banner

বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: March 11, 2025

 

নারী জাতির প্রতি সম্মানের এক অবিস্মরনীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল যে জাতি!

🔘নারী জাতির প্রতি সম্মানের এক অবিস্মরনীয় ইতিহাস রচনা করেছিল যে জাতি , তার  গৌরবময় পরিচয় আজ কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেছে সে সোনালী অতীত, সে স্বর্নালী-বর্নালী মর্যাদাবান মানুষগুলো!
🔘আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা -ইসলামের ইতিহাসে একজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
নারী অনাত্মীয় হলেও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা ও সৌন্দর্য। তার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকা সকলের দায়িত্ব। ইসলাম নারীদের অধিকারকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যে ইসলামের ইতিহাসে নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘঠিত হওয়ার ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ‘বনু কাইনুকা’ নামের একটি গোত্রের সঙ্গে।
একজন সাহাবি তার মুসলিম বোনের সম্ভ্রম রক্ষায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।
🔘মদীনায় বনু কাইনুকা ছিল ইহুদিদের তিনটি গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টপ্রকৃতির একটি গোত্র। পেশার দিকে থেকে তারা ছিল স্বর্ণকার, কর্মকার ও পাত্র নির্মাতা।
আবু আওন থেকে ইবনে হিশাম ঘটনাটি যেভাবে বর্ণনা করেছেন-
একদিন জনৈকা মুসলিম নারী বনু কাইনুকা গোত্রের বাজারে দুধ বিক্রি করে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে এক ইহুদি স্বর্ণকারের দোকানে গিয়েছিলেন।
সেখানে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ইহুদি তাঁর মুখের নেকাব খোলানোর অপচেষ্টা করে, ওই নারী এতে অস্বীকৃতি জানান। ওই স্বর্ণকার গোপনে মুসলিম নারীটির (অগোচরে) পরিহিত বস্ত্রের পেছন দিক থেকে এক প্রান্তে পিঠের ওপরে গিঁট দিয়ে দেয়, এতে করে তিনি বসা থেকে উঠতে গিয়ে বিবস্ত্র হয়ে পড়েন।ভদ্র মহিলাকে বিবস্ত্র করে নরপিশাচের দল আনন্দে করতালি দিচ্ছিল। মহিলাটি ক্ষোভ ও লজ্জায় আর্তনাদ করতে থাকেন। সেটা শুনে জনৈক (প্রতিবাদী) মুসলিম ওই স্বর্ণকারকে আক্রমণ করে হত্যা করেন। প্রত্যুত্তরে ইহুদিরা মুসলিম লোকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে হত্যা করে।
এরপর নিহত মুসলিম ব্যক্তির পরিবার ইহুদিদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের কাছে বিচার চাইলে এর ফলে মুসলিম ও বনু কাইনুকার ইহুদিদের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
🔘 রাসূল সাঃ এর আগে এ গোত্রের অনেক অপরাধ ক্ষমা করেছিলেন কিন্তু এ ঘটনার পর রাসুল (সা.)-এর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় তিনি মদিনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবু লুবাবাহ ইবনে আবদুল মুনজির (রা.)-এর ওপর অর্পণ করে হযরত হামজাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর হাতে মুসলিমদের পতাকা প্রদান করে সৈন্য বাহিনী নিয়ে বনু কাইনুকা গোত্রকে শায়েস্তা করতে এগিয়ে যান।ইহুদিরা মুসলিমদের ভয়ে দূর্গের ভেতর আশ্রয় গ্রহণ করে দূর্গের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠিনভাবে তাদের দুর্গ অবরোধ করেন।
প্রায় ১৫ দিন সে গোত্রের দূর্গ অবরোধ করে রাখার পর তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অবশেষে আত্মসমর্পন করলে তাদের সকলকে বন্দি করা হয়। (সূত্রঃসিরাত ইবনে হিশাম )
এ হচ্ছে যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ।
🔘রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় এ ঘটনা প্রমান করে যে ইসলাম নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার প্রতি কতটা গুরুত্ব দিয়েছে।যার কারনে নিজেদের মধ্যেতো নয়ই কোন কাফের বেঈমানরা পর্যন্ত নারীদের উপর ফুলের টোকাটা দেবারও সাহস পায়নি কখনো!
দুঃখ জনক বিষয় ! আজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ,পবিত্র রমাদান মাসে আমাদের নারী ও শিশুরা তাদের ঘরেও নিরাপদ নয়। কোন্ পশুত্বের সমাজে আমাদের বসবাস!
জাহেলিয়াতকেও হার মেনে গেছে! ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা গিয়েছে শিশু পর্নোগ্রাফি (CSAM) সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় অবস্থানে আছে ,অর্থাৎ আমাদের দেশ থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি সার্চ করা হয় অনেক বেশী , আবার এসবের ভিডিও পাঠানো হয় । আমাদের রুচিবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে ! এ অস্লীলতার সয়লাবে এ সমাজে এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধা থেকে ২ বছরের শিশুরাও মোটেই নিরাপদ নয় ।
🔘শুধু আইন করে নয় , আইনের কঠোর ও তড়িৎ বাস্তবায়ন যেমন জরুরী তেমনি সমস্যার সাময়িক সমাধান নয় এর কার্য-কারণ সম্পর্কের দিকে গভীরে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন! আমরা দেখেছি ২০২০ সালে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করেও ধর্ষণ কমানো সম্ভব হয়নি।
আসলে দীর্ঘ সময় ধরে সমাজটা পঁচে গিয়ে এখন দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চতুর্দিকো।
🔘প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কীয় কারিকুলামের ঘাটতির সাথে সাথে সমাজে পারিবারির শিক্ষা , সচেতনতা, নীতি- নৈতিকতার শিক্ষা, আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা, দ্বীনি পরিবেশ মেইন্টেন করা-
সমাজের উপর মহল থেকে শুরু করে নীচের মহল সর্বত্র এর দারুন অভাব বোধ হচ্ছে।
আমরা আমাদের সমাজে আর একটি আছিয়াকেও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দেখতে চাই না। আসামীদের বিচারের মাধ্যমে দ্রুত মৃত্যুদন্ড কার্যকর দেখতে চাই।

-সাবিকুন্নাহার_মু্ন্নী
১০ মার্চ , ২০২৫ইং.