banner

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: March 11, 2025

 

এস্টার হোবার্থ মোরিস: নারী অধিকারের পথিকৃৎ

 

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এস্টার হোবার্থ মোরিস (Esther Hobart Morris) একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। উনিশ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে যখন নারীরা ভোটাধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন, তখন মোরিস এক অগ্রদূত হিসেবে সামনে আসেন। তিনি ছিলেন প্রথম নারী পিস জাস্টিস (Justice of the Peace), যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বের জন্য এক মাইলফলক।

১৮১৪ সালের ৮ আগস্ট নিউইয়র্কের স্প্রিংফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। খুব অল্প বয়সেই তিনি বাবা-মাকে হারান, ফলে তার বেড়ে ওঠা ছিল চ্যালেঞ্জিং।তবুও তিনি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং নারীদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।

১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং টেরিটরি (Wyoming Territory) নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার প্রদান করে, যা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি সম্ভব হয়েছিল নারী অধিকার কর্মীদের প্রচেষ্টার কারণে, যার মধ্যে এস্টার হোবার্থ মোরিস ছিলেন অন্যতম।

১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এস্টার মোরিসকে ওয়াইওমিংয়ের সাউথ পাস সিটিতে পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বিচারিক কর্মকর্তা হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
তার বিচারিক কার্যক্রম ছিল সুশৃঙ্খল ও নিরপেক্ষ। এক বছরে ২৬টি মামলা পরিচালনা করেন তিনি, যার মধ্যে বেশিরভাগই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সেই সময় নারীদের বিচার বিভাগে অংশগ্রহণ ছিল অকল্পনীয়, তাই তার এই ভূমিকা নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নারীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে মোরিস ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ওয়াইওমিং যখন ১৮৬৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তখন তিনি এই আইনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন। তার প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।
১৮৭১ সালে ইউটা (Utah) যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে নারী ভোটাধিকার আইন পাস করে। ওয়াইওমিংয়ের সফলতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যেখানে মোরিসের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই আইনের ফলে নারীরা প্রথমবারের মতো উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।
এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার একটি বড় পদক্ষেপ ছিল এবং এই আন্দোলনের পেছনে এস্টার হোবার্থ মোরিসসহ অন্যান্য নারী অধিকার কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এস্টার হোবার্থ মোরিস শুধু একজন বিচারকই নন, তিনি ছিলেন নারী অধিকারের এক সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। তার প্রচেষ্টা নারীদের ভোটাধিকার, বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ এবং আইন পেশায় নারীদের প্রবেশের পথ সুগম করে।
আজ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে অগ্রগতি, তার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন মোরিসের মতো নেত্রীরা।

 

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, তবু কেন থামছেনা অপরাধ?

 

 রাফসান গালিব: দেশে ধর্ষণের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডই। এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এক সপ্তাহ আগেও। ঘটনাটি ঘটেছিল কখন? ছয় বছর আগে।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হবার পরেও কেন ধর্ষণ রোধ করা যাইতেছে না? এর অন্যতম কারণ হইল, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা।

বগুড়ার তুফান সরকারের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই অনেকের। এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের চুল কেটে দিছিল তুফান৷ গোটা দেশে ঝড় উঠে এই ঘটনায়৷ তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়৷

হাইকোর্ট এই ঘটনার বিচার করতে ছয় মাস সময় বেধে দেয়। কিন্তু ৩ বছরেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় না। পরে ঠিকই তুফান সরকার জামিনে বের হয়ে মা-মেয়েকে হুমকি দেয়া শুরু করে। সেই তুফানের আজও বিচার হয় নাই।

একের পর ধর্ষণের ঘটনায় ঘটতে থাকায় এবং ধর্ষণের বিচার যথাযথভাবে করতে না পেরে পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সংসদে ধর্ষককে ক্রসফায়ার দেয়ার মতো ভয়ংকর দাবি উঠেছিল। বিচারবহির্ভূতভাবে র‍্যাব দিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত কয়েকজন হত্যাও করা হয়। মানুষ ক্রসফায়ারকে সেলিব্রেট করে৷ কী দুর্ভাগ্য আমাদের!

ধর্ষণের বিচার কেন দ্রুত হবে না? কেন বছরের পর বছর আটকে থাকবে? এমন সময় বিচারের রায় হয়, তখন মানুষ ঘটনার কথাই ভুলে যায়। ফলে মৃত্যুদণ্ড দিয়েও সেই রায় আর সমাজে দৃষ্টান্তমূলক হয় না। ধর্ষণের ঘটনার ২০ বছর পর রায় হয়েছে, এমনও ঘটেছে। এটা তো বিচারের নামে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে আরেক ভয়াবহ ও বাজে দৃষ্টান্ত আছে, তা হলো ধর্ষকের সঙ্গেই ভুক্তভোগীর বিয়ে দেয়া। আদালতের সম্মতিতেই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাও এখানে ঘটেছে৷ যথাযথ আইন প্রয়োগ ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই ধর্ষণের পর ধর্ষকের সাথে বিয়ার মাধ্যমে নারীর প্রতি আরেক চরম জুলুম চাপিয়ে দেয়া হয়।

ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ৯০-১২০ দিনের মধ্যে কেন করা হবে না? একেবারে বিশেষ বা জটিল কোনো কেস ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচার অবশ্যই সম্ভব। শুধু তাই নয়, এ দেশে ঘটনা ঘটার এক সপ্তাহের ভেতরে বিচারের রায় দেয়ার দৃষ্টান্তও আছে৷

নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে হবে। সরকারকে এইখানে অবশ্যই বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে৷ একটা ধর্ষণের বিচার চলতে চলতে আরও কয়েক ডজন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।

শুধু আইন বানাইলেই হবে না, শাস্তি বাড়াইলেই হবে না; বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে৷ এইটার ফলাফল নিকট অতীতেই আছে। নারীদের উপর এসিড সন্ত্রাস কিন্তু আমরা এভাবেই বন্ধ করতে পেরেছি৷

দ্রুত আইন প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে মানুষ ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেই আবার আহবান করবে। পারলে নিজেরাই ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারবে৷ এইটা তখন আরও খারাপ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে আমাদের সমাজকে। সরকারকে বলব, এমন ঘটনা ঘটার আগেই ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থাকে দ্রুত কার্যকর করুন।

*
ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যে ধরনের ফেসবুক পোস্ট ভিক্টিমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও পোটেনশিয়াল রেপিস্টকে সত্যিকারের রেপিস্ট হইতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারে- এইটা নিয়ে বিশ্লেষণ পড়ুন এই লিংকে:
https://www.facebook.com/share/p/1NpGnsHhHo/