banner

বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: December 17, 2024

 

নেকাব পরার কারণে বহিষ্কার, শিক্ষার্থীর অভিযোগে তোলপাড়

 

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে বাউবি’র সমাজতত্ত্ব পরীক্ষা চলাকালে এক শিক্ষার্থীকে নেকাব খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। উম্মে আনজুমানয়ারা নামের ওই শিক্ষার্থী মহিলা পরীক্ষক বা অন্য নারীর সামনে নেকাব খোলার প্রস্তাব দেন। তবে হলের দুই শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বহিষ্কার করেন।

শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং আগের দুইবার গর্ভপাত হওয়ায় শারীরিক ঝুঁকি নিয়েই পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তার বক্তব্য শোনেনি। এমনকি, হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষ্য উপেক্ষা করে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, তার আইডি কার্ড জব্দ করা হয় এবং প্রিন্সিপাল তাকে “ভুয়া পরীক্ষার্থী” বলে আখ্যায়িত করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৯৯৯-এ কল করলে মাটিরাঙ্গা থানার ওসি উপস্থিত হন। কিন্তু প্রিন্সিপাল তার বক্তব্যে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে পরিস্থিতি জটিল করে তোলেন।

উম্মে আনজুমানয়ারা প্রশ্ন তোলেন, নেকাব না খুলে পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার কি নেই? বড় আদালতগুলোও নারীদের জন্য পর্দার ব্যবস্থা রাখে। তাহলে পরীক্ষা হলে এমন বৈষম্য কেন? তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট সুবিচার দাবি করেছেন।

এই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করে সচেতন মহল। প্রাসঙ্গিক নীতিমালা না থাকলে তা প্রণয়নেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নারী চিকিৎসক

 

ইসলামের ইতিহাসে নারী সাহাবীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের মধ্যে হযরত রুফাইদা বিনতে সাআদ আল-আসলামিয়া (রাঃ) অন্যতম। তিনি ছিলেন ইসলামি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রদূত এবং নার্সিং পেশার প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর অসামান্য সেবা ও দক্ষতা ইসলামি ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

হযরত রুফাইদা রাঃ মদিনার বানু আসলাম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাআদ বিন খায়সামার কন্যা। ইসলামের আগেই তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর দক্ষতাকে মুসলিম উম্মাহর সেবায় নিবেদন করেন।

 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান

রুফাইদা রাঃ-কে ইসলামের প্রথম নারী চিকিৎসক বলা হয়। তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেন। নবী করিম (সাঃ)-এর অনুমতিক্রমে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সাহাবীদের চিকিৎসা করতেন।

 

খন্দক যুদ্ধের সময় ভূমিকা

খন্দক যুদ্ধের সময় রুফাইদা একটি তাঁবু স্থাপন করেন, যা কার্যত একটি মিনি হাসপাতালের মতো কাজ করত। এখানে আহত সাহাবীদের চিকিৎসা করা হতো। তিনি নিজ হাতে আহতদের ব্যান্ডেজ করতেন, রক্তপাত বন্ধ করতেন এবং তাঁদের সান্ত্বনা দিতেন।

প্রাথমিক নার্সিং প্রতিষ্ঠা

রুফাইদা একদল নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যারা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবায় অংশ নিতেন। এটি ইসলামের প্রথম সংগঠিত নার্সিং সেবা হিসেবে বিবেচিত।

ব্যক্তিগত গুণাবলি

রুফাইদা ছিলেন অত্যন্ত সহানুভূতিশীল, দক্ষ এবং পরিশ্রমী। তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক সেবায়ও মনোযোগী ছিলেন। যুদ্ধের সময় আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁদের মানসিক শক্তি জোগাতেন।

নবী করিম (সাঃ)-এর প্রশংসা

হযরত রুফাইদার সেবামূলক কাজ নবী করিম (সাঃ)-এর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি রুফাইদার চিকিৎসা দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁকে অনুমতি দেন তাঁর তাঁবুতে আহত সাহাবীদের চিকিৎসা করার।

অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম

যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়াও রুফাইদা মদিনার সাধারণ মানুষের সেবায় নিবেদিত ছিলেন। তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। তিনি বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ইতিহাসে অবদান

রুফাইদার কাজ কেবল চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকেই নয়, বরং ইসলামে নারীদের ভূমিকার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারীরাও সমাজের উন্নয়ন এবং সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

———–

হযরত রুফাইদা বিনতে সাআদ আল-আসলামিয়া (রাঃ)-এর জীবন ও কর্ম মানবসেবার এক অনন্য উদাহরণ। তিনি ছিলেন এমন এক মহীয়সী নারী, যিনি নিজের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন। তাঁর অবদান প্রমাণ করে, নারীরাও জ্ঞান, কর্ম ও মানবিকতার মাধ্যমে সমাজে গভীর প্রভাব রাখতে পারে। রুফাইদার জীবন আমাদের শেখায় যে, নিষ্ঠা, মানবিকতা এবং সেবার চেতনা মানুষকে সত্যিকার অর্থে শ্রেষ্ঠ করে তোলে। তাঁর অনুপ্রেরণামূলক জীবনচর্চা আজও নারী-পুরুষ সকলের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে আছে।