বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন!
ফারহানা মিতু
বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন! রক্তের সম্পর্ক নেই, অথচ একটা নারী আরেক ভিন্ন পরিবারেরয পুরুষের জন্য মা বাবাকে ছেড়ে আসছে।নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছে।সন্তানের মা হচ্ছে।নেক কাজের সহযোগী হচ্ছে।অপরদিকে যে যুগে কেউ কাউকে বিনা কারণে একটা পয়সা দিতেও রাজি নয় সেই যুগে একটা লোক বাবার দায়িত্ব টাকে কাঁধে নিয়ে নিচ্ছে।নারীর সার্বিক ভরনপোষণ দিচ্ছে।তার সন্তানদের মুখে হালাল রিযিক তুলে দিতে দিন রাত একাকার করে দিচ্ছে।কখনো ভেবে দেখেছেন,এটা কি করে সম্ভব???
এটা আসলে আল্লাহর নিয়ামত।বিয়ে এমনই এক বন্ধন যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা একটা অন্তরের সাথে আরেক অন্তর কে জুড়ে দেন।
আমরা যারা এই নিয়ামত লাভ করেছি তাদের উচিৎ বেশি বেশি শুকরগুজার হওয়া।আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।কেননা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়।আর যারা এখনো অবিবাহিত তাদের উচিৎ আল্লাহর শেখানো পদ্ধতিতে ই দুয়া করা।
তারা প্রার্থনা করে থাকে, “হে আমাদের রব! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”
(.২৫-ফুরকান:৭৪.)
লকডাউনের এই সময়ে দাম্পত্য কলহ যে অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।প্রায়ই আশেপাশের বিল্ডিং এর ঝগড়া কলহের আওয়াজ জানালা ভেদ করে ঘরে ঢুকে পড়ে।কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে।কিছু ক্ষেত্রে নারীরা অসহনশীল হয়ে পড়ছে।অর্থাৎ অন্তরের প্রশান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।এর মূল কারণ নারী বা পুরুষ নয়ন শীতল করতে পারছেনা।
এবারে আসি নয়ন শীতলকারী স্ত্রী হওয়া বা জীবনসঙ্গী পাওয়ার কিছু শর্তেঃ
#আমি যাকে পাচ্ছি সে আমার জীবনসঙ্গী। কুরআন তার নাম দিয়েছে পোষাক। এবং পরস্পরের সহযোগী।কাজেই তাকে উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তির মত মনে করা উচিৎ না। তার কিছু নিজস্বতা থাকবে,আমারও কিছু নিজস্বতা থাকবে।তাকে পুরো আমার মত হয়ে যেতে হবে,বা আমাকে পুরো তার মতন হতে হবে এই জটিল চিন্তায় যাওয়াই যাবেনা।প্রত্যেকের স্বকীয়তা ঠিক রেখেই পাশাপাশি চলা যায়।
#দাম্পত্য সংসার টা একটা গাড়ির মত।গাড়ির ড্রাইভার হতে হবে স্বামীকে। স্ত্রীকে হতে হবে অনুগত। এটা সমাজের ভারসাম্য ঠিক রাখবে।স্ত্রী পরামর্শ দিতেই পারে। সেই অনুপাতে ডান বাম হতেই পারে।কিন্তু চালকের আসনে শক্ত হয়ে বসতে হবে স্বামীকেই।নতুবা এই গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়তেই পারে।
পুরুষ নারীর কর্তা। এ জন্য যে, আল্লাহ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা আনুগত্যপরায়ণ হয় এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজত ও তত্বাবধানে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে।
(নিসা:৩৪.)
#সম্পর্কে সহনশীলতা র কোন বিকল্প নেই।দুজনকেই দুজনের দূর্বলতা,অক্ষমতা,ফিতরাতের ব্যপারে সহনশীল আচরণ করতে হবে।
#বাস্তব জীবনে শুধু শিশুরা নয় আমরা বড়রাও অনুকরণ প্রিয়।প্রত্যেকে তার মা বাবার মত হতে চায়।কথা বার্তা,চালচলন এমনকি দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনের পদ্ধতিও একইভাবে অনুসরনীয় হয়।তাই মা বাবা হয়ে সেই আদর্শ ই স্থাপন করা উচিৎ যা আমার ছেলে মেয়ে আমার সাথে করলে কোন ক্ষতি হবেনা,বা তখন তাকে সংশোধন করা দরকার হবেনা।
# অধিকার সচেতন হওয়ার চেয়ে স্বামী স্ত্রী দুজনের ই কর্তব্য সচেতন হওয়া ভাল।
# অধিকাংশ দাম্পত্য কলহের মূল কারণ অন্যের সাথে নিজের স্ত্রী বা স্বামীকে তুলনা করা,পরশ্রীকাতর হওয়া অতঃপর মনের মধ্যে অতৃপ্তি রাখা যে আমি অনেক কষ্টে আছি।সব ছেলে একরকম হয়না,সব মেয়েও একরকম না।কিন্তু যেহেতু এই জুটি টা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত তাই আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে আমাদের শান্তির মূল চাবিকাঠি টা আমাদের জীবনসঙ্গীর কাছেই আছে।অন্য চাবি স্বর্ণে তৈরি হলেও আমার ঘরের শান্তির দরজা খুলবেনা।আমার নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করতে হবে যে আমি সঠিক জীবনসঙ্গী পেয়েছি।নিজের সর্বোচ্চ মেধা আর শ্রম দিয়ে তাকেও প্রমাণ করে দিতে হবে যে আমিই তার জন্যে সবচেয়ে প্রশান্তি দায়ক ব্যক্তি।
# সবশেষ মূলনীতি, দুনিয়া আমার লক্ষ্যবস্তু নয়,দুনিয়ার সাফল্য ব্যার্থতা আমার জীবনের সাফল্যের মাপকাঠি নয়।তাই তাকাসুর বা বেশি বেশি পাওয়ার লোভ যেন আমাকে বা তাকে গ্রাস করতে না পারে তাই নিজেদের চাহিদা কে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সন্তান কেও সেইভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন পাওয়া যাবে বলেই চাইতে হবে এই প্রবনতা তৈরি না হয়।
আল্লাহ স্বামী স্ত্রী কে জুটি বেধে দিয়েছেন একসাথে জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য।সারাজীবন সুখে থেকে বিলাসিতায় কাটিয়ে কোন লাভ নেই যদি জান্নাতে আপনি এক ঘরে,আপনার জীবনসঙ্গী অন্য জান্নাতের অন্য ঘরে থাকেন।অনন্ত জীবনে যেন একসাথে এক ঘরে থাকা যায় তাই আমাদের উচিৎ নেক কাজে সহযোগী হওয়া,দুনিয়া বিমুখ হয়ে পরকাল মুখী কাজ বেশি বেশি করা,দুইজন দুইজনকে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক আদায়ে সহযোগিতা করা। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারকে কবুল করুন।আমীন।