banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

যমজ সন্তানের যত্ন আত্তি

ধারণা করা হয়, পুরো পৃথিবীর ৩ শতাংশ মানুষ যমজ। এ ৩ শতাংশ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো শেষ নেই। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, দুটি শুক্রাণু একসঙ্গে দুটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে ভ্রাতৃসুলভ যমজ সন্তানের জন্ম হয়।

এরা ফ্যাটার্ন্যাল টুইন নামেও পরিচিত। সাধারণভাবে দেখা যায়, যমজের ক্ষেত্রে চেহারা হুবহু এক হয়। স্বভাব বা বৈশিষ্ট্যগতভাবেও তারা কিছুটা ভিন্ন হয়; কিন্তু দুটি শুক্রাণু একসঙ্গে একই ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত হয়ে সমান দু’ভাবে বিভক্ত হয়ে যে যমজ সন্তানের জন্ম হয় তারা আইডেন্টিক্যাল টুইন নামে পরিচিত। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হুবহু একইরকম দেখতে। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও অনেকটা একইরকম।

আজকাল বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতি ৬৫ জনে একজন মায়ের সাধারণ প্রক্রিয়াতেই দুটি যমজ সন্তান হতে পারে। মায়ের পরিবারের কেউ যমজ থেকে থাকলে এর সম্ভাবনা বেশি।

আবার মায়ের বয়স বেশি বা ৩০-৩৫-এর মধ্যে হলেও যমজ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বর্তমানে চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার জন্য যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয় যেমন- আইভিএফ; এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমেও এখন যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে গেছে।

এজন্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই যমজ সন্তান জন্মানোর হার আগের চেয়ে বেশি। তবে যমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করলে মা ও সন্তানের কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন- গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়া, প্রেসার বেড়ে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, অপরিণত ও কম ওজনের শিশু, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটিসহ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ, গর্ভকালীন সঠিক পরিচর্যা এবং সতর্কতার মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

সাবরিনা আহমেদ রিমি এবং সাকিব রহমান দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে যমজ কন্যা। তাদের নাম রুহাইমা রহমান সিদরাহ এবং সারিজা রহমান সেহের। সিদরাহ এবং সেহেরের বয়স এখন ৪ মাস।

একদিকে দীর্ঘ ৭ বছর পর সংসারে সন্তানের আগমন, সেইসঙ্গে যমজ সন্তান হওয়ায় পরিবারে খুশির বন্যা নেমে এসেছে। সাবরিনা আহমেদ বলেন, ‘এত বছর পর একসঙ্গে দুই সন্তানের মা হওয়ার এ আনন্দ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ওদের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে যেতে পারি। ওদের কিছু কাজে আমি খুব মজা পাই। যেমন খাবার দিতে একটু দেরি হলে বড়টার দিকে তাকালে খুব জিদ দেখায়। কিন্তু ছোটটার দিকে তাকালে ও হেসে দেয়। আমি ওদের ছড়া শোনালে ওরা দু’জনই তা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ গর্ভবতী মায়েদের তুলনায় গর্ভে যমজ সন্তান থাকলে খাবার-দাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো যেমন পর্যাপ্ত খেতে হবে, তেমনি পর্যাপ্ত ডায়েটও মেনে চলতে হবে। গর্ভবতী মাকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। গর্ভকালীন জটিলতাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি নেটে সার্চ দিয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন; যেটি আমি করতাম। এখনও বাচ্চাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে নেটে সার্চ দিয়ে জেনে নেই। গর্ভবতী মাকে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে এবং নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।’

সন্তান লালন-পালন করা অভিভাবকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। দুটি সন্তান একসঙ্গে লালন-পালনের ক্ষেত্রে স্বভাবতই চ্যালেঞ্জটা দ্বিগুণ। তাই যমজ শিশুর পরিচর্যার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন:

  • বুকের দুধ পান করানো

মা বা পরিবারের ধারণা, যমজ দুই সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বুকের দুধ মা দিতে পারবে না, এটি ভুল। মা যদি সবার সহযোগিতা পান, একসঙ্গে তিন নবজাতক সন্তানকে পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধে পুষ্টি বজায় রাখতে সক্ষম থাকেন।

  • শিশুর খাবার

ছয় মাস বয়সের পর যখন শিশুকে বুকের দুধের বাইরে অন্য খাবার দেয়া শুরু করবেন তখন দু-তিন ঘণ্টা পরপর খাবার দিন। দু’জনই সমপরিমাণে খাবার খাবে না এটাই স্বাভাবিক; বকাঝকা করবেন না। প্রয়োজনে খাবারের মেন্যু বদলে দিন।

  • ঘুমের সময়

যমজ বাচ্চা হলেই যে দু’জনে একসঙ্গে সবকিছু করবে- এমন ভাবার কারণ নেই। হয়তো একজন ঘুমাল, অন্য শিশুটি হাত-পা মেলে খেলা করতে পারে। ঘুম পাড়ানোর জন্য জোর না করে তাকে সময় দিন, প্রয়োজনে কোলে করে একটু হাঁটুন।

  • আলাদা বিছানা

এক শিশুর কোনো কারণে অসুখ হলে অন্যজনের মধ্যেও তা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই একজন কোনো রোগে আক্রান্ত হলে অপরজনকে আলাদা বিছানায় রাখুন।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা

যেহেতু শিশুরা খুব অল্পতেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়, তাই শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে বাইরে থেকে কেউ ঘরে ফিরলে বা বাড়িতে অতিথি এলে তিনি যেন হাত ভালোমতো না ধুয়ে, পোশাক না বদলে শিশুকে স্পর্শ না করে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখুন।

  • যেসব বিষয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন

যমজ সন্তানদের কখনও যমজভাবে চিন্তা না করে, তাদের দুজনকে আলাদা ব্যক্তিত্বের মর্যাদা দিয়ে বড় করে তুলুন। যেমন প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে জন্মদিনের উপহার বা পার্টির ব্যবস্থা করা। যমজ সন্তানের রেষারেষি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামাল দিন।

  • চাই পরিবারের সহযোগিতা

যমজের যত্ন নিতে স্বভাবতই প্রত্যেক বাবা-মাকে হিমশিম খেতে হয়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। যমজ সন্তানের মা সাবরিনা আহমেদ রিমি তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া যমজ সন্তান লালন-পালন করা কষ্টসাধ্য। আমি সৌভাগ্যবান, আমি যৌথ পরিবারে থাকি এবং আমার স্বামী, শ্বশুর, ননাস এমনকি ননাসের বাচ্চারাও আমার বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। এতে আমি অনেকটা সময় বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পাই।

রাতে ওদের ঘুম ভেঙে গেলে আমার স্বামী এবং আমি ভাগাভাগি করে ওদের সময় দেই। এতে আমার ঘুমের খুব বেশি ব্যাঘাত ঘটে না। আমি একজন কর্মজীবী নারী এবং ছুটি শেষে আমাকে আবার কর্মস্থলে ছুটতে হবে; কিন্তু আমি এ নিয়ে চিন্তিত নই।

কারণ আমার সন্তানদের দেখভালের জন্য আমার পরিবারের সদস্য রয়েছেন। আসলে এ সুযোগটা প্রতিটি নতুন মায়ের জন্য দরকার; বিশেষ করে যমজ সন্তানের মায়ের জন্যই অপরিহার্য। কারণ এ সময় শিশুর সুস্থতার জন্য মা-বাবা দু’জনেরই সুস্থ থাকা দরকার। মা-বাবার পর্যাপ্ত খাওয়া ও বিশ্রামের প্রয়োজন। একা সন্তান মানুষ করলে তা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তাই যমজ সন্তান লালন-পালন করতে অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন। যাদের সেই সুযোগ নেই, তাদের প্রথম থেকেই অন্য কারও সহযোগিতা কীভাবে নেয়া যায় সেটি ভেবে দেখতে হবে।

 

শীতে সুস্থ থাকতে কী খাবেন

শীত এলেই বাড়ে অসুখ-বিসুখ। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, এ সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখাটা জরুরি। শরীরকে হাইড্রেট না রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দেহের তাপমাত্রার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

কিছু সবজি রয়েছে যা শীতের সময় খুব সহজে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এসব খেলে শরীর সতেজ থাকে।

আসুন জেনে নিই কী খাবেন-

১. শীতের সময়ে খেতে পারেন পুষ্টিকর পালংশাক। পালংশাক ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত ওজনও কমায়। এই সবজি শীতে আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।

২. খেতে পারেন টমেটো। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি থাকে, যা শরীরকে ভেতর থেকে পুষ্ট রাখতে সহায়তা করে। টমেটো ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৩. হলুদ ও সবুজ ক্যাপসিকামে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে। ক্যাপসিকামে ৯৩.৯ শতাংশ পানি রয়েছে। এ ছাড়া এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, বিটা ক্যারোটিন, থায়ামিন ও ফলিক অ্যাসিড রয়েছে।

৪. শীতের ফুলকপি দিয়ে স্যালাড, স্যুপ ও বিভিন্ন তরকারি তৈরি করে খেতে পারেন।

৫. অলিভ অয়েল ভিটামিন-ই, ভালো ফ্যাটজাতীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজ রাখে। ত্বক ভালো রাখতে অলিভ অয়েল দিয়ে শরীরে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি শরীর ঠিক রাখতে বেশ কার্যকর।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই