ইসলাম নারীকে মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছে, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নারীর মর্যাদা ও অধিকারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
ইসলামের আগমনের পূর্বে সমাজে নারী অবহেলিত ও নিগৃহীত ছিল।
পরবর্তীতে কোরআনের নির্দেশনা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নারীদের জীবনে আশীর্বাদ রূপে আসে।
কোরআনে নারীর মর্যাদা
পবিত্র কোরআনে নারী -পুরুষকে সম মর্যাদা দান করে-
“আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি, একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে। আর তাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তারা পরস্পর পরিচিত হতে পারে। তবে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান।”
— (সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, নারীর মর্যাদা আল্লাহর কাছে পুরুষের সমান। ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করেনি; বরং তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পৃথকভাবে নির্ধারণ করেছে।
নারীর অধিকার
১. জীবনের অধিকার:
ইসলাম পূর্বে নারী শিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। আল্লাহ এ বর্বর প্রথাকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন:
“যখন জীবিত কবর দেওয়া কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘তোমাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল?’”
— (সূরা আত-তাকওয়ির: ৮-৯)
২. শিক্ষার অধিকার:
ইসলামে জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“তোমরা কি জানো না? যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?”
— (সূরা আয-যুমার: ৯)
এ আয়াত নারীসহ সকল মানুষের জন্য শিক্ষার গুরুত্বকে নির্দেশ করে।
৩. অর্থনৈতিক অধিকার:
ইসলাম নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে। উত্তরাধিকার ও ব্যবসায় তাদের নিজস্ব সম্পত্তি রাখার স্বাধীনতা রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
“পুরুষের জন্য রয়েছে তার উপার্জনের ভাগ এবং নারীর জন্য রয়েছে তার উপার্জনের ভাগ।”
— (সূরা আন-নিসা: ৩২)
৪. বিবাহের ক্ষেত্রে অধিকার:
ইসলাম বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর সম্মতিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“সাবালিকা মেয়েকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সা.), তার অনুমতির পদ্ধতি কী? তিনি বলেন: তার চুপ থাকা”।
— (সহিহ বুখারি, ৪৮৪৩)
৫. মাতৃত্বের মর্যাদা:
মা হিসেবে নারীর মর্যাদা ইসলামে সর্বোচ্চ। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্টের মধ্যে গর্ভে ধারণ করেছে।”
— (সূরা লুকমান: ১৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন:
“তোমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করো, তারপর তোমার পিতার প্রতি।”
— (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৭১)
পৃথিবীর যাবতীয় মতবাদ একত্রিত হয়েও নারীর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে যেখানে ব্যর্থ,
পবিত্র কোরআন সেখানেই বিজয়ী। ইসলাম নারীদের আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি ও জীবনাযাপনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের জীবনে নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করেছে।