banner

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: April 24, 2025

 

সুনীতা কৃষ্ণন: এক সাহসী সংগ্রামী নারী

 

শৈশব থেকেই অন্যের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি গভীর সহানুভূতি ছিল সুনীতা কৃষ্ণনের। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নাচ শেখাতে শুরু করেন। ১২ বছর বয়সেই গড়ে তোলেন একটি স্কুল, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেন।
কিন্তু সমাজে পরিবর্তন আনার এই প্রয়াস সহজ ছিল না। ১৫ বছর বয়সে এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন তিনি—আটজন দুর্বৃত্ত তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এই নির্মম অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রতিকূলতার কাছে হার না মেনে, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প নেন।
পরবর্তীতে তিনি ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট যোসেফ কলেজ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ম্যাঙ্গালোর থেকে মেডিকেল ও সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল নারী পাচার ও যৌন শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই।

১৯৯৬ সালে, নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়ে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দেখতে পান, পরিবারও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।এই অবস্থায় তিনি থেমে যাননি। হায়দ্রাবাদে এসে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেন।
নিজের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রজ্জ্বলা’, যা আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যান্টি-ট্রাফিকিং শেল্টার। এখানে পাচার হওয়া এবং নিপীড়িত মেয়েদের উদ্ধার, আশ্রয়, চিকিৎসা, আইনি সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। নারী পাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি লেখালেখি ও সেমিনারেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

সুনীতা কৃষ্ণন শুধু সমাজের জন্য কাজ করলেও নিজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না। তাঁর স্বামী, চলচ্চিত্র পরিচালক রাজেশ টাচরিভারের কাছ থেকেও কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেন না। তাঁর বিখ্যাত স্লোগান “Real Men Don’t Buy Sex” আজ কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
নারী পাচারের বিরুদ্ধে অবিসংবাদিত ভূমিকার জন্য তিনি ২০১৬ সালে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হন এবং আরও বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন।

নারী পাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাঁকে একাধিকবার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে—১৪ বার শারীরিক নিগ্রহ, প্রাণনাশের হুমকি, এমনকি গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও তিনি দমে যাননি। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য সমাজ থেকে এই অমানবিক প্রথা নির্মূল করা।
সুনীতা কৃষ্ণন প্রমাণ করেছেন, একক প্রচেষ্টায়ও সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাঁর দৃঢ়তা, সাহস এবং অপরিসীম মানবিকতা আজ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা।

 

নাসায় প্রথম বাংলাদেশি নারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার; সিলেটের মাহজাবীন

 

সফলতার গল্প সবসময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে, আর সেই গল্প যখন নিজ দেশের কারও হয়, তখন তা গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনই এক অনুপ্রেরণার নাম মাহজাবিন হক, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।

মাহজাবিন হকের শৈশব কেটেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ এনামুল হক পূবালী ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। ২০০৯ সালে মাহজাবিন তার পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ও মহাকাশবিজ্ঞানের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি মিশিগান রাজ্যের ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

নাসায় যোগদানের আগে মাহজাবিন দুই দফায় নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ইন্টার্নশিপ করেন। প্রথমবার তিনি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে নাসার স্থায়ী নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করে।
ইন্টার্নশিপ শেষে তিনি নাসা, অ্যামাজনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাব পান। তবে তিনি নাসায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।

একজন বাংলাদেশি নারী হিসেবে নাসায় কাজ করা নিঃসন্দেহে এক বিশাল অর্জন। মাহজাবিন প্রমাণ করেছেন যে পরিশ্রম, মেধা ও একাগ্রতা থাকলে বিশ্বের যেকোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্ন সত্যি করা সম্ভব। তার সাফল্য বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করবে এবং তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনুপ্রেরণা দেবে।
বাংলাদেশের মেধাবী তরুণরা যে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে, মাহজাবিন হক তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ।