banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’


আকলিমা ফেরদেৌসী


‘’আমাদের হয়ত দোষ ছিলো, এত রাতে একটা পার্টিতে কেন গেলাম! আমি বলছিনা যে ছেলেদের সাথে মিশা যাবে না। আমরা যেখানে পড়ছি ছেলেদের সাথে পড়ছি।ছেলেদের সাথে হয়ত মেশার প্রয়োজন হবে! তবে আমি বলব কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়! সবাইকে বিশ্বাস না করে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত শ্রেণীটা মনে হয় একটু বেশী অন্যরকম! এটা যাতে খেয়াল করে।‘’- এই কথাগুলো বলছিলেন বনানীর রেইনট্রিতে ধর্ষনের শিকার এক তরুণী একাত্তর চ্যানেলে একটি টক শোতে টেলি কনফারেন্সে।

তার প্রতি সমবেদনা রেখে বলছি, তিনি যে উপলব্ধি করেছেন এই উপলব্ধিটা আমাদের প্রত্যেক নারীর মধ্যেই আসা উচিত।

‘’কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়!’’ হ্যা সত্যিই তাই!

এখন সময় এসেছে নারীদের সচেতন হবার। বিশেষ করে একজন শিক্ষিত নারীকে তো অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যে কথা বহু বছর আগে বেগম রোকেয়া বলে গেছেন- ভগিনীরা ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হোন!”

আমরা নারীরা কি জাগ্রত?

আমরা কি আমাদের ক্ষমতা আর অধিকার সর্ম্পকে সচেতন? উত্তর গুলো অবশ্যই নেতিবাচক হবে । চোখ বন্ধ করে বলা যায় না আমরা সচেতন নই। যারা সচেতন তাদের সংখ্যা গুটিকতক।আমাদের নারীরা লেখাপড়ায় ভালো করছে, তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আত্ননির্ভশীল হিসেবে গড়ে উঠছে, বড় বড় পদে কর্মরত আছে, সব ঠিক। কিন্তু গোড়ায় গলদ!

দুঃখজনক হলে সত্য যে, উনিশ শতকে বেগম রোকেয়া যে বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন আজকের শিক্ষিত নারী সমাজের মাঝে এখন পযর্ন্ত সেই বোঝ তৈরী হয়নি!
তিনি বলেছিলেন-‘’আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।’
আমাদের নারীরা জানে না, তার ভিতরের ক্ষমতা কত! সে কি করতে পারে। সমাজ বিনির্মানে তাকে যে ভূমিকা রাখতে হবে সে খেয়াল কয়জনের আছে!

মাতৃত্বের মতো বিশাল দায়িত্বের গুরুভার সর্ম্পকে আমাদের নারীরা কতটুকু সচেতন?

‘বন্ধু ছাড়া লাইফটা ইম্পসিবল’, ফ্রি মিক্সিং, মডেলিং এর লোভনীয় অফার –এ সেন্সগুলো যে একধরনের লোভী পুরুয়ের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভংগিতে তৈরী তা কি জানে আমাদের নারীরা?

প্রয়োজনে বন্ধু নিবার্চনের ক্ষেত্রে হ্যান্ডসাম, বিত্ত-বৈভব ইত্যাদির চেয়ে ছেলেটি কতটা চরিত্রবান সেটা কয়জন ভেবে দেখেন?

আমাদের নারীরা কেন এটা ভাবে না যে, বাংলাদেশে বেহেশতি বাতাস বইছেনা। এখানে অনেক চোর বদমাইশ আছে যাদের মেয়ে দেখলেই ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

সুতরাং আমি নিরাপদ তো! নিজের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কেন সে সচেতন থাকবে না?

এমনিতর হাজারো প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর খুজে দেখলে আমাদেরকে হতাশই হতে হয়। তাই নারীদেরকে বলবো-

‘জেগে উঠুন, সতর্ক হোন!
পরিবারে, আত্নীয়-স্বজনের সামনে, প্রতিবেশীদের মাঝে, যে প্রতিষ্ঠানে আপনি রয়েছেন সেখানে নিজের অবস্থান এমন ভাবে গড়ে তুলুন যাতে আপনাকে টোকা দিয়ে দেখা তো দুরের কথা আপনার দিকে চোখ তুলে তাকাতে দ্বিধা বোধ করে।
মনে রাখতে হবে আপনার অধিকার কেউ আপনাকে দিয়ে যাবে না, অধিকার আদায় করে নেয়ার মত যোগ্যতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।
নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে লোলুপ দৃষ্টির সামনে নিজেকে উপস্থাপনের চেয়ে মনোযোগী হোন আপনি আগামী প্রজন্মের কারিগর হিসাবে কতটা যোগ্য হয়ে গড়ে উঠছেন।সাবধান হয়ে যান আপনি যেন এমন মা না হন যার অবহেলা আর সঠিক পরিচর্যার অভাবে ছেলে ধর্ষক হয়ে গড়ে উঠে।

অবাধ মেলামেশা নয়, প্রয়োজনে ছেলেদের সাথে মিশতে হলে দুরত্ব বজায় রাখুন। কারন আপনি যে ছেলেটির সাথে মিশছেন সে যতই আপনাকে ‘তুই তুকারি‘ করুক না কেন, ছোট বা বড় বোন মনে করুক না কেন, আপনার ফিগার, হিপের মাপ, ঠোট, চোখ, হাসলে আপনাকে কেমন দেখায় ইত্যাদি সব কিছুই তার দৃষ্টি সীমানায় ভেসে বেড়াবেই! ছেলেদের দৃষ্টি বিপদজনক বলেই আল্লাহ এক্ষেত্রে সংযত থাকতে বলেছেন। একমাত্র কঠোর পরহেযগার পুরুষ ছাড়া আর যে কোন পুরুষেরই এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন নেই তা হলফ করে বলা যায়।

নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখুন। কারো সাথে একা কোথা দেখা করতে যায়া থেকে বিরত থাকুন।কারন সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান! হোক সে বয়ফ্রেন্ড, চাকুরির ইন্টারভিউ, কোন সুপারিশ, বড় ভাইয়ের বন্ধু, ডাকুনে চাচা, মামা, খালু যে কেউ!

নারী শিল্পীদের বলছি, যারা নাটক সিনেমা আর মডেলিং করছেন, তারা আসুন একসাথে হোন আর যে সমস্ত স্ক্রীপ্টে নারীর অশ্লীল উপস্থাপন আছে তা বজর্ন করুন। নারীর মর্যাদাপূর্ণ উপস্থাপনকে হ্যা বলুন, অশ্লীল উপস্থাপনকে না বলুন।
নিজের আব্রু রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হোন।
কেন আপনি নিজেকে জোড়া চোখের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা ক্ষত বিক্ষত করবেন?

কাদের জন্য আপনি চিত্তহরণী হবেন? যাদের জিভ সব সময় ঝুলে থাকে তাদের জন্য? অবশ্যই না।
থানা ,ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, বিভিন্ন মহিলা সংস্থা, সাংবাদিক ইত্যাদির ফোন নাম্বার সংগ্রহে রাখুন।আক্রান্ত হবার পূর্বাভাস দেখলেই তাদের অবগত করুন।
শিক্ষিত হয়েছেন, তো নিজের ব্যাপারে নিজে সচেতন হোন। যোগ্য হয়ে গড়ে উঠুন, এসব ধর্ষকদের লার্থি মারার জন্য।