banner

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: April 23, 2025

 

সংগ্রামী বিলকিস বেগম পেলেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’

 

জীবনের চরম সংকটময় মুহূর্তে ভেঙে না পড়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন রাজশাহীর বিলকিস বেগম। সংসার ও স্বামীকে বাঁচানোর সংগ্রামে তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী, তৈরি করেছেন নতুন পথ। তাঁর এই অদম্য সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান’ ক্যাটাগরিতে তিনি পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি কারিগরপাড়া গ্রামের এই নারীর জীবন ছিল এক কঠিন পরীক্ষার মতো। স্বামী রশিদ খাঁ অসুস্থ হয়ে পড়েন, পা ভেঙে শয্যাশায়ী হন। সংসারের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে পাহাড়সম ঋণের বোঝা চেপে বসে তাঁদের পরিবারে। ১৭টি এনজিওর কাছে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ টাকা। টানাপোড়েনের মধ্যে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নিজেদের আবাদি জমি বন্ধক রাখতে হয়।
কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিলকিস বেগম হার মানেননি। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির কৌশল শিখে নতুন জীবনের সূচনা করেন তিনি। ধীরে ধীরে এই কাজে দক্ষতা অর্জন করে নিজের আয়ের পথ গড়ে তোলেন। নিজের উপার্জনে স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধ করেন এবং শেষ পর্যন্ত হারানো জমিও ফিরে পান। এখন তাঁর মাসিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা।

নারীর ক্ষমতায়নের এই অসাধারণ দৃষ্টান্তকে স্বীকৃতি জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অদম্য নারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। গত ১১ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

এই বছর রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা থেকে ৩৯ জন নারীকে মনোনীত করা হয়েছিল, যাঁদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বিলকিস বেগম ছাড়াও পুরস্কার পেয়েছেন আরও চারজন সংগ্রামী নারী। অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য নওগাঁর সাপাহারের সেফালী খাতুন, শিক্ষা ও চাকরিতে সাফল্যের জন্য সিরাজগঞ্জের চৌহালীর আয়শা সিদ্দিকা, সফল জননী হিসেবে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের লাইলী বেগম এবং নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করার জন্য নওগাঁ সদরের শাবানা বানু এই সম্মাননা অর্জন করেছেন।

এই সম্মাননা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বীকৃতি নয়, বরং সমাজের সকল নারীর জন্য এক অনুপ্রেরণা। কঠিন পরিস্থিতিতেও নারীরা যদি সাহস করে এগিয়ে যান, তবে তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন-এই বার্তাই ছড়িয়ে দিলেন বিলকিস বেগম ও তাঁর মতো আরও অদম্য নারীরা।

 

স্বাস্থ্যকর ও হালকা ইফতার রেসিপি

 

ইফতার মানেই সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তি আনার মুহূর্ত। স্বাস্থ্যকর ও হালকা খাবার ইফতারে গ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।
নিচে তিনটি সহজ ও পুষ্টিকর ইফতার রেসিপি দেওয়া হলো, যা সুস্বাদু ও উপকারী। এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং হজমে সহায়ক হবে।

দই-চিড়া
দই-চিড়া একটি হালকা ও সহজপাচ্য খাবার, যা দ্রুত শক্তি জোগায়। এটি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সহায়ক।
উপকরণ:
১ কাপ চিড়া
½ কাপ মিষ্টি দই
১ টেবিল চামচ মধু বা চিনি
১টি কলা (ঐচ্ছিক)
প্রস্তুত প্রণালী:
১. চিড়া ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. একটি বাটিতে দই, চিনি/মধু ও চিড়া মিশিয়ে নিন।
৩.চাইলে এর সাথে টুকরো করে কাটা কলা মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

ছোলার সালাদ
ছোলা প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং সহজে হজম হয়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ইফতার আইটেম।
উপকরণ:
১ কাপ সিদ্ধ ছোলা
১টি ছোট টমেটো (কুচি করা)
১টি শসা (কুচি করা)
১টি পেঁয়াজ (কুচি করা)
১ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি
১ চা চামচ লেবুর রস
½ চা চামচ চাট মসলা
পরিমাণমতো লবণ

প্রস্তুত প্রণালী:
সব উপকরণ একটি বাটিতে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।মিশ্রণটি ৫-১০ মিনিট রেখে দিন, যাতে স্বাদ ভালোভাবে মিশে যায়।ঠান্ডা বা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবেশন করুন।

ঠান্ডা শরবত
ইফতারে ঠান্ডা শরবত শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রশান্তি এনে দেয়। এটি সহজেই তৈরি করা যায় এবং তৃষ্ণা নিবারণে দারুণ কার্যকর।
উপকরণ: (তরমুজের শরবত)

১ কাপ তরমুজের রস বা ২ টেবিল চামচ
১ গ্লাস ঠান্ডা পানি
১ টেবিল চামচ মধু
১ চিমটি বিট লবণ (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালী:
তরমুজ ব্লেন্ড করে ছেঁকে রস বের করুন, এর সাথে ঠান্ডা পানি, মধু ও বিট লবণ মিশিয়ে নিন।
ভালোভাবে নেড়ে আইস কিউব দিয়ে পরিবেশন করুন তরমুজের শরবত।

স্বাস্থ্যকর ইফতার আপনাকে সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উজ্জীবিত রাখবে। এসব সহজ ও পুষ্টিকর খাবার ইফতারে যুক্ত করে সুস্থ থাকুন!

 

সৈয়দা তাহিয়া হোসেন:কর্মজীবনে নারীর সফলতা ও আত্মনির্ভরতার গল্প

 

কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে দক্ষতা অর্জন ও কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এই বিশ্বাসকে সামনে রেখে এগিয়ে গেছেন সৈয়দা তাহিয়া হোসেন, যিনি বর্তমানে গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (CHRO)। তাঁর পেশাগত যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, তখনও তাঁর স্নাতক শেষ হয়নি। ব্যবসায়ী বাবার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও বাবা তাঁকে আগে অন্য কোথাও কাজ শেখার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি চাকরির খোঁজ শুরু করেন এবং প্রথম কাজ পান একটি ডাচ চকলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ এইচআর ক্যারিয়ারের পথচলা।

মানুষের সঙ্গে কাজ করার প্রবল আগ্রহ থেকেই তাহিয়া মানবসম্পদ বিভাগে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ইন্টারভিউ বোর্ডে তিনি বলেছিলেন, “আমি মানুষের জন্য, মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই।” এই কথার প্রতিফলন তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে দেখা গেছে। চাকরির শুরুতেই ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পরামর্শে তিনি এইচআর বিভাগে কাজ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তাহিয়া বিশ্বাস করেন, ব্যবসার পাশাপাশি কার্যকর এইচআর প্র্যাকটিস সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, শেখার প্রক্রিয়া থেমে গেলে ক্যারিয়ারে উন্নতি করা সম্ভব নয়।

একজন দক্ষ নেতা হিসেবে তাহিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহমর্মিতা ও ভারসাম্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ও সমতা রক্ষা করা জরুরি। অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের পক্ষে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

ডিজিটাল যুগে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। তাহিয়া মনে করেন, শুধুমাত্র টেলিকম খাতের চিন্তাধারা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়; বরং টেকনোলজির সাথে একীভূত হয়ে কাজ করতে হবে। নতুন স্কিল অর্জনের পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাহিয়ার মতে, এটি একটি বিশাল পরিবর্তন, যেখানে নতুন ট্যালেন্টের সাথে কাজ করার পাশাপাশি পুরোনো কর্মীদেরও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে।

নারীদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরিতে গ্রামীণফোন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাহিয়া বলেন, গ্রামীণফোনে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না; যোগ্যতার ভিত্তিতেই সবাই সম্মান পান। একসময় ম্যানেজমেন্ট টিমে একমাত্র নারী সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বিশ্বাস করেন, নারীদের চিন্তাভাবনায় স্বতন্ত্রতা থাকে, যা ব্যবসায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

নারীদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা। তাহিয়া মনে করেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নারীদের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে যে, তারা কী চান এবং কীভাবে তা অর্জন করা সম্ভব। অফিসে একজন নারীর নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে জায়গা তৈরি করতে হয়, যা কখনো কখনো কঠিন হলেও, সেটাই তাদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করে। তাহিয়া বিশ্বাস করেন, “কাজের ওনারশিপ না দিলে নারীরা পিছিয়ে পড়বেন।”

তাহিয়া হোসেনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর বাবা। তাঁর বাবা সবসময় তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে শিখিয়েছেন। বাবার ব্যবসায় কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও তিনি প্রথমে চাকরির মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। চার বছর পর যখন বাবা তাঁকে নিজ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেন, তাহিয়া তখন জানান, তিনি নিজের ক্যারিয়ার এখানে গড়তে চান। এই সিদ্ধান্তই তাঁকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

সৈয়দা তাহিয়া হোসেনের জীবনগল্প প্রমাণ করে যে, কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও নিরলস পরিশ্রম অপরিহার্য। নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ তৈরি করতে হলে তাদের নিজেদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা রাখতে হবে। তাহিয়ার মতো নারীরা যখন নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হন, তখন এটি অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

 

অক্ষমতা নয়, অদম্য ইচ্ছাই শক্তি: জেসিকা কক্সের গল্প

 

পাইলট মানেই ককপিটে তীক্ষ্ণ নজর, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং ধৈর্যের পরীক্ষা। সাধারণত দুই হাতের সহায়তায় এই কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু জেসিকা কক্স প্রমাণ করেছেন, শুধু পায়ের ব্যবহার করেও একজন দক্ষ পাইলট হওয়া সম্ভব।

দুই হাত ছাড়া জন্ম নেওয়া জেসিকা শুধু উড়োজাহাজই চালান না, তিনি একজন সার্টিফায়েড স্কুবা ডাইভার এবং মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্টধারীও। অক্ষমতাকে কখনোই প্রতিবন্ধকতা মনে করেননি তিনি। ১৪ বছর বয়সের পর থেকে কৃত্রিম হাত ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পায়ের মাধ্যমেই সব কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে থাকেন।

জেসিকার পাইলট হওয়ার যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের রোটারি ক্লাবের এক আলোচনা সভায় রবিন স্টোড্ডার্ড তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি প্লেন চালাতে চান?’ পাশে থাকা জেসিকার বাবা সেদিন সোজা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ’। এরপর অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক করা জেসিকা শুরু করেন পাইলট হওয়ার প্রস্তুতি।

জেসিকা কক্স ৩৫ বছর বয়সের মধ্যেই দক্ষ যুদ্ধবিমানের চালক হয়ে ওঠেন। তাঁর জীবনদর্শন স্পষ্ট:“আমি কখনো বলি না, আমি এটা করতে পারব না। শুধু বলি, আমি এখনো এ বিষয়ে কাজ করছি।”
এই মানসিকতার জোরেই তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসধারী বিশ্বের প্রথম লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাহুবিহীন পাইলট হয়েছেন।

২০১২ সালে তিনি প্যাট্রিককে বিয়ে করেন। বিয়েতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান তিনজন হাতবিহীন ব্যক্তিকে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, “হাত না থাকলে জীবন অর্থহীন হবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। হাতবিহীন ব্যক্তিরাও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।”

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে থাকা জেসিকা কক্স এর অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রকল্প ছিল ‘লাইফ উইদ ফিট’ নামক ইউটিউব চ্যানেল। এটি প্রথম দুই বছরে এক মিলিয়ন ফলোয়ার অর্জন করে।
এরপরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘রাইটফুটেড ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল’, যা পরবর্তী সময়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। তাঁর জীবনীভিত্তিক বই ‘Disarm Your Limits’ এবং তাঁকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ১৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে।

জেসিকা কক্স কেবল একজন সফল পাইলটই নন, তিনি দুনিয়াজুড়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছেন। তাঁর গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয়, মানুষের মানসিকতা ও ইচ্ছাশক্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

নারী অধিকার আন্দোলনের বিক্ষোভ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিচারহীনতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে অপরাধীরা এসব জঘন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন নারী অধিকারকর্মীরা। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৩মার্চ(বৃহস্পতিবার) মানববন্ধন করে নারী অধিকার আন্দোলন।

মানববন্ধনে নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মান্নান বলেন, আজ নারীরা নিরাপদ নয়। ধর্ষণের ঘটনায় দেশবাসী ক্ষুব্ধ, আমরাও মর্মাহত। বিচার দ্রুত কার্যকর না হওয়ায় অপরাধের হার বেড়ে চলেছে। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত ও কঠোর শাস্তি কার্যকরের দাবি জানাই।

নারী অধিকার নেত্রী নাজমুন্নাহার বলেন, গত ১৭ বছরে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে বহু নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, কিন্তু বেশিরভাগ ঘটনার বিচার হয়নি। জনসম্মুখে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না।

বিশিষ্ট লেখিকা নুরুন্নাহার খানম বলেন, আগে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটত, কিন্তু কঠোর শাস্তির কারণে তা কমে গেছে। ধর্ষকদেরও একইভাবে কঠোর ও প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে অপরাধের হার হ্রাস পাবে।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যাপক আফিফা মুশতারী বলেন, এই অপরাধের বিচার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমরা চাই দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হোক।

সম্প্রতি ঝিনাইদহে হিজাব পরিহিত নারীদের ওপর হামলা এবং শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনায় মানববন্ধনে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রীরা ৯০ দিনের মধ্যে এসব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

মানববন্ধনে প্রস্তাবিত দাবিসমূহ
১. নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২. দোষী ব্যক্তিদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে যথা সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সরকার পদক্ষেপ নেবেন। সেক্ষেত্রে শরীয়াহ আইনে বিচার করা যেতে পারে। কঠোর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করতে হবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. শামসুন্নাহার লাকি, বিশিষ্ট লেখিকা নুরুন্নাহার খানম নীরু, শিক্ষিকা ফারহানা সুমাইয়া মিতু, সৈয়দা শাহীন আকতার, আসিফা সিদ্দিকা, কোহিনূর ইয়াসমিন লিপি, বিশিষ্ট সমাজসেবী মর্জিনা খাতুন, বিশিষ্ট শ্রমিক নেত্রী কামরুন্নাহার প্রমুখ।

নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন শেষ হয়।
তথ্যসূত্র ঃকালবেলা