banner

বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: January 21, 2025

 

ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কল এর ম্যানস সার্চ ফর মিনিং

 

“ম্যানস সার্চ ফর মিনিং” বইটি বিশিষ্ট মনস্তত্ত্ববিদ ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কলের রচিত এক অনবদ্য সৃষ্টি। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত এই বইটি তার নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থাকার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা।
ফ্র্যাঙ্কল কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী অবস্থায় শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক নির্যাতন সহ্য করেছিলেন, কিন্তু এই অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি জীবনের গভীর অর্থ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেন।

ফ্র্যাঙ্কল এই বইতে বলেছেন, “মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে তার জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে সক্ষম।” এই বইয়ে তিনি তার “লোগোথেরাপি” নামক থেরাপিউটিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন। ফ্র্যাঙ্কল বিশ্বাস করতেন, মানুষের আসল শক্তি তার মনোভাব এবং নিজের জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে নিহিত। জীবন সংগ্রামে, এমনকি সর্বোচ্চ কষ্টের মধ্যেও একটি অর্থপূর্ণ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

বইটির প্রথম ভাগে, ফ্র্যাঙ্কল তার নিজস্ব কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে বন্দীদের শারীরিক নির্যাতন, ক্ষুধা, দুর্ভোগ এবং মৃত্যুর মুখোমুখি করে তোলা হয়েছিল। তবে তিনি এটিও বলেছেন, যে ব্যক্তি মানসিকভাবে তার জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য খুঁজে পায়, সে চরম শাস্তির মধ্যেও নিজেকে সংরক্ষণ করতে পারে। এই অভিজ্ঞতাগুলি তার থেরাপির ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করে।

বইটির দ্বিতীয় ভাগে, ফ্র্যাঙ্কল তার “লোগোথেরাপি” পদ্ধতির মাধ্যমে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার উপায় ব্যাখ্যা করেন। লোগোথেরাপি মানে হলো, জীবনের উদ্দেশ্য এবং অর্থ খোঁজা। ফ্র্যাঙ্কল বলেন, জীবনের তিনটি প্রধান পথ হতে পারে:
১. সৃজনশীল কাজ বা অর্জন – যা মানুষের কাজের মাধ্যমে তার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।
২. ভালোবাসা এবং সম্পর্ক – অন্যদের প্রতি যত্ন এবং ভালোবাসা অনুভব করাও জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে।
৩. দুর্দশা এবং কষ্ট সহ্য করা– যখন কোনো পরিস্থিতি পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সেই পরিস্থিতিতেও মানসিক শক্তি খুঁজে বের করার ক্ষমতা।

“ম্যানস সার্চ ফর মিনিং” বইটি শুধু মনস্তত্ত্ববিদ বা চিকিৎসকদের জন্য নয়, বরং সকল সাধারণ মানুষের জন্যই একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গ্রন্থ। ফ্র্যাঙ্কল জানান, আমাদের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো কেবল শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে না, বরং আমাদের মানসিক দৃঢ়তা, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা এবং জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছা এর মূল ভিত্তি। এই বইটি পাঠকদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের জীবনে কঠিন মুহূর্তে সত্যিকার অর্থ খুঁজে পেতে এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য স্পষ্ট করতে।

 

সমাজে নারীর অবস্থান:আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তনের ধারা

 

নারী আন্দোলন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। এটি কেবল নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ার আন্দোলন।

নারী আন্দোলনের শিকড় বহু প্রাচীন, তবে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি সুসংগঠিত রূপ পায়। বেগম রোকেয়া নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং সুফিয়া কামাল নারীর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য কাজ করেন।
ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধেও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী আন্দোলনের মাধ্যমেই নারীর স্বাধিকার, সমান অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়।

সেই ধারাবাহিকতায় আজ নারীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করে যাচ্ছে। NASA International Space Apps Challenge 2023-এ বাংলাদেশি নারীদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া নারীসাফল্যের একটি দৃষ্টান্ত। এছাড়া, উদ্যোক্তা নারীরা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছেন। রাজনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, এবং সংস্কৃতিতে নারীর দৃঢ় পদচারণা আমাদের সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দেয়।

নারীর সাফল্যের গল্প যতই অনুপ্রেরণাদায়ক হোক, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এখনও নারীর অগ্রগতির পথে বড় বাধা। সামাজিক কুসংস্কার, লিঙ্গ বৈষম্য, এবং সহিংসতা নারীর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘SHE’ কর্মশালার মতো প্রকল্পগুলো নারীদের ক্ষমতায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবুও, নারীর প্রকৃত সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

নারী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে চাই সমন্বিত প্রচেষ্টা। নারীর জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো অপরিহার্য। আইনি সহায়তা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি নারীর উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। তাছাড়া, নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে পরিবার,ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নারী আন্দোলন শুধু নারীদের নয়, সমগ্র সমাজের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। অতীতের সংগ্রাম এবং বর্তমানের সাফল্য আমাদের আশাবাদী করে যে, নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ আরও সমৃদ্ধ হবে।

 

পারিবারিক ভাঙনে বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রম

 

সালেহ(কাল্পনিক চরিত্র) এক সময় ছিলেন একটি সুখী পরিবারের প্রধান।
তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছিলেন।
কিন্তু কয়েক বছর আগে ছেলেরা চাকরি সুবাদে শহরে চলে যায়, মেয়েও তার পরিবার নিয়ে পাড়ি জমায় দূর শহরে।বছরে একবারো আসার সময় করতে পারেনা তার আদরের সন্তানেরা। স্ত্রীর মৃত্যু পর একদমই একা হয়ে পড়েন সালেহ, একাকীত্বের চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি শেষ আশ্রয় হিসেবে বেচে নেন বৃদ্ধাশ্রমকে

এটা আজকের বাস্তবতা। পারিবারিক ভাঙনের কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাচ্ছে।
সাধারণত; গ্রামীণ সমাজে পারিবারিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ় ছিল, কিন্তু আধুনিকতার প্রভাবে ছোট পরিবারের কাঠামো, উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের শহরে চলে যাওয়া, এবং পরিবারের সদস্যদের কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধাশ্রমে প্রবেশকারী বৃদ্ধদের সংখ্যা দিনদিন বাড়িয়েছে।

বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিকতা, বিশ্বায়ন এবং আর্থিক চাপের কারণে অনেক পরিবারে মুলতঃ একটাই সঙ্কট- পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি। শহরাঞ্চলে, অনেক তরুণ-তরুণী বাবা-মায়ের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে তাঁদের কর্মজীবনে বেশি মনোযোগী।এর ফলে বৃদ্ধরা একাকী জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে, বয়সজনিত অসুস্থতার জন্য তারা তাদের সন্তানদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননা। ফলে বৃদ্ধাশ্রমকে শেষ অবলম্বন করে নিতে হচ্ছে অনেককে।

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধাশ্রম

বাংলাদেশের সমাজে পরিবার এবং সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই মূল্যবোধে হ্রাস দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি শহরেই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। শহরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অতিরিক্ত আবাসন খরচ এবং চাকরি নিয়ন্ত্রণের কারণে শহরে বৃদ্ধদের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। শহরগুলির মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্কও কমে গেছে, এবং এখানকার পরিবারগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্কও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হলো পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি। সরকার এবং সমাজের উচিত, পরিবারগুলির মাঝে ভালোবাসা এবং যত্নের বন্ধন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মার প্রতি দায়িত্বশীল হয়।
পাশাপাশি, বৃদ্ধাশ্রমের মান উন্নয়ন এবং সেখানে বসবাসরতদের জন্য মানসিক সহায়তা দেওয়া দরকার। শুধুমাত্র বৃদ্ধাশ্রমই নয়, বরং পরিবার ও সমাজকে আরও সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে, যাতে বৃদ্ধরা সুখী এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারেন।

 

আসন্ন বিশ্ব নারী দিবসে স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা’২৫

 

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা-২০২৫’ এর দ্বিতীয় আসর। এ আয়োজনে দেশ ও প্রবাসের বিভিন্ন অঙ্গনের সফল ও প্রতিষ্ঠিত ২০ জন নারীকে সম্মানিত করা হবে।

বিজনেস এশিয়া ম্যাগাজিনের উদ্যোগে এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে থাকছে বিশেষ চমক। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত দুটি বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হবে।

এছাড়াও, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন দেশ-বিদেশের প্রায় সহস্রাধিক অতিথি। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানটি হবে আরও প্রাণবন্ত।

এ আয়োজনের আরেকটি পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৬ মার্চ ২০২৫, ঢাকার শেরাটন হোটেলে। এখানেও ২০ জন সফল নারীকে সম্মানিত করা হবে।

উল্লেখ্য, ‘স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা’ প্রথমবার আয়োজিত হয় ২০২৪ সালে, যেখানে ৩০ জন উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিল।