banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

এক করোনা যোদ্ধার গল্প

মনোয়ারা আক্তার। করোনা উপসর্গ রোগীদের কাছে এক ভরসার নাম। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট। তিনি ১৮ শ’ করোনার নমুনা সংগ্রহ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। করোনা মহামারিতে নিরলসভাবে কাজে করে পুরো সোনারগাঁও উপজেলাবাসীর কাছে প্রশংসায় সিক্ত হয়েছেন এই করোনা যোদ্ধা।

তিনি বলেন, যারা করোনায় অসুস্থ হচ্ছে তারাও তো আমার মতো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কারো বোন, ভাই, মেয়ে। এ করোনাকালে অনেকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। আমিও আমার অবস্থান থেকে পরম করুণাময়ের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে মানুষের একটু সেবা করে যাচ্ছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কাজ শুরু হয় গত ৫ এপ্রিল। কাঁচপুর ইউনিয়নে এক বৃদ্ধ সর্দি কাশি নিয়ে মৃত্যুবরণ করার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই থেকে শুরু এখন পর্যন্ত ১৮০০ বার রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে আসা রোগীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলায় হাসপাতালে যখন করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়, তখন দায়িত্ব দেয়া হয় এমটি ইপিআই, এমটি ল্যাবসহ আরো দু’জনকে। লোকবলের অভাবে অবশেষে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে এমটি মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট মনোয়ারার উপর। সাথে তাকে সহযোগিতার জন্য দেয়া হয় সহকারী রায়হান ও হাসানকে। প্রথমে কিছুটা শঙ্কিত হলেও মনের ভেতর সাহস সঞ্চার করে মুহূর্তের মধ্যেই নমুনা সংগ্রহের কাজে রাজি হয়ে যান তিনি। এরপর ৫ এপ্রিল প্রথম একজন মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ দিয়ে শুরু হয় তার এগিয়ে চলা। গত আড়াই মাসে বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে ১৮শ’ বার নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। সবশেষ ২০ জুন ২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬২ কয়েকজন রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষই নন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার সাথে কর্মরত হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফও। তারপরও দমে যাননি মনোয়ারা।

মনোয়ারা আক্তার বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রথম থেকেই লোকবল সঙ্কট ছিল। সেজন্য আমি নিজেই একা মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টের কাজটি করে আসছি। যখন দেশে করোনাভাইরাস শুরু হলো তখন টিএইচও স্যার আমাকে ডেকে বললেন সোনারগাঁওয়ের করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরএ পাঠানোর জন্য। আমি রাজি হওয়ার পর স্যাম্পল কালেকশন কিট-পিপিইসহ সব সরঞ্জাম আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হলো। তখন একাই হাসপাতালে সহকারী মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আমার স্বামী মোঃ হাবিলউদ্দিনের সাথে কথা বলে মা-বাবা ও শুভাকাঙ্খিদের দোয়ায় কাজ শুরু করি।

মনোয়ারা বলেন, প্রথম কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ভয় পেয়েছি। কারণ টিভিতে দেখেছি পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। সেগুলো দেখে আমার মনেও ভয় তৈরি হয়েছিল। এছাড়া আমার ঘরে পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। তাকে রেখে কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করবো। আবার আমি যদি করোনায় আক্রান্ত হই, তাহলে তাকে কে দেখবে? এসব চিন্তা করে রাতে ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু যখন চিন্তা করলাম যুদ্ধের ময়দানে নেমে মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না, ভয়কে জয় করে যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি ভয় পাই তাহলে মানুষের চিকিৎসা করবে কে? আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছে সে দায়িত্ব যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। এছাড়া এ কাজে টিএইচও স্যার এবং আমার স্বামী সাহস জুগিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা ও তাদের দেয়া সাহস নিয়েই নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমে পড়ি। নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে সহায়তার জন্য সহকারী মোঃ রায়হান ও মোঃ হাসানকে সাথে দেন। যারা আমার কাজে প্রতিদিনই সহায়তা করে আসছেন। তাদের দু’জন পালা করে আমাকে সহায়তা করতেন। কাজটি যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য নিজের দিকে খেয়াল রেখেছি। সব সময় করোনা মুক্ত থাকতে যা যা করণীয় তা পালন করেছি।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতাম। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। হাসপাতালে প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ ৭০ জনেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন শুনেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিক নমুনা সংগ্রহ করেছি। আর ইচ্ছে আছে যতদিন সুস্থ থাকবো, ততদিন নমুনা সংগ্রহের এ কাজ চালিয়ে যাবো। নিজের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিনি, কারণ এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখছি না। যদি অসুস্থ হয়েই যাই, তাহলে সুস্থ হয়ে আবার এসে কাজটি চালিয়ে যাবো। আমি সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা বলেন, আমি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে মনোয়ারাকে দেখেছি নিষ্ঠা ও মনোযোগের সাথে কাজ করতে। তাকে ধন্যবাদ জানাই সাহসিকতা এবং তার কাজের জন্য।

অপরাজিতাবিডি/রবি

পড়াশোনা না ছাড়ায় ঢাবি ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগ, শাশুড়ি ও ননদ গ্রেপ্তার

সুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতসুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতমেয়ে অসুস্থ, শ্বশুরের কাছ থেকে ফোনে এমন সংবাদ পেয়ে যশোর থেকে নাটোরে ছুটে আসেন মা নুজহাত বেগম। এসে দেখলেন, হাসপাতালের মর্গে মেয়ের লাশ পড়ে আছে। শ্বশুর, স্বামী বা তাঁদের পরিবারের কেউই সেখানে নেই। নুজহাতের অভিযোগ, নির্যাতন করে তাঁর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস সুমাইয়া বেগমকে হত্যা করেছেন স্বামীর বাড়ির লোকজন। সুমাইয়া বেগম যশোরের সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল নাটোর শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার প্রকৌশলী মোস্তাক হোসাইনের সঙ্গে।

মা নুজহাত বেগম বলেন, ‘গতকাল সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন আমাকে ফোন দেন। তিনি মেয়ের অসুস্থতার কথা বলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। খবর পেয়ে আমি দ্রুত নাটোরে চলে আসি। সদর হাসপাতালে এসে দেখি, আমার মেয়ের মৃতদেহ মর্গে পড়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির কেউ হাসপাতালে নেই।’ তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগেও তাঁকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে মোস্তাকের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বাবা সিদ্দিকুর ছিলেন একজন নামকরা ইসলামি বক্তা। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া। ভর্তির তিন বছরের মাথায় বাবার পছন্দেই মোস্তাককে বিয়ে করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়ালেখায় বাদ সাধে। পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ আসে। পড়ালেখার খরচ বাবা সিদ্দিকুরই দিতেন। তাই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়নি সুমাইয়াকে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বরে বাবা সিদ্দিকুর মারা যান। এতে আর্থিক সংকটে পড়েন সুমাইয়া। শ্বশুরবাড়ি থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে চাকরির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পুরোপুরি সংসারী হওয়ার নির্দেশ আসে। কিন্তু সবকিছু ভুলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই ডুবে ছিলেন সুমাইয়া। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়েছে তাঁর।

পরিবারের অভিযোগ, গত রোববার রাতে সুমাইয়াকে তাঁর স্বামীর ঘরে মারপিট করে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। গতকাল দুপুরে মা নুজহাত বেগম যখন নাটোর সদর হাসপাতালে পৌঁছান, তখন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক, শ্বশুর জাকির বা ওই পরিবারের কাউকে পাননি। সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নাটোরের একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার সকালে বলেন, গতকাল রাতে নিহত নারীর মা নুজহাত বেগম থানায় মামলা করেছেন। এতে সুমাইয়ার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পর আসামিদের ধরতে সারা রাত অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সুমাইয়ার ননদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, যেহেতু স্বামীর বাড়িতে ঘটনাটা ঘটেছে, তাই সব দায় দায়িত্ব স্বামী ও তাঁর স্বজনদেরই বহন করতে হবে।

করোনায় নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন কেন?

নারী নয়, পুরুষদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে এর কারণ নিয়ে চিকিৎসকরা একমত নন। ভারতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা অনেক বেশি করোনায়আক্রান্ত হচ্ছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ(আইসিএমআর)-এর রিপোর্ট থেকে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। আইসিএমআর-এর গবেষক দল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ দেশজুড়ে ২০টি রাজ্যের ৫২টি জেলায় প্রবল শ্বাসকষ্টে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। মোট পাঁচ হাজার ৯১১ জনকে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ১০৪ জন করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জন অর্থাৎ ৮৩ শতাংশেরও বেশি হলেন পুরুষ।

ভারতে নারীদের থেকে পুরুষরা এত বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কেন? চিকিৎসকদের মধ্যেও কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল। ভারতে জেলা বা ছোট শহরগুলিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি ধূমপান করেন। গ্রামের দিকে লোকে এখনও হুঁকো খান, বিড়ি, সিগারেটও খান। তাই মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইটালিতেও এত বেশি সংখ্যক লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ, সেখানে লোকের মধ্যে ধূমপানের অভ্যাস অনেক বেশি।”

আবার চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু মনে করেন, এর প্রধান কারণ, পুরুষরা অনেক বেশি বাইরের কাজ করেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,” আসলে ভারতে পুরুষরা মেয়েদের থেকে অনেক বেশি বাইরে বের হন। তাই তাঁরা বেশি করে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু তাঁরা বাইরে বের হচ্ছেন, তাই তাঁরা করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসছেন। সেখান থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজামুদ্দিনের ঘটনাই তার উদাহরণ।”

ডয়চে ভেলের কাছে চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের ব্যাখ্যা, ”বিশ্বের অন্য জায়গাতেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। করোনা হচ্ছে সামাজিক অসুখ। ভাইরাসটি সংক্রমক, অর্থাৎ, ছোঁয়াচে। তাই যিনি বাইরে যাচ্ছেন ও আক্রান্ত হচ্ছেন, তিনি ঘরে ফিরলে গোটা পরিবারে সংক্রমণ ঘটার কথা। ফলে নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন আর পুরুষরা বেশি, এই প্রবণতা বাইরে বেরনোর নিরিখে বিচার করলে ভুল হবে। আসলে যে কোনও ভাইরসের একটা জেনেটিক কাঠামো থাকে। করোনার ক্ষেত্রে সেই গঠন এখনও বোঝা যায়নি। পুরুষ ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ করার সিস্টেমও আলাদা। বহু ক্ষেত্রে কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, কারও কম। করোনা কী করে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙছে, তা এখনও জানা যায়নি। জানা গেলে বোঝা যাবে কেন পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন!”

আইসিএমআরের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের বেশি। সমীক্ষা অনুসারে ৫০ বছরের বেশি বয়স্করা তুলনায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনা বেশি হচ্ছে। আইসিএমআরের মতে, মধ্যরেখা হলো ৫৪ বছর। এর কারণ নিয়ে অবশ্য চিকিৎসকরা একমত। তাঁদের মতে, ৫০ এর পর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। সাত্যকি হালদার মনে করেন, ”৫০ এর পর লোকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেও, ৬০-৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাইরে বেরনোর প্রবণতা আগের মতোই থাকে। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।” পার্থ প্রতিম বোসের মতে, ”একে তো ওই বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তার ওপর যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁরাও অনেক দিন ধরে ধূমপান করে ফুসফুসের অনেকটা ক্ষতি করে ফেলেছেন। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।”

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ আক্রান্ত কখনও বিদেশে যাননি। তাঁরা জ্ঞানত কোনও করোনা আক্রান্তের সঙ্গেও মেশেননি।

আইসিএমআর এখন নতুন করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতিনির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে,

যাঁদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাঁদের সকলের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত ও সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসছেন, তাঁদের পাঁচদিন ও ১৪ দিন পরে দুই বার পরীক্ষা করতে হবে। যে করোনা আক্রান্তরা কোনও জমায়েতে ছিলেন, সেখানে উপস্থিত সকলের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। যে সব ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা হবে। গত ১৪ দিনে যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদেরও বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিহ্নিত করা হটস্পটে কারও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষা করা হবে। সূত্র ডিডব্লিউ

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি নতুন চাকরি প্রত্যাশীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ২০১৮ স্নাতকোত্তর করছেন তানজিলা আক্তার। এরপর থেকেই তিনি একাধিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করেছেন, বেসরকারি চাকরির চেষ্টাও করেছেন। আশা করছিলেন, এই বছর একটা ভালো চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সেই স্বপ্ন থমকে গেছে।

‘এখন তো মহামারির কারণে সবকিছুই আটকে আছে। কোন সার্কুলার নাই, কোনো চাকরির পরীক্ষা নেই। এই মহামারি কবে শেষ হবে, কবে আবার চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হবে জানি না।’

‘আমরা যারা বেকার আছি, চাকরির খুব প্রয়োজন, তাদের জীবনটা এই মহামারির কারণে একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কাজ নেই, যতদিন যাচ্ছে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের মলিন চেহারা সেই হতাশা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

তিনি জানান, তার বাবা মায়ের বয়স হয়েছে, এখন তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার কথা। কিন্তু এই মহামারির কারণে তিনি সেটা করতে পারছেন না।

আরেকজন চাকরি প্রত্যাশী ফারিয়া আজাদ সমাজকর্মে পড়াশোনা শেষ করেছেন ২০১৭ সালে। গত কয়েকবছর ধরেই তিনি সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন।

‘আমি শুধু সরকারি চাকরির জন্যই অনেক বছর ধরে চেষ্টা করছি। এ বছর ৪১তম বিসিএসের পরীক্ষা হবে ভাবছিলাম। করোনার কারণে সব আটকে গেল। এদিকে চাকরির বয়সও শেষ হতে চলেছে। মেয়ে হিসাবে পারিবারিকভাবে বিয়ে-শাদির চাপও আছে। সব কিছু মিলিয়ে একটা মানসিক চাপের মধ্যে, হতাশার থাকতে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশে বেকার
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার।

আর সম্ভাবনাময় কিন্তু সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না এরকম ব্যক্তি (লেবার আন্ডার ইউটিলাইজেশন), যাদের ছদ্ম-বেকার বর্ণনা করা হয়, এরকম মানুষ রয়েছেন প্রায় ৬৬ লাখ। এরা চাহিদা মাফিক কাজ না পেয়ে টিউশনি, রাইড শেয়ারিং, বিক্রয় কর্মী ইত্যাদি খণ্ডকালীন কাজ করেন।

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.২% হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১.৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে জুন ২০২০ সাল নাগাদ সেটি কয়েকগুণে বেড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে আর বাংলাদেশের প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই বেকারত্ব বাড়ছে।

আইএলও বলছে, মহামারিতে তারা তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বেকার, সেই সাথে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে তাদের। এতে তাদের চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে একদিন বা এক ঘণ্টা কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসাবে ধরা হয়। সেই হিসাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংখ্যা বাস্তবে অনেক বেশি।

নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন কমে গেছে
করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া মন্দায় ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে। আর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের চাকরি সংক্রান্ত একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে চাকরির বিজ্ঞাপন অনেক কমে গেছে। যেসব চাকরির বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানেও অভিজ্ঞ কর্মী চাওয়া হচ্ছে।

তিনি বলছেন, ‘আগে যেরকম বিজ্ঞাপন আসতো, করোনার কারণে সেটা ৬০%, ৭০% কমে গেছে। মে মাসে একটু বাড়লেও এখনো ৫০% কম আছে। যেসব বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানে অভিজ্ঞ লোক চাওয়া হচ্ছে, ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের চাহিদা আরও অনেক কমে গেছে।’

‘আগামী ছয়মাস এরকমই থাকবে বলে মনে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

দুই বছর ধরে সরকারি চাকরির পাশাপাশি সম্প্রতি বেসরকারি চাকরি খুঁজতে শুরু করেছিলেন নাহিদুজ্জামান লিটু।

তিনি বলছেন, ‘শুরুতে তো সরকারি চাকরির চেষ্টাই করতাম। কিন্তু সম্প্রতি বেসরকারি চাকরির আবেদন করতে শুরু করেছিলাম। এক-দুইটা ইন্টারভিউ দিয়েছি। এর মধ্যেই তো সব আটকে গেল।’

তিনি বলছেন, এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন। একদিকে বন্ধুদের সাথে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়, পড়াশোনা শেষ করার পরেও বাড়ি থেকে সাপোর্ট নিতে হচ্ছে। দুই-তিনমাসের মধ্যে একটা চাকরি পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

নতুন কর্মী নেয়ার কথা ভাবছে না প্রতিষ্ঠানগুলো
বাংলাদেশের ব্যাংক, বহুজাতিক বা বড় কোম্পানিগুলো গত কয়েকমাস ধরে ব্যবসা না হওয়ায় কর্মী ছাঁটাই বা বর্তমান কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো বলছে, আগে থেকেই খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সংকট, তার ওপর ব্যবসা বাণিজ্যের অবনতির কারণে করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবে তাদের ব্যবসা খাদের কিনারে। ব্যয় কমানো ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। বেতন না কমালে ছাঁটাই করতে হবে।

বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো লোক ছাঁটাই করছে না, কিন্তু ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু অনেক কর্মী ছাঁটাই করছে। এখন ডেভেলপমেন্ট সেক্টর, এনজিও বা ই-কমার্স কোম্পানি ছাড়া আর কেউ এখন কর্মী নিয়োগ করছে না।’

বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক অমিত বণিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের ক্ষতি তো সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপরেই পড়েছে, আমাদের ওপরেও পড়েছে। আগের তুলনায় ব্যবসা অনেক কমে গেছে।’

‘যেহেতু আমাদের ব্যবসাটা আগের তুলনায় অনেক কমে আসছে, তাই নতুন করে কর্মী নিয়োগ আপাতত আগের মতো আর হচ্ছে না। বরং কাউকে কাউকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। কর্মী নিতে হলে, বেতনভাতা দিতে হলে সেজন্য তো ব্যবসা করতে হবে, আয় করতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ঠিক না হয়, ব্যবসা যদি ভালো না হয়, তাহলে তো আর কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই নতুন করে কর্মী নেয়া সম্ভব হয় না।’

তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাসের মন্দার কারণে আপাতত বেশ কিছুদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আর আগের মতো নতুন কর্মী নিয়োগ করতে পারবে না। কবে থেকে তারা আবার সেটা চালু করতে পারবে, সেটাও বলা যাবে না।

একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি না হলে তাদের প্রতিষ্ঠানে আপাতত কয়েকমাস কোনো রকম নিয়োগ কার্যক্রম না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে।

একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি নয়, এমন কর্মীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে। তিনি জানাচ্ছেন, আপাতত তাদের বেতন কিছুটা কমিয়ে দিয়ে কর্মী ছাঁটাই না করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মন্দা অব্যাহত থাকলে নতুন নিয়োগ তো বন্ধই, তিনি একপর্যায়ে কর্মী ছাঁটাই শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

মানবসম্পদ কর্মকর্তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশন, গ্রিন এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি রওশন আলী বুলবুল বলছেন, ‘নতুন যারা পড়াশোনা শেষ করে বের হলো, তারা একটা বিপদে পড়বেই। কারণ বাংলাদেশের সব ধরণের কোম্পানিই এখন সংকটে আছে। যারা বর্তমানে চাকরিতে আছে, তাদের অনেকে চাকরিহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে এসে চাকরির লড়াই করতে হবে নতুন আসা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের।’

‘সরকারের প্রতিবছর অনেকগুলো সার্কুলার থাকে। এই বছর ছয়মাস হয়ে গেল, সরকারি কিন্তু কোন নিয়োগ নেই। আবার বেসরকারি খাতে পুরোটাই বন্ধ আছে। যারা চালু আছে, তারাও সীমিত লোক নিয়ে কাজ করছে। ফলে নতুন করে লোকবল নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।’

দীর্ঘায়িত হতে পারে বেকারত্বের সংকট
করোনাভাইরাস মহামারি কবে শেষ হবে, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মহামারির কারণে আর্থিক মন্দা বহাল থাকবে আরো কিছুদিন। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পড়বে চাকরির বাজারেও।

আইএলও’র একটি প্রতিবেদনে বলছে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোনো না কোনভাবে কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতির শিকার বড় একটি অংশ তরুণ-তরুণীরা।

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেছেন, জরুরিভিত্তিতে তরুণদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করা না গেলে এই ক্ষতির জের টানতে হতে পারে পরবর্তী কয়েক দশক ধরে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের প্রধান নির্বাহী ড. ফাহমিদা খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, নতুন চাকরি তো নেই, যারা ছিল, তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে তরুণদের ওপর। যতদিন পর্যন্ত অর্থনীতি ঠিক না হবে, ততদিন তাদের সবার শ্রমবাজারে প্রবেশ করাটা কঠিন হবে।

‘এমনকি করোনা পরবর্তী সময়েও যেসব কাজের সৃষ্টি হবে, সেগুলোর ধরণ কিন্তু অন্যরকম হবে। এখন যেমন বেশিরভাগ কাজকর্ম ঘরে বসে হচ্ছে। ফলে ডিজিটাল বা আইটিবেজড কাজ বেশি হবে।’

‘ফলে আগের গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যাবে না। বাজার উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ, সেই সাথে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার দরকার হবে।’

সেই সাথে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যুবকদের এই সমস্যা ও সংকটের ব্যাপারে এখনি গুরুত্ব দেয়া শুরু করা উচিত।

‘দীর্ঘদিন শ্রমবাজারের বাইরে অনেকদিন থাকলে তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম নেবে, সামাজিক একটা প্রভাব তৈরি করবে। এর ফলে যে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তাই নয়, এর ফলে সমাজের ওপরেও সামগ্রিকভাবে একটা প্রভাব পড়বে।’

বিকল্প কী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা গত কয়েক বছরের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করেছেন, নতুন চাকরির চেষ্টা করছেন, তাদের উচিত হবে শুধুমাত্র কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য বসে না থেকে যা পাওয়া যায়, সেটা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করা।

বিডিজবসের ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘ট্রাডিশনাল চাকরি অনেক কমে যাবে। সবাই যদি সরকারি, বড় প্রতিষ্ঠানে বা অফিসিয়াল চাকরির খোঁজেন, তাহলে হবে না। যেকোনো ধরণের চাকরি পেলেই সেটা শুরু করে দিতে হবে।’

গ্রীন এইচআর প্রফেশনালের রওশন আলী বুলবুল বলছেন, নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রচলিত শিক্ষার ওপর নির্ভর করে না থেকে তাদের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে হবে।

‘বেকার থাকার চেয়ে বেগার খাটা ভালো। এই দুঃসময়ে বসে না থাকে, যা পান, তাই নিয়ে শুরু করে দিন, অভিজ্ঞতা হোক। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অন্য চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারেন।’

সূত্র : বিবিসি