয়ায় ঈদ অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সবাই সকাল বেলা মসজিদে জামায়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করে। নাইজেরিয়ার মুসলিমরা প্রায়ই একে অপরকে উপহার দেয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘জেলা ফ্রাই রাইস’, ‘মাংসের শুয়া’, এবং ‘পটেটো স্যালাড’ খায়। এখানে স্থানীয় ভাষায় ‘ইদুল ফিতর’ বলা হয় এবং দিনটি সপরিবারে ঘর সাজানো আর উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়।

মিশরে ঈদ
মিশরের ঈদ উদযাপনটি মূলত পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একত্রিত হয়ে খাবার খেয়ে এবং আনন্দ উদযাপন করে। তারা সাধারণত ‘ফাত্তার’ নামক একটি বিশেষ খাবার তৈরি করে, যা ভাত, মাংস এবং রুটি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। মিশরে ‘কুনাফা’ নামক একটি মিষ্টান্ন খাওয়া হয় যা অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিশুদের নতুন জামাকাপড় দেওয়া এবং উপহার দেওয়া এই দেশে একটি প্রচলিত রীতি।

ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ ‘লেবারান’ নামে পরিচিত। এখানে সবাই ঈদের আগের দিনগুলিতে ঈদের প্রস্তুতিতে নিতে ব্যস্ত থাকে, আর লোকজন শপিং মলগুলিতে ভিড় করে। ইন্দোনেশিয়ার বিশেষ খাবারের মধ্যে ‘ল্যাপিস লেজিট’ কেক এবং ‘এস টেম্বাক’ মাংস থাকে। ঈদের দিন, পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে উপহার বিনিময় করে, দয়া ও সহানুভূতি পরিপূর্ণ পরিবেশে দিনটি উদযাপন করে।

আরব আমিরাতে ঈদ
আরব আমিরাতে ঈদ অনেকটাই সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পূর্ণ। ‘ওউজি’ নামে একটি বিশেষ খাবার এ দিনে জনপ্রিয়, যা ছাগলের মাংস ও ভাতের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয়। অন্যান্য খাবারের মধ্যে পাইন বাদামও রয়েছে। এছাড়াও, আমিরাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ম্যাজিক শো সহ নানা ধরনের বিনোদনমূলক আয়োজন করা হয়।

মালয়েশিয়ায় ঈদ
মালয়েশিয়ায় ঈদ উদযাপনের আগের দিনটি বেশ ব্যস্ত থাকে। পরিবারগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন কেটুপাট, কুইহ রায়া, লেমাং, এবং রেন্ডিং প্রস্তুত করে। ঈদে ‘উন্মুক্ত ঘর’ নামক একটি ঐতিহ্য প্রচলিত যেখানে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে এবং আনন্দে মেতে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ
যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে বহু সংস্কৃতি মিশ্রিত, মুসলিমরা ঈদ উদযাপন করেন মসজিদে নামাজ পড়ে এবং এরপর পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে উপহার বিনিময় করে। এখানে অনেক মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস প্রকল্পে অংশ নেয় এবং গরিবদের সাহায্য করে। এই দেশের বড় শহরগুলোতে ঈদ উদযাপন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাবারের স্টল এবং শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে।

আইসল্যান্ডে ঈদ
আইসল্যান্ডে মুসলমানরা একটি ছোট সম্প্রদায় হলেও ঈদ উদযাপনটা বেশ আনন্দমুখর হয়। এখানে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন খাবার উপভোগ করে। শিশুরা নতুন পোশাক পরিধান করে এবং উপহার বিনিময় করে।

ঈদ উদযাপন পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ আমাদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং বন্ধন শক্তিশালী করার একটি দিন। আমরা যেখানে থাকি না কেন, ঈদ আমাদের মধ্যে ঐক্য এবং সমবেত আনন্দের এক অনবদ্য অনুভূতি সৃষ্টি করে।
সবার ঈদ আনন্দময় ও সফল হোক, ঈদ মোবারক!

 

ঈদ তো সবার জন্য!

 

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। এক মাস রোজার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর, যে দিনটিতে সবাই নতুন জামা পরে, সুস্বাদু খাবার খায়, পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়। কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির মানুষের জন্য ঈদ যেন আরেক রকম কষ্টের নাম। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা, যারা দিনরাত পরিশ্রম করেও নিজেদের আর পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন না। তাদের কাছে ঈদ মানেই নতুন দুশ্চিন্তা—কীভাবে একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবেন, কীভাবে ছেলেমেয়েদের ছোট্ট একটা চাহিদা পূরণ করবেন।

“সারাদিন কষ্ট করি, তবু ঈদে নতুন শাড়ি জোটে না”
কল্পিত চরিত্র: সন্ধ্যা বেগম(পোশাক কারখানার কর্মী)
সন্ধ্যা বেগম শহরের এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ছোট ছেলেকে পাশের বাসায় রেখে কাজে যান, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। সামান্য বেতনের এই চাকরিটাই তার সংসারের একমাত্র ভরসা। ঈদ আসছে, সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত, অথচ সন্ধ্যা জানেন, এবারও তার নিজের জন্য নতুন শাড়ি কেনার সামর্থ্য হবে না।
‘সারাদিন কষ্ট করি, কিন্তু নিজের জন্য কিছু রাখতে পারি না। মাইয়ারে একটা জামা কিনে দিছি, এইটাই শান্তি। নিজের কথা ভাবার সময় কই!’—বলতে বলতে তার চোখে পানি এসে যায়।

“ঈদে ছেলেটারে ভালো কিছু খাওয়াইতে পারমু কিনা জানি না”
কল্পিত চরিত্র: রোকেয়া খাতুন (গৃহপরিচারিকা)
রোকেয়া খাতুন মানুষের বাসায় কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রান্না-বান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা—এভাবেই তার দিন কাটে। তিনি জানেন, যাদের বাসায় কাজ করেন, তারা ঈদের দিন ভালো খাবার খাবেন, নতুন জামা পরবেন। কিন্তু তার নিজের ছেলের জন্য ভালো কিছু রান্না করতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই তার চিন্তা।
‘ঈদের দিন আমার ছেলেটা আশা করে ভালো কিছু খাবো, কিন্তু কয়দিন ধইরা হিসাব কইরা দেখতাছি, পারমু কিনা জানি না। নিজের জন্য তো ভাবি না, শুধু ওর মুখের দিকে তাকাই।’

“ঘরের চাল ঠিক করার টাকা নাই, ঈদ কেমনে করমু?”
কল্পিত চরিত্র: শাহিদা বেগম (ইটভাটার শ্রমিক)
শাহিদা বেগম কাজ করেন ইটভাটায়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা পান, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তার ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে, বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয়। ঈদের দিন নতুন কাপড় কেনার স্বপ্ন তার নেই, বরং চিন্তা একটাই—ঘরের চালটা মেরামত করতে পারবেন কি না।
‘আমাগো ঘরে হুরকা বাতাস আইলেই পানি পড়ে, এইটা ঠিক করার টাকা জমাইতে পারি না। আবার ঈদ নিয়া ভাবমু কেমনে! ঈদ তো কেবল পয়সাওয়ালাদের জন্য।’

আমরা কি পারি না তাদের মুখে হাসি ফোটাতে?
ঈদ মানে শুধু নিজের আনন্দ না, বরং সবার মাঝে সেই আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু আমাদের আশেপাশের এসব সুবিধা বঞ্চিত নারীরা বছরের পর বছর পরিশ্রম করেও ঈদের দিনে একটু সুখের মুখ দেখেন না। তাদের কাছে ঈদ আসে, কিন্তু আনন্দ নিয়ে আসে না।
আমরা যদি একটু সহমর্মিতা দেখাই, তবে তাদের ঈদটাও আনন্দময় হতে পারে। কেউ যদি একজোড়া নতুন জামা কিনে দেয়, কেউ যদি এক প্লেট ভালো খাবার ভাগ করে নেয়, তবেই হয়তো তাদের মুখে একটু হাসি ফুটবে। ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণ হবে, যখন এই শ্রমজীবী নারীরাও বলবেন—‘আমাগোও ঈদ আছে!’