banner

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: April 24, 2025

 

জালালুদ্দিন রুমি ও তিতির পাখি

 

বিস্তীর্ণ বনের সরু পথ ধরে হেঁটে চলেছেন জালালউদ্দিন রুমি। প্রকৃতির নীরবতা তার চিন্তাকে গভীরতর করে তুলছে। হঠাৎ, ঝোপের আড়াল থেকে উড়ে আসা একটি বড় কালো তিতির পাখি তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল। দক্ষ হাতে পাখিটিকে ধরে ফেললেন রুমি।
পাখিটিকে দেখে তিনি ভাবতে লাগলেন— একে আগুনে ঝলসাবেন, নাকি সুস্বাদু তরকারি হিসেবে রান্না করবেন!
ঠিক তখনই পাখিটি রুমির হাতের ভেতর নড়েচড়ে উঠে কণ্ঠে আহ্বান জানাল,
“রুমি! জীবনে এত মাংস খেয়েও তোমার লোভ ফুরোয়নি! যদি তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও, আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেবো, যা তোমার জীবনকে শান্তি ও আনন্দে ভরিয়ে দেবে।”
রুমি একটু বিস্মিত হলেন, তারপর বললেন,
“আচ্ছা, তাহলে প্রথম পরামর্শ এখানেই দাও। যদি মূল্যহীন মনে হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই তোমাকে হত্যা করবো।”

পাখিটি বলল,
“তুমি সবসময় অন্যের কথায় বিচলিত হয়ে পড়ো। অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় জড়ানো তোমার স্বভাব। অথচ মানুষকে তাদের মতো থাকতে দিলে, তোমার জীবন আরও শান্ত হবে।”
রুমি চিন্তা করলেন, এতে সত্যিই গভীর এক জ্ঞান আছে!
তিনি বললেন, “তাহলে দ্বিতীয় পরামর্শ বলো।”
পাখিটি বলল, “আমি গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় পরামর্শ দেবো। আগে আমাকে মুক্ত করো।”
রুমি কিছুটা দ্বিধান্বিত হলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসল।

পাখিটি গাছের ডাল থেকে বলল,
“রুমি! অতীতকে কখনো বদলানো যায় না। তাই বর্তমানকে উপভোগ করো এবং ভবিষ্যতের জন্য বেঁচে থাকো।”
রুমি গভীরভাবে তা চিন্তা করলেন। কিন্তু তখনই পাখিটি হঠাৎ হেসে বলল,
“যাই হোক, তুমি বড় বোকামি করেছো! আমার পেটে তিন কেজি হীরা ছিল। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে, তবে সেই হীরা পেয়ে তোমার তিন পুরুষ আরাম করে কাটাতে পারতো।”
এই কথা শুনে রুমি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন! তার বুক ধক করে উঠল। হতভম্ব হয়ে তিনি পাখিটিকে ধরতে দৌড় দিলেন।
পাখিটি তখন উঁচু স্বরে বলল,
“রুমি! তুমি দেখছি আমার দ্বিতীয় পরামর্শের কথাই ভুলে গেলে! আমি তো বলেছিলাম, অতীতকে বদলানো যায় না। আর ভাবো তো, আমি যেখানে মাত্র দুই কেজির, সেখানে কীভাবে আমার পেটে তিন কেজি হীরা থাকবে?”
রুমি থমকে দাঁড়ালেন। বুঝতে পারলেন, তিনি আবারও ভুল করেছেন।

এবার রুমি তিতিরকে অনুরোধ করলেন, “তোমার তৃতীয় পরামর্শটা দাও। এবার আমি সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শুনবো।”
পাখিটি বলল,
“সবার কাছে উপদেশ দিতে যেও না। শুধু তাদের উপদেশ দাও, যারা তা গ্রহণ করতে চায়। মনে রেখো, কিছু কাপড় এতটাই পুরোনো ও জীর্ণ হয়ে যায় যে, তা আর কখনো সেলাই করা যায় না।”

রুমি এবার সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, পাখিটির প্রতিটি পরামর্শই জীবন বদলে দেওয়ার মতো!
গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে তিনি বনের পথ ধরে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু এবার তার চিন্তাধারা আগের চেয়ে অনেক পরিণত ও শান্ত।

গল্পের শিক্ষা:

✅ অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়।
✅ অতীতকে পরিবর্তন করা যায় না, তাই বর্তমানকে উপভোগ করতে হবে।
✅ উপদেশ কেবল তাদেরই দিতে হবে যারা তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

আরওয়া আনাম

 

প্রতারণার ফাঁদে নারী প্রবাসীরা: সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস

 

মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন অনেক বাংলাদেশি নারী। এই প্রতারণা রোধে সতর্কতা জারি করেছে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
দূতাবাসের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু চক্র নারী কর্মীদের ট্যুরিস্ট বা অন্যান্য ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে বৈধভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় তারা বিপদের মুখে পড়ছেন।

বাংলাদেশ সরকার এবং মালয়েশিয়ার সরকারের মধ্যে নারী কর্মীদের নিয়োগের কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। ফলে ট্যুরিস্ট বা অন্য কোনো ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, অনেক নারী এজেন্সির প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনেকে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এমনকি হচ্ছেন শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার।

বাংলাদেশ হাইকমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কোনো নারী যেন দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণামূলক প্রস্তাবে সাড়া না দেন। কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তি যদি নারী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজের নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণামূলক।
হাইকমিশন থেকে আরও বলা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় এসেছেন এবং প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা দ্রুত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বৈধ উপায়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রবাসে নিরাপদ থাকুন, প্রতারণা থেকে দূরে থাকুন।

 

নারীর আত্মরক্ষার কিছু কার্যকরী কৌশল: সচেতনতা-প্রশিক্ষণ

বর্তমান সমাজে নারীর সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মরক্ষার কৌশল শেখা নারীদের জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় নয়, এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মাধ্যম। অপরাধের ঝুঁকি এড়াতে ও নিজেকে রক্ষা করতে নারীদের সচেতন এবং সক্ষম হতে হবে। এই প্রবন্ধে নারীর আত্মরক্ষার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল শেয়ার করা হলো।

১. নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ান

নারীদের আত্মরক্ষার মূল ভিত্তি হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। দৃঢ় মনোভাব অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতার প্রতি নিরুৎসাহিত করে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীদের মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকা জরুরি।

২. আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন

আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নারীদের শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা বাড়ায়। বিশেষ কিছু কৌশল, যেমন:

কারাতে ও মার্শাল আর্ট: শারীরিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কার্যকর।

সেলফ-ডিফেন্স ট্রেনিং: আক্রমণকারীকে সামলানোর সহজ কৌশল শেখা।

৩. সবসময় সতর্ক থাকুন-
প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। নারীদের উচিত:

অপরিচিতদের সঙ্গে একা চলাফেরা এড়ানো।

রাতের বেলা আলোকিত ও জনবহুল রাস্তায় চলাচল করা।

সন্দেহজনক পরিবেশ দেখলে দ্রুত সরে যাওয়া।

৪. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করুন

প্রযুক্তি নারীর সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন:

মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাড়ানো।

লাইভ লোকেশন শেয়ার করা।

জরুরি অবস্থায় পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে কল করা।

৫. সুরক্ষার সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন

কিছু সহজে বহনযোগ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম নারীদের আত্মরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

পেপার স্প্রে: এটি চোখে ব্যবহার করলে আক্রমণকারী সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে পড়ে।

অ্যালার্ম ডিভাইস: বিপদের সময় জোরে শব্দ করে সাহায্য চাইতে কার্যকর।

৬. আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন

নারীদের তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হলে কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয় এবং আইনের সাহায্য নেওয়া যায় তা জানা জরুরি।

৭. মানসিক শক্তি অর্জন করুন

বিপদের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও ঠান্ডা মাথায় কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এই দক্ষতা অর্জনের জন্য নিয়মিত মানসিক প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।

নারীর আত্মরক্ষার কৌশল শুধু সুরক্ষা নয়, এটি একটি আত্মসম্মানের বিষয়। সচেতনতা, সঠিক প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। নিজের শক্তি ও সক্ষমতা বাড়িয়ে নারীরা সমাজে আরও নিরাপদ ও স্বাধীন হয়ে উঠতে পারেন।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখাই হলো নারীর সবচে বড় শক্তি।

 

বুক রিভিউ- বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)

 

ড. হিশাম আল আওয়াদির লেখা “বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” একটি অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থ, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফল হওয়ার পথ দেখায়। বইটির মূল ধারণা হলো মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন এবং শিক্ষা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং আধুনিক জীবনের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
লেখক দেখিয়েছেন, মহানবী (সা.) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ নেতা, চিন্তাবিদ এবং মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী যেমন ধৈর্য, সহানুভূতি, ন্যায়পরায়ণতা, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তা বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু
বইটিতে মুহাম্মদ (সা.)-এর বিভিন্ন গুণাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে, যা আমাদের স্মার্ট জীবনযাপনের জন্য সহায়ক:

যোগাযোগ দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং তাদের মন জয় করতেন, তা বইটির অন্যতম আকর্ষণ। আধুনিক কর্মজীবনে এটি সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সমস্যা সমাধান ও সংকট মোকাবিলা
তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংকট এবং সেগুলো মোকাবিলার জন্য তাঁর ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আমাদের শেখায় কীভাবে জটিল পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে সামাল দেওয়া যায়।

মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা
মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং ন্যায়পরায়ণ আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে কীভাবে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করা যায়, তা এই বইয়ের অন্যতম মূল শিক্ষা।

লিডারশিপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আধুনিক যুগের নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর।

মুখ্য বার্তা
বইটির মূল বার্তা হলো, মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের শেখায় কিভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং নৈতিকতার মাধ্যমে আমরা নিজেদের স্মার্ট এবং সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

“বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি আধুনিক জীবনের একটি প্রাসঙ্গিক গাইড। এই গাইডলাইন আমাদের নৈতিক এবং পেশাগত জীবনে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। বইটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ জীবনে ধারণ করে একজন স্মার্ট, দক্ষ, এবং মানবিক মানুষ হওয়া সম্ভব।

 

শিশুর স্ক্রিন আসক্তি কমিয়ে ফাইন মোটর স্কিল বাড়ান

বর্তমান সময়ে শিশুরা আগের চেয়ে বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে কাটাচ্ছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ কিংবা টেলিভিশনের প্রতি তাদের ঝোঁক এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ কিছু কাজ করতেও তারা এখন হিমশিম খায়। জুতার ফিতা বাঁধা, বোতাম লাগানো, চামচ ধরা, কাঁচি চালানো কিংবা কলম দিয়ে ঠিকমতো লেখা—এসব কাজ আগের তুলনায় অনেক শিশুর জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুরা এখন হাতে-কলমে কাজ কম করছে, ফলে তাদের ফাইন মোটর স্কিলস (Fine Motor Skills) গড়ে ওঠার সুযোগ কমে যাচ্ছে। ফাইন মোটর স্কিলস হলো আমাদের হাত ও আঙুলের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার ক্ষমতা, যা লেখা, আঁকা, জুতা বাঁধার মতো কাজে দরকার হয়। কিন্তু প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুরা এসব কাজে দক্ষতা হারাচ্ছে।
এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়, তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময় এটি আরও প্রকট হয়েছে। মহামারির সময় শিশুরা ঘরবন্দি ছিল, স্কুলে যেতে পারেনি, খেলাধুলার সুযোগ কমে গিয়েছিল। অনেকেই তখন অনলাইনে পড়াশোনা করত, যার ফলে হাতে-কলমে লেখার চর্চা কম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির সময় যারা জন্মেছে, তারা ছয় মাস বয়সে ফাইন মোটর স্কিলস পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল করেছে। কিছু গবেষক মনে করেন, এর কারণ হতে পারে মায়ের মানসিক চাপ, আবার কেউ বলেন, শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ বদলে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে।

তবে শুধু মহামারি নয়, এর অনেক আগে থেকেই শিশুরা হাতে কাজ করার সুযোগ হারাচ্ছে। একসময় শিশুরা পাজল খেলত, কাঠের ব্লক দিয়ে টাওয়ার বানাত, রঙ করত, কাটাকুটি করত। এসব কাজ শিশুদের ধৈর্য বাড়াতে এবং হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে সাহায্য করে। কিন্তু এখন তারা বেশি সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে, ফলে হাতের ব্যবহার কমে গেছে। অনেকে মনে করেন, ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা বা ছবি আঁকা করাও উপকারী হতে পারে, কিন্তু এতে হাতে-কলমে কাজ করার যে বাস্তব অভিজ্ঞতা দরকার, তা তৈরি হয় না।

শিশুরা শুধু ফাইন মোটর স্কিলস নয়, বই পড়ার অভ্যাসও হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা আগের তুলনায় বিনোদনের জন্য বই পড়ছে অনেক কম। অথচ বইয়ের পাতা উল্টানো, মনোযোগ ধরে রাখা, শব্দ অনুসরণ করা—এসবই তাদের হাতের সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ায়।

এই সমস্যার সমাধান কী?
শিশুদের স্ক্রিন থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়, তবে তাদের হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। অভিভাবকরা চাইলে সহজ কিছু উপায়ে শিশুর ফাইন মোটর স্কিলস বাড়াতে পারেন।
একটি ভালো উপায় হলো শিশুদের বেশি করে লেখার সুযোগ দেওয়া। রঙ করা, কাটাকুটি করা, পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকা—এসব কাজ তাদের হাতের শক্তি বাড়ায়। ব্লক গেমস বা লেগো খেলতে দিলে শিশুরা হাতের নড়াচড়ায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। জুতার ফিতা বাঁধতে শেখানো, বোতাম লাগাতে দেওয়া, রান্নার ছোটখাটো কাজে যুক্ত করা—এসবও সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া, শিশুরা যাতে বই পড়ায় উৎসাহিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের হাতে গল্পের বই তুলে দিলে তারা পাতা উল্টানোর অভ্যাস করতে পারবে, যা তাদের হাতের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার জন্য ভালো।

শিশুরা প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে উঠবেই, তবে প্রযুক্তির পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং শিশুদের হাতে কাজ করার সুযোগ বেশি করে দেন, তাহলে তারা এই দক্ষতা ফিরে পেতে পারবে।