banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

শিক্ষিকা এখন মুদি-দোকানি

চন্দনা সাহা, দুই সন্তানের জননী। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। চাকরি করতেন স্থানীয় গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে। বিগত আট বছর ধরে স্কুলে চাকরি করে আসছিলেন।

স্বামী বিপ্লব সাহা দুই বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু তাতেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। এরই মাঝে শুরু হয় বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চন্দনা-বিপ্লবের সুখের সংসার। সন্তানদের মুখের আহার ও অসুস্থ স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যান চন্দনা।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত ৩৫টি কিন্ডারগার্টেনের কর্মজীবী ৫০০ শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। চন্দনা সাহা (৩৫) তাদেরই একজন সংগ্রামী নারী।

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো এ উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন চন্দনা সাহার মত অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় অনেকে বিভিন্ন পেশার কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে চরম হতাশায় পড়েছেন চন্দনার মতো অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

চন্দনা সাহা জানান, আমি আট বছর ধরে গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে চাকরি করি এবং স্বামী বিপ্লব সাহা একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালিয়ে যা রোজগার হতো তা দিয়ে আমাদের চার সদস্যের সংসার ভালোই চলতো। কিন্তু বিগত দুই বছর আগে হঠাৎ আমার স্বামীর ব্রেইন স্ট্রোক হয়। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু তাতে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এছাড়া তিনি কাজ কর্মও করতে পারেন না। বর্তমানে আমার সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই কোনো উপায় না দেখে ধারদেনা করে নিজ বাড়িতেই একটি মুদি দোকান দিয়েছি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দোকানে বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছি।

গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারি যাবতীয় কার্যক্রমের সঙ্গে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা জড়িত। বৈশ্বিক এ মহামারির কবলে পড়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েকশ শিক্ষক-কর্মচারী। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা বেতন পরিশোধ না করায় স্কুল মালিকরা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না। যার ফলে এমন নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কিন্ডার গার্টেনের বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পাড়ায় আসবাব পত্র বিক্রি করে দিয়ে দায় দেনা পরিশোধ করা হয়েছে। এমন দুর্দিনে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

 

ঈশ্বরদীর রত্নগর্ভা আমেনা খাতুনের ইন্তেকাল

ঈশ্বরদীর মহিয়সী নারী, রত্নগর্ভা মাতা এবং বিশিষ্ট ঠিকাদার মরহুম মোজাহার আলীর স্ত্রী আমেনা খাতুন (৯০) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় ঈশ্বরদীর চরসাহাপুর নতুন হাট মোড়ে নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি মারা যান।

সম্প্রতি ঈশ্বরদীর খ্যাতিমান এই নারী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে পাবনা জেলার সফল নারী জননী হিসেবে ‘জয়ীতা’ পদকে ভূষিত হন। জীবদ্দশায় তিনি ৭ ছেলে এবং ১ মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। যারা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

রত্নগর্ভা মা আমেনা খাতুনের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের সাবেক ডিআইজি মাহফুজুল ইসলাম, মেজ ছেলে সড়ক ও জনপথের বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম (মরহুম), তৃতীয় ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম, চতুর্থ ছেলে অতিরিক্ত সচিব মনোয়ারুল ইসলাম, পঞ্চম ছেলে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নাজমুল হাসান, ষষ্ঠ ছেলে পুলিশের এসপি সাইফুল ইসলাম এবং ছোট ছেলে ঠিকাদার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাহিদুল ইসলাম। একমাত্র মেয়ে মাহফুজা ইসলাম মিনু মাস্টার্স পাশ ও সমাজ সেবক।

সফল ও গুণী এই নারীর নামাজে জানাজা শুক্রবার বাদ মাগরিব চরসাহাপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনী, আত্নীয় স্বজন ও প্রচুর গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।