banner

রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: March 2025

 

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের একক চিত্র প্রদর্শনী

 

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘প্রবাহমান দৃষ্টিভঙ্গি’ শুরু হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনী,চলমান ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারাক আলভী, অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চিত্র সমালোচক আইয়ুব ভূঁইয়া। উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথিরা নাজমুন নাহার রহমানের শিল্পকর্মের প্রশংসা করেন এবং তাঁর চিত্রকলার বৈচিত্র্য ও গভীরতা নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রদর্শনীতে শিল্পীর ২৩টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে, যেখানে রং, আকৃতি ও বিমূর্ত ধারার অনন্য সংমিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। নাজমুন নাহার তাঁর শিল্পকর্মে বাস্তবতা ও কল্পনার এক অপূর্ব মিশ্রণ ঘটিয়েছেন, যা দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তাঁর চিত্রকর্মগুলোতে আধুনিক বিমূর্ত শিল্পের প্রভাব স্পষ্ট, যা ভিন্নমাত্রার শৈল্পিক অভিজ্ঞতা দিচ্ছে দর্শকদের।

নাজমুন নাহার রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারত ও নেপালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গ্রুপ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন এবং ফ্রান্স, ভারত ও নেপালে নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন। তবে এটি তাঁর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী, যা তাঁর শিল্পীসত্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীরা শিল্পীর সৃষ্টিশীল কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেকে তাঁর চিত্রকর্মকে সময় ও সমাজের বহুমাত্রিক প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন। শিল্প সমালোচকদের মতে, নাজমুন নাহারের কাজে জীবনের গভীরতা, অনুভূতির সূক্ষ্মতা ও নান্দনিক সৌন্দর্যের চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে।

 

রিমান্ডের নামে ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা

 

ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার অপরাধ কী ছিল? তিনি হেফাজত নেতাদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের জামিনের জন্য লড়েছিলেন। কিন্তু এই আইনসঙ্গত কাজই তার জীবনে এক ভয়াবহ বিভীষিকা নিয়ে আসে। তাকে জঙ্গি বানিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়, চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়, রিমান্ডে নিয়ে চলতে থাকে অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন।

২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট। রাতের অন্ধকারে ধানমন্ডিতে শাকিলা ফারজানার বাসায় প্রায় ২০০ জন র‍্যাব সদস্য হানা দেয়। কোনো প্রশ্ন, কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তাকে জানানো হয়—”আপনাকে জঙ্গি অর্থায়নের মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো।” এই ঘোষণার পরপরই তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়, তুলে নেওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে।
তিনি তখনো বুঝতে পারছিলেন না, আসলে কী ঘটছে। কিছুক্ষণ পর তাকে একটি ছোট ঘরে ঢোকানো হয়। সেই ঘর থেকে ভেসে আসছিল বিদ্যুতের শকের শব্দ। তীব্র সেই শব্দে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় ভয়াবহ মারধর। কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “তোর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড দে!” আতঙ্কিত শাকিলা তখন কিছুই মনে করতে পারছিলেন না। কিন্তু তারা থামেনি। অকথ্য গালাগালির সঙ্গে চলতে থাকে চড়, থাপ্পড়, লাথি। পাশে থেকে ভেসে আসছিল তার সহকারী আইনজীবী লিটনের চিৎকার। তাকেও ধরে এনেছিল তারা।

অমানবিক নির্যাতনের পর তাকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। গাড়ি চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিছু সময় পর ওয়্যারলেসে এক কর্মকর্তা বলেন, “স্যার, আমরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সামনে। অপারেশনে যাব?”
এই কথা শুনেই শাকিলার মনে হয়েছিল, এবার বোধহয় সব শেষ। তাকে গুলি করে হত্যা করে ‘জঙ্গি’ হিসেবে চালিয়ে দেবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করে, গন্তব্য পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭ সদর দফতর।
সেখানে পৌঁছানোর পর তার চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। এরপর তাকে বলা হয়, “সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছে। আমরা যা বলব, তাই বলবেন।” অর্থাৎ, পুরো ঘটনাটি মিডিয়ার সামনে সাজানো হবে।

শাকিলাকে প্রথমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারপর আরও দুদিন রিমান্ডে রেখে চলতে থাকে অকথ্য নির্যাতন। রিমান্ডের প্রথম দিনই তার ওপর চলে পাশবিক অত্যাচার। একজন কর্মকর্তা, যিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার মুখের সামনে এসে মদের গন্ধ ছাড়ছিলেন, সঙ্গে চলছিল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি ও লাথি।
তিনি পরে জানতে পারেন, এই কর্মকর্তা আর কেউ নন, সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
এমনকি তাকে ভয় দেখানো হয়, “তোমার বড় ছেলেকে ধরে এনে জঙ্গি বানিয়ে দেব।” সেই মুহূর্তে শাকিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিৎকার করে বলেন, “ওর দিকে হাত না বাড়িয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।”

কারাগারে পাঠানোর পরও তার নির্যাতন থামেনি। সেখানে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার জন্য প্রতিদিন তিন ঘণ্টা লোহার গারদের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো।
একদিন তিনি দেখেন, জেলগেটের বাইরে তার মা দাঁড়িয়ে আছেন। পরে জানতে পারেন তার মা প্রতিদিন জেলগেটে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন, মেয়েকে একবার দেখার আশায়।
কারাগারে মাঝেমধ্যে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে দেখতেন, তার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এক নারী অবয়বের কেউ সামনে ব্লেড নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল, যেন যে কোনো মুহূর্তে আঘাত করবে। ভয়ে শাকিলা চিৎকার করে উঠতেন।

মুক্তি পেলেও স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে
প্রায় ১০ মাস বন্দি থাকার পর ২০১৬ সালের ৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে জামিন দেয়। তিনি মুক্তি পান, কিন্তু তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় মূল্যবান সময়, হারিয়ে যায় স্বাভাবিকতা।
শাকিলা ফারজানার বাবা এই মানসিক ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি। মেয়ের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার কষ্টে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।
আজও শাকিলা ফারজানা সেই বিভীষিকাময় রাতগুলোর কথা মনে করলে শিউরে ওঠেন। তিনি শুধু একজন আইনজীবী ছিলেন, যিনি বিচার বিভাগের নিয়ম মেনে জামিন করিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তাকে ‘জঙ্গি’ বানিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকারে পরিণত করে।

এই নির্মমতার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে তো? নাকি ঘটে যাওয়া এই অন্যায় বিচারহীনতাই থেকে যাবে আমাদের সমাজের চিরস্থায়ী বাস্তবতা হিসেবে?

 

বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে: বাংলা একাডেমি

 

অমর একুশে বইমেলায় নারী ও শিশুদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলা একাডেমি। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে একাডেমি এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বইমেলার ওয়াশরুমের পাশে নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা হবে।

শুরুতে এই উদ্যোগটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি পরিচালনা করছিল, যারা স্পন্সরের সহায়তায় কাজ করছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি অনুমতি না নিয়ে বইমেলার বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছিল, যা মেলার নিয়মের পরিপন্থী। ফলে কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

বাংলা একাডেমি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সংকোচ পোষণ করে না এবং নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য বইমেলার নীতিমালার আওতায় বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে। অতীতেও বইমেলায় বিভিন্ন জরুরি উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে এবং এবারও সেই ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
এদিকে, ‘স্টে সেইফ’ ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রদর্শনী ও বিক্রি বন্ধ করার ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম-এর সুপারিশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে তাদের স্টল বন্ধ করতে বলা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে সমস্যা ছাড়া কার্যক্রম চালালেও, পরে বিভিন্ন পক্ষ থেকে আপত্তি আসতে শুরু করে।

এ বিষয়ে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় এবং এটি নিয়ে বইমেলায় বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া দুঃখজনক। সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেখানে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে, সেখানে বইমেলায় এটি নিয়ে আলোচনা হওয়াটা হতাশাজনক। তবে বাংলা একাডেমির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাধা তৈরি হওয়া উচিত নয়। বাংলা একাডেমি নিশ্চিত করেছে, বইমেলায় নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত হবে।

 

‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’ পেলেন ঢাকা বিভাগের পাঁচ সংগ্রামী নারী

 

আত্মশক্তির প্রতীক হয়ে সমাজে পরিবর্তন এনে দেওয়া ঢাকা বিভাগের পাঁচজন সংগ্রামী নারী পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’। রাজধানীর দোয়েল চত্বরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এই বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে রাজবাড়ির স্বপ্না রানী ঘোষ, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের মাসুদা আক্তার, সফল জননী ক্যাটাগরিতে কিশোরগঞ্জের সেলিনা মজিদ, নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করায় ফরিদপুরের লিপি বেগম এবং সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ফরিদপুরের সামর্তবান এই পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রতিটি পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীকে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৫৮ জন নারী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচিত পাঁচজনকে চূড়ান্তভাবে ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নারীদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন ‘আমরা নারীর অসহায়ত্বের গল্প বেশি বলি, কিন্তু আমাদের ইতিহাসে নারীর বীরত্বের অসংখ্য উদাহরণ আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, অথচ তাঁদের অবদান অনেক সময় উপেক্ষিত থেকে যায়। আমাদের উচিত এই বীর নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের গল্পগুলো সংরক্ষণ করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতি, কৃষি ও পরিবার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। গৃহস্থালি কাজে একজন নারী প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘণ্টা ব্যয় করেন, অথচ সেই শ্রমের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং নারীদের অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।’
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ চব্বিশের অভ্যুত্থানে নারীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন ‘জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা নারীদের নাম আমরা কি মনে রেখেছি? চব্বিশের আন্দোলনে শহীদ হওয়া ১১ জন নারীর কথা কি আমরা বলি? আমাদের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে ইতিহাসের ন্যায়সংগত স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খানসহ আরও অনেকে।
বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
নারীদের সংগ্রাম, সাহস ও সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সমাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

 

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফেব্রুয়ারি মাস

 

নারী অধিকারের লড়াই দীর্ঘ এবং কঠিন হলেও, এর ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি মাস এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ভাষার জন্য যেমন এই মাস তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি নারীদের আইনগত ও পেশাগত অধিকারের ক্ষেত্রেও এটি স্মরণীয়। নারী ভোটাধিকার থেকে শুরু করে আইন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণের বৈপ্লবিক পরিবর্তন—ফেব্রুয়ারি এসব অর্জনের সাক্ষী।

নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের পথচলা
১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং প্রথমবারের মতো একটি আইন পাস করে, যেখানে নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। এটি ছিল বিশ্বের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত। এই আইন কার্যকরের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন কর্মী এবং নারী অধিকারের অগ্রদূত। তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে ওয়াইওমিংয়ের প্রথম নারী পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই সাফল্যের পর নারীদের ভোটাধিকার আরও সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৮৭১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যও নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।

নারীদের আইন পেশায় প্রবেশ
নারীরা দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশায় প্রবেশ করতে পারছিলেন না। তবে ১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়। এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।

ফেব্রুয়ারি: সংগ্রাম ও অর্জনের মাস
‘ফেব্রুয়ারি’ শুধু ক্যালেন্ডারের একটু মাসের নাম নয়; এটি নারী অধিকার আদায়ের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এস্টার হোবার্থ মোরিসের মতো নারীদের অবদানের ফলে আজ নারীরা ভোটাধিকার ও পেশায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, ফেব্রুয়ারি তার অন্যতম প্রতীক।
এই মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, লড়াই আজও শেষ হয়নি। অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ, এবং ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, প্রতিটি পরিবর্তন সম্ভব,যদি আমরা অবিচল থাকি।

 

লোভনীয় ক্ষীরসা পাটিসাপটা পিঠা

 

শীতের সন্ধ্যায় এক কাপ গরম চায়ের সাথে পাটিসাপটা পিঠা,আহা!বাঙালির ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই পিঠার বিশেষত্ব হলো এর নরম ও সুস্বাদু ক্ষীরসার পুর। চলুন, দেখে নেওয়া যাক কীভাবে ঘরেই সহজে লোভনীয় ক্ষীরসা পাটিসাপটা তৈরি করা যায়।

উপকরণ
চালের গুঁড়া – ১ কাপ
ময়দা – ২ কাপ
সুজি – ১ কাপ
গুড় – ১ কাপ
লবণ – পরিমাণমতো

ক্ষীরসার পুর তৈরির উপকরণ:
ক্ষীর ও ছানা – ২ কাপ
চিনি – ২ চা-চামচ
গুঁড়ো দুধ – ১ কাপ
কনডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ
ঘি – ২ টেবিল-চামচ
তেজপাতা – ২টি
এলাচ – ২টি
লবণ – এক চিমটি

প্রথমে ক্ষীরসার পুর তৈরি কররার জন্য একটি সসপ্যানে ঘি গরম করে তেজপাতা ও এলাচ ফাটিয়ে দিতে হবে। এরপর তাতে ক্ষীর, ছানা, চিনি, গুঁড়ো দুধ ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। কিছুক্ষণ নেড়ে নেড়ে মিশ্রণটি ঘন ও আঠালো হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।

এবার বেটার তৈরি করার জন্য চালের গুঁড়া, ময়দা, সুজি, গুড় ও লবণ একসাথে নিয়ে মেখে নিতে হবে। এরপর এতে একটু একটু করে পানি দিয়ে মসৃণ ও পাতলা ব্যাটার তৈরি করুন।ব্যাটারটি কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিতে হবে, যাতে এটি সেট হয়ে যায়।

এরপর একটি ফ্রাইপ্যানে সামান্য তেল ব্রাশ করে নিয়ে একটি বড় চামচ দিয়ে ব্যাটার ঢেলে দিন এবং প্যানটি হালকা ঘুরিয়ে ব্যাটারটিকে চারদিকে ছড়িয়ে দিন, যাতে পাতলা রুটির মতো হয়।
এক মিনিটের মধ্যে এটি কিছুটা শক্ত হয়ে আসবে, তখন এর ওপর আগেই তৈরি করা ক্ষীরসার পুর দিয়ে রুটিটি পেঁচিয়ে নিতে হবে।
এক মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর এতে ক্ষীরসার পুর দিয়ে রুটিটি পেঁচিয়ে নিন।
এভাবে সব গুলো পাটিসাপটা তৈরি করুন।

গরম গরম পরিবেশন করুন মিষ্টি ও সুগন্ধি ক্ষীরসা পাটিসাপটা। চাইলে উপরে গুড় বা ক্ষীর ছড়িয়ে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
শীতের সন্ধ্যায় এ যেন এক টুকরো মিষ্টি আনন্দ!

 

নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন দিগন্ত খুলছে ‘সমৃদ্ধি’

 

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি শিশুদের সৃজনশীল বিকাশে কাজ করছে প্রজেক্ট ‘সমৃদ্ধি’।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রকল্প পুরোনো কাপড় ও পাট ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। তাদের তৈরি ব্যাগ, টুপি, পাপোশ, জায়নামাজ ও নকশিকাঁথার মতো পণ্য বাজারজাত করে ‘সমৃদ্ধি’। এই উদ্যোগ শুধু নারীদের আয়ের পথ সুগম করছে না, বরং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার প্রচারেও ভূমিকা রাখছে।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত জাহান নাদিরা, আবদুল খালেক সরকার, সুমাইয়া আফরিন অর্থি, আরাফাত বিন সোহেল, মো. সৌরভ হোসেন, মশিউর রহমান ও জারিন তাসনিম রিথি মিলে শুরু করেন ‘সমৃদ্ধি’। প্রথমে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে।

নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই উদ্যোগ।
বিরাট গ্রামের শিমলা বেগমের মতো অনেক নারী এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শিমলা আগে থেকেই সেলাই জানতেন, তবে কখনো ভাবেননি পুরোনো কাপড় থেকে নতুন কিছু তৈরি করে আয় করা সম্ভব। এখন তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়মিত ব্যাগ তৈরি করছেন, যা তার পরিবারের আয় বাড়াতে সহায়তা করছে।

শুধু নারীদের জন্য নয়, ‘সমৃদ্ধি’ শিশুদের জন্যও কাজ করছে। প্রকল্পের সদস্যরা স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ক্লাইমেট আইডল’ কর্মসূচি চালু করেছে, যেখানে শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে এবং সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যতে ‘সমৃদ্ধি’ আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চায়। উদ্যোক্তারা গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, একটি মানসম্মত পাঠাগার স্থাপন এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পরিকল্পনা করছেন।

সহপ্রতিষ্ঠাতা নিশাত জাহান নাদিরা জানান, তাদের লক্ষ্য শুধু নারীদের স্বাবলম্বী করা নয়; বরং পুরো এলাকার জীবনমান উন্নত করা। তিনি বলেন, “আমরা চাই, ‘সমৃদ্ধি’ শুধু একটি উদ্যোগ হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক।”

নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ রক্ষা ও শিশুদের বিকাশ—এই তিনটি দিককে একত্রে নিয়ে কাজ করছে ‘সমৃদ্ধি’। এলাকাবাসীর আশা, এই উদ্যোগ আরও বড় হবে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

 

শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : শামীমা হানিফ

প্রিয় নবী রহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত অসাধারণ আয়াতটি এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য রহমত কামনা করেন; হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৫৬)

তাই শাবান মাস হলো নবীজির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা, ভক্তি ওপ্রেম ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস। তা হবে সুন্নত অনুশীলনের মাধ্যমে।

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, “হে বৎস! যদি পারোএ ভাবে সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত করো যেন তোমার অন্তরে কারও প্রতি হিংসা না থাকে; তবে তা–ই করো।” অতঃপর বললেন, “হে বৎস! এটাই আমার সুন্নত সুমহান আদর্শ। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অনুসরণ করল, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালোবাসল; যে আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।””
(তিরমিজি শরিফ: ২৬২৭)
শাবান মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির–আজকার, তাসবিহ তাহলিল, দোয়া কালাম, দান–সদকাহ–খয়রাত,উমরাহ হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এ মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘

“”আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমাদান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ,১: ২৫৯, শুআবুল ইমান, বায়হাকি,৩: ৩৭৫)

#শাবান মাস তাৎপর্য ও আমল:
চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদে’র সুন্নত রোজাও রয়েছে। মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ রয়েছে নফল রোজা। এ ছাড়া কোনো সময় ও দিন–তারিখ নির্ধারণ ছাড়া যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা যায় এবং তা করা উচিত।
সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো ফরজ ওয়াজিব ছুটে না যায় এবং কোনো হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত না হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন। রমজানে পূর্ণ মাস ফরজ রোজা। নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসেই নফল নামাজ, নফল রোজা ও নফল ইবাদত–বন্দেগি করতেন।
চাঁদের ২৯ ও ৩০ তারিখ নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত, চাঁদ দেখে দোয়া পড়াও সুন্নত; চান্দ্রমাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া।

প্রিয় বোনেরা আজ রাত থেকে অর্থাৎ আরবী মাসের ১৩,১৪,১৫ সুন্নাত রোজা রাখা যেতেপারে,এর অনেক মাহাত্ম্য ও ফজিলত রয়েছে।১৪ ই শাবান,রাতের ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমরা বেশী তাসবিহ,দরুদ পড়বো, কুরআন অধ্যায়ন করবো জ্ঞান চর্চার জন্য চেষ্টা করবো বেশী বেশী তাহাজ্জুদ নামাম পড়বো,। ইনশাআল্লাহ,

“””সমাপ্ত “”””””

 

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বর্জন: মাসুমা তাসনিম

#যদি আপনি পরকালের জীবন বিশ্বাস করেন,জান্নাতে যাওয়ার আশা রাখেন তাহলে অবশ্যই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবসকে না বলতে হবে। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্যের সাথে ইসলামের কোন ধরনের সম্পর্ক নাই। ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এটি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে শান্তি।

#বিবাহ বহির্ভূত প্রেম বাস্তবতা বিবর্জিত থাকে। এটি ক্ষণস্থায়ী মনের আনন্দ। এটি একটি নেশাগ্রস্থতা। যখনই নেশা কেটে যায় তখন তাদের কাছে পরিষ্কার হয় সে পুরোপুরি একটি ঘোরের মধ্যে ছিল। সেই অবস্থা কাটিয়ে তার জন্য সরল পথের টিকে থাকা খুব লড়াইয়ের ব্যাপার। একটা শক্ত,মজবুত মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন হয় তখন। কত জন সেটি পায়? প্রেম ভালোবাসার পাপের পথটা খুবই পিচ্ছিল হয়। সেখান থেকে ফিরে আসতে চাইলেও আবার পেছনে ফিরে যায়। এজন্য ওই জগত থেকে বের হয়ে আসার চাইতে মৃ*ত্যুকে তারা শ্রেয় মনে করে।

#এই দিবস পরিবার ব্যবস্থায় মারাত্মক ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে। আমাদের অভিভাবকরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার পুকুর স্বরূপ। তারা তাদের সন্তানের হিতাকাঙ্খী। তারা অভিজ্ঞতার আলোকে কল্যাণজনক সিদ্ধান্ত নিতে চান। অনেক নেশাগ্রস্থ ছেলে – মেয়েকে দেখা যায় তারা ওই সময় অভিভাবকদের কল্যাণ কামনাকে অভিশাপ মনে করে। বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করে না বাবা মাকে। লাঞ্ছিত- অপদস্থ করতেও পিছুপা হয় না। প্রয়োজনে তাদেরকে খু*ন করতেও চায়।

#এটাতো দুনিয়ার লাঞ্ছনা। আর আখিরাতের ভয়াবহ আযাব তো আছেই। আসুন, সময় থাকতে সোচ্চার হই। বিবাহ বহির্ভূত সমস্ত ভালবাসাকে না বলি। আল্লাহর কসম! আমার ভাগ্যে বিবাহ , ভালোবাসার যে রিজিক আছে সেটা আমি পাবই ইনশাআল্লাহ।

#মাসুমা_তাসনিম
#সেন্ট_ভ্যালেন্টাইন_বর্জন
১৩/০২/২০২৫

 

এক মাসে ২০৫ নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার

 

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ২০৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাসিক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৭ জন নারী, যার মধ্যে ৪২ জন কন্যাশিশু। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০ জন, যাঁদের মধ্যে ১৪ জন কন্যা। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন, যাঁদের মধ্যে দুইজন কন্যা। যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছেন দুজন। নিপীড়নের শিকার হয়েছেন আটজন, যাঁদের মধ্যে চারজন কন্যাশিশু।
এছাড়া, উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন তিনজন (একজন কন্যা), অ্যাসিডদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন দুজন, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। দুই গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এর মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আরও কিছু উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। বিভিন্ন কারণে ৪৯ জন (১১ জন কন্যাসহ) হত্যার শিকার হয়েছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন পাঁচজন, তাঁদের মধ্যে তিনজন কন্যাশিশু। অপহরণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন আরও সাতজন কন্যা।

এছাড়া সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন দুজন, যাঁদের একজন কন্যা। বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি, আর বাল্যবিবাহের চেষ্টা করা হয়েছে তিনটি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণকে এ ধরনের অপরাধ রোধে একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

তথ্যসূত্র:
বাংলা ট্রিবিউন
আইটিভি বিডি
আজকের পত্রিকা

 

১১ বছর বয়সী সুবার ঘটনা: সামাজিক ও নৈতিক বিশ্লেষণ

 

সম্প্রতি বাংলাদেশের ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ হওয়া ১১ বছর বয়সী মেয়ে সুবার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, দুই বছর আগে টিকটকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় নওগাঁ জেলার এক ছেলের সাথে, যা পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রূপ নেয়। ঢাকায় অসুস্থ মায়ের সাথে থাকা অবস্থায়, সুবা তার মাকে হাসপাতালে রেখে উক্ত ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে নওগাঁর মধ্যপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করে।

এই ঘটনা আমাদের সমাজের বর্তমান নৈতিক ও পারিবারিক অবস্থার একটি বাস্তব প্রতিফলন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম শিশুদের সহজেই প্রভাবিত করছে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাবের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী অপরিণত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এদিকে, অনেকেই এই ঘটনার কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণের আইনকে দোষারোপ করছেন। তাদের মতে, যদি বিয়ের বয়স কম হতো, তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তবে বাস্তবতা হলো- বিয়ে শুধু ভালো চরিত্র গঠনের উপায় নয়; বরং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত হওয়াও জরুরি। শুধুমাত্র বিয়েকে সমাধান হিসেবে দেখা হলে, সমাজে আরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।

এই ঘটনার মূল কারণ খুঁজে সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। পিতামাতা, শিক্ষক ও সমাজের দায়িত্ব হলো শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা, আত্মসংযম ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার শেখানো, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া এবং শিশুদের আবেগিয় ও মানসিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়া।
শুধু বিয়ে নয়, বরং যথাযথ পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধই পারে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে।

 

একুশে পদক পেলো সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

 

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরেকটি গৌরবময় অধ্যায় যুক্ত হলো! জাতীয় নারী ফুটবল দল এবছর একুশে পদক ২০২৫-এ ভূষিত হয়েছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাদের এই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করছে।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়। মোট ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলও এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ২০২২ ও ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
নারী ফুটবলারদের এই সাফল্য দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে।

একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
নারী ফুটবল দলের এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য রইলো শুভেচ্ছা!

 

চট্টগ্রামে পাঁচ সংগ্রামী নারী পেলেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৪’

সমাজ উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে সফলতা এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচজন নারীকে ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোডের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, এবং সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিন।
সম্মাননা পাওয়া পাঁচজন নারীর প্রত্যেকেই সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মানিত হয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কামালপাড়া ইউনিয়নের নিগার শারমিন। শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সফলতার স্বীকৃতি পেয়েছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রেহেনা সুলতানা। সফল জননী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামের চেমন আরা বেগম। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য সম্মাননা পেয়েছেন কক্সবাজার জেলার মোহাজেরপাড়া এলাকার জাহানারা ইসলাম। এছাড়া নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য কক্সবাজার সদরের ঘোনার পাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম সম্মানিত হয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেয়া খান বলেন, “সুবিধাবঞ্চিত অবস্থা থেকে উঠে এসে যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের স্বীকৃতি দিতেই এই আয়োজন। এতে অন্য নারীরাও উৎসাহিত হবেন। আমাদের সমাজে এখনো নারীদের অনেক অবদান স্বীকৃত হয় না, তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। নারীদের এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিন বলেন, “সমাজে মানুষে মানুষে বিভাজন আছে। মানসিক বাধা দূর করা দরকার। নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। উন্নত বিশ্বে নারী-পুরুষ কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করছে। শুধু চাকরি করলেই সফল বা স্বাধীন বলা যাবে না। আপনার নিজের জীবন নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই আপনি স্বাধীন।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ কর্মসূচির পরিচালক মনির হোসেন এবং চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানা।

এই স্বীকৃতি শুধু পাঁচজন নারীর জন্য নয়, বরং সমস্ত সংগ্রামী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নারী উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, চাকরিজীবী, শিক্ষিকা এবং নির্যাতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানো নারীদের সম্মানিত করে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ আবারও প্রমাণ করলো—নারীরা যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে সক্ষম।

 

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি শিল্পের নব পথিকৃৎ রুমেয়সা কুরতুলুস

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি দীর্ঘ শতাব্দী ধরে দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অন্যতম প্রধান অংশ। “শব্দ উড়ে যায়, লেখা থেকে যায়” -এই প্রবাদটি তুরস্কে ক্যালিগ্রাফির স্থায়িত্ব ও গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। একসময় এই শিল্প রাজপ্রাসাদ, মসজিদ এবং পাণ্ডুলিপিকে অলঙ্কৃত করত, কিন্তু আধুনিক যুগে বিজ্ঞাপন, ডিজিটাল স্ক্রিন ও নিওন সাইনের ভিড়ে এর সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। তবু কিছু শিল্পী এখনো এই ঐতিহ্যকে জীবন্ত রাখার চেষ্টা করছেন, এবং তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রুমেয়সা জয়নেপ কুরতুলুস।
ইস্তাম্বুলের উস্কুদারে নিজের ক্যালিগ্রাফি স্টুডিও ‘কেবিকেচ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাত্র ২৬ বছর বয়সেই কুরতুলুস ক্যালিগ্রাফি শিল্পে নতুন জীবন আনতে শুরু করেন। তার কাজ শুধু ব্যক্তিগত শিল্পীসত্তার প্রকাশ নয়, বরং তুরস্কের ঐতিহ্য রক্ষা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরার মাধ্যম।

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি চর্চার ইতিহাস দীর্ঘ। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর এটি আরও সমৃদ্ধ হয়। তবে ১৯২৮ সালে তুরস্কে লাতিন বর্ণমালা চালুর ফলে আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রভাব কমতে থাকে, এবং এখান থেকেই আধুনিক তুর্কি ক্যালিগ্রাফির নতুন শাখার জন্ম হয়। এমিন বারিন ছিলেন এই পরিবর্তনের অগ্রদূত। তিনি আরবি ক্যালিগ্রাফির নান্দনিকতাকে লাতিন শৈলীর সঙ্গে একত্রিত করে এক নতুন ধারা তৈরি করেন।

কুরতুলুসও তার ক্যালিগ্রাফি শৈলীতে ঐতিহ্যগত কুফিক স্ক্রিপ্ট, লাতিন ক্যালিগ্রাফি ও আধুনিক ডিজাইনের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে তার সৃষ্টি ‘শব্দ উড়ে যায়, লেখা থেকে যায়’ এক অনন্য উদাহরণ, যেখানে তিনি তুরস্কের বর্ণমালা সংস্কারের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তার কাজে আরবি ও লাতিন অক্ষরের অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়, যা কেবল দৃষ্টিনন্দন নয়, বরং ঐতিহাসিক সংযোগও তুলে ধরে।

তার শিল্পীসত্তা শুধু সৃজনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
কুরতুলুসের আর্কিটেকচারাল শিক্ষার প্রভাব তার কাজে স্পষ্ট -তিনি ক্যালিগ্রাফিকে শুধুই অক্ষরের নকশা হিসেবে দেখেন না, বরং স্থাপত্যশিল্পের মতোই এটি একটি কাঠামোগত উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেন। তার মতে, ক্যালিগ্রাফি শুধু শিল্প নয়, এটি একটি সভ্যতার সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির প্রতিচিত্র।

২০১৭ সালে তার প্রথম প্রদর্শনী ‘রেঞ্জ খোদা’ দর্শকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। এটি ছিল একটি মাল্টি-সেন্সরি প্রদর্শনী, যেখানে শুধু চোখ নয়, স্পর্শের মাধ্যমেও শিল্পকর্ম অনুভব করা যেত। বিশেষ করে, একটি ব্রেইল ক্যালিগ্রাফি কাজ ‘আল্লাহ’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা তাদের প্রার্থনার অনুভূতিকে বাস্তবে রূপ দেয়।

কুরতুলুসের কাজ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বেশ প্রশংসিত। ২০২৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রোমান হলিডে কনফারেন্সে অংশ নেন এবং প্রথন তুর্কি ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সম্মাননা স্বরূপ ‘ড্যান্সিং লেটার্স’ স্কলারশিপ অর্জন করেন।

বর্তমানে, তিনি তার স্টুডিওতে নিয়মিত কর্মশালা পরিচালনা করছেন, যেখানে নতুন প্রজন্মকে ক্যালিগ্রাফির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার কাজ শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণই নয়, বরং এটি একটি নবজাগরণ।

রুমেয়সা কুরতুলুস প্রমাণ করেছেন যে ক্যালিগ্রাফি শুধুমাত্র অতীতের স্মারক নয়,বরং এটি একটি প্রাণবন্ত ও সৃজনশীল শিল্পধারা, যা সময়ের সঙ্গে নবায়িত ও বিকশিত হচ্ছে।

 

সুনীতা কৃষ্ণন: এক সাহসী সংগ্রামী নারী

 

শৈশব থেকেই অন্যের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি গভীর সহানুভূতি ছিল সুনীতা কৃষ্ণনের। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নাচ শেখাতে শুরু করেন। ১২ বছর বয়সেই গড়ে তোলেন একটি স্কুল, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেন।
কিন্তু সমাজে পরিবর্তন আনার এই প্রয়াস সহজ ছিল না। ১৫ বছর বয়সে এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন তিনি—আটজন দুর্বৃত্ত তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এই নির্মম অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রতিকূলতার কাছে হার না মেনে, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প নেন।
পরবর্তীতে তিনি ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট যোসেফ কলেজ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ম্যাঙ্গালোর থেকে মেডিকেল ও সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল নারী পাচার ও যৌন শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই।

১৯৯৬ সালে, নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়ে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দেখতে পান, পরিবারও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।এই অবস্থায় তিনি থেমে যাননি। হায়দ্রাবাদে এসে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেন।
নিজের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রজ্জ্বলা’, যা আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যান্টি-ট্রাফিকিং শেল্টার। এখানে পাচার হওয়া এবং নিপীড়িত মেয়েদের উদ্ধার, আশ্রয়, চিকিৎসা, আইনি সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। নারী পাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি লেখালেখি ও সেমিনারেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

সুনীতা কৃষ্ণন শুধু সমাজের জন্য কাজ করলেও নিজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না। তাঁর স্বামী, চলচ্চিত্র পরিচালক রাজেশ টাচরিভারের কাছ থেকেও কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেন না। তাঁর বিখ্যাত স্লোগান “Real Men Don’t Buy Sex” আজ কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
নারী পাচারের বিরুদ্ধে অবিসংবাদিত ভূমিকার জন্য তিনি ২০১৬ সালে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হন এবং আরও বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন।

নারী পাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাঁকে একাধিকবার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে—১৪ বার শারীরিক নিগ্রহ, প্রাণনাশের হুমকি, এমনকি গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও তিনি দমে যাননি। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য সমাজ থেকে এই অমানবিক প্রথা নির্মূল করা।
সুনীতা কৃষ্ণন প্রমাণ করেছেন, একক প্রচেষ্টায়ও সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাঁর দৃঢ়তা, সাহস এবং অপরিসীম মানবিকতা আজ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা।

 

নাসায় প্রথম বাংলাদেশি নারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার; সিলেটের মাহজাবীন

 

সফলতার গল্প সবসময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে, আর সেই গল্প যখন নিজ দেশের কারও হয়, তখন তা গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনই এক অনুপ্রেরণার নাম মাহজাবিন হক, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।

মাহজাবিন হকের শৈশব কেটেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ এনামুল হক পূবালী ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। ২০০৯ সালে মাহজাবিন তার পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ও মহাকাশবিজ্ঞানের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি মিশিগান রাজ্যের ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

নাসায় যোগদানের আগে মাহজাবিন দুই দফায় নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ইন্টার্নশিপ করেন। প্রথমবার তিনি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে নাসার স্থায়ী নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করে।
ইন্টার্নশিপ শেষে তিনি নাসা, অ্যামাজনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাব পান। তবে তিনি নাসায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।

একজন বাংলাদেশি নারী হিসেবে নাসায় কাজ করা নিঃসন্দেহে এক বিশাল অর্জন। মাহজাবিন প্রমাণ করেছেন যে পরিশ্রম, মেধা ও একাগ্রতা থাকলে বিশ্বের যেকোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্ন সত্যি করা সম্ভব। তার সাফল্য বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করবে এবং তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনুপ্রেরণা দেবে।
বাংলাদেশের মেধাবী তরুণরা যে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে, মাহজাবিন হক তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

 

জালালুদ্দিন রুমি ও তিতির পাখি

 

বিস্তীর্ণ বনের সরু পথ ধরে হেঁটে চলেছেন জালালউদ্দিন রুমি। প্রকৃতির নীরবতা তার চিন্তাকে গভীরতর করে তুলছে। হঠাৎ, ঝোপের আড়াল থেকে উড়ে আসা একটি বড় কালো তিতির পাখি তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল। দক্ষ হাতে পাখিটিকে ধরে ফেললেন রুমি।
পাখিটিকে দেখে তিনি ভাবতে লাগলেন— একে আগুনে ঝলসাবেন, নাকি সুস্বাদু তরকারি হিসেবে রান্না করবেন!
ঠিক তখনই পাখিটি রুমির হাতের ভেতর নড়েচড়ে উঠে কণ্ঠে আহ্বান জানাল,
“রুমি! জীবনে এত মাংস খেয়েও তোমার লোভ ফুরোয়নি! যদি তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও, আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেবো, যা তোমার জীবনকে শান্তি ও আনন্দে ভরিয়ে দেবে।”
রুমি একটু বিস্মিত হলেন, তারপর বললেন,
“আচ্ছা, তাহলে প্রথম পরামর্শ এখানেই দাও। যদি মূল্যহীন মনে হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই তোমাকে হত্যা করবো।”

পাখিটি বলল,
“তুমি সবসময় অন্যের কথায় বিচলিত হয়ে পড়ো। অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় জড়ানো তোমার স্বভাব। অথচ মানুষকে তাদের মতো থাকতে দিলে, তোমার জীবন আরও শান্ত হবে।”
রুমি চিন্তা করলেন, এতে সত্যিই গভীর এক জ্ঞান আছে!
তিনি বললেন, “তাহলে দ্বিতীয় পরামর্শ বলো।”
পাখিটি বলল, “আমি গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় পরামর্শ দেবো। আগে আমাকে মুক্ত করো।”
রুমি কিছুটা দ্বিধান্বিত হলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসল।

পাখিটি গাছের ডাল থেকে বলল,
“রুমি! অতীতকে কখনো বদলানো যায় না। তাই বর্তমানকে উপভোগ করো এবং ভবিষ্যতের জন্য বেঁচে থাকো।”
রুমি গভীরভাবে তা চিন্তা করলেন। কিন্তু তখনই পাখিটি হঠাৎ হেসে বলল,
“যাই হোক, তুমি বড় বোকামি করেছো! আমার পেটে তিন কেজি হীরা ছিল। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে, তবে সেই হীরা পেয়ে তোমার তিন পুরুষ আরাম করে কাটাতে পারতো।”
এই কথা শুনে রুমি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন! তার বুক ধক করে উঠল। হতভম্ব হয়ে তিনি পাখিটিকে ধরতে দৌড় দিলেন।
পাখিটি তখন উঁচু স্বরে বলল,
“রুমি! তুমি দেখছি আমার দ্বিতীয় পরামর্শের কথাই ভুলে গেলে! আমি তো বলেছিলাম, অতীতকে বদলানো যায় না। আর ভাবো তো, আমি যেখানে মাত্র দুই কেজির, সেখানে কীভাবে আমার পেটে তিন কেজি হীরা থাকবে?”
রুমি থমকে দাঁড়ালেন। বুঝতে পারলেন, তিনি আবারও ভুল করেছেন।

এবার রুমি তিতিরকে অনুরোধ করলেন, “তোমার তৃতীয় পরামর্শটা দাও। এবার আমি সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শুনবো।”
পাখিটি বলল,
“সবার কাছে উপদেশ দিতে যেও না। শুধু তাদের উপদেশ দাও, যারা তা গ্রহণ করতে চায়। মনে রেখো, কিছু কাপড় এতটাই পুরোনো ও জীর্ণ হয়ে যায় যে, তা আর কখনো সেলাই করা যায় না।”

রুমি এবার সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, পাখিটির প্রতিটি পরামর্শই জীবন বদলে দেওয়ার মতো!
গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে তিনি বনের পথ ধরে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু এবার তার চিন্তাধারা আগের চেয়ে অনেক পরিণত ও শান্ত।

গল্পের শিক্ষা:

✅ অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়।
✅ অতীতকে পরিবর্তন করা যায় না, তাই বর্তমানকে উপভোগ করতে হবে।
✅ উপদেশ কেবল তাদেরই দিতে হবে যারা তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

আরওয়া আনাম

 

প্রতারণার ফাঁদে নারী প্রবাসীরা: সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস

 

মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন অনেক বাংলাদেশি নারী। এই প্রতারণা রোধে সতর্কতা জারি করেছে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
দূতাবাসের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু চক্র নারী কর্মীদের ট্যুরিস্ট বা অন্যান্য ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে বৈধভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় তারা বিপদের মুখে পড়ছেন।

বাংলাদেশ সরকার এবং মালয়েশিয়ার সরকারের মধ্যে নারী কর্মীদের নিয়োগের কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। ফলে ট্যুরিস্ট বা অন্য কোনো ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, অনেক নারী এজেন্সির প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনেকে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এমনকি হচ্ছেন শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার।

বাংলাদেশ হাইকমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কোনো নারী যেন দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণামূলক প্রস্তাবে সাড়া না দেন। কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তি যদি নারী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজের নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণামূলক।
হাইকমিশন থেকে আরও বলা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় এসেছেন এবং প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা দ্রুত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বৈধ উপায়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রবাসে নিরাপদ থাকুন, প্রতারণা থেকে দূরে থাকুন।

 

নারীর আত্মরক্ষার কিছু কার্যকরী কৌশল: সচেতনতা-প্রশিক্ষণ

বর্তমান সমাজে নারীর সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মরক্ষার কৌশল শেখা নারীদের জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় নয়, এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মাধ্যম। অপরাধের ঝুঁকি এড়াতে ও নিজেকে রক্ষা করতে নারীদের সচেতন এবং সক্ষম হতে হবে। এই প্রবন্ধে নারীর আত্মরক্ষার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল শেয়ার করা হলো।

১. নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ান

নারীদের আত্মরক্ষার মূল ভিত্তি হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। দৃঢ় মনোভাব অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতার প্রতি নিরুৎসাহিত করে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীদের মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকা জরুরি।

২. আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন

আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নারীদের শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা বাড়ায়। বিশেষ কিছু কৌশল, যেমন:

কারাতে ও মার্শাল আর্ট: শারীরিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কার্যকর।

সেলফ-ডিফেন্স ট্রেনিং: আক্রমণকারীকে সামলানোর সহজ কৌশল শেখা।

৩. সবসময় সতর্ক থাকুন-
প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। নারীদের উচিত:

অপরিচিতদের সঙ্গে একা চলাফেরা এড়ানো।

রাতের বেলা আলোকিত ও জনবহুল রাস্তায় চলাচল করা।

সন্দেহজনক পরিবেশ দেখলে দ্রুত সরে যাওয়া।

৪. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করুন

প্রযুক্তি নারীর সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন:

মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাড়ানো।

লাইভ লোকেশন শেয়ার করা।

জরুরি অবস্থায় পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে কল করা।

৫. সুরক্ষার সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন

কিছু সহজে বহনযোগ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম নারীদের আত্মরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

পেপার স্প্রে: এটি চোখে ব্যবহার করলে আক্রমণকারী সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে পড়ে।

অ্যালার্ম ডিভাইস: বিপদের সময় জোরে শব্দ করে সাহায্য চাইতে কার্যকর।

৬. আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন

নারীদের তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হলে কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয় এবং আইনের সাহায্য নেওয়া যায় তা জানা জরুরি।

৭. মানসিক শক্তি অর্জন করুন

বিপদের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও ঠান্ডা মাথায় কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এই দক্ষতা অর্জনের জন্য নিয়মিত মানসিক প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।

নারীর আত্মরক্ষার কৌশল শুধু সুরক্ষা নয়, এটি একটি আত্মসম্মানের বিষয়। সচেতনতা, সঠিক প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। নিজের শক্তি ও সক্ষমতা বাড়িয়ে নারীরা সমাজে আরও নিরাপদ ও স্বাধীন হয়ে উঠতে পারেন।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখাই হলো নারীর সবচে বড় শক্তি।

 

বুক রিভিউ- বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)

 

ড. হিশাম আল আওয়াদির লেখা “বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” একটি অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থ, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফল হওয়ার পথ দেখায়। বইটির মূল ধারণা হলো মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন এবং শিক্ষা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং আধুনিক জীবনের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
লেখক দেখিয়েছেন, মহানবী (সা.) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ নেতা, চিন্তাবিদ এবং মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী যেমন ধৈর্য, সহানুভূতি, ন্যায়পরায়ণতা, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তা বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু
বইটিতে মুহাম্মদ (সা.)-এর বিভিন্ন গুণাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে, যা আমাদের স্মার্ট জীবনযাপনের জন্য সহায়ক:

যোগাযোগ দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং তাদের মন জয় করতেন, তা বইটির অন্যতম আকর্ষণ। আধুনিক কর্মজীবনে এটি সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সমস্যা সমাধান ও সংকট মোকাবিলা
তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংকট এবং সেগুলো মোকাবিলার জন্য তাঁর ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আমাদের শেখায় কীভাবে জটিল পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে সামাল দেওয়া যায়।

মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা
মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং ন্যায়পরায়ণ আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে কীভাবে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করা যায়, তা এই বইয়ের অন্যতম মূল শিক্ষা।

লিডারশিপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আধুনিক যুগের নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর।

মুখ্য বার্তা
বইটির মূল বার্তা হলো, মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের শেখায় কিভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং নৈতিকতার মাধ্যমে আমরা নিজেদের স্মার্ট এবং সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

“বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি আধুনিক জীবনের একটি প্রাসঙ্গিক গাইড। এই গাইডলাইন আমাদের নৈতিক এবং পেশাগত জীবনে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। বইটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ জীবনে ধারণ করে একজন স্মার্ট, দক্ষ, এবং মানবিক মানুষ হওয়া সম্ভব।

 

শিশুর স্ক্রিন আসক্তি কমিয়ে ফাইন মোটর স্কিল বাড়ান

বর্তমান সময়ে শিশুরা আগের চেয়ে বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে কাটাচ্ছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ কিংবা টেলিভিশনের প্রতি তাদের ঝোঁক এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ কিছু কাজ করতেও তারা এখন হিমশিম খায়। জুতার ফিতা বাঁধা, বোতাম লাগানো, চামচ ধরা, কাঁচি চালানো কিংবা কলম দিয়ে ঠিকমতো লেখা—এসব কাজ আগের তুলনায় অনেক শিশুর জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুরা এখন হাতে-কলমে কাজ কম করছে, ফলে তাদের ফাইন মোটর স্কিলস (Fine Motor Skills) গড়ে ওঠার সুযোগ কমে যাচ্ছে। ফাইন মোটর স্কিলস হলো আমাদের হাত ও আঙুলের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার ক্ষমতা, যা লেখা, আঁকা, জুতা বাঁধার মতো কাজে দরকার হয়। কিন্তু প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুরা এসব কাজে দক্ষতা হারাচ্ছে।
এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়, তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময় এটি আরও প্রকট হয়েছে। মহামারির সময় শিশুরা ঘরবন্দি ছিল, স্কুলে যেতে পারেনি, খেলাধুলার সুযোগ কমে গিয়েছিল। অনেকেই তখন অনলাইনে পড়াশোনা করত, যার ফলে হাতে-কলমে লেখার চর্চা কম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির সময় যারা জন্মেছে, তারা ছয় মাস বয়সে ফাইন মোটর স্কিলস পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল করেছে। কিছু গবেষক মনে করেন, এর কারণ হতে পারে মায়ের মানসিক চাপ, আবার কেউ বলেন, শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ বদলে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে।

তবে শুধু মহামারি নয়, এর অনেক আগে থেকেই শিশুরা হাতে কাজ করার সুযোগ হারাচ্ছে। একসময় শিশুরা পাজল খেলত, কাঠের ব্লক দিয়ে টাওয়ার বানাত, রঙ করত, কাটাকুটি করত। এসব কাজ শিশুদের ধৈর্য বাড়াতে এবং হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে সাহায্য করে। কিন্তু এখন তারা বেশি সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে, ফলে হাতের ব্যবহার কমে গেছে। অনেকে মনে করেন, ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা বা ছবি আঁকা করাও উপকারী হতে পারে, কিন্তু এতে হাতে-কলমে কাজ করার যে বাস্তব অভিজ্ঞতা দরকার, তা তৈরি হয় না।

শিশুরা শুধু ফাইন মোটর স্কিলস নয়, বই পড়ার অভ্যাসও হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা আগের তুলনায় বিনোদনের জন্য বই পড়ছে অনেক কম। অথচ বইয়ের পাতা উল্টানো, মনোযোগ ধরে রাখা, শব্দ অনুসরণ করা—এসবই তাদের হাতের সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ায়।

এই সমস্যার সমাধান কী?
শিশুদের স্ক্রিন থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়, তবে তাদের হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। অভিভাবকরা চাইলে সহজ কিছু উপায়ে শিশুর ফাইন মোটর স্কিলস বাড়াতে পারেন।
একটি ভালো উপায় হলো শিশুদের বেশি করে লেখার সুযোগ দেওয়া। রঙ করা, কাটাকুটি করা, পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকা—এসব কাজ তাদের হাতের শক্তি বাড়ায়। ব্লক গেমস বা লেগো খেলতে দিলে শিশুরা হাতের নড়াচড়ায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। জুতার ফিতা বাঁধতে শেখানো, বোতাম লাগাতে দেওয়া, রান্নার ছোটখাটো কাজে যুক্ত করা—এসবও সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া, শিশুরা যাতে বই পড়ায় উৎসাহিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের হাতে গল্পের বই তুলে দিলে তারা পাতা উল্টানোর অভ্যাস করতে পারবে, যা তাদের হাতের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার জন্য ভালো।

শিশুরা প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে উঠবেই, তবে প্রযুক্তির পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং শিশুদের হাতে কাজ করার সুযোগ বেশি করে দেন, তাহলে তারা এই দক্ষতা ফিরে পেতে পারবে।

 

এবারের সাফল্যগাঁথা: দারিদ্র্য যাকে পিছাতে পারেনি স্বপ্ন পূরণের পথ থেকে

 

জীবনযুদ্ধে বিজয়ীরা হাল ছাড়েন না, প্রতিকূলতাকে পরিণত করেন সম্ভাবনায়। একসময় যে ঘর ভাড়া দিতেও হিমশিম খেত পরিবার, সেই ঘরের মেয়ে আজ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নপথে। দারিদ্র্য যার জন্য ছিল চরম বাধা, সেই সীমা আজ প্রমাণ করলেন—“মন যেখানে উচ্চ, সাফল্য সেখানে অনিবার্য।”

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সীমার বাবা একজন বাসচালক, মা গৃহিণী। সংসারের টানাপোড়েন লেগেই ছিল, কিন্তু সীমার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। দারিদ্র্যের অন্ধকারে থেকেও তিনি আলো খুঁজেছেন শিক্ষার পথেই। টিউশনি করে নিজের খরচ চালানো সেই সীমাই এবার দেশের একটি স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

সীমার বাবা চেয়েছিলেন মেয়েটি যেন অন্তত সাধারণ শিক্ষা শেষ করে, কিন্তু তার মায়ের চোখে ছিল আরো বড় স্বপ্ন। অভাবের কঠিন পথ পেরিয়ে, শত প্রতিকূলতা সয়ে তিনি বুক বাঁধলেন সংগ্রামের জন্য।
সীমার ভাষ্যমতে “পড়ার ইচ্ছে ছিল প্রবল, কিন্তু অর্থের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি, টিউশনি করে যা পেতাম, তাই দিয়ে বই-খাতা কিনতাম,”।

তার এই সাফল্যে পরিবার তো বটেই, পুরো এলাকাবাসী,সে এখন অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা।
কেবল নিজের জন্য নয়, সীমার স্বপ্ন পুরো সমাজকে আলোকিত করা। তিনি বলেন, “একদিন ডাক্তার হয়ে আমি দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে চাই। যারা চিকিৎসা পায় না, তাদের বিনামূল্যে সেবা দিতে চাই। আমি জানি, কষ্ট কাকে বলে, তাই আমি চাই না কেউ কষ্ট পাক।”
সীমার গল্প প্রমাণ করে, “যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।” যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে, তবে দারিদ্র্যও স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।
এ গল্প শুধু সীমার নয়, বরং সকল স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর। যারা লড়াই করতে ভয় পান, তাদের জন্য সীমা যেন এক জীবন্ত উদাহরণ। কারণ সত্যিই, “দুঃসাহসীরাই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়।”

 

সায়েন্স ফিকশন : তারকামন্ত্র

সাল ২১৫৭। পৃথিবী এখন প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ পার করছে। মেঘের ওপর দিয়ে উড়ন্ত নগরী, গ্রহান্তর ভ্রমণের সুযোগ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবাধ ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অগ্রগতির মাঝেও এক অদৃশ্য সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে। পরিবেশের ধ্বংস, অবাধ যুদ্ধে শক্তির অপচয় এবং মানবজাতির মধ্যে বাড়তে থাকা বিভক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, মানব সভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
ঠিক এই সময়ে, আকাশে একটি নতুন তারা উদয় হয়। এটি কোনো মহাজাগতিক ঘটনা নয়, বরং একটি বিশাল মহাকাশযান। এর ভেতর থেকে একটি বার্তা ভেসে আসে, যা পৃথিবীর প্রতিটি ডিভাইসে সম্প্রচারিত হয়। বার্তাটি ছিল এক অচেনা ভাষায়, যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবীর সব ভাষায় অনূদিত হয়।
“আমরা জেনাসি। আমরা তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি। মানবজাতি নিজেদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা তোমাদের নতুন একটি জীবন দিতে পারি, কিন্তু বিনিময়ে তোমাদের অতীত বিস্মৃত হতে হবে। তোমাদের স্মৃতি মুছে ফেলে একটি শূন্য পাতা থেকে শুরু করতে হবে।”

এই প্রস্তাব শোনার পর পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের “উন্নয়নপন্থী” বলে পরিচয় দেয়, জেনাসিদের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। তারা মনে করে মানবজাতির অতীত ভুলে নতুন করে শুরু করাই ভবিষ্যত অগ্রগতির একমাত্র উপায়।
কিন্তু অন্যদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী “নস্টালজিস্টরা” এই প্রস্তাবকে দাসত্বের সামিল বলে আখ্যায়িত করে। তাদের বিশ্বাস, স্মৃতি ছাড়া মানুষ আর মানুষ থাকবে না।
এর মাঝেই এক তরুণ বিজ্ঞানী আয়েশা এই ঘটনার গভীর রহস্য উন্মোচনে এগিয়ে আসে। আয়েশা কাজ করছিল এক গোপন প্রকল্পে, যার মাধ্যমে জেনাসিদের প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছিল। সে আবিষ্কার করে যে, জেনাসিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি একটি ফাঁদ। তারা মানবজাতির স্মৃতিকে শুধুমাত্র মুছে ফেলবে না, বরং সেই স্মৃতিগুলো সংগ্রহ করে একটি বিশেষ অস্ত্র তৈরি করবে।
এই অস্ত্রটি হবে একটি “স্মৃতিশক্তি” বোমা, যা যে কোনো জাতির মস্তিষ্কের স্মৃতি মুছে ফেলতে সক্ষম। জেনাসিরা পৃথিবীকে শুধু সাহায্য করার ভান করছে, আসলে তারা মানবজাতিকে তাদের পরবর্তী শিকার বানাতে চায়। আয়েশা বুঝতে পারে যে, তার হাতে সময় খুব কম।

মহাকাশযানটিতে প্রবেশ করার জন্য আয়েশা একটি বিপজ্জনক মিশন হাতে নেয়। বিদ্রোহীদের একটি দল তার সঙ্গী হয়। জেনাসিদের জাহাজে প্রবেশ করে তারা দেখতে পায়, সেখানে পৃথিবীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতির বিশাল ভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এই স্মৃতিগুলো থেকে জেনাসিরা তাদের অস্ত্রের জ্বালানি তৈরি করছে।
অবশেষে, আয়েশা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে পৌঁছায়। কিন্তু সেখানে তাকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সে এই সিস্টেম ধ্বংস করে তবে পৃথিবী রক্ষা পাবে, কিন্তু একই সঙ্গে পৃথিবীর সব প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মুছে যাবে। অন্যদিকে, যদি সে জেনাসিদের সঙ্গে আপস করে, তবে মানুষের স্মৃতি হারানোর ঝুঁকি থাকবে।
আয়েশা একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সে জেনাসিদের সিস্টেম ধ্বংস করার পাশাপাশি, পৃথিবীতে একটি বার্তা পাঠায়—”আমাদের অতীতই আমাদের শক্তি। স্মৃতি হারানো মানে আমাদের অস্তিত্ব হারানো।”

এরমাঝে জেনাসিদের জাহাজ ধ্বংস হয়,আর পৃথিবী আবার নতুনভাবে তার যাত্রা শুরু করে।
এই মিশন এখানে শেষ হলেও, আকাশে জেনাসিদের মতো আরও কোনো সভ্যতার হুমকি থাকতেই পারে। কিন্তু এবার মানুষ আরো দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত।

-আরওয়া আনাম

 

দায়িত্ব ফিরছেন ব্রিটিশ রাজবধু কেট মিডলটন

 

ব্রিটিশ রাজবধূ ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজকীয় দায়িত্বে ফিরে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। আজ রবিবার প্রকাশিত রয়্যাল ফাউন্ডেশন সেন্টার ফর আর্লি চাইল্ডহুডের এক প্রতিবেদনের ভূমিকায় তিনি সমাজ উন্নয়নের জন্য সমবেদনা, সমানুভূতি এবং সামাজিক দক্ষতার গুরুত্ব নিয়ে বার্তা দিয়েছেন।

কেট মিডলটন ২০২১ সালে রয়্যাল ফাউন্ডেশন সেন্টার ফর আর্লি চাইল্ডহুড প্রতিষ্ঠা করেন, যা শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রতিবেদনে তিনি দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য, আসক্তি ও নিপীড়নের মতো সামাজিক সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমাদের অবশ্যই নতুন শুরু, পুনরুদ্ধার ও পুনর্ভারসাম্য করতে হবে। এর অর্থ হলো আমাদের নিজস্ব আচরণ, আবেগ ও অনুভূতির প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করা।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের পরস্পরের প্রতি সমবেদনা ও সমানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও ভালো হতে হবে, যাতে আমাদের জীবনে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। আর এ সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের সামাজিক ও মানসিক দক্ষতার বিকাশ এবং সেগুলোকে লালন করা। যদি আমরা উন্নতি করতে চাই, তবে এগুলোকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে কেট ধীরে ধীরে রাজকীয় দায়িত্বে ফিরছেন। গত সপ্তাহে তিনি দুটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত বছর জানুয়ারিতে কেটের তলপেটে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়, এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কেটের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে, কারণ রাজা তৃতীয় চার্লসও ক্যানসারে আক্রান্ত।
২০২৪ সাল ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য ছিল কঠিন সময়। রাজা তৃতীয় চার্লস ও রাজবধূ কেট মিডলটনের অসুস্থতা পুরো রাজপরিবারকে বিপর্যস্ত করেছিল। প্রিন্স উইলিয়ামও বলেছিলেন, বছরটি তাদের পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে।
তবে কেটের প্রত্যাবর্তন রাজপরিবার ও তার ভক্তদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে।
কেট মিডলটনের এই বার্তা শুধু রাজপরিবারের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের সবাইকে আরও সহানুভূতিশীল হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

বিশ্ব হিজাব দিবস ২০২৫: নারীর সম্মান ও স্বাধীনতার প্রতীক

প্রতি বছর ১লা ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব হিজাব দিবস। ২০১৩ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী নাজমা খান এই দিবসের সূচনা করেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল হিজাব পরিধানকারী নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করা এবং তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো। বর্তমানে বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।

২০২৫ সালের বিশ্ব হিজাব দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “Progression, Not Oppression” (প্রগতি, নিপীড়ন নয়)
এবং হ্যাশট্যাগ #UnapologeticHijabi

এই বার্তার মাধ্যমে হিজাব পরিধানকারী নারীদের স্বাধীনতা,ক্ষমতায়ন, তাদের অর্জন এবং সমাজে তাদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।

হিজাবের তাৎপর্য ও গুরুত্ব
ইসলামে হিজাব কেবল একটি পোশাক নয়, বরং এটি নারীর আত্মপরিচয়, শালীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের চাদরের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তাদের উত্যক্ত করা হবেনা।” (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৯)

হিজাব নারীকে সম্মানিত করে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি কেবল মুসলিম নারীদের জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির নারীরাও শালীন পোশাক পরিধান করে থাকে। বিশ্ব হিজাব দিবসের মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ব হিজাব দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
✅ গ্লোবাল ভার্চুয়াল কনফারেন্স
✅ সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন – #UnapologeticHijabi হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সচেতনতামূলক পোস্ট করা হবে।
✅ হিজাব চ্যালেঞ্জ – অমুসলিম নারীদের একদিনের জন্য হিজাব পরিধান করে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে উৎসাহিত করা হয়।
✅ আলোচনা সভা ও কর্মশালা – হিজাবের গুরুত্ব, নারীর অধিকার ও সমাজে হিজাব পরিধানকারী নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

অনেকে মনে করেন হিজাব একটি বাধ্যবাধকতা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একজন নারীর স্বাধীন পছন্দের প্রতীক। বহু মুসলিম নারী-বিজ্ঞান, শিক্ষা, রাজনীতি, ক্রীড়া ও বিভিন্ন পেশায় হিজাব পরেই সফলতা অর্জন করছেন। তাই বিশ্ব হিজাব দিবস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, নারী হিজাব পরিধান কখনো তার অগ্রগতির অন্তরাল হতে পারেনা।এবং হিজাব পরা বা না পরা এটি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

বিশ্ব হিজাব দিবসের মূল বার্তা হলো— নারীর হিজাব পরার স্বাধীনতাকে সম্মান করুন। এটি কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং নারীর আত্মপরিচয়ের একটি অংশ। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য “Progression, Not Oppression” এর মাধ্যমে বিশ্বের সকল নারীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আসুন, আমরা একে অপরের সংস্কৃতি ও পোশাকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং একটি সহনশীল সমাজ গড়ে তুলি।