banner

বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: January 21, 2025

 

দেশে প্রথমবারের মত নারীর দেহে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত

 

রাজধানীর এক ৩০ বছর বয়সী নারীর শরীরে প্রথমবারের মতো হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) শনাক্ত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের ওই নারী নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং বর্তমানে আইইডিসিআর এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এইচএমপিভি সাধারণত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সময়মতো চিকিৎসা পেলে এ ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.):রাসুল (সা.) এর প্রতিরক্ষায় সাহসী নারী

 

হযরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.), যিনি উম্মে আম্মারা নামে পরিচিত,ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নারী সাহাবী।
তিনি মদিনার বনু খাযরাজ গোত্রে জন্মগ্রহ করেন।
এমন এক সাহসী নারী, যিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিরক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে দ্বিধা করেননি।

উহুদ যুদ্ধে নুসাইবা (রা.) আহতদের পানি সরবরাহ এবং তাদের সেবা করার দায়িত্ব পালন করছিলেন। যখন তিনি দেখতে পেলেন যুদ্ধের ময়দানে বিশৃঙ্খলা তৈরী হওয়াতে শত্রুরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করছে, তখন তিনি আর পিছিয়ে থাকেননি।
সঙ্গে থাকা তলোয়ার ও ঢাল হাতে তুলে নেন এবং শত্রুদের মোকাবিলা করতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে দাঁড়ান। নিজেকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করর একের পর এক শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সুরক্ষিত রাখেন। তাঁর এই বীরত্বের ঘটনা স্মরণ করে রাসুল (সা.) বলেন
“আজ আমি যেদিকেই তাকাই, দেখি নুসাইবা আমার প্রতিরক্ষায় লড়ছেন।”

যুদ্ধের পর নুসাইবা (রা.)-এর শরীরে অন্তত ১২টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এক আঘাত এত গুরুতর ছিল যে সেরে উঠতে অনেক দিন সময় লাগে। তিনি নিজের জীবনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাসুল (সা.)-কে শত্রুর তীর ও অস্ত্র থেকে রক্ষা করেন।

হযরত নুসাইবা (রা.) শুধু যোদ্ধা ছিলেন না; তিনি ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়ার কাজেও ছিলেন সক্রিয় ।
উহুদ যুদ্ধ ছাড়াও তিনি হুনাইন যুদ্ধ এবং হুদাইবিয়ার সন্ধিতে উপস্থিত ছিলেন।
তাঁর স্বামী এবং সন্তানরাও ছিলেন ইসলামের জন্য নিবেদিত।

হযরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সাহসিকতা, আত্মত্যাগ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়েছেন, ঈমান ও সাহস যদি মজবুত হয়, তবে যে কেউ ইসলামের জন্য এক বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে।

 

আফিয়া সিদ্দিকী :ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় এক নিরপরাধ নারী

 

এটি শুধুমাত্র একটি নীরব কষ্টের গল্প নয়। এটি মানবাধিকারের এক গ্লানিময় অধ্যায়, যেখানে একজন নিরপরাধ মুসলিম নারীকে শুধুমাত্র তার বিশ্বাস, পরিচয় এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অত্যাচারিত ও বন্দী করা হয়েছে। তার নাম—ড. আফিয়া সিদ্দিকী। একজন মেধাবী নিউরো-সায়েন্টিস্ট, একজন মা, এবং একজন মুসলিম নাগরিক—যিনি আজ বছরের পর বছর ধরে একটি শত্রু রাষ্ট্রের কারাগারে নিঃসঙ্গ বন্ধী অবস্থায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো এতটাই বিতর্কিত এবং ভিত্তিহীন যে, এটি কোনভাবেই ন্যায়বিচারের প্রতীক হতে পারে না।

ড. আফিয়া সিদ্দিকীর কাহিনি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিষ্ঠুরতা এবং অবিচারের একটি জলন্ত উদাহরণ। ২০০৩ সালে, পাকিস্তানের করাচি থেকে তাকে তার তিন সন্তানসহ অপহরণ করা হয়। এরপর, ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে গ্রেপ্তার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বন্দী হন। তাকে নিয়ে যে মামলা চলছে, তা বিশ্বব্যাপী মানুষের মনে এক গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এবং সবশেষে, ২০১০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে, কিন্তু সেই বিচারের পেছনে কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ নেই।

ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে যে এক ভয়াবহ চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছে, তা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের সহযোগী শক্তিরা, তাকে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। ২০০৩ সালে যখন আফিয়া সিদ্দিকী ও তার তিন সন্তানকে অপহরণ করা হয়, তখন তারা কেবল একটি সাধারণ পরিবার , কিন্তু তাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে “আল-কায়দার সহযোগী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর, আফিয়া সিদ্দিকীকে যে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তা সত্যি হৃদয়বিদারক। ২০০৮ সালে তাকে আফগানিস্তানের বাগরাম কারাগারে বন্দী রাখে। সেখানে তাকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করা হয়, অমানবিকভাবে মারধর করা হয় এবং তার মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাকে কয়েক মাস ধরে অন্ধকার সেলে রাখা হয়েছিল, খাবার ও পানি দেওয়া হত না, এবং পরপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো।

বিশ্ব মানবাধিকারের মূল্যবোধ যখন নিঃশেষিত, তখন একটি আদর্শ রাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ন্যায়বিচার। এই ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের আওয়াজ উঠাতে হবে। আমরা যদি আমাদের কর্তব্য হিসেবে মানবাধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে আমাদের মৌলিক বিশ্বাসগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আফিয়া সিদ্দিকীকে অন্যায়ভাবে বন্দী করা হয়েছে , শুধু ব্যক্তি হিসেবে নয়,সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা এক গুরুতর পরীক্ষা। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে তার মুক্তির জন্য আওয়াজ তোলা এখন সময়ের দাবি।

এটি শুধুমাত্র একজন নারীর মুক্তি নয়, এটি আমাদের সম্মানের, আমাদের বিশ্বাসের, এবং আমাদের নৈতিকতার লড়াই।
আমরা কি এই অবিচারের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকতে পারি? আফিয়া সিদ্দিকী এবং তার মতো অন্যান্য নিরপরাধ বন্দীদের জন্য কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আমরা কিভাবে একটি ন্যায়বিচারহীন পৃথিবীতে বাস করব? এটাই আমাদের দায়, আমাদের কর্তব্য।
আমরা যদি এই মুহূর্তে এক হয়ে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে আফিয়া সিদ্দিকী এমন একটি ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের জন্য লজ্জাজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।