banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

জীবনে কেন শান্তি নেই

জীবনে কেন শান্তি নেই


ডা. মারুফ রায়হান খান


২০০৬ সাল, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল তখন। সেই ফুটবল বিশ্বকাপটা আমার জন্য খুব আনন্দের স্মৃতি হতে পারতো, কারণ আমার ফেভারিট টিম ইটালি সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তা ঘিরে আমার আনন্দ নেই, বরং রয়েছে একরাশ বেদনা আর কান্না। কারণ সেই বিশ্বকাপটি চলার সময় আমার একজন বন্ধু আত্নহত্যা করে। হ্যাঁ, এই ১৪/১৫ বছরের মানুষটিই ফ্যানে দড়ি ঝুলিয়ে আত্নহত্যা করে। ও নাকি পড়াশোনা না করে খেলা দেখতো, বাবা-মা সে রাতে নাকি বেশ বকাঝকা করেছিলেন, বন্ধু আমার আর সে জীবন রাখার কোনো মানে খুঁজে পায়নি।

আমাদের এই প্রজন্মের অজস্র দিক আছে যেগুলো বেশ পজিটিভ কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর রকমের অন্ধকার দিক আছে। আমরা বোধহয় খুব অল্পতেই ধৈর্য হারাই, এই অতি মূল্যবান জীবনটিকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না, জীবনটিকে হয়তো ঠুনকো ভাবি কিছু থেকে কিছু হলেই–কী হবে আর এ জীবন রেখে। তার প্রমাণ পাই যখন আমরা জানতে পারি, কাউকে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে দেওয়া হয়নি বলে আত্নহত্যা করে, প্রিয় দল আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল খেলায় হেরেছে বলে ঐ দেশের হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসরত বাঙালি যুবক যখন তার জীবন বিনষ্ট করে ফেলে, প্রিয় মানুষকে না পেলে আত্নহত্যা করে ফেলে, বাবা-মা একটুখানি বকাঝকা করলে গলায় দড়ি দেয়, পরীক্ষায় একবার কাঙ্খিত সাফল্য না পেলে সে জীবন রাখার আর কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। এসবের কারণ কি এটা হতে পারে যে, আমাদের জীবনের আসলে ব্রড কোনো ভিশন নেই, আমাদের স্পেক্ট্রাম অফ থিঙ্কিংটা ন্যারো?

আমার সাথে এটা প্রায় সবাই হয়তো নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন যে, আমাদের প্রজন্মের একটা বিশাল অংশ মারাত্নক রকমের ডিপ্রেশানে ভোগে। জীবনটাতে যেন কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই। আমাদের ‘নেই’-এর পাল্লাটাই যেন খুব ভারী, ‘আছে’-এর পাল্লাতে যেন কিছুই নেই। বাস্তবতাটা কি আসলেই তাই?

আচ্ছা, এ লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে এমন একজন মানুষও কি আছেন, যিনি সকালে খেতে পান না, দুপুরে খেতে পান না, রাতে খেতে পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই? ডায়েট কন্ট্রোলের জন্যে না, খাওয়ার সামর্থ্য নেই সেজন্যে? মনে হয় না এমন কোনো পাঠক এখানে আছেন। আমি আপনাদের একটা জরিপ শোনাই। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক একটা জরিপ করে, সেখানে দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এরকম ‘Chronically hungry’ থাকে। পৃথিবীতে ৬ বিলিয়ন মানুষ আছে তার মধ্যে ১ বিলিয়নই এভাবে ক্রমাগত ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করে–প্রতি ৬ জনে ১ জন! এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর কতো বড় রহমাত যে তিনি আমাদের অন্তত ৩ বেলা ভালোভাবে খাবার মতো তাওফিক দিয়েছেন।

ক্ষুধার কষ্ট যে কত বড় একটা কষ্ট, সেটা আমরা বুঝব না। বুঝেছিল ঐ পরিবারটা, বাংলাদেশেরই একটা পরিবার, দীপালিদের পরিবার। যে পরিবারে দুটো সন্তান; বড় মেয়ে আর ছোট ছেলে। সে পরিবারের নিয়ম ছিল দুপুরবেলা খাবে ছেলেটা আর রাতেরবেলা খাবে মেয়েটা। দুবেলা দুজন খেতে পারবে না, কারণ দুজনকে দুবেলা খাওয়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি পরিবারটির ছিল না। একদিন দুপুরবেলা ছেলেটি খেলো, রাত হলে তার আবার ক্ষুধা লেগে গেলো, অসহনীয় ক্ষুধা–ছেলেটি তার বোনের জন্য বরাদ্দকৃত রাতের খাবারটা খেয়ে ফেলে। সারাদিন ক্ষুধায় কষ্ট করেছে বোন, রাতের বেলায় যখন সে দেখলো তার খাবারটুকু নেই, রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে সে রাতে আত্নহত্যা করে বোন।

ক্ষুধার কষ্টটা আমরা বুঝব না। বোঝে ঐ মানুষটা, সোমালিয়ার ঐ মানুষটা, যিনি রমাদানে একজন স্কলারকে প্রশ্ন করেছিলেন–আমাদের সাহরিতে খাবার মতো কিছু নেই, ইফতারেও খাবার মতো কিছু নেই; আমাদের রোজাটা কি হবে?!

আমার স্মৃতিপটে প্রায়শই গাজার ১১ বছরের এক শিশুর একটা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয়া প্রশ্ন ভেসে ওঠে। ২০১৪ সালে লাস্ট এটাকের সময় ছেলেটি একজন স্কলারকে প্রশ্ন করে, এই যে এতো বোমা হামলা হচ্ছে এর মধ্যকার ডাস্ট পার্টিকলগুলো যে আমাদের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে যাচ্ছে –আমাদের রোজাটা কি হবে!?

আচ্ছা এবার এ লেখার পাঠকদের জন্যে আরেকটি প্রশ্ন। আপনাদের মধ্যে এমন একজনও কি আছেন যিনি জন্মগ্রহণের পর তার মা ছিলেন না, বাবা ছিলেন না, এমনকি অন্য কোনো নিকটাত্মীয় ছিলেন না আপনাদের দেখাশোনা করার জন্য? একজনও বোধহয় নেই। আপনি শুনে অবাক হবেন, ইউনিসেফের এক জরিপে উঠে এসেছে পৃথিবীতে ২২০ মিলিয়ন, দুইশত বিশ মিলিয়ন শিশু আছে যারা জন্মের পরে তাদের মা পায়নি, বাবা পায়নি, এমনকি কোনো নিকটাত্নীয় ছিল না তাদের দেখাশোনা করার জন্যে।

তবুও নাকি আমাদের জীবনটাতে কোনো শান্তি নেই, সুখ নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই…

আমি বছর কয়েক আগে একটা পত্রিকায় সম্পাদনার কাজের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ণ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারের একটা সাক্ষাতকার পড়ছিলাম। সেখানে তিনি বলেছেন, তার মেয়ের ছোটবেলায় একবার মিজেলস (হাম) রোগ হয়েছিল, তারপর রোগ সারলেও চেহারায় দাগ পড়ে যায়। তার মেয়ের মনে খুব দুঃখ ছিল মুখে এই দাগের জন্য। তো একবার প্রফেসর সামন্ত লাল স্যার তার কাছে আসা আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ের ছবি তুলে এনে তার মেয়েকে দেখালেন। মেয়ে এবার অনুধাবন করলেন অন্য অনেকের চাইতে তিনি অনেক ভালো আছেন। তার বাবাকে বললেন, আমার চেহারার দাগ দূর করতে হবে না, তুমি বরং এই মেয়েটিকেই চিকিৎসা করো।

আসলে আমরা যখন আমাদের অবস্থানের চাইতে নিচের কারও দিকে তাকাব, তখন এই জীবনটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি সুখের মনে হবে, অনেক মূল্যবান মনে হবে। সত্যি বলতে কী পৃথিবীতে অজস্র মানুষ আছে যারা আমাদের মতো একটা জীবন পেলে বর্তে যেতো, ধন্য হয়ে যেতো।

আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকারের জন্য কাজ করেছিলাম, তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ডা. শুভাগত চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক যারা লেখালেখি করেন, তিনিই বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন, ৪০ টি বই উনার। তিনি তার সাফল্যের কথা বলছিলেন, তিনি জীবনে যতটুকু পেয়েছেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার অন্য বন্ধুরা কে কতো দ্রুত কতোটা এগিয়ে গেলো এসব নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত ছিলেন না। নিজের যতোটুকু আছে, তাই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। একজন বিখ্যাত স্কলার ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর একটি চমৎকার  বাণী আছে, “Contentment is the paradise of this world.” অর্থাৎ, এই পৃথিবীর জান্নাত হচ্ছে সন্তুষ্টি। আমাদের যতোটুকু যা আছে তাই নিয়ে যদি আমরা পরিতুষ্ট থাকতে পারি, আমাদের জীবন সুখে ভরে উঠবে।

আমাদের মধ্যে একটা ব্যাপার খুব অহরহই দেখা যায়। আমাদের চলার পথে, সামনে এগোবার পথে কোথাও যদি বাধা চলে আসে, তবে আমরা সেখানেই হাল ছেড়ে দিই, নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিন্তু অনেক স্ট্রাগল ছিল। পৃথিবীর বুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, সেই মুহাম্মাদ (স.) এর কথাই ধরা যাক। আমরা সবাই জানি তার মিশনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কতোটা বাধা-বিপত্তি-অত্যাচার-নিগ্রহ সইতে হয়েছিল। তিনি হাল ছেড়ে নিরাশ হয়ে যাননি, তার মিশন থামিয়ে দেননি–আজ পৃথিবীতে কোটি কোটি অনুসারী তাঁর। এন্ড্রু কার্নেগীর কথা বলতে পারি আমরা, যাকে নোংরা পোষাকের জন্য পার্কে ঢুকতে দেওয়া হয়নি,  ৩০ বছর পর সেই এন্ড্রু কার্নেগীই পুরো পার্কটি কিনে ফেলেন এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন “সবার জন্য উন্মুক্ত “। বহুল জনপ্রিয় স্টিভ জবসের কথা বলা যেতে পারে, ৭ মাইল দূরের এক গির্জাতে প্রতি রবিবার ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। সারা সপ্তাহ তার ভালো খাওয়া-দাওয়া করার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই প্রতি রবিবার তিনি পায়ে হেঁটে ৭ মাইল দূরের গির্জাতে যেতেন এক বেলা ভালো খাবার জন্য।

আমি বেশ কিছুদিন আগে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্রেশানের উপর একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে যিনি স্পিকার ছিলেন তিনি খুব সুন্দর করে ডিপ্রেশান কাটানোর একটা সহজ বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে অন্য মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এখন তো আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে –শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যা দুর্গতদের সহায়তা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুস্থদের খাদ্য বণ্টন, হেলথ ক্যাম্পেইন আরও কত কী। এসবের সাথে যদি আমরা নিজেদেরকে জড়িত করে নিতে পারি তবে জীবন নিয়ে খুব বেশি হতাশামূলক চিন্তাভাবনা করার সময়টা আমরা পাব না।

ওখানে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম যারা নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট, কৃতজ্ঞ, তাদের কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত)  লেভেলটা কম থাকে তুলনামূলকভাবে। তারা বেশি সুখী থাকেন। আসুন না আমরা আমাদের চারপাশের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ হই, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আমাদের স্রষ্টার প্রতি, মা-বাবার প্রতি, আত্নীয়-পরিজনের প্রতি, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। আপনার জীবন সুখী হোক।

ডা. মারুফ রায়হান খান

এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)

বসুন্ধরা কোভিড হসপিটাল

 

 

 

সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল কী?

সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল কী?


ইসরাত


প্রথম কৌশল হলো, মাথা যে গরম হতে পারে এটা মাথায় না রাখা। সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা আসলে উচিত না। যখন আপনার কাউকে বোঝানো দরকার যে আপনি তার উপর রেগে আছেন কারন সে এমন কিছু করেছে যাতে আপনার রাগ হওয়া উচিত তখন কিন্তু খানিকটা রাগ আপনাকে দেখাতেই হবে। আপনার রাগ দেখানোটা যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিরপেক্ষ হয়ে আগে বিবেচনা করুন।

ধুম করে রাগ হওয়াটা খুব খারাপ অভ্যাস। কাছের মানুষগুলোও আস্তে আস্তে দুরে চলে যায়। তারা কিন্তু দুরে যেতে চায়না তারপরেও বাধ্য হয়। হয়তো একই বাড়িতেই বাস করে একই ছাদের নিচে তবুও তাদের অন্তরে থাকে এক জীবনের ব্যবধান।

এবার কাজের কথা বলি, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারা এবং সব রকম পরিস্থিতি সামলে নেয়াটা একটা বিশেষ গুন। এটা এমন একটি গুন যা চেষ্টা করে অর্জন করা যায়। আমরা কি কারো কাছে ছোট হতে চাই কখনো? চাইনা। যেকোনো অবস্থায় আপনি প্রথমেই চিন্তা করবেন, এখন আমার কি করা উচিত। ধরে নিন আপনি ঠিক এমন অবস্থায় পরলেন…

আপনি লকডাউনের মধ্যে ঘরে আটকে আছেন। অনেক কাজ জমে আছে, সেগুলো কবে শেষ করবেন, কতোদিন এভাবে চলবে, বাসার মানুষগুলো এমন কেন করছে, ছোট ভাইবোন দুটো এতো কেন বিরক্ত করছে। সব মিলিয়ে আপনি এমনিতেই যথেষ্ট বিরক্ত তার উপর আপনার ছোট বোনটা আপনার সাথে খুব বাজে ভাবে বেয়াদবি করে বসলো। আপনার ইচ্ছে করলো একটা চড় মেরে সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু আপনাকে কয়েকটি দিক ভাবতে হবে…

১. আপনি কোষে তাকে একটা চড় মারতে পারেন।

২. আপনি হেসে ফেলতে পারেন, তাহলে হয়তো উদারতা দেখানো হবে।

৩. আপনি আপনার মাকে গিয়ে বিচার দিতে পারেন। শাসন যা করার মা-ই করুন।

৪. আপনি তাকে বলতে পারেন ” আমরা পরে কথা বলি, এখন সঠিক সময় না।”

এখন আপনি ভেবে দেখবেন এই ৪টির মধ্যে কোন পদ্ধতিটা ভালো। আর আমি সাহায্য করছি এটা জানিয়ে যে কোনটি কেমন হবে।

১. আপনি যদি এখন চড় মারেন তাহলে আপনার বোন আরো বাজে আচরণ দিয়ে আপনাকে অসম্মান করতে পারে, কারন মেয়েটার আজকে কেন যেন মন বা মেজাজটা ভালো নেই। তাই এটা বাদ দেয়া খুবই জরুরী।

২. হেসে ফেলবেন তো সর্বনাশ। আপনার বোন আহ্লাদী স্বভাবের না হলেও আপনার হাসিতে প্রশ্রয় পেয়ে এই মেজাজ প্রতিদিন দেখাবে এবং তখন মহা সর্বনাশ।

৩. মা কে বিচার দিলেতো আপনিও ছোটবোনের বয়সে নেমে গেলেন। বড় ভাই হিসেবে নিজের জায়গাটা তো ঠিক রাখতে হবে।

৪.এটা উত্তম। আপনি যখন বলবেন ” আমরা পরে কথা বলি” তখন আপনার বোন আর কিছু বলার সাহস পাবেনা এবং সে কিছুটা লজ্জা এবং সংকোচবোধ করবে। তাছাড়া আপনারা দু’জনই মাথা ঠান্ডা রেখে চিন্তা করার সময় পাবেন। এতে আপনার বোন অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইতে আসবে আর আপনিও “আর যেন এমন না হয়” বলে ক্ষমা করে দেবেন।

আসলে কে কিভাবে পরিস্থিতি সামলাবে তা নির্ভর করে তার ব্যাক্তিত্বের ধরন কেমন তার উপর। সারাজীবন ধরে প্রতি মুহূর্তে এতোশত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন তা কিন্তু আপনাকেই সামলাতে হবে। একটি উদাহরণ দিলাম কিছুটা হয়তো বোঝাতে পারবো সেই আশায়।

ইসরাত, প্রাক্তন জে.এস. কলেজ।
সুত্রঃ কোরা।

করোনাভাইরাস: লকডাউনের মধ্যে একাকী তিন নারীর ঘরবন্দী জীবন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আরোপ করা লকডাউন অনেকের জীবনকেই আকস্মিকভাবে যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে।

বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের জন্য সেল্ফ-আইসোলেশনের জীবন হতে পারে ভীষণই দুর্বিষহ এক অভিজ্ঞতা।

কিভাবে লকডাউনের মধ্যে নিজের মনকে চাঙ্গা রাখবেন? নিজেকে ব্যস্ত রেখে একাকীত্বকে দূরে সরিয়ে রাখবেন?

পৃথিবীর তিন প্রান্তের তিন নারীর সাথে কথা বলেছেন বিবিসির কেলি লেই-কুপার। এই তিন নারীর একজন ভারতের দিল্লিতে, একজন ইতালির মিলানে, আর শেষজন যুক্তরাষ্ট্রের মেইনে।

তারা তিনজনই একা, তিন জনই লকডাউনে আটকা পড়েছেন নিজ নিজ এ্যাপার্টমেন্টে।

গত কিছু দিনে তার বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীরা ছাড়া আর কোন মানুষের চেহারা দেখেননি অপর্ণা।

ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছে গুরগাঁওয়ে তার মায়ের পুরোনো এ্যাপার্টমেন্টে একা থাকেন তিনি।

পুরো এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটির গেট এখন তালা দেয়া, সাথে আছে নিরাপত্তা রক্ষীর সার্বক্ষণিক পাহারা।

অপর্ণার বয়স ২৬। লকডাউন শুরু হবার পর তিনি সেই গেট পার হয়েছেন মাত্র এক বার।

দিনে দু‌ই বার তিনি ঘর থেকে বের হন – তার দুটি কুকুর জুলস আর ইয়োগীকে হাঁটানোর জন্য।

বেশ কিছুকাল নিউইয়র্কে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করার পর মিলানে ফিরে আসতে পেরে বেশ খুশি ছিলেন লুসিয়া।

সারা দিন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে ঘুরে কাজ করা , আর দিনের শেষে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যাওয়া – ভালোই কাটছিল মিলানে লুসিয়ার দিনগুলো।

কিন্তু কয় ‌‌‍মাস পার না হতেই ইতালিতে ছড়িয়ে পড়লো করোনাভাইরাস, আর মিলান শহর পরিণত হলো ইতালিতে করোনাভাইরাসের এপিসেন্টারে।

লুসিয়া সহ লক্ষ লক্ষ ইতালিয়ান আটকা পড়লেন লকডাউনে, শুরু হলো দিনের পর দিনের জন্য তার ঘরবন্দী জীবন।

স্বাভাবিকভাবেই সারা দিন এ্যাপার্টমেন্টে বসে থাকাটা ছিল খুবই কষ্টকর। অন্তত: প্রথম দু‌এক সপ্তাহ।

তবে এখন – বাধ্য হয়েই – লুসিয়াকে মানিয়ে নিতে হচ্ছে এই একাকী ঘরবন্দী জীবনের সাথে।

তিনি এখনো মিস করেন তার স্বাধীনতা আর অন্যদের সাহচর্য।

কিন্তু সারা দেশে যখন এত মানুষ মারা যাচ্ছে তখন তার প্রিয়জনেরা যে সবাই সুস্থ আছে – এই বা কম কী? এমনটাই ভাবেন তিনি।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যখন করোনাভাইরাস স‍ংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লো – তখন তার এই একাকী জীবনের সমস্যাগুলো যেন আচমকাই এসে তাকে আঘাত করলো।

সপ্তাহ দুয়েক আগে এ্যাঞ্জির চাকরিটা চলে যায়। ‍স্বাভাবিক সময়ে এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের কাছ থেকে একটা সান্ত্বনা মেলে, বা একজন বন্ধু হয়তো দাওয়াত করে আমাকে উৎফুল্ল করে তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু এখন এসব কিছুই নেই। এ্যাঞ্জি এখন একেবারেই একা।

সামাজিক সম্পর্ক এবং শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য

অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যে মানুষের সামাজিক সম্পর্কগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মতো শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ।

বিভিন্ন গবেষণায় তীব্র একাকীত্বের সাথে উচ্চ মৃত্যুহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সম্পর্ক দেখা গেছে।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং যোগাযোগহীনতা কীভাবে মস্তিষ্কের আচরণকে প্রভাবিত করে – তার গবেষণার জন্য সুপরিচিত মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক নাওমি আইজেনবার্গার।

তিনি বলছেন, বর্তমানে এই যে শত শত কোটি লোক তাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে – তা নজিরবিহীন এবং একাকী বসবাসকারী লোকদের জন্য প্রিয়জনদের সাথে যুক্ত থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পোষা প্রাণী অনেকটা ভুলিয়ে দিতে পারে একাকীত্ব

এ সময় মানুষ যেভাবে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে – তা কি আসলে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা মানুষদের মানসিক প্রয়োজন মেটাতে পারছে? অধ্যাপক আইজেনবার্গারের গবেষণা দল এখন সেটারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে ।

তিনি বলছেন, আপনার যদি কোন পোষা প্রাণী থাকে যাকে আপনি স্পর্শ করতে পারেন, জড়িয়ে ধরতে পারেন – তাহলে তা মানসিক চাপ অনেকটা কমাতে পারে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টেফানি কাচিওপ্পো ‌বলছেন, নিজের ভাবনা-চিন্তা ও প্রত্যাশাগুলোকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া একাকীত্ব দূর করার জন্য খুবই জরুরি। তিনি বলছেন, এ সময়টাকে নানাভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

অনেকে ছবি আঁকছেন, ছবি তুলছেন, লিখছেন জার্নাল

এ্যাঞ্জি যেমন আবার ছবি আঁকা শুরু করেছেন। তার আঁকা ইলাস্ট্রেশন অনলাইনে পোস্ট করছেন, তাতে প্রকাশ করছেন তার আবেগ-অনুভূতি, মহামারির মধ্যে একাকী বাস করার অভিজ্ঞতা। তিনি বলছেন, এটা তাকে মানসিকভাবে স্থির রাখতে সহায়ক হচ্ছে।

ড. কাচিওপ্পো বলছেন, বিচ্ছিন্নতার এই সময় অনেকে জার্নাল লিখতে পারেন। এক একটি দিনে কী কী করবেন তার ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেন। এতে আপনার মনে একটা শান্তির বোধ আসবে যে আগামীকালের জন্য আপনার করার কিছু আছে।

তিনি একটা কাজ করেছিলেন – গত ৩০শে মার্চ তিনি তারই একটা ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। শিরোনাম ছিল, ‍‌”কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন নারীর আত্মপ্রতিকৃতি।“

তার পর কয়েকদিনের মধ্যে আরো শত শত নারী পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে তাদের ছবি পোস্ট করেছেন।

গ্যাটউড এখন এসব ছবি দিয়ে একটা ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দিল্লি থেকে অপর্ণাও তার একটা আত্মপ্রতিকৃতি পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই লকডাউনের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথমবার হাতে তুলে নিয়েছেন তার ক্যামেরাটি, এবং তার ঘরবন্দী জীবনের ছবি তুলতে শুরু করেছেন।

তিনি বলছেন, সবাইকে তিনি এটাই বলতে চান যে কোন অপরাধবোধে না ভুগে যা খুশি করার জন্য এ সময়টাকে কাজে লাগানো যায়।

ড. কাচিওপ্পো বলছেন, এরকম এক ট্রাজেডির একটা ইতিবাচক পরিণাম হলো – এর মধ্যে দিয়ে অনেক জাতির লোকেরা পরস্পরের সাথে যুক্ত অনুভব করতে পারে।

দিল্লির অপর্ণা বলছেন, এ অবস্থায় বোঝা যাচ্ছে যে আমরা সবাই কতটা ঝুঁকির মুখে আছি। পৃথিবীর অন্য যে কোন প্রান্তের মানুষদের বুঝতে পারাটা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এমন একটা কঠিন সময়েও এ উপলব্ধি একটা প্রয়োজনীয় এবং সুন্দর একটা ব্যাপার। বিবিসি

দিনে ছয়বার হাত ধুলে করোনা সংক্রমণ কমানো সম্ভব: গবেষণা

দিনে অন্তত ছয় থেকে ১০ বার হাত ধুলে করোনা ভাইরাসের মত জীবাণুর সংক্রমণ কমানো সম্ভব বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

ব্রিটেনের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

বর্তমানের করোনা ভাইরাসের মতো একই রকম প্রাণঘাতী মহামারির জীবাণুর ওপর ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত গবেষণা চালানো হয়। সেখান থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা হচ্ছে এমন গোষ্ঠীর ভাইরাস, যেগুলো থেকে সাধারণত সর্দি-জ্বরের মত উপসর্গ নিয়ে হালকা অসুস্থ দেখা দেয়। করোনা মহামারির মতো এ ধরণের সব রকম ভাইরাস সাবান পানি দিয়ে হাত ধুলে মরে যায়।

ওয়েলকাম ওপেন রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল এবং পিয়ার রিভিউয়ের অপেক্ষায় থাকা সমীক্ষায় দেখা গেছে, দিনে অন্তত ছয়বার করে হাত ধুলে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে আসে। এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ১৬৬৩ জন।

তবে দিনে ১০ বারের বেশি হাত ধোওয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো কমে যাবে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ প্রকাশিত হয়নি।

২০ সেকেন্ডের ধরে কীভাবে হাত ধোবেন তা দেখিয়েছেন ওয়েস্টমিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. অ্যাডেল ম্যাককর্মিক।

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের ড. সারাহ বিল বলেছেন, ‘আপনার কোন উপসর্গ থাক বা না থাক, সবসময় ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস করা উচিত।’

‘এটি নিজেকে রক্ষা এবং আপনার অজান্তে চারপাশের অন্যদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।’

ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমানোর জন্য অন্যতম উপায় হলো কমপক্ষে নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া। বিশেষ করে হাঁচি-কাশি বা ফুঁ দেওয়ার পর ও খাওয়া বা রান্না করার আগে।’

‘এছাড়া বাইরে বেরনোর পর বা গণপরিবহন ব্যবহারের পর হাত ভাল করে ধোয়ার অভ্যাস ভালো।’

লেবু খেলে কী হয়?

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং দরকারি। ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও শরীরে আরো অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। এর মধ্যে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরে খনিজের অভাব মেটায়।

অনেকেই তাই তাঁদের দিন শুরু করেন এক গ্লাস লেবু পানি দিয়ে। যা নিয়মিত খেলে প্রচুর উপকার মেলে-

১. হজমশক্তি বাড়ায়
লেবু হজমশক্তি বাড়ায়। এতে ফাইবার রয়েছে। যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই অনেকেই সকালে খালিপেটে লেবুজল খান। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও এটি সাহায্য করে।

২. আর্দ্রতা ধরে রাখে
লেবুর পানি শরীরে পানির শূন্যতা মেটায়। পানিতে তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ লেবু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ভিটামিন সি-র অভাব দূর হয়। শরীর থাকে আর্দ্র।

৩. ওজন কমায়
ওজন ঝরাতে লেবু খুবই দরকারি। রোজ সকালে খালিপেটে ইষদুষ্ণ পানিতে লেবু এবং মধু মিশিয়ে পান করুন। বাড়তি মেদ ঝরবে। হজমশক্তি বাড়বে।

৪. কিডনি স্টোন কমায়
লেবুর রস কিডনিতে জমে থাকা স্টোন বা পাথর গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন তাঁরাও সকালে লেবুর পানি নিয়মিত খেতে পারেন এতে প্রস্রাবের আকারে স্টোন গলে বেরিয়ে যাবে। আপনি ব্যথামুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করবেন।

৫. অ্যানিমিয়া কমায়
খাবার থেকে রক্তে আয়রন শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন সি। তাই শরীরে যত ভিটামিন সি থাকবে ততই আয়রন শোষিত হবে। কমবে অ্যানিমিয়া।

 

করোনা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়ে যাচ্ছে মানুষের পর্ব-১

করোনা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়ে যাচ্ছে মানুষের পর্ব-১


ফাতেমা শাহরিন


আমাদের মনের বা মতের বিরুদ্ধে কিছু হলেই আমরা রেগে যাই। আমরা যখন আমাদের Need বা প্রয়োজন পূরণ করতে পারিনা তখনও রেগে যাই।

Need আবার অনেক ধরনের হতো পারে।
১. মানসিক চাহিদা
২. শারিরীক চাহিদা
৩. আর্থিক চাহিদা

রাগ হচ্ছে Natural Emotion আমাদের। আর পরিস্থিতিই কিন্তু রাগের সৃষ্টি করে তাই আমরা যতই বলি রাগ ভালো না, রাগা যাবে না কিন্তু কেউ অন্যায় করলে, পরিস্থিতি স্ট্রেসফুল হলে আমাদের রাগ হবেই।
রাগ ছিল, রাগ আছে এবং ভবিষ্যতেও রাগ থাকবে। আমরা আমাদের রাগ আবেগ মুর্হুত্বেই ভ্যানিশ করব না। আমরা আমাদের রাগকে কন্ট্রোল করব। আর অনেক ক্ষেত্রে রাগটাই জরুরী, রাগ খারাপ কোন আবেগ না।

আসুন জানি রাগ তাহলে কি?

‘রাগ’ হচ্ছে মানুষের একটি স্বাভাবিক আবেগ। মানুষ সাধারণভাবেই মনে করে ‘রাগ’ খুবই খারাপ।

এটা শুধু মানুষকে ক্ষতিই করে। কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়, আংশিক সত্যি। কারণ রাগ কারো ক্ষতি করে না বরং অনিয়ন্ত্রিত রাগ যা নিজের ক্ষতি করে আবার অন্যের ক্ষতি করে তা খারাপ।

আমরা যদি ‘রাগ’ নামক আবেগের ভাল দিকটি লক্ষ্য করি তবে অনেক কিছুই বুঝতে পারব। তাহলে positive কয়েকটা উদাহরণ:

যেমন- একটি ছোট শিশু প্লাস্টিক জারের মুখ খুলতে প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে। কিন্তু তখনও ব্যর্থ হলে তার মধ্যে ‘রাগ’ নামক আবেগের সৃষ্টি হতে থাকে এবং সে বেশি বেশি চেষ্টা করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গিয়ে সফলও হয়। আবার ছাত্ররা বন্ধুর ওপর রাগ করে ভাল রেজাল্ট করে। আমরা কোন না জানা কঠিন বিষয় আত্মস্থ করতে চাই তাহলে ভেতরে এক ধরনের রাগ যা জিদ আকারে প্রকাশ পায়।

আবার কোন একটি মেয়ে বাসে উঠে বসল। পাশে একটি ভদ্রলোক মেয়েটিকে ইচ্ছেকৃত টার্চ করল। মেয়েটি রেগে গেলো। মেয়ে দৃঢ় কন্ঠে প্রতিবাদ করল। খারাপ আচরণটি থেমে গেলো।

চলবে…

 

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’


আকলিমা ফেরদেৌসী


‘’আমাদের হয়ত দোষ ছিলো, এত রাতে একটা পার্টিতে কেন গেলাম! আমি বলছিনা যে ছেলেদের সাথে মিশা যাবে না। আমরা যেখানে পড়ছি ছেলেদের সাথে পড়ছি।ছেলেদের সাথে হয়ত মেশার প্রয়োজন হবে! তবে আমি বলব কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়! সবাইকে বিশ্বাস না করে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত শ্রেণীটা মনে হয় একটু বেশী অন্যরকম! এটা যাতে খেয়াল করে।‘’- এই কথাগুলো বলছিলেন বনানীর রেইনট্রিতে ধর্ষনের শিকার এক তরুণী একাত্তর চ্যানেলে একটি টক শোতে টেলি কনফারেন্সে।

তার প্রতি সমবেদনা রেখে বলছি, তিনি যে উপলব্ধি করেছেন এই উপলব্ধিটা আমাদের প্রত্যেক নারীর মধ্যেই আসা উচিত।

‘’কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়!’’ হ্যা সত্যিই তাই!

এখন সময় এসেছে নারীদের সচেতন হবার। বিশেষ করে একজন শিক্ষিত নারীকে তো অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যে কথা বহু বছর আগে বেগম রোকেয়া বলে গেছেন- ভগিনীরা ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হোন!”

আমরা নারীরা কি জাগ্রত?

আমরা কি আমাদের ক্ষমতা আর অধিকার সর্ম্পকে সচেতন? উত্তর গুলো অবশ্যই নেতিবাচক হবে । চোখ বন্ধ করে বলা যায় না আমরা সচেতন নই। যারা সচেতন তাদের সংখ্যা গুটিকতক।আমাদের নারীরা লেখাপড়ায় ভালো করছে, তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আত্ননির্ভশীল হিসেবে গড়ে উঠছে, বড় বড় পদে কর্মরত আছে, সব ঠিক। কিন্তু গোড়ায় গলদ!

দুঃখজনক হলে সত্য যে, উনিশ শতকে বেগম রোকেয়া যে বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন আজকের শিক্ষিত নারী সমাজের মাঝে এখন পযর্ন্ত সেই বোঝ তৈরী হয়নি!
তিনি বলেছিলেন-‘’আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।’
আমাদের নারীরা জানে না, তার ভিতরের ক্ষমতা কত! সে কি করতে পারে। সমাজ বিনির্মানে তাকে যে ভূমিকা রাখতে হবে সে খেয়াল কয়জনের আছে!

মাতৃত্বের মতো বিশাল দায়িত্বের গুরুভার সর্ম্পকে আমাদের নারীরা কতটুকু সচেতন?

‘বন্ধু ছাড়া লাইফটা ইম্পসিবল’, ফ্রি মিক্সিং, মডেলিং এর লোভনীয় অফার –এ সেন্সগুলো যে একধরনের লোভী পুরুয়ের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভংগিতে তৈরী তা কি জানে আমাদের নারীরা?

প্রয়োজনে বন্ধু নিবার্চনের ক্ষেত্রে হ্যান্ডসাম, বিত্ত-বৈভব ইত্যাদির চেয়ে ছেলেটি কতটা চরিত্রবান সেটা কয়জন ভেবে দেখেন?

আমাদের নারীরা কেন এটা ভাবে না যে, বাংলাদেশে বেহেশতি বাতাস বইছেনা। এখানে অনেক চোর বদমাইশ আছে যাদের মেয়ে দেখলেই ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

সুতরাং আমি নিরাপদ তো! নিজের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কেন সে সচেতন থাকবে না?

এমনিতর হাজারো প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর খুজে দেখলে আমাদেরকে হতাশই হতে হয়। তাই নারীদেরকে বলবো-

‘জেগে উঠুন, সতর্ক হোন!
পরিবারে, আত্নীয়-স্বজনের সামনে, প্রতিবেশীদের মাঝে, যে প্রতিষ্ঠানে আপনি রয়েছেন সেখানে নিজের অবস্থান এমন ভাবে গড়ে তুলুন যাতে আপনাকে টোকা দিয়ে দেখা তো দুরের কথা আপনার দিকে চোখ তুলে তাকাতে দ্বিধা বোধ করে।
মনে রাখতে হবে আপনার অধিকার কেউ আপনাকে দিয়ে যাবে না, অধিকার আদায় করে নেয়ার মত যোগ্যতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।
নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে লোলুপ দৃষ্টির সামনে নিজেকে উপস্থাপনের চেয়ে মনোযোগী হোন আপনি আগামী প্রজন্মের কারিগর হিসাবে কতটা যোগ্য হয়ে গড়ে উঠছেন।সাবধান হয়ে যান আপনি যেন এমন মা না হন যার অবহেলা আর সঠিক পরিচর্যার অভাবে ছেলে ধর্ষক হয়ে গড়ে উঠে।

অবাধ মেলামেশা নয়, প্রয়োজনে ছেলেদের সাথে মিশতে হলে দুরত্ব বজায় রাখুন। কারন আপনি যে ছেলেটির সাথে মিশছেন সে যতই আপনাকে ‘তুই তুকারি‘ করুক না কেন, ছোট বা বড় বোন মনে করুক না কেন, আপনার ফিগার, হিপের মাপ, ঠোট, চোখ, হাসলে আপনাকে কেমন দেখায় ইত্যাদি সব কিছুই তার দৃষ্টি সীমানায় ভেসে বেড়াবেই! ছেলেদের দৃষ্টি বিপদজনক বলেই আল্লাহ এক্ষেত্রে সংযত থাকতে বলেছেন। একমাত্র কঠোর পরহেযগার পুরুষ ছাড়া আর যে কোন পুরুষেরই এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন নেই তা হলফ করে বলা যায়।

নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখুন। কারো সাথে একা কোথা দেখা করতে যায়া থেকে বিরত থাকুন।কারন সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান! হোক সে বয়ফ্রেন্ড, চাকুরির ইন্টারভিউ, কোন সুপারিশ, বড় ভাইয়ের বন্ধু, ডাকুনে চাচা, মামা, খালু যে কেউ!

নারী শিল্পীদের বলছি, যারা নাটক সিনেমা আর মডেলিং করছেন, তারা আসুন একসাথে হোন আর যে সমস্ত স্ক্রীপ্টে নারীর অশ্লীল উপস্থাপন আছে তা বজর্ন করুন। নারীর মর্যাদাপূর্ণ উপস্থাপনকে হ্যা বলুন, অশ্লীল উপস্থাপনকে না বলুন।
নিজের আব্রু রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হোন।
কেন আপনি নিজেকে জোড়া চোখের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা ক্ষত বিক্ষত করবেন?

কাদের জন্য আপনি চিত্তহরণী হবেন? যাদের জিভ সব সময় ঝুলে থাকে তাদের জন্য? অবশ্যই না।
থানা ,ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, বিভিন্ন মহিলা সংস্থা, সাংবাদিক ইত্যাদির ফোন নাম্বার সংগ্রহে রাখুন।আক্রান্ত হবার পূর্বাভাস দেখলেই তাদের অবগত করুন।
শিক্ষিত হয়েছেন, তো নিজের ব্যাপারে নিজে সচেতন হোন। যোগ্য হয়ে গড়ে উঠুন, এসব ধর্ষকদের লার্থি মারার জন্য।

 

বটবৃক্ষের গল্প

বটবৃক্ষের গল্প


জিনাত তাসনিম


প্রত্যেকটি মানুষের শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কিংবা জীবনের যেকোনো স্তরে কাছের কিংবা দূরের কোনো মানুয হয়ে ওঠে তার পরম নির্ভরতার ঠিকানা।তার প্রেরণার বাতিঘর। নিজের শৈশবের ঝাপসা স্মৃতি গুলোতে একটু নির্জনে ডুব দিলে ভেসে ওঠে, কিছু প্রিয় মুখ।সেই শীতের সকাল,চারিধারে কুয়াশার চাদর,প্রিয় মানুষের হাত ধরে তিড়িং বিড়িং লাফিয়ে চলা সেই গাঁয়ের মেঠোপথে। তিনি মাঝেমাঝেই থেমে যাচ্ছেন, কুয়াশার ওপার থেকে ডাক আসে…মিয়াভাই,ওও নানা সাথে সালাম,তিনি দাড়াচ্ছেন, হাসিমুখে কথা বলছেন, তাদের সমস্যা শুনছেন। এদের মধ্যে কেউবা কখনো তাকে ঠকায়, কেউ তার ক্ষতি করে, কেউ তার সমালোচনা করেন।তিনি সবার সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রাখতেন, কখনো কারো সমালোচনা করতে দেখিনি। জমির ফসল ঘরে এলে যে সাহায্যে চাইতেন তাকেই সাহায্য করতেন।বাসে বা রিকশায় তার সাথে ভ্রমণ ছিলো শিক্ষণীয়। বিভিন্ন রাস্তা চেনা,বিভিন্ন স্হানের ইতিহাস জানা।শৈশবের হাতেখড়ি হয়েছিল তার কাছে। আমার পুরো জীবনে আমি এত নিষ্ঠাবান শিক্ষক পাইনি।আমি খুব ফাঁকি বাজ ছাত্র, তিনি পড়ে যাচ্ছিন,আমি কখনো তার টাক মাথায় বসা মশার পিছনে ছুটছি, কখনো খেলার সাথী দের কথা ভাবছি। যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি,তিনি ঠিক করলেন আমি বৃত্তি পরীক্ষা দিবো।এ বিষয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নাই,উনি বইগুলো পড়ে শোনাচ্ছেন, আমি মাদুরে গড়াগড়ি দিচ্ছি। পরীক্ষার দিন আমরা পরীক্ষা দিতে গেলাম,প্রশ্নও কমন, কিন্তু আমার চিন্তা উনি আছেন না আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন?আমি প্রতি পনেরো মিনিট পর পর বের হচ্ছি,তার সাথে কথা বলছি। তিনি আমাকে আশস্ত করছেন তিনি আছেন। রোগ কাতুরে আমি ক্লাস ফোরের আগে স্কুলে যায়নি। আমার বৃটিশ আমলে মেট্রিকুলেশন পাশ করা,তুখোড় অংক শিক্ষক আমাকে আমার বেসিক তৈরী করে দিয়েন।তিনি কখনো রাগ করতেন না,খুব ধৈর্য সহকারে পড়াতেন।পাড়ার অন্যান্য বাচ্চারা যারা খেলার সাথী ছিলো। ওরা খারাপ কথা বলতো,কখনো অন্যের জিনিস না বলে নিয়ে যেতো।তিনি বুঝাইতে খারাপ কথা কেন বলা যাবেনা,কাউকে না বলে তার জিনিস আনা যাবেনা।প্রত্যন্ত গাঁয়ে আমাদের বাড়ি। তবু সেখানে দৈনিক সংবাদ পত্র পড়া হতো,সকাল সন্ধে ট্রানজিস্টার রেডিও তে বিবিসি সংবাদ শোনা হতো,প্রতিটি ঘর ছিলো বইপত্রে ঠাসা। সবাই পড়তে ভালোবাসি। গাঁয়ের অন্য ঘরগুলোতে যখন বৈষয়িক বিষয় নিয়ে তুমুল ঝগড়াঝাটি, আমাদের বাড়িতে বিতর্ক হতো ইতিহাস, ইসলাম, রাজনীতি নিয়ে।এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে ছিলো আমার শিক্ষক। জীবনের যেকোনো সংকটে আভয় আর আশ্রয় স্হল ছিলেন তিনি।সবসময় উত্সাহো দিতেন।তার প্রিয় সূরা ছিলো সূরা রহমান। তিনি জীবনের শেষ দিন গুলিতে যখন খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন, বারবার বলতেন বাংলা তরজমা সহ সূরা রহমান পড়ে শুনাতে।দাদা দাদী মা যখন বিছানায় একদিন দাদী খুব অসুস্থ। দাদা বারান্দায় বসে বারবার তার খবর নিচ্ছেন। আমি সূরা রহমান পড়ছি।একটু পর দাদীকে নিতে এ্যাম্বুলেন্স এলো,দাদা আমাকে বললেন,তোমার দাদীকে আমার সালাম দাও।আমি অবচেতন দাদীকে সালাম পৌঁছে দিলাম।তার মতো বিনয়ী শিক্ষক আমি আর পাইনি। তার মৃত্যু র সময় আমি দূরে ছিলাম। যখন তার কাছে আসলাম,আমি তার নিথর দেহটার কাছে যেতে পারছিলাম না।বরাবরের মতো আমার অভিমান,আপনি আমাকে না বলে চলে গেলেন কেন?সবার অনুরোধে আমি তার সামনে দাড়ালাম। স্মিত হাস্যমুখ, মাথার কাছে একটা সবুজ প্রজাপতি বসে আছে।কি শান্ত আর সুখী দেখাচ্ছে তাকে।আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে আছি, আমাদের শেষ বিদায়ের ক্ষণে। আমি অভিমান ভুলে মনে মনে বললাম, হে প্রশান্ত আত্মা যাও তোমার প্রিয় রবের কাছে, যিনিই উত্তম ফয়সালা কারি।

আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে যে কাজগুলো করা যাবে না

 

আপেল সাইডার ভিনেগারের উপকারিতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। সেইসব উপকারিতা পেতে নিয়মিতভাবে অনেকেই এটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে না খেলে আপেল সাইডার ভিনেগার হতে পারে আপনার ক্ষতির কারণ। কিছু কাজ আছে যা আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে করা যাবে না। চলুন জেনে নেয়া যাক-

ভরপেট খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই কি আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস আপনার? তাহলে এই অভ্যাস এখনই ত্যাগ করুন। ভরাপেটে আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খালি পেটে খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

অনেকেই কিছু খাওয়ার আগে তার গন্ধ শুঁকে দেখেন। আপেল সাইডার ভিনেগারের ক্ষেত্রে এটা করবেন না। কারণ আপেল সাইডার ভিনেগার শুঁকলে চোখ ও নাকের সমস্যা হতে পারে। তাই আপেল সাইডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে হালকা করেও খেতে পারেন। তাতে এর কড়া গন্ধ আপনার নাকে যাবে না।

আপেল সাইডার ভিনেগার খেয়েই দাঁত ব্রাশ করবেন না। এতে আপনার দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনার দাঁতে ক্যাভিটি দেখা দিতে পারে। তাই আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পরে দাঁত ব্রাশ করুন।

প্রথমেই অনেকটা আপেল সাইডার ভিনেগার খেয়ে নেবেন না। শরীরকে এর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সময় দিন। প্রথমে অল্প অল্প করে খাওয়া শুরু করুন। না হলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রাতের বেলা শুতে যাওয়ার ঠিক আগে আপেল সাইডার ভিনেগার খাবেন না। এটি খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট সোজা হয়ে বসে থাকবেন। নয়তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

আইসোলেশনের জন্য নিজেকে তৈরি করবেন যেভাবে

এ এক কঠিন সময়। শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুঃসময় বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। কোনো নির্দিষ্ট দেশ কিংবা জাতি নয়, পুরো বিশ্বই এখন আক্রান্ত, আতঙ্কিত। তাই নিজেকে একা ভাবার দরকার নেই। এখন প্রত্যেকেই আপনার মতো উদ্বিগ্ন। যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, এখনও আবিষ্কার হয়নি এর ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক, তাই ভয়টা বেশি। তবে ভয় দূর করতে চাইলে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানেই কিন্তু মৃত্যু নয়। অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। খুব কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রেই এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখুন। এটিও কিন্তু আপনাকে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ জোগাবে।

করোনাভাইরাস আসার পরে আমরা কিছু নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। যেমন কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, পিপিই ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর ব্যবহার আগে এতটা হতো না যতটা এখন হচ্ছে। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশনকে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকে। কোয়ারেন্টাইন হলো আপনার ভেতর অসুখটা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। যদি এমন কোনো আশঙ্কা তৈরি হয় যে, আপনি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, তখনই কেবল আপনাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। দুই সপ্তাহ পর যদি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে, তবে আপনি সুস্থ। কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। আর যদি পজেটিভ হন, তবে যেতে হবে আইসোলেশনে।

কারো শরীরে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়ে তখন তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হবে রোগীকে। অন্য রোগীর কথা ভেবে হাসপাতালে আলাদা জায়গা তৈরি করা হয় তাদের জন্য। অন্তত দুই সপ্তাহের মেয়াদে আইসোলেশন চলে। অসুখের গতিপ্রকৃতি দেখে তা বাড়ানোও হয়। আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। তাদের স্বজনদের সঙ্গেও এই সময় দেখা করতে দেয়া হয় না। একান্ত তা করতে দেয়া হলেও অনেক বিধিনিষেধ মানতে হয়।

যেহেতু এখনও এই অসুখের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এ সময় কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। যাদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও করোনার প্রকোপ অল্প, তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থও হন। যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও রোগের হানা বড়সড় রকমের, তাদের পক্ষে সেরে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

খুব বেশি উদ্বেগজনক অবস্থা না হলে রোগীর বাড়িতেও আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এটি অনেকটা কোয়ারেন্টাইনের মতোই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পথ্য চলতে পারে এই সময়। ভাইরাসটি এমনই সংক্রামক যে, সেবার জন্য কাউকে কাছে পাওয়ার আশা না করাই ভালো। তবে আইসোলেশন সেন্টারে থাকলে চিকিৎসক ও নার্সের দেখা পাবেন, বাড়িতে থাকলে আপনজনদের মধ্য থেকে কেউ দেখাশোনা করতে চাইলে তাই অবশ্যই সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে তবেই তা করতে হবে।

যদি আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। যেহেতু প্রতিষেধক নেই তাই মৃত্যুভয় আপনাকে আঁকড়ে ধরতেই পারে। এই অবস্থায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার মনোবল। কিছুতেই মনোবল হারানো চলবে না। আইসোলেশন সেন্টার কিংবা বাড়িতে, যেখানেই আইসোলেশনে থাকুন না কেন আশা ধরে রাখতেই হবে।

ফিরতেই হবে- এমন মনোভাব ধরে রাখলে সহজে হারাবেন না। মনে রাখবেন, আমাদের শরীর কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই আমাদের মনের কথা শুনে চলে। তাই শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে মনের দিকটাও গুরুত্ব দিতে হবে। তাই জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তেও আশা বাঁচিয়ে রাখুন।

যা কিছু দরকারি জিনিস, তা হাতের কাছে রাখুন। কখন কোন ওষুধ খাওয়ার, তা জেনে নিন। যেন কেউ সাহায্য না করলেও নিজেই ওষুধ খেতে পারেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মানেই সব শেষ ধরে নেবেন না। হতে পারে এটাই নতুন করে শুরু। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস আগের থেকে আরও বেড়েছে নিঃসন্দেহে। তাই যতটা সম্ভব খেয়াল রাখুন নিজের দিকে। যদি সুস্থ হয়ে ফেরেন তবে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হবেন আপনি। মৃত্যুকে জয় করে আসা কম কথা নয়! সৌজন্যে: জাগোনিউজ

হাসপাতালে যোগ দিয়েই করোনায় আক্রান্ত ৫ নার্স

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ নার্সের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা শনাক্ত হওয়া নার্সরা সম্প্রতি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ওসমানী হাসপাতালে যোগ দেয়ার জন্য সিলেটে আসেন। বাইরে থেকে আসায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের ন্যায় ওসমানী হাসপাতালেও নতুন ১৩৯ নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ১৩ মে কর্মস্থলে যোগদানের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়।

এদিকে, শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৩৫৮ জন। পুরো বিভাগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন আর সুস্থ হয়েছেন ৬৯ জন।

গত ৫ এপ্রিল সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান।

সূত্র : ইউএনবি

হাঁপানির সমস্যা থাকলে যা খাবেন, যা খাবেন না

হাঁপানির রোগীদের খাবারের বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কিছু খাবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে পারে, আবার কিছু খাবার তা বাড়িয়ে তোলে। তাই হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং হাঁপানির লক্ষণগুলো হ্রাস করতে খাদ্যতালিকায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাজা খাবারের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে গত কয়েক দশক ধরে হাঁপানির ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের তাজা ফল এবং শাকসবজি জাতীয় সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে অ্যালার্জি হয় যা হাঁপানির লক্ষণগুলোর দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ জাতীয় খাদ্যগুলি হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

যা খাবেন:
আপেল: আপেলে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা অ্যাজমা উপশম করে। নিউট্রিশন জার্নালের একটি গবেষণা অনুসারে, আপেল হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ফুসফুসের ক্রিয়াকে উন্নত করে।

ফলমূল ও শাকসবজি: বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার ফলে হাঁপানির লক্ষণগুলি হ্রাস পেতে পারে কারণ এগুলিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কমলা, লাল, বাদামি, হলুদ ও সবুজ বর্ণের ফল এবং শাকসবজি খাওয়া কেবল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই শক্তিশালী করবে না, পাশাপাশি হাঁপানির আক্রমণকেও হ্রাস করবে।

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সালমন, সার্ডিন, টুনা এবং কিছু উদ্ভিদ জাতীয় যেমন – ফ্ল্যাক্সিড এবং বাদাম আপনার ডায়েটের একটি অংশ হওয়া উচিত। আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরেটরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিনের মতে, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হাঁপানির তীব্রতা হ্রাস করে।

কলা: কলা খাওয়া হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন – দুধ, কমলালেবুর জুস, সালমন এবং ডিম, যা ৬-১৫ বছর বয়সী শিশুদের হাঁপানির সমস্যাকে কমাতে পারে। ভিটামিন ডি ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং রেসপিরেটরি ইনফেকশন হ্রাস করতে পরিচিত।

ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: আমেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১১-১৯ বছর বয়সী শিশুদের যাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কম তাদের ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই ডার্ক চকোলেট, কুমড়োর বীজ, সালমন এবং শাক জাতীয় খাবার খেয়ে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ বাড়ান।

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার: জার্নাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের শরীরে সুস্থ বাচ্চাদের তুলনায় ভিটামিন এ কম। তাই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাজর, ব্রোকলি, মিষ্টি আলু এবং শাক-সবজি খান। হাঁপানি হলে এই সমস্ত খাবার এড়ানো উচিত।

যা খাবেন না:
স্যালিসাইলেট: স্যালিসাইলেট জাতীয় খাবারগুলি হাঁপানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। স্যালিসাইলেট ঔষুধ এবং অন্যান্য পণ্যগুলিতেও পাওয়া যায়। এছাড়া, কফি, চা এবং অন্যান্য মশলায়ও পাওয়া যায়।

সালফাইটস: সালফাইট শুকনো ফল, ওয়াইন, চিংড়ি, আচারযুক্ত খাবার, লেবুর জুসে পাওয়া যায়। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কৃত্রিম উপাদান: কৃত্রিম উপাদান, যেমন- ফুড ফ্লেবার, ফুড কালার, ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত এবং ফাস্ট ফুডগুলোতে পাওয়া যায়। হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই খাবারগুলো এড়ানো উচিত।

যেসব খাবার খেলে গ্যাস হয়: বাঁধাকপি, মটরশুটি, কার্বনেটেড পানীয়, রসুন, পেঁয়াজ এবং ভাজা খাবারের মতো খাবারগুলো গ্যাসের কারণ হয় যা ডায়াফ্রামের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তোলে।

চাঁদপুরে জামাতার ছুরিকাঘাতে স্ত্রীর পর শাশুড়ির মৃত্যু

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জামাতার উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতু (২০) নিহত হওয়ার দুদিন পর শাশুড়ি পারভীন আক্তারের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোরে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

আটক জামাতা আল মামুন মোহনকে (৩২) গতকাল বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য হাজির করলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রকিব বলেন, ‘আড়াই বছর আগে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের মনতাজ মাস্টারের ছেলে আল মামুন মোহনের সঙ্গে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের সেলিম খানের মেয়ে তানজিনা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সৌদি আরবে গিয়ে দেড় বছর থাকার পর আল মামুন মোহন ফিরে আসেন। এরপর থেকে বেকার সময় কাটান। এরইমধ্যে পরকীয়া ও টাকা-পয়সার হিসাব নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

এ ঘটনায় আল মামুন মোহনকে প্রধান ও তার ভাই এবং বোনকে আসামি করে নিহত তানজিনার চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

জানা গেছে, গত বুধবার ইফতারির সময় উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকায় পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রী তানজিনা আক্তারকে তার স্বামী ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। এ সময় তানজিনাকে বাঁচাতে আসলে তানজিনার মা পরভীন আক্তারও ছুরিকাঘাতে আহত হন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চাঁদপুর সদর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলা হয়। আজ ভোরে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নারীর কর্মক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষায় বাংলাদেশ ১৭১তম

কর্মক্ষেত্রে নারীর আইনি সুরক্ষায় দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ১৯০ দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৭১তম, যা গতবছর ছিল ১৬৯তম। এবার বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৪৯ দশমিক ৪।

বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নারীর চলাচলের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের স্কোর ১০০, কর্মক্ষেত্রে ৫০, কাজ করার জন্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৫, ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ৭৫, সম্পত্তির অধিকারে ৪০, বিয়ে করা ৬০, সন্তান নেয়া ২০ এবং পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্কোর ২৫।
মোট আটটি নির্দেশকের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক প্রত্যেক দেশের স্কোর নির্ণয় করেছে। এতে শূন্য থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোরিং দেয়া হয়েছে। নির্দেশকগুলো হলো- নারীর চলাচলের স্বাধীনতা, চাকরি শুরু করা, কাজের প্রাপ্তি, বিয়ে হওয়া, বাচ্চা থাকা, ব্যবসা পরিচালনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পেনশন প্রাপ্তি। এসব নির্দেশকের ক্ষেত্রে একটি দেশের আইন নারীকে কতটুকু সুরক্ষা দেয়, তা বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত (১১৭তম), দেশটির স্কোর ৭৪ দশমিক ৪। এরপর মালদ্বীপের অবস্থান ১১৮ (স্কোর ৭৩.৮), নেপাল ১১৯ (স্কোর ৭৩.৮), ভুটান ১২৫ (স্কোর ৭১.৯), শ্রীলঙ্কা ১৩৭ (স্কোর ৬৮.১), পাকিস্তান ১৭২ (স্কোর ৪৯.৪) এবং আফগানিস্তান ১৮৩ (স্কোর ৩৮.১)।
সর্বোচ্চ ১০০ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে আছে ৮টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং এস্তোনিয়া।

১৩৮ বছরে প্রথম নারী নির্বাহী পেল জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই প্রথম একজন নারী নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হল। সোমবার (১১ মে) জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে টোকিকো শিমিজুর নাম ঘোষণা করেন। ৫৫ বছর বয়েসি এ ব্যাংকার বর্তমানে ব্যাংকটির নাগোয়া ব্রাঞ্চে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অব জাপান সম্প্রতি নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু রদবদলের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ছয় সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে শিমিজু নিয়োগ পেলেন। ব্যাংকের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম- পরিচালনা পর্ষদে নারী নিয়োগের ঘটনা এটিই প্রথম।

উল্লেখ্য, জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ কর্মী নারী হলেও তাদের মাত্র ১৩ শতাংশ উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে আছেন। এছাড়াও আইনগত ব্যাপার, পারিশ্রমিক প্রক্রিয়া ও ব্যাংক নোট সংক্রান্ত বিভাগের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ২০ শতাংশ নারী কর্মরত রয়েছেন।

জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দেন শিমিজু। ব্যাংকটির আর্থিক বাজার বিভাগ ও বৈদেশিক মুদ্রা কার্যক্রম বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যাংকের ইউরোপীয় বিভাগের সাধারণ ব্যবস্থাপক হিসেবে লন্ডনে দায়িত্ব পালন করেন শিমিজু।

গত কয়েক দশক ধরে উচ্চ শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বাড়ায় জাপানের পুরুষ প্রভাবিত পরিচালনা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। তবে ৭০ বছরের পুরনো ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে যেমন গত বছর একজন নারী গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়, জাপানের এ ব্যাংকটিতে এখনও এরকম সর্বোচ্চ পদে কোন নারী নিয়োগ পাননি।

জাপানে মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী হলেও দেশটি লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এক হিসাব অনুযায়ী, লৈঙ্গিক বৈষম্য হ্রাসের সূচকে ১৫৩টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১২১। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির মতে, লৈঙ্গিক বৈষম্য নিরসনে জি-৭ এর মত প্রভাবশালী কমিটিতেও জাপানের অবস্থান তলানিতে।

তবে দেশে নারীর ক্ষমতায়ণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ‘উওমেনোমিক্স’ নামের এক নীতি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে শ্রমজীবী নারীদের ক্ষমতায়ণ করার কাজে নজর দেয় জাপান কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একজন নারীর নিয়োগ, সেই নীতিরই অংশ।

 

‘যে রাত হাজার মাসের চেয়েও সেরা!’

‘যে রাত হাজার মাসের চেয়েও সেরা!’


সাজেদা হোমায়রা


রমজান মাসের প্রতিটি রাত ও দিনের সবগুলো মুহূর্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি নিয়ামত! এসময় আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি থাকে তাঁর বান্দাদের প্রতি।

পুরো রমজান মাসই সওয়ার অর্জনের মাস। আর এ মাসের শেষ দশকেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এক রাত! এ রাতেই নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এ রাতের মর্যাদা ‘সূরা কদর’ এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

“তুমি কি জানো? কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উওম।” – সূরা কদরঃ২-৩

এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা কূল জিবরাঈল আ. এর নেতৃত্বে পৃথিবীতে নেমে আসে। আর ইবাদতকারীর উপর রহমত, বরকত, মাগফিরাত বর্ষণ করতে থাকে। এটি এমন একটি রাত যে রাতে তাকদীরের ফায়সালা করা হয়। এ রাতে ভাগ্যের ভাঙ্গা গড়া চলে। এ রাতে সফলতা, ব্যর্থতা, রিযিক সহ সবকিছুর ভাগ্যে নির্ধারিত হয়। শুধুমাত্র দুয়াই পারে এই ভাগ্য নির্ধারণে পরিবর্তন আনতে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেনঃ “যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
সুবহানাল্লাহ!

রমজানের শেষ দশকের কোন রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত, সে সম্পর্কে রাসূল সা. নির্দিষ্ট করে বলেননি। আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ “তোমরা শবে কদর অনুসন্ধান করো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে।” তাই রাসূল সা. এর কথা অনুযায়ী শবে কদর রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখেই খুঁজতে হবে।
আমরা বেশিরভাগই শুধুমাত্র ২৭ রমজানের রাতকে শবে কদর ভেবে বাকী অন্য রাতগুলোয় ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন থাকি। আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশদিনের প্রতিটি বেজোড় রাতই সমান গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা। তাহলে আর শবে কদর মিস হবার সম্ভাবনা থাকে না।

কদরের রাতে নির্ধারিত কোনো বিশেষ পদ্বতির নামাজ অথবা কোনো নির্দিষ্ট আমল করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

এ রাতগুলোতে বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে।
এ রাতে আমরা যা যা করতে পারি….
১. বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া
২. কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর পড়া।
৩. আল্লাহর জিকির করা।
৪. তাওবা ও ইসতিগফার করা
৫. অনেক অনেক দুয়া করা
৬. দান সাদকাহ করা

এছাড়াও যে কোনো সৎ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে পারি। এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে বেশি ভালো! এ রাতে আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া ও আমলের মাধ্যমে আমাদের তাকদীর পরিবর্তন করে নিতে পারি….সুযোগ করে নিতে পারি জান্নাতে যাওয়ার!

এ রাতের জন্য রাসূল সা. হযরত আয়েশা রা. কে বিশেষ একটি দুয়া শিক্ষা দিয়েছেন। সেই দুয়াটি আমরা বেশি বেশি করে পড়বো।

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নি।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল! ক্ষমা করাকে আপনি পছন্দ করেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

আয়েশা রা. বলেন, “রমজানের শেষ দশদিন যখন শুরু হতো, রাসূল সা. কোমর বেঁধে নিতেন। একেবারেই বিছানায় যেতেন না। নিজে জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।”

হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ রাতে আমরাও ইবাদতে মশগুল হই….সিজদায় নুঁয়ে থাকি প্রভুর প্রতি! সঙ্গোপনে নিজেকে সঁপে দেই পরম দয়াময়ের কাছে!

শুধু ২৭ এর রাত নয়, ইবাদাতে কাটাই শেষ দশকের প্রতিটি রাত…
নিশ্চয়ই আমরা খুঁজে পাবো শবে কদর!

সাজেদা হোমায়রা

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)


জিয়াউল হক


নামাজে সিজদাহর সময় আমরা আমাদের দেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ফ্রন্টাল লোবটা মাটিতে ঠেকিয়ে দেই। আমাদের উচ্চ শীরটাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যতোটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে সম্ভব নামিয়ে আনি। সেই সাথে এই সিজদাহ’র মাধ্যমে (ফ্রন্টাল লোবকে মাটিতে ঠেকিয়ে) আমরা আমাদের বুদ্ধি ও বিচারক্ষমতা, চৌকষ ব্যক্তিত্বের সকল অহংবোধকে এক আল্লাহর শক্তি ও সামর্থ, তাঁর বড়ত্বের কাছে বিসর্জন দিয়ে প্রকারান্তরে এটা স্বীকার করে নেই যে; হে আমার রব আপনার শক্তি ও সামর্থের কাছে আমি কিছুই নই, আমি তো আপনার সাহায্যেরই মুখাপেক্ষি!

এটা সিম্বলিক। প্রতিকি একটা আত্মসমর্পণ এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর কাছে। মনের বোঝা লাঘবের জন্য অপরিহার্য মনস্তাত্বিক প্রস্তুতি, মনকে হাল্কা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন। এরপরে রইলো শারিরিক ও বৈজ্ঞানিক দিক। আমরা যখন সিজদাহতে যাই তখন মাথাসহ ব্রেনে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এভাবে যতোক্ষণ আমরা সিজদাহতে থাকবো, ততোক্ষণই মাথার কোষগুলি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় রক্ত সরবরাহ পাবে।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, এরকম অবস্থায় সর্বনি¤œ পর্যায়ে থাকে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব; এই অংশটি মাটির সাথে লেগে থাকে। এর উপরে থাকে ব্রেনের বাঁকি অংশ। অর্থাৎ রক্ত সরবরাহ সবচেয়ে বেশি পায় এবং সবচেয়ে বেশিসময় ধরে পায় আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব, তথা সেই অংশ, যে অংশ বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগনির্ভর কাজগুলো করে থাকে। বেশি পরিমান রক্ত পাওয়া মানে হলো বেশি পরিমান অক্সিজেন পাওয়া। আর বেশি পরিমান অক্সিজেন পেলে সেইসব কোষ বেশিপরিমাণ পুষ্ঠি পায় এবং সেখান থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে আসে।

ঠিক একই সময় আরও একটা কাজ হয়। আমরা যখন সিজদাহতে থাকি, তখন আমাদের ফুসফুসের উপরে পেটের ডায়াফ্রাম’সহ (বুক ও পেটের মধ্যে বিভাজন পর্দা বা বেরিয়ার) পুরো পেটের চাপ পড়ে। এর ফলে আমাদের নি:শ্বাস প্রশ্বাসের গভীরতা বাড়ে, দ্রুততর হয়। বিষয়টা সিজদাহতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের ভেতরে অনুভব করেন। সিজদাহ থেকে উঠার সময় আমাদের নি:শ্বাসটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরের সাথেই বের হয়, এর ফলে শরির থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে যায়। ঠিক এই কাজটাই সাইকোলোজিস্টগণ তাদের ক্লায়েন্টদের করতে বলেন মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে লম্বা নিশ্বাস ছাড়তে বলার মাধ্যমে।

এই কার্বন ডাই অক্সাইড’ই হলো সেই বর্জ, রক্তে যার উপস্থিতি আমাদের শরিরকে ক্লান্ত ও শ্রান্ত করে তোলে। সিজদহা’র মাধ্যমে শরিরের কোষগুলিতে অতিরিক্ত পরিমান নতুন রক্ত পেয়ে এবং বর্জরুপী এই কার্বনডাইঅক্সাইড’ই বের হয়ে যাবার কারণে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠে, মনও ফুরফুরে সতেজ হয়। আমরা মনোযোগ নিব্ধ করতে পারি। আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে ও সঠিক স্বিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এ জন্যই সিজদাহ এতোটা গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)


জিয়াউল হক


আমাদের ব্রেনের এই ফ্রন্টাল লোব অন্যান্য যে সব কাজ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো;

(১) মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর বাক্য বা যুক্তি, ভাষার জোগান দেয়া,
(২) অপরের মনের ভাব উপলব্ধি করা, মানুষকে বুঝা, তাকে যাচাই করা,
(৩) দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা তথা উত্তম ও অধম যাচাই করা,
(৪) পুরো ব্রেনের অন্য তিনটি লোবসহ ফ্রন্টাল লোবও স্মৃতি সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজটা করে থাকে, কিন্তু ফ্রন্টাল লোব এই স্মৃতিকে দীর্ঘমেয়াদে (রিমোট মেমোরি) সংরক্ষণ করার কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে,
(৫) ন্যায় অন্যায়, বৈধ অবৈধ বা ভালো মন্দ যাচাই করা তার কাজ,
(৬) ব্যক্তিত্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে,
(৭) শরিরের কোন কোন অঙ্গসঞ্চালন ও তাদের মধ্যে সমন্বয়,
(৮) আমাদের শরিরে, যেমন; হাত, পা সঞ্চালন ও তাদের মাংশপেশির কার্যসমন্বয় ইত্যাদি) সাধন করে থাকে।
(৯) আরও একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ফ্রন্টাল লোব।

সেটা হলো; আমাদের শরিরে ডোপামিন নামক এক ধরনের হরমোন নি:স্বরণ হয়, এটা একই সাথে আবার নিউরোট্রান্সমিটারও ব,ে তাই ডোপামিনকে বলা হয় কেমিক্যাল মেসেঞ্জার বা যৌগিক বার্তাবাহক (Chemical Messenger)। ডোপামিন আমাদের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি, মনযোগ কোন এক বিশেষ দিকে নিবদ্ধ করা ও তা ধরে রাখা, আবেগ অনুভুতি, সূখ ও আনন্দানুভূতির মাত্রা জাগিয়ে তোলা বা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

ডোপামিন শরিরে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ও হৃদযন্ত্রের কাজকে প্রভাবিত করে, কিডনির কার্যক্রমের উপরেও সে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রশান্তি, মনযোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি বা অক্ষুন্ন রাখা, মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হওয়া এসব কিছুই অনেকাংশে নির্ভর রে এই ডেপামিন নামক হরমোনের উপরে। হরমোনটি নি:স্বরণের মাত্রা হ্রাস বৃদ্ধির উপরে আমাদের মনোদৈহিক সুস্থতা বা অসুস্থতা নির্ভরশীল। শরিরে ডোপামিনের মাত্রা কমে গেলে আমাদের ভেতরে অবষাদ, বিষণœতা বা ডিপ্রেশন দেখা দেয়।

মেডিটেশন, সুষম খাদ্য, কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ও যথাসময়ে যথাযথ পর্যাপ্ত ঘুম এসবের মাধ্যমে শরিরে ডোপামিনের মাত্রা সঠিক মাত্রায় রাখা সম্ভবপর।

শারিরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে মানুষের মনে ¯œায়ুচাপ, অবসাদ বেড়ে গেলে তার চিন্তা চেতনা, তার সুস্থতা ব্যহত হয়, নানা ধরনের মনোদৈহিক উপসর্গ দেখা দেয়। শুরুতেই এ অবস্থাকেি নয়ন্ত্রণ করা না গেলে ক্রমেই তা জটিল হতে জটিলতর হতে থাকে। এরকম অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। রোগের মাত্রানুযায়ী ঔষধ ও কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।

এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসার অন্যতম একটা অনুষঙ্গ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপির আশ্রয় নেন। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের বিভিন্নরকম রিলা´েশন থেরাপির প্রয়োগ করিয়ে থাকেন। এইসব রিলাক্সেশন থেরাপির লক্ষ্য একটাই হয়ে থাকে, তা হলো, সকল কিছু থেকে মনেযাগ সরিয়ে নিজের দিকে মনযোগকে নিবদ্ধকরণ এবং সেই সাথে তারা যে সব টেকনিক প্রয়োগ করেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো ধীর গতিতে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে তা প্রায় তিন অথবা পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রেখে মুখ দিয়ে তা ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়া।

এভাবে লম্বা নিশ্বাস নেয়া এবং তা কিছুক্ষণের জন্য ধরে রাখার মাধ্যমে তারা আসলে বাড়তি অক্সিজেন নেন শরিরে এবং তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিক্ষণ ধরে রেখে আমাদের রক্তকে সুযোগ করে দেন গৃহিত সেই বাতাস থেকে যেন বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে আামদের শরির, ফলে আমাদের ব্রেনও স্বাভাবিকভাবেই বেশি অক্সিজেন পাচ্ছে এবং সতেজ হয়ে উঠছে।
ব্রেন নতুন অক্সিজেন পেয়ে সতেজ হয়ে উঠলে শরিরের অবসাদ ভাব কেটে যায়। পুরো শরিরের মাংশপেশিতে তার প্রভাব পড়ে, ইতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের চিন্তা চেতনা, মনযোগ’সহ সকল কাজ কর্মে এবং কথা বার্তায়ও।

প্রচলিত মানসিক চিকিৎসা ও পূনর্বাসন কার্যক্রমে এই রিলাক্সেশন থেরাপি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় ঠিক এই কাজটিই করে সিজদাহ। আমরা সাধারণত এই নামাজের মধ্যে সিজদাহ দেই। কিন্তু নামাজ ছাড়াও ইসলামে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদাহ করার বিধান ও রেওয়াজ রয়েছে।

বরং মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপি ব্যবহার করে যে ফল পান, নামাজ ও সিজদাহতে তার চেয়ে বেশি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়া সম্ভব।

রিলাস্কেশন থেরাপিতে যেমন নিরিবলি জায়গার আয়োজন করে বসতে হয়, ঠিক তেমনি নামজের জন্য ব্যক্তি ঘর বা মসজিদের শান্ত জয়গা ঠিক করে নেন। তিনি নামাজের জন্য অজু গোছল করে মানসিক স্থিতির সাথে নিজেকে তৈরি করেন।
নামজে এবং নামজের বাইরে সিজদাহর মাধ্যমে মানব শরিরের ব্রেনে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কিভাবে ক্লান্তি অবসাদ দূর হয়ে মানসিক শান্তি অর্জিত হয় সে বিষয়টির যুক্তিগ্রাহ্য বৈজ্ঞানিক ব্যখাটা আমরা অতি সংক্ষেপে আলোচনা করে দেখবো।

এই নবন্ধের শুরুতেই আমরা অতি ষংক্ষেপে, যতোটা সহজ প্রাঞ্জল এবং নন একাডেমিকভাবে আমাদের ব্রেনের একটা অংশ ফ্রন্টাল লোব, তার অবস্থান ও কাযক্রম নিয়ে যৎসামান্য আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা দেখিয়েছি যে এই ফ্রন্টাল লোব-ই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা, যুক্তি, বিচার ও চিন্তাশক্তি’সহ আবেগ অনুভুতির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। অবশ্য ব্রেনের অন্যান্য অংশও তাকে এই কাজে সহযোগীতা করে এবং নিজ নিজ কাজের অংশ সম্পদন করে, তবে, এই ফ্রন্টাল লোবই আসল কাজটা করে থাকে।

আমাদের শরির জন্মপূর্ব থেকে, তথা, মায়ের পেটে থাকাবস্থায়ই ক্রমশ বেড়ে উঠে, জন্মের পর তা সময় নিয়ে পূর্ণতা পায়। একই বাস্তবতা হলো ব্রেনের বেলাতেও। ব্রেন মায়ের পেটে থাকাবস্থায় তৈরি হতে থাকে, তবে তা পচিশ বছরে বয়সে এসে পূর্ণতা পায়। ব্রেনের যে অংশটুকু সর্বশেষে পূর্ণতা পায়, সেটা হলো এই ফ্রন্টাল লোব, তথা, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র।

…….  চলবে

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)


জিয়াউল হক


মানুষের শরিরের গঠন প্রকৃতির দিকে খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে, মানবদেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হলো তার মাথা এবং সেই মাথার মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব।

এই ফ্রন্টাল লোব (Frontal lobe) ব্রেনের চারটি লোব বা খন্ডের একটি। এই চারটি লোব আবার নিজেদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। শত শত কোটি নিউরন বা স্নায়ুকোষ নিয়ে এই লোবগুলি গঠিত। প্রতিটির সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি রয়েছে আর প্রত্যেকটি লোব অপর লোবের উপরে কম বেশি নির্ভরশীল, তথা, সকল লোবগুলি পরস্পর পরস্পরের সাথে সমন্বয় করেই তাদের কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা দুপুরের খাবার গ্রহণের পর প্রায়শই ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করি। এ সময়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে চায়। অনেকের আবার নিয়মিত ঘুমের অভ্যাসও আছে। এ সময়ে হাল্কা বিশ্রামের মাধ্যমে সেই ঘুম ঘুম ভাবটা কাটিয়ে উঠা যায়। ইসলাম ধর্মেও তেমনটা উৎসাহ দেয়া হয়ে থাকে। প্রিয় রাসুল সা: দুপুরে খাবারের পর হাল্কা বিশ্রাম করতেন (কাইলুলা)।

খাবারের পর আমাদের মধ্যে যখন ঝিমুনি আসে তখন আমরা বার বার মুখ খুলে লম্বা নি:শ্বাস নেই (আমাদের চলতি ভাষায় ‘হাই তোলা’ বলে থাকি)। এটা একটা শারিরক প্রক্রিয়া। এর পেছনে যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখা রয়েছে সেটাকে আমাদের বুঝতে হবে।

আমরা যখন খাবার গ্রহণকরি, তখন আমাদের পাকস্থলি, লিভার’সহ শরীরের পুরো পরিপাকতন্ত্রই সেই খাদ্যকে হজম করতে কাজে নেমে পড়ে। তারা কাজে নেমে পড়ে মানে পরিপাকতন্ত্রের সকল অঙ্গপ্রতঙ্গ পূর্বের তুলনায় এ সময় বেশি বেশি রক্ত সরবরাহ নেয়। এই যে বেশি রক্ত সরবরাহ নিল এর ফলে আমাদের মাথার ব্রেন, তথা, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম তার রক্তে অস্কিজেনের স্বল্পতা অনুভব করে।

অস্কিজেনের এই স্বল্পতা পূরণ করতেই সে তখন আমাদের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে পরিমাণ অক্সিজেন শরীরে ঢুকছে, তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য মুখ দিয়ে বারবার অক্সিজেন নেয় এবং চাহিদা পুরণ করে। আমারও সে সময় ঘুমিয়ে পড়ি বা বিশ্রাম নেই, ফলে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গগুলো (যেমন চোখ, হাত, পা ইত্যাদি) বিশ্রামে যাবার ফলে তাদের দ্বারা রক্ত ও অক্সিজেনের ব্যবহার কমে যায়, সেই বাড়তি রক্ত ও অক্সিজেনটুকু পেয়ে আমাদের ব্রেন নিজেকে শান্ত করে। আমাদের ক্লান্তি দূর হয়, আমরা সতেজ অনুভব করি।

কেবল খাবার গ্রহণের পরেই যে এরকম ক্লান্তি বোধ করি তাই নয়, আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে পরিশ্রমের কাজ করলে কিংবা কায়িক প্ররিশ্রম ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম করলে বা চিন্তা ভাবনা করলে বা মানসিক দু:শ্চিন্তা, ভয় আতংকের মধ্যে থাকলেও আমাদের শরিরে ক্লান্তি ভাব আসে। সেরকম ক্ষেত্রে আমাদের শরির ও মনের উপরে নানারকম সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী প্রভাব পড়ে। আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, কাজে মন বসে না, আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, কোন জটিল বিষয়ে কিংবা কোন একটি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মতো মানসিক যোগ্যতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা কমে আসে ।

এই যে গভীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা, যুক্তি তথ্য উপাত্তকে যাচাই করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা, এটা নির্ভর করে ব্রেনের ফ্রন্টাল লাবের উপরে।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

 

‘মা’ ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না

‘মা’ ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না


মুদাব্বির হোসেন


আজ বিশ্ব মা দিবস। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি সন্তানেরা তাদের মা কে খুশী করতে আজ আনন্দ-উচ্ছাস নিয়ে, উত্তেজনা নিয়ে কত কিছুই না করবে। কেউ কার্ড বানাবে, কেউ খাবার রান্না করবে, কেউ উপহার কিনবে, কেউ আবার মা কে জড়িয়ে ধরে বলবে ভালবাসি, কেউ হয়তো সামাজিক চাপে পরে মা দিবস পালন করবে। আবার যাদের মা নেই তারা গোপনে কেঁদে মা কে স্মরণ করবে। আমার মতে এই একটি দিবস উদযাপন নিয়ে পৃথিবীতে কারও আপত্তি থাকার কথা না। হয়তো আপনাদের কেউ কেউ বলবেন সবদিনই তো ভাই মা দিবস, এই একটা দিন নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন? সবাই তো ভাই আপনার মতো বুঝদার না, এই পৃথিবীতে এখনো অনেক মানুষ আছে যাদের মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়, তেমনি কিছু মানুষকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হয় যে গত এক বছরে কিন্তু একবারও মা এর খবর নেয়া হয়নি। এই দিবস নিয়ে কোন ওয়াজে কাউকে ফতোয়া দিতে দেখবেন না, কোন ডক্টর ইন সোশ্যাল নেটওয়ার্ককে নাক সিটকাতে দেখবেন না অথবা হাল আমলের কোন উঠতি সেলেব্রিটিকে আগের দিনের ফ্যাশন বলে অবহেলা করতে দেখবেন না। এই যে আমরা সবাই মা কে আজ খুশী করতে এত কিছু করবো, আমাদের কারও পক্ষেই আন্দাজ করা সম্ভব না যে ঠিক কতটুকু নিষ্ঠা নিয়ে তারা আমাদের বড় করেছেন অথবা আমাদের মানুষ করতে কত বিসর্জন আমাদের ‘মা’ রা দিয়েছেন।
আমার নিজের মায়ের কথা বলি।আমার বুঝ হবার পরে প্রথম হাসি, প্রথম কান্না, প্রথম রাগ, প্রথম অভিমান, সব আম্মার সাথে। প্রথম ফেল করে মাইর খাওয়াও আম্মার হাতে। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতো তুমি কাকে বেশী ভালোবাসো, মা কে নাকি বাবা কে? আমি বলতাম সমান সমান, খুবই ডিপলোম্যাটিক উত্তর, কিন্তু চোখ আর চাহনি ঠিকই বলে দিত কাকে বেশী ভালবাসি। আমার ছোটবেলাতে মা দিবস থাকলে হয়ত আমিও অনেকভাবে উদযাপন করতাম কিন্তু আম্মার আত্মত্যাগের সিকিভাগও হয়তো অ্যাপ্রেসিয়েট করা হতো না। আমার আম্মা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট বেলায় আমি আম্মাকে যমের মতো ভয় পেতাম,যেমন ভালবাসতেন তেমনি কড়া শাসনে মানুষ করেছেন। সবসময় বলতেন তোদের জন্য আমি কোনদিন প্রমোশন নেই নাই , নিলে তোরা কেউ মানুষ হবি না। আমরাও ভাবতাম আসলেই তো কেন প্রমোশন নিয়ে ঢাকার বাইরে যাবে, আমাদের জন্য স্যাক্রিফাইস তো মা ই করবে, আর কে করবে? আমি জানি না বাংলাদেশে কিভাবে রত্নগর্ভা উপাধি নির্ধারিত হয়, কিন্তু আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে আমার আম্মা একজন রত্নগর্ভা। দুজন এম বি বি এস (একজন এম আর সি পি, ইউকে এবং আরেকজন এম পি এইচ, অস্ট্রেলিয়া), একজন এম বি এ (ঢাকা), একজন পি এইচ ডি (আমেরিকা) সন্তান মানুষ করেছেন, তার মধ্যে দুই বার ব্রেইন টিউমার অপারেশন হয়েছে, কিন্তু পরিবারের জন্য বার বার জীবনযুদ্ধে আরও শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন।
আমার মেয়েকেও যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন যে কাকে বেশী ভালোবাসো, সে একটা হাসি দিয়ে বলবে Both, কিন্তু প্রশ্নকর্তা তার চোখ ও চাহনি দেখে ঠিকই বুঝে যাবে কাকে সে বেশী ভালবাসে। আমার মেয়েও কালকে কার্ড বানাবে মা এর জন্য, হয়তো কোন সারপ্রাইজও দিবে, কিন্তু সেও তার মায়ের সব কষ্ট ও বিসর্জন পুরোপুরি কোনদিনই উপলব্ধি করতে পারবে না।আমাদের পরিবারের জন্য আমার বাচ্চাদের মা এর এই আত্মত্যাগ দেখে আমি আজ কিছুটা হলেও আমার মা এর আত্মত্যাগ উপলব্ধি করতে পারি। আমার কাছে মনে হয় বিশ্ব মা দিবস শুধু সকল সন্তানদের উদযাপনের জন্য নয়। এটা আসলে বাবাদেরও উপলব্ধির দিবস এবং তাদের বাচ্চার মা কে কদর করার দিবস। এখন জিজ্ঞেস করতে পারেন আমার নিজের এই উপলব্ধি লকডাউনের কারনে কিনা? একটা কথা বলতে পারি যে করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলে কোনদিন এই কথাটা বলব না যে “আমিও কিন্তু অনেক কাজ করি”। আমার বাচ্চাদের মা প্রতিদিন যেই কাজ করে আমি তার শতকরা আড়াই ভাগও করি কিনা সন্দেহ। তাই বলে ভাববেন না আমি বাসার কোন কাজই করি না, এই যে আপনি যে নাক সিটকাচ্ছেন আমি হলফ করে বলতে পারি আপনিও আপনার বাচ্চার মায়ের কাজের শতকরা ১২/১৩ ভাগের বেশী কাজ করেন না। আমি আজ পৃথিবীর সব বাবাকে বলব, লজ্জা লাগলেও, ইচ্ছে না করলেও, আদিখ্যেতা মনে হলেও, আনস্মার্ট-আনকুথ মনে হলেও একটি বারের জন্য আপনার বাচ্চার মা কে এই মা দিবসে ধন্যবাদ বলুন। ধন্যবাদ বলুন শুধু আজকের দিনের জন্য নয়, বিগত দিনের জন্য এবং অনাগত একটি বছরের জন্য। আমরা যদি সারা পৃথিবীর সকল এসেনশিয়াল ওয়ার্কারদের কে ফেসবুকে গলা ফাটিয়ে প্রশংসা করতে পারি তবে কেন আমাদের পরিবারের মোস্ট এসেনশিয়াল ওয়ার্কারকে একটু ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারব না।
আমার মা কে, আমার বাচ্চাদের মা কে এবং পৃথিবীর সকল মা কে “মা দিবস” এর শুভেচ্ছা। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কাজটি আপনারা বছরের পর বছর ধরে হাসিমুখে আনন্দের সাথে করে যাচ্ছেন। ৩৬৫ দিন একটানা ধন্যবাদ দিয়ে অথবা উপহার দিয়েও আপনাদের এই মা ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না। আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ক্লান্তিহীন ভাবে কঠিনতম কাজটি করে জান হাসিমুখে।

 

করোনাভাইরাস থেকে শিশুদের ঝুঁকি কমাতে কি করতে হবে?

করোনাভাইরাস থেকে শিশুদের ঝুঁকি কমাতে কি করতে হবে?


স্বাস্থ্যকথা


করোনাভাইরাস শিশুরাও সাধারণ সবার মতন ঝুঁকির মধ্যে আছে। করোনাভাইরাস থেকে তাই শিশুদের ঝুঁকি কমাতে আমাদের সবাইকে অনেক কিছু করতে হবে।

করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো কী?

করোনভাইরাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। আরও মারাত্মক ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে, খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়।

এসব লক্ষণগুলো ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) বা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, যা কোভিড-১৯ এর চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এ কারণেই কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে নেয়া দরকার।

শিশুদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো

শিশুদের জন্যও মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো একই রকম।
এর মধ্যে রয়েছে,
১. বার বার হাত ধোয়া এবং
২. শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যেমন, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে ঢেকে নেয়া বা টিস্যু ব্যবহার করা, তারপর টিস্যুটি নিকটবর্তী বন্ধ ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া। এছাড়াও,

৩. জ্বরের জন্য একটি টিকা রয়েছে। তাই, নিজেকে এবং নিজের সন্তানকে সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা মনে রাখবেন।

সংক্রমণের ঝুঁকি আমি কীভাবে এড়াতে পারি?

সংক্রমণ এড়াতে আপনি এবং আপনার পরিবার নিচের চার ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:

১. সব সময় বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি করাতে উৎসাহিত করা।
২. সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বন্দি থাকার কারণে বাচ্চাদের মধ্যে নানান ধরনের টেনশন হচ্ছে কিনা তা খেয়াল করা এবং বাচ্চাদের মধ্যেও মন খারাপ ভাব দেখা যায়। তা নিয়ে কাজ করা।

৩. বারবার নেগেটিভ খবর গুলো দেখা থেকে বড়দেরকেও দূরে থাকতে হবে যাতে তাদের দুশ্চিন্তা কম হয়।

৪. বাচ্চাদেরকে এটা বুঝাতে হবে যে বর্তমানে ঘর থেকে বের না হয় তাদের জন্য সবচাইতে বেশি নিরাপদ ঘরে থাকা।

বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন ছোটখাটো সমস্যা দেখা যায় যদি কোন বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে অন্য ধরনের কোনো অসুস্থতা সে ক্ষেত্রে পরিচিত জায়গায় যে ডাক্তারের কাছে ফোনে যোগাযোগ করা যায় সেখান থেকে সাহায্য নেওয়া।

 

মন খারাপের দিনে

মন খারাপের দিনে


আলিজা বিনতে কাদের


জীবনের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে শত শত মন খারাপের দিনের সম্মুখীন হয়েছি। কেঁদেছি-থেমেছি-আবার হেসেছি। এভাবেই দিনগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, আর ফিরে আসে না। সেই মানুষগুলোও আর ফেরে না।
.
যাদের পেছনে সময়ের সিংহভাগ ব্যয় করি, তারাও না বুঝে সরে যায়। তাদের পিছু ফিরে দেখার সময় কোথায়। কতটুকু অপ্রাপ্তি তার হিসেব নিতে নিতে, প্রাপ্তির খাতার দিকে দৃষ্টি গিয়ে আটকায় না। ব্যয়ের হিসেব দেখে দেখে দৃষ্টি নেতিবাচক হয়ে যায়। আয়টুকুর হিসেব আর করা হয়ে ওঠে না।
.
এভাবে ব্যয় আর অপ্রাপ্তির রেশ নিয়ে কেটে যায় বহু মন খারাপের দিন। হাসি মুখে অভিনয় করতে করতে পারিপার্শ্বিক মানুষের মাঝে হৃদয়ভাঙা মানুষগুলো মিশে যায়। মন খারাপের বুঝি কোন রং নেই, যা দেখে তাদের চেনা যায়। হৃদয় ভাঙার শব্দ তো কেউ শোনে না, ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে কেউ আশার প্রলেপ লাগায় না।
.
থমকে যায় সময়, একে একে বিয়োজন করতে করতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সেই নিঃস্ব সময়ের গতিপথ বদলে দিতে একজন কাছে আসেন, যিনি আমার কাছে কিছুই প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু আমি তার মুখাপেক্ষী হয়ে যাই। যাকে ছাড়া জীবন চলে না। জীবন যেখানে থেমে যায়, সেখানেই প্রেরণার বানী শুনিয়ে আশার আলো প্রজ্বলিত করে দেন।
.
বাক-হীন হয়ে ভেঙে যাওয়া হৃদয়ের টুকরো গুলো হাতে তুলে নিয়ে অপলক দৃষ্টে চেয়ে থাকি। মুক্তোদানার মতো টপ টপ করে অশ্রু ঝরে পড়ে ভগ্নহৃদয় এর উপর। ক্ষতগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে আস্তে আস্তে একটা সময় ব্যথাগুলো আর অনুভূত হয় না।
.
এক অকল্পনীয় শীতলতায় হৃদয় পূর্ণ হয়, অশ্রুসজল চোখে প্রশান্তির পরশে যতদূর দৃষ্টি যায় ততখানিই ভরসায় ছেয়ে যায়। কৃতজ্ঞতায় মুখ ফুটে বের হয় আলহামদুলিল্লাহ।
.
যে হৃদয় মানুষ ভেঙে দিয়ে চলে যায়, সেই হৃদয় রবের করুনার স্পর্শে খাঁটি সোনায় পরিনত হয়।
তা আর মানুষের ভেঙে দেওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনে না। মানুষের চলে যাওয়ার শূন্যতা নিয়ে আত্মগ্লানিতে ভোগে না। রবের মুখাপেক্ষী হৃদয়, ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা তখন আর মানুষের হাতে থাকে না। মুখে লেপ্টে থাকা হাসি মুছে দেওয়ার জন্য তখন আর মানুষের দেওয়া কষ্ট যথেষ্ট হয় না।
.
ভালো থাকা তখন আর ক্ষনিকের জন্যে হয় না। বিপদের চূড়ান্ত সীমানায় থেকেও ভালো থাকা শিখিয়ে দেন পরম করুনাময়। হৃদয়ে মন খারাপের দিনগুলো কেবল স্মৃতি হয়েই থেকে যায়। তা আর মন খারাপের কারণ হতে পারে না।
.
যেই মনের দ্বায়িত্ব স্বয়ং রবকে দিয়ে দেওয়া হয় সেই মন কিভাবে মানুষের দেওয়া কষ্ট বয়ে নিয়ে খারাপ থাকতে পারে!
.
—কেউ কি নেই?
যে তার আহত হৃদয়ে স্বস্তির প্রলেপ লাগিয়ে নিবে। অশ্রুগুলোকে তিক্ততার বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা দিয়ে বদলে নিতে কেউ কি আসবে না?
— অবহেলার সময়গুলোকে সুখের বিনিময়ে কেউ কি বিক্রয় করতে আসবে না?
.
এটা একটি উন্মুক্ত আহবান,
কেউ কি মন খারাপের দিনগুলোর বিনিময়ে সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ দিনগুলোকে আপন করে নিতে চাইবে না?
.
— আলিজা বিনতে কাদের

 

অসাধারণ সব গুনে ভরপুর কালোজিরা ভর্তা করেছি

অসাধারণ সব গুনে ভরপুর কালোজিরা ভর্তা করেছি


ঘরকন্যা


কালোজিরার গুরুত্ব সম্পর্কে কম বেশী আমরা সবাই জানি। কালোজিরাতে আছে ফসফেট, লৌহ ও ফসফরাস। এছাড়াও রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক। ইসলাম ধর্মমতে কালিজিরা সকল রোগের জন্য উপকারী। এর কারণ, একটি বিশুদ্ধ হাদীসে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপশমক। যার অর্থ, একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য সকল রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কালিজিরায় বিদ্যমান। তো এই কালোজিরা দিয়েই তৈরী করে দেখাচ্ছি একটা সুন্দর ভর্তা।

তৈরী করতে যা যা লাগছে…
▶ ০.৫ কাপ কালোজিরা
▶ কাঁচা মরিচ ৩/৪ টি
▶ শুকনো মরিচ ৩/৪ টি
▶ পেঁয়াজ কুচি ০.৫ কাপ
▶ ১ টা বড় রসুনের কোয়া
▶ সরিষার তেল ১ টেবিল চামুচ
▶ লবণ ০.৫ চা চামুচ

ভর্তাটি করে ফ্রিজে সপ্তাহ খানেক রেখে দিতে পারবেন, যেহেতু সব কিছু ভেজে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ভর্তাটা সহজে নষ্ট হবে না।

সুত্রঃ রুমানার রান্নাঘর

 

সাহাবীদের জীবন কথা…”আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.”

সাহাবীদের জীবন কথা…”আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.”


সাজেদা হোমায়রা


একদিন এক ছোট্ট সাহাবী রাসূল সা. কে অজুর পানি এগিয়ে দিলে রাসূল সা. খুব খুশী হন আর সেই সাহাবীর জন্য দুয়া করেন এই বলে…
“হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের উপর বিশেষজ্ঞ বানিয়ে দাও এবং তাকে কুরআনের রহস্য বোঝার যোগ্যতা দান করো।”
মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর এ দুয়া কবুল করেন এবং সেই সাহাবীকে অনেক অনেক জ্ঞান দান করেন।

অসাধারণ মেধাবী এবং আলোকিত জ্ঞানী এ সাহাবীর নাম আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.। অগাধ জ্ঞান ও পান্ডিত্যের জন্য তিনি ‘বাহরুল ইলম’ (পূণ্যবান জ্ঞানী) উপাধি লাভ করেন। কুরআনের ব্যখ্যায় তিনি ছিলেন ভীষণ পারদর্শী।। কুরআনের রহস্য উপলব্ধির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। অসম্ভব প্রখর স্মৃতিশক্তি ছিলো তাঁর।

আব্দুল্লাহর রা. জন্ম রাসূল সা. এর মদীনায় হিজরতের তিন বছর পূর্বে। আবদুল্লাহ ছিলেন রাসূল সা. এর চাচাতো ভাই। আর আব্দুল্লাহর মা উম্মুল ফাদল ছিলেন মহিলাদের মধ্যে ২য় ইসলাম গ্রহণকারী। তাঁর জন্মের পর তাঁর মা তাঁকে রাসূল সা. এর কাছে নিয়ে আসেন এবং রাসূল সা. খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিয়ে দেন। জন্মের পর থেকেই তিনি ইসলামিক এনভায়রনমেন্টে বড় হতে থাকেন। তাঁর বাবা মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে ৮ম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর তখনই তারা সপরিবারে মদীনায় হিজরত করেন। আবদুল্লাহর বয়স তখন এগারো।

আব্দুল্লাহ রাসূল সা. কে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। রাসূল সা. এর মৃত্যুর সময় আব্দুল্লাহর বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। খুব অল্প সময় তিনি রাসূলকে কাছে পেয়েছিলেন। এটুকু সময়ের ভেতরও তিনি জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই বয়সেই তিনি রাসূলুল্লাহর ১,৬৬০ টি হাদীস স্মৃতিতে সংরক্ষণ করেছেন। যা মুসলিম জাতির কল্যাণ সাধনে রাখছে বিরাট ভূমিকা। কী অসম্ভব ট্যালেন্টেড ছিলেন তিনি!

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করতেন। সুযোগ পেলেই রাসূলের সেবা করতেন। রাসূল সা. এর একটু সঙ্গ পাওয়ায় জন্য সবসময় অস্থির হয়ে থাকতেন। রাসুলুল্লাহ সা. এর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনা রা. ছিলেন আবদুল্লাহর খালা। প্রায়ই তিনি তাঁর খালার বাসায় থাকতেন। এ কারণে খুব কাছ থেকে তিনি রাসূলের সাহচর্য লাভ করেছেন। কখনো তাঁর সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছেন… কখনো বা অজুর পানি এগিয়ে দিয়েছেন।

রাসূল সা. এর ইন্তেকালের পর আবদুল্লাহ সাহাবাদের থেকে জ্ঞান লাভের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। তিনি বলেছেন, “কখনো আমি একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে ৩০ জন সাহাবাকে প্রশ্ন করেছি।” কী প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা ছিলো তাঁর জ্ঞান লাভ করার!

জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস ছিলেন খুব বিনয়ী। জ্ঞানীদের তিনি অসম্ভব সম্মান করতেন। জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে তিনি যে কতো বিনয়ী ও কষ্ট সহিষ্ঞু ছিলেন তা তাঁর একটি বর্ণনা থেকেই অনুমান করা যায়।
ইবনে আব্বাস বলেন, “আমি যখনই জানতে পেরেছি রাসূল সা. এর কোনো সাহাবীর কাছে তাঁর একটি হাদীস সংরক্ষিত আছে, আমি তাঁর ঘরের দরজার কাছে গিয়েছি। যখন দেখেছি এখন দুপুরের রেস্ট করার সময় তখন দরজার বাইরে অপেক্ষা করেছি। বাতাসে ধূলাবালি উড়ে আমার জামা আর শরীর একাকার হয়ে গেছে। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আমার এ দূরবস্হা দেখে বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ! রাসূলুল্লাহর চাচাতো ভাই! আপনি কি উদ্দেশ্যে এসেছেন? আমাকে খবর দেননি কেন, আমি নিজেই গিয়ে দেখা করে আসতাম।’ আমি বলেছি, আপনার কাছে আমারই আসা উচিত। কারণ জ্ঞান এসে গ্রহণ করার জিনিস, গিয়ে দেয়ার জিনিস নয়। তারপর আমি তাঁকে হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি।”

জ্ঞান অন্বেষণে ইবনে আব্বাসের আগ্রহ, একাগ্রতা ও কর্মপদ্বতি দেখে সে যুগের বড় বড় জ্ঞানী ও মনীষীরাও চরম বিষ্ময় বোধ করেছেন।

আবদুল্লাহ রা. এর কথা শুনে মানুষ বিমোহিত হতো। কেউ তাঁর কাছে কোনো কথা বলতে আসলে তিনি তা আগ্রহ ভরে শুনতেন। তাঁর বাসাটি ছিলো একটি ইউনিভার্সিটি। সেখানে তিনিই ছিলেন একমাত্র টিচার। সপ্তাহে এক এক দিন এক এক বিষয়ে লেকচার দিতেন। ফিকহ, হালাল-হারাম, ফারায়েজ, কবিতা, সাহিত্য, প্রাচীন আরবের ইতিহাস এসব বিষয় থাকতো তাঁর আলোচনায়। তাঁর আলোচনা শুনে সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরতেন।

আবদুল্লাহ রা. এর অপরিসীম জ্ঞান ও চিন্তা শক্তির কারণে অল্প বয়সী হওয়া সত্ত্বেও উমর রা. ও উসমান রা. এর শাসনামলে মজলিশে শূরার (পরামর্শ সভা) সদস্য ছিলেন তিনি।

দ্বীনি জ্ঞানে গভীর পাণ্ডিত্যর জন্য উমর রা. জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। উমর রা. আবদুল্লাহ রা. কে দেখলেই বলতেন, “ঐ যে বিচক্ষণ ও বিবেকবান যুবক আসছে!”

তাঁর চরিত্রে ছিলো তাকওয়ার প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন দিনে রোজাদার এবং রাতে ইবাদতকারী। রাতের একটি অংশ তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে কাটাতেন এবং তাওবা ইসতিগফার করতেন। আল্লাহর ভয়ে তিনি এতো বেশি কাঁদতেন যে চোখের পানি তাঁর দু’গালে দুটি রেখার সৃষ্টি করেছিলো।

প্রিয় নবীর দুয়া ও জ্ঞান অর্জনের জন্য আবদুল্লাহ রা.এর অক্লান্ত চেষ্টা তাঁকে জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছতে সাহায্য করেছে। তাঁর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েছে চারদিক… তাঁর বর্ণনা করা হাদীসগুলো আজো মানুষের হেদায়েতের আলোকবর্তিকা!

৭১ বছর বয়সে তায়েফ নগরে ইন্তেকাল করেন তিনি। তায়েফে ‘মসজিদ ইবনে আব্বাস’ নামক মসজিদটি আজো তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে। এ মসজিদেরই পেছনের দিকে রয়েছে এ মহান সাহাবীর কবর।

 

হালিম

হালিম


ঘরকন্যা


যা লাগবে-

মুগ ,মাসকলাই ডাল,মসুর ডাল আর পোলাও চাল মিলে আধা কেজির মত নিন। এক কাপ পরিমান গম নিন। এসব কিছু গুঁড়ো করে নিন ব্লেন্ডারে বা পাটায়। সময় অনেক কম লাগবে।

বাকি যা লাগবে-

মুরগি একটা ১ থেকে দেড় কেজি ছোট পিস করে কাটা
পেঁয়াজ ৪ টি কুচি করে বেরেস্তা করা
পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা ২ টেবিল চামচ
রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ
হলুদ মরিচ গুঁড়ো মিলে ২ চা চামচ
গরম মশলা পাউডার ১ টেবিল চামচ
জিরা গুঁড়ো ২ চা চামুচ
ধনিয়া গুঁড়ো ২ চা চামচ
ধনিয়া পাতা কুচি
আদা কুচি
তেল হাফ কাপ
লবণ স্বাদমত

প্রণালী

হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ভাজুন। হালকা বাদামি হয়ে আসলে গুঁড়া মসলা দিয়ে নাড়ুন। লবণ দিয়ে দিন। মাংস ছোট টুকরা করে দিয়ে দিন। হালিমের মসলা দিয়ে ভালো করে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন হাঁড়ি। ১০ মিনিট পর মাংস থেকে পানি বের হয়ে গেলে আবারও নেড়ে দিন। ২ কাপ পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে সেদ্ধ করুন মাংস। এরমধ্যে চাল, গম ও ডাল ধুয়ে সামান্য পানি দিয়ে পেস্ট করে নিন একসঙ্গে। একদম মিহি করার প্রয়োজন নেই। মাংস খানিকটা সেদ্ধ হলে চাল-ডালের মিশ্রণ দিয়ে নেড়েচেড়ে ৫ কাপ পানি দিয়ে দিন। ঘনঘন নাড়তে হবে। একটু পাতলা থাকা অবস্থায় নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে পানির সঙ্গে গুলিয়ে তেঁতুলের মাড় দিয়ে দিন। সাজানোর উপকরণ কুচি করে উপরে ছিটিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম।

 

অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন

অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন


ফারহানা আমাতুল্লাহ শৌখিন


و خلقنكم ازوخا
And we created you in pairs.
জান্নাত; যেখানে নেই কোনো কষ্ট, নেই পীড়াদায়ক কোনো অনুভূতি। ইচ্ছের লাগামের বাঁধ থাকতে পারে কিন্তু দেওয়ার ভান্ডারের কোনো শেষ নেই। কোনো কিছুর শূন্যতা যেখানে নেই। তারপরেও কেন আদম(আঃ) সেখানে থেকেও শূন্যতা অনুভব করলেন? কেন একজন সঙ্গীর অভাব অনুভব করলেন?

//অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন
চারদিকে ছড়ানো চিত্তানন্দের অজস্র উপকরণ
তবুও কেন জীবন ছেড়ে পালাতে চায় মন
কেন আঁতিপাঁতি করে খোঁজে অন্য কোনো ভুবন?//

আর আল্লাহতা’আলা কেনই বা বাবা-মা, ভাইবোন, পরিবারের অন্য কোনো সদস্য রেখে, একজন স্ত্রী হাওয়া(আঃ) কেই জুড়ে দিলেন তার সাথে?
বললেন, হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান করো এবং সেখান থেকে যা চাও খুশিমনে খাও। (বাক্বারহঃ৩৫)
আল্লাহতা’আলার প্রজ্ঞা সবকিছুর উর্ধ্বে।
প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল প্রথম মানব মানবীর মাধ্যমে। একটা পরিবার বহু হৃদয়ের সমষ্টি। যেখানে আছে জীবনের প্রবাহ, আছে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, মিলেমিশে থাকার প্রবল বাসনা, আছে নিরাপত্তা, সহনশীলতা এবং পরস্পরকে গ্রহণ করার মানসিকতা।
সম্পর্কের বন্ধনগুলোর ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি আটপৌরে। কারও সাথে কথা বলার সময়, ভাব বিনিময়ের সময় মনোযোগ দেই না ঠিকমতো। সতর্কতা থাকেনা আমাদের। কাছের মানুষ বলেই বুঝি যথাযথ মূল্যায়ন না করলেও চলে? অথচ এই কাছের মানুষগুলোর জন্যই তো জীবন আমাদের কাছে রঙধনু হয়ে ধরা দেয়। সুহাসিনী ভোর হয়ে হাজির হয়। ঘোর অমানিশার দিনে একমুঠো রোদ নিয়ে হাজির হয়। কুয়াশার ঘনকালো মেঘের বুকে উন্মুক্ত করে আলোকিত বাতায়ন। রাহবার হয়ে দেখিয়ে দেয় সুখের কিনারা। আর তাদের ক্ষেত্রে আমরা কতটা সতর্ক থাকি প্রশ্ন করে দেখেছি কি নিজেকে?

পারিবারিক উপাখ্যান নিয়ে লেখিকা আফরোজা হাসানের ছয় কলামের একটি পেসক্রিপশন হাতে পেলাম। অবশ্য লেখিকা হিসেবে অপরিচিত কেউ নন। যদি জিজ্ঞেস করেন, আপনার পছন্দের লেখিকা কে? চোখ বন্ধ করে বলব, আফরোজা আপু। শব্দশৈলীর গঠন। কথার প্রজাপতি কিভাবে এক ডাল থেকে অপর ডালে অবগাহন করে নিয়ে চলে, তার পূর্ণ প্রশান্ত আবেশ লেখিকার লিখাতে খুঁজে পাই। শুধুমাত্র একটা বই পড়েই তার প্রতি বুঁদ হয়ে গেলাম ব্যাপারটা এমন নয়। সতেরো সাল থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুনতাম কখন আনন্দবাড়ির আনন্দকথনের পরের পর্ব এসে হাজির হবে। গল্পে গল্পে খুঁজি জীবনের প্রতিচ্ছবিতে কতবার যে উঁকি দেওয়া হতো। এভাবে তার সব পান্ডুলিপিতে সাঁতরে বেড়িয়েছি। যদিও জীবনের পাণ্ডুলিপিগুলো গল্পের মতো সহজ নয়। এ পান্ডুলিপিতে থাকে কয়েক মনের বসবাস। যাদের চিন্তাচেতনা অনেক সময়ই অন্যের সাথে মিলেনা। থাকে বৈরিতা আবার কখনো থাকে আনন্দের মিশেল।

#গল্পের_ঝুড়ি_থেকে
//একটা মেয়ে যখন বউ হয়ে পরিবারে প্রবেশ করে। তখন পরিবারের সদস্যরা ভাবে বড় হয়েছে বলেই বিয়ে হয়েছে। আর বিয়ে হয়েছে মানেই তুমি এখন বিশাল সব দায়িত্বে বোঝা মাথায় নিতে প্রস্তুত। অথচ, একটা মেয়ে হিসেবে সে বড় হয়েছে; কিন্তু একজন বধূ হিসেবে মাত্রই তার জন্ম হয়েছে।// সুখের নাটাই
মানুষের সমস্যা হচ্ছে বাইরের মানুষকে বুঝিয়ে বললেও কাছের মানুষকে বুঝিয়ে বলতে চায় না। বুঝিয়ে বলার চাইতে হুকুম করতে বেশি পছন্দ করে। এভাবে বলার চাইতে করতে হবে বলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ কাছের মানুষকে একটু সময় দিলে। আন্তরিকতার সাথে বুঝালে তারা নিজেদের অভিভাবকহীন মনে করে না।
//অভিমানী মনের আত্মদহন গল্পে, নাফিসা সদ্য বিবাহিত নতুন বধূ মুনিরাকে জীবনের উপাখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে সাবলীলভাবে, জানো মুনিরা এমন কতবার হয়েছে, বাবা কোথায়ও বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নিয়ে যাননি। ভাইয়ারা পছন্দের মূল্য না দিয়ে জোর করে অপছন্দনীয় কিছু চাপিয়ে দিয়েছে। বোনেরা নষ্ট করে ফেলেছে খুব প্রিয় কিছু। মা অকারণে বকাঝকা করেছেন। সেসব কি মেনে নিইনি আমি? ভুলে যাইনি কি? অন্যায় আচরণের জন্য ছেড়ে চলে গিয়েছি কি? না। এর কারণ কি বাবা-মা-ভাই-বোনকে ডিভোর্স দেওয়া যায় না, এটা? নাকি অকৃত্রিম ভালোবাসা? তাহলে স্বামী/স্ত্রীর ভুল কথা বা ভুল কাজ মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? যেখানে সেই মানুষটাকে জড়িয়েই আমার জীবনের সবকিছু। //
সম্পর্কগুলো অনেক স্পর্শকাতর। আর তারমধ্য সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। একবার বিচ্ছেদ হলে আর দেখা নেই। দেখার জন্য, কাছে পাবার জন্য হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে যাবে অথচ বৈধতার দেয়াল আটকে যাবে। এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্যক সচেতন থাকা তাই খুব বেশি জরুরী। সংসারে সুখী হতে চাইলে নিজ নিজ প্রাপ্তির হিসেব করা ছাড়তে হবে৷ ভালোবাসা মানে আমি তোমাকে কী দিলাম এবং বদলে কী পেলাম তার যাচাই করা নয়৷ বরং একে অন্যের ঘাটতিগুলো পূরণ করতে করতে দুজন মিলে একই গন্তব্য পানে ছুটে চলা।

//”অন্তরালের ছায়া” গল্পে ইলমা আর নুরির কথায় কথায় উঠে এসেছে জীবনের কিছু সহজ চিন্তাধারা।
“এত ভালোবাসাবাসি, এত টান, এত আকর্ষণ থাকার পরও সম্পর্কগুলো ভেঙে যায় কেন? জীবন দিয়ে দেবার দাবিদারেরা একে অন্যের জন্য নিজেদের ছোট্ট ছোট ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দের ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না কেন? কোনো ব্যক্তিই যেখানে ভুলের উর্ধ্বে নয়, সেখানে ক্ষমা করে দিতে পারে না কেন একে অন্যের ভুলগুলো? কেন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেয়ে ভেঙে ফেলাকেই পছন্দ করতে শুরু করেছে মানুষ? কেন ঘৃণার আঁধারে ঢেকে যায় ভালোবাসার সূর্য?
সম্পর্ক যত মধুরই হোক না কেন কিংবা একজন মানুষ যতই ভালো হোক না কেন, তার ভেতরে নেতিবাচক কিছু থাকতেই পারে! এই ভাবনাটা এবং এটা মেনে নেওয়ার উদারতাই ‘ভালোবাসার’ ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত৷”
“কিছু কিছু মূহুর্ত ভীষণ রকম অসহায়ত্ব নিয়ে হাজির হয় আমাদের কাছে! পছন্দের মানুষরা খুব কাছে থাকার পরও অদ্ভূত এক একাকিত্ব ঘিরে ধরে মনকে৷ অকারণেই বারবার ভিজে ওঠে চোখ৷ চোখ বুজলেই দেখা যায় বুকের ভেতরে ভেসে বেড়াচ্ছে শূন্যতা৷ আকাশের বুকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ উড়ে বেড়ানোর মতো৷ এই অনুভূতিগুলোর কাছে নিজেকে খুব অসহায় লাগে৷ তখন মন প্রশান্তি খুঁজে পায় একমাত্র রবের স্মরণে৷”
“ভালো লাগার জন্য মানুষ অন্যকে কষ্ট দিতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার জন্য নিজে কষ্ট সহ্য করে৷”//
আমাদের দাম্পত্যজীবন যদি সুখের নাটাইয়ে বাঁধতে পারি। তবে অনাগত সব ঝড় ঝাপটা সামলে আমরাও তাতে রচনা করতে পারি সুখময় এক রঙিন অধ্যায়।
প্রতিটা গল্পতেই রয়েছে এভাবে আবেগমিশ্রিত বাণী। জীবনের পরতে পরতে যেমন আছে সমস্যা সেভাবেই রয়েছে তার সমাধান। আর কিছু লিখতে গেলে রিভিউ পাঠক বিরক্ত হয়ে পড়াই বন্ধ করে দিবেন। আর সব লিখলে হার্ডকপি পড়ার মজাই লুফে যাবে।
#সমালোচনা:
আফরোজা আপুর লিখাতে ভুল ধরার মতো শক্তিবান হয়ে উঠিনি। কিন্তু মাত্র ১০২ পৃষ্ঠার ছোট্ট এই চিরকুটে যারপরনাই ব্যথিত হয়েছি। ভেবেছিলাম জাওয়াদকে পাবো নূহাকে পাবো। থাকবে আনন্দবাড়ির সুখ এবং দুঃখের কথন। প্রচ্ছদ ভালো হয়েছে। যাইহোক, পরবর্তী নতুন বই এবং নতুন গল্পের অপেক্ষায় এই প্রহরের ক্ষান্ত দিলাম। পরের প্রহর যেন পাই ভারী মলাটে, যা পাঠকের চিত্তে আনন্দের প্রলেপ দিয়ে যাবে। বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে আল্লাহতা’আলা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরহ এ জাযায়ে খইর দান করুন, আমীন ইয়া রব্ব!

বইঃ ”সুখের নাটাই”
লেখিকাঃ আফরোজা হাসান
প্রকাশনঃ সমকালীন প্রকাশন
প্রচ্ছদ মূল্য: ১৬০৳

 

ডিম চপ

ডিম চপ


ঘরকন্যা


ইফতারিতে আমাদের অনেকেরই প্রিয় ডিম চপ। বিশেষ করে শিশুরা তো দারুন পছন্দ করে এই খাবারটি। অনেকে বাইরে থেকে কিনে খেয়ে থাকেন ডিম চপ, আবার অনেকে বাড়িতেও তৈরি করে থাকেন। যারা ডিম চপের সবথেকে সহজ রেসিপি জানেন না তাদের জন্য আজ রইলো ডিম চপ তৈরির সবচাইতে সহজ রেসিপি।

উপকরণঃ

– ডিম সিদ্ধ – ৪ টি
– আলু সিদ্ধ – আধা কেজি
– পেঁয়াজ কুচি – ২ টি
– কাঁচা মরিচ কুচি – স্বাদ মতো
– গোল মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
– ধনিয়া পাতা – ৩ টেবিল চামচ
– লবন – স্বাদ মতো
– ব্রেড ক্রাম \ বিস্কিটের গুঁড়া – ১ কাপ
– ফেটানো ডিম – ২ টি
– সয়াবিন তেল – ভাজার জন্য

প্রনালীঃ

-ডিম সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে রাখুন। আলু ধুয়ে সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
-সিদ্ধ আলুর সাথে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি , ধনে পাতা কুচি , গোল মরিচের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে খুব ভাল করে মেখে নিন। এবার আলুর মিশ্রণের ভিতর আস্ত সিদ্ধ ডিম ভরে চপের আকৃতিতে গড়ে নিন।
-২ টি ডিম একটু লবন দিয়ে ফেটিয়ে নিন। চপগুলো ডিমের গোলায় চুবিয়ে ব্রেড ক্রামে জড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। চাইলে ব্রেড ক্রামের সাথে চিজ কুচিও মিশিয়ে দিতে পারেন। এতে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।

এবার ফ্রিজ থেকে চপগুলো বের করে ডুবো তেলে সোনালী করে ভেজে তুলুন । ইফতারির টেবিলে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুন মজাদার ডিম চপ।

 

শিশু কিশোরদের কোরআন এর অনুবাদ

শিশু কিশোরদের কোরআন এর অনুবাদ


কানিজ ফাতিমা


শিশু কিশোরদের জন্য প্রথবারের মতো সহজ বাংলায় কোরআনের অনুবাদ হতে যাচ্ছে – সবার দোয়া চাই –

এটুকু করতে লাগলো তিন দিন – ১ টা বাক্য লিখতে তিন ঘন্টার রেফারেন্স খুঁজতে হলো .

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।

ভূমিকা:

মুহাম্মদ (সা.) জিবরীল (আ:) কে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলেন। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি যখন হেরা গুহায় একাকী নির্জনে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, গভীরভাবে ভাবছিলেন সমাজের সব অসঙ্গতি আর অন্যায় জুলুম নিয়ে, ভাবছিলেন অসহায় মানুষের মুক্তির উপায় নিয়ে; ঠিক তখনই তার সামনে ভেসে উঠলো অতিপ্রাকৃত (supernatural) এক অবয়ব- যিনি বলে উঠলেন “পড়!” ( সূরা আলাক )

প্রথমে মুহাম্মদ (সা.) বুঝতে পারলেন না কি ঘটছে- ছুটে গেলেন বাড়ীতে। স্ত্রী খাদিজা (রাঃ ) তার বয়োবৃদ্ধ অন্ধ ভাই (cousin) ওরাকা (ওরাকা ইবনে নওফেল ইবনে আসাদ) এর কাছে নিয়ে গেলেন তাঁকে। ওরাকা সে যুগের বিজ্ঞ ও ধর্ম বিষয়ক জ্ঞানী ব্যক্তি হিসাবে সমাজে পরিচিত ছিলেন। ওরাকা বিস্তারিত ঘটনা শুনে নিশ্চিত করলেন যে যাকে মুহাম্মদ (সা.) আকাশের দিগন্তে দেখতে পেয়েছেন তিনি হলেন জিবরীল (আঃ); যিনি আল্লাহর নির্দেশে নবী-রাসূলদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেন।

এর পরে মুহাম্মদ (সা.) নির্জনে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকার জন্য প্রায়ই পর্বতের গুহায় যেতে লাগলেন। একদিন মোহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা নগরী ও পর্বতের রাস্তার মাঝামাঝি হাঁটছিলেন তখন আকাশ থেকে সেই কণ্ঠ তাঁর নাম ধরে ডেকে উঠলো- “হে মুহাম্মদ!” মুহাম্মদ (সা.) ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন সেই অবয়ব যাঁকে তিনি এর আগে হেরা গুহায় দেখেছিলেন। তিনি ভয় পেয়ে দ্রুত বাড়ী ফিরে গেলেন ও কাঁপতে কাঁপতে খাদিজা (রাঃ) কে বললেন, “জাম্মিলুনি, জাম্মিলুনি” অর্থাৎ “আমায় কম্বল দিয়ে আবৃত করে দাও।” (তখন নাজিল হয় সূরা মুদ্দাসসির এর প্রথম সাতটি আয়াত)

এই ঘটনা মুহাম্মদ (সা.) যখন আবারো ওরাকাকে জানালেন যখন ওরাকা তাকে বললেন যে এরূপ ঘটলে মুহাম্মদ (সা.) যেন স্থির থাকে এবং কি বলা হচ্ছে সেটা শোনে। আর মুহাম্মদ (সা.) যেন ওরাকাকে প্রতিটি ঘটনা জানায়।

এর কিছুদিন পরে মুহাম্মদ (সা.) যখন লোকালয় থেকে দূরে একাকী হাটছিলেন তখন আবারো সেই কণ্ঠের ডাক শুনতে পেলেন। এবার তিনি স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। কণ্ঠ ডেকে বললো, “মুহাম্মদ!” তিনি জবাব দিলেন, “ আমি এখানে।” কণ্ঠ বলে উঠলো, “আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল আর আমি হচ্ছি ফেরেশতা জিবরীল।” জিবরীল (আঃ) বললেন – “ আমার সাথে সাথে উচ্চারণ করুন-” এর পরে সূরা ফাতিহার নিম্নলিখিত আয়াত সমূহ নাযিল হয়। সূরা ফাতিহাই সর্বপ্রথম নাজিল হওয়া পূর্ণ একটি সূরা।