banner

বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: January 21, 2025

 

সায়েন্স ফিকশন: তৃতীয় মাধ্যাকর্ষণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে বসে ছিল তরুন বিজ্ঞানী ও গবেষক ড.সিনান। মাথার মধ্যে এক দারুণ চিন্তা ঘুরছিল। পৃথিবী, গ্রহ, তারা—এসব সবসময় তাকে আকর্ষণ করেছে। কিন্তু তার গবেষণার বিষয় ছিল নতুন কিছু। সে এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করতে চেয়েছিল, যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তি কমানো যাবে, ফলে মহাকাশযান বা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য কম শক্তির প্রয়োজন হবে।

যদিও এটা ছিল এক অসম্ভব স্বপ্ন তবুও ড. সিনান এবং তার দল কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন।
২০৩৫ সাল, যখন পৃথিবী ক্রমশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছিল, তখন এই প্রযুক্তি অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মহাকাশ গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি না হলে মানুষ ভবিষ্যতে মহাকাশের রিসোর্স কাজে লাগাতে পারবে না।

ড.সিনানের চিন্তা ছিল পৃথিবীকে টেকসই, শক্তিশালী ও শক্তির দিক থেকে আরো স্বাধীন করা।
একদিন তার পরীক্ষামূলক যন্ত্রটির কাজ শেষ হয়ে যায়। এটি “নিউট্রো-এন” নামক একটি ডিভাইস, যা পৃথিবীর আকর্ষণ শক্তিকে স্থানিকভাবে সামান্য কমিয়ে দিতে সক্ষম। এটি পুরো পৃথিবীতে প্রয়োগের জন্য তৈরি হয়নি, কিন্তু একটি ছোট অঞ্চলে পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারবে।

তারা প্রথমে যন্ত্রটি শহরের ছোট্ট অঞ্চলে দিয়ে পরীক্ষা শুরু করে। যন্ত্রটি চালু করতেই ড.সিনান অনুভব করেন, পৃথিবীর আকর্ষণ কমে যাচ্ছে, আর কিছু সময় পর পুরো অঞ্চলটি হালকা হয়ে উঠছে। নীচের থেকে উপরের দিকে পাখির মতো ছোটো জিনিসগুলো ভেসে উঠতে শুরু করে, এটা ছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় কিছুদিন পর। যখন যন্ত্রটি কাজ করতে থাকে, তখন কিছু অদ্ভুত ফলাফল দেখা দেয়। অনেক কিছু হঠাৎ অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে। যন্ত্রের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কিছু অঞ্চলে গাছপালা ও পশু-পাখির চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়ছিল,পৃথিবীর মৌলিক শর্তগুলো বদলে যাচ্ছিল।

এরপরে পৃথিবী ফের যখন তার সাধারণ নিয়মে ফিরছিল, তখন ড. সিনান বুঝতে পারছিল যে তিনি যা চেয়েছিলেন, তা সম্ভব হলেও
মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক নিয়মে অনেক জটিলতা নিয়ে আসবে।

এবার তাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা—যন্ত্রটি পৃথিবীর অন্যান্য অংশে পরীক্ষা করবে কি না, অথবা তাকে ফের নতুন কোনো পথ খুঁজে বের করতে হবে।তার এই পরীক্ষামূলক গবেষণার কারনে পৃথিবী ছিল তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ন্ত্রণের এক বিপজ্জনক যাত্রায়।

শেষমেশ; বিজ্ঞানী সিনান এবং তার দল সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা আরো উন্নত গবেষণা করবে এবং যন্ত্রটির ত্রুটি ঠিক করতে চেষ্টা করবে।
কিন্তু একথা পরিষ্কার, পৃথিবীর সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ অনেক বড়।

– আরওয়া আনাম

 

এডব্লিউই প্রোগ্রামে পুরষ্কার পেলো ৬ নারী উদ্যোক্তা

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একাডেমি ফর উইমেন অন্ট্রোপ্রেনরস (এডব্লিউই) বিজনেস পিচ প্রতিযোগিতায় ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে তাদের সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারণার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিজয়ীরা প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন।

গত সপ্তাহে ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার এলিনা শেনসি। তিনি বলেন, “নারীরা যখন নেতৃত্বে আসে, তখন সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। এডব্লিউই প্রোগ্রাম নারীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে বিকশিত করতে সহায়ক।”

এডব্লিউই প্রোগ্রামটি ২০২২ সালে বাংলাদেশে শুরু হয়। এটি বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। এ বছর প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ২৫ জন নারী উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসায়িক ধারণা উপস্থাপন করেন। তাদের মধ্য থেকে সেরা ছয়জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
বিজয়ীরা সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, খাগড়াছড়ি, যশোর, এবং ঢাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের ব্যবসাগুলো পরিবেশবান্ধব পণ্য, নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা প্রযুক্তি এবং কৃষি উদ্ভাবনের মতো খাতে অবদান রাখছে।

এডব্লিউই প্রোগ্রাম নারীদের জন্য ৩ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং মেন্টরশিপ সেশন পরিচালনা করে। এতে অংশগ্রহণকারীরা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি মার্কেটিং ও অর্থায়নের কৌশল শেখেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা জানান, এই উদ্যোগ নারীদের ব্যবসায়িক দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখছে। বিজয়ীরা তাদের পুরস্কারের অর্থ ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যবহার করবেন।

 

হযরত জুবাইদা (রহ.) :ইসলামী সভ্যতার মহান নারী উদ্যোক্তা

 

ইসলামের ইতিহাসে রাণী জুবাইদা (রহ.) একজন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী এবং নবী কারিম (সা.)-এর বংশধর। তার প্রকৃত নাম আমাতুল আজিজ হলেও দাদা খলিফা আবু জাফর মানসুরের দেওয়া আদুরে ডাকনাম ‘জুবাইদা’ নামেই তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

জুবাইদার জন্ম ১৪৯ হিজরিতে ইরাকের মসুলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রাসাদে শিক্ষা লাভ করেন এবং কোরআন, হাদিস, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, ভূগোল, ও জ্যামিতিতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি বিদ্বান, পরোপকারী এবং বুদ্ধিমতী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার দানশীলতা ও কর্মধারার জন্য তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন।

রাণী জুবাইদার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো “নহরে জুবাইদা”। ১৯৩ হিজরিতে খলিফা হারুনুর রশিদের মৃত্যুর পর তিনি হজপালনে যান। সেখানে হাজীদের পানির কষ্ট দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং পানির সংকট সমাধানে একটি খাল খননের উদ্যোগ নেন। ওয়াদি নোমান থেকে আরাফাত ময়দান এবং হুনাইন থেকে মক্কা পর্যন্ত খালটি খনন করা হয়। এতে প্রায় ১৭ লাখ দিনার খরচ হয়, যা সে সময়ের এক বিশাল অঙ্ক।

খালটি আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই পাথর কেটে এবং ভূগর্ভস্থ টানেল নির্মাণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। খালের পাশেই পানির স্টেশন স্থাপন করা হয়, যাতে স্থানীয় জনগণ সহজে পানি সংগ্রহ করতে পারে। এই নহর শুধু হাজীদের পানির সমস্যা দূর করেনি; বরং মক্কা ও আশপাশের কৃষকদেরও পানির অভাব মেটায়।

রাণী জুবাইদার দানশীলতার উদাহরণ এখানেই শেষ নয়। তিনি কুফা থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত ১৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেন। এছাড়াও মক্কায় আরও ৫টি জলাধার ও অনেক অজুখানা নির্মাণ করেন। তার প্রাসাদে ১০০ নারী হাফেজা কোরআন তেলাওয়াত করতেন, যা ২৪ ঘণ্টা চলত।

রাণী জুবাইদার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় মানবতার জন্য উৎসর্গীকৃত। ২১৬ হিজরির ২৬ জমাদিউল উলা মোতাবেক ১০ জুলাই ৮৩১ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই মহীয়সী নারীর কর্ম ও অবদান আজও বিশ্ব মুসলিমকে অনুপ্রাণিত করে।