banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!


রাউফুন নাহার


নিচের কোন বিবৃতিটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

১। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা; করোনা আমার কিছুই করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনধারা অব্যাহত রেখেছি।

২। আমি মানসিক চাপ বোধ করছি, তাই আমার এবং অন্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছি।

৩। আমার দমবন্ধ লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না; করোনার ভয়ে আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে।

যাদের অবস্থান ২ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্লিজ চালিয়ে যান। যাদের অবস্থান ১ বা ৩ তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা নিন এবং লেখাটি পড়তে থাকুন।
প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি যে একজন মানসিক স্বাস্থকর্মী হয়েও আপনাকে অভয় দিয়ে বলতে পারছি না, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি!’ বরং বলব আতঙ্কের ঘটনাতেও আতঙ্কিত না হওয়া মনোঃসামাজিক সমস্যার লক্ষণ। হ্যা, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতই। আর এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভয় ও মানসিক চাপ আমাদের সচেতন হতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সহযোগিতা করবে। ভয় বা মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত কম, বা অতিরিক্ত বেশি কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন, ভয় না থাকা বা ভয়ের মাত্রা একেবারেই কম থাকার কারনেই মূলত এমন দুর্যোগের সময়েও অনেকেই নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করছে না এবং মনের আনন্দে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আক্রান্ত হবার এবং অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আনন্দে থাকা ভুল কিছু নয়, বরং এটি আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির ভেতরে আনন্দ করাটাই শ্রেয়।
আবার যারা অনেক বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত তাদের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকলেও হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তার ফলে ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের মত মৌলিক কাজগুলোও ব্যাহত হচ্ছে৷ আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং শরীর ও মনের যত্নের অভাব এই দুই কারণে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে তখন শুধু করোনা কেন, যেকোন রোগই পেয়ে বসবে। করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক আচরণগুলোর মধ্যে তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা এসবও পড়ে। যেন যেকোনো রোগ বা ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার সাথে যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে।

এখন কথা হলো অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা কমাবো কি করে? সেক্ষেত্রে কিছু টিপ্স শেয়ার করছি৷

১.
প্রথম ধাপঃ যখন ভয় বা দুশ্চিন্তা বা অন্য যেকোন ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হবে, শান্ত হয়ে কোথাও বসে বা শুয়ে পড়ব। শরীরের কোন কোন অংশে খারাপ বা অস্বস্তি লাগছে খেয়াল করব। কারণ আমাদের অনুভূতিগুলো শরীরেই ভর করে। যেমন, মাথা ঝিমঝিম করছে কি-না, ঘাড় বা চোয়াল বা শরীরের অন্য কোন অংশ শক্ত হয়ে আছে কি-না, বুক ধরফর করছে কি-না খেয়াল করব। অর্থাৎ শরীরের যে অংশটায় কিছুটা হলেও অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগছে যেখানেই ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিটের মত মনোনিবেশ করব।

দ্বিতীয় ধাপঃ গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো ও ছাড়বো। যেভাবে ধীরে ধীরে ফুলের ঘ্রান নেই যেভাবে শ্বাস নেবো, তারপর মোমবাতিতে ফু দেয়ার মত করে ধীরে ধীরে ছাড়বো। এভাবে ৫-১০ জোড়া শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেই ব্রেইনে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন চলে যাবে এবং অস্থিরতা কমে আরাম লাগতে শুরু করবে।

তৃতীয় ধাপঃ পানি পান করা। ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করলে মুখ ও কণ্ঠনালীসহ শরীরে একটা শীতল ভাব আসবে। যাদের ভয়, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার প্রবনতা বেশি তারা সবসময়ই পানির পাত্র বা বোতল সাথে রাখুন। গলা শুকিয়ে গেলেই এক দুই চুমুক করে পানি পান করুন।

চতুর্থ ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসার কথা। কেমন বোধ করছেন খেয়াল করুন। এই মুহুর্তে আপনার চাহিদা কি খেয়াল করুন। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হতে পারে ‘নিরাপত্তা’ বা ‘সুরক্ষা’। এবার ভাবুন নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের গাইডলাইনগুলো মেনে চলা এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াই হতে পারে উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ।


সারাক্ষণ ফেইসবুক বা টেলিভিশণে করোনা সংক্রান্ত নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। একটি সময় নির্ধারণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত সময়েই করোনা সম্পর্কিত খবর নিন। বাকি সময়ে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলোতে মনোনিবেশ করুন। পেশাগত কারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন


জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের হাতে কিছু অপশন বা বিকল্প থাকে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে চারদিকে ঘোরাফেরা করে নিজেকে ও অন্যদেরকে বিপদের মুখে ফেলবেন, করোনার ভয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে হা হুতাশ করবেন, নাকি নিজের মানসিক চাপকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে শরীর-মনের যত্ন নেবেন ও সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।