banner

রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: March 9, 2025

 

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র: হোমাইরা জাহান সনম

 

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক অনন্য নাম হোমাইরা জাহান সনম। প্রতিকূল পরিবেশ, সামাজিক বাধা ও নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে তিনি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কৃষি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে তিনি হয়েছেন গর্বিত এক বাংলাদেশি। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশনসে (এপিএএআরআই) টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার প্রত্যন্ত এক হাওরবেষ্টিত গ্রাম বড়ই-এ জন্ম হোমাইরা জাহান সনমের। গ্রামের সাধারণ মেয়েদের মতো তিনিও নানা সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হতো তাঁকে। কিন্তু এসব বাধা তাঁকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
শৈশবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন হোমাইরা, কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা তাঁকে সেই পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। তবে তিনি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে কীটতত্ত্ব (এনটোমোলজি) বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

স্নাতকোত্তর শেষ করার পর হোমাইরা কিছুদিন পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্সেস ইন্টারন্যাশনাল (CABI)-এ প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগ দেন। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাঁর কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা ও গবেষণার প্রতি একাগ্রতার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সুনাম অর্জন করেন।
২০২৪ সালে তিনি এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশনসে (এপিএএআরআই) টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

বর্তমানে এপিএএআরআই-তে হোমাইরা জাহান সনম কৃষি গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। তাঁর গবেষণার মূল বিষয়গুলো হলো-
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা,প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা,কৃষি বাণিজ্যে স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি মান নিশ্চিতকরণ।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

হোমাইরা চান, বাংলাদেশের কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে তিনি কাজ করছেন। তার স্বপ্ন, দেশের কৃষকদের জন্য সহজ ও কার্যকর কৃষি প্রযুক্তি নিশ্চিত করা, যাতে কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন এবং উৎপাদন বাড়াতে পারেন।

হোমাইরা জাহান সনমের জীবনগল্প প্রমাণ করে, দৃঢ় সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রম মানুষকে যেকোনো সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারে। তাঁর পথচলা বাংলাদেশের তরুণদের, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার এক উজ্জ্বল মুখ, হোমাইরা জাহান সনম—যিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, আর এগিয়ে চলেন নতুন সম্ভাবনার পথে।

তথ্যসুত্র – the daily star

 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫: সমতা, অধিকার ও ক্ষমতায়নের প্রতীক

 

নারী–পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day) একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং সমাজে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নারীরা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখলেও, আজও তারা নানা বাধা ও বৈষম্যের সম্মুখীন হন। তাই, এই দিনটি শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, বরং এটি একটি আন্দোলন, যা নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস
১৯০৮: নিউইয়র্কে প্রায় ১৫,০০০ নারী ভোটাধিকার, কর্মক্ষেত্রে ন্যায্য সুযোগ এবং লিঙ্গবৈষম্যের অবসানের দাবিতে আন্দোলন করেন।

১৯০৯: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় নারী দিবস’ (National Women’s Day) পালিত হয়।

১৯১০: ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী সম্মেলনে (International Socialist Women’s Conference) জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন (Clara Zetkin) আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

১৯১১: প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।

১৯১৩-১৪: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, রাশিয়ার নারীরা ২৩ ফেব্রুয়ারি (বর্তমানে ৮ মার্চ) প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেন।

১৯৭৫: জাতিসংঘ (United Nations) আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় এবং এটি ‘নারীর অধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তির দিন’ (Day for Women’s Rights and International Peace) হিসেবে ঘোষণা করে।

১৯৯৬: জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো নারী দিবসের জন্য একটি বার্ষিক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে— “Celebrating the Past, Planning for the Future” (অতীতকে উদযাপন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য
নারীরা সমাজের অন্যতম চালিকাশক্তি হলেও, এখনও তারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নেতৃত্ব এবং আইনগত অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল কারণগুলো হলো—

লিঙ্গসমতা (Gender Equality)
★কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

★নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অধিকতর সম্পৃক্ত করা।

নারীর ক্ষমতায়ন (Women’s Empowerment)
★শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রযুক্তিতে নারীদের সম্পৃক্ত করা।

★অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

নারী সহিংসতা প্রতিরোধ (Ending Violence Against Women)

★পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

★নারীদের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ (Leadership & Participation)
★নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা।

★নারীদের মতামত ও কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেওয়া।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য
প্রতি বছর জাতিসংঘ নারী দিবসের জন্য একটি বিশেষ থিম নির্ধারণ করে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য হলো—

“For ALL women and girls: Rights. Equality. Empowerment.”
(সমস্ত নারীদের জন্য: অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন।)
এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে বিশ্বের সব নারী ও কন্যার জন্য সমান অধিকার, ন্যায়বিচার এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নারী দিবস উদযাপন কিভাবে করা হয়?
প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে নারী দিবস নানা আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়—

★ নারীর অর্জন ও সাফল্যের স্বীকৃতি প্রদান।
★ নারী অধিকার বিষয়ে কর্মশালা, সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন।
★ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রচারণা।
★নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি।
★কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য নীতি প্রণয়ন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, এটি একটি সচেতনতা ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন।
নারীদের প্রতি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান সুযোগ তৈরি করা সময়ের দাবি। শুধুমাত্র নারীদের ক্ষমতায়ন নয়, বরং নারীদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে উন্নত ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।