banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

করোনাকালে ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতনের দুই শতাধিক মামলা

করোনাভাইরাসের মহামারিতে থমকে গেছে বিশ্ব। থমকে গেছে দেশ। এই মহামারি রোধে ৬৬ দিন ছিল সাধারণ ছুটি। এ সময়ে অনেককে থাকতে হয়েছে নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে। এ পরিস্থিতিতেও থেমে নেই নারী ও শিশু নির্যাতন।

করোনাকালে ঢাকা শহরে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ২০০টি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ধর্ষণ, তারপর যৌতুক ও অপহরণের।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার হিসাব মতে, গত ২৬ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগের ২০০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

এগুলোর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৫৮টি, গণধর্ষণের আটটি, ধর্ষণচেষ্টার ১৬টি, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনে অভিযোগে হয়েছে ৫৩টি, অপহরণের অভিযোগে ৩৭টি, শ্লীলতাহানির অভিযোগে ১৯টি, শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ৯টি মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ জুন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, মার্চ, এপ্রিল ও মে- এই তিন মাসে সারাদেশে ৪৮০ জন নারী ও শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬৭ জন নারী ও ২১৩ জন শিশু। এর মধ্যে ২০৬ ঘটনায় ৯০ নারী ও ১১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

প্রথমবারের মতো মহাকাশে লোক পাঠানোর নেতৃত্বে নারী


প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মনুষ্যবাহী মহাকাশযান (হিউম্যান স্পেসফ্লাইট) পরিচালনার নেতৃত্ব দেবেন এক নারী। নাসার হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড অপারেশনস মিশনের (এইচইও) প্রধান হিসেবে ক্যাথি লুয়েডার্সকে নিয়োগ দেওয়ার পর এই ইতিহাস তৈরি হলো। গত শুক্রবার নাসার প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন টুইটারে এই নিয়োগের ঘোষণা দেন। খবর এএফপির।

গত মাসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী পাঠানোর মিশনের নেতৃত্ব দেন লুয়েডার্স। সেই সফলতার সূত্র ধরেই তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নাসার প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশচারী ও কার্গো পাঠানো—উভয় প্রকল্প সফলভাবে পরিচালনা করেছেন ক্যাথি। তাই ২০২৪ সালে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এইচইওকে পরিচালনার জন্য তাঁকেই আমরা উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে মনে করেছি।’

১৯৯২ সালে নাসায় যোগদান করেন লুয়েডার্স। গত ৩০ মে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের একটি মহাকাশযানে দুজন মহাকাশচারীকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ফ্লাইটে মহাকাশে যান নভোচারীরা।

কৃষ্ণাঙ্গ নারীর নামে হেডকোয়ার্টারের নাম পাল্টাচ্ছে নাসা

শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বর্বর নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। জনগণের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র পুলিশে সংস্কার আনতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈশ্বিক জাতিগত অসমতা নিয়ে বিতর্কের কারণে ত্বক ফর্সা করার ক্রিম বিক্রি না করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক হেলথকেয়ার কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন।

তবে দেশটির বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)। সংস্থাটি তাদের হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের নাম পরিবর্তন করে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নাসার হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিল্ডিংটির নাম রাখা হবে ‘মেরি উইলিয়াম জ্যাকসন’।

মেরি মার্কিন এই মহাকাশ সংস্থার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকান নারী প্রকৌশলী। বুধবার সংস্থাটির প্রশাসক জিম ব্রিডেনস্টাইন এ ঘোষণা দেন।

’৫০-এর দশকে ভার্জিনিয়ার হ্যাম্পটনে অবস্থিত নাসার ল্যাংলে রিসার্চ সেন্টারে কর্মজীবন শুরু করেন মেরি জ্যাকসন।

এর আগে গতবছর নাসার এই প্রতিষ্ঠানটির আগের নাম পাল্টিয়ে নাম রাখা হয় ‘হিডেন ফিগারস ওয়ে’। মূলত নাসায় আগে যেসব আফ্রিকান-আমেরিকান নারী কর্মরত ছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই নাম রাখে নাসা।

তবে মহাকাশ সংস্থা নাসা এমন এক সময়ে তাদের হেডকোয়ার্টারের নাম পরিবর্তনের কথা জানাল, যখন মিসিসিপিতে অবস্থিত তাদের ‘স্টেনিস স্পেস সেন্টারের’ নাম পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছিল বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা। একই সময় জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বৈষম্যমূলক বিভিন্ন স্মৃতিস্মম্ভ নামিয়ে ফেলার হিড়িক চলছে।

নাসার এই প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয়েছে মিসিসিপির দীর্ঘসময় ধরে সিনেটর থাকা জন সি.স্টেনিসের নামানুসারে। কঠোর জাতিবিদ্বেষী বলে পরিচিত এই সিনেটর।

অপরাজিতাবিডি/রবি

বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠিত হলো ‘নারী প্রকৌশলী সম্মেলন’

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘নারী প্রকৌশলী সম্মেলন-২০২০’। মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিট-১৯) কারণে অনলাইনে এই সম্মেলন হয়। ২৩ জুন রাত ৮টায় দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই সম্মেলন শুরু হয়ে রাত ১১টায় শেষ হয়।

এটি দেশে প্রথম নারী প্রকৌশলী সম্মেলন। প্রধান অতিথি হিসেবে এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। সম্মেলনের সমাপনী করেন আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ।

১৯১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের উইমেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি ২৩ জুনকে নারী প্রকৌশলী দিবস হিসেবে পালন করত। পরে ২০১৭ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আর্ন্তজাতিক নারী প্রকৌশলী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। তবে আইইবি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৭ মে ’ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করা হয়।

এবারের নারী প্রকৌশলী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘শেপ দ্য ওয়ার্ল্ড’।

অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী রওশন মমতাজ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নীরা মজুমদার, এলজিইডি প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী সালমা শহীদ, রাজউকের ডিরেক্টর সরকারের উপসচিব, আইবির সেন্ট্রাল কাইন্সিল মেম্বার প্রকৌশলী তানজিলা খানম।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রকৌশলীদের মধ্য আরও বক্তব্য দেন প্রকৌশলী মৌসুমী সালমীন, প্রকৌশলী সোনিয়া নওরীন এবং অধ্যাপক প্রকৌশলী সালমা আখতার। অনুষ্ঠানের মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক এবং আইইবির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের সেক্রেটারি প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, ’চাকরি জীবনে নারী প্রকৌশলীরা কর্তব্যনিষ্ঠ ও সৎ হিসেবে পরিচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা নেবার পর থেকেই বিভিন্ন পদে নারীদের পদায়ন করেছেন। প্রথম মহিলা বিচারপতি, প্রথম মহিলা সচিব, প্রথম মহিলা স্পিকার এবং এসবের ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রধান প্রকৌশলীও বঙ্গবন্ধু কন্যার শাসন আমলের অবদান। এই সম্মেলনেও একজন প্রধান প্রকৌশলী উপস্থিত আছেন। শেখ হাসিনা মনে করেন, ‘নারীদের উন্নয়নের বাইরে রেখে কখনও প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়’।

তিনি আরও বলেন, নারী প্রকৌশলীরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পরিকল্পনা করবেন কীভাবে আমাদের এ পৃথিবীটা আরও বাসযোগ্য, নিরাপদ, আরও সৃজনশীল ও আনন্দদায়ক করা যায়। আইইবি সবসময় নারী প্রকৌশলীদের সাথে থাকবে- আইইবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। সেই সাথে আইইবি থেকে নারী প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরসহ সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে।

এর আগে নারী প্রকৌশলীরা নারীদের প্রকৌশলী পেশার যেসব প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ ছাড়া নারী প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন নারী প্রকৌশলীরা। নারী প্রকৌশলীরা মনে করেন, নারীদের কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারলে নারীরা প্রকৌশল পেশায় আগ্রহ হবেন। এ ক্ষেত্রে প্রকৌশল পেশায় বাংলাদেশের নারীদের আরও এগিয়ে নিতে আইইবি’র সহযোগিতা কামনা করেন নারী প্রকৌশলীরা।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

এক করোনা যোদ্ধার গল্প

মনোয়ারা আক্তার। করোনা উপসর্গ রোগীদের কাছে এক ভরসার নাম। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট। তিনি ১৮ শ’ করোনার নমুনা সংগ্রহ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। করোনা মহামারিতে নিরলসভাবে কাজে করে পুরো সোনারগাঁও উপজেলাবাসীর কাছে প্রশংসায় সিক্ত হয়েছেন এই করোনা যোদ্ধা।

তিনি বলেন, যারা করোনায় অসুস্থ হচ্ছে তারাও তো আমার মতো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কারো বোন, ভাই, মেয়ে। এ করোনাকালে অনেকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। আমিও আমার অবস্থান থেকে পরম করুণাময়ের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে মানুষের একটু সেবা করে যাচ্ছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কাজ শুরু হয় গত ৫ এপ্রিল। কাঁচপুর ইউনিয়নে এক বৃদ্ধ সর্দি কাশি নিয়ে মৃত্যুবরণ করার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই থেকে শুরু এখন পর্যন্ত ১৮০০ বার রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে আসা রোগীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলায় হাসপাতালে যখন করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়, তখন দায়িত্ব দেয়া হয় এমটি ইপিআই, এমটি ল্যাবসহ আরো দু’জনকে। লোকবলের অভাবে অবশেষে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে এমটি মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট মনোয়ারার উপর। সাথে তাকে সহযোগিতার জন্য দেয়া হয় সহকারী রায়হান ও হাসানকে। প্রথমে কিছুটা শঙ্কিত হলেও মনের ভেতর সাহস সঞ্চার করে মুহূর্তের মধ্যেই নমুনা সংগ্রহের কাজে রাজি হয়ে যান তিনি। এরপর ৫ এপ্রিল প্রথম একজন মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ দিয়ে শুরু হয় তার এগিয়ে চলা। গত আড়াই মাসে বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে ১৮শ’ বার নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। সবশেষ ২০ জুন ২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬২ কয়েকজন রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষই নন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার সাথে কর্মরত হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফও। তারপরও দমে যাননি মনোয়ারা।

মনোয়ারা আক্তার বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রথম থেকেই লোকবল সঙ্কট ছিল। সেজন্য আমি নিজেই একা মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টের কাজটি করে আসছি। যখন দেশে করোনাভাইরাস শুরু হলো তখন টিএইচও স্যার আমাকে ডেকে বললেন সোনারগাঁওয়ের করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরএ পাঠানোর জন্য। আমি রাজি হওয়ার পর স্যাম্পল কালেকশন কিট-পিপিইসহ সব সরঞ্জাম আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হলো। তখন একাই হাসপাতালে সহকারী মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আমার স্বামী মোঃ হাবিলউদ্দিনের সাথে কথা বলে মা-বাবা ও শুভাকাঙ্খিদের দোয়ায় কাজ শুরু করি।

মনোয়ারা বলেন, প্রথম কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ভয় পেয়েছি। কারণ টিভিতে দেখেছি পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। সেগুলো দেখে আমার মনেও ভয় তৈরি হয়েছিল। এছাড়া আমার ঘরে পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। তাকে রেখে কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করবো। আবার আমি যদি করোনায় আক্রান্ত হই, তাহলে তাকে কে দেখবে? এসব চিন্তা করে রাতে ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু যখন চিন্তা করলাম যুদ্ধের ময়দানে নেমে মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না, ভয়কে জয় করে যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি ভয় পাই তাহলে মানুষের চিকিৎসা করবে কে? আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছে সে দায়িত্ব যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। এছাড়া এ কাজে টিএইচও স্যার এবং আমার স্বামী সাহস জুগিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা ও তাদের দেয়া সাহস নিয়েই নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমে পড়ি। নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে সহায়তার জন্য সহকারী মোঃ রায়হান ও মোঃ হাসানকে সাথে দেন। যারা আমার কাজে প্রতিদিনই সহায়তা করে আসছেন। তাদের দু’জন পালা করে আমাকে সহায়তা করতেন। কাজটি যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য নিজের দিকে খেয়াল রেখেছি। সব সময় করোনা মুক্ত থাকতে যা যা করণীয় তা পালন করেছি।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতাম। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। হাসপাতালে প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ ৭০ জনেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন শুনেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিক নমুনা সংগ্রহ করেছি। আর ইচ্ছে আছে যতদিন সুস্থ থাকবো, ততদিন নমুনা সংগ্রহের এ কাজ চালিয়ে যাবো। নিজের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিনি, কারণ এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখছি না। যদি অসুস্থ হয়েই যাই, তাহলে সুস্থ হয়ে আবার এসে কাজটি চালিয়ে যাবো। আমি সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা বলেন, আমি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে মনোয়ারাকে দেখেছি নিষ্ঠা ও মনোযোগের সাথে কাজ করতে। তাকে ধন্যবাদ জানাই সাহসিকতা এবং তার কাজের জন্য।

অপরাজিতাবিডি/রবি

পড়াশোনা না ছাড়ায় ঢাবি ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগ, শাশুড়ি ও ননদ গ্রেপ্তার

সুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতসুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতমেয়ে অসুস্থ, শ্বশুরের কাছ থেকে ফোনে এমন সংবাদ পেয়ে যশোর থেকে নাটোরে ছুটে আসেন মা নুজহাত বেগম। এসে দেখলেন, হাসপাতালের মর্গে মেয়ের লাশ পড়ে আছে। শ্বশুর, স্বামী বা তাঁদের পরিবারের কেউই সেখানে নেই। নুজহাতের অভিযোগ, নির্যাতন করে তাঁর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস সুমাইয়া বেগমকে হত্যা করেছেন স্বামীর বাড়ির লোকজন। সুমাইয়া বেগম যশোরের সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল নাটোর শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার প্রকৌশলী মোস্তাক হোসাইনের সঙ্গে।

মা নুজহাত বেগম বলেন, ‘গতকাল সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন আমাকে ফোন দেন। তিনি মেয়ের অসুস্থতার কথা বলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। খবর পেয়ে আমি দ্রুত নাটোরে চলে আসি। সদর হাসপাতালে এসে দেখি, আমার মেয়ের মৃতদেহ মর্গে পড়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির কেউ হাসপাতালে নেই।’ তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগেও তাঁকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে মোস্তাকের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বাবা সিদ্দিকুর ছিলেন একজন নামকরা ইসলামি বক্তা। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া। ভর্তির তিন বছরের মাথায় বাবার পছন্দেই মোস্তাককে বিয়ে করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়ালেখায় বাদ সাধে। পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ আসে। পড়ালেখার খরচ বাবা সিদ্দিকুরই দিতেন। তাই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়নি সুমাইয়াকে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বরে বাবা সিদ্দিকুর মারা যান। এতে আর্থিক সংকটে পড়েন সুমাইয়া। শ্বশুরবাড়ি থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে চাকরির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পুরোপুরি সংসারী হওয়ার নির্দেশ আসে। কিন্তু সবকিছু ভুলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই ডুবে ছিলেন সুমাইয়া। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়েছে তাঁর।

পরিবারের অভিযোগ, গত রোববার রাতে সুমাইয়াকে তাঁর স্বামীর ঘরে মারপিট করে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। গতকাল দুপুরে মা নুজহাত বেগম যখন নাটোর সদর হাসপাতালে পৌঁছান, তখন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক, শ্বশুর জাকির বা ওই পরিবারের কাউকে পাননি। সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নাটোরের একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার সকালে বলেন, গতকাল রাতে নিহত নারীর মা নুজহাত বেগম থানায় মামলা করেছেন। এতে সুমাইয়ার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পর আসামিদের ধরতে সারা রাত অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সুমাইয়ার ননদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, যেহেতু স্বামীর বাড়িতে ঘটনাটা ঘটেছে, তাই সব দায় দায়িত্ব স্বামী ও তাঁর স্বজনদেরই বহন করতে হবে।

করোনায় নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন কেন?

নারী নয়, পুরুষদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে এর কারণ নিয়ে চিকিৎসকরা একমত নন। ভারতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা অনেক বেশি করোনায়আক্রান্ত হচ্ছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ(আইসিএমআর)-এর রিপোর্ট থেকে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। আইসিএমআর-এর গবেষক দল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ দেশজুড়ে ২০টি রাজ্যের ৫২টি জেলায় প্রবল শ্বাসকষ্টে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। মোট পাঁচ হাজার ৯১১ জনকে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ১০৪ জন করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জন অর্থাৎ ৮৩ শতাংশেরও বেশি হলেন পুরুষ।

ভারতে নারীদের থেকে পুরুষরা এত বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কেন? চিকিৎসকদের মধ্যেও কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল। ভারতে জেলা বা ছোট শহরগুলিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি ধূমপান করেন। গ্রামের দিকে লোকে এখনও হুঁকো খান, বিড়ি, সিগারেটও খান। তাই মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইটালিতেও এত বেশি সংখ্যক লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ, সেখানে লোকের মধ্যে ধূমপানের অভ্যাস অনেক বেশি।”

আবার চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু মনে করেন, এর প্রধান কারণ, পুরুষরা অনেক বেশি বাইরের কাজ করেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,” আসলে ভারতে পুরুষরা মেয়েদের থেকে অনেক বেশি বাইরে বের হন। তাই তাঁরা বেশি করে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু তাঁরা বাইরে বের হচ্ছেন, তাই তাঁরা করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসছেন। সেখান থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজামুদ্দিনের ঘটনাই তার উদাহরণ।”

ডয়চে ভেলের কাছে চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের ব্যাখ্যা, ”বিশ্বের অন্য জায়গাতেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। করোনা হচ্ছে সামাজিক অসুখ। ভাইরাসটি সংক্রমক, অর্থাৎ, ছোঁয়াচে। তাই যিনি বাইরে যাচ্ছেন ও আক্রান্ত হচ্ছেন, তিনি ঘরে ফিরলে গোটা পরিবারে সংক্রমণ ঘটার কথা। ফলে নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন আর পুরুষরা বেশি, এই প্রবণতা বাইরে বেরনোর নিরিখে বিচার করলে ভুল হবে। আসলে যে কোনও ভাইরসের একটা জেনেটিক কাঠামো থাকে। করোনার ক্ষেত্রে সেই গঠন এখনও বোঝা যায়নি। পুরুষ ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ করার সিস্টেমও আলাদা। বহু ক্ষেত্রে কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, কারও কম। করোনা কী করে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙছে, তা এখনও জানা যায়নি। জানা গেলে বোঝা যাবে কেন পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন!”

আইসিএমআরের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের বেশি। সমীক্ষা অনুসারে ৫০ বছরের বেশি বয়স্করা তুলনায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনা বেশি হচ্ছে। আইসিএমআরের মতে, মধ্যরেখা হলো ৫৪ বছর। এর কারণ নিয়ে অবশ্য চিকিৎসকরা একমত। তাঁদের মতে, ৫০ এর পর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। সাত্যকি হালদার মনে করেন, ”৫০ এর পর লোকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেও, ৬০-৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাইরে বেরনোর প্রবণতা আগের মতোই থাকে। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।” পার্থ প্রতিম বোসের মতে, ”একে তো ওই বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তার ওপর যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁরাও অনেক দিন ধরে ধূমপান করে ফুসফুসের অনেকটা ক্ষতি করে ফেলেছেন। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।”

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ আক্রান্ত কখনও বিদেশে যাননি। তাঁরা জ্ঞানত কোনও করোনা আক্রান্তের সঙ্গেও মেশেননি।

আইসিএমআর এখন নতুন করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতিনির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে,

যাঁদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাঁদের সকলের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত ও সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসছেন, তাঁদের পাঁচদিন ও ১৪ দিন পরে দুই বার পরীক্ষা করতে হবে। যে করোনা আক্রান্তরা কোনও জমায়েতে ছিলেন, সেখানে উপস্থিত সকলের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। যে সব ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা হবে। গত ১৪ দিনে যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদেরও বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিহ্নিত করা হটস্পটে কারও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষা করা হবে। সূত্র ডিডব্লিউ

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি নতুন চাকরি প্রত্যাশীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ২০১৮ স্নাতকোত্তর করছেন তানজিলা আক্তার। এরপর থেকেই তিনি একাধিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করেছেন, বেসরকারি চাকরির চেষ্টাও করেছেন। আশা করছিলেন, এই বছর একটা ভালো চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সেই স্বপ্ন থমকে গেছে।

‘এখন তো মহামারির কারণে সবকিছুই আটকে আছে। কোন সার্কুলার নাই, কোনো চাকরির পরীক্ষা নেই। এই মহামারি কবে শেষ হবে, কবে আবার চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হবে জানি না।’

‘আমরা যারা বেকার আছি, চাকরির খুব প্রয়োজন, তাদের জীবনটা এই মহামারির কারণে একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কাজ নেই, যতদিন যাচ্ছে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের মলিন চেহারা সেই হতাশা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

তিনি জানান, তার বাবা মায়ের বয়স হয়েছে, এখন তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার কথা। কিন্তু এই মহামারির কারণে তিনি সেটা করতে পারছেন না।

আরেকজন চাকরি প্রত্যাশী ফারিয়া আজাদ সমাজকর্মে পড়াশোনা শেষ করেছেন ২০১৭ সালে। গত কয়েকবছর ধরেই তিনি সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন।

‘আমি শুধু সরকারি চাকরির জন্যই অনেক বছর ধরে চেষ্টা করছি। এ বছর ৪১তম বিসিএসের পরীক্ষা হবে ভাবছিলাম। করোনার কারণে সব আটকে গেল। এদিকে চাকরির বয়সও শেষ হতে চলেছে। মেয়ে হিসাবে পারিবারিকভাবে বিয়ে-শাদির চাপও আছে। সব কিছু মিলিয়ে একটা মানসিক চাপের মধ্যে, হতাশার থাকতে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশে বেকার
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার।

আর সম্ভাবনাময় কিন্তু সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না এরকম ব্যক্তি (লেবার আন্ডার ইউটিলাইজেশন), যাদের ছদ্ম-বেকার বর্ণনা করা হয়, এরকম মানুষ রয়েছেন প্রায় ৬৬ লাখ। এরা চাহিদা মাফিক কাজ না পেয়ে টিউশনি, রাইড শেয়ারিং, বিক্রয় কর্মী ইত্যাদি খণ্ডকালীন কাজ করেন।

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.২% হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১.৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে জুন ২০২০ সাল নাগাদ সেটি কয়েকগুণে বেড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে আর বাংলাদেশের প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই বেকারত্ব বাড়ছে।

আইএলও বলছে, মহামারিতে তারা তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বেকার, সেই সাথে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে তাদের। এতে তাদের চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে একদিন বা এক ঘণ্টা কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসাবে ধরা হয়। সেই হিসাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংখ্যা বাস্তবে অনেক বেশি।

নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন কমে গেছে
করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া মন্দায় ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে। আর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের চাকরি সংক্রান্ত একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে চাকরির বিজ্ঞাপন অনেক কমে গেছে। যেসব চাকরির বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানেও অভিজ্ঞ কর্মী চাওয়া হচ্ছে।

তিনি বলছেন, ‘আগে যেরকম বিজ্ঞাপন আসতো, করোনার কারণে সেটা ৬০%, ৭০% কমে গেছে। মে মাসে একটু বাড়লেও এখনো ৫০% কম আছে। যেসব বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানে অভিজ্ঞ লোক চাওয়া হচ্ছে, ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের চাহিদা আরও অনেক কমে গেছে।’

‘আগামী ছয়মাস এরকমই থাকবে বলে মনে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

দুই বছর ধরে সরকারি চাকরির পাশাপাশি সম্প্রতি বেসরকারি চাকরি খুঁজতে শুরু করেছিলেন নাহিদুজ্জামান লিটু।

তিনি বলছেন, ‘শুরুতে তো সরকারি চাকরির চেষ্টাই করতাম। কিন্তু সম্প্রতি বেসরকারি চাকরির আবেদন করতে শুরু করেছিলাম। এক-দুইটা ইন্টারভিউ দিয়েছি। এর মধ্যেই তো সব আটকে গেল।’

তিনি বলছেন, এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন। একদিকে বন্ধুদের সাথে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়, পড়াশোনা শেষ করার পরেও বাড়ি থেকে সাপোর্ট নিতে হচ্ছে। দুই-তিনমাসের মধ্যে একটা চাকরি পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

নতুন কর্মী নেয়ার কথা ভাবছে না প্রতিষ্ঠানগুলো
বাংলাদেশের ব্যাংক, বহুজাতিক বা বড় কোম্পানিগুলো গত কয়েকমাস ধরে ব্যবসা না হওয়ায় কর্মী ছাঁটাই বা বর্তমান কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো বলছে, আগে থেকেই খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সংকট, তার ওপর ব্যবসা বাণিজ্যের অবনতির কারণে করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবে তাদের ব্যবসা খাদের কিনারে। ব্যয় কমানো ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। বেতন না কমালে ছাঁটাই করতে হবে।

বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো লোক ছাঁটাই করছে না, কিন্তু ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু অনেক কর্মী ছাঁটাই করছে। এখন ডেভেলপমেন্ট সেক্টর, এনজিও বা ই-কমার্স কোম্পানি ছাড়া আর কেউ এখন কর্মী নিয়োগ করছে না।’

বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক অমিত বণিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের ক্ষতি তো সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপরেই পড়েছে, আমাদের ওপরেও পড়েছে। আগের তুলনায় ব্যবসা অনেক কমে গেছে।’

‘যেহেতু আমাদের ব্যবসাটা আগের তুলনায় অনেক কমে আসছে, তাই নতুন করে কর্মী নিয়োগ আপাতত আগের মতো আর হচ্ছে না। বরং কাউকে কাউকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। কর্মী নিতে হলে, বেতনভাতা দিতে হলে সেজন্য তো ব্যবসা করতে হবে, আয় করতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ঠিক না হয়, ব্যবসা যদি ভালো না হয়, তাহলে তো আর কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই নতুন করে কর্মী নেয়া সম্ভব হয় না।’

তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাসের মন্দার কারণে আপাতত বেশ কিছুদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আর আগের মতো নতুন কর্মী নিয়োগ করতে পারবে না। কবে থেকে তারা আবার সেটা চালু করতে পারবে, সেটাও বলা যাবে না।

একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি না হলে তাদের প্রতিষ্ঠানে আপাতত কয়েকমাস কোনো রকম নিয়োগ কার্যক্রম না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে।

একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি নয়, এমন কর্মীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে। তিনি জানাচ্ছেন, আপাতত তাদের বেতন কিছুটা কমিয়ে দিয়ে কর্মী ছাঁটাই না করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মন্দা অব্যাহত থাকলে নতুন নিয়োগ তো বন্ধই, তিনি একপর্যায়ে কর্মী ছাঁটাই শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

মানবসম্পদ কর্মকর্তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশন, গ্রিন এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি রওশন আলী বুলবুল বলছেন, ‘নতুন যারা পড়াশোনা শেষ করে বের হলো, তারা একটা বিপদে পড়বেই। কারণ বাংলাদেশের সব ধরণের কোম্পানিই এখন সংকটে আছে। যারা বর্তমানে চাকরিতে আছে, তাদের অনেকে চাকরিহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে এসে চাকরির লড়াই করতে হবে নতুন আসা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের।’

‘সরকারের প্রতিবছর অনেকগুলো সার্কুলার থাকে। এই বছর ছয়মাস হয়ে গেল, সরকারি কিন্তু কোন নিয়োগ নেই। আবার বেসরকারি খাতে পুরোটাই বন্ধ আছে। যারা চালু আছে, তারাও সীমিত লোক নিয়ে কাজ করছে। ফলে নতুন করে লোকবল নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।’

দীর্ঘায়িত হতে পারে বেকারত্বের সংকট
করোনাভাইরাস মহামারি কবে শেষ হবে, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মহামারির কারণে আর্থিক মন্দা বহাল থাকবে আরো কিছুদিন। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পড়বে চাকরির বাজারেও।

আইএলও’র একটি প্রতিবেদনে বলছে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোনো না কোনভাবে কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতির শিকার বড় একটি অংশ তরুণ-তরুণীরা।

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেছেন, জরুরিভিত্তিতে তরুণদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করা না গেলে এই ক্ষতির জের টানতে হতে পারে পরবর্তী কয়েক দশক ধরে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের প্রধান নির্বাহী ড. ফাহমিদা খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, নতুন চাকরি তো নেই, যারা ছিল, তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে তরুণদের ওপর। যতদিন পর্যন্ত অর্থনীতি ঠিক না হবে, ততদিন তাদের সবার শ্রমবাজারে প্রবেশ করাটা কঠিন হবে।

‘এমনকি করোনা পরবর্তী সময়েও যেসব কাজের সৃষ্টি হবে, সেগুলোর ধরণ কিন্তু অন্যরকম হবে। এখন যেমন বেশিরভাগ কাজকর্ম ঘরে বসে হচ্ছে। ফলে ডিজিটাল বা আইটিবেজড কাজ বেশি হবে।’

‘ফলে আগের গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যাবে না। বাজার উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ, সেই সাথে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার দরকার হবে।’

সেই সাথে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যুবকদের এই সমস্যা ও সংকটের ব্যাপারে এখনি গুরুত্ব দেয়া শুরু করা উচিত।

‘দীর্ঘদিন শ্রমবাজারের বাইরে অনেকদিন থাকলে তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম নেবে, সামাজিক একটা প্রভাব তৈরি করবে। এর ফলে যে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তাই নয়, এর ফলে সমাজের ওপরেও সামগ্রিকভাবে একটা প্রভাব পড়বে।’

বিকল্প কী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা গত কয়েক বছরের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করেছেন, নতুন চাকরির চেষ্টা করছেন, তাদের উচিত হবে শুধুমাত্র কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য বসে না থেকে যা পাওয়া যায়, সেটা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করা।

বিডিজবসের ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘ট্রাডিশনাল চাকরি অনেক কমে যাবে। সবাই যদি সরকারি, বড় প্রতিষ্ঠানে বা অফিসিয়াল চাকরির খোঁজেন, তাহলে হবে না। যেকোনো ধরণের চাকরি পেলেই সেটা শুরু করে দিতে হবে।’

গ্রীন এইচআর প্রফেশনালের রওশন আলী বুলবুল বলছেন, নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রচলিত শিক্ষার ওপর নির্ভর করে না থেকে তাদের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে হবে।

‘বেকার থাকার চেয়ে বেগার খাটা ভালো। এই দুঃসময়ে বসে না থাকে, যা পান, তাই নিয়ে শুরু করে দিন, অভিজ্ঞতা হোক। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অন্য চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারেন।’

সূত্র : বিবিসি

মৃত্যুর পরের কথা ভেবে মিডিয়া ছেড়ে ইবাদতে অ্যানি খান

‘দু’মিনিট পরে আমি বাঁচবো কিনা জানি না। মৃত্যুর পরে অনন্তকালের জন্য আমি কি সঞ্চয় করলাম? এ সব চিন্তা-ভাবনা মিলিয়ে আমি আর মিডিয়ায় ফিরতে চাইছি না। এজন্য কেউ আমাকে ভণ্ড বলতে পারেন, খারাপ বলতে পারেন। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার রিয়ালাইজেশনগুলো কেমন, সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।’

ফেসবুক লাইভে এসে এই কথাগুলো বলছিলেন মিডিয়াতে কাজ করা মডেল ও অভিনেত্রী অ্যানি খান। সম্প্রতি তিনি মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিশুশিল্পী হিসেবে মিডিয়ায় কাজ শুরু করেছিলেন অ্যানি খান। এ অঙ্গনে প্রায় তার ২৩ বছরের পথ চলা।

শোবিজ জগত ছেড়ে দেওয়া অ্যানি খান বলেন, ‘আল্লাহ যেন আমাকে আর কাজে না ফেরান। ঘরে থাকবো, ইবাদত করবো। আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর থেকেই মনে হচ্ছিল মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাবো। জানুয়ারির ২৬ তারিখ থেকে নিজের মধ্যে সিদ্ধান্তটা বেশি করে নাড়া দিতে থাকে। মার্চের ১৯ তারিখ শেষবার শুটিং করেছি। তারপর তো করোনায় সবকিছু বন্ধ হলো। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিডিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেইনি। এ সিদ্ধান্ত আমার ব্যক্তিগত। কারণ মৃত্যুর পর আমার হিসেব আমাকেই দিতে হবে। সেই আত্ম উপলব্ধি থেকেই আমি মিডিয়ার কাজ থেকে সরে যাচ্ছি।’

মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন উল্লেখ করে অ্যানি খান বলেন, ‘শৈশব থেকেই টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতাম। ২০১৫ সাল পর্যন্ত অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলাম। তারপর থেকে এ পর্যন্ত টানা নাটকে কাজ করে মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এবার একেবারেই মিডিয়ার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মৃত্যুর খবরগুলো যেভাবে শুনছি, আগে সেভাবে শোনা যেতো না। বাবাকে হারালাম। চোখের সামনে কাছের মানুষগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এসব কারণে ধর্মীয়বোধ জাগ্রত হয়েছে।’

বর্তমানে অনেক কিছুতে বিধিনিষেধ চলে আসছে উল্লেখ করে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি একজন মুসলিম। এ পরিচয়ে ধর্মীয় বিষয়গুলো যতোই জানার চেষ্টা করছি, ততই ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান করোনাকালে দেখছি, অনেকেরই সময় কাটছে না। কিন্তু আমি নিজে কোনো সময়ই পাচ্ছি না। জীবনে সময় এতো স্বল্প অনুভব করছি যে, মনে হচ্ছে দিনরাত ৪৮ ঘণ্টা হলে ভালো হতো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি, নফল নামাজ পড়ছি, কোরআন হাদিস পড়ছি। এতদিন অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে ছিলাম। সবকিছু আমাকে শিখতে হচ্ছে।’

বিয়ে প্রসঙ্গে অ্যানি খান বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের থাকার একটা জায়গা আছে। বেঁচে থাকলে আগামী বছর বিয়ে করে ফেলবো।’

 

মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?


ডা. মারুফ রায়হান খান


১. মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

উত্তর : এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও কোনো মায়ের বুকের দুধে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। বুকের দুধের মাধ্যমে এটি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

২. এই করোনা মহামারীর সময়েও কি মায়েদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?

উত্তর : অবশ্যই উচিত৷ শিশুর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্যেই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের দুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে একদম সঠিক মাত্রায়। তার সারাজীবনের সুস্থতা নির্ভর করে বুকের দুধের ওপর। তার বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করে এটি। বুকের দুধে থাকা এন্টিবডি নানা ধরনের ইনফেকশানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। বুকের দুধের মাধ্যমে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তেও শিশুকে সাহায্য করবে।

৩. চারিদিকে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর কথা বলা হচ্ছে, এখনও কি নবজাতককে জন্মের পরপর মায়ের বুকে ‘স্কিন টু স্কিন’ কেয়ারের জন্য দিতে হবে?

উত্তর : হ্যাঁ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এটি তাদের শরীরে নানামুখী উপকার করে নবজাতক মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে দেয়৷ তাছাড়া মায়ের বুকে দ্রুত দুধ আসাকেও এটি ত্বরান্বিত করে।

৪. যদি মা নিজে কোভিডে আক্রান্ত হন বা কোভিডের লক্ষণ থাকে, তাহলে কি তিনি বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?

উত্তর : হ্যাঁ, পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

৫. কী কী সতর্কতা?

– শিশুকে দুধ খাওয়াবার আগে এবং পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

– মা একটি মাস্ক পরে নিয়ে দুধ খাওয়াবেন। মাস্কটি ভিজে গেলে সেটি নির্ধারিত স্থানে ফেলে দিয়ে অন্য একটি মাস্ক পরতে হবে। একটি ব্যবহৃত মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। মাস্কের সামনের দিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না

– দুধ খাওয়াবার সময় হাঁচি-কাশি না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। হাঁচি-কাশি এলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে।

– মায়ের পরিধেয় কাপড়চোপড় পরিষ্কার থাকতে হবে।

– মা তার আশেপাশে যা কিছু স্পর্শ করবে তা নিয়মিত পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

৬. কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কি প্রতিবার দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নিতে হবে?

উত্তর : যদি তিনি উন্মুক্ত বুকে বা স্তনে হাঁচি-কাশি দিয়ে থাকেন, তাহলে বুকের দুধ পান করাবার আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান-পানি দিয়ে স্তন ধুয়ে নিতে হবে৷

এমনিতে প্রতিবার বুকের দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নেয়া জরুরি না।

৭. যদি এমন হয় কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কাছে কোনো মাস্ক নেই তবুও কি তিনি বুকের দুধ পান করাবেন?

উত্তর : আসলে বুকের দুধ এতো বেশি জরুরি যে, এ অবস্থাতেও মা শিশুকে বুকের দুধ পান করাবেন। তবে অন্যান্য সতর্কতাগুলো অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করবেন।

৮. শিশুদের কোভিডে আক্রান্ত হবার হার কেমন?

উত্তর : এখন পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

৯. তবুও যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তখন?

উত্তর : আশার কথাটি হচ্ছে এখন পর্যন্ত যেসব শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো লক্ষণ ছিল না অথবা সাধারণ কিছু লক্ষণ ছিল। সুস্থ হয়ে ওঠার হার অনেক বেশি৷

১০. যদি মা এতোটা অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তিনি বুকের দুধ পান করাতে পারছেন না, তখন করণীয় কী?

উত্তর : সেক্ষেত্রে ‘এক্সপ্রেসড ব্রেস্টমিল্ক’ খাওয়ানো যেতে পারে শিশুকে। মা হাত দিয়ে চেপে বা পাম্পের মাধ্যমে একটি কাপে/বাটিতে দুধ সংগ্রহ করে দেবেন। অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তি শিশুকে সে দুধটুকু খাইয়ে দেবে। তবে হাত, পাম্প, কাপ, চামচ যা যা ব্যবহার করা হবে সবই খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল

#প্রশ্নে_প্রশ্নে_সহজ_করে -৭

ইসলামকে গভীরভাবে উপলব্ধি, অভিনয় ছাড়লেন সুজানা

অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ালেন মডেল ও অভিনেত্রী সুজানা জাফর। গত কয়েক বছর অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার ঘোষণা দিয়েই অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুজানা।

গত শবিবার রাতে দুবাই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সুজানা বলেছেন, ‘করোনা না এলে জীবনের উদ্দেশ্য কী? তা হয়তো সঠিকভাবে জানাই হতো না। গত চার মাসে ইসলামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। জেনেছি, এটাই আসল জীবন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিডিয়ায় আর কাজ করব না। আমার পরিবারও চায় না এখানে কাজ করি। এখন থেকে বুটিক ব্যবসা আর ধর্মকর্ম নিয়েই থাকতে চাই। সমাজের কিছু অবহেলিত মানুষের দায়িত্ব নিয়েছি। সমাজসেবামূলক কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গেও আছি। সেগুলোতেও সময় দিতে চাই। সব সময় সাধারণ মানুষ হয়ে থাকতে চেয়েছি। ভক্তরা যে ভালোবাসা দিয়েছেন সেটা মাথায় নিয়েই বাকি জীবন পার করব। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

সুজানা এখন দুবাইয়ে স্বজনদের সঙ্গে রয়েছেন। সাময়িক সময়ের জন্য গেলেও সেখানে লকডাউনে আটকা পড়েন তিনি। দুবাই থেকে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সুজানা। সহযোগিতা করেছেন আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশিদের। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও, নাটকে কাজ করছেন সুজানা। তিন বছর আগে তিনি বুটিকের ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় জানিয়েছিলেন বছরে দু-একটির বেশি কাজ করবেন না। তাই গত দুই বছরে মাত্র একটি নাটক ও মিউজিক ভিডিও করেছেন। এবার পুরোপুরিই মিডিয়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সুজানা।

করোনা এড়াতে ঘরে-বাইরে সতর্ক থাকতে কর্মজীবীরা কী করবেন

বেশিরভাগ জায়গা থেকে লকডাউন উঠে গেছে। গণপরিবহনও চালু হয়েছে। এবার ফিরতে হবে কাজে। যদিও কমেনি করোনার সংক্রমণ। তাই রাস্তায় বের হবার আগে আগে করোনা এড়াতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। যেমন-

১. রাস্তায় বের হবার আগে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। কর্মক্ষেত্রে যাবার আগে এটি পরা খুবই জরুরি। অনেকেরই অভ্যেস থাকে বারবার মুখে হাত দেওয়া, মোবাইলের মাউথপিস ঠোঁটের কাছে ধরে কথা বলা। মাস্ক পরা থাকলে সচেতন না থাকলেও এ সব থেকে বিরত হবেন। নোংরা হাত মুখে না গেলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যাবে। পাশাপাশি কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও তার হাঁচি, কাশি থেকে সংক্রমণের ভয় থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মাস্ক পরলেই হবে না, এর ব্যবহারবিধিটা জানাটাও জরুরি। তারা বলছেন, সুতির কাপড়ের মাস্ক পরলে মোটা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহারের পর প্রতিদিন ধুতে হবে। তা না হলে তিন -চারদিন পর একই মাস্ক ব্যবহার করা যাবে। মাস্ক পরার পরে তাতে আর হাত দেওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের বলছেন, গন্তব্যে পৌঁছে মাস্ক খুলে রাখতে চাইলে ছোট ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। মাস্ক খুলে টেবিলের উপরে ফেলে না রেখে ব্যাগে ভরে রাখুন। ফেরার সময়ে আবার পরে নিন। মাস্ক খোলা ও পরার আগে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

২. অনেকেরই কথায় কথায় চুলে হাত দেওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেকে আবার চোখ কচলান। গ্লাভস পরে থাকলে চট করে চোখে বা মুখে হাত যাবে না। এ কারণে বাইরে বের হলে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তবে গ্লাভস পরে বাইরের সব কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে এটা পরিষ্কার করতে হবে। ধোয়া গেলে সাবান পানিতে ধুয়ে নিয়ে আবার ব্যবহার করতে পারেন।

৩. রাস্তাঘাটে, বাজারে, কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। অফিসে বসার ব্যবস্থা পাশাপাশি হলে চেয়ারের মাঝের ব্যবধান বাড়িয়ে নিন।

৪. বেশির ভাগ জিনিস হাত দিয়ে না ধরাই ভালো। যেমন- হাত দিয়ে কোনও দরজা না খুলে, পা দিয়ে ঠেলে খুলতে পারেন। একান্তই স্পর্শ করতে হলে আঙুলের মাথা দিয়ে করুন। পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। কনুই বা হাতের উল্টো দিক দিয়ে রাস্তার জিনিস ধরবেন না। পাবলিক টয়লেটে ব্যবহারে সাবধান থাকুন। বেসিনের কল সাবান দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করুন।

৫. কর্মক্ষেত্রে অনেকেই সহকর্মীর সঙ্গে খাবার ভাগ করে খান। আপাতত তা বন্ধ করুন। জন্মদিন উপলক্ষে একই কেক কেটে সেই টুকরো সকলে খাওয়ার অভ্যাসও বদলান।

৬. কর্মক্ষেত্রে বা গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ব্যাগে রাখতে হবে ৬০-৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার। যদি কাজের জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে নিজের কাছে রাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন।

প্রত্যেকের কাজের জায়গা আলাদা, কাজের ধরন আলাদা।তাই কর্মক্ষেত্রের সব জিনিস স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে কি না সে দিকেও নজর রাখুন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে এড়াতে নিজেকেও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে । এজন্য পাশের মানুষটির করোনা হয়েছে কি না যেমন খেয়াল রাখবেন, তেমনই নিজের শরীরের দিকেও চোখ রাখুন। নিজের বা পরিবারের কারো জ্বর, কাশি দেখা দিলে হোম কোয়ারেইন্টাইনের উদ্যোগ নিতে হবে।

করোনা এড়াতে কর্মক্ষেত্রে সতর্কতা গ্রহণের পাশাপাশি বাড়ি ফিরেও কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। যেমন-

১. বাইরের ব্যাগ নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করলে ধুয়ে নিতে পারবেন। চামড়ার ব্যাগ হলে বাড়িতে ফিরে ব্যাগটা এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে কারও হাত পড়বে না।

২. জুতা মোজা খুলে সোজা বাথরুমে চলে যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় বাড়ির দরজায়, সুইচে -কোথাও দেবেন না। বাড়ির লোককেই বাড়ির ও বাথরুমের দরজা খুলে দিতে বলুন। হাত ধুয়ে মাস্ক ও চশমা খুলে পরিষ্কার করুন। এরপর পোশাক খুলে বালতিতে সাবান পানিতে ভিজিয়ে দিন। জামাকাপড় কেচে গরম পানিতে ধুয়ে নিন। রোদে জামাকাপড়গুলো শুকিয়ে নিন।

৩. সাবান মেখে, শ্যাম্পু দিয়ে গোসল সেরে নিন। বড় চুল হলে স্কার্ফ বেঁধে বেরোতে পারেন। পায়ের তলাও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

৪. মোবাইলটাও ভালো করে স্যানিটাইজ় করে নিতে হবে।

গণপরিবহন ব্যবহারে এবং বাইরে আরো কিছু সতর্কতা মেনে চলবেন। যেমন-

১. ভিড় যানবাহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এজন্য কিছুটা সময় নিয়ে বের হোন। একই রুটে হলে অফিসের কয়েক জন একটা গাড়ির ব্যবস্থাও করতে পারেন। তবে পিছনের সিটে দু’জনের বেশি বসবেন না।

২. অফিসের ল্যান্ডফোন কম ব্যবহার করাই ভালো। রিসিভার বেশি মুখের কাছে নিয়ে কথা বলবেন না। ফোনের কাজ শেষ হলে মাউথপিস স্যানিটাইজ় করে ব্যবহার করুন।

৩. রাস্তাঘাটে বাসে-গণপরিবহনে উঠলে অনেক জায়গায় হাত পড়ে। তাই মোবাইল ব্যাগে রাখুন। গন্তব্যে পৌঁছে হাত ধুয়ে মোবাইল বার করে চেক করে নিন।

৪. এটিএম থেকে টাকা তোলার পরে, সেই টাকা ও কার্ড মানিব্যাগের একটি আলাদা পকেটে রাখুন। হাতে স্যানিটাউজার ব্যবহার করুন।

করোনার সংক্রমণ কমাতে খুলে রাখুন ঘরের জানালা

গোটা বিশ্বে এখনও চলছে করোনাভাইরাসের দাপট। নানা ভাবে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এই ভাইরাসে। এর গতিবিধি নিয়ে গবেষকরা নিয়মিতই জানাচ্ছেন নতুন নতুন তথ্য। তাদের মতে, যেখানে বাতাস থাকে সেখানে করোনা সংক্রমণের সম্ভবনা কম। এ কারণে গাড়িতে এসি না চালিয়ে ভ্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

একই কথা তারা জানিয়েছেন ঘরের ব্যপারেও । গবেষকরা বলছেন,বাড়িতে যদি যথেষ্ট পরিমাণ আলো- বাতাস থাকে তাহলেই করোনা সংক্রমণের পরিমাণ কমতে পারে। আর হাওয়া বাতাস না চলাচল করলে বায়ুবাহিত করোনা সংক্রমণের পরিমাণ বাড়তে পারে। এ কারণে করোনা এড়াতে জানালা খুলে রাখার কথা বলেছেন তারা।

একটি গবেষণায় জানা গেছে, করোনাভাইরাসের আকৃতি ১০০ মাইক্রোনের থেকে কম কম। এটি হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে পানি, লবণ ইত্যাদি নানারকম উপাদান থাকে। কিন্তু এটি থেকে পানি বাস্প হয়ে গেলে অন্য উপাদান গুলি হাল্কা হয়ে যায় এবং সেটি বাতাসে উড়ে বেড়ানোর যোগ্য হয়ে ওঠে। এ কারণে যদি একটি ঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করা থাকে, তাহলে ঘরের মধ্যে সহজে বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারে ভাইরাস। কিন্তু হাওয়া চলাচল করলে সেটি বাতাসের সঙ্গে ভেসে যেতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, অনেক সময়েই যান্ত্রিক ভেন্টিলেশনের ফলে ভাইরাস ঘরের মধ্যেই থেকে যেতে পারে। সেই কারণেই প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন। জানালা-দরজা খুলে দিলেই সেই প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন সহজে পাওয়া যাবে।

স্বর্ণের কালিতে হাতে পুরো কুরআন লিখলেন ইরানি নারী মরিয়ম

স্বর্ণের কালি দিয়ে পুরো কুরআন হাতে লিখলেন ইরানি নারী ক্যালিগ্রাফার মরিয়ম কাজেমি সাভাদকুহি। ক্যালিগ্রাফের নখশি লিপীতে তিনি পবিত্র কুরআনের একটি পাণ্ডুলিপি লিপিবদ্ধের কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বাস করা হয়, মরিয়ম মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী ক্যালিগ্রাফার, যিনি পুরো কুরআন হাতে লিখেছেন।

ফারসি সংবাদ মাধ্যম হোনারঅনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমি পবিত্র কুরআনের পাণ্ডুলিপিটি সম্পন্ন করতে প্রায় একছর যাবত দিনের বেশিরভাগ সময় কাজ করেছি। পুরো কাজ আমি নিজেই করেছি। তবে বাঁধাইয়ের কাজ করেছেন আলি বেহদানি।’

শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৭০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যর পাণ্ডলিপিটির প্রতিটি পৃষ্ঠা জাফরান দিয়ে রাঙানো হয়েছে। বইটি বাঁধাইয়ে অত্যন্ত মূল্যবান কাভার ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি তৈরি করা হয়েছে ইরানের ঐতিহ্যবাহী ‘গোল-ও-মোরঘ’ চিত্রকলার ব্যবহারে। এটি ফারসি চিত্রকলার একটি অনন্য শৈলী যেখানে বিভিন্ন রঙে পাখি ও পুষ্পশোভিত নকশা চিত্রায়িত করা হয়।

কাজেমি জানান, ক্যালিগ্রাফের নখশি লিপী খুবই প্রাচুর্যপূর্ণ একটি লিপী। সে কারণে তিনি এই লিপীটিকে বেছে নেন। কুরআন লিপিবদ্ধে তিনি ১৮শতকের ক্যালিগ্রাফি মাস্টার আহমাদ নেইরিজির ক্যালিগ্রাফি শৈলী ব্যবহার করেছেন। স্বর্ণের প্রলেপের ব্যবহারে প্রতিটি পৃষ্ঠা খোদাই-করা আলোকসজ্জা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার শৈল্পিক পেশায় একটি মূল্যবান ও চিরস্থায়ী শিল্পকর্মের অভাববোধ করছিলাম। আমি ভাবছিলাম আমাকে অবশ্যই এমন কিছু লিপিপদ্ধ করতে হবে যা আমাকে শান্তি ও প্রশান্তি দেবে। তাই কুরআন লিপিবদ্ধ করা আমার জন্য ছিল বিশাল তাৎপর্যের। আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবনে এর আধ্যাত্মিক প্রভাব দেখতে পাবো।

কাজেমি ১৯৯০ সালে উত্তর ইরানে অবস্থিত ইরান ক্যালিগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনের চালাস শাখায় ক্যালিগ্রাফি শেখার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি তেহরানে ক্যালিগ্রাফি অঙ্কনের কাজ অব্যাহত রাখেন।

ইরানি এই নারী ক্যালিগ্রাফার বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করে আসছি। এপর্যন্ত আমি ক্যালিগ্রাফি এবং ক্যালিগ্রাফিক পেইন্টিংয়ের ওপর বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।

ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহের বাসিন্দা ফারিবা মাকসুদি প্রথম নারী ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিবেচিত হন যিনি ক্যালিগ্রাফির নাস্তালিক লিপীতে পুরো কুরআন লিখেছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন।

সূত্র: তেহরান টাইমস।

রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার শর্ত বদলের ইঙ্গিত

চলতি বছরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকার আইনি বাধ্যবাধকতাকে ‘অবাস্তব’ ও ‘অকার্যকর’ বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের কোনো কোনো সদস্য। এ কারণে ২০০৮ সালে বিগত শামসুল হুদা কমিশনের করা এই আইনি বাধ্যবাধকতাটি বাতিল বা পরিবর্তন করার চিন্তা করছে বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন।

কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইনে থাকা রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অংশটিকে নিয়ে আলাদা আইন করার কথা ভাবছে। সে ক্ষেত্রে কমিশনকে আরপিওতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পুরো প্রক্রিয়া এখনো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গত সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিষয়টি তোলা হলেও এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার টেলিফোনে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিশনের সভায় নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সভায় একজন বলেছেন, এ বিধানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তা ছাড়া যেসব বিষয় যেমন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিষয়টিও কোনো দলই মানছে না, এ বিষয়ে আলোচনা হবে। মো. আলমগীর বলেন, নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কমিশন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে ডাকতে পারে। আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় আছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই অধ্যাদেশ সংসদে পাস করে।

২০০৮ সালে ভোটে অংশ নিতে দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। ওই সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো প্রতিশ্রুতি করে, ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখবে তারা। অবশ্য দলগুলো এই শর্ত বাতিলের দাবি না জানালেও কমিশনই মনে করছে, শর্ত অবাস্তব ও অকার্যকর।

২০১৮ সালে দলে এক-তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতে চেয়ে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল কমিটিতে নারী নেতৃত্বের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনকে জানায়। এর মধ্যে একটিমাত্র দল গণফ্রন্ট তাদের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি আনতে পেরেছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে ৮১ জনের ১৯ জন নারী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছেন।

এ বিষয়ে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শর্ত শিথিল করার আলোচনা হচ্ছে বলে আমিও শুনেছি। যদি এ শর্ত শিথিল করা হয় তবে তা হবে অবিশ্বাস্য। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিধান মানতে বাধ্য করার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের। সে ক্ষমতাও আছে কমিশনের। কিন্তু রাজনৈতিক দল মানছে না, মানতে চাচ্ছে না এ ধরনের অজুহাতে কমিশন এ শর্ত থেকে সরে আসতে পারে না।’

এই সংবাদটি ০৩ জুন ২০২০ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত

জেনে নিন ঘরে মাস্ক বানানোর সহজ পদ্ধতি, দেখুন ভিডিওসহ

সারা বিশ্ব জুড়েই ছড়িয়েছে করোনা আতঙ্ক। এর মধ্যে মাস্কের সংকট দেখা যাচ্ছে ওষুধের দোকানে। এই অবস্থায় চাইলে বাড়িতেই বানিয়ে নেয়া যায় মাস্ক।

শুধু করোনার জীবাণু আটকাবে তাই-ই নয়, বাইরের দূষণ, ধুলাবালি আর নানা রোগের জীবাণু থেকে বাঁচতেও ছোট-বড় সবার প্রতিদিনই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

জেনে নিন ঘরে মাস্ক বানানোর সহজ পদ্ধতি:

– চার ইঞ্চি করে দুই টুকরো সুতির কাপড় নিনি

– একটির সাথে আরেকটি সেলাই করুন

– সেলাই করার সময় ওপরের ছবিরমতো আধা ইঞ্চি পর পর ভাঁজ করে নিন

– এবার দুই পাশে রাবার লাগিয়ে নিন কান পর্যন্ত

এভাবেই তৈরি হয়ে গেল আপনার মাস্ক।

বাড়ির সবার জন্য একবারে বেশি করে তৈরি করে রাখুন, এগুলো ব্যবহার করলে সব সময়ই জীবাণু থেকে নিরাপদে থাকতে পারবেন। সূত্র: ইউএনবি।

 

মায়ের দুধে করোনা সংক্রমণ হয় না

যথাযথভাবে মায়েরা শিশুকে দুধ খাওয়ালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয় না। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ে নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘যে মায়েরা সন্তানকে দুগ্ধদান করে থাকেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, দুগ্ধদানের মাধ্যমে কোন ভাইরাস ট্রান্সমিট বা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় না। কাজেই আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মায়েরা মুখে মাস্ক পরে বুকের দুধ দিতে পারেন। দেয়ার আগে স্তন ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। হাত ভালোভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। হাত ও স্তন পরিষ্কারের পরই বাচ্চাকে দুগ্ধ দান করতে পারেন।’

নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই স্বাস্থ্য নিয়মগুলো মেনে চলুন। যারা বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন, যাদের অন্যান্য অসুখ আছে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের, ফুসফুসের, কিডনির অসুখ বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুখে যারা ভুগছেন, তারা অত্যন্ত সাবধানে থাকবেন। পরিবারের সদস্যরাও যাদের এই সমস্যাগুলো আছে, তাদের দিকে খেয়াল রাখবেন।’

সবাইকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকার পরামর্শ দিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘শিশুরাও যেন এ নিয়মগুলো মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। সবক্ষেত্রেই মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকলে, আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের মনোবল দৃঢ় রাখলে, যিনি আক্রান্ত হননি, তিনিও মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকবেন। মানসিক মনোবল দৃঢ় রাখা ও মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়ার একটি মাপকাঠি।’

৬ মাস লকডাউনে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শঙ্কা

 

 

করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত গোটা দুনিয়া। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে দেশে চলছে লকডাউন-কারফিউ। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ঘরবন্দী হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়বে। ঝুঁকিতে পড়বে নারী ও মেয়েশিশুর প্রজননস্বাস্থ্য। এছাড়াও এ লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘ইমপ্যাক্ট অব দ্য কোভিড ১৯ পেনডেমিক অন ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড এনডিং জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১১৪টি দেশে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিরাপদ গর্ভপাতের হার বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের বিদ্যমান লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে বিশ্বে অতিরিক্ত ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অতিরিক্ত ৩ কোটি ১০ লাখ সহিংসতার ঘটনা ঘটবে।

ইউএনএফপিএ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা পূরণে বাধা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকট বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যথাযথ সেবাদানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সেবা নিতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

ইউএনএফপিএর হেলথ সিস্টেম স্পেশালিস্ট দেওয়ান মো. ইমদাদুল হক বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ প্রজননক্ষম (১৫-৪৯ বছর) জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার মধ্যে গর্ভধারণ করে ১৫ শতাংশ। এদের মধ্যে গর্ভকালীন জটিলতায় অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিতে হয় ৫ থেকে ১৫ শতাংশকে। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা নেয়ার হার কমবে। মায়েরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চাইছেন না। আবার যে নারী কোভিড-১৯ আক্রান্ত, তাকে সেবা দেয়া নিয়েও জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তারের ফলে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কি না, তা নিয়ে এখনো তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর এলাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও অপহরণের ২৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ধর্ষণের, আটটি যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পাঁচটি অপহরণ ও ছয়টি যৌন নিপীড়নের মামলা।

ব্র্যাকের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ উদ্যোগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, ‘এই সময়ে বিশেষভাবে নারীর অবস্থা বুঝতে যে জরিপ চালিয়েছি সেখানে দেখেছি, মাস্ক এমনকি সাবানের ব্যবহারেও নারী সমান অধিকার পাচ্ছেন না। ৭০ শতাংশ পুরুষ যেখানে মাস্ক ব্যবহার করছেন, নারীর ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে, তাই মেয়ের ওপর বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার চাপ বেড়েছে।’ ব্র্যাকের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ বলেছেন, এই সময়ে পরিবারে এবং পাড়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বেড়েছে।

ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহ বন্ধের পরিকল্পিত চেষ্টা বিঘ্নিত হবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সাবিরা নূপুর জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার থামলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখা যাবে মেয়ে শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি ছেলে শিশুদের চেয়ে কমে গেছে। এরপর যেকোনো উপায়েই হোক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ২১টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে।

 

কিসের ব্যর্থতায় খুন হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা

কিসের ব্যর্থতায় খুন হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা


ফাতিমা খান


এস এস সি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্নহত্যা করেছে আটজন শিক্ষার্থী। আমি মনে করি আজকের দিনের সবচেয়ে খারাপ খবর এইটি।

এই শিক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে অসুস্থ দাবী করবেন অনেকেই, হয়ত আমিও তাই বলব। কিন্তু ওরা কি আজন্ম অসুস্থ ছিল? তা কিন্তু না। ওদের ফুলের মত মনকে দিনে দিনে অসুস্থ করেছে আমাদের সমাজ যেখানে ভাল রেজাল্ট, কেবলমাত্র ভাল রেজাল্টই গুণাগুণ ও যোগ্যতা যাচাই এর একমাত্র মানদন্ড। এর জন্য তারা প্রতিনিয়ত তিরষ্কৃত হয়, ‘তুলনা’র অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হয়। দূর্ভাগ্যবশত, আমরা এখনো সেই আদিম সমাজে বসবাস করি যেখানে মেয়েদের গুণাগুণ বিচার করা হয় এই দেখে যে মাটির চুলায় রান্না করার পর সিলভারের পাতিল ঘষে কে কত ঝা চকচকে করে ফেলতে পারে। ওরা ট্যালেন্ট / মেধার সংগা বুঝবে কেমন করে?
আফসোস যে কোমলপ্রাণ বাচ্চাগুলো এই সমাজেরই বলি।
আমার প্রোফাইলে কাল থেকে আজ পর্যন্ত কাউকেই পেলাম না যাদের পরিবারের কেউ জিপিএ ফাইভের কম স্কোর করেছে। এর তিনটি কারণ হতে পারে –

১. পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মানে প্রায় সবাই জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।
২. আমার পরিচিত জনদের সবাই সেই লেভেলের ট্যালেন্ট ( Lucky me! 😎)
৩. জিপিএ ফাইভের এই যুগে এর চেয়ে কম স্কোরকারীদের বাবা মা বা অভিভাবকেরা লজ্জিত। সংকোচের কারণে তারা সন্তানদের বা পরিজনদের রেজাল্ট জানাচ্ছেন না।

আমার কাছে তৃতীয়টিই সম্ভাব্য কারণ মনে হচ্ছে।

কিন্তু এর কারণ কি?
পরীক্ষার রেজাল্টই কি মেধা যাচাই এর মানদন্ড?
তাহলে যে পরীক্ষার্থী দুই বছর ছয়জন প্রাইভেট টিউটার এর কোচিং করে ভাল রেজাল্ট করল আর যে কিনা অভাবে, আধপেট খেয়ে, টিউটার ছাড়াই ঘরের গুরুদায়িত্ব গুলো পালন করে কোনরকমে পরীক্ষার খাতায় কলম চালালো – দুজনকে কি এক পাল্লায় বিচার করা যাবে?
অথবা, কারো হয়ত ছবি আঁকার বা গান করার অথবা লেখালেখির যোগ্যতা অসাধারণ, অংক হয়ত তার মাথায় কুলোয় না, সে কি মেধাবী নয়?
আমি মনে করি যা নিজস্ব গূণ তা-ই মেধা, হোক তা স্পোর্টস, আর্ট বা অন্য কোন যোগ্যতা। একে লালন করতে পারলেই একদিন তা সাফল্য হয়ে ধরা দেয়। ঠেলে, ধাক্কায়,চাপ দিয়ে যে ভাল রেজাল্ট করানো হয়, তা নিতান্তই লোকদেখানোর জন্য।

কাল আমার বড় ছেলেকে পড়াতে বসেছি। আমি অবশ্য এই যুগের সবচেয়ে খারাপ মা। পড়াশোনা নিয়ে কখনই পীড়াপীড়ি, চাপাচাপি করিনা, এজন্য অনেক কথা, উপদেশ বাণী প্রতিনিয়ত শুনি। তো যাহোক, ছেলে পড়তে বসে বলছে –
– আম্মু আমি গ্রেইড এইটে, এখনই কেন সবাই ‘ও লেভেল’ এর রেজাল্টের চিন্তা করে?
– এজন্য করে যে তোমার রেজাল্টের উপর গ্রাজুয়েশন লেভেলে ভাল কোন সাবজেক্ট এ চান্স পাওয়া নির্ভর করে।
– ভাল সাবজেক্ট মানে কি?
– মানে ডিম্যান্ডিং সাবজেক্ট, যেটায় পড়লে তুমি লাইফে শাইন করবে, বেটার লাইফ পাবে।
– এই পৃথিবীতে কোনটা ডিম্যান্ডিং না আম্মু? লিটারেচার, হিস্ট্রি, আর্ট এগুলার কি কোন ভ্যালু নাই?
– আছে, তবে কম।
– তাহলে কেউ যদি এসব সাবজেক্টে হাইয়েস্ট ডিগ্রি নেয়, ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে, ইউনিভার্সিটির টিচার হয়, তার ভ্যালু কি কম?
– না তা না, সেটাও অবশ্যই ভাল। তবে তুমি যদি মোস্ট ডিম্যান্ডিং সাবজেক্ট গুলোতে পড়, কম ইফোর্টে বেটার জব পাবে, ভাল স্যালারি পাবে।
– ব্যাস,এইটুকুই? তাহলে আমি জবই খুঁজব না। আমি আন্টাপ্রিনিওর হব, অন্যকে জব দিব।
– আচ্ছা বাবা। এখন পড়াটা শেষ কর। কাজ আছে আমার।
– এই যে আম্মু, আপনি ডেন্টিস্ট হলেন, লাইফের সব এক্সামেই ভাল স্কোর করলেন, ডিম্যান্ডিং জবই তো করছেন, কিন্তু আমি তো আপনার মত এরকম লাইফস্টাইল কখনো, কখনোই চাইব না। আমি এমন কিছু করব যাতে লাইফ আর প্রফেশান দুইটাই এঞ্জয় করতে পারি।

আমি জানি আমার ছেলের কথা অনেকাংশেই ঠিক। কিন্তু সেও তো এ সমাজেরই অংশ। শেষ পর্যন্ত আমি বা আমরা হয়ত তাকে সেই আখেরি ঠ্যালা মারবই।

বি: দ্র : আমার প্রোফাইলে বা বন্ধু মহলের পরিবারের কেউ যদি জিপিএ ৫ এর কম স্কোর করে থাকে, তাদের জন্য অভিনন্দন ও অনেক দোয়া। পরীক্ষার রেজাল্টই সব কিছু না। সবচেয়ে বড় ফেইলিউর হল নিজেকে হারিয়ে ফেলা, আত্নবিশ্বাস ও আত্নমর্যাদা হারিয়ে ফেলা।