banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি

চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি


ফাতেমা শাহরিন


ইদানীং বসে বসে, শুয়ে শুয়ে, ঘুমন্ত অবস্থায় এমনকি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি আমি। তবে আজকের স্বপ্নটা আমার, একদমই অন্যরকম। কিছুদিন আগে একটা বই পড়লাম অন্যরকম গল্পগুলো ঐ বইতে কিছু মজার মজার আইডিয়া দেওয়া হয়েছে। একটা আইডিয়া নিয়ে তো আমার বড় বোন স্কুলের শিক্ষিকা ওকে বললাম। যে তুমি তো তোমার ক্লাসের স্টুডেন্টকে চাইলে বলতে পারো যে ডিসেম্বরে যখন ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবে। সবাই ওদের পুরানো বই, খাতা আর কলম, পেন্সিলগুলো তোমার কাছে জমা দিবে। এর জন্য তুমি সবাইকে চকলেট গিফট করবা। এরপর সব বাসায় আনবা। আমরা খাতা থেকে যে পেজে লেখা নাই তা নিয়ে নতুন কিছু খাতা বানিয়ে আমাদের আশেপাশের পথস্কুল বা এতিমখানার বাচ্চাদের খাতা বানিয়ে দিতে পারি।

আরে আজকের স্বপ্নটা বেশি মারাত্মক। শুনুন আপনিও প্রশংসা করবেন। এই যে রাস্তাঘাটে যে সব অসহায়, ফকির বলছি বা রিকসা চালক বা ছোট ছোট ব্যবসা করা মানুষ রাস্তার ধারে ঘুমান। একটা ছোট্ট নির্দেশনা দিয়েছে, আমি টিভির খবর দেখি না শুধু নিচে লেখা আর বেকিং নিউজ পড়ি। লেখাটা দেখলাম বেকিং নিউজে। গুলশান, বারিধারা গুলিস্তান উত্তরা, আর কমলাপুর এলাকার প্রায় ২৫ টি মসজিদকে ধর্মমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে ১০ টি মসজিদে ১৪ দিনের জন্য পথে থাকা মেয়ে মানুষরা থাকবে। আর বাকী ১৫ টায় ছেলে মানুষরা থাকবে আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের দুবেলা দু-মুটো ভাত দেবার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ওয়াদা করেছেন ধর্মমন্ত্রী যে, যে সকল মসজিদে ওনারা থাকবেন তা ভালো ভাবে গোসল করে জনগণের কাছে তুলে দিবেন।
আমি দেখছি বিশাল বিশাল মসজিদ গুলোতে ঢুকার সময় মেয়েরা পর্যন্ত গোসল করে পরিষ্কার হয়ে ঢুকছে। নিজেদের দেওয়া জায়গাটাতে আরাম করে বসেছেন। কেউ কেউ ফ্যানের বাতাসে নিজের চুল শুকাচ্ছেন। কেউবা আপন মনে আল্লাহকে ডাকছে আবার আবার কেউ কেউ ভগবানকেও ডাকছে। ওখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টানের ভেদাভেদ নেই। সবাই আল্লাহর কাছে দুআ করছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলো মনে হয় দেশটা। আমার চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি।

 

বিনামূল্যে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা

বিনামূল্যে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা


স্বাস্থ্যকথা


সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত আমরা আছি অনলাইন ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। আমাদের টিমে আছে কাউন্সেলিং সাইকোলজি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, এডুকেশনাল সাইকোলজি, সাইকোলজি, ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণ ও সেবাগ্রহীতার চাহিদার ভিত্তিতে পরবর্তীতে সেবার সময়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।

সময় এখন সচেতন থাকার, দুরে থেকেও কাছে থাকার, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার, আসন্ন মানসিক রোগকে প্রতিরোধ করার।

বিস্তারিত পেজে…
আমাদের সেবা সমুহ:
১। অডিও কলের মাধ্যমে সাপোর্ট
২। ভিডিও কলের মাধ্যমে সাপোর্ট
৩। লিখিত বার্তার মাধ্যমে সেবা (চ্যাট)
৪। সচেতনতা ও মনোসামাজিক শিক্ষামূলক কন্টেন্ট
৫। প্রশ্ন উত্তর এর মাধ্যমে সাপোর্ট।

বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত যেকোন বাংলা ভাষাভাষী আমাদের এই ফ্রি সেবা সমুহ নিতে পারেন।

সেবার জন্য ফর্মটি ফিলাপ করতে হবে: https://forms.gle/ra2Bva4Jf5eSLfi99

অথবা কল করতে পারেন এই নাম্বারগুলো তে 01515625217, 01730443737

আমরা আপনাকে যুক্ত করে দিব একজন মানসিক সহায়তা বিশেষজ্ঞের সাথে।

#covid19 #mentalhealtmatters #crisissupport #imsteam

 

নারী নির্যাতন: ভালোবেসে বিয়ে, অতঃপর পরকীয়া-নির্যাতন সত্ত্বেও কেন মানিয়ে চলা?

নারী নির্যাতন: ভালোবেসে বিয়ে, অতঃপর পরকীয়া-নির্যাতন সত্ত্বেও কেন মানিয়ে চলা?


নারী সংবাদ


নিজ পরিবারেই নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।আয়েশা আক্তার (ছদ্মনাম)। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী বিশ বছর আগে ভালোবেসে যাকে বিয়ে করেছিলেন, ১৫ বছর পর সেই ভালোবাসার মানুষেরই ভিন্ন এক রূপ আবিস্কার করেন তিনি।

মিসেস আক্তারের ভাষায়, তার ‘সুখের সংসার’ হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে যায়। কারণ, তার স্বামী অফিসের এক নারী কলিগের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।

“আমি হঠাৎ করেই দেখলাম প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সে শুক্রবার-শনিবারে বাইরে থাকতে শুরু করেছে।”

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবারে অনেক রাত করে বাসায় ফিরছে। আগে কখনো সে এ রকম করেনি। সংসারে ঠিকমতো খরচ দিচ্ছে না। এরপরই আমি তার পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি আবিস্কার করি।”

“একদিন তার গাড়িতে আমি নতুন একটা মোবাইল খুঁজে পাই। সেই মোবাইল দিয়ে ও লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতো। এমনকি ওরা ভায়াগ্রা ট্যাবলেট খেয়ে কিভাবে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে সেগুলোও চ্যাটিংয়ে আলোচনা করতো।”

মিসেস আক্তার বলছেন, তিনি যখন এর প্রতিবাদ করেছেন তখন থেকেই মূলতঃ তার উপর স্বামীর অত্যাচার শুরু হয়।

মারধর, গালাগালি, সংসারের খরচ বন্ধ করে দেয়াসহ নানারকম অত্যাচার হয়েছে তার উপর।

“সে পুরুষ মানুষ এবং অনেক টাকা বেতন পায়। আমি কিছুই না। সে জাস্ট এটাই বোঝায় আমাকে। এবং তার ভাবভঙ্গি হচ্ছে, আমি যা ইচ্ছা করবো, পারলে তুই কিছু করে দেখা।”

“আমি এসব কথা পরিবারকে বলেছি, ওদের পরিবারকেও বলেছি। ওরা বুঝিয়েছে, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। মামলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সবাই নিষেধ করেছে। দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো তাই নির্যাতন সহ্য করেই এখনো সংসার করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশে স্বামীর ঘরে কিংবা নিজ পরিবারে নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অবস্থা চললেও অনেকক্ষেত্রে নির্যাতিতরাই এর প্রতিবাদে খুব একটা আগ্রহ দেখান না।

কিন্তু বাংলাদেশে যেসব নারী এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান, তারাও পরিবার কিংবা সমাজকে পাশে পাচ্ছেন না ঠিক মতো।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

করোনায় আতংকিত হবেন না, দাফন কাফন করুন

করোনায় আতংকিত হবেন না, দাফন কাফন করুন


ডা. শাকিল আহমেদ


👉 ইদানিং নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে করোনা রোগে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনকাফন নিয়ে। তাই বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার।
👉 জেনে রাখুন মৃতব্যক্তির দাফনে করোনা ছড়ানোর কোনই সম্ভাবনা নেই। কথাটা ১০০% সত্য। করোনা ছড়ায় মানুষের শ্বাস কাশ আর তার সিক্রেশন থেকে। কাফনে জড়ানো মৃতব্যক্তি শ্বাসও নেয় না, তার সিক্রেশনও কোথাও থাকে না। দাফন করে দিলে মৃত ব্যক্তির শরীরের সব ভাইরাসও মরে যাবে। তাই লাশ দাফন ১০০% নিরাপদ। তবে সামান্য ঝুঁকি থাকে লাশ গোসল দেওয়ার সময়। তাও জীবিত শ্বাসকষ্ট জনিত রুগীর তুলনায় ০১% ও নয়। তার কারন মৃত ব্যক্তি শ্বাস নেয় না তাই সে বাতাসে জীবানু ছড়ায় না। কেবল মৃত্যুর পর যদি তার নাক থেকে সিক্রেশন বের হতে থাকে বা গায়ে তা লেগে থাকে তাহলে তা ইনফেকটিভ। তাই গোসল করানোর সময় গ্লভস সহ ফুল পিপিই পড়ে সাবান দিয়ে ডলে গোসল করালে আর প্রয়োজনে নাকে তুলো দিয়ে দিলে আর কোন ঝুঁকি থাকে না। কেবল গোসল শেষে পুরো জায়গা ব্লিচিং সল্যুশন দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে আর যিনি গোসল করাবেন তিনি সাবান দিয়ে নিজে গোসল করে নিবেন। ব্যস হয়ে গেল ১০০% নিরাপদ কাফনে জড়ানো মৃতদেহ। এটা এখন যে কোন জায়গায় দাফন করতে কোন সমস্যা নেই। মনে রাখবেন এর চেয়ে হাজার গুন অনিরাপদ হচ্ছে রুগীর ওরো ফ্যারিঞ্জিয়াল আর নেসোফ্যাঞ্জিয়াল সোয়াব সংগ্রহ, সিভিয়ার নিউমোনিয়ার রুগীকে ইন্ট্যুবেট করা, সাকশান দেওয়া বা ব্রংকিয়াল টয়লেটিং করা যা পৃথিবীর বহু চিকিৎসক হরহামেশাই ঝুঁকি নিয়ে করে যাচ্ছেন।
অতএব আতংকিত হবেন না। নিজের আপনজনকে নিরাপদে স্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিয়ে দাফন কাফন করুন।
👉 তবে খেয়াল রাখবেন যে জীবিত অবস্থায় যারা রুগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের মধ্যে করোনা আগেই সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে তাই তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন এবং লাশ দাফনকাফনে কোন ভাবেই জড়াবেন না। অন্যদের লাশ দাফনে কোন সমস্যা নেই।
👉 অযথা ভীত হবেন না। নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
.
Dr. Shakeel Ahmed Sir (Assistant Professor, microbiology, CMC)

 

করোনা ভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!

করোনা ভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!


রাউফুন নাহার


নিচের কোন বিবৃতিটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

১। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা; করোনা আমার কিছুই করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনধারা অব্যাহত রেখেছি।

২। আমি মানসিক চাপ বোধ করছি, তাই আমার এবং অন্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছি।

৩। আমার দমবন্ধ লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না; করোনার ভয়ে আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে।

যাদের অবস্থান ২ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্লিজ চালিয়ে যান। যাদের অবস্থান ১ বা ৩ তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা নিন এবং লেখাটি পড়তে থাকুন।

প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি যে একজন মানসিক স্বাস্থকর্মী হয়েও আপনাকে অভয় দিয়ে বলতে পারছি না, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি!’ বরং বলব আতঙ্কের ঘটনাতেও আতঙ্কিত না হওয়া মনোঃসামাজিক সমস্যার লক্ষণ। হ্যা, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতই। আর এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভয় ও মানসিক চাপ আমাদের সচেতন হতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সহযোগিতা করবে। ভয় বা মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত কম, বা অতিরিক্ত বেশি কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন, ভয় না থাকা বা ভয়ের মাত্রা একেবারেই কম থাকার কারনেই মূলত এমন দুর্যোগের সময়েও অনেকেই নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করছে না এবং মনের আনন্দে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আক্রান্ত হবার এবং অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আনন্দে থাকা ভুল কিছু নয়, বরং এটি আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির ভেতরে আনন্দ করাটাই শ্রেয়।

আবার যারা অনেক বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত তাদের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকলেও হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তার ফলে ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের মত মৌলিক কাজগুলোও ব্যাহত হচ্ছে৷ আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং শরীর ও মনের যত্নের অভাব এই দুই কারণে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে তখন শুধু করোনা কেন, যেকোন রোগই পেয়ে বসবে। করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক আচরণগুলোর মধ্যে তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা এসবও পড়ে। যেন যেকোনো রোগ বা ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার সাথে যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে।

এখন কথা হলো অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা কমাবো কি করে? সেক্ষেত্রে কিছু টিপ্স শেয়ার করছি৷

১.
প্রথম ধাপঃ যখন ভয় বা দুশ্চিন্তা বা অন্য যেকোন ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হবে, শান্ত হয়ে কোথাও বসে বা শুয়ে পড়ব। শরীরের কোন কোন অংশে খারাপ বা অস্বস্তি লাগছে খেয়াল করব। কারণ আমাদের অনুভূতিগুলো শরীরেই ভর করে। যেমন, মাথা ঝিমঝিম করছে কি-না, ঘাড় বা চোয়াল বা শরীরের অন্য কোন অংশ শক্ত হয়ে আছে কি-না, বুক ধরফর করছে কি-না খেয়াল করব। অর্থাৎ শরীরের যে অংশটায় কিছুটা হলেও অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগছে যেখানেই ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিটের মত মনোনিবেশ করব।

দ্বিতীয় ধাপঃ গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো ও ছাড়বো। যেভাবে ধীরে ধীরে ফুলের ঘ্রান নেই যেভাবে শ্বাস নেবো, তারপর মোমবাতিতে ফু দেয়ার মত করে ধীরে ধীরে ছাড়বো। এভাবে ৫-১০ জোড়া শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেই ব্রেইনে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন চলে যাবে এবং অস্থিরতা কমে আরাম লাগতে শুরু করবে।

তৃতীয় ধাপঃ পানি পান করা। ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করলে মুখ ও কণ্ঠনালীসহ শরীরে একটা শীতল ভাব আসবে। যাদের ভয়, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার প্রবনতা বেশি তারা সবসময়ই পানির পাত্র বা বোতল সাথে রাখুন। গলা শুকিয়ে গেলেই এক দুই চুমুক করে পানি পান করুন।

চতুর্থ ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসার কথা। কেমন বোধ করছেন খেয়াল করুন। এই মুহুর্তে আপনার চাহিদা কি খেয়াল করুন। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হতে পারে ‘নিরাপত্তা’ বা ‘সুরক্ষা’। এবার ভাবুন নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের গাইডলাইনগুলো মেনে চলা এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াই হতে পারে উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ।


সারাক্ষণ ফেইসবুক বা টেলিভিশণে করোনা সংক্রান্ত নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। একটি সময় নির্ধারণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত সময়েই করোনা সম্পর্কিত খবর নিন। বাকি সময়ে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলোতে মনোনিবেশ করুন। পেশাগত কারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

 ৩

জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের হাতে কিছু অপশন বা বিকল্প থাকে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে চারদিকে ঘোরাফেরা করে নিজেকে ও অন্যদেরকে বিপদের মুখে ফেলবেন, করোনার ভয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে হা হুতাশ করবেন, নাকি নিজের মানসিক চাপকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে শরীর-মনের যত্ন নেবেন ও সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

লেখকঃ রাউফুন নাহার

শিক্ষক

এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

ধর্ষণের পর খুন করে ফজরের নামাজে ইমামতি!

ধর্ষণের পর খুন করে ফজরের নামাজে ইমামতি!


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পাড়াভরট গ্রামের কিশোরী তাকমীন হত্যার তিন দিন পর মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে এ জড়িত থাকার সন্দেহে মাহফুজ ওরফে ইছামুদ্দিন (১৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
মাহফুজ উপজেলার রাওনা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।
তাকমীনের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আঠারদানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র আশিকুল হকের সঙ্গে পাড়াভরট গ্রামের আব্দুল মতিনের কিশোরী কন্যা তাকমীনের (১৬) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকুল হক নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে। তাকমীন বিয়ের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিল।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আশিকুল মোবাইল করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আঠারদানা জামে মসজিদের কাছে তাকমীনকে ডেকে নেয়। এ সময় সেখানে আগে থেকেই ছিল আশিকুলের বন্ধু পুলিশের হাতে আটককৃত মাহফুজ ও একই মাদ্রাসার ছাত্র নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের সাইদুলের ছেলে আরিফ (১৮)। সেখানে যাওয়ার পর আশিকুল তাকমীনকে ধর্ষণ করে। পরে মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও আশিকুল তার মাথার পাগড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।
আশিকুল, মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের লাশ টেনে-হিঁচড়ে মসজিদের একটি জামগাছের ডালের তাকমীনের ওড়না দিয়ে বেঁধে রাখে। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল আজান দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে আসলে ফজরের জামাতে আশিকুল ইমামতি করে। এ সময় মুসল্লিদের সাথে মাহফুজ, আরিফও নামাজ আদায় করে।

নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকমীনের লাশ জাম গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। তাকমীনের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। তার পা মাটিতে ছিল। লাশের সঙ্গে একটি মোবাইল পড়ে ছিল।
মুসল্লিরা লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলের মাধ্যমে থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে সিআইডির একটি বিশেষ টিম এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকারের নেতৃত্বে থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল মঙ্গলবার সারাদিন ঘিরে রাখে। বিকালে তাকমীনের বাবা আব্দুল মতিন বাদী অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
বৃহস্পতিবার সকালে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহসান হাবীবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহফুজকে আটক করে।
আঠারদানা জামে মসজিদের মুসল্লী ও পাড়াভরট গ্রামের খাহে আলী মন্ডল (৬৪) জানায়, ঘটনার দিন মঙ্গলবার ফজরের নামাজের আজান দেয় ও ইমামতি করে মোয়াজ্জিন আশিকুল হক। বুধবার দুপুর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
আঠারদানা জামে মসজিদের ইমাম মোজাম্মেল হক (৪৭) জানায়, ওইদিন মসজিদে যেতে দেরি হওয়ায় আশিকুল ইমামতি করে। নামাজ শেষে একটু আঁধার কাটলে মসজিদের মুসল্লিরা মসজিদের কাছে জাম গাছের ডালে বাধা একটি মেয়ের লাশ দেখতে পায় এবং লাশটি শনাক্ত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানায়।
তাকমীনের ছোট বোন সুমাইয়া (১৩) জানায়, তার বোন রাতে তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। সে গোপনে মোবাইল ব্যবহার করতো। মোবাইল ফোনটি হয়তো আশিকুলের দেয়া।
গফরগাঁও সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জানান, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। জড়িতদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে এখন বাড়তি কিছু বলা যাবে না।
সুত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল।

 

করোনা চিকিৎসায় ৪ লক্ষ ডাক্তারের পোশাক বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিলেন এক সাহসী নারী

করোনা চিকিৎসায় ৪ লক্ষ ডাক্তারের পোশাক বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিলেন এক সাহসী নারী


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় ডাক্তারেরকে ৪ লক্ষ পোশাক বিনামূল্যে সহায়তা কারী স্বপ্না ভৌমিক বৈশ্বিক মহামারী হয়ে আবির্ভূত করোনার বিপর্যয় বাংলাদেশে ছোবল হানার আগে অন্তত ত্রিশদিন সময় ছিল নুন্যতম প্রস্তুতি নেবার। রাষ্ট্রের গলাবাজ’রা সে অমূল্য সুযোগ নেননি।

আজ প্রয়োজনের মুহূর্তে Personal Protective Equipment (PPE) নেই। গ্লাভস নেই, মাস্ক নেই কিছু নেই। নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়া নার্স ও ডাক্তারসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত মানুষগুলোকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে কুমিরের সাথে লড়তে বলা হচ্ছে আজ! আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে । আর সেই নিরাপত্তা নিশ্চিতের মতো মহত্তম কাজে এগিয়ে এলেন প্রথম মানুষ স্বপ্না ভৌমিক নামে এক নারী । তিনি মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর।

আজ থেকে মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের Garments Products সরবরাহের সাথে যুক্ত কারখানাগুলো Personal Protective Equipment (PPE) বানানো শুরু করেছে। আগামী এক পক্ষকালের আগেই নুন্যতম ৪ লাখ PPE বিনামূল্যে সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে এটি। পোশাকের নকশা করে দিয়েছে BUET ALUMNI.

আজ আবারও প্রমাণ হল , দিনশেষে আপাময় মানুষের প্রয়োজনে মানুষই এগিয়ে আসে। মাত্র একুশ দিন পূর্বে এই অসামান্য মানুষটির “মা” সাধনা ভৌমিক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনির অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। স্বপ্না ভৌমিকের নেয়া সাহসী পদক্ষেপ, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের কল্পনার অতীত সাহস যোগাবে সন্দেহ নেই। ৪ লাখ Personal Protective Equipment (PPE) রুখে দেবে অন্তত ২ লাখ সম্ভাব্য সংক্রমণ।

করোনা’র মতো মহামারী ইতোপূর্বে আমরা দেখিনি। এ শুধু জনস্বাস্থ্যের হুমকি নয়, জীবন ও মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রতিটি খাত’কে স্থবির করার সক্ষমতা রাখে। করোনা’র বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ শুধুমাত্র রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের নয়। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক এবং প্রতিটি পৃথিবীবাসীর।
প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, সামান্য ভুলের কারণে অগণিত মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলবার অধিকার কারও নেই। জন্মভুমি ও পৃথিবীর ক্রান্তিকালে আমরা ঐক্যে অটল থাকবো। আমাদের সম্মিলিত চেষ্টাই পরাজিত করবে এমন দুর্যোগ।

 

ঝাল মাংস পুলি বানাবেন যেভাবে

ঝাল মাংস পুলি বানাবেন যেভাবে


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ২ কাপ মাংস সেদ্ধ,
২. ১ কাপ আলু কুচি করে সেদ্ধ করা,
৩. ১ চা চামচ কাবাব মসলা,
৪. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৫. ৫/৬ টি মরিচ কুচি,
৬. আধা চা চামচ আদা-রসুন বাটা,
৭. লবন স্বাদমতো,
৮. টেস্টিং সল্ট সামান্য,
৯. তেল ভাজার জন্য,
১০. ২ কাপ ময়দা,
১১. ২ চিমটি কালোজিরা,
১২. পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি
> পুর তৈরির জন্য একটি প্যানে সামান্য তেল দিয়ে গরম করে এতে আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন। ঘ্রাণ ছড়ালে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নেরে নরম করে নিন। এরপর মরিচ কুচি ও বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে কষে নিন।

> মসলা কষে এলে সেদ্ধ মাংস একটি পিষে দিয়ে দিন যাতে আঁশ আলাদা হয়। ভালো করে নেড়ে নিয়ে সেদ্ধ আলু কুচি দিয়ে ভালো করে নেরে ভাজা ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

> ময়দা সামান্য তেল দিয়ে খাস্তা করে নিয়ে লবন ও কালি জিরা দিয়ে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে রুটি বেলার ডো তৈরি করে নিন। এরপর পাতলা ছোট রুটি তৈরি করে মাঝে পুর দিয়ে দুভাজ করে অর্ধচন্দ্রের মতো তৈরি করে দুপাশ আটকে দিন।

> কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল গরম করে লালচে করে ভেজে তুলুন। কিচেন টিস্যুর উপরে তুলে রেখে বাড়তি তেল শুষে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন গরম গরম।

রেসিপি : প্রিয়.কম

 

করোনা সংকটে গর্ভবতী মায়েদের বলছি…

করোনা সংকটে গর্ভবতী মায়েদের বলছি……….


ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা


দেশের এই সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সংকটে আছি আমরা ডাক্তাররা, পেশাগত কারণে। কিন্তু সাধারন জনগণের মধ্যে বাচ্চা এবং বৃ্দ্ধের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন আপনারা গর্ভবতীরা। গর্ভকালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই সময় যেকোন ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কা সাধারনের চেয়ে ৫.৭ গুন বেশি। জটিল কোন প্রবলেম না থাকলে এক দু’মাস চেকআপ না করালে আপনার তেমন ক্ষতি হবে না। বরং চেকআপ করতে গিয়ে চেম্বার, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল থেকে আপনি নিয়ে যেতে পারেন ভাইরাস।

চেকআপের ডেট আছে। কি করবেন?

অসুবিধা নেই। এটা আদালতের দেয়া ডেট না। না আসলে আপনাকে পুলিশ গিয়ে ধরে নিয়ে এসে জেলে পুরবে না।
তাহলে কি করবেন?
১)আগের প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলোই চালিয়ে যান।
২)বাসায় প্রেসার মাপা মেশিন থাকলে মাঝে মাঝে নিজেরাই প্রেসার চেক করুন ।
৩)বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখুন।
৪)ওজন বাড়ছে কি না খেয়াল রাখুন। বাসায় ওজন মাপার মেশিন থাকলে প্রতি মাসে ওজন দেখে নিন।
৫)নতুন কেন সমস্যা দেখা দিলে বা কোন অসংগতি মনে হলে ফোনে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
৬)সকল সামাজিকতাকে পাশ কাটিয়ে একা একা নিজের মত থাকুন। আপনার সঙ্গে তো একজন আছেই সবসময়। আপনার ভবিষ্যত সন্তানের সাথে কথা বলুন। তার সুরক্ষার জন্য নিজেকে আড়ালে রাখুন।
৭)প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই ঘরের বাইরে যাবেন না।
৮)মাঝে মাঝে হাত-মুখ সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। বারবার মুখে-চোখে হাত দিবেন না।
৯)বাইরে থেকে কেউ আসলে সে পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত দুরত্ব রক্ষা করে চলুন।
১০)হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার নিজে মেনে চলুন। এবং বাসার সকলকে এটি মনে চলতে বাধ্য করুন।
১১)বাড়ীতে কারো সর্দি-কাশি হলে তাকে কিছুটা আলাদা করে রাখুন। কোনভাবেই তার কাছাকাছি যাবেন না। এমনকি আপনার বাচ্চা হলেও না। তাকে পরিবারের অন্য কোন সদস্যের কাছে দেখভালের জন্য রাখুন।
১২)আপনার সর্দি-কাশি হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ফোনে আপনার ডাক্তারকে উপসর্গগুলো জানান। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ পথ্য খান।

কোভিড১৯ যেহেতু একটি নতুন সংক্রমন, এই সম্পর্কে জানি আমরা অল্পকিছুই। আমরা এখনও জানিনা, আপনি এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনার গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কি না বা সে এই সংক্রমন বহন করবে কি না! তবে অল্প কিছু গর্ভবতীর সময়ের পূর্বেই ডেলিভেরি হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। সেটির সঠিক কারন জানা যায়নি।

ডেলিভেরির সময় কি করবেন?

আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নির্দিষ্ট হাসপাতালে ডেলিভেরি করান। তবে সংক্রমন এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
ডেলিভেরির সময় বা পরে আত্মীয়-স্বজনের ভিজিট প্রত্যাহার করুন। বাচ্চা দেখতে চাইলে ছবি তুলে অনলাইনে পাঠিয়ে দিন কিংবা সেটি সম্ভব না হলে সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তাদের অপেক্ষা করতে বলুন। বাচ্চা একটু দেরি করে দেখলে মহাভারত শুদ্ধ বা অশুদ্ধ কোনটাই হবে না। বরং এই মুহূর্তে আপনার এবং বাচ্চার শুদ্ধ থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন কি না ?

ভাইরাসটি নতুনভাবে সনাক্ত হওয়ার কারণে এ সম্পর্কে আমরা জানিনা যে এটি বুকের দুধের মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে কি না! তবে যেহেতু বুকের দুধ বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আপনারা বুকের দুধ নিয়মমতোই খাওয়াবেন। তবে বাচ্চাকে স্পর্শ করার পূর্বে নিয়ম মেনে হাত পরিষ্কার করে নিবেন ।অযথা বাচ্চার চোখে-মুখে বা শরীরে হাত দিবেন না।

একটা বিষয় মনে রাখবেন, যেকোন নতুন রোগ বা সংক্রমন হলে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণালব্ধ ফল পেতে সময় লাগে। অল্প কিছু স্যাম্পল পরীক্ষা করে এমনিয়োটিক ফ্লুইড(বাচ্চার থলিতে থাকা পানি) এবং বুকের দুধের মধ্যে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই দুই মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় না এটা নিশ্চিত করে বলতে আরও গবেষণা আবশ্যক, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কাজেই আমরা সবটাকেই আমলে নিয়ে সাবধানে থাকবো।

ভাল থাকুন সন্তানধারী সকল মা এবং তাদের সন্তানেরা।

ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা
এমবিবিএস; এফসিপিএস(অবস্ এন্ড গাইনী), ফিগো ফেলো(ইটালী)
গাইনী বিশেষজ্ঞ
বগুড়া।
২১/০৩/২০২০ ইং।

 

তিরস্কারমূলক শব্দ যেভাবে জব্দ করে নারীকে

তিরস্কারমূলক শব্দ যেভাবে জব্দ করে নারীকে


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা কতটা হয়?

আদালতে আড়াই মাসের শিশু, আইন বদলানোর আদেশ

‘দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো তাই নির্যাতন সহ্য করেই সংসার করে যাচ্ছি’
‘নিজের পরিবারই পক্ষে ছিল না’

তামান্না নুপুর নামে আরেকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়। বছরের পর বছর স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তিন বছর আগে তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন।

এখন গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

তামান্না নুপুর জানাচ্ছেন, বিয়ের পর থেকেই পাঁচ বছর ধরে তিনি স্বামীর পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ছোটখাট বিষয়ে কিংবা কারণে-অকারণে তাকে মারধোর করা হতো।

সিগারেট দিয়ে একাধিকবার তার শরীরে ছ্যাকা দেয়ার ঘটনাও আছে।

“ওদের আসলে আমাকে ভালো লাগতো না কোন কারণে। এজন্যই অত্যাচারের অজুহাত খুঁজতো। বাসায় জানাইছি। তারা বলে, সহ্য করো।”

মিজ নুপুর বলছেন, “কতদিন আর সহ্য করবো? যখন মাত্রা ছাড়ায় গেলো, শশুরবাড়ির সবাই নির্যাতন করতে শুরু করলো তখন আর থাকতে পারলাম না। নিজের সিদ্ধান্তেই তালাক দেই। আমার নিজের পরিবার বলছে, তারা আমার দায়িত্ব নিতে পারবে না।”
পরিবার থেকে সাহস না পেয়ে স্বামীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেননি তামান্না নুপুর।
তামান্না নুপুর বলছেন, তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা-মা রাজি হননি।

“বাবা বললো, মামলা করে কী হবে? দরকার নাই। এখন পরিবার যদি হেল্প না করে, তাহলে আমার একার পক্ষে তো সম্ভব না। আমি তো থানা-পুলিশের ব্যাপার কিছুই বুঝি না।”

বাংলাদেশে পরিবারের মধ্যে বিশেষত: স্বামীর মাধ্যমে নারী নির্যাতনের যে চিত্র তা বেশ ভয়াবহ।

শারীরিক, মানসিক, আর্থিকসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের মধ্যেই দিনের পর দিন অনেকেই জীবন পার করলেও এ নিয়ে অভিযোগ বা প্রতিবাদের চিত্র খুব একটা দেখা যায় না।

এ নিয়ে সচেতনতাও কম। আবার নিজ পরিবারেও নির্যাতনের মুখে পড়েন অনেকে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নারী নির্যাতনের চিত্র নিয়ে যে জরিপ প্রকাশ করে সেখানে দেখা যায় বাংলাদেশে ৭২.৬ শতাংশ বিবাহিত নারীই কোন না কোনভাবে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন।

এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের হার ৪৯.৬ শতাংশ।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, যারা নির্যাতনের শিকার হয় তাদের ৭২.৭ শতাংশই নির্যাতনের ঘটনা বাইরের কাউকে বলেন না।

আর থানা-পুলিশ পর্যন্ত অভিযোগ পৌঁছান মাত্র ১.১ শতাংশ নির্যাতিত নারী।

অর্থাৎ বেশিরভাগই মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি কেন হলো?

সুত্রঃ বিবিসি।

 

নারী উদ্যোক্তা নাঈমার শাড়ি এখন বিদেশেও যাচ্ছে

নারী উদ্যোক্তা নাঈমার শাড়ি এখন বিদেশেও যাচ্ছে


ক্ষুদ্র উদ্দ্যোক্তা


নাঈমা সুলতানা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিণী। এখন তার কোটি টাকার ব্যবসা। মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড় তা বাস্তবে দেখিয়েছেন নাঈমা। আগে সাধারণ পাঁচটা গৃহবধূ হয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেও এখন তিনি আয় করেন, পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও থাকে তার অবদান।
বলা যায়, নিজের বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও চিন্তার কারণে একজন সফল নারী হয়ে ওঠেছেন তিনি। তার দেখাদেখি আরও অনেকেই ছোট-ছোট উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেছেন, অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন। এক্ষেত্রে নারীদের সফল ‘আইকন’ তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা সুলতানা জানালেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আলাপ-চারিতায় উঠে এসেছে তার কাপড়ের ব্যবসা শুরু থেকে সাফল্যের দিনগুলোর কথা। বলেছেন নানা বাধা এবং তা কিভাবে মোকাবেলা করেছেন তাও।
ব্যবসা শুরুর কথা উল্লেখ করে নাঈমা বলেন, খুবই অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলাম ব্যবসা। এখন বছরে প্রায় এক কোটি টাকার ব্যবসা করি। প্রথমে ঘরে বসেই টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে অনলাইনে ব্যবসাটা শুরু করি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
আলাপে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাধার মুখে পড়ার কথাও বলেন নাঈমা। তার মতে, আসলে যাই করেন আপনি, শুরু করা কিন্তু সোজা নয়। পরিবার থেকে অনুমতি ছিল চাকরির। কিন্তু মনে ও মাথায় সব সময় ব্যবসা ঘুরতো।
‘পরিবারের লোকজন চাইতো না আমি ব্যবস্যা করি। অনেকভাবেই তাদের বুঝিয়েছি কিন্তু আমি ব্যর্থ হই। অবশেষে কিছুটা গোপনে ফেসবুকের একটি পেজের মাধ্যমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি।’
নাঈমা বলেন, আমার এক বান্ধবীর বাসা ছিলো টাঙ্গাইলে। সে প্রায়-ই তাঁতের শাড়ি নিয়ে আসতো। কারণ তার বাবার ব্যবসা ছিল শাড়ির। সেখান থেকে ১০ টা শাড়ি নিয়েই শুরু করি ব্যবসা।
‘এগুলো দুইদিনে-ই বিক্রি হয়ে যায়। এরপর আমার আগ্রহ তখন আরও বেড়ে যায়। খুবই ইন্সপায়ার্ড হই। নতুন উদ্যোমে শুরু করি আবার। তখনও সাড়া পেলাম বেশ।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যবসা তখন প্রাথমিকভাবে ভালোই চলছে। এর মাঝে সামনে ছিল বসন্ত উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ১৫০ শাড়ি বিক্রি করে ফেলি। সেই টাকা তুলে বাড়িতে জানাই বিষয়টি। এত টাকা এক সঙ্গে দেখে কেউ ভাবতেই পারেনি, আমার দ্বারা এটা সম্ভব।’
‘মোটামুটি সবাই সারপ্রাইজড। এবার সিদ্ধান্ত নিই আর চুপিচুপি নয়। তখন আর কোনো বিষয়ে না করেনি কেউ। তখন বাড়িতে বসেই শুরু হলো ব্যবসা, তবে একটু বড় পরিসরে,’ বলেন সংগ্রামী এই নারী।
প্রথমে অনলাইনেই চলতে থাকে নাঈমার শাড়ির ব্যবসা। পরবর্তীতে শোরুমও খুলেছেন তিনি। এখন অনলাইনে এবং অফলাইনে সমান তালে এগিয়ে চলেছে তার ব্যবসা। এর মাঝে দেশের বাজার পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে তার শাড়ির কদর!
বিদেশের মার্কেট ধরলেন কীভাবে? উত্তরে নাঈমা বললেন, আমার এক বান্ধবী স্বামীসহ কানাডায় থাকেন। ফেসবুকে আমি শাড়িগুলো তাকেও শেয়ার করতাম। মাঝে-মাঝে তিনি লাইক কমেন্ট করতেন।
‘২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে কানাডায় বাংলা কমিউনিটিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয় যে, মেয়েরা একই ধরনের শাড়ি পরবেন। ওই সময়ই আমার বন্ধু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার পেজে একটি শাড়ি শেয়ার করলে সেখানকার অনেকেই তা পছন্দ করেন। পরে তারা অনলাইনে অর্ডার করেন এবং টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর শাড়ি পেয়ে খুশিও হন। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অডার পাচ্ছি, শাড়িও পাঠাচ্ছি।’
বিদেশের মার্কেট ধরতে কোনো চ্যলেঞ্জ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা বলেন, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পণ্যেও ডেলিভারি। কারণ দেশে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু বিদেশে পণ্য পৌঁছাতে দিতে বড়-বড় কুরিয়ারের কাছে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, যে দামে শাড়ি কেনা হয় কুরিয়ার চার্জ কয়েকগুণ বেশি হয়। তবে এখন কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা কম দামে ভালো সার্ভিসটা দেয়।
অনলাইনে বিদেশে পণ্য বিক্রির প্রসারের বিষয়ে নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিদেশে পণ্য বিক্রির সুবিধা হচ্ছে দাম বেশি পাওয়া যায়। দেশে আমি সেল করি ২০০০ টাকা সেটাই বাহিরে করা যায় ২৫০০ টাকায়। আবার কুরিয়ার চার্জও ক্রেতাই দেন।
‘তাই বিদেশে বাঙালি অধ্যুষিত দেশে মার্কেটিং করলে সেল ভালো পাওয়া যাবে। দেখা যায় যেখানে বাঙালি আছে সেখানে একজন নিলে বাকিরা এমনই নিয়ে নেয়। অবশ্য সে দেশের মার্কেট থেকে কম দামেই পণ্য কিনতে পারেন অনলাইনে,’ যোগ করেন নাঈমা।
সু্ত্রঃ বাসস।

 

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!


রাউফুন নাহার


নিচের কোন বিবৃতিটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

১। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা; করোনা আমার কিছুই করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনধারা অব্যাহত রেখেছি।

২। আমি মানসিক চাপ বোধ করছি, তাই আমার এবং অন্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছি।

৩। আমার দমবন্ধ লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না; করোনার ভয়ে আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে।

যাদের অবস্থান ২ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্লিজ চালিয়ে যান। যাদের অবস্থান ১ বা ৩ তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা নিন এবং লেখাটি পড়তে থাকুন।
প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি যে একজন মানসিক স্বাস্থকর্মী হয়েও আপনাকে অভয় দিয়ে বলতে পারছি না, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি!’ বরং বলব আতঙ্কের ঘটনাতেও আতঙ্কিত না হওয়া মনোঃসামাজিক সমস্যার লক্ষণ। হ্যা, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতই। আর এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভয় ও মানসিক চাপ আমাদের সচেতন হতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সহযোগিতা করবে। ভয় বা মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত কম, বা অতিরিক্ত বেশি কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন, ভয় না থাকা বা ভয়ের মাত্রা একেবারেই কম থাকার কারনেই মূলত এমন দুর্যোগের সময়েও অনেকেই নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করছে না এবং মনের আনন্দে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আক্রান্ত হবার এবং অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আনন্দে থাকা ভুল কিছু নয়, বরং এটি আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির ভেতরে আনন্দ করাটাই শ্রেয়।
আবার যারা অনেক বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত তাদের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকলেও হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তার ফলে ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের মত মৌলিক কাজগুলোও ব্যাহত হচ্ছে৷ আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং শরীর ও মনের যত্নের অভাব এই দুই কারণে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে তখন শুধু করোনা কেন, যেকোন রোগই পেয়ে বসবে। করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক আচরণগুলোর মধ্যে তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা এসবও পড়ে। যেন যেকোনো রোগ বা ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার সাথে যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে।

এখন কথা হলো অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা কমাবো কি করে? সেক্ষেত্রে কিছু টিপ্স শেয়ার করছি৷

১.
প্রথম ধাপঃ যখন ভয় বা দুশ্চিন্তা বা অন্য যেকোন ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হবে, শান্ত হয়ে কোথাও বসে বা শুয়ে পড়ব। শরীরের কোন কোন অংশে খারাপ বা অস্বস্তি লাগছে খেয়াল করব। কারণ আমাদের অনুভূতিগুলো শরীরেই ভর করে। যেমন, মাথা ঝিমঝিম করছে কি-না, ঘাড় বা চোয়াল বা শরীরের অন্য কোন অংশ শক্ত হয়ে আছে কি-না, বুক ধরফর করছে কি-না খেয়াল করব। অর্থাৎ শরীরের যে অংশটায় কিছুটা হলেও অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগছে যেখানেই ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিটের মত মনোনিবেশ করব।

দ্বিতীয় ধাপঃ গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো ও ছাড়বো। যেভাবে ধীরে ধীরে ফুলের ঘ্রান নেই যেভাবে শ্বাস নেবো, তারপর মোমবাতিতে ফু দেয়ার মত করে ধীরে ধীরে ছাড়বো। এভাবে ৫-১০ জোড়া শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেই ব্রেইনে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন চলে যাবে এবং অস্থিরতা কমে আরাম লাগতে শুরু করবে।

তৃতীয় ধাপঃ পানি পান করা। ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করলে মুখ ও কণ্ঠনালীসহ শরীরে একটা শীতল ভাব আসবে। যাদের ভয়, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার প্রবনতা বেশি তারা সবসময়ই পানির পাত্র বা বোতল সাথে রাখুন। গলা শুকিয়ে গেলেই এক দুই চুমুক করে পানি পান করুন।

চতুর্থ ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসার কথা। কেমন বোধ করছেন খেয়াল করুন। এই মুহুর্তে আপনার চাহিদা কি খেয়াল করুন। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হতে পারে ‘নিরাপত্তা’ বা ‘সুরক্ষা’। এবার ভাবুন নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের গাইডলাইনগুলো মেনে চলা এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াই হতে পারে উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ।


সারাক্ষণ ফেইসবুক বা টেলিভিশণে করোনা সংক্রান্ত নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। একটি সময় নির্ধারণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত সময়েই করোনা সম্পর্কিত খবর নিন। বাকি সময়ে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলোতে মনোনিবেশ করুন। পেশাগত কারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন


জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের হাতে কিছু অপশন বা বিকল্প থাকে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে চারদিকে ঘোরাফেরা করে নিজেকে ও অন্যদেরকে বিপদের মুখে ফেলবেন, করোনার ভয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে হা হুতাশ করবেন, নাকি নিজের মানসিক চাপকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে শরীর-মনের যত্ন নেবেন ও সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬


নারীর জন্য আইন


নীচের ছকে স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থান ও হিস্সা দেখানো হল।

ছক নং ৩.

স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থানের উদাহরণ: [সকলের ঐক্যমত্য অনুসারে] :

১২         ১২                    মা.        তা.             সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা      স্বামী                   মাতা                          পিতা               ছেলে ১ জন                                                             অবশিষ্ট অংশ=                  =                 =                 =  =      ৩                =  ২                  =  ২                   =  ৫=  ১,৫০,০০০ টাকা = ১,০০,০০০ টাকা =১,০০,০০০ টাকা   =২,৫০,০০০ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী এক চতুর্থাংশ অনুসারে ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা। আর অবশিষ্ট অংশে ২,৫০,০০০ টাকা ছেলে পাবে মাওলা হিসাবে। সকল ছাহাবী ও ফুকাহাগণ এ ক্ষেত্রে একমত। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে একথা দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতামত অনুসারে কন্যা সন্তানদেরকে মাওলা গণ্য করে অবশিষ্টাংশ প্রদান করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ কোন মেয়ের স্থলে ছেলে থাকলে সে ছেলে যতটুকু পাবে, সে মেয়ে কখনোই এর চেয়ে বেশী পেতে পারে না।

গ.  সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতই প্রকৃতপক্ষে আছাবা সংক্রান্ত থিওরীর ত্র“টি নির্দেকশ। এ আয়াতে ‘ওলাদ’ বলতে শুধুমাত্র ‘পুত্র-সন্তান’ বুঝায়- এমন দাবী একটি হাস্যকর দাবী। কারণ রাসূলুল্লাহ সা. এমন কথা বলে যাননি, এমন কি কোন ছাহাবীই এমন ধরণের ব্যাখ্যা করেন নি। অর্থাৎ এ রকম ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। আরবী অভিধান, ভাষার ব্যবহার ও কুরআনে ব্যবহৃত ওলাদ শব্দের ব্যাখ্যা গুলোকে বিবেচনা করলে একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওলাদ অর্থ হল সন্তান। গাণিতিক বিশ্লেষণেও প্রমাণীত হয় যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন হিস্সার অধিকারী নন। এ সমাধান ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ বুঝতেও সাহায্য করে। যেমন নিম্নোক্ত ছকে দেখুন: ছক নং – ৪.  একজন কন্যার সাথে স্বামী এবং ভাই থাকলে তার সমাধান [ফুকাহাদের মতানুসারে]:                      ৪                      মা.                   সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা        স্বামী                    কন্যা ১ জন                     ভাই ১ জন কিংবা একাধিক                                                                 অবশিষ্ট অংশ =      ১                             ২                                      ১ =  ১,৫০,০০০ টাকা   =  ৩,০০,০০০ টাকা                =  ১,৫০,০০০ টাকানোট: সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ পান, তাই তাকে  অংশ দেয়া হয়েছে। কন্যার সংখ্যা একজন হলে, তাদের মতানুসারে, সে পায় অংশ। কারণ তারা কন্যাদেরকে যবীল ফুরূজ বলে বিবেচনা করেন। আর ভাই পাবে অবশিষ্ট  অংশ। কারণ তারা ভাইকে ‘আছাবা’ গণ্য করে অবশিষ্ট অংশের অধিকারী বলে দাবী করেন এবং কন্যা সন্তানের সাথে সেও আছাবা হিসাবে হিস্সাদার বলে মনে করেন। এ কারণে ভাই একজন হোক অথবা একাধিক, কন্যা সন্তানের সাথে সে বা তারা অবশিষ্ট হিস্সা পাবে বলে তারা ঘোষনা করেন। এ হিসাবে ভাই একজন অথবা একাধিক হলে তারা অবশিষ্ট  অংশ পাবে। টাকার অংকে স্বামী পাবে ১,৫০,০০০/- টাকা, কন্যা পাবে ৩,০০,০০০/- টাকা এবং ভাই পাবে অবশিষ্ট ১,৫০,০০০/- টাকা।কিন্তু তাদের এ সমাধান সঠিক ও যুক্তিভিত্তিক নয়। যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা হয়, তাহলে স্বামীকে এক চতুর্থাংশ দেয়া সঠিক আছে কিন্তু ভাইকে কোন হিস্সা দেয়া সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। (সূরা নিসা- ১৭৬)।” যেহেতু কন্যাকে ‘ওলাদ’ বা সন্তান বলে স্বীকার করা হয়েছে, সুতরাং সে ‘ওলাদ’ বা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই কিছুই পেতে পারে না। আর যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহলে স্বামীকে মোট সম্পদের অর্ধেক হিস্সা দিতে হবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন: وَلـَكـُمْ نـِصْـفُ مـَا تـَرَكَ اَزْوَاجـُكـُمْ اِنْ لـَمْ يـَكـُن لـَّهـُنَّ وَلـَدٌ فـَاِنْ كـَانَ لـَهـُنَّ وَلـَدٌ فـَلـَكـُمُ الـرُّبـُعُ مـِمـَّا تـَرَكـْنَ “তোমাদের জন্য অর্ধাংশ বরাদ্দ থাকবে যা কিছু তোমাদের স্ত্রীগণ রেখে মারা যাবে তাতে, যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। তবে যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) থাকে, তাহলে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাবে যা কিছু তারা ছেড়ে যাবে তাতে।” (সূরা নিসা -১২)। এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘ওলাদ’ বা সন্তান না থাকলে স্বামী পাবে সম্পদের অর্ধেক। কন্যা সন্তানকে যদি ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহেল স্বামীকে অর্ধেক দিতে হবে। তা কুরআনের নির্দেশ। তখন স্বামী পাবে অর্ধেক আর কন্যা সন্তান তো তাদের মতানুসারে একজন হলে অর্ধেক পায়, সুতরাং বাকী অর্ধেক কন্যা নেবে।

শেষ পর্ব

কানিজ ফাতিমা ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহিত

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৫

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৫


নারীর জন্য আইন


(৩). মেয়ে ও বোনদেরকে মাওলা উত্তরাধিকারী মেনে নিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ দেয়ার স্বপক্ষে মতামত না দিয়ে তাদেরকে নির্ধারিত হারে -একজনের জন্য অর্ধেক ও একাধিকের জন্য দু’তৃতীয়াংশ হিসাবে- হিস্সা দিলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়। যাকে ইলমুল ফারাইজে ‘আওল’ বলা হয়। যে আওলের কারণে কুরআনের ফারাইজ সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ নিম্নরূপ:

ছক নং – ১.

মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ [ফুকাহাদের মতানুসারে] :                     ১২       ১৩                মা.              আ       সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা           স্বামী             মাতা              পিতা           মেয়ে ১ জন    =                =             =              =   = মোট অংশ    =                =             =          =    = মোট অংশ [আওলের কারণে হরের পরিবর্তন]   =        ৩            =   ২            =    ২             =     ৬   =  ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা =  ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা =  ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা   =২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকানোট: কুরআন অনুসারে মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ এবং পিতামাতার প্রত্যেকে এক ষষ্টাংশ করে পাওয়ার স্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু একজন মেয়ে থাকলে সে মোট সম্পদের অর্ধাংশ পাবে বলে তারা মনে করেন। স্বামী, মাতা, পিতা ও একজন মেয়েকে এ হিসাবে হিস্সা দিলে মোট হিস্সার পরিমাণ দাড়ায়: {( + +  + ) = ()}= , যা পাটী গণিতের হিসাবে শুদ্ধ নয়। এ হিসাবে স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, পিতা ১,০০,০০০ টাকা ও মাতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ফুকাহাগণ হিসাবের গরমিল হওয়ার অযুহাতে সবাইকে একটু একটু করে কম দেয়ার কথা বলেন। কারণ তাদের সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশ  ভাগ হয়ে গরমিল হতে দেখা যায়। সেজন্য তারা উপরোক্ত মাসআলায় স্বামীকে ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা পিতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা মাতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা ও মেয়েকে ২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকা দিয়ে সমাধান করেন। অথচ তাদের নিজেদের সূত্রমতে মেয়েকে ৩,০০,০০০ টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতবাদের আলোকে অংশ ভাগ করলে হিসাবে গরমিল হবে না। তাঁর মতবাদের আলোকে উপরোক্ত মাসআলাটির সমাধান নীচের ছকে দেখুন:

ছক নং ২.

মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল না হওয়ার উদাহরণ [আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতানুসারে]:           ১২       ২৪     ১৯  মা.       তা.     রা.       সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা    স্বামী             মাতা             পিতা                মেয়ে ১ জন                                                    অবশিষ্ট অংশের =           =               =            =    এর =           =              =            =       = সর্বমোট অংশ  =         =              =         =      = মোট অংশ (রদ্দের কারণে হরের পরিবর্তন)        = ৬          =  ৪              =   ৪           =  ৫ =১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা  =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা  = ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা আর মেয়েকে অবশিষ্ট অংশের অর্ধেক ={৬,০০,০০০ – (১,৫০,০০০ + ১,০০,০০০ + ১,০০,০০০)}= ২,৫০,০০০২ = ১,২৫,০০০ টাকা দিলে অতিরিক্ত ১,২৫,০০০ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায় যা পুনর্বার এ উত্তরাধিকারীগণই পাবেন। তাতে স্বামী মোট ১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা মাতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা পিতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা ও মেয়ে ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা পেলন। এ রকম হিস্সা দিলে হিসাবের গরমিল দেখা দেয়ার কোন কারণ নেই। প্রথমে মাখরাজ হবে ১২, পরে উহাকে তাছহীহ করতে হয়েছে ২৪ দিয়ে। আর সম্পদ অতিরিক্ত থেকে যাওয়ার কারণে পুনর্বার তা এ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে পুন:বণ্টন হয়েছে। তাতে ভগ্নাংশের হর পরিবর্তিত হয়ে ১৯ হয়েছে। যা রদ্দের সূত্র অনুসারে হয়েছে। আর সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশও = ১ অংশই হয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মত- তা এই যে, ফুকাহাদের মতানুসারে হিস্সা দিলে একজন মেয়েকে এত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হয়, যা মেয়ের স্থলে ছেলে হলে, সে ছেলেও পেত না। কারণ স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলে থাকলে সে সর্বোচ্চ অংশ পাবে, ৬,০০,০০০ টাকার সম্পদে তা টাকার অংকে ২,৫০,০০০ টাকা। অথচ তাদের হিসাবে একজন মেয়ে পায় ২,৭৬,৯২৩.০৮ (১ নং ছকে দেখুন) যা স্বাভাবিক বোধশক্তিতে গ্রহনযোগ্য নয়।

 

 

ঢং

ঢং


ডা.মিথিলা ফেরদৌস


ঢং বা ন্যাকামো মেয়েদের একটা অলংকার বলা যেতে পারে।এইটা মেয়েদের বাড়তি সৌন্দর্য বর্ধনে সাহায্য করে।যে মেয়ের এই অর্নামেন্ট নেই,তার সৌন্দর্যের কিছু ঘাটতি থেকেই যায়।এইটা কঞ্জেনিটাল বা একুয়ার্ড দুইভাবেই মেয়েদের আয়ত্বে আসতে পারে।যেভাবেই হোক এইটা আয়ত্বে আনা মেয়েদের জন্য অপরিহার্য।
কুত্তা,বিলাই,ইন্দুর,চিকা,তেলাপোকা, মাকড়শা এমন কি পিপড়া দেইখা কারো কান্ধে ঝাপায় পরা ঢংয়ের একটা উদাহরণ। এছাড়াও বিভিন্ন পদের ঢং আছে।তবে ঢং এমন হতে হবে যা দেখলে ছেলেদের মধ্যে মায়া মহব্বত আপনাতেই উথলায় উঠে।অবশ্য ঢং যে শুধু মেয়েদের আছে তা না।ছেলেদেরও ঢং আছে।তবে সেইটা ছেলেদের খুত হিসেবে গণ্য করা হয়।

জন্মগত ভাবেই হোক বা নিজে নিজে কোনভাবেই এই জিনিস আমি আয়ত্বে আনতে পারিনি।ফলে বাড়তি এই সৌন্দর্য থেকে ছোটকাল থেকেই বঞ্চিত।ঢংয়ের অভাবে তাই চিরকাল মানুষের মায়ামহব্বত থাইকা বঞ্চিত।

বিবাহের পর একদিন শ্বশুরবাড়ির সিঁড়িতে দুই বিড়ালের ঝগড়াঝাঁটি মারামারিতে আমার জামাই আর তার বড় ভাবীর চিল্লাফাল্লা লাফালাফি দেখে বিড়াল না দেইখা এদের দেখে প্রথম অবাক হই।জামাইকে জিগাই,”উনি মেয়ে মানুষ ভয় পাইছে স্বাভাবিক,কিন্তু তুমি বিড়াল দেইখা ভয় পাইলা কি মনে কইরা বুঝলাম না।” জামাই বিরক্ত,কয়,’ভয়ের আবার মেয়ে আবার ছেলে কি?’
তাইতো ভয়ের তো লিংগান্তর ঠিক হয় নাই,চাইপা যাই।

কিছুদিন পর আমার প্রচন্ড জ্বর হয়,জ্বরে ঠিক অজ্ঞান হবার আগেই শুনতে পাই,আমার জামাই বলতেছে,”ঢং করতেছো কেন?”আমার আর কিছুই মনে নাই।আমি নিজেকে খুঁজে পাই, ঢাকা মেডিকেলের একটা কেবিনের বদ্ধরুমে জ্ঞান ফিরে তাও ছয়দিন পর।জানতে পারি,আমাকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড করেছিলেন ছয়জন মেডিসিনের প্রফেসর। এরপরেও আমার জ্বর কমেনা।সন্ধ্যা করে জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকতো পুরা রুম গরম হয়ে যেতো।স্যাররা অসংখ্য টেস্ট করালেন।কিছুই ধরা পরেনা।তিনমাস টানা জ্বর ছিলো।এইসময় আমার মনে আছে,আমি কারো সাথেই কথা বলতাম না,কেবিনের হলদেটে দেয়ালের দিকে ফাকা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় থাকতাম।মাঝে মাঝে প্রচন্ড মাথা ব্যথায় মাথায় হাত দিয়ে নিজেই ব্যথা কমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতাম।আমার জামাই বুঝেছিল,আমি আসলে ঢং করতে জানিনা।

এত পর আমার আল্লাহ্‌ এর অশেষ রহমতে আর বড় কোন অসুখ বিসুখ কখনও হয়নাই।তবে মাঝে মাঝে জ্বর আসলে কাথা মুরি দিয়ে থাকি,সহ্যের বাইরে গেলে ঔষধ খেয়ে নিই।আবার সুস্থ হয়ে চাকরী সংসার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।কাউকেই আমার জন্যে বিড়ম্বনায় পরতে দেইনা।

রুগীদের মধ্যে অনেককেই দেখি,সামান্য ব্যথা বা ব্যথা ছাড়াই লতায় পরে,সংগে আসা প্রেমিক বা জামাইয়ের উদ্বিগ্ন মুখ।তখন বুঝি ঢং দৈনন্দিন জীবনে কতটা অপরিহার্য ব্যাপার। ভালোই লাগে দেখতে।

তবে আমি আমার মত করে চলতেই পছন্দ করি।লতানো পরগাছা হয়ে বেচে থাকার মধ্যে আমি কোন আনন্দ খুঁজে পাই না।এইটা যেহেতু আমার ডেফিসিয়েন্সি, সেহেতু পরিবেশের সাথে সেইভাবেই আমাকে অভিযোজিত হতে হয়।

সবার সব কিছুই থাকেনা,কেউ অন্ধ,কারো হাত নেই,কারো পা নেই,কারো শীতে কাপড় নেই তবুও তারা তা মেনে নিয়েই সুখে বেচে আছে।আমার তো মাত্র ঢং নেই তাতে কি?

 

বেসনে পুঁইপাতা ফ্রাই

বেসনে পুঁইপাতা ফ্রাই


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. পুঁইশাকের বড় বড় পাতা কয়েকটি,
২. বেসন ১ কাপ,
৩. হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
৪. মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
৫. লবণ স্বাদমতো,
৬. রসুন বাটা আধা চামচ,
৭. বেকিং পাউডার সামান্য,
৮. বিট লবণ আধা চা-চামচ,
৯. পানি পরিমাণমতো,
১০. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি
> পুঁইশাকের বড় বড় পাতা ভালো করে ধুয়ে পানি মুছে রাখতে হবে। বিট লবণ ও তেল বাদে বেসনে বাকি সব মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন পরিমাণ মতো পানি দিয়ে। কড়াইয়ে তেল গরম করে পুঁইশাকের পাতা এক একটি করে বেসনে মিশ্রণে ডুবিয়ে ডুবো তেলে মচমচে ভেজে টিস্যু কাপড়ে তুলে রেখে নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি :সমকাল

 

মোরা জোনাকি হতে চাই – ৪

মোরা জোনাকি হতে চাই – ৪


আফরোজা হাসান


তা হয়তো কঠিন কিন্তু যা করণীয় তা তো আমাদেরকে করতেই হবে। আর যা করতেই হবে তাকে কঠিন ভাবতে আমি নারাজ। কারণ আমরা যখন উত্তম হবার পথে চলতে শুরু করবো তখন আল্লাহ আমাদের পাশে থাকবেন এবং আর সেই সত্ত্বার সহায়তায় দূর হয়ে যাবে সকল প্রতিকূলতা। আর আমি বিশ্বাস করি যে আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্যই বসে আছেন। আমরাই সাহায্য পাবার মত করে চেষ্টা করতে পারি না। সামান্য বাঁধা পেলেই থামকে যাই, প্রতিকূলতায় ঘাবড়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দেই। এই যে তুমি পরীক্ষায় পাশের জন্য উঠে পড়ে লেগেছো। কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ী হবার জন্যও তো এমন চেষ্টা করতে হবে। তাই না?

তুই চেষ্টা করিস?

হুমম…চেষ্টা করি। আমার মতে প্রতিটা মেয়েরই এমন চেষ্টা করা উচিত। আমি কেমন মেয়ে হতে চাই জানো? প্রতিটা সম্পর্কের কাছে যে হবে আল্লাহর দেয়া উপহার। যে বাবা-মার জন্য হবে সাদাকায়ে জারিয়া, স্বামীর জন্য হবে পরিচ্ছদ, সন্তানের জন্য হবে জান্নাত।

আজ থেকে আমার চাওয়াও এটাই থাকবে। তুই আমাকে সাহায্য করবি তো?

ইনশাআল্লাহ! সবসময় আমরা দুজন একে অন্যেকে সাহায্য করবো। পথ চলতে গিয়ে যেই থমকে যাবো অন্যজন হাত বাড়িয়ে দেবো। এবং এখন থেকেই সাহায্যের সেই কার্যক্রম শুরু হবে। সকালে পরীক্ষা এখন তুমি পড়তে বোস। চল আমি সাহায্য করছি তোমাকে। দুজন মিলে আলোচনা করলে তাড়াতাড়ি বুঝতে সহায়তা হবে তোমার। তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও।

কি প্রশ্ন?

আগামীকাল পরীক্ষার পর আমার সাথে হসপিটালে যেতে পারবে?

হসপিটালে? হসপিটালে কেন? বেশ অবাক কন্ঠে জানতে চাইলো রুহি।

কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম আমাদের ক্লাস ফ্রেন্ড সোনিয়ার আম্মুর গত তিনদিন ধরে হসপিটালে। মামণিকে বলেছিলাম আন্টিকে দেখতে যাবার কথা। কিন্তু মামণির নাকি সময় হবে না আগামীকাল। তবে বলেছেন খাবার রান্না করে আমাদেরকে কলেজ থেকে আনতে যাবার সময় ড্রাইভার চাচার কাছে দিয়ে দেবেন। আমরা যেন পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে আন্টিকে দেখে আসার সাথে সাথে খাবারও দিয়ে আসি।

এমন একটা ব্যাপার আর তুই প্রশ্ন করছিস যাবো কিনা? অবশ্যই যাবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কি হয়েছে আন্টির?

সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। মাথায়, কোমরে, পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছেন। কান্নার জন্য ঠিকমতো কথাই বলতে পারেনি সোনিয়া। আগামীকাল তো যাচ্ছিই ইনশাআল্লাহ তখন জেনে নেয়া যাবে।

হুম! ঠিকআছে। তাহলে চল এখন আমাকে পড়তে সাহায্য করবি।

হাসিমুখে দুইবোন তখন বইপত্র নিয়ে বসলো।

@

গাড়ি থেকে বের হতেই তীব্র গতিতে এক ইন্টার্নকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখে থমকে গেলো যায়েদ। কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে মাশরুফ সালাম দিয়ে বলল, স্যার আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি আমি। অনেকবার ফোন দিয়েছি আপনাকে।

সালামের জবাব দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যায়েদ বলল, ড্রাউভ করছিলাম তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি। কি সমস্যা তোমার?

স্যার আমার কাজিন। সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল। নাউ আউট অব ডেঞ্জার। কিন্তু সেন্স ফিরে আসার পর খুব চিৎকার করছিল কেন ওকে বাঁচানো হলো। ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে এখন। আপনি যদি একটু কথা বলতেন ওর সাথে।

কি হয়েছিল?

গতকাল ওর ডিভোর্স হয়েছে। বৌকে খুব ভালোবাসতো সেজন্য ইমোশনালি…!

আজব সব ছেলেমেয়েতে ভরে গেছে দুনিয়াটা। জীবনে আসা সুন্দর সুযোগ গুলোকে কাজে লাগানোর কোন ইচ্ছেই এদের ভেতর কাজ করে না। সারাদিন ঝগড়াঝাঁটি করে জীবন অতিষ্ট করা বৌয়ের সাথে ডিভোর্স হবার জন্য কোথায় আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এরপর আরেকটা বিয়ে করে সেই বৌকে নতুন করে ভালোবাসতে চেষ্টা করবে। এখানে সুইসাইড করার কি হলো?

ভেতর থেকে উঠে আসা হাসিটা প্রাণপণে আঁটকে ফেললো মাশরুফ। মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই যায়েদ স্যারকে চেনে। সবচেয়ে ফেমাস নিউরো সাইকোলজিষ্টেদের একজন। প্রফেসর হিসেবেও অনন্য। মাশরুফ যদিও সরাসরি যায়েদ স্যারের সংস্পর্শে আসার সুযোগ তেমন একটা পায়নি কখনোই। তবে স্যার যেই হসপিটালে প্রাক্টিস করেন সেখানে ইন্টার্নী করার সুবাদে গত দেড় মাস উনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এই হসপিটালের প্রতিজন ডক্টরই অসাধারণ একেকজন মানুষ মনে হয়েছে। প্রত্যেককেই মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ ডক্টর মনে হয়েছে। কিন্তু যায়েদ স্যার মাশরুফের মনে সবার উপরের স্থানটা দখল করে নিয়েছেন। যত ভয়াবহ সমস্যার কথাই বলা হোক না কেন স্যার অতি উন্নত এবং অসাধারণ সেন্স অব হিউমারের প্রভাবে সেটাকে মূহুর্তেই হালকা করে দেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে স্যার কোন কিছুতেই সিরিয়াস নন। বরং যে কোন ধরণের বিপদ-আপদ, সমস্যাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে মোকাবিলা করার বিশেষ ট্রেনিং উনি নিজেকে দিয়েছেন।

কথা বলতে বলতে হসপিতালের ভেতরে ঢুকলো দুইজন। রিসিবশন পেড়িয়ে ওয়েটিং হলের কাছে পৌছে একজন বৃদ্ধকে কান্নারত দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মাশরুফের দিকে তাকালো যায়েদ।

মাশরুফ বলল, আধঘন্টা আগে ভদ্রলোকের ওয়াইফ মারা গিয়েছেন স্যার। ক্যান্সারের পেশেন্ট ছিলেন উনার ওয়াইফ। খুব কষ্ট পেয়েছেন মৃত্যুর আগে।

মুখে কিছু না বলে ধীর পায়ে বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে গেলো যায়েদ। ভদ্রলোকের পাশে বসে খুব নরম কন্ঠে বলল, প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে বুকের মধ্যে বরফের মতো জমে যেতে না দিয়ে বরং অশ্রু হয়ে ঝরে যেতে দেয়াই উত্তম। কান্না করতে তাই আপনাকে আমি নিষেধ করবো না। কোন সান্ত্বনাও দিতে চাই না। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সান্ত্বনা দেয়াটা এক ধরণের হঠকারিতা। তবে এটা অবশ্যই বলবো স্ত্রীর কথা ভাবলে উনার মৃত্যুতে খুশি হওয়া উচিত।

অশ্রুসিক্ত চোখে যায়েদের দিকে তাকালো বৃদ্ধ। কিছু বলার জন্য ঠোঁট নাড়াতে গিয়েও আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো।

যায়েদ বলল, মনে করে দেখুন কত কষ্ট পেয়েছেন আপনার স্ত্রী অসুস্থতার কারণে। ট্রিটমেন্ট, মেডিসিন উনাকে সাময়িক একটা স্বস্থি দিলেও কষ্টের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারেনি কখনোই। কিন্তু মৃত্যুর ফলে অসহ্যকর সেই যাতনার হাত থেকে উনি মুক্তি পেয়েছেন। প্রিয়জনকে আমরা কেউই হারাতে চাই না। কারণ তাদেরকে আমরা ভালোবাসি। আবার ভালোবাসি বলেই প্রিয়জনকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু কোন প্রিয় মানুষ যদি আমাদের কাছে থেকে কষ্টে থাকে। সেক্ষেত্রে তার দূরে চলে যাওয়াটাকে খুশি মনে মেনে নেয়া উচিত। কেননা ভালোবাসার অর্থ একসাথে বা কাছাকাছি থাকা নয়। ভালোবাসার অর্থ দূরে থেকেও একে অন্যের কল্যাণ কামনা করা। একে অন্যের শান্তির মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেয়া। গিয়ে দেখুন কি প্রশান্তিতে ঘুমোচ্ছেন আপনার স্ত্রী। গত কয়েক মাসে কি কখনো শান্তিতে দু’চোখ বুজতে দেখেছেন উনাকে? ঘুমের ভেতরেও ককিয়ে উঠতেন ব্যথায় তাই না?

অবাক চোখে যায়েদের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো বৃদ্ধ। তারপর নিজের স্ত্রীর কষ্টের মূহুর্তগুলোর কথা বলতে শুরু করলেন আপন মনেই। এক সময় কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলেন। এরপর বললেন, ইয়েস ডক্টর ইউ আর রাইট। আজ আমার স্ত্রী ভয়াবহ এক কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। অনেকদিন পর আজ শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। আমার ওর জন্য হ্যাপী হওয়া উচিত।

আরো কিছুক্ষণ বৃদ্ধের সাথে কাটিয়ে নিজের কেবিনের দিকে রওনা দিলো যায়েদ। মাশরুফ দন্ত বিকশিত করে বলল, স্যার আপনি সত্যিই অসাধারণ।

যায়েদ বলল, তোমার কি ধারণা মৃত্যুর পর প্রশান্তির জীবন শুরু হবার সম্ভাবনা কতটুকু একজন মানুষের?

মূহুর্তেই কবরের জীবন, পরকালের কথা স্মরণে হাসি মুছে গেলো মাশরুফের মুখ থেকে। আতঙ্কের ঢোঁক গিললো।

যায়েদ বলল, পেশেন্ট এবং তাদের রিলেটিভদেরকে সান্ত্বনা দেবার সময় অনেক কথাই বলতে হয়। কিন্তু সেই কথার প্রভাব যাতে নিজের উপর না পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে সবসময়।

জ্বি স্যার।

তোমার কাজিন উঠলে আমাকে খবর দিয়ো। নাউ লীভ।

হাসি মুখে ইয়েস স্যার বলে মাশরুফ ছুটলো নিজের কাজে।

চলবে
পর্ব-৫

 

শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ

শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ


স্বাস্থ্যকথা


ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস): শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে বিগত বিশ বছরে শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই ২০০০ সাল থেকে শিশু মৃত্যু হ্রাসে যথেষ্ট উন্নতি করেছে, যার প্রথম দিকের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ।
শূন্য থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিসেবার উন্নয়নের ফলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এমনকি শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ ‘বার্ষিক গ্লোবাল চাইল্ড হুড রিপোর্ট ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালে গত দুই দশকে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে, যেখানে ভুটানের শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৫৯ শতাংশ এবং ভারতের ৫৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে ৬৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরোধে সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। আর এই কারণেই দেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু উভয়ই কমেছে। ২০১৭ সালে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭৬ জন থাকলেও বর্তমানে তা ১৭২ জন। এছাড়া ২০১৫ সালে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুহার ২০ জন থাকলেও বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে ১৮ দশমিক ৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে প্রিম্যাচুউরড এ শিশু মৃত্যুহারের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দেয়া আছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতের সবাই সঠিকভাবে সঠিক কাজটি করলে এই অপরিণত শিশু মৃত্যু হারের লক্ষ্যমাত্রা আগামী ২ বছরেই অর্জন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই গর্ভবতী মায়েদের জন্য ২৪ ঘন্টা ডেলিভারি সুবিধাও রাখা হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও নিপোর্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৪ বছরে দেশে শিশু মৃত্যুহার ৭৩ শতাংশ কমেছে। এসডিজি অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১২ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৮ জন। তবে, শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৮ জন। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবিত জন্মানো শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সর্বশেষ জরিপেও দেখা গেছে, প্রতি হাজারে শূন্য থেকে এক মাস বয়সী ২৮ শিশু মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে মাত্র ১০ জন। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১২ জন এবং এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে। এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহারে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এখনই এগিয়ে রয়েছে। তবে, শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১৪ জন কমাতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। যদিও পাঁচ বছরের নিচে পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, জন্ম-পরবর্তী শ্বাসকষ্ট, কম ওজনের কারণে জন্মগত জটিলতা, সেপটিসেমিয়া, নিউমোনিয়া ও এনকেফেলাইটিস পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ। এ ছাড়া অপুষ্টির কারণেও মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু প্রতিরোধে সার্বিক ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ, ভিটামিন ‘এ’ সম্পূরক ওষুধের সফল ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব কারণে শিশু মৃত্যু হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী ২০৩০ সালের আগেই শিশু মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হবে।

সুত্রঃ বাসস।

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪


নারীর জন্য আইন


(২). হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণিত হাদীছের সঠিক অনুবাদ হবে – ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক।’ কারণ ‘আওলা’ শব্দের অর্থ হল সর্বাধিক হকদার, ‘ঘনিষ্ঠতর’ নয়। আর সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক হল পুত্র-সন্তান। দূরবর্তী পুরুষ মাওলা বা আছাবাগণ কখনোই সর্বাধিক হকদার নন। তাছাড়া এ হাদীছটি ‘খবরে ওয়াহিদ’ (একমাত্র বর্ণণাকারী কর্তৃক বর্ণিত) হওয়ার কারণে এবং স্বয়ং বর্ণণাকারী ছাহাবী ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করার কারণে উহা আমল করার উপযোগী নয়। কারণ স্বয়ং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. তার নিজের বর্ণিত হাদীছখানা থাকা সত্বেও কন্যাদেরকে অবশিষ্টাংশভোগী মাওলা (আছাবা) উত্তরাধিকারী বলে মনে করেন। (৩). কুরআনে মূলত অবশিষ্ট অংশের কথা বলা হয়েছে। আর হযরত জাবির রা. এবং হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছগুলো সহ যেসব হাদীছে রাসূলুল্লাহ সা. মেয়েদের সাথে ভাইবোনদেরকে অংশ দিয়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে, তা উহুদ যুদ্ধের পরের ঘটনা। তখনও ভাইবোনদের হিস্সা বর্ণনা করে কালালার আয়াত অবতীর্ণ হয়নি। তখন তো রাসূলুল্লাহ সা. শুধু ভাইবোনকে নয় বরং মুক্তিদাতা মুনিব ও মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসকেও দিয়েছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ اِبـْنِ عـَبـاَّسٍ اَنَّ مـَوْلـًي لـِحـَمـْزَةَ تـُوُفـِّيَ فـَتـَرَكَ اِبـْنـَتـَهُ وَاِبـْنـَةََ حـَمـْزَةَ فـَاَعـْطـَي الـنـَّبـِيُّ صـَلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ اِبـْنـَتـَهُ الـنـِّصـْفَ وَاِبـْنـَةَ حـَمـْزَةَ الـنـِّصـْفَ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘হামজা এর একজন মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস ছিল। সে তার একমাত্র মেয়ে ও মুনিব হামজা এর মেয়েকে রেখে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সা. তার পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক তার মেয়েকে দেন ও বাকী অর্ধেক দেন হামজা এর মেয়েকে।’ (সুনানু দার কুথনী)

৬। আর এ কথা সর্বজন বিদিত যে, হযরত হামজা রা. উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না; একজন মাত্র কন্যা ছিলেন। এজন্য তিনি একজন ক্রীতদাসকে তাবান্নী বা পালকপুত্র বানিয়েছিলেন। কিন্তু সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাযিলের পরে আর ভাইবোনকে কিছুই দেন নি। কারণ এ আয়াত সবশেষে নাযিল হয়েছিল। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنِ الـْبـَرَاءِ قـَالَ آخِـرُ آيـَةٍ نـُزِلـَتْ مـِنَ الـْقـُرْآنِ يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ হযরত বারা (বিন আযিব) রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘কুরআনের সর্বশেষ যে আয়াত নাযিল হয় তা হল- يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ ’- অর্থাৎ সূরা নিসার এই ১৭৬ নং আয়াত। (বুখারী, মুসলিম)৭। আর সর্বশেষ বিধানের মাধ্যমে মহানবী সা. এর পূর্বে দেয়া সকল নির্দেশনা রহিত হয়ে গিয়েছে।

খ.

(১). হযরত হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছে মহানবী সা. এর আমলের বিবরণ রয়েছে বটে কিন্তু মৌখিক কোন নির্দেশনা নেই। উহা সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে। আর সিরাজীর উল্লেখিত اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও’- বক্তব্যটি হাদীছের নামে একটি জালিয়াতি। মহানবী সা. কখনোই এরকম কোনকিছু বলেন নি। এ কারণে কথিত এ হাদীছের বর্ণণাকারী ছাহাবী ও সনদের কোন বিবরণ কেউ জানে না। (দেখুন: ‘আর রাদ্দুল মুহতার ফী শারহে দুররিল মুখতার’)৮।

(২). তৎকালিন আরব সমাজে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ‘আছাবা’ প্রথাকে উৎখাত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তরাধিকারে নারীকে হিস্সা দিয়েছিলেন। সমস্তরের পুরুষ উত্তরাধিকারীর সাথে মিলিত হলে নারী ‘আছাবা বিগায়রিহী’ হবে, অন্যথায় আছাবা হতে পারবে না; আর কন্যার সাথে মিলিত হলে বোন ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ হবে- এসব কথা একান্তই কিছু মনিষীর ব্যক্তিগত অনুমান- আল্লাহ প্রদত্ত নয়, রাসূল সা. বর্ণিতও নয়। বরং আছাবাগিরীর বিরোদ্ধে রাসূল সা. কঠোর মন্তব্য করেছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ جـُبـَيـْرِ بـْنِ مـُطـْعـِمٍ قـَالَ قـَالَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ لـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ دَعَـيْ اِلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ قـَاتـَلَ عَـلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ مَـاتَ عـَلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ হযরত যুবায়ের বিন মুত্ইম রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যে আছবিয়্যাতের দিকে আহবান করে সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয়। আর যে আছবিয়্যাতের কারণে যুদ্ধ করে, সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয় এবং যে আছবিয়্যাতের জন্য নিহত হয় সেও আমার উম্মাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ)৯। এ কারণে আমরা এ আছাবা পরিভাষা ও উহার শ্রেণীবিন্যাসের সাথে একমত নই। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভুল ব্যাখ্যা ও নকল হাদীছের ভিত্তিতে এ শ্রেণীবিন্যাসের থিওরী গড়ে উঠেছে বলে আমরা মনে করি।

 

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৩


নারী জন্য আইন


ব্যাখ্যা করে তারা বলেন যে, সকল পুরুষ উত্তরাধিকারীগণ হলেন ‘আছাবা বিনাফসিহী’, যারা স্বনির্ভর অবশিষ্টাংশভোগী আছাবা। পক্ষান্তরে কন্যা ও বোনের মত নারী উত্তরাধিকারীগণ, যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা আল্লাহ বলে দিয়েছেন বলে তারা মনে কেরন, তারা তাদের ভাইদের সাথে যৌথভাবে উত্তরাধিকারী হলে সে ভাইদের কল্যাণে তারা বোনেরাও আছাবায় পরিণত হন। এ রকম পরনির্ভরশীল আছাবাদেরকে বলা হয় ‘আছাবা বিগায়রিহী’। আর কন্যা সন্তানদের সাথে যদি মৃতের এক বা একাধিক বোন উত্তরাধিকারী জড় হন, তবে কন্যাগণ যবীল ফুরূজ ঠিকই থাকবেন, কিন্তু বোনেরা আছাবায় পরিণত হয়ে অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের আছাবা হওয়াকে তারা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ বলে অভিহিত করে থাকেন।গ.       ফুকাহাগণ আরো বলেন: ‘সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত পাঠ কালে মনে হতে পারে যে, সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই অথবা বোনেরা উত্তরাধিকারী নন। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ আয়াতে বলা হয়েছে: اِنِ امْـرُؤٌ هَـلـَكَ لـَيْـسَ لـَهُ وَلـَدٌ وَلـَهُ اُخْـتٌ فـَـلـَهَـا نـِصـْفُ مـَا تـَرَكَ وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘যদি কোন নি:সন্তান লোক মারা যায় এবং তার একজন বোন থাকে, তবে সে বোন মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তার অর্ধেক পাবে – এবং সে ব্যক্তিও তার বোনের (যদি মারা যায়) উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।’’ প্রকৃতপক্ষে এ আয়াতে সকল সন্তানের কথা বলা হয়নি, বরং পুত্র-সন্তানের কথা বলা হয়েছে। কারণ এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ হল পুত্র-সন্তান। কারণ এ রকম অর্থ গ্রহন না করলে উপরে বর্ণিত হাদীছ গুলোর সাথে এ আয়াতের সমম্বয় করা যায় না।’ পক্ষান্তরে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. সহ কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কেরাম ও অন্য একদল ফুকাহার মতে সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা- কোন ধরণের সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হবেন না। যেমন বর্ণিত আছে: عَـنْ عَـطـَاءَ اَنَّ اِبْـنَ عَـبـاَّسٍ كـاَنَ يـَقـُوْلُ اَلـْمـِيـْرَاثُ لِـلـْوَلـَدِ فـَاِنـْتـَزَعَ الـلـََّهُ تـَعـَالـَي َمـِنـْهُ لِـلـزَّوْجِ وَالـْوَالـِدِ হযরত আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ইবনে আব্বাস বলতেন: ‘মালের হকদার হলেন সন্তানগণ। সেখান থেকে আল্লাহ পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রীদের জন্য কিছু সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছেন।’ (আল মুছান্নাফ)

৫। তারা ‘আছাবা বিনাফসিহী’, ‘আছাবা বিগায়রিহী’ অথবা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’- প্রভৃতি পরিভাষার সমর্থনে কোন বক্তব্য দেন নি। আমরা প্রথম দলের চাইতে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. প্রমুখদের মতামতকে অধিক যুক্তিসঙ্গত ও সমর্থনযোগ্য বলে মনে করি। আমাদের নিম্নোক্ত আলোচনায় প্রমাণীত হবে যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন প্রকার উত্তরাধিকারী নন। ক.                             কন্যা সন্তানদেরকে ‘যবীল ফুরূজ’ বিবেচনা করা সংক্রান্ত তাদের প্রথম দাবী নিুোক্ত কারণে সঠিক নয়। (১). মেয়েরা ছেলেদের মত মাওলা (আছাবা) হতে পারে বলে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন। আল্লাহ বলেন: وَلـِكـُلٍّ جَـعَـلـْنـَا مَـوَالِـيَ مِـمَّـا تـَرَكَ الـْوَالِـدَانِ وَاْلاَقـْرَبـُوْنَ “আর পিতামাতাও আত্মীয় স্বজনেরা যা কিছু ছেড়ে যাবেন তাতে (পুরুষ ও নারীর) প্রত্যেককে আমরা মাওলা বানিয়েছি।” (সূরা নিসা-৩৩)। এ আয়াতে বর্ণিত ‘মাওলা’ শব্দের অর্থ হল অবশিষ্টাংশভোগী উত্তরাধিকারী, যাকে অনেকেই ‘আছাবা’ নাম দিয়ে থাকেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. কাতাদা রাহ. মুজাহিদ রাহ. ইবনু যায়েদ রাহ. সহ বড় বড় তাফসীরকারকদের এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য দেখা যায়। (দেখুন তাফসীরে তাবারী, বাগাবী, ফাতহুল কাদীর, জালালাইন প্রভৃতি)। আর কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে অপর কেউ মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। যেমন সন্তানের পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন পিতা। এ কারণে পিতার উপস্থিতিতে ভাইবোন উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। কিন্তু সে পিতাও কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। বরং তখন তিনি নির্ধারিত হিস্সাদার ‘যবীল ফুরূজ’ হিসাবে এক ষষ্টাংশ পাবেন। আল্লাহ বলেন: وَلاَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهُـمَـا الـسُّـدُسُ مِـمَّـا تـَرَكَ اِن كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ  “আর পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১২)। পিতার পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন ভাই। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সে ভাই কোন হিস্সাই পান না। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।” (সূরা নিসা- ১৭৬)। কারণ মেয়েরা নিজেরা মাওলা হওয়ার কারণে অপরাপর মাওলাদেরকে তারা দূরে সরিয়ে দেয়। তবে কথা হল এই যে, একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান শক্তিশালী মাওলা নন। বরং দু’জন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান। আর একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের অর্ধেক হিস্সার অধিকারী। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَـظِّ اْلأُنـْثـَيَـيـْنِ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” (সূরা নিসা-১১)। আল্লাহ আরোও বলেন: وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ ‘‘ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক।” উহার অর্থ হবে وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهـَا نـِصـْفُ حَـظِّ الـذَّكـَرِ অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে- একজন ছেলে থাকলে সে যতটুকু পেত- তার অর্ধেক। আর দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ ঠিকই, কিন্তু বাকী এক তৃতীয়াংশ পাবেন পিতামাতা, যা আয়াতেই উল্লেখ আছে। উহা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে নির্ধারিত হিস্সা বুঝায় না। তাছাড়া কন্যাগণ যদি নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করে, তাহলে পুত্রগণও কন্যাদের সমান নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” দু’জন কন্যা সন্তানের অতিরিক্ত কোন হিস্সা পুত্রকে দেয়া হয়নি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী মনে করছি, তা হল: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَظِّ اْلأُنـْثـَيـَيـْنِ আয়াতাংশ দ্বারা মূলনীতি বর্ণণা করা হয়েছে এবং فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مـَا تـَرَكَ আয়াতাংশ দ্বারা পূর্বের আয়াতাংশের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কারণে ব্যাখ্যা অংশের শুরুতে فَ বর্ণটি প্রয়োগ করা হয়েছে, যাকে ব্যাখ্যাদানকারী বর্ণ বা اَلـْفـاَءُ لـِلتـَّفـْسِـيـْرِ বলা হয়। সুতরাং আয়াতের এ অংশ দিয়ে নতুন কোন মূলনীতি নির্ধারিত হবে না বরং পূর্বের আয়াতাংশের বিশ্লেষণ ও তাফসীর হবে। এ কারণেই ব্যাখ্যা অংশে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বলা হয়নি। কারণ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে”- বলার মাধ্যমে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩


আফরোজা হাসান


ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে বোনের কর্মকান্ড দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিলো নূরি। সারাবছর বইয়ের ধারে কাছে না ঘেঁষে পরীক্ষার আগের দিন নাকে মুখে পড়ে পরীক্ষা দেবার অভ্যাস রুহির। আগামীকাল পরীক্ষা তাই স্বভাব মতো নাকে মুখে পড়ছে সে। কিছুক্ষণ টেবিলে বসে পড়ছে তো কিছুক্ষণ ঘর ভরে পায়চারী করছে আর পড়ছে। একসময় বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো সে।

নূরি হাসতে হাসতে বলল, মাঝে মাঝে একটু বই নিয়ে বসলেই তো আর পরীক্ষার আগে এমন হয় না।

পরীক্ষার আগের দিন পড়ে পাশ করতে পারলে সারাবছর পড়ার দরকার কি? আমার জীবনের মিশন তোর মতো পণ্ডিত হওয়া না। আমি জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। জবাব দিলো রুহি।

পড়াশোনা না করার সাথে জীবনকে উপভোগের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক আছে মাই ডিয়ার লিটল সিসটার। পরীক্ষার হলে কম্পায়মান মনে ঢোকা, প্রশ্ন কমন পড়বে তো সেই টেনশন করা, রেজাল্টের আগের রাতে ঘুম বন্ধ, রেজাল্টের দিন সকালে গলা দিয়ে খাদ্য না নামা, হায়…. এসবের যে কি মজা তা কি তুই বুঝিস?

নূরি হাসতে হাসতে বলল, আল্লাহ না বোঝাক আমাকে। প্রিপারেশনের কি অবস্থা?

এখনো বুঝতে পারছি না।

কখন বুঝতে পারবে?

পরীক্ষার খাতায় সব সুন্দর মতো লিখার পর বুঝতে পারবো। আমার জন্য একটু চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে পারবি বুবু? পড়তে পড়তে ক্ষুধা লেগে গিয়েছে।

আমি রুমে আসার সময়ই তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি। পড়তে পড়তে তোমার ক্ষুধা লাগা তো নতুন কিছু না।

এজন্যই তো বলি তোর কোন তুলনা হয়না। হে আল্লাহ আমার বোনটিকে মনের মতো একটা স্বামী মিলিয়ে দিয়েন। আমীন।
বোনের দুষ্টুমি করা স্বভাব জানে নূরি তাই হেসে নিজের কাজে মন দিলো। উঠে এসে পেছন থেকে বোনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে রুহি হেসে বলল, মাশাআল্লাহ! তোর পেইন্টিং তো অসাধারণ সুন্দর হচ্ছে রে বুবু। কিন্তু রাতের আকাশে রংধনু?

হুম! যদি আরেকটু পড়াশোনা করতেন তাহলে জানতেন যে, রংধনু যেমন সুর্যের আলোতে দেখা যায় তেমনি চাঁদের আলোতেও দেখা যাওয়া সম্ভব। যেদিন চাঁদের আলোয় আকাশ আলোকিত হয়ে যায় তখন আকাশে রংধনুর সৃষ্টি হয়। কম আলোয় আমরা দেখতে পাই না বলে সেই রংধনু দৃষ্টিগোচর হয়না। আমি কেমন ছবি আঁকতে চাইছি জানিস? চাঁদের বাসন্তি আলো, রংধনুর রঙয়ের ছটা, হাজার তারার মেলার এক আকাশের। যে ছবিটার দিকে তাকালে মনেহবে রাতচড়া পাখীরা চমকে চমকে ডেকে ফিরছে আবছায়া প্রান্তরে, কান পাতলেই বুঝি শোনা যাবে ঝিঁঝিঁর ডাক, মনেহবে ঐ তো শুকনো পাতা গড়িয়ে যাচ্ছে পাথরের বুকে।

হুমম…খুব কাব্যিক মুডে আছেন মনেহচ্ছে। এসব তো ভালো লক্ষণ না।

আমার লক্ষণ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি ক্ষুধা নিবৃত্ত করে পাঠ্যায়নে মনোনিবেশ করুণ।

কিছুক্ষণ চুপ করে ছবি আঁকা দেখার পর রুহি বলল, আচ্ছা নূরি লক্ষ্মা ধাতু জিনিসটা কি?

হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?

আজ সকালে ছোট মামা বললো যে আমার মধ্যে নাকি লক্ষ্মা ধাতুর যথেষ্ট ঘাতটি আছে।

নূরি হাসতে হাসতে, মামা সকালে লক্ষ্মীর উপরে একটা আর্টিকেল পড়েছে তারপর থেকে বাড়ির সবার মধ্যে লক্ষ্মা ধাতুর মাত্রা নির্ধারন করছে।

সেটা কি রকম?

লক্ষ্মী কথাটা এসেছে লক্ষ্মা ধাতু থেকে। যার অর্থ হল আলোচনা, চিহ্নীকরণ, অংকন, জ্ঞান, দর্শন। আর লক্ষ্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, অতি সাধারণ একটি মেয়ে যখন তার অন্তর্গত ভক্তি আর জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে আচারনিষ্ঠ জীবনযাপনে উদ্দেপিত হয় তখনই কেবল তাকে লক্ষ্মী বলে সম্বোধন করা যায়।

কি সাংঘাতিক সংজ্ঞা।

এখানেই শেষ না বুবুজান। আরো বলা হয়েছে নারী তখনই মহিমান্বিত হতে পারে যখন তার মধ্যে সদাচার থাকে। সদাচার মানে বাঁচার আচার। যে আচার মানুষকে সুন্দর সমৃদ্ধশালী জীবনের পথ দেখায়। সদাচার এমন একটি গুণ যার ফলে নারী নিজের অজান্তেই পুরুষের জন্য কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ীতে পরিণত হয়। আর সদাচারবিহীন নারী মানেই পদে পদে ধ্বংস অনিবার্য।

হুমম… গাইড লাইন হিসেবে নেয়া যায় কথাগুলো তাই না?

বাঁচার যে আচার ইসলাম আমাদেরকে দেয় সেটা মেনে চললে সদাচারিণী হওয়া কোন ব্যাপারই না। আর এরজন্য বেশী বেশী জ্ঞানার্জন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারণ জ্ঞানই আমাদেরকে শেখায় কিভাবে মনের মালিক হয়ে অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। তাছাড়া একজন মানুষ যথার্থ মানুষ হয় অন্তরের ঐশ্বর্যের কারণে। আর মনের এই ঐশ্বর্যের নাম ধর্মীয় মূল্যবোধ।

বুঝলাম লক্ষ্মা ধাতুর ঘাতটি দূর করা যথেষ্ট কঠিন কাজ।

চলবে
পর্ব-৪

 

জীবনের বাতিঘরে নারী

জীবনের বাতিঘরে নারী


আসিফ মাহমুদ


এ্যাভারেজ আমেরিকান মহিলারা মাত্র সাতাশ মিনিট আর বাঙ্গালি মহিলারা গড়ে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় প্রতিদিন রান্নাঘরে ব্যয় করে। বাংগালী নারীদের জীবনের বিশাল অংশ এই রান্নাঘরেই কেটে যায়। কয়েকসপ্তাহ আগে আমার প্রতিবেশী হ্যারল্ডের বাসায় আমাদের ডীনারের দাওয়াত ছিলো। সন্ধ্যা ছটার আগেই সাধারণত এরা ডীনার শেষ করে। একেবারে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ছটা বাজেই ডীনার শুরু হলো। ডীনারের আয়োজন ছিলো টুনা ফীস, সালাদ, কিছু চিপস আর কোমল পানীয়। ব্যস । হ্যারল্ডের ওয়াইফ ম্যারি আর হ্যারল্ড আমাদের সাথে ক্লান্তিহীন আড্ডা দিলেন। রান্নার আয়োজন যেহেতু কম-আড্ডার আয়োজনতো সুন্দর হবেই। বুঝলাম , নিমন্ত্রন মানে শুধু ভোজন না। নিমন্ত্রণ হলো আপনার জীবনের কিছু অংশ আর আমার জীবনের কিছু অংশ একসাথে পাশাপাশি বসে উপভোগ করা।

কেউ যদি বলে বাংগালীরা আড্ডা প্রিয়। কথাটি ভুল। আমরা আসলে ভোজনপ্রিয়। আমাদের বাসায় কারো দাওয়াত মানেই বিশাল রান্নার আয়োজন। কে কত আইটেম বাড়াতে পারে ভাবীদের সাথে ভাবীদের চলে এর প্রতিযোগিতা। যেদিন অতিথিদের নিমন্ত্রণ বলতে গেলে এর এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। একেকটা রান্নার আয়োজন একেকটা ঘুর্ণিঝড়। এরকম ঘুর্ণিঝড়ের ভিতর সময় পার করে ঘরের বউ, ভাবী ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। সুতরাং সুন্দর পরিবেশে বসে আড্ডাটা হবে কখন?

রান্নাঘর আর বাথরুম দেখে মানুষের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়। হ্যারল্ডের ঘরে পা দিয়েই বুঝা গেলো- কত সুন্দর, পরিপাটি আর কত পরিচ্ছন্ন হতে পারে একটি ঘরের পরিবেশ। সুন্দর ঘর রাখার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- ওদের রান্নার আয়োজন খুবই কম। আপনি যখন গরম তেলের ওপর দুনিয়ার নানা রকমের মশলা ছাড়বেন- সাথে সাথেইতো ঘর গ্রীজি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিবে। আর এই তৈলাক্ত গ্রীজ শুধু আপনার কিচেন নষ্টই করছেনা। আপনার উদরও নষ্ট করছে।

তবে কি আমেরিকানরা রান্না করেনা। না করলে এতো গ্রোসারি আইটেম যায় কই । জ্বি করে। বেশ আয়োজন করেই করে। তবে একদিনে চৌদ্দ পনের পদ তৈরি করে- ডাইনিং টেবিলের এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেনা। আমি নিজেও বুঝিনা। এতো পদ দিয়ে একসাথে খাবার খেয়ে এতো ভূরিভোজনের দরকারটাই বা কি? কালকে মারা গেলে- আজকে বেশ করে খেয়ে নেন ঠিক আছে। কিন্তু তাই যদি না হয়- তবে আজকে দুপুরে এক আইটেম দিয়ে খান। রাতের বেলা আরেকটা দিয়ে খান। এভাবে প্রতিদিন একেকটা আইটেম দিয়ে খেলেইতো নানা রকমের খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়।

আমাদের পিকনিক মানেই ঐ খাবার দাবার। গাড়ীতে খাবার ঢুকাও, গাড়ী থেকে খাবার নামাও, খাবার সাজাও, খাবার রান্না করো, খাবার পরিবেশন করো, খাবারের পর এবার তালা, বাসন, বাটি, ঘটি গাড়িতে তোল। ব্যস খাবারের আয়োজনের ভিতরই পিকনিক শেষ। একবার সমূদ্র দর্শন করতে গিয়ে দেখলাম- এক আমেরিকান কী সুন্দর করে ফোল্ডিং চেয়ার খোলে পানিতে পা ভিজিয়ে বসেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যায়। সে বসা। তার মাথার ওপর ছাতা। পাশে একটা ড্রিংক। বুঝা গেলো সে আজ মন প্রাণভরে সমূদ্র দেখবে। আর আমরা- খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সমূদ্র দেখলাম। আর সমূদ্র দেখার পাশাপাশি এই দোকানে ঢু মারলাম, আরেক দোকান থেকে বের হলাম, একটু এদিক ওদিক ঘুরলাম, রাজনীতি, কম্যুনিটি নীতি, ট্রাম্প, মোদি, গদি, হাসিনা, খালেদা, পাপিয়া, সাফিয়া,কাদেরি , তাহেরি সহ দুনিয়ার সব বিষয়ে বিপুল আলোচনা, হালকা বাক বিতণ্ডা, ঝাপসা মনোমালিন্য নিয়ে সমূদ্র জয়ের পাশাপাশি দুনিয়া জয় করে ঘরে ফিরলাম।

গত শনিবার। গ্রোসারি কিনতে যাবো। দেখি হ্যারল্ড। সেও আমার সাথে যাবে। আমাদের গ্রোসারির লিস্টি মাশাল্লাহ- এইগুলো একটার সাথে আরেকটা জোড়া লাগালে- চাঁদের দেশে যাওয়া যাবে। মাংসের জন্য এক দোকান, মাছের জন্য আরেক দোকান। সব্জির জন্য ফার্মাস মার্কেট। সেখানে আবার দেশি লাউ পাওয়া যায়না। যাও আরেক দোকান। কাঁচামরিচের জন্য আরেক জায়গায়। দুধ-ডিমগুলো আবার এইসব দোকানে ভালো পাওয়া যায়না। যাও আমেরিকান গ্রোসারিতে। বিশাল লিস্টের যুদ্ধ শেষ করে যখন ফিরছি- হ্যারল্ড বললো- একটু দাঁড়াও। এক ফাস্টফুডের দোকানে দাঁড়ালাম। হ্যারল্ড একটা স্যান্ডউইচ কিনলো। স্যান্ডউইচের অর্ধেক সে খাবে। বাকি অর্ধেই ওর বউয়ে খাবে। ঝামেলা শেষ। সেইজন্য ওরা নাসা থেকে স্পেসে যায়। আর আমরা বেডরুম থেকে কিচেন আর কিচেন থেকে বেডরুমে যাই। আর, এর ফাঁকে ফাঁকে ইয়া বড় বড় ভুড়ি বানাই। স্পেশ স্টেশানে যাওয়ার সুযোগ আসলে আমরা খোঁজ নিবো- কিমার জন্য ফ্রেশ গ্রাউন্ড বীফ, কাচ্চি বিরিয়ানির মশলা, ডালের জন্য পাঁচফোড়ন, খাওয়ার পর গোলাপজামুন, চায়ের সাথে বিস্কুট, পানের সাথে চুন, খয়ের এসব কিছু সেখানে ঠিকঠাক পাওয়া যাবেতো?

আমি একটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করলাম। যার গ্রোসারির ট্রলি যত বড়- মেধা আর যোগ্যতায় সে তত ছোট। যারা দরিদ্র-অর্থের অভাবে খেতে পায়না-সেটা ভিন্ন কথা। মেক্সিকান আর আমাদের গ্রোসারির ট্রলিগুলো যেন একেকটা মুদির দোকান। চেকআউট লেনে চেকআউট লেনে দাঁড়ালে মনে হয় কোনো ছোট দোকান ঘরের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি। এতো বেশি বেশি খাবার উদরে যায় বলে আমাদের মগজে আর বেশী কিছু যায়না। হিসপানিক আর ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকায় আপনি কোনো ভালো লাইব্রেরি কিংবা কোনো ভালো বইয়ের দোকান পাবেন না। এগুলো পাবেন শুধু সাদা বিশেষ করে ইহুদি অধ্যুষিত এলাকায়। রান্না করে আর খেয়েইতো আমাদের জীবন শেষ। অধ্যাবসায়ের অতো সময় কোথায়? বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস ওনাদের সামনে কোনোদিনও ইয়াবড় খাবারের প্লেট দেখিনি। যেমন দেখেছি-রাজা-বাদশাহ-আমীর ওমরাহদের সামনে।

প্রিয় ভাই, চাচা, বাবা, দাদারা দয়া করে বউ, ভাবি, বোন, চাচী, মাসিদের রান্নাঘরের একচেটিয়া জীবন থেকে মুক্তি দিন। আর ভাবী, আপা আপনারাও একজনের সাথে আরেকজনের রান্নার আইটেম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা থেকে দয়া করে নিজেদের হেফাজত করুন। এক জনে পাঁচজনের জন্য প্রতিদিন পাঁচপদ রান্না না করে পাঁচজনে মিলে একপদ রান্না করুন। সম্পর্ক বাড়বে। ভালোবাসা তৈরি হবে। কষ্ট লাঘব হবে। কিচেনে আপনার সময় যত বাড়বে- ভাইয়ের ভুড়িও তত বাড়বে। আর এই ভুড়ি ভালোবাসা না। এটা সর্বনাশা। এটা জীবননাশা। জীবন ধারনের জন্য খেতেতো হবেই। কিন্তু রান্নাঘর আর ভোজন যেন আমাদের পুরো জীবনটাই খেয়ে না ফেলে- দয়া করে সেদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন। সারাজীবন নারীমুক্তি নারীমুক্তি করলাম। কিন্তু নারীকেতো রান্নাঘর থেকেই মুক্তি দিতে পারলাম না।

সংসার আর জীবনের বাতিঘর সব নারীদের জন্য বিশ্ব নারী দিবসে হৃদয়ের গভীর থেকে রইলো বিশুদ্ধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

Asif mahmud.

 

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা


কানিজ ফাতিমা


একসময় সমাজে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে ছেলের বউয়ের দায়িত্ব হলো নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন ভুলে শশুর-শাশুড়ী , দেবর-ননদ, ননদ-জামাই এর সেবা করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষিত মহলে এই ভুল ধারণার অবসান ঘটেছে। এ ধারণাটা অনেকটাই সুস্পষ্ট যে ইসলামে দেবর-ননদ, ননদ জামাই দূরে থাক, স্বয়ং শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারীর ফরজ কোনো দায়িত্ব নেই। কিন্তু এটুকুই পরিপূর্ন চিত্র না –

ইসলাম শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারী বা পুরুষের ফরজ কোনো দায়িত্ব দেয়নি -এই কথাটা যেমন সত্যি তেমনি সত্যি ইসলাম বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানকে কিছু দায়িত্ব বাধতামূলক বা ফরজ করেছে। নারী হলে আপনার জন্য আপনার শশুর -শাশুড়ীকে সেবা করা ফরজ নয়, কেবলই মুস্তাহাব; কিন্তু আপনার স্বামীর জন্য তাদের ভরণ-পোষণ ও দেখা-শোনা করা ফরজ । তাই আপনার স্বামীর যেমন হক নেই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাকে বাধ্য করতে তার বাবা-মায়ের অর্থাৎ আপনার শশুড় -শাশুড়ীর সেবা করার জন্য, তাদের জন্য প্রতিদিন রান্না করার জন্য; তেমনি আপনারও হক নেই আপনার স্বামীকে নানা অজুহাতে বা হুমকি-ধমকি দিয়ে তার বাবা- মায়ের প্রতি তার দ্বায়িত পালনে বাধা দেয়ার। মনে রাখবেন ইসলামে কখনোই এক চোখা নয়।

অনেক সময় অনেক সচেতন স্ত্রী মনে করেন তার স্বামীর জন্য স্ত্রী -সন্তানের ভরণ পোষণ, বিনোদন, শখ সব পূরণ হবার পরে আসবে তার বাবা-মায়ের হকের প্রশ্ন। না, ব্যাপারটা সেরকম নয়। ব্যাপারটা হলো পুরুষ যা আয় করবে তাতে সর্বপ্রথম আনুপাতিক হরে তার স্ত্রী , সন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণ পোষণ এর চাহিদা পূরণ হতে হবে। কারো ইনকাম যদি কেবল মাত্র ১০০ টাকাও হয় তবে এই ১০০ টাকা থেকেই এই সবক’টি চাহিদার জন্য টাকা বরাদ্দ হবে। ইনকাম কম তাই সবটাই স্ত্রী-সন্তান এর জন্য খরচ হবে আর বাবা-মা বঞ্চিত হবে – সেটা ইসলামের নিয়ম না। ইসলাম সর্বাবস্থায় ভারসাম্যকে গুরুত্ব দেয়।

আবার দেখা যায় অনেক কৌশলী স্ত্রী ইচ্ছা করে তাদের সংসারের চাহিদাকে হিসাব করে এমনভাবে বাড়িয়ে দেয় যাতে স্বামীর ইনকাম থেকে এরপরে আর কোনো অর্থ উদ্বৃত্ত থাকতে না পারে তার বাবা- মাকে দেবার জন্য। এমন কৌশল শুধু অন্যায়ই নয় – বরং বড় ধরণের জুলুম।

শাশুড়ী কর্তৃক ছেলের বৌ নির্যাতন যেমন নারী অধিকারের লঙ্ঘন তেমনি ছেলের বৌ কতৃক শাশুড়ীর মাতৃত্বের হক নষ্ট করাও নারী অধিকার লঙ্ঘন। স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ী যেতে না দেয়া, বিভন্ন অজুহাতে বাধার সৃষ্টি করা যেমন নারী নির্যাতন তেমনি স্বামীকে তার বাবা-মা, ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলতে না দেয়া, তারা বেড়াতে আসলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব করা যাতে তারা বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয় – সেটাও সুস্পষ্ট নির্যাতন।

জুলুম -নির্যাতন যে পক্ষ থেকেই হোক তা নিন্দনীয়, তা সংসারের ভিত্তিকে ধ্বংস করে। জুলুমকারীকে ভয় পেয়ে তার সঙ্গে কম্প্রোমাইজের নামে জুলুম মেনে নিলে এটি বেড়ে আরও শাখা প্রশাখা ছড়ায়। তাই সাহস ও বুদ্ধি করে জুলুমের সামনে দাঁড়িয়ে সেটা একটু শক্ত হাতে বন্ধ করতে হয়। এতে সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও long run এ কল্যাণ হয়।

সব নারী ভালো থাকুক; সে স্ত্রী, মেয়ে, মা বা বোনই হোক । সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ছোলা পৌনে ১ কাপ,
২. যেকোনো সবজি টুকরা আধা কাপ,
৩. বিটলবণ আধা চা চামচ,
৪. শসা ১ টেবিল চামচ,
৫. আনারস আধা কাপ,
৬. কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ,
৭. খেজুর আধা কাপ,
৮. ধনিয়াপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
৯. আলু সিদ্ধ ৩টি,
১০. ডালিম পরিমাণমতো,
১১. নাশপাতি ১টি,
১২. লেবুর রস ১ টেবিল চামচ,
১৩. লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি
> ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে অল্প সিদ্ধ করে নিন।

> আনারস, খেজুর, আলু সিদ্ধ, নাশপাতি চারকোনা করে কাটুন।

> সবজি হালকা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।

> এরপর ছোলা, সবজি ও ফলের সঙ্গে বিটলবণ, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়াপাতা কুচি, লবণ, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : কালের কন্ঠ

 

মোরা জোনাকি হতে চাই – ২

মোরা জোনাকি হতে চাই – ২


আফরোজা হাসান


চোখ বড় বড় করে নূরি বলল, তোমাদের কি সেপারেশন হচ্ছে নাকি? আমরা কি কোর্টে যাবো বাবা? ইশশ…ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চ ফিল হচ্ছে। আমি আর রুহি কাঠগড়ার দাঁড়িয়ে আছি। উকিল সাহেব কোমল কণ্ঠে আমাকে প্রশ্ন করছেন, বলো মা তোমরা কার সাথে থাকতে চাও? আমরা দুজন কাঁদো কাঁদো চোখে একবার মামণির দিকে তাকাবো, একবার তোমার দিকে তাকাবো। তারপর ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলবো, জর্জ আঙ্কেল আমরা আমাদের বাবা ও মামণি দুজনের সাথেই থাকতে চাই। কারণ আমরা বাবা-মার মিলিত রূপ। তারাও আমাদের কাছে একাকার এক সত্ত্বা। আমরা তাই মামণির মমতা যেমন চাই, বাবার আদরও তেমন চাই।

নোমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, তোর মামণি ঠিকই বলে খুবই দুষ্টু হয়েছিস তোরা দুই বোন। রুহি কোথায়? সকাল থেকে দেখিনি একবারও।

আমি ঘুমে দেখে এসেছিলাম বাবা। এতক্ষণে মনেহয় উঠেছে। চলো বাবা নাস্তা করতে যাই।

নাস্তা করার সময় নেই রে মা। আমি অফিসে গিয়ে কিছু খেয়ে নেবো।

বাবাকে রুমে ঢুকে যেতে দেখে নূরি বুঝলো সিরিয়াস কোন বিষয়েই বাবা-মামণির মনোমালিন্য হয়েছে। গাছে পানি দেয়া শেষ করে বোনের খোঁজে রওনা হলো সে। দুজন মিলে বাবা-মামণির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কোন বুদ্ধি বের করতে হবে। বড় বোনের সন্ধানে বাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়ে প্রচণ্ড এক ধাক্কা খেলো নূরি। রুহিও ছোট বোনের খোঁজে বাগানের দিকে আসছিল। ফলে দু’বোনের এই সংঘর্ষ। একে অন্যেকে ধরে ব্যথা পায়নি নিশ্চিত হয়ে রুহি বলল, আমি তোর কাছেই যাচ্ছিলাম। বাবা-মামণির মধ্যে মনেহয় কিছু হয়েছে।

নূরি হেসে বলল, আমিও তো এই খবর নিয়েই তোমার কাছে যাচ্ছিলাম। মামণির মেজাজ কি খুব গরম?

গরম মানে? আমাকে নবাবজাদী বলে ডেকেছে। এবার বুঝে নে যে কতটা গরম। কি করা যায় বল তো?

বাবা-মামণির তো একটাই সমস্যা। মনোমালিন্য হলে কেউ কারো সাথে কথা বলতে চায় না। দুজনই অপেক্ষা করে অন্যজন আগে কথা বলবে। কোন ভাবে দুজনকে শুধু কথা বলিয়ে দিতে হবে একবার।

হুমম! তুই বুদ্ধি বের করতে থাক আমি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসি। নয়তো আবার মামণির বকা শুনতে হবে।

নূরি হেসে বলল, আচ্ছা তুমি যাও। আমি রান্নাঘরের দরজায় চোখ রেখে চুপিচুপি দেখে আসি মামণিকে।

@

মেয়ের সাথে কথা বলে মনে যে আনন্দ ভাব এসেছিলো রুমে ঢুকেই সেটা উবে গেলো নোমান সাহেবের। সবসময় অফিসে যাবার ড্রেস বাইরে বের করে রাখেন তার স্ত্রী কিন্তু আজ করেনি। সংসারে ঝগড়া-ঝাটি মনোমালিন্য হতেই পারে, তাই বলে কি নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অবহেলা করবে মানুষ? মেজাজ আবারো গরম হতে শুরু করলো নোমান সাহেবের। নিজেই ড্রেস বের করে তৈরি হয়ে নিলেন। বার বার চোখ চলে যাচ্ছিলো দরজার দিকে। মনে মনে চাচ্ছিলেন স্ত্রী আসুক, কথা বলুক তার সাথে। তৈরি হয়ে যাবার পরও কিছুক্ষণ রুমে বসে রইলেন। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে বেড়িয়ে এলেন রুম থেকে। নাস্তা না করেই বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু পাখীর মতো উড়তে উড়তে হাজির হলো বড় মেয়ে রুহি। বাবাকে হাত ধরে টানতে টানতে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গিয়ে বলল, বাবা দেখো আজ আমাদের দুজনের ফেবরেট নাস্তা বানিয়েছে মামণি। দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি বোস ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তো সব।

মেয়েদের কোন কিছুতে না বলতে পারেন না কখনোই নোমান সাহেব। তাই বসে পড়লেন বাধ্য বাবার মত।

নিজের প্লেটে নেবার সাথে সাথে বাবার প্লেটেও নাস্তা বেড়ে দিলো রুহি। বাবাকে খাওয়ার তাগাদা দিয়ে নিজে খাওয়ায় মন দিলো।

নাস্তার টেবিলে এসে বাবাকে দেখে হাসি ফুটে উঠলো নূরির চেহারাতে। কিন্তু লুচির সাথে কলিজা ভুনা দেখে সাথে সাথে নাক কুঁচকে গেলো। মামণির মেজাজ খারাপ আজ খাবার নিয়ে ঝামেলা করলে ঠিক বকা খেতে হবে। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নূরি। মাঝে মাঝে মনের ছোট্ট একটা পছন্দ-অপছন্দ জানানোটাও কত কঠিন হয়ে যায়। বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো গপাগপ খাচ্ছে। মামণিকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি প্লেটে লুচি আর এক চামচ কলিজা ভুনা উঠিয়ে নিলো।

মিসেস রাহমা এসে বললেন, তুই না কলিজা খেতে পারিস না, তাহলে নিয়েছিস কেন? এই নে আমি তোর জন্য সবজি নিয়ে এসেছি। সাথে সাথে হাসি ফুটে উঠলো নূরির চেহারাতে। হাত বাড়িয়ে মামণিকে জড়িয়ে ধরলো। হাসলেন মিসেস রাহমাও। মেয়ের মাথার হাত বুলিয়ে বললেন, হয়েছে আর আহ্লাদ করতে হবে না। প্লেটের সব খাবার শেষ করে উঠবি। নয়তো বুঝবি মজা।

মামণির হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে নূরি বলল, মা সত্যিই অনেক স্পেশ্যাল তাই না বাবা? দেখো শত ঝামেলা, মন খারাপের মাঝেও মায়েরা প্রতিটা সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ সবকিছু খেয়াল রাখেন, মনে রাখেন। অবশ্য বাবারা সারাদিন বাইরে পরিশ্রম করেন বলেই তো মামণিরা সন্তানদের পছন্দের সবকিছুর ব্যবস্থা করতে পারেন। বাবারাও অনেক সুইট তাই না মামণি? এজন্যই তো কবি বলেছেন, বাবা-মার কারণেই ধরণী পরে এসেছি, বাবা-মাকে মোরা তাই এতো ভালোবাসি। সকল বালা মুসিবত দূর হয়ে যাক, বাবা-মা মোদের সর্বক্ষণ একসাথে থাক।

কোন কবি এই কথা বলেছে? জানতে চাইলেন মিসেস রাহমা।

নূরি মিষ্টি হেসে বলল, সেই কবি নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন।

চলবে…

পর্ব-৩

 

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরূপণ করা হচ্ছে

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরূপণ করা হচ্ছে


নারী সংবাদ


দেশে ও দেশের বাইরে নারীদের প্রাণঘাতি রোগের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার অন্যতম। একটুখানি সচেতন হলে আর বাড়ির কাছের সরকারি হাসপাতালগুলো এবং মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে আসলে যে কোন নারী খুব সহজেই ক্যান্সারের প্রাথমিক নিরূপণ কাজ করাতে পারেন। গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল এন্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং এন্ড ট্রেনিং প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের একটি বড় অংশ জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারের শিকার। আমাদের দেশে ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৮৬ জন জরায়ু-মুখ ক্যান্সার আক্রান্ত নারীকে সনাক্ত করা হয়েছে। আর ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচ হাজার ২১৪ জন। অন্যদিকে ওই বছরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭৬৪ জন। আর এই ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ছয় হাজার ৮৪৬ জন। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার মহিলার জরায়ু-মুখে নতুনভাবে ক্যান্সার হচ্ছে।
অপরদিকে দেশে বছরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা পনের হাজার। এর মধ্যে মারা যান আট হাজার। ৪০ বছরের পর থেকে নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। প্রাথমিকভাবে স্তন ক্যান্সারের উপসর্গের মধ্যে আছে- স্তনের কিছুটা অস্বাভাবিক অবস্থা বা চাকা অনুভব, স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন বা চামড়া কিছুটা পুরু হয়ে যাওয়া, নিপল ভেতরে দেবে যাওয়া, নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া। আর স্তন ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে যকৃতের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা বা জন্ডিস, ফুসফুসে ছড়ালে কাশি হওয়া বা কাশির সাথে রক্ত যাওয়া এবং হাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের লক্ষণ হচ্ছে- অতিরিক্ত সাদা ¯্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত ¯্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্ত¯্রাব, সহবাসের পর রক্ত¯্রাব, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমরে বা তলপেটে অথবা উরুতে ব্যথা।
এই ধরনের কোন সমস্যা হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ছায়ালিপি সহযোগে চলে আসতে হবে যে কোন জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। ৩০ বছরের বেশী বয়স হলেই জরায়ু-মুখ অবশ্যই পরীক্ষা (ভায়া) করাতে হবে। তবে ১৮ বছরের আগে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়স হলেই জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করাতে হবে। বয়স্কদের জন্যে ভায়া পরীক্ষা আরো জরুরী। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অন্যান্য স্ত্রী-রোগের চিকিৎসারও সুযোগ তৈরী হয়।
রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। রোগে আক্রান্ত হবার আগে জরায়ু-মুখে অনেকদিন ধরে ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা বিরাজ করে। ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা ধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেবার প্রয়োজন হয় না এবং চিকিৎসার পরেও সন্তান ধারণ করা সম্ভব।
নাটোর সদর হাসপাতালে স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের প্রাথমিক পরীক্ষণ কাজে নিয়োজিত হোসনে আরা বলেন, যে পদ্ধতিতে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা শনাক্ত করা হয় তাকে ‘ভায়া’ এবং স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা পদ্ধতিকে ‘সিবিই’ বলে। এই পদ্ধতিতে জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করলে ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা সাদা রং ধারণ করে এবং রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে। আর স্তন ক্যান্সার বোঝার জন্যে স্তনে চাকা বা অস্বাভাবিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ‘বিএসএমএমইউ-এ সার্ভিক্যাল এন্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে মোট তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৭ সাল থেকে আমরা কাজ করছি এবং প্রতিমাসে এই হাসপাতালে গড়ে দুইশ’ নারীর পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
পরীক্ষা শেষে অনাক্রান্ত রোগীকে সবুজ রঙের কার্ড প্রদান করে কাউন্সিলিং শেষে তিনবছর পরে আবার আসতে অনুরোধ করা হয় এবং পজিটিভ রোগীকে গোলাপী কার্ড প্রদান করে গাইনী বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে জানালেন অপর স্টাফ নার্স আশরাফুন্নেছা।
নাটোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্টাফ নার্স সুফিয়া খাতুন জানান, এই কেন্দ্রে নিয়মিত স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয়।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর সদর হাসপাতাল এবং জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৮ সালে মোট এক হাজার ১৬৯ জন নারীর স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা করে ৫২ জনের ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা সনাক্ত করা হয়েছে

 

ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ মায়ের


ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ মায়ের


নারী সংবাদ


সন্তানের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ৭৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মা। একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বুধবার সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পল্লবী এলাকার বাসিন্দা সাহিদা রহমান নামে ওই মা এই আহবান জানান। তিনি বলেন, ২২ বছর আগে তার ছেলে জিল্লুর রহমান মারা যান। ছোট ছেলে হাফিজুর রহমান জুয়েল দীর্ঘদিন জার্মান বসবাস করছেন। বড় ছেলে আজিজুর রহমানকে নিয়ে পল্লবী থানাধীন ১০ নম্বর সেকশন, ১ নম্বর লেন, এ ব্লকের ৬ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই বাড়ির ৮২ শতাংশের মালিক তার ছোট ছেলে জুয়েল। কিন্তু তিনি বিদেশে থাকাবস্থায় জোর করে পুরো বাড়িটি দখলে নেন বড় ছেলে আজিজুর। এ ব্যাপারে বাধা দেন মা। আর এতেই মায়ের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আজিজুর। এক পর্যায়ে আজিজুর ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগমের কাছে নানাভাবে নাজেহাল হতে থাকেন তিনি। খাবার না দিয়ে ছয়তলার একটি কক্ষে রাখা হয় তাকে। কিছু বলতে গেলে মারতে তেড়ে আসে ছেলে ও তার স্ত্রী। একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় জেলে যায় বড় ছেলে আজিজুর। সম্প্রতি জেল থেকে বেরিয়ে এসে গর্ভধারিণী মাকে ব্যাপক মারধর করে। ছোট ছেলেকে হত্যা করবে বলে নানাভাবে হুমকি দিতে শুরু করে।
এই অবস্থায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে সাহিদা রহমান বলেন, লোভে পড়ে তার বড় ছেলে অমানুষে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্যাতন কোন পর্যায়ে পৌঁছালে একজন মা তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচারের জন্য সংবাদ সম্মেলন করে। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

 

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’


মুনির হাসান


মাওলানা আবদুল মালেকের বাড়ি চট্টগ্রামে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, আর পড়েছেন দেওবন্ধে। অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ খোঁজ করছেন সে সব তরুণদের যারা তাঁর সঙ্গে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় সাদত কলেজ গড়ে তুলবেন। চট্টগ্রামের খান এ আলম খানের সুবাদে ইব্রাহিম খাঁ জানতে পারেন মাওলানা আবদুল মালেকের কথা। আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় সমান বুৎপত্তি। খোঁজ করে নিয়ে গেলেন মাওলানাকে। সেখানেই একটা কলেজ গড়ার সংগ্রামে রত হলেন তিনি।

বেশ কয়েক বছর পরের কথা। মাওলানা অস্থির। চতুর্থ সন্তানের জন্মের খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে। সময় চলে যায় কিন্তু কোন খবর পান না। মাওলানা জানেন না, চতুর্থ সন্তানটিও মেয়ে হওয়ায় তার স্ত্রী তাকে জানাতে সময় নিচ্ছেন। এমন এক অস্থির সময়ে এক রাতে মাওলানা আবদুল মালেক স্বপ্নে দেখলেন আকাশের চাঁদ তাঁর পকেটে ঢুকে পড়েছে।

সকালেই স্ত্রীকে চিঠি লিখলেন – তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ভাল আছো। আমি জানি আমার একটি মেয়ে হয়েছে। তুমি মন খারাপ করো না। আমি স্বপ্নে দেখেছি রাব্বুল আলামিন আমাদের ঘরে আকাশের চাঁদ পাঠিয়েছেন।

মাওলানা আবুদল মালেকের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তাঁর চতুর্থ সন্তান ডা. সায়েবা আখ্তার কিছুক্ষণ আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একুশে পদক গ্রহণ করেছেন।
তাঁর উদ্ভাবিত ‘সায়েবা’স মেথড’ এখন সারা বিশ্বে হাজার হাজার মায়ের জীবন বাঁচায়।
সারা বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। এর ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ। সে হিসাবে প্রতিবছর ১৩ লাখ মায়ের মৃত্যু ঘটে প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে। আরও ২৬ লাখ নারী মাতৃত্বের সক্ষমতা হারান। এর বড় অংশই ঘটে গরিব দেশগুলোতে।
প্রসব পরবর্তী জরায়ূর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাংলাদেশ সহ গরীব দেশগুলোতে প্রতি বছরই অসংখ্য মায়ের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণই এই ধরণের রক্তক্ষরণ।
উন্নত বিশ্বে এটি ঠেকাতে যে ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয় সেটির দাম বাংলাদেশী টাকায় ২৪ হাজার টাকা! পাওয়াও যায় না। প্রযুক্তিটি মূলত একটি বেলুন, যেটি জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিলেই কার্যত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে কাজ করার সময় প্রফেসর সায়েবা আখ্তার ভাবতেন – একটি বেলুনই কত জীবন বাঁচাতে পারে।
বেলুন চিন্তায় অস্থির নির্ঘুম রাতে সায়েবা আখতার ভাবেন বাচ্চাদের খেলনা বেলুনের কথা। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেই সময়কার কথা স্মরণ করেছেন -“মাঝে মাঝে আমি দেখেছি গ্রামে কনডমকে ওরা বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে খেলনা হিসেবে ব্যবহার করে। হঠাৎ আমার মনে হল এই কনডমকেই তো আমি ইউটেরাসের (জরায়ু) ভেতর দিতে পারি। কনডম একটা মেডিকেল ডিভাইস। কাজে সমস্যাতো নাই। এটাকে যদি ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে তারপর ফুলিয়ে চাপ সৃষ্টি করি, তাহলে হয়তো রক্তপাত বন্ধ হবে”। সকালে উঠেই দেখলেন, কনডম কতটুকু পানি বা স্যালাইন ধরতে পারে। দেখা গেল ‘১ লিটার ফ্লুইড ওটার ভেতরে ঢুকিয়ে অনেক চেষ্টা করেও সেটিকে ফাটানো যায় না’।
পরদিনই হাসপাতালে তিনি প্রথম কেস পেয়ে গেলেন। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণন ঠেকাতে রোগির জরায়ু কেটে ফেলার সিদ্ধান্তি নিয়ে ফেলেছে ডাক্তার।
সায়েবা আখতার বলছেন, “আমি বললাম একটু অপেক্ষা কর। সে-ই আমার প্রথম কেস, যেখানে আমরা কনডমটাকে ক্যাথেটার দিয়ে বেঁধে ওর ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে স্যালাইন দিয়ে ফুলিয়ে দেওয়ার পর পনেরো মিনিটের মধ্যেই ব্লিডিং বন্ধ হয়ে গেল”। পুরো ব্যবস্থাটি করতে খরচ হল একশ টাকারও কম।

সেই থেকে এই মেথড বিশ্ব জুড়ে সায়েবা’স মেথড নামে পরিচিত।

আপনাকে অভিনন্দন ছোটমনি। আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তৈয়বা দান করুন।

আপনার পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে!

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……১

মোরা জোনাকি হতে চাই……১


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে রান্নাঘরে রওনা করলো রুহি। রান্নাঘরের কাছে যেতেই লুচি ভাজার মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাককে ছুঁয়ে দিলো। মামণিকে বলেছিলো আজ তার জন্য আলুর লুচি ও কলিজা ভুনা করতে। নিশ্চিয়ই তাই করেছে মামণি। হাসিতে বিকশিত হতে হতে রান্নাঘরে ঢুকে মামণির চেহারার দিকে তাকাতেই সাবধান হয়ে গেলো রুহি। মামণির চেহারাতে ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। এটাকে দশ নাম্বার বিপদ সংকেত বললেও কম বলা হয়ে যাবে। ঝড়ের কবলে পড়ার আগেই সরে পড়তে চাইলো কিন্তু ঝড় তাকে ধরেই ফেললো।

মোটামুটি হুংকার দিয়ে মিসেস রাহমা বললেন, সকাল হলো তাহলে নবাবজাদীর। কয়টা বাজে দেখেছিস? আর তুই ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ না ধুয়ে রান্নাঘরে কেন ঢুকেছিস? সামনে থেকে যা আমার। এক্ষুনি যা বলছি।

রাজকন্যার বদলে নবাবজাদী! তারমানে মামণির চেহারাতে যে ঝড়ের পূর্বাভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে সেটার কারণ বাবা। হাসি চেপে মিনমিনে কণ্ঠে রুহি বলল, আজ তো কলেজ নেই মামণি।

তাই বলে দশটা পর্যন্ত ঘুমাতে হবে নাকি? আমাদের যেদিন ছুটি থাকতো সংসারের কাজে মাকে সাহায্য করতাম। একদিনের জন্য মাকে একটু আরাম করতে দিতাম। আর তোরা ছুটি পেলে নিজের আরামের চিন্তা করিস।

মুখ শুকনো করে রুহি বলল, ভুল হয়ে গিয়েছে মামণি। এরপর থেকে আর এমন হবে না। এরপর থেকে ছুটির দিনে তোমাকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করবো। তাছাড়া এখন থেকেই সাংসারিক কাজ শিখাও তো উচিত। নয়তো শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলবে মায়ের বাড়ি থেকে কি শিখে এসেছো শুনি? মায়ের বাড়ি তুলে কথা বললে আমার হবে মেজাজ গরম। সংসারে শুরু হবে অশান্তি। তাই ভালো এখন থেকেই কাজকর্ম শেখা শুরু করা। বাঁশ থেকে বাঁশী তৈরি হবে? হুহ! আমি বাঁশঝাড়ই জন্মাতে দেবো না।

তোকে না বলেছি আমার সাথে ফাজলামো করবি না। যা তুই আমার সামনে থেকে। যা বলছি।

যাওয়ার আগে তোমাকে একটা টাইট হাগ দিয়ে যাই মামণি?

কাঠের চামচ উঁচিয়ে মিসেস রাহমা বললেন, বাসী শরীরে আমার কাছে এলে এইটার বাড়ি খাবি।

মাই ডিয়ার সুইট মাদার গাছে থাকলে ফুল কখনো বাসী হয় না।

মানে কি এই কথার?

মানে হচ্ছে আমি যেই দুটি গাছের সমন্বয়ে আমি প্রস্ফুটিত হয়েছিলাম। এখনো সেই বৃন্তেই শোভা বর্ধন করছি। হাসতে হাসতে বললো রুহি।

মিসেস রাহমা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, এজন্যই আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না। সারাক্ষণ শুধু ফালতু কথা। দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা বলছি সামনে থেকে।

রান্নাঘরের দরজার সামনে গিয়েও আবার ফিরে এসে মামণিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে হাসতে হাসতে ছুটে বেড়িয়ে গেলো রুহি।

হেসে ফেললেন তখন মিসেস রাহমাও। তার রাগ হলে সবসময় চেষ্টা করেন তার দুষ্টু মেয়েদের সাথে কথা না বলতে। এটা সেটা বলে ঠিকই তাকে হাসিয়ে ফেলে নয়তো।

@

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। মন মেজাজ তাই খুবই খারাপ নোমান সাহেবের। বারান্দায় বসে গম্ভীর মুখে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলেন। গুনগুণ শব্দ কানে আসতে পত্রিকা ভাঁজ করে রেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোট মেয়ে নূরি বাগানে গাছে পানি দিচ্ছিলো আর গুনগুণ করছিলো। মেয়েকে দেখেই হাসি ফুটে উঠলো নোমান সাহেবের চেহারাতে। সাথে সাথে মনও ভালো হতে শুরু করলো। আদর ভরা কণ্ঠে বললেন, আমার মা কি করে?

নূরি উপর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, গাছদের নাস্তা দিচ্ছি বাবা। খালি পানি খেতে চাচ্ছে নাতো তাই গুনগুণ করে পটানোর চেষ্টা করছি।

নোমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, তোর গুনগুণকে শব্দ দিয়ে দেতো মা। অনেকদিন তোর গান শুনিনা।

মামণির সাথে ফাইট হলে তুমি একদম বোকা ছেলে হয়ে যাও বাবা। বাগানে দাঁড়িয়ে আমি বুঝি গান করবো?

তোর মামণির সাথে আমার ফাইট হয়েছে কে বললো?

জগতের সবকিছু মুখে বলার দরকার হয় না বাবা। নিশ্চুপ পরিবেশও অনেককিছু জানান দিয়ে যায়। এই যেমন ধরো, প্রতিদিন ভোর বেলা দুজন কপোত-কপোতি চায়ের কাপ হাতে আমাদের বাগানে বসে গুটুর গুটুর করে। আজ তাদেরকে দেখা যায়নি। তাছাড়া রান্নাঘর থেকে ধুরুম ধারুম শব্দ ভেসে আসছে। এসবই মামণির মেজাজ গরমের লক্ষণ।

তুই এত কিছু খেয়াল করিস তাতো জানা ছিলো না। হাসি মুখে বললেন নোমান সাহেব।

মেয়েদেরকে সংসারের সবদিকে খেয়াল রাখতে হয় বাবা। তুমি এসব বুঝবে না।

বুঝবো না কেন?

জগতের সবকিছু তো সবাই বোঝে না বাবা। কিছু কিছু উপলব্ধি একান্ত মেয়েদের আর কিছু উপলব্ধি একান্ত ছেলেদের। ছেলে ও মেয়েরা যখন একে অপরের উপর নিজ নিজ উপলব্ধি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখনই বাঁধে সমস্যা।

তুই তো মা অনেক কঠিন কঠিন কথা শিখে ফেলেছিস। তোর মামণিকে একটু বোঝাতে পারিস না এসব কথা। তাহলেই তো আর অশান্তি হয় না।

তুমি বুঝলেও তো অশান্তি কমে যেত বাবা। তাহলে তুমি কেন বোঝ না বলো তো?

তুই কখনোই তোর মামণির দোষ দেখিস না এটাই হচ্ছে সমস্যা। এমনিতে মুখে মুখে শুধু বলিশ যে আমাকে বেশি ভালোবাসিস। সত্যি করে বল তো তোকে যদি অপশন দেয়া হয় আমাকে কিংবা তোর মামণি যে কোন একজন বেছে নিতে তুই কাকে নিবি?

চলবে

পর্বঃ২ মোরা জোনাকি হতে চাই…..২

 

আপনার স্পাউজের ধরন বুঝুন

আপনার স্পাউজের ধরন বুঝুন


কানিজ ফাতিমা


সাধারণত একটা ট্রেন্ড আমি নারী-পুরুষের মধ্যে দেখতে পেয়েছি – বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েরা কিছুটা পরিণত বয়সে তার বাবার মতো স্বামী চায় আর ছেলেরা তার মা বা বোনের মতো স্ত্রী চায়। যদি আপনার ক্ষেত্রে সেটা সত্য হয় তবে বিয়ের আগে এভাবেই পাত্র-পাত্রী খুজুন। কিন্তু বিয়ের পরে আপনাকে যেটা বুঝতে হবে তাহলো আপনার চাওয়া যাই হোক, আপনি যা পেয়েছেন সেই বাস্তবতাকে দেখার ও বোঝার মন ও চোখ তৈরী করতে পারা আপনার পারিবারিক সৌহার্দের জন্য জরুরী।

সহজ একটা উদাহরণ দেই -আপনাকে যদি screw driver দেয়া হয় তবে তাকে screw driver এর মতো ব্যবহার করুন। কাঁচির মতো ব্যবহার করতে যাবেন না। আপনার বাবা বা মা কাঁচি ছিলেন, আপনি কাঁচির ধার আর সুফল দেখে বড় হয়েছেন তাই আপনার কাঁচির প্রতি দুর্বলতা থাকতেই পারে। কিন্তু যদি আপনি screw driver এর কাছে কাঁচির ব্যবহার আশা করেন তবে আপনাকে হতাশ হতেই হবে।
আর এই হতাশা screw driver এর কারণে হয়নি, হয়েছে আপনার নিজের কারণে। এরপর আপনি যদি জোর জবরদস্তি করে এই screw driver কে কাঁচির মতো ব্যবহার করতে যান তবে হয় সে বিদ্রোহ করবে, নয়তো (নিরীহ হলে সহ্য করতে করতে) আপনার চাপাচাপিতে ভেঙে যাবে – এর কোনোটাতেই আপনার মঙ্গল নেই।

মনে রাখবেন screw driver এ কাঁচির কল্যাণ যেমন নেই, তেমনি কেচিতেও screw driver এর কল্যাণ নেই। কাজেই আপনি screw driver এর কাছে কাঁচির কল্যাণ না খুঁজে screw driver এর কল্যাণ খুজুন। screw driver এর কাছে কাঁচির কল্যাণ খুঁজতে গেলে আপনি সেটা তো পাবেনই না বরং screw driver এ যে কল্যাণ আল্লাহ আপনার জন্য মৌজুদ রেখেছিলেন সেটা থেকেও বঞ্চিত হবেন।

কাজেই আপনার স্পাউজের ধরণ বুঝুন।